রাবণের আদেশে রাক্ষস বিরূপাক্ষ কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভঙ্গ করতে গেলো । পালে পালে রাক্ষস বিবিধ বাদ্য নিয়ে কুম্ভ কর্ণের ঘরে গেলো । স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত গৃহ খানি ছিলো দেখবার মতোন। এবং সেখানে নানা রত্ন দ্বারা সুশোভিত ছিলো। গৃহের চূড়াগুলিতে রাক্ষসের পতাকা ও ঘণ্টা বাধা ছিলো ।
সোণার নির্মিত গৃহ অতি মনোহর ।
বিশ্বকর্মা নির্মিত বিচিত্র বহুতর ।।
সারি সারি সোণার কলস সব সাজে।
নেতের পতাকা উড়ে জয়ঘণ্টা বাজে ।।
ত্রিশ যোজন ঘরখান দীর্ঘ নিরূপণ ।
আড়ে দশ যোজন দেখিতে সুগঠন ।।
চারিক্রোশ যুড়ে দ্বার আড়েতে নির্ণয় ।
দীর্ঘেতে যোজন অষ্ট দৃষ্টি নাহি হয় ।।
চারিদিকে এইরূপ দ্বার শোভে চারি ।
মধ্যে মধ্যে গবাক্ষ শোভিছে সারি সারি ।।
রত্নখাটে কুম্ভকর্ণ নিদ্রায় অচেতন ।
নাকের নিশ্বাস যেন প্রলয় পবন ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এইরূপ ছিলো কুম্ভকর্ণের ঘর । তাতে আবার সুন্দরী বিদ্যাধরী , নর্তকী ছিলো। যাহাদের আলিঙ্গনে গভীর সুখে নিদ্রায় ছিলো কুম্ভকর্ণ । বিরূপাক্ষ বলল – “তোমরা সকলে বাদ্য বাজাও”। কারণ কুম্ভকর্ণকে ধাক্কা দিয়ে নিদ্রা ভঙ্গ হবে না। গভীর ঘুমে অচেতন। এখন বরং বাদ্য বাজানো হল। রাক্ষসেরা লক্ষ ঢাক, কাঁসর , দুন্দুভি, শিঙা, দামামা বাজালো। শব্দে যেনো গোটা লঙ্কায় কানে তালা লাগলো । রাক্ষসেরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বাদ্য বাজাতে লাগলো। কুম্ভকর্ণের কাণের সামনে গিয়ে। তবুও বীরের নিদ্রা ভঙ্গ হয় না। লঙ্কার বাহিরে এই শব্দ শুনে শ্রীরাম বললেন- “বিভীষণ! আজ তো যুদ্ধ হয়নি। বা লঙ্কা থেকে আক্রমণ করছে না। এই বাদ্য কিসের?” বিভীষণ বলল- “প্রভু ! আমার অগ্রজ কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগাবার সময় এই প্রকারে বাদ্য বাজানো হয় । বোধ হয় আজ আমার ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ যুদ্ধে আসবে।”
রাক্ষসেরা বাদ্য বাজাতে বাজাতে হাঁপিয়ে পড়লো। সর্বাঙ্গ দিয়ে ঘাম বের হল। তবুও এই বীর নিদ্রা থেকে জাগল না। তখন বিরূপাক্ষের নির্দেশে রাক্ষসেরা বল্লম, বর্শা দিয়ে কুম্ভকর্ণের উদরে , কর্ণে, চরণে খোঁচাতে লাগলো। কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভাঙ্গে না। কুম্ভকর্ণের মনে হচ্ছিল্ল মশক জাতীয় কিছু উড়ছে। কুম্ভকর্ণের পর্বত প্রমান উদর নিশ্বাসের সাথে সাথে যেনো মেদিনী থেকে পর্বত উঠে- আবার মাটিটে চলে যায় এমন মনে হচ্ছিল্ল । রাক্ষসেরা খোঁচাখুচি করল- বর্শা, বল্লম ভেঙ্গে গেলো। তবুও বীরের ঘুম ভাঙ্গে না। নাসিকা, কর্ণ গহ্বর দেখে প্রকাণ্ড গুহা ভ্রম হতে পারে। নাসিকা গর্জন বজ্রপাতের ন্যায়। রাক্ষসদের কাণে তালা লাগলো । উদরে উঠে রাক্ষসেরা যখন খুচাখুচি করছিলো, কুম্ভকর্ণ পাশ ফিরে শুতেই রাক্ষসেরা হুড়মুড় করে পড়লো । বিরূপাক্ষ বকাঝকা দিয়ে বলল- “থামলে চলবে না। শত হস্তী নিয়ে আসো।” সাথে সাথে শত হস্তী নিয়ে কুম্ভকর্ণের উপরে উঠলো । যেনো বটের বৃক্ষে চড়াই পাখী শোভা পাচ্ছে এমন। অতি উচ্চ গর্জন করলো গজেরা। সমগ্র লঙ্কা কাঁপতে লাগলো, তবুও বীরের ঘুম ভাঙ্গে না। গজেরা কুম্ভকর্ণের কানের সামনে শুণ্ড উত্তোলন করে প্রকাণ্ড রবে গর্জন করতে লাগলো, বৃহৎ চরণ দিয়ে সমগ্র শরীরে হেটে বেড়াতে লাগলো, তবুও বীরের নিদ্রা ভাঙ্গে না। আবার একপাশ হতেই গজগুলি সব গড়িয়ে ভূমিতে পতিত হল । বিরূপাক্ষের নির্দেশে ঘড়া ঘড়া শীতল জল ঢালা হল, তাও নিদ্রা ভাঙ্গলো না রাক্ষসেরা তাঁর বটবৃক্ষের মূলের ন্যায় জটা, শ্রশ্রু ধরে টানাটানি করলো, কেউ আবার ঝুলে পড়লো, তবুও নিদ্রা ভাঙ্গলো না । বিরূপাক্ষ বলল- “এবার অন্তিম প্রয়াস, আহার আনয়ন করো।” রাক্ষসেরা শকটে আকর্ষণ করে দিঘী সমান থালাতে পর্বত পরিমাণ অন্ন, শত হরিণ- মহিষ শুকর আনলো। দিঘীর জলের পরিমাণ সুরা আনলো। নানা বিধ মিষ্টদ্রব্য আনলো। বৃহৎ তিমি মৎস্য আনলো । খাবারের গন্ধ নাকে জেতেই ভ্রু কুঁচকে গন্ধ পেতেই কুম্ভকর্ণ উঠে বসলো ।
শয্যা হৈতে উঠি বীর চক্ষে দিল পাণি ।
ভক্ষণের দ্রব্য দিল থরে থরে আনি ।।
মদ্য পান করিলেন সাতশো কলসি ।
পর্বত প্রমান মাংস খায় রাশি রাশি ।।
হরিণ মহিষ বরা সাপটিয়া ধরে ।
বার তের শত পশু খায় একেবারে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এইভাবে কুম্ভকর্ণ ভোজন সেরে বলল- “তোদের সাহস ত কম নয়! অকালে আমাকে জাগিয়েছিস?” এই বলে কুম্ভকর্ণ আবার হাই তুলে ঘুমাতে গেলে বিরূপাক্ষ বলল- “আপনি ঘুমাবেন না! লঙ্কার ঘোর বিপদ। মহারাজ রাবণের আদেশে আপনাকে জাগানো হয়েছে।” কুম্ভকর্ণ জানতে চাইলে বিরূপাক্ষ সব বলল। শূর্পনাখার নাসিকা ছেদন, রাবণের সীতা হরণ, সীতার স্বামী রাম দ্বারা বালি বধ, সুগ্রীবের সহায়তা নিয়ে শত যোজন সেঁতু বেধে লঙ্কা আগমন , হনুমানের লঙ্কা দহন, বিভীষণকে বহিষ্কার , রাক্ষসদের সাথে বানরদের যুদ্ধ, অনেক বীর রাক্ষস বধ এমনকি রাবণের যুদ্ধে পরাজয়। সব ঘটনাই বলল । কুম্ভকর্ণ বলল- “আমার দাদা রাবণ এমন নিঃকৃষ্ট কাজ করেছে। অন্যের স্ত্রীকে অপহরণ করে এনেছে। ছি! দাদা লঙ্কার মুখে চুনকালি লেপন করেছে । সীতাদেবী সাক্ষাৎ লক্ষ্মী । তাঁরই অভিশাপে আজ লঙ্কার এই দশা। ভ্রাতা বিভীষণের মতো সুবুদ্ধিদাতাকে বিতারিত করলে এমনই হবে। আমি দাদাকে বোঝাবো।” এই বলে কুম্ভকর্ণ ঘর থেকে বের হল। কুম্ভকর্ণের ছায়া যেনো সমগ্র লঙ্কার বুকে এক বিশাল আকৃতির মেঘের ন্যায় পতিত হয়েছিলো। এতই বিশাল ও স্থূল দেহ ছিলো তার। রাবণ এক উচ্চতলায় দাঁড়িয়ে ভূমিতে দণ্ডায়মান কুম্ভকর্ণের সাথে কথা বলছিলেন ।
( ক্রমশঃ )
সোণার নির্মিত গৃহ অতি মনোহর ।
বিশ্বকর্মা নির্মিত বিচিত্র বহুতর ।।
সারি সারি সোণার কলস সব সাজে।
নেতের পতাকা উড়ে জয়ঘণ্টা বাজে ।।
ত্রিশ যোজন ঘরখান দীর্ঘ নিরূপণ ।
আড়ে দশ যোজন দেখিতে সুগঠন ।।
চারিক্রোশ যুড়ে দ্বার আড়েতে নির্ণয় ।
দীর্ঘেতে যোজন অষ্ট দৃষ্টি নাহি হয় ।।
চারিদিকে এইরূপ দ্বার শোভে চারি ।
মধ্যে মধ্যে গবাক্ষ শোভিছে সারি সারি ।।
রত্নখাটে কুম্ভকর্ণ নিদ্রায় অচেতন ।
নাকের নিশ্বাস যেন প্রলয় পবন ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এইরূপ ছিলো কুম্ভকর্ণের ঘর । তাতে আবার সুন্দরী বিদ্যাধরী , নর্তকী ছিলো। যাহাদের আলিঙ্গনে গভীর সুখে নিদ্রায় ছিলো কুম্ভকর্ণ । বিরূপাক্ষ বলল – “তোমরা সকলে বাদ্য বাজাও”। কারণ কুম্ভকর্ণকে ধাক্কা দিয়ে নিদ্রা ভঙ্গ হবে না। গভীর ঘুমে অচেতন। এখন বরং বাদ্য বাজানো হল। রাক্ষসেরা লক্ষ ঢাক, কাঁসর , দুন্দুভি, শিঙা, দামামা বাজালো। শব্দে যেনো গোটা লঙ্কায় কানে তালা লাগলো । রাক্ষসেরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বাদ্য বাজাতে লাগলো। কুম্ভকর্ণের কাণের সামনে গিয়ে। তবুও বীরের নিদ্রা ভঙ্গ হয় না। লঙ্কার বাহিরে এই শব্দ শুনে শ্রীরাম বললেন- “বিভীষণ! আজ তো যুদ্ধ হয়নি। বা লঙ্কা থেকে আক্রমণ করছে না। এই বাদ্য কিসের?” বিভীষণ বলল- “প্রভু ! আমার অগ্রজ কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগাবার সময় এই প্রকারে বাদ্য বাজানো হয় । বোধ হয় আজ আমার ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ যুদ্ধে আসবে।”
রাক্ষসেরা বাদ্য বাজাতে বাজাতে হাঁপিয়ে পড়লো। সর্বাঙ্গ দিয়ে ঘাম বের হল। তবুও এই বীর নিদ্রা থেকে জাগল না। তখন বিরূপাক্ষের নির্দেশে রাক্ষসেরা বল্লম, বর্শা দিয়ে কুম্ভকর্ণের উদরে , কর্ণে, চরণে খোঁচাতে লাগলো। কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভাঙ্গে না। কুম্ভকর্ণের মনে হচ্ছিল্ল মশক জাতীয় কিছু উড়ছে। কুম্ভকর্ণের পর্বত প্রমান উদর নিশ্বাসের সাথে সাথে যেনো মেদিনী থেকে পর্বত উঠে- আবার মাটিটে চলে যায় এমন মনে হচ্ছিল্ল । রাক্ষসেরা খোঁচাখুচি করল- বর্শা, বল্লম ভেঙ্গে গেলো। তবুও বীরের ঘুম ভাঙ্গে না। নাসিকা, কর্ণ গহ্বর দেখে প্রকাণ্ড গুহা ভ্রম হতে পারে। নাসিকা গর্জন বজ্রপাতের ন্যায়। রাক্ষসদের কাণে তালা লাগলো । উদরে উঠে রাক্ষসেরা যখন খুচাখুচি করছিলো, কুম্ভকর্ণ পাশ ফিরে শুতেই রাক্ষসেরা হুড়মুড় করে পড়লো । বিরূপাক্ষ বকাঝকা দিয়ে বলল- “থামলে চলবে না। শত হস্তী নিয়ে আসো।” সাথে সাথে শত হস্তী নিয়ে কুম্ভকর্ণের উপরে উঠলো । যেনো বটের বৃক্ষে চড়াই পাখী শোভা পাচ্ছে এমন। অতি উচ্চ গর্জন করলো গজেরা। সমগ্র লঙ্কা কাঁপতে লাগলো, তবুও বীরের ঘুম ভাঙ্গে না। গজেরা কুম্ভকর্ণের কানের সামনে শুণ্ড উত্তোলন করে প্রকাণ্ড রবে গর্জন করতে লাগলো, বৃহৎ চরণ দিয়ে সমগ্র শরীরে হেটে বেড়াতে লাগলো, তবুও বীরের নিদ্রা ভাঙ্গে না। আবার একপাশ হতেই গজগুলি সব গড়িয়ে ভূমিতে পতিত হল । বিরূপাক্ষের নির্দেশে ঘড়া ঘড়া শীতল জল ঢালা হল, তাও নিদ্রা ভাঙ্গলো না রাক্ষসেরা তাঁর বটবৃক্ষের মূলের ন্যায় জটা, শ্রশ্রু ধরে টানাটানি করলো, কেউ আবার ঝুলে পড়লো, তবুও নিদ্রা ভাঙ্গলো না । বিরূপাক্ষ বলল- “এবার অন্তিম প্রয়াস, আহার আনয়ন করো।” রাক্ষসেরা শকটে আকর্ষণ করে দিঘী সমান থালাতে পর্বত পরিমাণ অন্ন, শত হরিণ- মহিষ শুকর আনলো। দিঘীর জলের পরিমাণ সুরা আনলো। নানা বিধ মিষ্টদ্রব্য আনলো। বৃহৎ তিমি মৎস্য আনলো । খাবারের গন্ধ নাকে জেতেই ভ্রু কুঁচকে গন্ধ পেতেই কুম্ভকর্ণ উঠে বসলো ।
শয্যা হৈতে উঠি বীর চক্ষে দিল পাণি ।
ভক্ষণের দ্রব্য দিল থরে থরে আনি ।।
মদ্য পান করিলেন সাতশো কলসি ।
পর্বত প্রমান মাংস খায় রাশি রাশি ।।
হরিণ মহিষ বরা সাপটিয়া ধরে ।
বার তের শত পশু খায় একেবারে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এইভাবে কুম্ভকর্ণ ভোজন সেরে বলল- “তোদের সাহস ত কম নয়! অকালে আমাকে জাগিয়েছিস?” এই বলে কুম্ভকর্ণ আবার হাই তুলে ঘুমাতে গেলে বিরূপাক্ষ বলল- “আপনি ঘুমাবেন না! লঙ্কার ঘোর বিপদ। মহারাজ রাবণের আদেশে আপনাকে জাগানো হয়েছে।” কুম্ভকর্ণ জানতে চাইলে বিরূপাক্ষ সব বলল। শূর্পনাখার নাসিকা ছেদন, রাবণের সীতা হরণ, সীতার স্বামী রাম দ্বারা বালি বধ, সুগ্রীবের সহায়তা নিয়ে শত যোজন সেঁতু বেধে লঙ্কা আগমন , হনুমানের লঙ্কা দহন, বিভীষণকে বহিষ্কার , রাক্ষসদের সাথে বানরদের যুদ্ধ, অনেক বীর রাক্ষস বধ এমনকি রাবণের যুদ্ধে পরাজয়। সব ঘটনাই বলল । কুম্ভকর্ণ বলল- “আমার দাদা রাবণ এমন নিঃকৃষ্ট কাজ করেছে। অন্যের স্ত্রীকে অপহরণ করে এনেছে। ছি! দাদা লঙ্কার মুখে চুনকালি লেপন করেছে । সীতাদেবী সাক্ষাৎ লক্ষ্মী । তাঁরই অভিশাপে আজ লঙ্কার এই দশা। ভ্রাতা বিভীষণের মতো সুবুদ্ধিদাতাকে বিতারিত করলে এমনই হবে। আমি দাদাকে বোঝাবো।” এই বলে কুম্ভকর্ণ ঘর থেকে বের হল। কুম্ভকর্ণের ছায়া যেনো সমগ্র লঙ্কার বুকে এক বিশাল আকৃতির মেঘের ন্যায় পতিত হয়েছিলো। এতই বিশাল ও স্থূল দেহ ছিলো তার। রাবণ এক উচ্চতলায় দাঁড়িয়ে ভূমিতে দণ্ডায়মান কুম্ভকর্ণের সাথে কথা বলছিলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন