ভগবান শ্রীরাম বললেন- “যুদ্ধ সর্বদা ধ্বংস বয়ে আনে। যে পক্ষই জয়ী হোক না কেন, মাঝে অনেক নিরীহ প্রান বলি হয়। অতএব আমি রাবণকে যুদ্ধ রোধের জন্য পুনঃ শান্তিদূত প্রেরন করবো। যদি এবার রাবণ সেই প্রস্তাব মেনে
সীতাকে ফিরিয়ে দেয়, তবে এই যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। হানাহানি রোধ করার সব রকম প্রয়াস করবো।” কিন্তু এবার কে যাবে ? হনুমান আগের বার গিয়েছিলো । সুতরাং হনুমানকে আর প্রেরণের কথা উঠলো না । শেষে অঙ্গদ এসে বলল- “আমিই যাবো।” সকলে ভয় পেলো। রাবণের দরবারে এই বালককে প্রেরন করার মানেই হয় না । কারণ রাবণ মায়াদয়াহীন। সে দূতকেও প্রাণদণ্ড প্রদান করে। সুগ্রীব বলল- “না পুত্র! তুমি যাবে না। যদি তোমার কিছু হয় তো তোমার মাতাকে কি উত্তর দেবো ? তুমি বানর জাতির আগামী রাজা।” অঙ্গদ অনেক বুঝিয়ে বলল- “কাকা! আমার পিতার নিকট রাবণ সাতবার পরাজিত হয়েছে। সুতরাং তাঁকে আমি ভয় পাই না। আমি ঠিক গিয়ে সংবাদ প্রদান করবো।” সকলের কথা অমান্য করে অঙ্গদ যেতে চাইলো। কেবল হনুমান অঙ্গদের পক্ষ নিলো । তখন প্রভু শ্রীরাম বললেন- “বতস্য! তুমি রাবণের সভাতে গিয়ে তাহাকে সকল বোঝাবে। এও বলবে সীতাকে ফিরিয়ে দিয়ে যেনো সে অযথা রক্তপাত থেকে বিরত হয় । সীতাকে ফিরিয়ে দিলেই এই যুদ্ধ বন্ধ হবে। এইভাবে তাহাকে শান্তি প্রস্তাব প্রদান করিবে ।” প্রভাত হতেই তখন অঙ্গদ সকল গুরুজন ও শ্রীরাম , লক্ষ্মণ কে প্রণাম করে লঙ্কার উদ্দেশ্যে চলল। লম্ফ দিয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করলো । লঙ্কার রাক্ষস রাক্ষসীরা লঙ্কা দহনের কথা ভেবে পুনঃ শঙ্কিত হল। ভাবল এই বানর কি পুনঃ লঙ্কাতে অগ্নিপাত ঘটাবে । সেই বীর হনুমান একাই লঙ্কাকে ভস্ম করেছিলো- না জানি এই বানর আবার কি করবে । অঙ্গদ গিয়ে রাক্ষসদের কাছে লঙ্কার রাজসভার ঠিকানা চাইছিলো। রাক্ষসেরা ভয়ে পালাতে পারলে বাঁচে। তাই তারা কোনমতে লঙ্কার রাজসভার পথ দেখিয়ে যে যেদিকে পারলো পালালো। অঙ্গদ যখন রাজপথ দিয়ে রাজপ্রাসাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল্ল তখন কারোর সাহস হল না অঙ্গদকে বন্দী করার। কারণ তারা ভেবেছিলো আগের বানরকে বন্দী করে এত সর্বনাশ হয়েছে, একে বন্দী করলে দ্বিগুণ সর্বনাশ ধেয়ে আসবে । এইভেবে তারা পথ ছেড়ে দিচ্ছিল্ল। রাজসভায় ঢুকবার মুখে ব্যায়ামে রত মেঘনাদের সাথে তার মুখোমুখি দেখা হল। কথা কাটাকাটি হল। অঙ্গদ মেঘনাদকে ধাক্কা দিয়ে মহলে প্রবেশ করলো ।
গিয়ে দেখলো সেখানে রাবণের যুদ্ধ বিষয়ে কোন ভাবনা নেই । সে কেবল হাস্য পরিহাস করছে সভাসদ দের সাথে। আর মিছা জয়ী হবার স্বপ্নে মশগুল হয়েছে । অঙ্গদ উপস্থিত হয়েছে শুনে রাবণ তাকে ভিতরে আসতে বলল। প্রচণ্ড রবে রাম নাম দিয়ে অঙ্গদ বুক ফুলিয়ে সভায় ঢুকলে সভাসদেরা আতঙ্কিত হল। কারণ হনুমানের স্মৃতি মনে তখনও টাটকা ছিলো । রাবণ তাহার লঙ্কা আগমনের কারণ জানতে চাইলে অঙ্গদ অতি বিনীত ভাবে বলল- “লঙ্কাপতি রাবণের চরণে প্রনাম জানাই। আপনি স্বয়ং পুলস্ত্য ঋষির বংশজ। আপনি ব্রহ্মা, শিব ও ভদ্রকালী উপাসক। আপনি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মহাপণ্ডিত । আপনি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ । হে লঙ্কেশ! আপনি আমার স্বর্গীয় পিতার মিত্র। আপনাকে নতমস্তকে প্রনাম জানাই। আমি এখানে প্রভু শ্রীরামের দূত হয়ে এসেছি । আপনি কৃপা করে তাঁহার শান্তি প্রস্তাব শ্রবণ করুন।” শুনে রাবণ ভাবল এই কপি যখন এত প্রশংসা করছে তখন নিশ্চয়ই শ্রীরাম ভয় পেয়েছে। তাই সে যুদ্ধ বাতিল করে রাবণের সাথে সন্ধি করতে চাইছে। রাবণ প্রসন্ন হয়ে বলল- “তা কি বলেছে ঐ রাম ? সেকি আমার শক্তি দেখে ভীত ? তাই সে যুদ্ধে অনিচ্ছুক। বেশ ত, সে এসে আমার চরণে ক্ষমা চেয়ে চলে যাক। সীতার ন্যায় সুমুখীর জন্য আমি তাকেও ক্ষমা করে দেবো।” অঙ্গদ বলল- “হে দশানন! তুমি খুবুই মূর্খ ও দাম্ভিক! প্রভু শ্রীরাম যুদ্ধ রোধের জন্য এখানে শান্তি প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। কারন তিনি তোমার ন্যায় নিষ্ঠুর নন, তিনি দয়ার সাগর। এই যুদ্ধে অনেক রক্তপাত ও নিরীহ প্রান নষ্ট হবে। এই ভেবে তিনি আমাকে এখানে পাঠিয়ে তোমার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যেনো সীতাকে তুমি ফিরিয়ে দাও। নচেৎ উনি যুদ্ধ করবেন। হে দশানন! তুমি শ্রীরামের শক্তি দেখোনি। হনুমানের বিক্রম দেখেও তোমার সুবুদ্ধি উদয় হয় নি। এমন ত হতেও পারে, কাল তোমার দশ মুণ্ড রাম বাণে মাটিটে গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রভু শ্রীরাম চাইলে এক শরেই তোমার লঙ্কাকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি অনর্থক ও নির্দোষ প্রানী বধের বিরোধী। অতএব তাই তোমাকে শান্তি প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন । তুমি শোনো, আর মেনে নাও।” রাবণ বলল- “ওরে বালক! তোর বুদ্ধি স্বল্প । তাই এমন বলছিস ! আমি এই হস্তে কৈলাস পর্বতকে তুলেছি। এই মুণ্ড কেটে ভগবান শিবকে প্রসন্ন করেছি। আমাকে বধ করবে ঐ তুচ্ছ ভিখারী মানব। শোন আমার রাক্ষসেরা দিবারাত্র যে মানবের মাংস ভক্ষণ করে, তুই সেই মানবদের ভয় দেখাস না। তুই তো পিতৃঘাতকের পক্ষ নিচ্ছিস। তোর পিতাকে যেই রাম হত্যা করলো, তুই তার পক্ষ নিয়ে এখানে এসেছিস? কেমন পুত্র তুই, যে পিতৃঘাতকের পদসেবা করে। তুই বরং আমার পক্ষে আয়। আমার সাথে মিলে পিতৃঘাতক রামকে বধ করবি ।”
রাম নিন্দা শুনে অঙ্গদ ক্রোধে রাবণের রাজসভা মাঝে মুষ্ট্যাঘাত করলো মাটিটে। সেই জায়গায় যেনো ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠলো। সভাসদরা আসন থেকে পড়ে গেলো। রাবণ পড়ে গেলো আসন থেকে। অঙ্গদ রাক্ষস দের পতিত কিছু কিরীট নিয়ে লঙ্কার বাহিরে ছুড়লো । অতি উজ্জ্বল সেই কিরীট গুলো জলন্ত উল্কাপিণ্ডের ন্যায় ছুটে আসতে দেখে বানরদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়লো । বিভীষণ বলল- “ওগুলো উল্কা নয়। রাবণের সভাসদ দের কিরীট।” বানরেরা সেই কিরীট কুঁড়িয়ে ভগবান রামের চরণে রেখে পুনঃ তুলে রাখলো । অঙ্গদ বলল- “এখনেই পড়ে যাচ্ছো রাবণ। ভাবো প্রভু শ্রীরামের বাণ তোমাকে কোথায় ফেলে দেবে। তাই বলছি শান্তি প্রস্তাব মেনে নাও। তোমাকে ত আমার পিতা সাতবার লাঙুলে পেঁচিয়ে জলে নিমজ্জিত করেছিলেন । ভুলে যেয়ো না আমার পিতা সেই শ্রীরামের শরে দেহ রেখেছেন। এবার কল্পনা করতে পারছো যে প্রভু শ্রীরামের শক্তি কত? রাবণ তোমার কোন ধারনাই নেই, তুমি কার সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছো ? যার এক শরেই ত্রিলোক ধ্বংস হতে পারে- তাঁকে যুদ্ধে আহবান জানিয়ো না। তোমার বংশনাশ হবে । তুমি কি নিজের কুল নিজেই ধ্বংস করতে চাও?” রাবণ বলল – “ওহে বালক! তুমি আমার শক্তি সম্বন্ধে অবগত নও । তুমি বালক। তোমাকে বীরত্ব দেখালে আমার নিজের অপমান হবে। যুদ্ধে দেখবে আমি কিভাবে রাম লক্ষ্মণ কে বধ করি। যতদিন আমি বেঁচে থাকবো, সীতাকে এই লঙ্কা থেকে যেতে দেবো না। হয় সে আমাকে বিবাহ করবে, নচেৎ যমালয়ে যাবে।” অঙ্গদ ক্রোধে তখন বাম চরণ সজোরে ভূমি কাঁপিয়ে সভাতে রেখে বললেন- “আমি প্রতিজ্ঞা করছি। কেউ যদি আমার এই চরণ একচুল সড়াতে পারে , তবে শ্রীরাম যুদ্ধ না করেই প্রস্থান করবেন।”
জৌঁ মম চরন সকসি সঠ টারী ।
ফিঁরহি রামু সীতা মৈ হারী ।।
সুনহু সুভট সব কহ দসসীসা ।
পদ গহি ধরনি পছারহু কীসা ।।
ইন্দ্রজীত আদিক বলবানা ।
হরষি উঠে জহুঁ জহুঁ ভট নানা ।।
ঝপটহি করি বল বিপুল উপাঈ ।
পদ ন টরই বৈঠহিঁ সিরু নাঈ ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
রাক্ষসেরা অনেকে চেষ্টা করেও অঙ্গদের চরণ একচুলও নড়াতে পারলো না। অনেকে ভীর করে একসাথে টানা হ্যাঁচরা করেও সমর্থ হল না। ইন্দ্রজিত এসে পারলো না। লঙ্কার বীরেরা পারলো না দেখে রাবন এসে পা সড়াতে গেলো। অঙ্গদ তখন পা সড়িয়ে বলল- “লঙ্কেশ! আমার চরণ নয়, প্রভু শ্রীরামের চরণ ধর। তোর উদ্ধার হবে।” লঙ্কেশ রাবণ বলল- “গিয়ে বল তোর প্রভুকে! আমি সীতাকে ফিরাবো না। সে যা পারে করুক।” অঙ্গদ তখন বলল- “তবে যুদ্ধভূমিতেই তোর সাথে দেখা হবে।” এই বলে অঙ্গদ রাবণের কিরীট কেড়ে নিয়ে লম্ফ ও দৌড় দিয়ে লঙ্কার বাহিরে আসলো।
( সুন্দরাকাণ্ড সমাপ্ত )
গিয়ে দেখলো সেখানে রাবণের যুদ্ধ বিষয়ে কোন ভাবনা নেই । সে কেবল হাস্য পরিহাস করছে সভাসদ দের সাথে। আর মিছা জয়ী হবার স্বপ্নে মশগুল হয়েছে । অঙ্গদ উপস্থিত হয়েছে শুনে রাবণ তাকে ভিতরে আসতে বলল। প্রচণ্ড রবে রাম নাম দিয়ে অঙ্গদ বুক ফুলিয়ে সভায় ঢুকলে সভাসদেরা আতঙ্কিত হল। কারণ হনুমানের স্মৃতি মনে তখনও টাটকা ছিলো । রাবণ তাহার লঙ্কা আগমনের কারণ জানতে চাইলে অঙ্গদ অতি বিনীত ভাবে বলল- “লঙ্কাপতি রাবণের চরণে প্রনাম জানাই। আপনি স্বয়ং পুলস্ত্য ঋষির বংশজ। আপনি ব্রহ্মা, শিব ও ভদ্রকালী উপাসক। আপনি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মহাপণ্ডিত । আপনি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ । হে লঙ্কেশ! আপনি আমার স্বর্গীয় পিতার মিত্র। আপনাকে নতমস্তকে প্রনাম জানাই। আমি এখানে প্রভু শ্রীরামের দূত হয়ে এসেছি । আপনি কৃপা করে তাঁহার শান্তি প্রস্তাব শ্রবণ করুন।” শুনে রাবণ ভাবল এই কপি যখন এত প্রশংসা করছে তখন নিশ্চয়ই শ্রীরাম ভয় পেয়েছে। তাই সে যুদ্ধ বাতিল করে রাবণের সাথে সন্ধি করতে চাইছে। রাবণ প্রসন্ন হয়ে বলল- “তা কি বলেছে ঐ রাম ? সেকি আমার শক্তি দেখে ভীত ? তাই সে যুদ্ধে অনিচ্ছুক। বেশ ত, সে এসে আমার চরণে ক্ষমা চেয়ে চলে যাক। সীতার ন্যায় সুমুখীর জন্য আমি তাকেও ক্ষমা করে দেবো।” অঙ্গদ বলল- “হে দশানন! তুমি খুবুই মূর্খ ও দাম্ভিক! প্রভু শ্রীরাম যুদ্ধ রোধের জন্য এখানে শান্তি প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। কারন তিনি তোমার ন্যায় নিষ্ঠুর নন, তিনি দয়ার সাগর। এই যুদ্ধে অনেক রক্তপাত ও নিরীহ প্রান নষ্ট হবে। এই ভেবে তিনি আমাকে এখানে পাঠিয়ে তোমার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যেনো সীতাকে তুমি ফিরিয়ে দাও। নচেৎ উনি যুদ্ধ করবেন। হে দশানন! তুমি শ্রীরামের শক্তি দেখোনি। হনুমানের বিক্রম দেখেও তোমার সুবুদ্ধি উদয় হয় নি। এমন ত হতেও পারে, কাল তোমার দশ মুণ্ড রাম বাণে মাটিটে গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রভু শ্রীরাম চাইলে এক শরেই তোমার লঙ্কাকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি অনর্থক ও নির্দোষ প্রানী বধের বিরোধী। অতএব তাই তোমাকে শান্তি প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন । তুমি শোনো, আর মেনে নাও।” রাবণ বলল- “ওরে বালক! তোর বুদ্ধি স্বল্প । তাই এমন বলছিস ! আমি এই হস্তে কৈলাস পর্বতকে তুলেছি। এই মুণ্ড কেটে ভগবান শিবকে প্রসন্ন করেছি। আমাকে বধ করবে ঐ তুচ্ছ ভিখারী মানব। শোন আমার রাক্ষসেরা দিবারাত্র যে মানবের মাংস ভক্ষণ করে, তুই সেই মানবদের ভয় দেখাস না। তুই তো পিতৃঘাতকের পক্ষ নিচ্ছিস। তোর পিতাকে যেই রাম হত্যা করলো, তুই তার পক্ষ নিয়ে এখানে এসেছিস? কেমন পুত্র তুই, যে পিতৃঘাতকের পদসেবা করে। তুই বরং আমার পক্ষে আয়। আমার সাথে মিলে পিতৃঘাতক রামকে বধ করবি ।”
রাম নিন্দা শুনে অঙ্গদ ক্রোধে রাবণের রাজসভা মাঝে মুষ্ট্যাঘাত করলো মাটিটে। সেই জায়গায় যেনো ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠলো। সভাসদরা আসন থেকে পড়ে গেলো। রাবণ পড়ে গেলো আসন থেকে। অঙ্গদ রাক্ষস দের পতিত কিছু কিরীট নিয়ে লঙ্কার বাহিরে ছুড়লো । অতি উজ্জ্বল সেই কিরীট গুলো জলন্ত উল্কাপিণ্ডের ন্যায় ছুটে আসতে দেখে বানরদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়লো । বিভীষণ বলল- “ওগুলো উল্কা নয়। রাবণের সভাসদ দের কিরীট।” বানরেরা সেই কিরীট কুঁড়িয়ে ভগবান রামের চরণে রেখে পুনঃ তুলে রাখলো । অঙ্গদ বলল- “এখনেই পড়ে যাচ্ছো রাবণ। ভাবো প্রভু শ্রীরামের বাণ তোমাকে কোথায় ফেলে দেবে। তাই বলছি শান্তি প্রস্তাব মেনে নাও। তোমাকে ত আমার পিতা সাতবার লাঙুলে পেঁচিয়ে জলে নিমজ্জিত করেছিলেন । ভুলে যেয়ো না আমার পিতা সেই শ্রীরামের শরে দেহ রেখেছেন। এবার কল্পনা করতে পারছো যে প্রভু শ্রীরামের শক্তি কত? রাবণ তোমার কোন ধারনাই নেই, তুমি কার সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছো ? যার এক শরেই ত্রিলোক ধ্বংস হতে পারে- তাঁকে যুদ্ধে আহবান জানিয়ো না। তোমার বংশনাশ হবে । তুমি কি নিজের কুল নিজেই ধ্বংস করতে চাও?” রাবণ বলল – “ওহে বালক! তুমি আমার শক্তি সম্বন্ধে অবগত নও । তুমি বালক। তোমাকে বীরত্ব দেখালে আমার নিজের অপমান হবে। যুদ্ধে দেখবে আমি কিভাবে রাম লক্ষ্মণ কে বধ করি। যতদিন আমি বেঁচে থাকবো, সীতাকে এই লঙ্কা থেকে যেতে দেবো না। হয় সে আমাকে বিবাহ করবে, নচেৎ যমালয়ে যাবে।” অঙ্গদ ক্রোধে তখন বাম চরণ সজোরে ভূমি কাঁপিয়ে সভাতে রেখে বললেন- “আমি প্রতিজ্ঞা করছি। কেউ যদি আমার এই চরণ একচুল সড়াতে পারে , তবে শ্রীরাম যুদ্ধ না করেই প্রস্থান করবেন।”
জৌঁ মম চরন সকসি সঠ টারী ।
ফিঁরহি রামু সীতা মৈ হারী ।।
সুনহু সুভট সব কহ দসসীসা ।
পদ গহি ধরনি পছারহু কীসা ।।
ইন্দ্রজীত আদিক বলবানা ।
হরষি উঠে জহুঁ জহুঁ ভট নানা ।।
ঝপটহি করি বল বিপুল উপাঈ ।
পদ ন টরই বৈঠহিঁ সিরু নাঈ ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
রাক্ষসেরা অনেকে চেষ্টা করেও অঙ্গদের চরণ একচুলও নড়াতে পারলো না। অনেকে ভীর করে একসাথে টানা হ্যাঁচরা করেও সমর্থ হল না। ইন্দ্রজিত এসে পারলো না। লঙ্কার বীরেরা পারলো না দেখে রাবন এসে পা সড়াতে গেলো। অঙ্গদ তখন পা সড়িয়ে বলল- “লঙ্কেশ! আমার চরণ নয়, প্রভু শ্রীরামের চরণ ধর। তোর উদ্ধার হবে।” লঙ্কেশ রাবণ বলল- “গিয়ে বল তোর প্রভুকে! আমি সীতাকে ফিরাবো না। সে যা পারে করুক।” অঙ্গদ তখন বলল- “তবে যুদ্ধভূমিতেই তোর সাথে দেখা হবে।” এই বলে অঙ্গদ রাবণের কিরীট কেড়ে নিয়ে লম্ফ ও দৌড় দিয়ে লঙ্কার বাহিরে আসলো।
( সুন্দরাকাণ্ড সমাপ্ত )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন