সর্বাগমেষু যে প্রোক্তা অবতারা জগৎপ্রভোঃ ।
তদ্রহস্যং হি গীতায়াং কৃষ্ণেন কথিতং স্বয়ম্ ।।
যিনি নিজ স্থিতি থেকে নিম্নে অবতরণ করেন তাঁকে ' অবতার ' বলা হয় । যেমন কোন শিক্ষক কোন বালককে পড়াবার সময় তার সমক্ষক হয়ে পড়াতে থাকেন অর্থাৎ তিনি নিজে ' ক খ গ ঘ ইত্যাদি অক্ষর উচ্চারণ করে বালককে উচ্চারণ শেখান এবং হাত ধরে তাকে অক্ষরগুলি লিখতে শেখান , এটি হল সেই বালকের কাছে শিক্ষকের অবতার অর্থাৎ অবতরণ । গুরুও যেমন নিজ শিষ্যের সম-স্থিতিতে এসে অর্থাৎ শিষ্য যাতে বুঝতে পারে , এমনভাবে তার যোগ্যতা অনুসারে উপদেশ দেন , তেমনি ভগবান মানুষকে ঠিকমত ব্যবহার এবং পারমার্থিক শিক্ষা দেবার জন্য মানুষের সম-স্থিতিতে আসেন , অবতাররূপ ধারণ করেন ।
ভগবান সাধারণ মানুষের মতো জন্মান না । জন্ম না নিলেও তিনি জন্মের লীলা করেন , অর্থাৎ মাতৃগর্ভেই আসেন , কিন্তু মানুষের মতো গর্ভে প্রবিষ্ট হন না । যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর আশ্রয় নিলেন , তখন প্রথমে তিনি বসুদেবের মনে উদয় হলেন ও চক্ষু দ্বারা দেবকীর মধ্যে প্রবিষ্ট হলেন এবং দেবকী মনের দ্বারা তাঁকে ধারণ করলেন ।
ততো জগন্মঙ্গলমচ্যুতাংশং সমাহিতং শূরসূতেন দেবী ।
দধার সর্বাত্মকমাত্মভূতং কাষ্ঠা যথাহহনন্দকরং মনস্তুঃ । ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০\২\১৮ )
--- যথা দীক্ষাকালে গুরুঃ শিষ্যায় ধ্যানমুপদিশতি শিষ্যশ্চ ধ্যানোক্তাং মূর্তিং হৃদি নিবেশয়তি তথা বসুদেবো দেবকীদৃষ্টেী স্বদৃষ্টিং নিদধৌ ।
দৃষ্টিদ্বারা চ হরিঃ সংক্রামন্ দেবকীগর্ভে আর্ব্বিভূব । এতেন রেতোরূপেণাধানং নিরস্তম্ । ' ( অন্বিতার্থ - প্রকাশিকা )
গীতায় ভগবান বলেছেন --- ' আমি অজ ( জন্মরহিত ) হওয়া সত্ত্বেও জন্মগ্রহণ করি , অর্থাৎ আমার জন্মরহিত স্বভাব যেমন তেমনি থাকে । আমি অব্যয় ( স্বরূপে নিত্য ) আত্মা হয়েও অন্তর্ধান হই অর্থাৎ আমার তাতে নিত্য - প্রকাশিত স্বভাবের কিছুমাত্র হানি হয় না । আমি সমস্ত প্রাণিকুলের , সমস্ত জগৎ -সংসারের ঈশ্বর বা প্রভু হওয়া সত্ত্বেও অবতাররূপে মাতাপিতার আজ্ঞা পালন করি , তাতে আমার ঈশ্বরত্ব বা ঐশ্বর্য কিছুমাত্র কমে না । মানুষ নিজ -স্বভাবের বা প্রকৃতির বশ করে স্বাধীনভাবে স্বেচ্ছায় অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করি ( ৪\৬ )
ভগবান নিজের অবতারত্ব গ্রহণের কাল চিহ্নিত করতে গিয়ে বলেছেন , 'যখন ধর্ম হ্রাস পেয়ে অধর্ম বর্ধিত হয়ে ওঠে তখন আমি অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করি , জগতে প্রকাশিত হই । নিজের অবতরণের প্রয়োজন জানাতে গিয়ে বললেন , ' ভক্তদের এবং তাদের ভাব রক্ষার জন্য , অন্যায় - অত্যাচারকারী দুষ্টদের দমনের জন্য , ধর্মের সংস্থাপন বা দৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মের পুনরুত্থানের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই । এইরূপ জন্মরহিত অবিনাশী এবং ঈশ্বররূপ আমার মহেশ্বর পরমভাবকে না জেনে যেসব মানুষ আমাকে অবহেলা করে , তিরস্কার করে , তারা মূর্খ । এইসব মূর্খ , মূঢ় ব্যক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃতির বশবর্তী হয়ে যা কিছু আশা করে , যা কিছু শুভকর্ম করে , যে বিদ্যা আহরণ করে , তা সমস্তই ব্যর্থ হয়ে যায় অর্থাৎ তাতে কোনও সৎ ফল পাওয়া যায় না । যে মানুষ আমার সর্বশ্রেষ্ঠ অবিনাশী পরম ভাবব না জেনে অব্যক্ত পরমাত্মাকে জন্ম-মৃত্যু চক্রে আবদ্ধ বলে মনে করে , সে ব্যক্তি বুদ্ধিহীন । এইরূপ ব্যক্তির নিকট আমি আমার আসলরূপে প্রকাশিত হই না ।
নাটকের সময় কেউ সঙ্ সাজলে তখন সে অন্যদের কাছে তার আসল পরিচয় দেয় না । কারণ সে তার আসল পরিচয় দিলে খেলাই পণ্ড হয়ে যাবে । এইরূপ ভগবান যখন অবতার হয়ে আসেন তখন সকলের কাছে নিজের আসল রূপ প্রকাশিত করেন না , সকলকে নিজ পরিচয়ও দেন না ,- ' নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য ( ৭\২৫) । কেননা নিজ পরিচয় দিলে আর লীলা করতে পারবেন না । যেমন নাটকের সময় ভয়ংকর রূপের কোন সঙ্কে দেখলে তার আত্মীয়-স্বজনও চিনতে পারে নো , ভয় পায় । তখন সঙ্ সাজা লোকটি নিজের প্রিয়জনকে সঙ্কেতে নিজ পরিচয় দিয়ে বলে , ' আরে ! তুই ভয় পাসনে , আমি তো সে-ই । ' তেমনি ভগবানের অবতার -দেহ দেখে কোন ভক্ত ভয় পেলে ভগবান তাকে নিজ পরিচয় দিয়ে বলেন , ' ভাই ! বয় পেয়ো না , আমিই তো সে-ই । '
দুই বন্ধু ছিল । একজন বাজারে গিয়ে দোকান খুলল এবং জিনিসপত্র সাজাল , যাতে খরিদ্দার জিনিসপত্র দেখে কিনতে পারে । অন্যজন পুলিশের বেশ ধারণ করে তার কাছে গিয়ে তাকে খুব ধমক দিতে লাগল । ' আরো ! তুই এই রাস্তার ওপর কেন দোকান খুলেছিস , শিগ্গির সব ওঠা , নাহলে তোর নামে নালিশ পাঠাচ্ছি । ' তার কথায় সেই দোকানদার বন্ধুটি ভয় পেয়ে দোকান গোটাতে লাগল । তার এই ভীত ভাব দেখে পুলিশ সাজা বন্ধুটি বলল, ' আরে ! তুই ভয় পাস্নে , আমি তোর বন্ধু । ' এইরূপ অর্জুনের সামনে ভগবান যখন বিরাটরূপে প্রকটিত হলেন , তখন অর্জুন ভয় পেয়েছিলেন । তখন ভগবান নিজের সত্য পরিচয় দিয়ে অর্জুনকে সান্ত্বনা জানালেন ।
তদ্রহস্যং হি গীতায়াং কৃষ্ণেন কথিতং স্বয়ম্ ।।
যিনি নিজ স্থিতি থেকে নিম্নে অবতরণ করেন তাঁকে ' অবতার ' বলা হয় । যেমন কোন শিক্ষক কোন বালককে পড়াবার সময় তার সমক্ষক হয়ে পড়াতে থাকেন অর্থাৎ তিনি নিজে ' ক খ গ ঘ ইত্যাদি অক্ষর উচ্চারণ করে বালককে উচ্চারণ শেখান এবং হাত ধরে তাকে অক্ষরগুলি লিখতে শেখান , এটি হল সেই বালকের কাছে শিক্ষকের অবতার অর্থাৎ অবতরণ । গুরুও যেমন নিজ শিষ্যের সম-স্থিতিতে এসে অর্থাৎ শিষ্য যাতে বুঝতে পারে , এমনভাবে তার যোগ্যতা অনুসারে উপদেশ দেন , তেমনি ভগবান মানুষকে ঠিকমত ব্যবহার এবং পারমার্থিক শিক্ষা দেবার জন্য মানুষের সম-স্থিতিতে আসেন , অবতাররূপ ধারণ করেন ।
ভগবান সাধারণ মানুষের মতো জন্মান না । জন্ম না নিলেও তিনি জন্মের লীলা করেন , অর্থাৎ মাতৃগর্ভেই আসেন , কিন্তু মানুষের মতো গর্ভে প্রবিষ্ট হন না । যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর আশ্রয় নিলেন , তখন প্রথমে তিনি বসুদেবের মনে উদয় হলেন ও চক্ষু দ্বারা দেবকীর মধ্যে প্রবিষ্ট হলেন এবং দেবকী মনের দ্বারা তাঁকে ধারণ করলেন ।
ততো জগন্মঙ্গলমচ্যুতাংশং সমাহিতং শূরসূতেন দেবী ।
দধার সর্বাত্মকমাত্মভূতং কাষ্ঠা যথাহহনন্দকরং মনস্তুঃ । ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০\২\১৮ )
--- যথা দীক্ষাকালে গুরুঃ শিষ্যায় ধ্যানমুপদিশতি শিষ্যশ্চ ধ্যানোক্তাং মূর্তিং হৃদি নিবেশয়তি তথা বসুদেবো দেবকীদৃষ্টেী স্বদৃষ্টিং নিদধৌ ।
দৃষ্টিদ্বারা চ হরিঃ সংক্রামন্ দেবকীগর্ভে আর্ব্বিভূব । এতেন রেতোরূপেণাধানং নিরস্তম্ । ' ( অন্বিতার্থ - প্রকাশিকা )
গীতায় ভগবান বলেছেন --- ' আমি অজ ( জন্মরহিত ) হওয়া সত্ত্বেও জন্মগ্রহণ করি , অর্থাৎ আমার জন্মরহিত স্বভাব যেমন তেমনি থাকে । আমি অব্যয় ( স্বরূপে নিত্য ) আত্মা হয়েও অন্তর্ধান হই অর্থাৎ আমার তাতে নিত্য - প্রকাশিত স্বভাবের কিছুমাত্র হানি হয় না । আমি সমস্ত প্রাণিকুলের , সমস্ত জগৎ -সংসারের ঈশ্বর বা প্রভু হওয়া সত্ত্বেও অবতাররূপে মাতাপিতার আজ্ঞা পালন করি , তাতে আমার ঈশ্বরত্ব বা ঐশ্বর্য কিছুমাত্র কমে না । মানুষ নিজ -স্বভাবের বা প্রকৃতির বশ করে স্বাধীনভাবে স্বেচ্ছায় অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করি ( ৪\৬ )
ভগবান নিজের অবতারত্ব গ্রহণের কাল চিহ্নিত করতে গিয়ে বলেছেন , 'যখন ধর্ম হ্রাস পেয়ে অধর্ম বর্ধিত হয়ে ওঠে তখন আমি অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করি , জগতে প্রকাশিত হই । নিজের অবতরণের প্রয়োজন জানাতে গিয়ে বললেন , ' ভক্তদের এবং তাদের ভাব রক্ষার জন্য , অন্যায় - অত্যাচারকারী দুষ্টদের দমনের জন্য , ধর্মের সংস্থাপন বা দৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মের পুনরুত্থানের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই । এইরূপ জন্মরহিত অবিনাশী এবং ঈশ্বররূপ আমার মহেশ্বর পরমভাবকে না জেনে যেসব মানুষ আমাকে অবহেলা করে , তিরস্কার করে , তারা মূর্খ । এইসব মূর্খ , মূঢ় ব্যক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃতির বশবর্তী হয়ে যা কিছু আশা করে , যা কিছু শুভকর্ম করে , যে বিদ্যা আহরণ করে , তা সমস্তই ব্যর্থ হয়ে যায় অর্থাৎ তাতে কোনও সৎ ফল পাওয়া যায় না । যে মানুষ আমার সর্বশ্রেষ্ঠ অবিনাশী পরম ভাবব না জেনে অব্যক্ত পরমাত্মাকে জন্ম-মৃত্যু চক্রে আবদ্ধ বলে মনে করে , সে ব্যক্তি বুদ্ধিহীন । এইরূপ ব্যক্তির নিকট আমি আমার আসলরূপে প্রকাশিত হই না ।
নাটকের সময় কেউ সঙ্ সাজলে তখন সে অন্যদের কাছে তার আসল পরিচয় দেয় না । কারণ সে তার আসল পরিচয় দিলে খেলাই পণ্ড হয়ে যাবে । এইরূপ ভগবান যখন অবতার হয়ে আসেন তখন সকলের কাছে নিজের আসল রূপ প্রকাশিত করেন না , সকলকে নিজ পরিচয়ও দেন না ,- ' নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য ( ৭\২৫) । কেননা নিজ পরিচয় দিলে আর লীলা করতে পারবেন না । যেমন নাটকের সময় ভয়ংকর রূপের কোন সঙ্কে দেখলে তার আত্মীয়-স্বজনও চিনতে পারে নো , ভয় পায় । তখন সঙ্ সাজা লোকটি নিজের প্রিয়জনকে সঙ্কেতে নিজ পরিচয় দিয়ে বলে , ' আরে ! তুই ভয় পাসনে , আমি তো সে-ই । ' তেমনি ভগবানের অবতার -দেহ দেখে কোন ভক্ত ভয় পেলে ভগবান তাকে নিজ পরিচয় দিয়ে বলেন , ' ভাই ! বয় পেয়ো না , আমিই তো সে-ই । '
দুই বন্ধু ছিল । একজন বাজারে গিয়ে দোকান খুলল এবং জিনিসপত্র সাজাল , যাতে খরিদ্দার জিনিসপত্র দেখে কিনতে পারে । অন্যজন পুলিশের বেশ ধারণ করে তার কাছে গিয়ে তাকে খুব ধমক দিতে লাগল । ' আরো ! তুই এই রাস্তার ওপর কেন দোকান খুলেছিস , শিগ্গির সব ওঠা , নাহলে তোর নামে নালিশ পাঠাচ্ছি । ' তার কথায় সেই দোকানদার বন্ধুটি ভয় পেয়ে দোকান গোটাতে লাগল । তার এই ভীত ভাব দেখে পুলিশ সাজা বন্ধুটি বলল, ' আরে ! তুই ভয় পাস্নে , আমি তোর বন্ধু । ' এইরূপ অর্জুনের সামনে ভগবান যখন বিরাটরূপে প্রকটিত হলেন , তখন অর্জুন ভয় পেয়েছিলেন । তখন ভগবান নিজের সত্য পরিচয় দিয়ে অর্জুনকে সান্ত্বনা জানালেন ।
COurtesy by: Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন