কুম্ভ বীর তখন উল্কার ন্যায় বাণ বর্ষণ করে কপিদের নষ্ট করতে লাগলো। কপিদের দেহের স্তূপ জমল। তাহার পর্বত প্রমাণ মুষল আর গদা যখন কপিসেনাদের মাঝে পড়লো মনে হল যেনো পিপীলিকার ওপর বৃহৎ প্রস্তর পতিত হয়েছে। তার নীচে শত শত বানর পিষ্ট হল। মহেন্দ্র আর দেবেন্দ্র নামক বানর তখন সামনে গেলো। কুম্ভ তাহাদের দেখা মাত্রই তীক্ষ্ণ তীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপ করতে লাগলো । শরে শরে ছেয়ে গেলো। মহেন্দ্র আর দেবেন্দ্রর শরীর থেকে রুধির ধারা নিস্ক্রিমণ হল। পালটা দুই বানর অতি উচ্চ শৃঙ্গের ন্যায় প্রস্তর তুলে কুম্ভের দিকে নিক্ষেপ করলো। কুম্ভ শর দ্বারা সেই প্রস্তর চূর্ণ করলো। তখন দুই বানর বৃহৎ বৃক্ষ উৎপাটন করে এনে কুম্ভের দিকে নিক্ষেপ করতেই কুম্ভ শর দিয়ে চূর্ণ করলো। এর পর কুম্ভ চোখের নিমিষে শত বাণ নিক্ষেপ করলে দুই বানর পলায়ন করলো। এরপর অঙ্গদ গদা নিয়ে ধেয়ে আসলো । কুম্ভ তাহাকে দেখা মাত্রই শত শত তির ছুঁড়তে লাগলো । শরের প্রভাবে অঙ্গদ কিছুই দেখতে পেলো না। গদা দিয়ে যত শর সড়িয়ে দেয় তত কুম্ভ শর সন্ধান করে। অঙ্গদ কিছুতেই কুম্ভের দিকে যেতে পারলো না। একটি শর অঙ্গদের ভ্রুর মধ্যে বিদ্ধ করলে সেখান থেকে রক্তপাত হতে লাগলো । অঙ্গদ এরপর অতি বৃহৎ পর্বত শৃঙ্গ নিক্ষেপ করলে কুম্ভ সাতটি শরে সেই শৃঙ্গ চূর্ণ করলেন । এরপর অপর একটি বাণে অঙ্গদের চেতনা হরণ করলেন । চেতন পেতেই অঙ্গদ পলায়ন করলো। সকলে মিলে তখন শ্রীরামের কাছে গিয়ে কুম্ভের দৌরাত্ম্য বর্ণনা করলো। ভগবান শ্রীরাম তখন ঋষভ , কুমুদ, সুষেণ নামক তিন বানরকে প্রেরণ করলো । হৈ হৈ করে তিন বীর তাহাদের কটক নিয়ে ধেয়ে আসলো । ঋষভ , কুমুদ এসে প্রথমে রাক্ষসদের বধ করতে করতে একবারে কুম্ভের নিকটে পৌছালেন। দেখলেন কুম্ভ একাই লক্ষ লক্ষ কপি সেনাদের নিধন করছে । কপিরা যে দিকে পারছে পলায়ন করছে। তার রথ যেনো রক্তে মাখা কর্দমের ওপর দিয়ে চলছে ।
কুম্ভ তার বীক্রমে সাদা বালুকারাশি রক্তিম বর্ণে রঞ্জিত করেছে । ঋষভ , কুমুদ এসে প্রথমেই প্রস্তর নিক্ষেপ আরম্ভ করলো। কুম্ভ দেখলো সেই প্রস্তরে রাক্ষসেরা নিহত হচ্ছে। এই দেখে সে শরে শরে প্রস্তর গুলিকে চূর্ণ করলো। গগনে প্রস্তর চূর্ণ হয়ে প্রস্তর বৃষ্টির ন্যায় সেগুলি ভূতলে পতিত হল । এরপর কুম্ভ এমন ভাবে শর সন্ধান আরম্ভ করলো যেনো বর্ষা ঋতুতে মহেন্দ্রর অনুচর মেঘেরা বর্ষণ করে । ঝাঁকে ঝাঁকে শর এসে কপিদের ছিন্নভিন্ন করে দিলো ।ঋষভ , কুমুদ আহত হয়ে পলায়ন করলো। তখন সুষেণ ও জাম্বুবান যুদ্ধে আসলো। জাম্বুবানের ভল্লুক সেনারা রাক্ষসদের দিকে দৌড়ে যেতেই কুম্ভ দিব্যাস্ত্র চালনা করে সেই ভল্লুক দের বধ করলেন । অত সুষেণ ও জাম্বুবানের দিকে শর সন্ধান আরম্ভ করলেন । এইভাবে তারা আহত হল। তখন সুগ্রীব এগিয়ে এলো । যেনো মদমত্ত হস্তীর সিকে সিংহ ধাবিত হচ্ছে- এমন মনে হল। কুম্ভ সুগ্রীবের পানে শর সন্ধান আরম্ভ করলে , সুগ্রীব রামনাম নিয়ে সেই শর উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে লাগলো । সুগ্রীবের দেহে যেনো শত ছিদ্র হয়ে রক্ত বের হচ্ছিল্ল । এরপর সুগ্রীব এক লম্ফ দিয়ে কুম্ভের রথে উঠে তাঁর ইন্দ্রধনু সম ধনুক কেড়ে নিলো । কুম্ভের সাথে সুগ্রীবের বাহুযুদ্ধ হল । কুম্ভ একটি হস্তীত পৃষ্ঠে আরোহিত হলে সুগ্রীব সেই হস্তীকে ধরাশায়ী করলো। তারপর হস্তীর দুটি দন্ত উৎপাটিত করে ভূতলে পতিত কুম্ভের ওপর আঘাত হানলো। আঘাত খেয়ে কুম্ভ পড়ে গিয়ে আবার যুদ্ধ আরম্ভ করলো। দুজনে যুদ্ধ চলতে লাগলো। কুম্ভ পরাজিত হয়ে ভূতলে পতিত হল । তাহার পর কুম্ভের বক্ষস্থলে অনবরত কয়েকটি মুষ্ট্যাঘাত করলো সুগ্রীব। সুগ্রীবের মুষ্ট্যাঘাতে কুম্ভ রক্তবমন করতে করতে চিরদিনের ন্যয় চোখ বন্ধ করলো ।
ভ্রাতাকে নিহত হতে দেখে নিকুম্ভ নিদারুন শোক পেলো। ক্রোধে সে দিগ্বিদিকজ্ঞান শূন্য হয়ে মুগুর তুলে সুগ্রীবের দিকে তখুনি নিক্ষেপ করলো। মুগুর যখন সুগ্রীবের বুকে আঘাত হানলো, তখন প্রচণ্ড শব্দ হল । সুগ্রীব পড়ে গিয়ে চেতনা লুপ্ত হলে বানরেরা তাহাকে শিবিরে নিয়ে গেলো। অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিলে অগ্নি যেমন ভাবে প্রজ্বলিত হয়- ঠিক সেইভাবেই নিকুম্ভ জ্বলে উঠলো । শিলাবাণ, জ্বালাবাণ নিক্ষেপ করলো। সেই দিব্যাস্ত্রের প্রভাবে গগন থেকে অনবরত শিলা ও আগুনের গোলা কপিসেনাদের মাঝে পতিত হতে থাকলো। শত শত বানর নিহত হল। নিকুম্ভের অনুগত রথ গুলি থেকে অনবরত বাণ নিক্ষেপ করা হল। অশ্ব থেকে বর্শা ছুড়ে কপিদের নিহত করা হল । হস্তীগুলি ধেয়ে গিয়ে বানরদের পিষে দিলো। কাউকে আবার শুণ্ড দিয়ে শূন্যে তুলে দিলো। কাউকে শুণ্ডে পেঁচিয়ে ভূমিতে আছার দিলো। রাক্ষসেরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলো। হনুমান এগিয়ে এসে গদা প্রহারে হস্তীগুলিকে বধ করলেন। রথগুলিকে আছার দিয়ে, গদা দিয়ে , শূন্যে ছুড়ে ধ্বংস করলেন । বানরেরা প্রস্তর, বৃক্ষ বর্ষণ করে হস্তীগুলি, অশ্বারোহী, রথ গুলি চূর্ণ করলো। রথের টুকরো অংশে মেদিনী এইভাবে ঢাকা পড়লো যেনো মনে হল সোনার পাত বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ওপর দিয়ে রক্তনদীর স্রোত বয়ে গেলো । হনুমান তখন নিকুম্ভের সাথে যুদ্ধ আরম্ভ করলেন । নিকুম্ভের রথ চূর্ণ করে দিলেন। নিকুম্ভ লম্ফ দিয়ে যুদ্ধভূমিতে নামলো । হনুমান তাহাকে ভূতলে পতিত করে কণ্ঠে চরণ দিয়ে চেপে ধরলেন। নিকুম্ভের চোখ, জিহ্বা বাহিরে এলো। এরপর হনুমান নিকুম্ভের কেশ মুষ্টিবদ্ধ করে এমন জোরে টানলেন যে নিকুম্ভের মুণ্ড ধড় থেকে আলাদা হয়ে হনুমানের হস্তে এলো । হনুমান সেই মুণ্ড নিয়ে ভগবান শ্রীরামকে দেখালে, শ্রীরাম খুশী হয়ে হনুমানকে আশীর্বাদ করলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন