বাঙ্গালী হিন্দুর সম্মুখে আজ কি ঘোর দুর্দিন উপস্থিত, এই প্ৰবন্ধাবলীতে আমরা যথাসাধ্য সুস্পষ্টভাবে তাহা দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি। বাঙ্গালী হিন্দুর সংখ্যা ক্রমশঃ ক্ষয় হইতেছে,-কি উচ্চস্তরে কি নিম্নস্তরে সর্বত্রই এই ক্ষয়ের লক্ষণ আমরা দেখিতে পাইতেছি। একদিকে মধ্যবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গে প্ৰাকৃতিক বিপৰ্য্যয়, অন্য দিকে হিন্দু সমাজের অন্তর্নিহিত দৌৰ্ব্বল্য ও সঙ্ঘশক্তিহীনতা—বাঙ্গালী হিন্দুর জীবনীশক্তিকে ক্রমশঃ হ্রাস করিয়া ফেলিতেছে, তাহার উপর আর্থিক ও রাজনৈতিক অবস্থা—বাঙ্গালী হিন্দুর ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক করিয়া তুলিয়াছে। যদি এখনও বাঙ্গালী হিন্দু সচেতন হইয়া আত্মরক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা না করে, তবে অদূর ভবিষ্যতে, হয়, তাহারা লুপ্ত হইবে, নতুবা শিক্ষাদীক্ষা সংস্কৃতিভ্ৰষ্ট দাসজাতিরূপে কোনরূপে টিকিয়া থাকিবে এবং তাহা মৃত্যুরই তুল্য। এতকাল ধরিয়া বাঙ্গালী হিন্দু যে সংস্কৃতি ও সভ্যতা গড়িয়া তুলিয়াছিল, তাহার চিহ্নমাত্র থাকিবে না।
বাঙ্গালী হিন্দুই গত শতাব্দীতে জাতীয় আন্দোলন প্ৰবৰ্ত্তিত করিয়াছিল, কংগ্রেসের সৃষ্টি করিয়াছিল, সমগ্ৰ ভারতীয় জাতির প্ৰাণে স্বাধীনতার প্রেরণা দিয়াছিল, পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান প্রচারে তাহারাই অগ্ৰণী হইয়াছিল, এমন এক সাহিত্য গড়িয়া তুলিয়াছিল, যাহার তুলনা কেবল ভারতে নহে, সমগ্র এশিয়াতেও নাই। জীবনের সৰ্ববিভাগে এমন সব প্ৰতিভাশালী ব্যক্তিদের জন্ম দিয়াছিল, যাহারা সমগ্ৰ ভারতের গৌরব, এমন কি অনেকস্থলে বিশ্বেরও গৌরব। সেই বাঙ্গালী হিন্দুর আজ কি শোচনীয় দুৰ্গতি ! সৰ্ব্বভারতীয় রাজনীতিতে তাহার প্রতিষ্ঠা নাই, জ্ঞানবিজ্ঞানেও তাহার বুদ্ধি যেন ম্লান হইয়া পড়িয়াছে,—সৰ্ব্বভারতীয় কোন ব্যাপারে নেতৃত্ব করিবার জন্য আজ আর তাহার ডাক পড়ে না। ইহাতেও যদি বাঙ্গালী হিন্দুর চৈতন্য না হয়, তবে আর কিসে হইবে ?
বাঙ্গলার হিন্দু যুবকদিগকে, শিক্ষিত বাঙ্গালী হিন্দুসমাজ এবং রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদিগকে আমরা বলি,—সৰ্ব্বভারতীয় সমস্যা ও জাতীয় আন্দোলন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকিবে। সেই দিকে সমস্ত শক্তি নিয়োজিত না করিয়া একবার নিজেদের ঘরের দিকে দৃষ্টি ফিরান,—কিরূপে ক্ষয়িষ্ণু হিন্দুসমাজকে রক্ষা করা যায়, তাহার উপায় চিন্তা করুন। সকল বিষয়েই ভারতের অন্য প্রদেশের নেতাদের মুখের দিকে অসহায় ভাবে চাহিয়া থাকিলে চলিবে না, কেননা, বাঙ্গালী হিন্দুর সমস্যা লইয়া মাথা ঘামাইবার সময় তাঁহাদের নাই। নিজেদের সমস্যা সমাধানের ভার নিজেদেরই গ্রহণ করিতে হইবে। বাঙ্গালী হিন্দু যদি নিজেরাই না বঁচিল, তবে সৰ্ব্বভারতীয় সমস্যা বা জাতীয় জীবনের বড় বড় সমস্যার জন্য ব্যাকুল হইয়া ফল কি ? আর যাঁহারা মনে করেন যে, এরূপ করিলে জাতীয়তাকে ত্যাগ করিয়া সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হইবে, তাহাদিগকে বলি, আত্মরক্ষা কি সাম্প্রদায়িকতা ? সাম্প্রদায়িকতার ভয়ে যাহারা নিজেদের জীবনমরণ সমস্যা চিন্তা করিতে ভয় পায়, তাহাদের বুদ্ধি মোহাচ্ছন্ন, তাহারা আত্মঘাতী ।
বাঙ্গালী হিন্দুর এই জীবনমরণ সন্ধিক্ষণে রক্ষণশীল সনাতনপন্থী সমাজপতিদের নিকট আমাদের বিশেষ নিবেদন, তাঁহারা ‘আৰ্য্যামি’ ও সনাতনী গৰ্ব্ব ত্যাগ করিয়া—বাস্তব অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। এই গ্রন্থে যেসব তথ্য সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহা একটু মনোযোগ দিয়া পড়িলেই তাহারা বুঝিতে পরিবেন,—বাঙ্গালী হিন্দু কিরূপ দ্রুতগতিতে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হইতেছে। এই ধ্বংস নিবারণ করিতে হইলে বৰ্ত্তমান যুগের উপযোগী আমূল সমাজসংস্কার করিতে হইবে, হিন্দুসমাজের সংহতিশক্তি যাহাতে বাড়ে, তাহার উপায় উদ্ভাবন করিতে হইবে। অতীতে হিন্দুসমাজের সম্মুখে বহুবার এরূপ সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছিল, কিন্তু প্রাচীনেরা যুগোপযোগী সংস্কার করিয়া আত্মরক্ষা করিয়াছিলেন। বৰ্ত্তমান যুগের বাঙ্গালা হিন্দুর বুদ্ধি ও প্রতিভা কি এতই বন্ধ্যা হইয়াছে যে, তাহারা যুগোপযোগী সমাজসংস্কার করিয়া আত্মরক্ষা করিতে পারিবে না ?
সৰ্ব্বাগ্রে হিন্দুসমাজের নিম্নজাতিদের ক্ষয় নিবারণ করিতে হইবে। বহু শতাব্দী ধরিয়া তাহাদের প্রতি যে নিপীড়ননীতি আমরা অবলম্বন করিয়া আসিয়াছি, তাহা ত্যাগ করিয়া উহাদিগকে মনুষ্যত্বের মৰ্য্যাদা দিতে হইবে। অস্পৃশ্যতাবর্জ্জন, জাতিভেদের কঠোরতা ও সঙ্কীর্ণতা নিবারণ এবং অসবর্ণ বিবাহ—হিন্দু সমাজের সংহতিশক্তি গঠনের পক্ষে এই তিনটী পন্থাই অপরিহার্য্য। উচ্চবর্ণের হিন্দুদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে, হিন্দুসমাজে তাহারা সংখ্যাল্প, শতকরা ৩০ জনের বেশী নহে। অবশিষ্ট শতকরা ৭০ জনই তথাকথিত নিম্ন জাতির হিন্দু। সেই নিম্নজাতির হিন্দুদিগকে যদি আমরা উপেক্ষা করি, তাহারা যদি কৰ্ম্মক্ষেত্রে আমাদের পার্শ্বে না দাঁড়ায়, তবে হিন্দুসমাজ ছত্ৰভঙ্গ হইয়া পড়িবে।
ব্রিটিশ শাসকেরা হিন্দুসমাজের আভ্যন্তরীণ ভেদের সুযোগ লইয়া একটা কৃত্ৰিম ‘তপসীলী জাতির’ সৃষ্টি করিয়াছেন। যদি উচ্চজাতিরা এখনও সনাতনী গর্ব ও ঔদ্ধত্য ত্যাগ না করেন, তবে হিন্দুসমাজ অদূর ভবিষ্যতে বহু খণ্ডে বিভক্ত হইয়া পড়িবে। এই বিংশ শতাব্দীতে যে সব শিক্ষিত হিন্দু সনাতনী আৰ্য্য সাজিয়া প্রাচীন সরস্বতী নদীর তীর বা নৈমিষ্যারণ্যের দুঃস্বপ্ন দেখিতেছেন, তাহাদিগকে সূক্ষ্ম ভণ্ডামি ও ভাববিলাস ত্যাগ করিয়া আমরা আত্মস্থ হইতে অনুরোধ করি। বৈদিক যুগ বা বৌদ্ধ যুগের জয়গান করিয়া আমরা বিশ শতাব্দীর এই কঠোর জীবনসংগ্রামে আত্মরক্ষা করিতে পারিব না।
সৰ্ব্বোপরি মনে রাখিতে হইবে, হিন্দুনারীদিগকে যদি আমরা সমাজে যোগ্য স্থান না দেই, তাহাদের মনুষ্যত্বের মৰ্য্যাদা ও অধিকার স্বীকার না করি, তবে আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত। আমরা সুস্পষ্টরূপে দেখাইয়াছি, হিন্দুসমাজের ক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বিধবাবিবাহ নিযেধ। নারীদের প্রতি আমরা যে ঘোর অবিচার করিয়া আসিতেছি, তাহার প্রতিকার করিবার একটা প্ৰাথমিক উপায় বিধবাবিবাহের সুপ্ৰচলন। অন্য নানাদিক দিয়া হিন্দুসমাজে বিবাহ সমস্যার যে অনাবশ্যক ও অর্থহীন জটিলতা গত কয়েক শতাব্দী ধরিয়া আমরা সৃষ্টি করিয়াছি, জাতিক্ষয় নিবারণ করিতে হইলে তাহা ও দূর করা একান্ত প্রয়োজন ।
বাঙ্গলার ক্ষয়িষ্ণু হিন্দুজাতিকে রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব আজ আমাদের মাথার উপর পড়িয়াছে। যদি এই দায়িত্ব আমরা পালন করিতে না পারি, তবে ইতিহাস চিরদিনের জন্য আমাদের নাম কলঙ্কিত হইয়া থাকিবে।
সমাপ্ত
গ্রন্থঃ ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু
লেখকঃ প্রফুল্লকুমার সরকার
সংগৃহীতঃ হিন্দুত্ববুক্স হতে ।
বাঙ্গালী হিন্দুই গত শতাব্দীতে জাতীয় আন্দোলন প্ৰবৰ্ত্তিত করিয়াছিল, কংগ্রেসের সৃষ্টি করিয়াছিল, সমগ্ৰ ভারতীয় জাতির প্ৰাণে স্বাধীনতার প্রেরণা দিয়াছিল, পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান প্রচারে তাহারাই অগ্ৰণী হইয়াছিল, এমন এক সাহিত্য গড়িয়া তুলিয়াছিল, যাহার তুলনা কেবল ভারতে নহে, সমগ্র এশিয়াতেও নাই। জীবনের সৰ্ববিভাগে এমন সব প্ৰতিভাশালী ব্যক্তিদের জন্ম দিয়াছিল, যাহারা সমগ্ৰ ভারতের গৌরব, এমন কি অনেকস্থলে বিশ্বেরও গৌরব। সেই বাঙ্গালী হিন্দুর আজ কি শোচনীয় দুৰ্গতি ! সৰ্ব্বভারতীয় রাজনীতিতে তাহার প্রতিষ্ঠা নাই, জ্ঞানবিজ্ঞানেও তাহার বুদ্ধি যেন ম্লান হইয়া পড়িয়াছে,—সৰ্ব্বভারতীয় কোন ব্যাপারে নেতৃত্ব করিবার জন্য আজ আর তাহার ডাক পড়ে না। ইহাতেও যদি বাঙ্গালী হিন্দুর চৈতন্য না হয়, তবে আর কিসে হইবে ?
বাঙ্গলার হিন্দু যুবকদিগকে, শিক্ষিত বাঙ্গালী হিন্দুসমাজ এবং রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদিগকে আমরা বলি,—সৰ্ব্বভারতীয় সমস্যা ও জাতীয় আন্দোলন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকিবে। সেই দিকে সমস্ত শক্তি নিয়োজিত না করিয়া একবার নিজেদের ঘরের দিকে দৃষ্টি ফিরান,—কিরূপে ক্ষয়িষ্ণু হিন্দুসমাজকে রক্ষা করা যায়, তাহার উপায় চিন্তা করুন। সকল বিষয়েই ভারতের অন্য প্রদেশের নেতাদের মুখের দিকে অসহায় ভাবে চাহিয়া থাকিলে চলিবে না, কেননা, বাঙ্গালী হিন্দুর সমস্যা লইয়া মাথা ঘামাইবার সময় তাঁহাদের নাই। নিজেদের সমস্যা সমাধানের ভার নিজেদেরই গ্রহণ করিতে হইবে। বাঙ্গালী হিন্দু যদি নিজেরাই না বঁচিল, তবে সৰ্ব্বভারতীয় সমস্যা বা জাতীয় জীবনের বড় বড় সমস্যার জন্য ব্যাকুল হইয়া ফল কি ? আর যাঁহারা মনে করেন যে, এরূপ করিলে জাতীয়তাকে ত্যাগ করিয়া সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হইবে, তাহাদিগকে বলি, আত্মরক্ষা কি সাম্প্রদায়িকতা ? সাম্প্রদায়িকতার ভয়ে যাহারা নিজেদের জীবনমরণ সমস্যা চিন্তা করিতে ভয় পায়, তাহাদের বুদ্ধি মোহাচ্ছন্ন, তাহারা আত্মঘাতী ।
বাঙ্গালী হিন্দুর এই জীবনমরণ সন্ধিক্ষণে রক্ষণশীল সনাতনপন্থী সমাজপতিদের নিকট আমাদের বিশেষ নিবেদন, তাঁহারা ‘আৰ্য্যামি’ ও সনাতনী গৰ্ব্ব ত্যাগ করিয়া—বাস্তব অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। এই গ্রন্থে যেসব তথ্য সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহা একটু মনোযোগ দিয়া পড়িলেই তাহারা বুঝিতে পরিবেন,—বাঙ্গালী হিন্দু কিরূপ দ্রুতগতিতে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হইতেছে। এই ধ্বংস নিবারণ করিতে হইলে বৰ্ত্তমান যুগের উপযোগী আমূল সমাজসংস্কার করিতে হইবে, হিন্দুসমাজের সংহতিশক্তি যাহাতে বাড়ে, তাহার উপায় উদ্ভাবন করিতে হইবে। অতীতে হিন্দুসমাজের সম্মুখে বহুবার এরূপ সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছিল, কিন্তু প্রাচীনেরা যুগোপযোগী সংস্কার করিয়া আত্মরক্ষা করিয়াছিলেন। বৰ্ত্তমান যুগের বাঙ্গালা হিন্দুর বুদ্ধি ও প্রতিভা কি এতই বন্ধ্যা হইয়াছে যে, তাহারা যুগোপযোগী সমাজসংস্কার করিয়া আত্মরক্ষা করিতে পারিবে না ?
সৰ্ব্বাগ্রে হিন্দুসমাজের নিম্নজাতিদের ক্ষয় নিবারণ করিতে হইবে। বহু শতাব্দী ধরিয়া তাহাদের প্রতি যে নিপীড়ননীতি আমরা অবলম্বন করিয়া আসিয়াছি, তাহা ত্যাগ করিয়া উহাদিগকে মনুষ্যত্বের মৰ্য্যাদা দিতে হইবে। অস্পৃশ্যতাবর্জ্জন, জাতিভেদের কঠোরতা ও সঙ্কীর্ণতা নিবারণ এবং অসবর্ণ বিবাহ—হিন্দু সমাজের সংহতিশক্তি গঠনের পক্ষে এই তিনটী পন্থাই অপরিহার্য্য। উচ্চবর্ণের হিন্দুদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে, হিন্দুসমাজে তাহারা সংখ্যাল্প, শতকরা ৩০ জনের বেশী নহে। অবশিষ্ট শতকরা ৭০ জনই তথাকথিত নিম্ন জাতির হিন্দু। সেই নিম্নজাতির হিন্দুদিগকে যদি আমরা উপেক্ষা করি, তাহারা যদি কৰ্ম্মক্ষেত্রে আমাদের পার্শ্বে না দাঁড়ায়, তবে হিন্দুসমাজ ছত্ৰভঙ্গ হইয়া পড়িবে।
ব্রিটিশ শাসকেরা হিন্দুসমাজের আভ্যন্তরীণ ভেদের সুযোগ লইয়া একটা কৃত্ৰিম ‘তপসীলী জাতির’ সৃষ্টি করিয়াছেন। যদি উচ্চজাতিরা এখনও সনাতনী গর্ব ও ঔদ্ধত্য ত্যাগ না করেন, তবে হিন্দুসমাজ অদূর ভবিষ্যতে বহু খণ্ডে বিভক্ত হইয়া পড়িবে। এই বিংশ শতাব্দীতে যে সব শিক্ষিত হিন্দু সনাতনী আৰ্য্য সাজিয়া প্রাচীন সরস্বতী নদীর তীর বা নৈমিষ্যারণ্যের দুঃস্বপ্ন দেখিতেছেন, তাহাদিগকে সূক্ষ্ম ভণ্ডামি ও ভাববিলাস ত্যাগ করিয়া আমরা আত্মস্থ হইতে অনুরোধ করি। বৈদিক যুগ বা বৌদ্ধ যুগের জয়গান করিয়া আমরা বিশ শতাব্দীর এই কঠোর জীবনসংগ্রামে আত্মরক্ষা করিতে পারিব না।
সৰ্ব্বোপরি মনে রাখিতে হইবে, হিন্দুনারীদিগকে যদি আমরা সমাজে যোগ্য স্থান না দেই, তাহাদের মনুষ্যত্বের মৰ্য্যাদা ও অধিকার স্বীকার না করি, তবে আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত। আমরা সুস্পষ্টরূপে দেখাইয়াছি, হিন্দুসমাজের ক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বিধবাবিবাহ নিযেধ। নারীদের প্রতি আমরা যে ঘোর অবিচার করিয়া আসিতেছি, তাহার প্রতিকার করিবার একটা প্ৰাথমিক উপায় বিধবাবিবাহের সুপ্ৰচলন। অন্য নানাদিক দিয়া হিন্দুসমাজে বিবাহ সমস্যার যে অনাবশ্যক ও অর্থহীন জটিলতা গত কয়েক শতাব্দী ধরিয়া আমরা সৃষ্টি করিয়াছি, জাতিক্ষয় নিবারণ করিতে হইলে তাহা ও দূর করা একান্ত প্রয়োজন ।
বাঙ্গলার ক্ষয়িষ্ণু হিন্দুজাতিকে রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব আজ আমাদের মাথার উপর পড়িয়াছে। যদি এই দায়িত্ব আমরা পালন করিতে না পারি, তবে ইতিহাস চিরদিনের জন্য আমাদের নাম কলঙ্কিত হইয়া থাকিবে।
সমাপ্ত
গ্রন্থঃ ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু
লেখকঃ প্রফুল্লকুমার সরকার
সংগৃহীতঃ হিন্দুত্ববুক্স হতে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন