জীববিজ্ঞানের ন্যায় সমাজবিজ্ঞানের গোড়ার কথাই এই যে, যেসমাজ পরিবর্ত্তনশীল পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন করিতে পারে না, শীঘ্ৰ হউক বা বিলম্বে হউক, তাহার মৃত্যু নিশ্চিত। অনেক প্রাচীন জীবের ন্যায় অনেক প্রাচীন জাতিও এই কারণেই ধরা পৃষ্ঠ হইতে লুপ্ত হইয়াছে, ভবিষ্যতেও আরও অনেক জাতি যে জীবন সংগ্রামে আত্মরক্ষা করিবার এই অক্ষমতার জন্য লুপ্ত হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। প্রাচীন হিন্দুজাতিও সেই পথের পথিক হইবে কিনা নানা কারণে এই প্রশ্ন আজি উঠিয়াছে। আমরা বহু শতাব্দী ধরিয়া টিকিয়া আছি, অতএব ভবিষ্যতেও টিকিয়া থাকিব, এরূপ যুক্তি বালকোচিত। তারপর কোনমতে টিকিয়া থাকাই পরম পুরুষাৰ্থ নহে। একটা জাতি জীবন্মৃত অবস্থায় বহুকাল টিকিয়া থাকিতে পারে, ক্ষয়রোগীও অনেক সময় দীর্ঘজীবী হয়। কিন্তু কোন বুদ্ধিমান এবং আত্মমৰ্য্যাদাসম্পন্ন জাতিই তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিতে পারে না। আর যাঁহারা বলেন, আমরা আধ্যাত্মিক জাতি, ‘কৌপীনবন্তং খলু ভাগ্যবন্তং’ অবস্থায় জগতের অন্যান্য জড়বাদী জাতিদিগকে ব্ৰহ্মজ্ঞান দান করিবার জন্যই আমরা বাঁচিয়া আছি—সেই সব মোহগ্ৰস্ত আত্মপ্ৰতারকদের সঙ্গে কোনরূপ আলোচনা করাই নিরর্থক।
স্বামী বিবেকানন্দ বড় দুঃখেই বলিয়াছিলেন, আমরা যে আধ্যাত্মিকতার বড়াই করি, তাহা প্ৰকৃতপক্ষে তামসিকতার লক্ষণ। এই কারণেই হিন্দুজাতিকে স্বামীজী কিঞ্চিৎ রজোগুণের চর্চা করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন। কিন্তু সে উপদেশ আমরা গ্ৰহণ করিতে পারিয়াছি বলিয়া মনে হয় না।
প্ৰথমেই বিবেচ্য, পাঁচ হাজার বৎসর ধরিয়া যে জাতিভেদের কাঠামোর মধ্যে হিন্দুসমাজ দাঁড়াইয়া আছে, সেই কাঠামো বদলাইবার প্রয়োজন আছে কিনা। আমরা ইতিপূর্ব্বে যেসব কথা বলিয়াছি, তাহাতে অপরিহার্য্যরূপেই এই সিদ্ধান্ত আসিয়া পড়ে যে, জাতিভেদের কাঠামো ত্যাগ না করিলে হিন্দুসমাজ আত্মরক্ষা করিতে পরিবে না। জাতিভেদের ফলে হিন্দুসমাজে সংহতিশক্তির অভাব ঘটিয়াছে, সমস্ত সমাজ দানা বাধিয়া একই সঙ্ঘবদ্ধ প্ৰতিষ্ঠানে পরিণত হইতে পারে নাই। ভারতবর্ষে হিন্দুরা যে কোন শক্তিশালী ‘নেশন’ বা মহাজাতি গঠন করিতে পারে নাই, তাহারও কারণ এই জাতিভেদ। ইহা হিন্দুসমাজকে প্রথমত উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণে বিভক্ত করিয়াছে। উহাদের মধ্যেও আবার বহু উপবিভাগ, শাখা প্ৰশাখা প্ৰভৃতির সৃষ্টি হইয়াছে। কতকগুলি জাতিকে আবার আমরা অস্পৃশ্য ও অনাচরণীয় বলিয়া ছাপ দিয়া অপাঙ্ক্তেয় করিয়া রাখিয়াছি। ফলে হিন্দুসমাজ একটা ঐক্যবদ্ধ সমাজ নয়, বহু বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজের সমষ্টি মাত্ৰ, উহাদের মধ্যে কোন নিবিড় যোগসূত্ৰ নাই। এরূপ দুর্বল, সংহতিশক্তিহীন সমাজ বাহিরের সঙ্ঘবদ্ধ প্ৰবল শক্তির বিরুদ্ধে বেশীদিন আত্মরক্ষা করিতে পারে না। অধ্যাপক যদুনাথ সরকার তাঁহার ‘শিবাজী’1 গ্রন্থে মারাঠা জাতির অবস্থা আলোচনা প্রসঙ্গে এইরূপ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন :
“Infinitely minute subdivisions of society made, the formation of one nation or a compact body of men moved by the community of life, thought and interest, impossible and even inconcivable.”
ইহা কেবল মহারাষ্ট্র দেশের হিন্দুদের পক্ষেই প্রযোজ্য নয়, সমগ্র ভারতের হিন্দু সমাজের পক্ষেই প্রযোজ্য । ঐতিহাসিক ভিন্সেন্ট স্মিথ, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ মনীষীরাও বহু জাতি-উপজাতিভেদকে হিন্দুসমাজের প্রধান দৌর্বল্য এবং ভারতে ‘নেশন’ বা মহাজাতি গঠনের প্রবল বাধা স্বরূপ বলিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন ।
জাতিভেদের আর একটা বিষময় ফল, মানুষকে সে মানুষের মৰ্য্যাদা দেয় নাই, তাহাকে নানারূপ কৃত্ৰিম গণ্ডীবদ্ধ করিয়া, বিচিত্র রকমের উচ্চনীচ স্তরভেদ করিয়া তাহার মধ্যে আত্মদৈন্যের ( inferiority complex) সৃষ্টি করিয়াছে। এই আত্মদৈন্য হিন্দুসমাজকে ক্রমশ ক্ষয় করিয়া ফেলিতেছে।
অতএব প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন জাতিভেদের বিলোপ। সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গণ্ডী ভাঙ্গিয়া হিন্দুসমাজদেহে নূতন প্ৰাণশক্তির সঞ্চার করিতে হইবে, তাহার মধ্যে সঙ্ঘবদ্ধতার বিকাশ করিতে হইবে। ভারতের ইতিহাসে কয়েকবার এই চেষ্টা হইয়াছে, কিন্তু নানা প্ৰতিকূল শক্তির জন্য উহা সফল হইতে পারে নাই। বৌদ্ধধৰ্ম্ম তাহার সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শের ভিতর দিয়া এই চেষ্টা করিয়াছিল, শ্ৰীচৈতন্যের প্রচারিত বৈষ্ণবধৰ্ম্মও এই চেষ্টা করিয়াছিল। কিরূপে উহা ব্যর্থ হইয়াছে, পূর্বে তাহার আভাস আমরা দিয়াছি। বৰ্ত্তমান কালে আৰ্য্যসমাজ ও ব্ৰাহ্মসমাজও এই চেষ্টা কিয়ৎপরিমাণে করিয়াছে। আৰ্যসমাজের আদর্শে অনুপ্রাণিত পাঞ্জাবের ‘জাতপাত তোড়কমণ্ডল’ এখনও এই চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু হিন্দু সমাজের ভিতর হইতেই যদি ব্যাপকভাবে এইরূপ প্ৰচেষ্টা না হয়, তবে সাফল্যের আশা কম। স্মরণ রাখিতে হইবে, জাতিভেদ প্ৰাচীন হিন্দুসমাজের সুদৃঢ় দুৰ্গস্বরূপ। ইহাকে ধ্বংস করা মোটেই সহজসাধ্য নহে। অতএব কেবল সম্মুখের দিক হইতে আক্রমণ না চালাইয়া দুই পার্শ্ব হইতে কৌশলে আক্রমণ করাও প্ৰয়োজন।
আমাদের মতে অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন এবং অসবর্ণ বিবাহ—এই দুই আন্দোলন পার্শ্বদেশ হইতে আক্রমণ চালাইবার প্রধান উপায়। অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন আমরা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করিতেছি। হিন্দুসমাজে অস্পৃশ্য ও অনাচরণীয় বলিয়া কেহ থাকিবে না, সকলেই দেবমন্দিরে প্রবেশ করিতে পরিবে, কূপতড়াগাদি হইতে জল তুলিতে পরিবে, বিদ্যালয়ে সৰ্ব্বজাতির হিন্দু একত্ৰ পড়িতে পরিবে—এ সবই অস্পৃশ্যতা বর্জনের অঙ্গ। আদমসুমারিতে বিভিন্ন জাতি অনুসারে হিন্দুর নাম থাকিবে না, সকলেই মাত্ৰ ‘হিন্দু’ বলিয়া উল্লিখিত হইবে, ইহাও একটা উপায় ।2 সরকারী বিধানে ‘তপসিলভুক্ত জাতি’ বলিয়া যে কৃত্রিম রাজনৈতিক উপবিভাগের সৃষ্টি হইয়াছে, যেরূপেই হোক তাহা তুলিয়া দিতে হইবে। যদি কোন হিন্দুই ‘তপসিল’ ভুক্ত হইতে স্বীকৃত না হয়, তবে সহজেই সমস্যার সমাধান হইতে পারে। কিন্তু আমরা যদি তথাকথিত ‘তপসিল’ ভুক্তিদের মনে প্রীতি ও আস্থার ভাব সঞ্চার করিতে না পারি, তবে তাহারা ঐ প্রস্তাবে সম্মত হইবে কেন ?
এইখানেই উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের মধ্যে সঙ্ঘর্ষের কথা আসিয়া পড়ে।
জাতিভেদ তথা স্তরভেদ ও শ্রেণীবিভাগের ফলে বহু শতাব্দী ধরিয়া উচ্চ ও নিম্ন জাতিদের মধ্যে ব্যবধানের সৃষ্টি হইয়াছে এবং ঐ ব্যবধান বাড়িয়াই চলিয়াছে। এই ব্যবধান দূর করিতে হইলে তথাকথিত উচ্চবর্ণীয়দের অভিমান ও ভ্ৰান্ত মৰ্য্যাদাবোধ ত্যাগ করিয়া তথাকথিত নিম্নবর্ণীয়দের সঙ্গে মিলন মিশ্রণ করিতে হইবে। অনুকম্পা বা পতিতোদ্বারের ভাব লইয়া নয়, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শে উদ্বূদ্ধ হইয়া মনুষ্যত্বের মৰ্য্যাদার উপর এই মিলনবেদীর প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। হিন্দুতে হিন্দুতে কোন ভেদ নাই, উচ্চনীচ স্তরবৈষম্য নাই, সকলেই এক হিন্দুসমাজের অন্তর্ভুক্ত—এই মহান্ আদর্শ সৰ্ব্বদা আমাদের সম্মুখে রাখিতে হইবে।
এই মহান আদর্শ যাহাতে কাৰ্য্যক্ষেত্রে অনুসৃত হইয়া হিন্দুসমাজের মধ্যে সংহতিশক্তি বা সঙ্ঘবদ্ধতার ভাব সঞ্চার করিতে পারে, তাহার জন্য নানা উপায় অবলম্বন করা যাইতে পারে। প্রথমত, সমাজসেবাব্রতী হিন্দু সেবক দল গঠন। জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকল হিন্দুযুবকই এই সেবকদলভুক্ত হইতে পরিবে। ইহাদের মধ্যে উচ্চ-নীচ স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য বা আচরণীয়-অনাচরণীয়ের ভেদ থাকিবে না। তাহারা পরস্পরে একত্রে আহারব্যবহার করিবে। তারপর, এমন সব সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করিতে হইবে, যাহাতে জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকল হিন্দুই যোগ দিতে পারে। দেবমন্দিরে যদি সকল হিন্দুর প্রবেশ ও পূজার অধিকার স্বীকার করা হয়, তবে এইরূপ সর্বজনীন উৎসব অনুষ্ঠান সহজ হইবে। বৰ্ত্তমান সময়ে যেসব “সর্বজনীন পূজা উৎসব” হয়, তাহা এই দিক হইতে খুবই মূল্যবান। এই শ্রেণীর উৎসবের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করিতে হইবে।
অসবর্ণ বিবাহ জাতিভেদের দুর্গ শিথিল করিবার আর একটি প্ৰধান উপায়। অসবর্ণ বিবাহ হিন্দুসমাজে এককালে প্ৰচলিত ছিল, কিন্তু জাতিভেদের কঠোরতা বৃদ্ধি পাওয়াতে পরবর্ত্তী কালে উহা অপ্রচলিত হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু বৰ্ত্তমান কালে হিন্দুসমাজকে রক্ষা করিবার জন্য উহার বহুল প্ৰচলন আবশ্যক 3 । অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলিত হইলে কেবল যে বিভিন্ন জাতির মধ্যে মিলন মিশ্রণের ক্ষেত্র প্রসারিত হইবে তাহা নহে, বিবাহক্ষেত্রের সঙ্কীর্ণতা দূর হইবে, বিভিন্ন শ্রেণীর রক্তমিশ্রণে হিন্দু সমাজের উৎকর্ষ সাধিত হইবে । অসবর্ণ বিবাহের পক্ষে যে আইনের বাধা ছিল, তাহা দূর হইয়াছে, সুতরাং সমাজহিতকামী ব্যক্তিগণ অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলনের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করিতে পারেন ।
কিন্তু গোঁড়াদের “ধৰ্ম্ম গেল” চীৎকার ছাড়াও অসবর্ণ বিবাহ প্রচলনের পথে একটা যে প্রবল বাধা আছে, তাহা আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। অসবর্ণ বিবাহের ফলে যে সব সন্তানসন্ততি হইবে, তাহাদের বর্ণ বা জাতি কি হইবে ? সহজ বুদ্ধিতে বলে উহারা পিতার বর্ণ বা জাতিই পাইবে। কিন্তু এই হতভাগ্য সমাজে অসবর্ণ বিবাহের ফলেও নূতন নূতন জাতি সৃষ্টির দৃষ্টান্ত দেখা গিয়াছে। সেরূপ যাহাতে না ঘটে, সমাজপতিগণকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবে।
জাতিভেদ লোপ, অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন এবং অসবর্ণ বিবাহের বিরুদ্ধে আর এক শ্রেণীর আপত্তি উঠিয়া থাকে। এই শ্রেণীর আপত্তিকারিগণ বিজ্ঞানের ভাষায় কথা বলেন। তাঁহারা বলেন, জাতিভেদ উঠাইয়া দিলে হিন্দুসমাজের বিভিন্ন স্তরে যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বৈষম্য আছে, তাহা লুপ্ত হইবে, ফলে সমগ্রভাবে হিন্দুসমাজের সংস্কৃতির অপকর্ষ ঘটবে। ব্ৰাহ্মণ প্ৰভৃতি উচ্চজাতি বহু শতাব্দীর অনুশীলনের ফলে উচ্চ শ্রেণীর সংস্কৃতি ও সদাচার লাভ করিয়াছে,—নিম্নবর্ণীয়েরা ঐ বিষয়ে অনেক নীচে পড়িয়া আছে। জাতিভেদ লোপ করিয়া অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলিত করিলে, উচ্চস্তরের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য নষ্ট হইবে এবং তাহাতে ঘোর অনিষ্টই হইবে। অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন ও খাদ্যবিচার ত্যাগের ফলেও ঐ অবস্থা ঘটিবে। আপত্তিকারীরা আরও বলেন যে, জাতিভেদ কোন না কোন আকারে পাশ্চাত্য সমাজেও আছে, সেখানেও ধনী দরিদ্র, অভিজাত ও সাধারণ লোকের মধ্যে বিবাহ ও আহারব্যবহার প্রচলিত নাই। কিন্তু এই শ্রেণীর আপত্তিকারীরা ইচ্ছা করিয়াই ভুলিয়া যান যে, বংশগত জাতিভেদের বৈষম্য এবং ধনী-দরিদ্র, অভিজাত-সাধারণের বৈষম্য এক জিনিষ নয়। পাশ্চাত্য সমাজে আজ যে দরিদ্র ও সাধারণ-লোক, দশ বৎসর পরে স্বীয় বুদ্ধিমত্তা ও চরিত্রবলে সে-ই ধনী ও অভিজাত হইতে পারে। সুতরাং সমাজের সকল দ্বারই যে কোন লোকের জন্য অবারিত। বংশগত জাতিভেদের বৈষম্যে ঐ রূপ হইতে পারে না। উহাতে কতকগুলি জাতি অন্য দিক দিয়া সহস্ৰ যোগ্যতা লাভ করিলেও নিম্নস্তরেই থাকিয়া যায়, আর কতকগুলি জাতি অযোগ্য হইলেও সমাজের শীর্ষস্থানে উচ্চস্তরে বিরাজ করিতে থাকে। ইহার ফলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সদাচার, আভিজাত্য ইত্যাদি সমাজের সর্বস্তরে প্রসারিত হইতে পারে না এবং সমগ্রভাবে সমাজের ক্ষতিই হয়। তারপর জাতিভেদ লোপ এবং অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলিত হইলেও, যাহারা শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সমান সাধারণতঃ এমন সব শ্রেণীর মধ্যেই বিবাহ ও আহারব্যবহার চলিবে, যেসব সমাজে জাতিভেদ নাই সেখানেও ঐরূপই হইয়া থাকে। সুতরাং বৈজ্ঞানিক আপত্তিকারীদের হিন্দুসমাজের সংস্কৃতি লোপের আশঙ্কা সম্পূর্ণ অমূলক।
• Sarkar, Jadunath. Sivaji. 5th ed. 1952. p. 378.↩
• ১৯৪১ সালের আদমসুমারীতে এই প্রচেষ্টা কিয়ৎ পরিমাণে সফল হইয়াছে । বহু হিন্দু কেবলমাত্র ‘হিন্দু’ বলিয়া নাম লিখাইয়াছে, কোন জাতির উল্লেখ করে নাই । দেওয়ানী আদালতে সাক্ষ্য দিবার কালে অনেকে নিজেকে ‘হিন্দু’ বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন ।ーলেখক↩
• ডা. মুঞ্জে বলেন, হিন্দু সমাজের সকল ব্যাধির পক্ষে ‘অসবর্ণ বিবাহ’ মহৌষধের কাজ করিবে । ‘ডা. মুঞ্জে ও বর্তমান হিন্দুসমাজ’ প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য ।ーলেখক↩
চলবে ...
গ্রন্থঃ ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু
লেখকঃ প্রফুল্লকুমার সরকার
সংগৃহীতঃ হিন্দুত্ববুক্স হতে ।
স্বামী বিবেকানন্দ বড় দুঃখেই বলিয়াছিলেন, আমরা যে আধ্যাত্মিকতার বড়াই করি, তাহা প্ৰকৃতপক্ষে তামসিকতার লক্ষণ। এই কারণেই হিন্দুজাতিকে স্বামীজী কিঞ্চিৎ রজোগুণের চর্চা করিতে উপদেশ দিয়াছিলেন। কিন্তু সে উপদেশ আমরা গ্ৰহণ করিতে পারিয়াছি বলিয়া মনে হয় না।
প্ৰথমেই বিবেচ্য, পাঁচ হাজার বৎসর ধরিয়া যে জাতিভেদের কাঠামোর মধ্যে হিন্দুসমাজ দাঁড়াইয়া আছে, সেই কাঠামো বদলাইবার প্রয়োজন আছে কিনা। আমরা ইতিপূর্ব্বে যেসব কথা বলিয়াছি, তাহাতে অপরিহার্য্যরূপেই এই সিদ্ধান্ত আসিয়া পড়ে যে, জাতিভেদের কাঠামো ত্যাগ না করিলে হিন্দুসমাজ আত্মরক্ষা করিতে পরিবে না। জাতিভেদের ফলে হিন্দুসমাজে সংহতিশক্তির অভাব ঘটিয়াছে, সমস্ত সমাজ দানা বাধিয়া একই সঙ্ঘবদ্ধ প্ৰতিষ্ঠানে পরিণত হইতে পারে নাই। ভারতবর্ষে হিন্দুরা যে কোন শক্তিশালী ‘নেশন’ বা মহাজাতি গঠন করিতে পারে নাই, তাহারও কারণ এই জাতিভেদ। ইহা হিন্দুসমাজকে প্রথমত উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণে বিভক্ত করিয়াছে। উহাদের মধ্যেও আবার বহু উপবিভাগ, শাখা প্ৰশাখা প্ৰভৃতির সৃষ্টি হইয়াছে। কতকগুলি জাতিকে আবার আমরা অস্পৃশ্য ও অনাচরণীয় বলিয়া ছাপ দিয়া অপাঙ্ক্তেয় করিয়া রাখিয়াছি। ফলে হিন্দুসমাজ একটা ঐক্যবদ্ধ সমাজ নয়, বহু বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজের সমষ্টি মাত্ৰ, উহাদের মধ্যে কোন নিবিড় যোগসূত্ৰ নাই। এরূপ দুর্বল, সংহতিশক্তিহীন সমাজ বাহিরের সঙ্ঘবদ্ধ প্ৰবল শক্তির বিরুদ্ধে বেশীদিন আত্মরক্ষা করিতে পারে না। অধ্যাপক যদুনাথ সরকার তাঁহার ‘শিবাজী’1 গ্রন্থে মারাঠা জাতির অবস্থা আলোচনা প্রসঙ্গে এইরূপ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন :
“Infinitely minute subdivisions of society made, the formation of one nation or a compact body of men moved by the community of life, thought and interest, impossible and even inconcivable.”
ইহা কেবল মহারাষ্ট্র দেশের হিন্দুদের পক্ষেই প্রযোজ্য নয়, সমগ্র ভারতের হিন্দু সমাজের পক্ষেই প্রযোজ্য । ঐতিহাসিক ভিন্সেন্ট স্মিথ, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ মনীষীরাও বহু জাতি-উপজাতিভেদকে হিন্দুসমাজের প্রধান দৌর্বল্য এবং ভারতে ‘নেশন’ বা মহাজাতি গঠনের প্রবল বাধা স্বরূপ বলিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন ।
জাতিভেদের আর একটা বিষময় ফল, মানুষকে সে মানুষের মৰ্য্যাদা দেয় নাই, তাহাকে নানারূপ কৃত্ৰিম গণ্ডীবদ্ধ করিয়া, বিচিত্র রকমের উচ্চনীচ স্তরভেদ করিয়া তাহার মধ্যে আত্মদৈন্যের ( inferiority complex) সৃষ্টি করিয়াছে। এই আত্মদৈন্য হিন্দুসমাজকে ক্রমশ ক্ষয় করিয়া ফেলিতেছে।
অতএব প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন জাতিভেদের বিলোপ। সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গণ্ডী ভাঙ্গিয়া হিন্দুসমাজদেহে নূতন প্ৰাণশক্তির সঞ্চার করিতে হইবে, তাহার মধ্যে সঙ্ঘবদ্ধতার বিকাশ করিতে হইবে। ভারতের ইতিহাসে কয়েকবার এই চেষ্টা হইয়াছে, কিন্তু নানা প্ৰতিকূল শক্তির জন্য উহা সফল হইতে পারে নাই। বৌদ্ধধৰ্ম্ম তাহার সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শের ভিতর দিয়া এই চেষ্টা করিয়াছিল, শ্ৰীচৈতন্যের প্রচারিত বৈষ্ণবধৰ্ম্মও এই চেষ্টা করিয়াছিল। কিরূপে উহা ব্যর্থ হইয়াছে, পূর্বে তাহার আভাস আমরা দিয়াছি। বৰ্ত্তমান কালে আৰ্য্যসমাজ ও ব্ৰাহ্মসমাজও এই চেষ্টা কিয়ৎপরিমাণে করিয়াছে। আৰ্যসমাজের আদর্শে অনুপ্রাণিত পাঞ্জাবের ‘জাতপাত তোড়কমণ্ডল’ এখনও এই চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু হিন্দু সমাজের ভিতর হইতেই যদি ব্যাপকভাবে এইরূপ প্ৰচেষ্টা না হয়, তবে সাফল্যের আশা কম। স্মরণ রাখিতে হইবে, জাতিভেদ প্ৰাচীন হিন্দুসমাজের সুদৃঢ় দুৰ্গস্বরূপ। ইহাকে ধ্বংস করা মোটেই সহজসাধ্য নহে। অতএব কেবল সম্মুখের দিক হইতে আক্রমণ না চালাইয়া দুই পার্শ্ব হইতে কৌশলে আক্রমণ করাও প্ৰয়োজন।
আমাদের মতে অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন এবং অসবর্ণ বিবাহ—এই দুই আন্দোলন পার্শ্বদেশ হইতে আক্রমণ চালাইবার প্রধান উপায়। অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন আমরা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করিতেছি। হিন্দুসমাজে অস্পৃশ্য ও অনাচরণীয় বলিয়া কেহ থাকিবে না, সকলেই দেবমন্দিরে প্রবেশ করিতে পরিবে, কূপতড়াগাদি হইতে জল তুলিতে পরিবে, বিদ্যালয়ে সৰ্ব্বজাতির হিন্দু একত্ৰ পড়িতে পরিবে—এ সবই অস্পৃশ্যতা বর্জনের অঙ্গ। আদমসুমারিতে বিভিন্ন জাতি অনুসারে হিন্দুর নাম থাকিবে না, সকলেই মাত্ৰ ‘হিন্দু’ বলিয়া উল্লিখিত হইবে, ইহাও একটা উপায় ।2 সরকারী বিধানে ‘তপসিলভুক্ত জাতি’ বলিয়া যে কৃত্রিম রাজনৈতিক উপবিভাগের সৃষ্টি হইয়াছে, যেরূপেই হোক তাহা তুলিয়া দিতে হইবে। যদি কোন হিন্দুই ‘তপসিল’ ভুক্ত হইতে স্বীকৃত না হয়, তবে সহজেই সমস্যার সমাধান হইতে পারে। কিন্তু আমরা যদি তথাকথিত ‘তপসিল’ ভুক্তিদের মনে প্রীতি ও আস্থার ভাব সঞ্চার করিতে না পারি, তবে তাহারা ঐ প্রস্তাবে সম্মত হইবে কেন ?
এইখানেই উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের মধ্যে সঙ্ঘর্ষের কথা আসিয়া পড়ে।
জাতিভেদ তথা স্তরভেদ ও শ্রেণীবিভাগের ফলে বহু শতাব্দী ধরিয়া উচ্চ ও নিম্ন জাতিদের মধ্যে ব্যবধানের সৃষ্টি হইয়াছে এবং ঐ ব্যবধান বাড়িয়াই চলিয়াছে। এই ব্যবধান দূর করিতে হইলে তথাকথিত উচ্চবর্ণীয়দের অভিমান ও ভ্ৰান্ত মৰ্য্যাদাবোধ ত্যাগ করিয়া তথাকথিত নিম্নবর্ণীয়দের সঙ্গে মিলন মিশ্রণ করিতে হইবে। অনুকম্পা বা পতিতোদ্বারের ভাব লইয়া নয়, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শে উদ্বূদ্ধ হইয়া মনুষ্যত্বের মৰ্য্যাদার উপর এই মিলনবেদীর প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। হিন্দুতে হিন্দুতে কোন ভেদ নাই, উচ্চনীচ স্তরবৈষম্য নাই, সকলেই এক হিন্দুসমাজের অন্তর্ভুক্ত—এই মহান্ আদর্শ সৰ্ব্বদা আমাদের সম্মুখে রাখিতে হইবে।
এই মহান আদর্শ যাহাতে কাৰ্য্যক্ষেত্রে অনুসৃত হইয়া হিন্দুসমাজের মধ্যে সংহতিশক্তি বা সঙ্ঘবদ্ধতার ভাব সঞ্চার করিতে পারে, তাহার জন্য নানা উপায় অবলম্বন করা যাইতে পারে। প্রথমত, সমাজসেবাব্রতী হিন্দু সেবক দল গঠন। জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকল হিন্দুযুবকই এই সেবকদলভুক্ত হইতে পরিবে। ইহাদের মধ্যে উচ্চ-নীচ স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য বা আচরণীয়-অনাচরণীয়ের ভেদ থাকিবে না। তাহারা পরস্পরে একত্রে আহারব্যবহার করিবে। তারপর, এমন সব সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করিতে হইবে, যাহাতে জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকল হিন্দুই যোগ দিতে পারে। দেবমন্দিরে যদি সকল হিন্দুর প্রবেশ ও পূজার অধিকার স্বীকার করা হয়, তবে এইরূপ সর্বজনীন উৎসব অনুষ্ঠান সহজ হইবে। বৰ্ত্তমান সময়ে যেসব “সর্বজনীন পূজা উৎসব” হয়, তাহা এই দিক হইতে খুবই মূল্যবান। এই শ্রেণীর উৎসবের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করিতে হইবে।
অসবর্ণ বিবাহ জাতিভেদের দুর্গ শিথিল করিবার আর একটি প্ৰধান উপায়। অসবর্ণ বিবাহ হিন্দুসমাজে এককালে প্ৰচলিত ছিল, কিন্তু জাতিভেদের কঠোরতা বৃদ্ধি পাওয়াতে পরবর্ত্তী কালে উহা অপ্রচলিত হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু বৰ্ত্তমান কালে হিন্দুসমাজকে রক্ষা করিবার জন্য উহার বহুল প্ৰচলন আবশ্যক 3 । অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলিত হইলে কেবল যে বিভিন্ন জাতির মধ্যে মিলন মিশ্রণের ক্ষেত্র প্রসারিত হইবে তাহা নহে, বিবাহক্ষেত্রের সঙ্কীর্ণতা দূর হইবে, বিভিন্ন শ্রেণীর রক্তমিশ্রণে হিন্দু সমাজের উৎকর্ষ সাধিত হইবে । অসবর্ণ বিবাহের পক্ষে যে আইনের বাধা ছিল, তাহা দূর হইয়াছে, সুতরাং সমাজহিতকামী ব্যক্তিগণ অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলনের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করিতে পারেন ।
কিন্তু গোঁড়াদের “ধৰ্ম্ম গেল” চীৎকার ছাড়াও অসবর্ণ বিবাহ প্রচলনের পথে একটা যে প্রবল বাধা আছে, তাহা আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। অসবর্ণ বিবাহের ফলে যে সব সন্তানসন্ততি হইবে, তাহাদের বর্ণ বা জাতি কি হইবে ? সহজ বুদ্ধিতে বলে উহারা পিতার বর্ণ বা জাতিই পাইবে। কিন্তু এই হতভাগ্য সমাজে অসবর্ণ বিবাহের ফলেও নূতন নূতন জাতি সৃষ্টির দৃষ্টান্ত দেখা গিয়াছে। সেরূপ যাহাতে না ঘটে, সমাজপতিগণকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবে।
জাতিভেদ লোপ, অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন এবং অসবর্ণ বিবাহের বিরুদ্ধে আর এক শ্রেণীর আপত্তি উঠিয়া থাকে। এই শ্রেণীর আপত্তিকারিগণ বিজ্ঞানের ভাষায় কথা বলেন। তাঁহারা বলেন, জাতিভেদ উঠাইয়া দিলে হিন্দুসমাজের বিভিন্ন স্তরে যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বৈষম্য আছে, তাহা লুপ্ত হইবে, ফলে সমগ্রভাবে হিন্দুসমাজের সংস্কৃতির অপকর্ষ ঘটবে। ব্ৰাহ্মণ প্ৰভৃতি উচ্চজাতি বহু শতাব্দীর অনুশীলনের ফলে উচ্চ শ্রেণীর সংস্কৃতি ও সদাচার লাভ করিয়াছে,—নিম্নবর্ণীয়েরা ঐ বিষয়ে অনেক নীচে পড়িয়া আছে। জাতিভেদ লোপ করিয়া অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলিত করিলে, উচ্চস্তরের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য নষ্ট হইবে এবং তাহাতে ঘোর অনিষ্টই হইবে। অস্পৃশ্যতা বর্জ্জন ও খাদ্যবিচার ত্যাগের ফলেও ঐ অবস্থা ঘটিবে। আপত্তিকারীরা আরও বলেন যে, জাতিভেদ কোন না কোন আকারে পাশ্চাত্য সমাজেও আছে, সেখানেও ধনী দরিদ্র, অভিজাত ও সাধারণ লোকের মধ্যে বিবাহ ও আহারব্যবহার প্রচলিত নাই। কিন্তু এই শ্রেণীর আপত্তিকারীরা ইচ্ছা করিয়াই ভুলিয়া যান যে, বংশগত জাতিভেদের বৈষম্য এবং ধনী-দরিদ্র, অভিজাত-সাধারণের বৈষম্য এক জিনিষ নয়। পাশ্চাত্য সমাজে আজ যে দরিদ্র ও সাধারণ-লোক, দশ বৎসর পরে স্বীয় বুদ্ধিমত্তা ও চরিত্রবলে সে-ই ধনী ও অভিজাত হইতে পারে। সুতরাং সমাজের সকল দ্বারই যে কোন লোকের জন্য অবারিত। বংশগত জাতিভেদের বৈষম্যে ঐ রূপ হইতে পারে না। উহাতে কতকগুলি জাতি অন্য দিক দিয়া সহস্ৰ যোগ্যতা লাভ করিলেও নিম্নস্তরেই থাকিয়া যায়, আর কতকগুলি জাতি অযোগ্য হইলেও সমাজের শীর্ষস্থানে উচ্চস্তরে বিরাজ করিতে থাকে। ইহার ফলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সদাচার, আভিজাত্য ইত্যাদি সমাজের সর্বস্তরে প্রসারিত হইতে পারে না এবং সমগ্রভাবে সমাজের ক্ষতিই হয়। তারপর জাতিভেদ লোপ এবং অসবর্ণ বিবাহ প্ৰচলিত হইলেও, যাহারা শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সমান সাধারণতঃ এমন সব শ্রেণীর মধ্যেই বিবাহ ও আহারব্যবহার চলিবে, যেসব সমাজে জাতিভেদ নাই সেখানেও ঐরূপই হইয়া থাকে। সুতরাং বৈজ্ঞানিক আপত্তিকারীদের হিন্দুসমাজের সংস্কৃতি লোপের আশঙ্কা সম্পূর্ণ অমূলক।
• Sarkar, Jadunath. Sivaji. 5th ed. 1952. p. 378.↩
• ১৯৪১ সালের আদমসুমারীতে এই প্রচেষ্টা কিয়ৎ পরিমাণে সফল হইয়াছে । বহু হিন্দু কেবলমাত্র ‘হিন্দু’ বলিয়া নাম লিখাইয়াছে, কোন জাতির উল্লেখ করে নাই । দেওয়ানী আদালতে সাক্ষ্য দিবার কালে অনেকে নিজেকে ‘হিন্দু’ বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন ।ーলেখক↩
• ডা. মুঞ্জে বলেন, হিন্দু সমাজের সকল ব্যাধির পক্ষে ‘অসবর্ণ বিবাহ’ মহৌষধের কাজ করিবে । ‘ডা. মুঞ্জে ও বর্তমান হিন্দুসমাজ’ প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য ।ーলেখক↩
চলবে ...
গ্রন্থঃ ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু
লেখকঃ প্রফুল্লকুমার সরকার
সংগৃহীতঃ হিন্দুত্ববুক্স হতে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন