১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রতিকার কোন পথে—২

কাশীর বিখ্যাত মনীষী ডা. ভগবানদাসের পত্ৰ উপলক্ষ করিয়াই আমরা এই আলোচনা আরম্ভ করিয়াছিলাম। সুতরাং হিন্দুসমাজের বৰ্ত্তমান দুৰ্গতির প্রতিকারকল্পে ডা. ভগবানদাস যে-উপায় নির্দেশ করিয়াছেন, তাহাও আমাদের বিচার করিয়া দেখা প্রয়োজন। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, ডা. ভগবানদাস মহাত্মা গান্ধীর ন্যায়বৰ্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের প্রতি আস্থাবান। প্রাচীন আৰ্য্য হিন্দুগণ যে বৰ্ণাশ্রম ব্যবস্থার উপর সমাজ গড়িয়া তুলিয়াছিলেন, তাহাকেই তিনি Ideal বা আদর্শ মনে করেন। তাঁহার বিশ্বাস, এর চেয়ে উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা আর কোন সমাজ উদ্ভাবন করিতে পারে নাই। বৰ্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম হিন্দুসমাজে যতদিন অবিকৃত ছিল, ততদিন হিন্দুসমাজে কোন জটিল আর্থিক, সমস্যার উদ্ভব হয় নাই, বেকারের দলও দেখা দেয় নাই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে একটা সুসঙ্গত সামঞ্জস্যও ছিল। কিন্তু বৰ্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম যখন হইতে বিকৃত হইয়া জাতিভেদে পরিণত হইতে লাগিল, তখন হইতেই হিন্দুসমাজের দুর্দ্দশা আরম্ভ হইল।

ডা. ভগবানদাসের অভিমত এই যে, যদি হিন্দুসমাজে পুনরায় বৰ্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম প্ৰবৰ্ত্তিত করা যায়, তাহা হইলে বৰ্ত্তমানের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হইবে। যে কৰ্ম্মবিভাগের নীতির উপর বর্ণাশ্ৰম ধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠিত, বৰ্ত্তমানকালে কি প্রাচ্য কি পাশ্চাত্য কোন সমাজই তাহা অনুসরণ করে নাই, ফলে ধনী-দরিদ্র উচ্চ-নীচের আত্যন্তিক বৈষম্য ঘটিয়াছে। এত দুঃখদৈন্য বেকারসংখ্যা বৃদ্ধির মূলে উহাই। সমাজতন্ত্রবাদ বা ধনসাম্যবাদ এই বৈষম্য দূর করিবার জন্য যে সব উপায় চিন্তা করিতেছে, ডা. ভগবানদাসের মতে সেই সব উপায়ে সমস্যার সম্যক সমাধান হইবে না। পক্ষান্তরে আর্য্যহিন্দুদের উদ্ভাবিত বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মে সমাজতন্ত্রবাদের মূল নীতি নিহিত আছে। ইহাকে এক হিসাবে Practical Socialism বলা যাইতে পারে। হিন্দু সমাজ যদি সেই প্ৰাচীন আদর্শ গ্রহণ করে, তবে আবার সে পূর্বের গৌরব ফিরিয়া পাইতে পারে।
ডা. ভগবানদাস প্ৰাচীন বৰ্ণাশ্রম ব্যবস্থা সম্বন্ধে বলিয়াছেন যে, ঐ ব্যবস্থায় সমাজে শিক্ষক, রক্ষক, পালক ও ধারক এই চতুর্ধা বিভক্ত বর্ণচতুষ্টয়ের অঙ্গাঙ্গিভাবযুক্ত সহযোগ ও সহকারিতার ফলে সামাজিক স্বস্তি ও সম্পদ সিদ্ধ হইতে পারিয়াছিল।
It was framed by the ancient thinkers of India, who had discovered the greater, nobler, and for the humanity, the far more useful complimentary half-truth and fact of human evolution in accordance with the great “Law of alliance for existence.” (Dire need for a scientist manifesto).
কিন্তু “বৰ্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম যতই ‘আদর্শ’ ব্যবস্থা হোক, বর্তমান যুগে হিন্দু সমাজে তাহা ঠিক ঠিক প্রচলিত করা অসম্ভব। যমুনার জল যেমন উজান বহানো যায় না, প্রাচীন যুগের বর্ণাশ্রম ব্যবস্থাও তেমনই এ যুগে ফিরাইয়া আনা যায় না।
ডা. ভগবানদাস নিজেই স্বীকার করিয়াছেন—It has obviously degenerated utterly and become curse instead of blessing. অর্থাৎ ইহা সম্পূর্ণভাবে বিকৃত ও অধঃপতিত হইয়াছে এবং হিন্দুসমাজের পক্ষে আশীৰ্ব্বাদের পরিবৰ্ত্তে অভিশাপস্বরূপ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

কিন্তু আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা যে সমাজ ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিয়াছে, তাহাও মানব জাতির পক্ষে কল্যাণকর হয় নাই, এমন কি অভিশাপস্বরূপ হইয়াই দাঁড়াইয়াছে। এই ব্যবস্থার মারাত্মক দোষ এই যে, ইহাতে সমাজে ধনী দরিদ্রের মধ্যে আত্যন্তিক বৈষম্যের সৃষ্টি হইয়াছে। বিজ্ঞানের বলে মানুষ ধনসম্পদ বাড়াইবার যে নূতন নূতন উপায় উদ্ভাবন করিয়াছে, তাহাতে কতকগুলি কোটিপতি, লক্ষপতির সৃষ্টি হইয়াছে, তাহাদের ভোগবিলাসের আড়ম্বর বাড়িয়াছে সন্দেহ নাই—কিন্তু অপরদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ অৰ্দ্ধাশনে অনশনে রোগে ব্যাধিতে পশুর ন্যায় দিন যাপন করিতে বাধ্য হইতেছে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঐশ্বৰ্য্য ক্রমেই বাড়িতেছে, কিন্তু ঐ ঐশ্বৰ্য্য সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়সঙ্গতভাবে বন্টিত হইতেছে না। ফলে বিরাট অন্নসমস্যা বিভীষিকার মূৰ্ত্তি ধরিয়া সমাজের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছে, কৃষক ও শ্রমিকেরা বিদ্রোহ করিয়াছে। ডা. ভগবানদাসের ভাষায়—Humanity is in imminent danger of dying from in mutual hatred—born of lack of equitable disttribution of sufficient bread.
এই বিদ্রোহের মধ্য হইতেই Socialism and Communism—সমাজতন্ত্রবাদ ও ধনসাম্যবাদের জন্ম এবং সোভিয়েট রাশিয়া এই সমাজতন্ত্রবাদ ও ধনসাম্যবাদের আদর্শ অনুসরণ করিয়াই বৰ্ত্তমানে জটিল সামাজিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করিতেছে। ডা. ভগবানদাস মনে করেন যে, ভারতের প্রাচীন আৰ্য্যদের বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের পরই সোভিয়েটের এই সাম্যবাদমূলক ব্যবস্থা vast experiment বা সুমহৎ পরীক্ষা হিসাবে স্থান পাইবার যোগ্য। কিন্তু এই পরীক্ষার পথে সোভিয়েট রাশিয়া যেমন কতকগুলি বিষয়ে আশ্চৰ্য্য সাফল্য লাভ করিয়াছে, তেমনি আবার কতকগুলি বিষয়ে মারাত্মক এবং নিষ্ঠুর ভ্রমও করিয়াছে—
The vast Russian experiment now in progress, is the second effort of mankind in the same direction ; but, while it las achieved marvels, it has also committed many serious and cruel mistakes, is still undergoing great internal tribulations and is correcting its errors.
সেইজন্য ডা. ভগবানদাস মনে করেন যে, একদিকে সমাজতন্ত্রবাদ ও ধনসাম্যবাদ, অন্যদিকে প্রাচীন হিন্দুদের বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা—ইহার মাঝামাঝি একটা পথ অবলম্বন করিলে কেবল হিন্দুসমাজ নয়, বৰ্ত্তমান বিশ্বমানব সমাজের সমস্যারও মীমাংসা করা যাইতে পারে। সেই মধ্য পন্থার নাম দিয়াছেন তিনি ‘নূতনতর ও উন্নততর বর্ণাশ্ৰম ধৰ্ম্ম’ এবং পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকদিগকে সেই নূতন পরিকল্পনা গড়িয়া তুলিবার জন্য আহবান করিয়াছেন।


The right middle Course between impossibly equilatarian communism and criminally iniquitons capitalism–a new and complete scheme of social structure ( a newer and better ‘Barnasram-dharma’).
ডা. ভগবানদাস যে সুসংস্কৃত বৈজ্ঞানিক ‘বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের’ কথা বলিয়াছেন, আদর্শ হিসাবে তাহা খুবই উচ্চ সন্দেহ নাই, উহার মূল উদ্দেশ্য আমরাও সমর্থন করি। কিন্তু ঐ আদর্শ কাৰ্য্যে পরিণত করা আদৌ সম্ভবপর কিনা বা হইলে কবে সম্ভবপর হইবে, তাহা বলা কঠিন। সুতরাং সেই অনাগত ভবিষ্যতের জন্য প্ৰতীক্ষা করিয়া বসিয়া না থাকিয়া হিন্দু সমাজের দুৰ্গতি রোধ করিবার জন্য অবিলম্বেই আমাদের কৰ্ম্মে প্ৰবৃত্ত হওয়া প্ৰয়োজন। আমাদের মতে এখন প্ৰথম এবং প্ৰধান কৰ্ত্তব্য—হিন্দু সমাজের মধ্যে সামাজিক সাম্যবাদ ও কৰ্ম্মযোগের আদর্শ প্রচার করা এবং সাহসের সঙ্গে তদনুযায়ী সংস্কার প্রচেষ্টা করা। সাম্যবাদের কথা উঠিলেই, কতকগুলি পণ্ডিতন্মন্য ব্যক্তি মুরুব্বীয়ানার চালে বলিয়া থাকেন যে, আৰ্য্যঋষিরা যে সাম্যবাদের আদর্শ স্থাপন করিয়াছেন, তাহার চেয়ে বড় আদর্শ আর কোথায় আছে ? “জীবমাত্রেই ব্ৰহ্ম”-এই আদর্শ ত হিন্দুদেরই। কিন্তু কেবল প্ৰাচীন আৰ্য্যঋষিরা কেন, বুদ্ধদেব, চৈতন্য প্রমুখ মহাপুরুষেরাও তা ঐ মহান সাম্যবাদের আদর্শ প্রচার করিয়া গিয়াছেন।


তবু হিন্দু সমাজের এই দুর্দ্দশা কেন, জাতিভেদ এখনও লুপ্ত হয় নাই কেন, তথাকথিত “শূদ্রেরা” এখনও মানুষের অধিকার পায় নাই কেন ? তাহার কারণ, কেবল কথায় চিড়া ভিজে না। মুখে বড় বড় আদর্শের কথা বলিব এবং কাৰ্য্যকালে ভেদ ও বৈষম্যের দুর্গ আরও পাকা করিতে থাকিব, ইহা ভণ্ডামি, আত্মপ্রতারণা, জঘন্য স্বাৰ্থরপতা। সুতরাং হিন্দুসমাজের উচ্চবর্ণীয়দের আজ ভণ্ডামি ছাড়িয়া বাস্তবক্ষেত্ৰে নামিতে হইবে। নিজেদের বহু শতাব্দীর সঞ্চিত স্বার্থ, দম্ভ ও অভিমান ত্যাগ করিয়া সমাজের কল্যাণ, তথা নিজেদের কল্যাণের জন্যও তথাকথিত “শূদ্ৰদের” মানুষের অধিকার দিতে হইবে। শূদ্ৰশক্তি যতদিন অবজ্ঞাত, দলিত, পিষ্ট হইয়া থাকিবে, ততদিন হিন্দুসমাজের কল্যাণ নাই, তাহারা উহাকে ক্ৰমাগত ধ্বংসের পথেই টানিয়া লইয়া যাইবে।

“শূদ্রদের” মধ্যে যদি আমরা মনুষ্যত্বের বোধ জাগাইতে পারি, তাহাদিগকে আপনার করিয়া লাইতে পারি, তবে তাহাদের মধ্য হইতে যে প্ৰচণ্ড শক্তি জাগ্রত হইবে, তাহা হিন্দুসমাজে যুগান্তর সৃষ্টি করিবে। বৰ্ত্তমানে সমাজের শূদ্ৰশক্তির মধ্যে যে হতাশা ও নৈরাশ্যের ভাব দেখা দিয়াছে, তাহা মৃত্যুর পূর্ব লক্ষণ। কিন্তু তাহারা একা মরিবে না, সঙ্গে সঙ্গে আমরা সকলেই মরিব। বৰ্তমানে হিন্দুসমাজের নিম্নবর্ণীয়দের মধ্যে এই মনোভাবের সৃষ্টি হইয়াছে যে, তাহারা হিন্দুসমাজের কেহ নহে, হিন্দুসমাজের ভাল মন্দে তাহাদের কিছু আসিয়া যায় না। কতকটা নৈরাশ্যে, কতকটা প্ৰতিশোধ স্পৃহায় তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিতেছে। যাহারা করিতেছে না, তাহারা মুসলমানদের সঙ্গে যোগ দিয়া উচ্চবর্ণীয় হিন্দুদের বিরুদ্ধাচরণ করিতেছে। সুযোগ বুঝিয়া ইংরেজ গবৰ্ণমেণ্ট কৃত্ৰিম “তপশীলী জাতির” সৃষ্টি করিয়া হিন্দুসমাজকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিতেছেন। অতএব এখনও যদি আমরা সাবধান না হই, তবে ধ্বংস নিশ্চিত।
দ্বিতীয়ত কৰ্ম্মযোগ ও রজোগুণের আদর্শ প্রচার করিতে হইবে।


পূর্ব্বেই বলিয়াছি, কৰ্ম্মবিমুখতা এবং একটা তামসিক অহিংসার ভাব হিন্দুসমাজের মধ্যে—বিশেষত তাহার নিম্নস্তরে প্রবেশ করিয়াছে। ফলে স্ব স্ব বৃত্তিকে তাহারা হীন মনে করিতে শিখিয়াছে। কৃষিজীবী হিন্দুরা যে কৃষিকাৰ্য্য ত্যাগ করিতেছে, তাহার মূলে কেবল তাহাদের অক্ষমতা নয়, কৃষিকাৰ্য্যের প্রতি একটা অবজ্ঞার ভাবও আছে। ফলে হিন্দু কৃষকের সংখ্যা ক্ৰমশ হ্রাস হইতেছে, সমস্ত জমি মুসলমান কৃষকদের হাতে চলিয়া যাইতেছে। ইহা হিন্দুসমাজের পক্ষে ঘোর দুর্লক্ষণ। অবস্থা যেরূপ দাঁড়াইতেছে তাহাতে আর অৰ্দ্ধশতাব্দীর মধ্যেই হিন্দুরা ভূমিশূন্য বেকার শ্রমিকের দলে পরিণত হইবে। অতএব হিন্দুসমাজের নিম্নস্তরে কৰ্ম্মের মহিমা প্রচার করিতে হইবে। হিন্দু কৃষকেরা আবার যাহাতে জমিতে ফিরিয়া যায়, পরিত্যক্ত শ্রমশিল্পগুলি গ্রহণ করে, তাহার জন্য তাহাদের উদ্বুদ্ধ করিতে হইবে। গ্ৰাম্য কুটীরশিল্পগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করিতে হইবে এবং হিন্দুসমাজের নিম্নবর্ণীয়েরা যাহাতে গ্রামে থাকিয়াই ঐ সব শিল্প অবলম্বন করিয়া জীবিকা নিৰ্বাহ করিতে পারে, তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। কেহ কেহ বলিতে পারেন, এটা ত অর্থনৈতিক সমস্যা—ইহার সঙ্গে হিন্দুর সামাজিক সমস্যার সম্বন্ধ কি? কিন্তু আধুনিক সমাজতত্ত্ববিদেরা জানেন যে, অর্থনৈতিক পরিবেশের প্রভাব সমাজের উপর কতখানি কাজ করে। কৰ্ম্মহীন হতাশ বেকারের দল লইয়া কোন সমাজই রক্ষা করা যায় না, হিন্দুসমাজকেও রক্ষা করা যাইবে না ।


তারপর রজোগুণের কথা। অহিংসার নামে যে ঘোর তামসিকতা হিন্দুসমাজকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে, তাহার অনিষ্টকর প্রভাব হইতে হিন্দুসমাজকে মুক্ত করিতে না পারিলে মৃত্যু অনিবাৰ্য্য। স্বামী বিবেকানন্দ বহু পূর্ব্বেই বলিয়া গিয়াছেন, হিন্দুসমাজকে বাঁচাইবার জন্য চাই রজোগুণ—বীৰ্য্যবান কৰ্ম্মের সজীবতা। কিন্তু তাঁহার কথা আমরা ভাল করিয়া শুনি নাই। আর এই অহিংস তামসিকতার সঙ্গে আসিয়া জুটিয়াছে—অদৃষ্টবাদ, পরলোক-বিলাসিতা, ইহলোকের প্রতি ঔদাসীন্য। সমস্ত মিলিয়া হিন্দুজাতিকে এমন শান্ত, নিরীহ, বশংবদ non-aggressive ও submissive করিয়া তুলিয়াছে যে বৰ্ত্তমান যুগের জীবনসংগ্রামে তাহার পক্ষে আত্মরক্ষা করা কঠিন। বহু শতাব্দীর পরাধীনতাও হিন্দুদের প্রকৃতিতে এই ভাব দৃঢ়মূল করিয়া দিয়াছে। জীববিজ্ঞানের দিক হইতে এই Non-aggressivéness বা সবল মনোভাবের অভাব একটা জাতির পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষা বড় ব্যাধি—ক্ষয়রোগেরই তুল্য। বহু প্ৰাচীন জাতি, প্রাচীন সভ্যতা ইহার ফলে ধ্বংস হইয়াছে। হিন্দুরা যদি সময় থাকিতে এই “পরাজিতের মনোভাব” ত্যাগ করিয়া সবল, সতেজ মনোভাবের অনুশীলন করিতে না পারে, তবে জীববিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে তাহাদেরও অদূর ভবিষ্যতে মৃত্যু হইবে। পৃথিবীতে দুৰ্ব্বলের স্থান নাই, “বীরভোগ্যা বসুন্ধরা”—এই মহাসত্য আজ আমাদিগকে জাতি হিসাবে উপলব্ধি করিতে হইবে।

চলবে ...
গ্রন্থঃ ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু
লেখকঃ প্রফুল্লকুমার সরকার
সংগৃহীতঃ হিন্দুত্ববুক্স হতে ।

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।