১১ জুলাই ২০১৬

মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের শ্রীমদ্ভগবতগীতা সাধনা

আইনস্টাইন, কালজয়ী এক নাম । সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন । বিজ্ঞান জগতে অনেক বিজ্ঞানীর অবদান সময়ের আবর্তে নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে হয়ত ধরে রাখতে পারে না তার বিস্ময় । হয়ে পড়ে কিছুটা ম্লান । কিন্তু বিজ্ঞান জগতে আইনস্টাইনের অবদান স্বর্গের পারিজাত সদৃশ । আইনস্টাইনের ভরশক্তি সমীকরণ E = mc² এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Theory of relativity) আবিষ্কার শুধু এই পৃথিবী গ্রহে নয় । এমনকি ভিন্ন গ্রহে যদি কোন মানুষ বাস করে সেখানেও সৃষ্টি করবে একই বিস্ময়, একই কৌতুহল ।


এখানে বিস্ময়ের ব্যাপার হল আইনস্টাইন ইহুদি বংশোদ্ভূত হয়েও নিয়মিত শ্রীমদ্ভগবতগীতা চর্চা করতেন । আরও বিস্ময় এবং মজার ব্যাপার হল যে নিয়মিত গীতা পাঠ এবং গীতা ধ্যানের ফসলই হল আইনস্টাইনের উক্ত দুটি যুগান্তরকারী আবিষ্কার । বর্হিবিশ্বে শ্রীমদ্ভগবতগীতা প্রচারের প্রারম্ভিক ইতিহাস এবং আইনস্টাইনের গীতা সাধনা শীর্ষক প্রাঞ্জল এবং প্রাণবন্ত আলোচনা শুনেছিলাম এপার বাংলা, ওপার বাংলার পন্ডিত জগতের অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব পন্ডিত প্রবর রাঁসমোহন চক্রবর্তী এম.এ.পি.এইচ.ডি পুরাণরত্ন বিদ্যাবিনোদ মহোদয়ের কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা রামমালা ছাত্রাবাসে গীতা জয়ন্তি উপলক্ষে আয়োযিত অনুষ্ঠানে ।

রাঁস মোহন চক্রবর্তীর উক্ত আলোচনা আজও অম্লান, আজও হৃদয়কে নাড়া দেয় । ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজত্বের শেষ প্রহর । ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছিল ভারতবর্ষে তাদের রাজত্বের মেয়াদ শেষ । তাদেরকে সবকিছু গুটিয়ে অচিরেই ভারত ছেড়ে যেতে হবে । তারা চিন্তা করল যদি ভারত ছাড়তে হয়, তবে ভারত থেকে এমন এক অমূল্য সম্পদ তারা নিয়ে যায় যার আবেদন বিশ্বজনীন এবং কালজয়ী । বলা বাহুল্য এই কালজয়ী অমূল্য সম্পদ আর কিছুই নয়, তা হল ইংরেজিতে অনুবাদ করা শ্রীশ্রী গীতা । শ্রীমদ্ভাগবদগীতার ইংরেজি অনুবাদে প্রথম উদ্যোগী ভূমিকা নেন চার্লস উইলকিন্স যিনি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হেষ্টিংস । এখন যদিও প্রায় পশ্চাশোর্ধ বিদেশী ভাষায় গীতার বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে । Theory of relativity লিখে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী আইনস্টাইন তখন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রধান । ভারতের কয়েকজন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আপেক্ষিক তত্ত্ব বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনস্টাইনের সাথে দেখা করতে যান । বলা বাহুল্য আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের পর পৃথিবীতে মাত্র গুটি কয়েক পদার্থ বিজ্ঞানী তাহা বুঝতে পেরেছিলেন । আইনস্টাইন আসলেন এবং সকলকে বিষ্ময়াভিভুত করে সংস্কৃতে প্রশ্ন করলেন -

কিংতে নাম? (তোমাদের নাম কি?)
কথম আগসি? (কোথা হতে এসেছ?)

সাক্ষাৎপ্রার্থী ভারতীয় অধ্যাপক বৃন্দের চক্ষু স্থির, হতবিহবল চিত্তে তারা উত্তর দিল ।
We don’t know how to speak in Sanskrit
(আমরা সংস্কৃতে কথা বলতে জানি না)
Please speak with us in English
(অনুগ্রহপূর্বক আমাদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলুন)

আইনস্টাইন ঝড়ের বেগে ক্ষীপ্র হয়ে বললেন- What! You say you are Indians. But you can not speak in Sanskrit. (কি! তোমরা বলছ তোমরা ভারতীয়, কিন্তু সংস্কৃত জান না)

উত্তরে ভারতীয়রা বলল- Sanskrit is a dead language in our country. It is used only in ancestral functions. (সংস্কৃত হল আমাদের দেশের একটি প্রাণহীন ভাষা । কেবল শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ইহা ব্যবহার করা হয়)

আইনস্টাইন তেলে বেগুনে জ্বলে রূদ্র মূর্তি ধারণ করলেন এবং বললেন – who says sanskrit is the dead language? It is the sole living language in the world. (কে বলে সংস্কৃত প্রাণহীন ভাষা? পৃথিবীতে একমাত্র জীবন্ত ভাষা হল সংস্কৃত)

তারপর আইনস্টাইনের বক্তব্য নিম্নরূপ-
“আমি ইংরেজীতে অনুবাদ করা গীতা পড়তে পড়তে অবাক হয়ে যাই, আত্মস্থ হয়ে পরি এবং এই আত্মস্থ অবস্থায় পদার্থ বিজ্ঞানের অতিদুর্বোধ্য আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আমার কাছে সূর্যের আলো মত সহজ সরল হয়ে যায়, সকল জটিল তত্ত্ব হয়েযায় সরল ।”

আইনস্টাইন আরও বললেন – “আমি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে চাই না । সংস্কৃত অক্ষরে লেখা মূলগীতা গ্রন্থ পাঠের জন্য আমি নিজে সংস্কৃত বর্ণমালা, সংস্কৃত ব্যাকরণ আয়ত্ব করি । আমার উপলব্ধি হল –

অমৃতং মধুরং সম্যক, সংস্কৃতং হি ততোধিক্ম ।
যতদিন বিন্ধ্যহিমাচল পর্বত থাকবে দন্ডায়মান,
যতদিন গঙ্গা, কাবেরী, গোদাবরী রবে বহমান
ততদিন সংস্কৃত থাকবে দীপ্তিমান ।

ভারতীয় পদার্থবিদরা লজ্জায় মাথা নত করে রইল । অনুধাবন করতে পারল ভারতীয় সংস্কৃত ভাষা এবং গীতাগ্রন্থ কত প্রভাবশালী ও সমৃদ্ধ ।

Written by : Sankirtan Madhab Das
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।