১২ এপ্রিল ১৯৭৪ সালে ভারতে এক প্রাতঃভ্রমণের সময় ইসকন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং এক ভারতীয় ব্যক্তির সাথে কথোপকথন হচ্ছিল -------
শ্রীল প্রভুপাদ – “……… আমি অনেক কিছুই দর্শন করিনি, তার মানে কি সেগুলোর অস্তিত্ব নেই ? আপনি একজন বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণা করছেন, কিন্তু আপনি তা দর্শন করেন নি ।”
ভারতীয় ভদ্রলোক – “আমি অনেক ভূতের গল্প শুনেছি কিন্তু……”
শ্রীল প্রভুপাদ – “না না সেগুলো কোন গল্প না । আমরা ভাগবত থেকে শ্রবণ করি, এটিই হচ্ছে যথার্থ উৎস । আমরা কোন জড় জ্ঞানী ও তথাকথিত পন্ডিতদের কাছ থেকে শ্রবণ করি না । আমরা স্বয়ং ব্যাসদেবের কাছ থেকে শ্রবণ করছি ।…….”
ভারতীয় ভদ্রলোক – “কিন্তু আমার ৮০ বছরের জীবনে ভূতের অস্তিত্বসূচক কোন অভিজ্ঞতা হয়নি ।”
শ্রীল প্রভুপাদ – “না, আপনার সব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়নি । আপনার অভিজ্ঞতাই সবকিছু নয় । আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা পারমার্থিক কর্তৃপক্ষকে মানতে চাই না । এখানে ব্যাসদেব সমস্ত জ্ঞানের অধিকর্তা এবং ভাগবত হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভিজ্ঞতা । আমরা সেখান থেকে শ্রবণ করছি । আমাদের ভূতের অভিজ্ঞতা না হলেও ! ভূত হচ্ছে একটি জীব যাদের কোন জড়দেহ নেই । যখন কেউ অত্যধিক পাপকার্য করে থাকে তারা জড়দেহ লাভ করতে পারে না । সে মন, বুদ্ধি ও অহংকারে নির্মিত একটি সূক্ষ্ম দেহে অবস্থান করে । এটিই হচ্ছে ভূতের জীবন । যেহেতু তাদের কোন জড়দেহ নেই, তাই কেউ তাদের দেখতে পায় না কিন্তু তারা বিভিন্ন কিছু প্রদর্শন করতে সক্ষম । এটিই ভূতের জীবন । দেখা বা না দেখা কোন বিষয় নেই । তাই আমরা বেদান্ত সূত্র এবং শাস্ত্রচক্ষু দ্বারা দর্শন করতে পারি ।”
বৈদিক শাস্ত্রসমূহে আমরা বিভিন্ন স্থানে ভূতের অবস্থিতির ঘটনা পাই । শ্রীমদভাগবদে দক্ষের ঘটনা রয়েছে এবং চৈতন্য চরিতামৃতে রয়েছে ছোট হরিদাসের গল্প । ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যারা ভূতের উপাসনা করে তারা ভূতলোকে গমন করে । শ্রীল প্রভুপাদের লীলামৃত থেকে আমরা পাই যে, শ্রীল প্রভুপাদ একসময় জন লেননের বাড়িতে থাকার সময় সেখানের এক ভূতকে মুক্ত করেছিলেন । চার সম্প্রদায়েরর আচার্যগণও জীবনে ভূতের অবস্থিতির কথা বলেছিলেন । শ্রীপাদ রামানুচার্যের স্ত্রী একবার ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন, রামানুচার্য তাকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করেছিলেন । শ্রীপাদ মধ্বাচার্যের পিতা মাতা এবং তাদের একদল ব্রহ্মরাক্ষস ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন যখন তারা ছোট বাসুদেবকে (মধ্বাচার্য) নিয়ে অনন্তসন মন্দির থেকে আসছিলেন তখন মধ্বাচার্যের বয়স ছিল মাত্র ২ সপ্তাহ । মধ্বাচার্যের এক অনুসারী শ্রীপাদ বদরাজ তীর্থ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য সেবক ছিলেন একজন শক্তিশালি ভূত যার নাম ছিল ভূতরাজ । ভূতরাজকে দিয়ে তিনি মায়াবাদীদের পরাজিত করতেন, যারা তাকে ভূতের আক্র্রমণ করার চেষ্টা করত । রাঘবেন্দ্র তীর্থ তার কমন্ডুলুর জল ছিটিয়ে দিয়ে তাকে সেই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দেন । বায়ু পুরাণে বিশদভাবে ভূতের বর্ণনা দেওয়া আছে । এছাড়াও অন্যান্য পুরাণ যেমন-গরুর পুরানে চারটি অধ্যায়ে বিশদভাবে বর্ণনা দেওয়া আছে । অতএব এটি স্পষ্ট যে, বৈদিক শাস্ত্র মতে ভূত বা অদৃশ্য জীবসত্তার অস্তিত্ব রয়েছে ।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে থাকে । তাইতো সমগ্রবিশ্বে এবং সব ধর্মে ভূত হতে মুক্ত হওয়ার পন্থার জন্য বহু গবেষনা এবং পদ্ধতি তৈরির প্রচেষ্টা চলছে । পাশ্চাত্য দেশে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন নামক বহু গবেষনা কেন্দ্র রয়েছে । এখন প্রশ্ন হল কখন একজন মানুষ ভূতের দেহ লাভ করে । উত্তর হল মৃত্যুর পর । অবশ্যই সেই মৃ্ত্যু যদি স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে দূ্র্ঘটনা বা আত্মহত্যা জনিত হয় তবে সে ভূতের দেহ লাভ করবে (গরুর পুরাণ) । যেহেতু মানুষ জড় জগতের প্রতি, তার পরিবার সমাজের প্রতি অতি আকর্ষিত তাই মায়ার কারনে ভূতুরে অবস্থা প্রাপ্ত হয়েও তারা সেই আকর্ষনে আবদ্ধ থাকে ।
এবার আমরা জানব ভূতরা সাধারনত কোন্ কোন্ স্থানে বেশি থাকে বা থাকতে পারে এ ধরনের স্থানগুলো কি কি ?
শ্মশান/গোরস্থান ঃ- এই সমস্ত এলাকা যত বেশি পুরাতন হবে সেখানে তত বেশি ভূত বা প্রেতাত্মাদের অবস্থিতি বেশি পরিলক্ষিত হবে । তার কারণ হল সেই সূক্ষ্মদেহ প্রাপ্ত আত্মাগুলো তাদের মনুষ্যদেহের প্রতি অতি আকর্ষিত বলে তারা এসকল স্থানে বেশি অবস্থান গ্রহণ করে ।
ঐতিহাসিক স্থান ঃ- অনেক পুরাতন ঐতিহাসিক দালাল, ইমারত রয়েছে যেখানে বহু বছর যাবৎ অনেকেই বসবাস করেন এবং সেখানেই বেশি প্রেতাত্মার সন্ধান পাওয়া যায় । কেননা এসকল স্থানে অনেক আবেগময় স্মৃতি বা ঘটনা সংগঠিত হয়ে থাকে ।
এছাড়াও কোন গণহত্যা হয়েছে এমন কোন স্থানে সেখানে হত্যাকৃত মানুষদের আত্মাদের উপস্থিতি থাকতে পারে । এরকম বিভিন্ন পুরাতন হোটেল, বোডিং হাউস, স্কুল, থিয়েটার, যুদ্ধক্ষেত্রে ভূতের উপস্থিতি থাকতে পারে কেননা এখানে কোন না কোন সময় অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে থাকে ।
(আগামি সংখ্যায় থাকবে ভূত আক্রান্ত ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ভূত থেকে নিজেকে রক্ষার নানা কৌশল) চলবে.........
Written by : Sankirtan Madhab Das
শ্রীল প্রভুপাদ – “……… আমি অনেক কিছুই দর্শন করিনি, তার মানে কি সেগুলোর অস্তিত্ব নেই ? আপনি একজন বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণা করছেন, কিন্তু আপনি তা দর্শন করেন নি ।”
ভারতীয় ভদ্রলোক – “আমি অনেক ভূতের গল্প শুনেছি কিন্তু……”
শ্রীল প্রভুপাদ – “না না সেগুলো কোন গল্প না । আমরা ভাগবত থেকে শ্রবণ করি, এটিই হচ্ছে যথার্থ উৎস । আমরা কোন জড় জ্ঞানী ও তথাকথিত পন্ডিতদের কাছ থেকে শ্রবণ করি না । আমরা স্বয়ং ব্যাসদেবের কাছ থেকে শ্রবণ করছি ।…….”
ভারতীয় ভদ্রলোক – “কিন্তু আমার ৮০ বছরের জীবনে ভূতের অস্তিত্বসূচক কোন অভিজ্ঞতা হয়নি ।”
শ্রীল প্রভুপাদ – “না, আপনার সব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়নি । আপনার অভিজ্ঞতাই সবকিছু নয় । আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা পারমার্থিক কর্তৃপক্ষকে মানতে চাই না । এখানে ব্যাসদেব সমস্ত জ্ঞানের অধিকর্তা এবং ভাগবত হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভিজ্ঞতা । আমরা সেখান থেকে শ্রবণ করছি । আমাদের ভূতের অভিজ্ঞতা না হলেও ! ভূত হচ্ছে একটি জীব যাদের কোন জড়দেহ নেই । যখন কেউ অত্যধিক পাপকার্য করে থাকে তারা জড়দেহ লাভ করতে পারে না । সে মন, বুদ্ধি ও অহংকারে নির্মিত একটি সূক্ষ্ম দেহে অবস্থান করে । এটিই হচ্ছে ভূতের জীবন । যেহেতু তাদের কোন জড়দেহ নেই, তাই কেউ তাদের দেখতে পায় না কিন্তু তারা বিভিন্ন কিছু প্রদর্শন করতে সক্ষম । এটিই ভূতের জীবন । দেখা বা না দেখা কোন বিষয় নেই । তাই আমরা বেদান্ত সূত্র এবং শাস্ত্রচক্ষু দ্বারা দর্শন করতে পারি ।”
বৈদিক শাস্ত্রসমূহে আমরা বিভিন্ন স্থানে ভূতের অবস্থিতির ঘটনা পাই । শ্রীমদভাগবদে দক্ষের ঘটনা রয়েছে এবং চৈতন্য চরিতামৃতে রয়েছে ছোট হরিদাসের গল্প । ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যারা ভূতের উপাসনা করে তারা ভূতলোকে গমন করে । শ্রীল প্রভুপাদের লীলামৃত থেকে আমরা পাই যে, শ্রীল প্রভুপাদ একসময় জন লেননের বাড়িতে থাকার সময় সেখানের এক ভূতকে মুক্ত করেছিলেন । চার সম্প্রদায়েরর আচার্যগণও জীবনে ভূতের অবস্থিতির কথা বলেছিলেন । শ্রীপাদ রামানুচার্যের স্ত্রী একবার ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন, রামানুচার্য তাকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করেছিলেন । শ্রীপাদ মধ্বাচার্যের পিতা মাতা এবং তাদের একদল ব্রহ্মরাক্ষস ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন যখন তারা ছোট বাসুদেবকে (মধ্বাচার্য) নিয়ে অনন্তসন মন্দির থেকে আসছিলেন তখন মধ্বাচার্যের বয়স ছিল মাত্র ২ সপ্তাহ । মধ্বাচার্যের এক অনুসারী শ্রীপাদ বদরাজ তীর্থ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য সেবক ছিলেন একজন শক্তিশালি ভূত যার নাম ছিল ভূতরাজ । ভূতরাজকে দিয়ে তিনি মায়াবাদীদের পরাজিত করতেন, যারা তাকে ভূতের আক্র্রমণ করার চেষ্টা করত । রাঘবেন্দ্র তীর্থ তার কমন্ডুলুর জল ছিটিয়ে দিয়ে তাকে সেই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দেন । বায়ু পুরাণে বিশদভাবে ভূতের বর্ণনা দেওয়া আছে । এছাড়াও অন্যান্য পুরাণ যেমন-গরুর পুরানে চারটি অধ্যায়ে বিশদভাবে বর্ণনা দেওয়া আছে । অতএব এটি স্পষ্ট যে, বৈদিক শাস্ত্র মতে ভূত বা অদৃশ্য জীবসত্তার অস্তিত্ব রয়েছে ।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে থাকে । তাইতো সমগ্রবিশ্বে এবং সব ধর্মে ভূত হতে মুক্ত হওয়ার পন্থার জন্য বহু গবেষনা এবং পদ্ধতি তৈরির প্রচেষ্টা চলছে । পাশ্চাত্য দেশে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন নামক বহু গবেষনা কেন্দ্র রয়েছে । এখন প্রশ্ন হল কখন একজন মানুষ ভূতের দেহ লাভ করে । উত্তর হল মৃত্যুর পর । অবশ্যই সেই মৃ্ত্যু যদি স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে দূ্র্ঘটনা বা আত্মহত্যা জনিত হয় তবে সে ভূতের দেহ লাভ করবে (গরুর পুরাণ) । যেহেতু মানুষ জড় জগতের প্রতি, তার পরিবার সমাজের প্রতি অতি আকর্ষিত তাই মায়ার কারনে ভূতুরে অবস্থা প্রাপ্ত হয়েও তারা সেই আকর্ষনে আবদ্ধ থাকে ।
এবার আমরা জানব ভূতরা সাধারনত কোন্ কোন্ স্থানে বেশি থাকে বা থাকতে পারে এ ধরনের স্থানগুলো কি কি ?
শ্মশান/গোরস্থান ঃ- এই সমস্ত এলাকা যত বেশি পুরাতন হবে সেখানে তত বেশি ভূত বা প্রেতাত্মাদের অবস্থিতি বেশি পরিলক্ষিত হবে । তার কারণ হল সেই সূক্ষ্মদেহ প্রাপ্ত আত্মাগুলো তাদের মনুষ্যদেহের প্রতি অতি আকর্ষিত বলে তারা এসকল স্থানে বেশি অবস্থান গ্রহণ করে ।
ঐতিহাসিক স্থান ঃ- অনেক পুরাতন ঐতিহাসিক দালাল, ইমারত রয়েছে যেখানে বহু বছর যাবৎ অনেকেই বসবাস করেন এবং সেখানেই বেশি প্রেতাত্মার সন্ধান পাওয়া যায় । কেননা এসকল স্থানে অনেক আবেগময় স্মৃতি বা ঘটনা সংগঠিত হয়ে থাকে ।
এছাড়াও কোন গণহত্যা হয়েছে এমন কোন স্থানে সেখানে হত্যাকৃত মানুষদের আত্মাদের উপস্থিতি থাকতে পারে । এরকম বিভিন্ন পুরাতন হোটেল, বোডিং হাউস, স্কুল, থিয়েটার, যুদ্ধক্ষেত্রে ভূতের উপস্থিতি থাকতে পারে কেননা এখানে কোন না কোন সময় অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে থাকে ।
(আগামি সংখ্যায় থাকবে ভূত আক্রান্ত ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ভূত থেকে নিজেকে রক্ষার নানা কৌশল) চলবে.........
Written by : Sankirtan Madhab Das
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন