পৃথিবীতে যত ধর্মসম্প্রদায় আছে, শিখদের মত এমন ভক্তিভাব বোধহয় আর কারো নেই। এঁদের এই ভক্তিভাব ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। কত সহজভাবে ধর্মের কথাকে এরা সর্বসাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়! আমি সুযোগ হলে প্রায়ই পাঞ্জাবি চ্যানেলে গুরুবাণী কির্তন শুনি। অদ্ভুত সুরে তারা যখন 'ওয়াহিগুরু' বলে কির্তন শুরু করে, তখন মনে যে অপূর্ব ভক্তিভাব জাগে, তা মুখে প্রকাশ করা যাবেনা। পাঞ্জাবিতে লেখা গানের কথা সব বুঝিনা ঠিকই, কিন্তু তার অদ্ভুত সুর, আর গায়ক বা ভক্তদের প্রশান্ত অভিব্যক্তি এমনিই মনে শান্তি এনে দেয়।
এমন সমবেতভাবে ভক্তিপূর্ণ আরাধনা আর কোথাও বোধহয় বর্তমানে পাওয়া যাবেনা। শিখ ধর্ম নামেই আলাদা। আসলে তা হিন্দু ধর্মের ভক্তিমার্গ ছাড়া কিছুই নয়। শিখরা সংগঠিত হয় পরে, মূলত মুঘল আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে। নানক ও পরবর্তি ১০ জন গুরুকে যিনি মানেন ও তাঁদের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন, তিনিই শিখ। নানকের মতের সার কথা ছিল এক ঈশ্বরে অটুট ভক্তি। তত্কালীন আড়ম্বরপূর্ণ আচার অনুষ্ঠানের বদলে ভগবানের নামগান গাইতেন। আমাদের গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মত। শিখরা ঈশ্বরকে অকাল বলেন। যিনি কালেরও উর্দ্ধে তিনিই অকাল। আর ঈশ্বর তো তাইই! শিখদের মত এমন নিষ্ঠাভরে ধর্মপালন বোধহয় আর কেউ করেনা। এই ধর্ম তাদের দিয়েছে চরিত্রে দৃঢ়তা। ভক্তির পাশাপাশি জ্ঞান ও কর্মেও কিন্তু তারা দক্ষ। আসলে তারা যা করে, সবই ভক্তির সাথে করে। ঈশ্বরই তাদের সব। তাদের মূলমন্ত্রই হল- "এক ওংকর(ওমকার) সত্তি(সত্য) নাম!"
শিখদের আরেক গুরুত্বপূর্ণ গুরু হলেন গোবিন্দ সিংহ। তিনি খালসা বাহিনির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদের দশম ও শেষ গুরু হলেন তেগবাহাদুর, যাঁকে ঔরঙ্গজেব বন্দি করে হত্যা করেছিল।
বহু ঝড়ঝাপটা সহ্য করেও শিখরা আজও টিকে আছে এবং তাদের ধর্মকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ধর্মই তাদের শক্তির উত্স। তারা শিখিয়েছে ধর্মে অটুট ভক্তি কিভাবে মানুষকে গড়ে তোলে। তাই শিখরা সকলের কাছেই আদর্শ।
আসুন আমরাও একবার বলে নিই-
"সত্যনাম সত্যনাম সত্যনাম জি,
ওয়াহিগুরু ওয়াহিগুরু ওয়াহিগুরু জি।"
আমরাও যদি এভাবে আমাদের ধর্মকে রক্ষা করে চলি, তবে আমরাও সমস্ত দূর্দশা থেকে মুক্তি পাব। ঈশ্বরে অটল ভক্তি ও আস্থা রেখে তাঁর উদ্দেশ্যেই সকল কর্ম নিবেদিত হোক।
Written by : Dhrubajyoti Pathak
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন