হতাশার সমাধান সমূহঃ
১ । ভগবানের দিব্য নাম জপঃ
এমন অনেক সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে যা প্রত্যক্ষ দেখা যায় না এবং কোন ব্যক্তিকে দিয়ে মন্দ কার্যকলাপ ঘটাতে ব্যাকুল থাকে । যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্থ এবং হতাশ, সে তার মনকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সহজেই এসব সূক্ষ্ম বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে । হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হৃদয়েই ভক্তির উন্মেষ ঘটে ।
উদাহরন ১ঃ মেঘের জল যেরূপে কাদার সংমিশ্রণে দূষিত হয়ে পড়ে । তেমনি জড় বিষয়সমূহের সংস্পর্শে আসলে মন কলুষিত হয়ে পড়ে । দূষিত জলকে যেরূপ ছাঁকনের মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়, তেমনি কলুষিত মনকে পরিশোধন করার একমাত্র উপায় হল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ।
পরম পবিত্র শ্রীভগবানকে স্মরণের মাধ্যমেই আমাদের হৃদয় পবিত্র হয়ে ওঠে-
ওঁ অপবিত্র পবিত্র বা
সর্বাবস্থান গতোহপিবাঃ ।
যৎস্মরেৎ পুন্ডুরীকাক্ষং
স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ।।
শ্রীবিষ্ণু শ্রীবিষ্ণু শ্রীবিষ্ণু ।।
যদি কোন ব্যক্তি শুদ্ধ বা দূষিত হন বা বাহ্যচেতনা রহিত হন, শুধুমাত্র পদ্মলোচন পরম পুরুষোত্তম শ্রীভগবানকে স্মরণমাত্রই তিনি তার সত্ত্বাকে আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে পরিশুদ্ধ করে তুলতে পাররেন । (গরুড় পুরান)
এই কলিযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্য মহাপ্রভুরূপে আবির্ভূত হয়ে ভগবানের দিব্যনাম জপের মাধ্যমে আমাদের পরিশুদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছেন “চেতোদর্পণ মার্জনম……..(শিক্ষাষ্টকম ১)” স্মরণাতীত কাল হতে সঞ্চিত আবর্জনা দ্বারা আবৃত এই হৃদয়-দর্পন মার্জন করার একমাত্র উপায় হলো সংকীর্তন । এই সংকীর্তন শুধুমাত্র সাধু-সন্ন্যাসীদের জন্য নয়, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ি, শিক্ষার্ত্রী, স্থপতি, আইনবিদ প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আবশ্যক । যদি কোন ব্যক্তি তার জীবনের প্রকৃত পূর্ণতা সাধন করতে আগ্রহী হন, তবে ভগবদগীতার নির্দেশনার প্রতি শ্র্রদ্ধাশীল হয়ে দিব্যনাম জপ করার মাধ্যমে হৃদয়কে পবিত্র করতে হবে । সংকীর্তন যজ্ঞ একজন জীবকে তার চারপাশের প্রকৃতির প্রভাবকে মোকাবেলা করতে গড়ে তোলে ।
ভগবদগীতায় বর্ণিত রয়েছে, গভীর ও প্র্রশস্থ সমুদ্র যেরূপ কোন নদী বা উত্তাল স্রোত প্রবাহ দ্বারা প্র্রভাবিত হয় না, তদ্রুপ যার চেতনা ভগবানের প্রতি আবিষ্ট, তিনি সর্বদা আত্মতৃপ্ত । এই শক্তি এতই গভীর ও মহৎ যে, তাঁর চারপাশের প্রভাবগুলো তখন তুচ্ছ এবং নগণ্য বস্তুতে পরিণত হয় ।
পদ্মফুল যদিও কাঁদায় জন্ম হয়, কিন্তু কাদার দ্বারা তা কখনোই প্রভাবিত হয় না । তেমনি, যার হৃদয় নির্মল, তিনিই ভগবৎগুণ জাগরিত করতে পারেন এবং জড়া প্রকৃতির প্রভাব হতে মুক্ত হন ।
২ । সদ আচরণ-অনুশীলনঃ
এই জগতে শক্তি প্রয়োগ করে কখনো কারো আনুগত্য লাভ করা সম্ভব নয় । যখন দৈন্যভাব জাগরিত হয়, তখন কোন কামনা থাকে না বরং জীবনেই যাই আসুক না কেন, সবকিছুর প্রতিই কৃতজ্ঞতাবোধ জাগরিত হয় । অহংকার, বাসনার দ্বারা পরিচালিত হওয়াই আমাদের উন্মাদনা তথা হতাশার কারণ । এর ফলে একজন ব্যক্তি তার ইচ্ছানুরূপ কোনকিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারে না ।
কোন ব্যক্তি যখন কোন সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তখন হতাশা, ব্যর্থতা, শূন্যতা, উৎসাহহীনতায় না ভুগে সহজভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারে এবং এই প্রার্থনা করা উচিতঃ— হে প্রিয় কৃষ্ণ, আমি দুঃখকে বরণ করেছি, তোমাকে স্মরণ, সেবন এবং তোমার দিব্যনাম জপ করার সুযোগ প্রদান করার জন্য আমি তার প্র্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ । যখন এই প্রকার বিশ্বাস জাগরিত হয়, তখন যেকোন প্রতিকূল অবস্থায়ও তিনি তার ভালবাসা ও ভক্তি প্রকাশ করার সুযোগ পান । এই সবকিছুই আমাদের আচার আচরনের উপর নির্ভরশীল । যে ব্যক্তি যত সৎ এবং ঐকান্তিকভাবে কাজ করেন, তিনি ততই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সুখে থাকতে পারবেন । অপরদিকে, যেই ব্যক্তি শুধু যশ, মান, প্রতিষ্ঠা কামনা করেন, তিনি কখনোই সুখী হতে পারেন না ।
৩ । দিব্য গুণস্পরিস্ফুটনঃ
দৈন্যঃ দীনতা এমন দিব্য গুণ যা কৃতজ্ঞতাবোধ এবং আত্মতৃপ্তি আনয়ন করে ।
ক্ষমাঃ ঈর্ষা, নিচু মানসিকতা দুর্বল এবং অনুন্নত হৃদয়ের লক্ষণ । অপরদিকে, ক্ষমা হল অন্তঃস্থ শক্তি তথা সাধুতার প্রতীক ।
উদাঃ ১ যিশু খ্র্রীষ্ট তার ক্রুসবিদ্ধকারীদের ক্ষমা করেছিলেন ।
উদাঃ ২ শ্রীল হরিদাস ঠাকুর, যারা তাঁকে নিধনের উদ্দেশ্যে বাইশ বাজারে পিটিয়েছিলেন, তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন ।
উদাঃ ৩ প্রহ্লাদ মহারাজ, নৃসিংহদেবের নিকট তার পিতা হিরণ্যকশিপুর (যে তাকে হত্যা করার মানসে সর্বদা পদক্ষেপ নিত) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন । এই ব্যক্তিবর্গ এই আশ্চর্যজনক ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে কিভাবে যে কোন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ, সুখী এবং ভগবানের প্রতি আবিষ্ট হওয়া যায়, তার শিক্ষা দিয়েছেন ।
স্বার্থহীনতাঃ কেউ যখন নিজের প্রতি আসক্ত হয় তখন সে ব্যর্থ হয়, কেননা কেউ কখনো এরূপ আসক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না । যখন কোন ব্যক্তি কোন পর্যায়ে অন্যকে ভালবাসা প্রদান করে, ঠিক তখন সে তার প্রতিদান হিসেবে ভালবাসা পেতে পারে ।
পৃথিবীতে যারাই ভালবাসা পেয়েছেন, তাঁরা কখনো ভালবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন না, বরং অন্যকে ভালবাসাতে উদ্বিগ্ন থাকতেন । তেমনি, নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসিকতা ত্যাগ করে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে হবে । এটাই আত্মার স্বরূপ “জীবের স্বরূপ হয় নিত্য কৃষ্ণদাস” ।
প্রত্যেকেই শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ সেবক, প্রভু নয় । চিন্ময় সেবার মাধ্যমে আমরা অপ্রাকৃত প্রেমের স্বাদ আস্বাদন করতে পারি । পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, যারা সর্বদা অন্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভালবাসা প্রত্যাশা করেছেন, তারা সর্বদাই অনিশ্চয়তায় ভোগে এবং যারা শুধু অন্যকে ভালবাসতে চেয়েছেন, তারা সর্বদাই সুখী হয়েছেন । যে পেতে চায়, সে হারায়, আর যিনি দিতে চান, তিনি পান ।
৪ । ভালবাসা-ভিত্তিক সমাজ গঠনঃ
পরমেশ্বর ভগবান ভগবদগীতায় বর্ননা করছেন—
চতুর্বিদ ভজন্তে মাং জনাঃ সসুকৃতিনোহর্জুন
আর্তো জিজ্ঞজ্ঞোসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ ।।
“হে ভারত শ্রেষ্ঠ অর্জুন- আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী এই চারপ্র্রকার পূন্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমরা ভজনা করেন ।”
অনেক লোক কৃষ্ণাভাবনামৃত গ্রহন করেন কেননা তারা বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতির কারনে ক্লেশ ভোগ করেন তারা এই অনিত্য জড় জগত হতে মুক্তি চান । সেরূপে সর্বদা নিষ্ঠাসহকারে কৃষ্ণভাবনা অনুশীলন করা এবং তা অন্যদের মাঝে বিতরণ করাই ভক্তগোষ্ঠীদের অভিলাষ । যখন তারা কোন পারমার্থিক সমাজকে কৃষ্ণপ্রেমহীন অবস্থায় খুঁজে পান, তখন তারা সেই দুর্দশাগ্রস্থ স্থান ত্যাগ করেন । তাই ভগবানের মহিমা ও সেবা ভিত্তিক এবং ভক্তদের মাঝে একে অন্যের প্রতি যথেষ্ট ভালবাসার সম্পর্ক বিশিষ্ট পারমার্থিক সমাজই বর্তমানে প্রয়োজন ।
(শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের প্রবচন হতে সংকলিত বাংলা অনুবাদ)
Written by : Sankirtan Madhab Das
১ । ভগবানের দিব্য নাম জপঃ
এমন অনেক সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে যা প্রত্যক্ষ দেখা যায় না এবং কোন ব্যক্তিকে দিয়ে মন্দ কার্যকলাপ ঘটাতে ব্যাকুল থাকে । যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্থ এবং হতাশ, সে তার মনকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সহজেই এসব সূক্ষ্ম বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে । হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হৃদয়েই ভক্তির উন্মেষ ঘটে ।
উদাহরন ১ঃ মেঘের জল যেরূপে কাদার সংমিশ্রণে দূষিত হয়ে পড়ে । তেমনি জড় বিষয়সমূহের সংস্পর্শে আসলে মন কলুষিত হয়ে পড়ে । দূষিত জলকে যেরূপ ছাঁকনের মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়, তেমনি কলুষিত মনকে পরিশোধন করার একমাত্র উপায় হল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ।
পরম পবিত্র শ্রীভগবানকে স্মরণের মাধ্যমেই আমাদের হৃদয় পবিত্র হয়ে ওঠে-
ওঁ অপবিত্র পবিত্র বা
সর্বাবস্থান গতোহপিবাঃ ।
যৎস্মরেৎ পুন্ডুরীকাক্ষং
স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ।।
শ্রীবিষ্ণু শ্রীবিষ্ণু শ্রীবিষ্ণু ।।
যদি কোন ব্যক্তি শুদ্ধ বা দূষিত হন বা বাহ্যচেতনা রহিত হন, শুধুমাত্র পদ্মলোচন পরম পুরুষোত্তম শ্রীভগবানকে স্মরণমাত্রই তিনি তার সত্ত্বাকে আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে পরিশুদ্ধ করে তুলতে পাররেন । (গরুড় পুরান)
এই কলিযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্য মহাপ্রভুরূপে আবির্ভূত হয়ে ভগবানের দিব্যনাম জপের মাধ্যমে আমাদের পরিশুদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছেন “চেতোদর্পণ মার্জনম……..(শিক্ষাষ্টকম ১)” স্মরণাতীত কাল হতে সঞ্চিত আবর্জনা দ্বারা আবৃত এই হৃদয়-দর্পন মার্জন করার একমাত্র উপায় হলো সংকীর্তন । এই সংকীর্তন শুধুমাত্র সাধু-সন্ন্যাসীদের জন্য নয়, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ি, শিক্ষার্ত্রী, স্থপতি, আইনবিদ প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আবশ্যক । যদি কোন ব্যক্তি তার জীবনের প্রকৃত পূর্ণতা সাধন করতে আগ্রহী হন, তবে ভগবদগীতার নির্দেশনার প্রতি শ্র্রদ্ধাশীল হয়ে দিব্যনাম জপ করার মাধ্যমে হৃদয়কে পবিত্র করতে হবে । সংকীর্তন যজ্ঞ একজন জীবকে তার চারপাশের প্রকৃতির প্রভাবকে মোকাবেলা করতে গড়ে তোলে ।
ভগবদগীতায় বর্ণিত রয়েছে, গভীর ও প্র্রশস্থ সমুদ্র যেরূপ কোন নদী বা উত্তাল স্রোত প্রবাহ দ্বারা প্র্রভাবিত হয় না, তদ্রুপ যার চেতনা ভগবানের প্রতি আবিষ্ট, তিনি সর্বদা আত্মতৃপ্ত । এই শক্তি এতই গভীর ও মহৎ যে, তাঁর চারপাশের প্রভাবগুলো তখন তুচ্ছ এবং নগণ্য বস্তুতে পরিণত হয় ।
পদ্মফুল যদিও কাঁদায় জন্ম হয়, কিন্তু কাদার দ্বারা তা কখনোই প্রভাবিত হয় না । তেমনি, যার হৃদয় নির্মল, তিনিই ভগবৎগুণ জাগরিত করতে পারেন এবং জড়া প্রকৃতির প্রভাব হতে মুক্ত হন ।
২ । সদ আচরণ-অনুশীলনঃ
এই জগতে শক্তি প্রয়োগ করে কখনো কারো আনুগত্য লাভ করা সম্ভব নয় । যখন দৈন্যভাব জাগরিত হয়, তখন কোন কামনা থাকে না বরং জীবনেই যাই আসুক না কেন, সবকিছুর প্রতিই কৃতজ্ঞতাবোধ জাগরিত হয় । অহংকার, বাসনার দ্বারা পরিচালিত হওয়াই আমাদের উন্মাদনা তথা হতাশার কারণ । এর ফলে একজন ব্যক্তি তার ইচ্ছানুরূপ কোনকিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারে না ।
কোন ব্যক্তি যখন কোন সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তখন হতাশা, ব্যর্থতা, শূন্যতা, উৎসাহহীনতায় না ভুগে সহজভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করতে পারে এবং এই প্রার্থনা করা উচিতঃ— হে প্রিয় কৃষ্ণ, আমি দুঃখকে বরণ করেছি, তোমাকে স্মরণ, সেবন এবং তোমার দিব্যনাম জপ করার সুযোগ প্রদান করার জন্য আমি তার প্র্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ । যখন এই প্রকার বিশ্বাস জাগরিত হয়, তখন যেকোন প্রতিকূল অবস্থায়ও তিনি তার ভালবাসা ও ভক্তি প্রকাশ করার সুযোগ পান । এই সবকিছুই আমাদের আচার আচরনের উপর নির্ভরশীল । যে ব্যক্তি যত সৎ এবং ঐকান্তিকভাবে কাজ করেন, তিনি ততই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সুখে থাকতে পারবেন । অপরদিকে, যেই ব্যক্তি শুধু যশ, মান, প্রতিষ্ঠা কামনা করেন, তিনি কখনোই সুখী হতে পারেন না ।
৩ । দিব্য গুণস্পরিস্ফুটনঃ
দৈন্যঃ দীনতা এমন দিব্য গুণ যা কৃতজ্ঞতাবোধ এবং আত্মতৃপ্তি আনয়ন করে ।
ক্ষমাঃ ঈর্ষা, নিচু মানসিকতা দুর্বল এবং অনুন্নত হৃদয়ের লক্ষণ । অপরদিকে, ক্ষমা হল অন্তঃস্থ শক্তি তথা সাধুতার প্রতীক ।
উদাঃ ১ যিশু খ্র্রীষ্ট তার ক্রুসবিদ্ধকারীদের ক্ষমা করেছিলেন ।
উদাঃ ২ শ্রীল হরিদাস ঠাকুর, যারা তাঁকে নিধনের উদ্দেশ্যে বাইশ বাজারে পিটিয়েছিলেন, তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন ।
উদাঃ ৩ প্রহ্লাদ মহারাজ, নৃসিংহদেবের নিকট তার পিতা হিরণ্যকশিপুর (যে তাকে হত্যা করার মানসে সর্বদা পদক্ষেপ নিত) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন । এই ব্যক্তিবর্গ এই আশ্চর্যজনক ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে কিভাবে যে কোন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ, সুখী এবং ভগবানের প্রতি আবিষ্ট হওয়া যায়, তার শিক্ষা দিয়েছেন ।
স্বার্থহীনতাঃ কেউ যখন নিজের প্রতি আসক্ত হয় তখন সে ব্যর্থ হয়, কেননা কেউ কখনো এরূপ আসক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না । যখন কোন ব্যক্তি কোন পর্যায়ে অন্যকে ভালবাসা প্রদান করে, ঠিক তখন সে তার প্রতিদান হিসেবে ভালবাসা পেতে পারে ।
পৃথিবীতে যারাই ভালবাসা পেয়েছেন, তাঁরা কখনো ভালবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন না, বরং অন্যকে ভালবাসাতে উদ্বিগ্ন থাকতেন । তেমনি, নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসিকতা ত্যাগ করে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে হবে । এটাই আত্মার স্বরূপ “জীবের স্বরূপ হয় নিত্য কৃষ্ণদাস” ।
প্রত্যেকেই শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ সেবক, প্রভু নয় । চিন্ময় সেবার মাধ্যমে আমরা অপ্রাকৃত প্রেমের স্বাদ আস্বাদন করতে পারি । পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, যারা সর্বদা অন্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভালবাসা প্রত্যাশা করেছেন, তারা সর্বদাই অনিশ্চয়তায় ভোগে এবং যারা শুধু অন্যকে ভালবাসতে চেয়েছেন, তারা সর্বদাই সুখী হয়েছেন । যে পেতে চায়, সে হারায়, আর যিনি দিতে চান, তিনি পান ।
৪ । ভালবাসা-ভিত্তিক সমাজ গঠনঃ
পরমেশ্বর ভগবান ভগবদগীতায় বর্ননা করছেন—
চতুর্বিদ ভজন্তে মাং জনাঃ সসুকৃতিনোহর্জুন
আর্তো জিজ্ঞজ্ঞোসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ ।।
“হে ভারত শ্রেষ্ঠ অর্জুন- আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী এই চারপ্র্রকার পূন্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমরা ভজনা করেন ।”
অনেক লোক কৃষ্ণাভাবনামৃত গ্রহন করেন কেননা তারা বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতির কারনে ক্লেশ ভোগ করেন তারা এই অনিত্য জড় জগত হতে মুক্তি চান । সেরূপে সর্বদা নিষ্ঠাসহকারে কৃষ্ণভাবনা অনুশীলন করা এবং তা অন্যদের মাঝে বিতরণ করাই ভক্তগোষ্ঠীদের অভিলাষ । যখন তারা কোন পারমার্থিক সমাজকে কৃষ্ণপ্রেমহীন অবস্থায় খুঁজে পান, তখন তারা সেই দুর্দশাগ্রস্থ স্থান ত্যাগ করেন । তাই ভগবানের মহিমা ও সেবা ভিত্তিক এবং ভক্তদের মাঝে একে অন্যের প্রতি যথেষ্ট ভালবাসার সম্পর্ক বিশিষ্ট পারমার্থিক সমাজই বর্তমানে প্রয়োজন ।
(শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের প্রবচন হতে সংকলিত বাংলা অনুবাদ)
Written by : Sankirtan Madhab Das
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন