ঈশা বাস্যমিদৃং সর্বং যত্কঞ্চ জগত্যাং জগত্ ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনমৃ ।।১
অনুবাদঃ অখিল বিশ্বব্রহ্মান্ডে যা কিছু জড় চেতন স্বরুপ ইত্যাদিতে ঈশ্বর ব্যাপ্ত ।সেই ঈশ্বরকে সাথে নিয়ে সে গুলো ত্যাগ পূর্বক ভোগ কর ।এতে আকৃষ্ট হয়ে কারও ধনে লোভ কর না ।
বিশ্লেষনঃ এটি ঈশ উপনিষদের প্রথম শ্লোক ।খুবই যুগপোযোগী মনে হয় ।এর উপযোগীতা যখন এত দিনেও হারায় নি ,তখন ভবিষ্যতেও হারাবে না । যা হোক মন্ত্রটিকে প্রথমে তিন ভাগে ভাগ করা দরকার ।যথাক্রমে
১/অখিল ব্রহ্মান্ডে জড় বা চেতন সব কিছুতেই ঈশ্বর ব্যাপ্ত ।
২/ত্যাগ পূর্বক ভোগ কর ।
৩/ লোভ কর না ।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ঈশ্বর সমস্ত কিছুতে ব্যাপ্ত ।তা সে চেতন হোক অবচেতন হোক ।গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ন বলেছেন
ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা ।
মত্ স্থানি সর্বভূতানি ন চাহং তেষ্ববস্থিতঃ ।।৯/৪
অনুবাদঃ আমি অব্যাক্ত রূপে জগত ব্যাপিয়া আছি ।সমস্ত ভূত আমাতে অবস্থিত ,আমি কিন্তু তত্ সমুদে অবস্থিত নই ।
সমস্ত কিছুতে ঈশ্বর অবস্থান এটা বেদান্তের উচ্চ স্তরের কথা ।ঠাকুর রামকৃষ্ন পরমহংস দেব বলতেন "জগত চৈতন্যময় "।বিঞ্জান প্রমানে বিশ্বাসী ,যেহেতু ঈশ্বর অনুভবের বিষয় ,তাই তারা ঈশ্বরকে পাশ কাটিয়ে বলেন এই পৃথিবী এবং মহাজাগতিক সকল কর্মকান্ডই চলছে শক্তি দ্বারা ।এমন কি ক্ষুদ্র অনু পরমানুতে ও শক্তি বিদ্যমান ।এদিকে হিন্দু শাস্ত্রে ঈশ্বর যে শক্তির দ্বারা জগত পরিচালনা করেন ,তাকে মাতৃরূপা বলা হয়েছে ।শক্তি শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ চন্ডীতে স্তব মন্ত্রে বলা হয়েছে যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা ।বোঝাই গেল সমস্ত কিছুতে ঈশ্বরের শক্তি ব্যাপ্ত ,কিন্তু ব্যাপ্ত হয়েও এর বাইরে তিনি অবস্থান করেন ।সমস্ত জগত চেতনা বা শক্তিতে পরিপূর্ন এটাই আর্য ঋষিদেব অভিমত ।অধুনা বিঞ্জান ঈশ্বরকে না মানলেও শক্তি বা Aneargy কে অস্বিকার করার ক্ষমতা তাদের নেই ।আর আমরা হিন্দুরা শক্তিকে মাতৃরূপেই চিন্তা করি ।
এই মন্ত্রে আর ও বলা হয়েছে ত্যাগের মাধ্যমে ভোগের কথা ।এটি অর্থনীতি এবং সমাজের মূলকথা ।বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এল রবিন্স ১৯৩১সালে তার প্রকাশিত An essay on the nature an significance of economic scinece নামক গ্রন্থে অর্থনীতির সংঞ্জা দিতে গিয়ে বলেছেন ।"অর্থনীতি হল এমন একটি বিঞ্জান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যাবহার যোগ্য দূষ্প্রাপ্য উপকরন সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যবলি আলোচনা করে "।
এই সংঞ্জার মূলকথা হল অভাব অসীম ,সম্পদ সীমিত ।এই অসীম অভাবকে সীমিত সম্পদের দ্বারা সমন্বয় সাধন করা ।এছাড়া এল রবিন্স এর সাথে সমর্থন যুগীয়ে ববার ,স্টোনিয়ার , হেগ ,কেয়ার্নক্রস প্রমুখ অর্থনীতিবিদ দের মত হল ।"সমীম সম্পদের সাহায্যে আসীম অভাব পূরনের জটিল সমস্যাই হল মানব জীবনের প্রধান সমস্যা "।সমগ্র অর্থনীতি শাস্ত্র এই সীমিত সম্পদের ব্যাবহার নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ ,পদ্ধতি তৈরি করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে ।অথচ উপনিষদ বলছে ত্যাগের মধ্যমে ভোগ অর্থাত্ অধিক বিলাসী না হয়ে অপরের কথা চিন্তা করে জীবন যাপন ,দ্রব্য বা পন্য যাই হোক তার ব্যাবহার ।এখানে অপরকে সাহায্যের কথাও স্পষ্ট ।অর্থনীতিবিদরা সম্পদের সুষম বন্টনের কথা বলে ।
এই মন্ত্রে আরও বলা হয়েছে কার ও ধনে লোভ না করতে ।এই কথাটিকে দুই ভাবে বলা যায় ।আধ্যাতিক ভাবে এবং লৌকিক ভাবে ।
অধ্যাতিক ভাবে বলা যায় এই জগত সংসার অনিত্য ,মহাকাল একদিন সব গ্রাস করবে এটাই স্বাভাবিক ।তাই এই মিথ্যা মায়ায় আবদ্ধ না হয়ে ,ঈশ্বরীয় কর্ম এবং লোকহিতার্থে কর্ম করে জীবন অতিবাহিত করা ।আবার লৌকিক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বলা যায় যে ,লোভ বা ঈর্ষা মানুষকে পশু করে তোলে ।অপরের ধন দেখে লোভে পড়ে মানুষ সুপথ ছেড়ে কুপথে উর্পাজনে নামে ।ফলে সমাজে অপরাধ বাড়ে এবং মানব সভ্যতার প্রভূত ক্ষতি সাধন করে ।
ক্রমশ.........
Written by : Agni Sampad
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনমৃ ।।১
অনুবাদঃ অখিল বিশ্বব্রহ্মান্ডে যা কিছু জড় চেতন স্বরুপ ইত্যাদিতে ঈশ্বর ব্যাপ্ত ।সেই ঈশ্বরকে সাথে নিয়ে সে গুলো ত্যাগ পূর্বক ভোগ কর ।এতে আকৃষ্ট হয়ে কারও ধনে লোভ কর না ।
বিশ্লেষনঃ এটি ঈশ উপনিষদের প্রথম শ্লোক ।খুবই যুগপোযোগী মনে হয় ।এর উপযোগীতা যখন এত দিনেও হারায় নি ,তখন ভবিষ্যতেও হারাবে না । যা হোক মন্ত্রটিকে প্রথমে তিন ভাগে ভাগ করা দরকার ।যথাক্রমে
১/অখিল ব্রহ্মান্ডে জড় বা চেতন সব কিছুতেই ঈশ্বর ব্যাপ্ত ।
২/ত্যাগ পূর্বক ভোগ কর ।
৩/ লোভ কর না ।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ঈশ্বর সমস্ত কিছুতে ব্যাপ্ত ।তা সে চেতন হোক অবচেতন হোক ।গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ন বলেছেন
ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা ।
মত্ স্থানি সর্বভূতানি ন চাহং তেষ্ববস্থিতঃ ।।৯/৪
অনুবাদঃ আমি অব্যাক্ত রূপে জগত ব্যাপিয়া আছি ।সমস্ত ভূত আমাতে অবস্থিত ,আমি কিন্তু তত্ সমুদে অবস্থিত নই ।
সমস্ত কিছুতে ঈশ্বর অবস্থান এটা বেদান্তের উচ্চ স্তরের কথা ।ঠাকুর রামকৃষ্ন পরমহংস দেব বলতেন "জগত চৈতন্যময় "।বিঞ্জান প্রমানে বিশ্বাসী ,যেহেতু ঈশ্বর অনুভবের বিষয় ,তাই তারা ঈশ্বরকে পাশ কাটিয়ে বলেন এই পৃথিবী এবং মহাজাগতিক সকল কর্মকান্ডই চলছে শক্তি দ্বারা ।এমন কি ক্ষুদ্র অনু পরমানুতে ও শক্তি বিদ্যমান ।এদিকে হিন্দু শাস্ত্রে ঈশ্বর যে শক্তির দ্বারা জগত পরিচালনা করেন ,তাকে মাতৃরূপা বলা হয়েছে ।শক্তি শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ চন্ডীতে স্তব মন্ত্রে বলা হয়েছে যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা ।বোঝাই গেল সমস্ত কিছুতে ঈশ্বরের শক্তি ব্যাপ্ত ,কিন্তু ব্যাপ্ত হয়েও এর বাইরে তিনি অবস্থান করেন ।সমস্ত জগত চেতনা বা শক্তিতে পরিপূর্ন এটাই আর্য ঋষিদেব অভিমত ।অধুনা বিঞ্জান ঈশ্বরকে না মানলেও শক্তি বা Aneargy কে অস্বিকার করার ক্ষমতা তাদের নেই ।আর আমরা হিন্দুরা শক্তিকে মাতৃরূপেই চিন্তা করি ।
এই মন্ত্রে আর ও বলা হয়েছে ত্যাগের মাধ্যমে ভোগের কথা ।এটি অর্থনীতি এবং সমাজের মূলকথা ।বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এল রবিন্স ১৯৩১সালে তার প্রকাশিত An essay on the nature an significance of economic scinece নামক গ্রন্থে অর্থনীতির সংঞ্জা দিতে গিয়ে বলেছেন ।"অর্থনীতি হল এমন একটি বিঞ্জান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যাবহার যোগ্য দূষ্প্রাপ্য উপকরন সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যবলি আলোচনা করে "।
এই সংঞ্জার মূলকথা হল অভাব অসীম ,সম্পদ সীমিত ।এই অসীম অভাবকে সীমিত সম্পদের দ্বারা সমন্বয় সাধন করা ।এছাড়া এল রবিন্স এর সাথে সমর্থন যুগীয়ে ববার ,স্টোনিয়ার , হেগ ,কেয়ার্নক্রস প্রমুখ অর্থনীতিবিদ দের মত হল ।"সমীম সম্পদের সাহায্যে আসীম অভাব পূরনের জটিল সমস্যাই হল মানব জীবনের প্রধান সমস্যা "।সমগ্র অর্থনীতি শাস্ত্র এই সীমিত সম্পদের ব্যাবহার নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ ,পদ্ধতি তৈরি করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে ।অথচ উপনিষদ বলছে ত্যাগের মধ্যমে ভোগ অর্থাত্ অধিক বিলাসী না হয়ে অপরের কথা চিন্তা করে জীবন যাপন ,দ্রব্য বা পন্য যাই হোক তার ব্যাবহার ।এখানে অপরকে সাহায্যের কথাও স্পষ্ট ।অর্থনীতিবিদরা সম্পদের সুষম বন্টনের কথা বলে ।
এই মন্ত্রে আরও বলা হয়েছে কার ও ধনে লোভ না করতে ।এই কথাটিকে দুই ভাবে বলা যায় ।আধ্যাতিক ভাবে এবং লৌকিক ভাবে ।
অধ্যাতিক ভাবে বলা যায় এই জগত সংসার অনিত্য ,মহাকাল একদিন সব গ্রাস করবে এটাই স্বাভাবিক ।তাই এই মিথ্যা মায়ায় আবদ্ধ না হয়ে ,ঈশ্বরীয় কর্ম এবং লোকহিতার্থে কর্ম করে জীবন অতিবাহিত করা ।আবার লৌকিক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বলা যায় যে ,লোভ বা ঈর্ষা মানুষকে পশু করে তোলে ।অপরের ধন দেখে লোভে পড়ে মানুষ সুপথ ছেড়ে কুপথে উর্পাজনে নামে ।ফলে সমাজে অপরাধ বাড়ে এবং মানব সভ্যতার প্রভূত ক্ষতি সাধন করে ।
ক্রমশ.........
Written by : Agni Sampad
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন