২৫ অক্টোবর ২০১৭

শ্রীভগবা‌নের অবতারবাদ

সর্বাগ‌মেষু যে প্রোক্তা অবতারা জগৎপ্র‌ভোঃ ।
তদ্রহস্যং হি গীতায়াং কৃ‌ষ্ণেন ক‌থিতং স্বয়ম্ ।।

যি‌নি নিজ স্থি‌তি থে‌কে নি‌ম্নে অবত‌রণ ক‌রেন তাঁ‌কে ' অবতার ' বলা হয় । যেমন কোন শিক্ষক কোন বালক‌কে পড়াব‌ার সময় তার সমক্ষক হ‌য়ে পড়াতে থা‌কেন অর্থাৎ তি‌নি নি‌জে ' ক খ গ ঘ ইত্যা‌দি অক্ষর উচ্চারণ ক‌রে বালক‌কে উচ্চারণ শেখান এবং হাত ধরে তাকে অক্ষরগু‌লি লিখ‌তে শেখান , এ‌টি হল সেই বাল‌কের কা‌ছে শিক্ষকের অবতার অর্থাৎ অবতরণ । গুরুও যেমন নিজ শি‌ষ্যের সম-‌স্থি‌তি‌তে এ‌সে অর্থাৎ শিষ্য যা‌তে বুঝ‌তে পা‌রে , এমনভা‌বে তার যোগ্যতা অনুসা‌রে উপ‌দেশ দেন , তেম‌নি ভগবান মানুষ‌কে ঠিকমত ব্যবহার এবং পারমা‌র্থিক শিক্ষা দেবার জন্য মানু‌ষের সম-‌স্থি‌তি‌তে আ‌সেন , অবতাররূপ ধারণ ক‌রেন ।

ভগবান সাধারণ মানু‌ষের ম‌তো জন্মান না । জন্ম না নি‌লেও তি‌নি জন্মের লীলা ক‌রেন , অর্থাৎ মাতৃগ‌র্ভেই আ‌সেন , কিন্তু মানু‌ষের ম‌তো গ‌র্ভে প্র‌বিষ্ট হন না । যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর আশ্রয় নি‌লেন , তখন প্রথ‌মে তি‌নি বসু‌দে‌বের ম‌নে উদয় হ‌লেন ও চক্ষু দ্বারা দেবকীর ম‌ধ্যে প্র‌বিষ্ট হ‌লেন এবং দেবকী মনের দ্বারা তাঁ‌কে ধারণ কর‌লেন ।

ত‌তো জগন্মঙ্গলমচ্যুতাংশং সমা‌হিতং শূরসূ‌তেন দেবী ।
দধার সর্বাত্মকমাত্মভূতং কাষ্ঠা যথাহহনন্দকরং মনস্তুঃ । ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০\২\১৮ )

--- যথা দীক্ষাকা‌লে গুরুঃ শিষ্যায় ধ্যানমুপ‌দিশ‌তি শিষ্যশ্চ ধ্যা‌নোক্তাং মূ‌র্তিং হৃ‌দি নি‌বেশয়‌তি তথা বসু‌দে‌বো দেবকীদৃ‌ষ্টেী স্বদৃ‌ষ্টিং নিদ‌ধৌ ।

দৃ‌ষ্টিদ্বারা চ হ‌রিঃ সংক্রামন্ দেবকীগ‌র্ভে আ‌র্ব্বিভূব । এ‌তেন রে‌তোরূ‌পেণাধানং নিরস্তম্ । ' ( অন্বিতার্থ - প্রকা‌শিকা )

গীতায় ভগবান বলে‌ছেন --- ' আমি অজ ( জন্মর‌হিত ) হওয়া স‌ত্ত্বেও জন্মগ্রহণ ক‌রি , অর্থাৎ আমার জন্মর‌হিত স্বভাব যেমন তেম‌নি থা‌কে । আ‌মি অব্যয় ( স্বরূ‌পে নিত্য ) আত্ম‌া হয়েও অন্তর্ধান হই অর্থাৎ আমার তা‌তে নিত্য - প্রকা‌শিত স্বভাবের কিছুমাত্র হা‌নি হয় না । আ‌মি সমস্ত প্রা‌ণিকু‌লের , সমস্ত জগৎ -সংসা‌রের ঈশ্বর বা প্রভু হওয়া স‌ত্ত্বেও অবতাররূপে মাতা‌পিতার আজ্ঞা পালন ক‌রি , তা‌তে আমার ঈশ্বরত্ব বা ঐশ্বর্য কিছুমাত্র ক‌মে না । মানুষ নিজ -স্বভা‌বের বা প্রকৃ‌তির বশ ক‌রে স্বাধীনভাবে স্বেচ্ছায় অবতার রূ‌পে জন্মগ্রহণ ক‌রি ( ৪\৬ )
ভগবান নি‌জের অবতারত্ব গ্রহ‌ণের কাল চি‌হ্নিত কর‌তে গি‌য়ে বলে‌ছেন , 'যখন ধর্ম হ্রাস পে‌য়ে অধর্ম ব‌র্ধিত হয়ে ও‌ঠে তখন আ‌মি অবতাররূ‌পে জন্মগ্রহণ ক‌রি , জগ‌তে প্রকাশিত হই । নি‌জের অবতর‌ণের প্র‌য়োজন জানা‌তে গি‌য়ে বল‌লেন , ' ভক্ত‌দের এবং তা‌দের ভাব রক্ষার জন্য , অন্যায় - অত্যাচারকারী দুষ্ট‌দের দম‌নের জন্য , ধ‌র্মের সংস্থাপন বা দৃঢ়রূ‌পে প্র‌তিষ্ঠা এবং ধ‌র্মের পুনরুত্থা‌নের জন্য আ‌মি যু‌গে যু‌গে অবতীর্ণ হই । এইরূপ জন্মর‌হিত অ‌বিনাশী এবং ঈশ্বররূপ আমা‌র ম‌হেশ্বর পরমভাব‌কে না জে‌নে যেসব মানুষ আমা‌কে অবহেলা ক‌রে , তিরস্কার ক‌রে , তারা মূর্খ । এইসব মূর্খ , মূঢ় ব্য‌ক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃ‌তির বশবর্তী হ‌য়ে যা কিছু আশা করে , যা কিছু শুভকর্ম ক‌রে , যে বিদ্যা আহরণ ক‌রে , তা সমস্তই ব্যর্থ হ‌য়ে যায় অর্থাৎ তা‌তে কোনও সৎ ফল পাওয়া যায় না । যে মানুষ আমার সর্ব‌শ্রেষ্ঠ অ‌বিনাশী পরম ভাবব না জে‌নে অব্যক্ত পরমাত্মাকে জন্ম-মৃত্যু চ‌ক্রে আবদ্ধ ব‌লে ম‌নে ক‌রে , সে ব্যক্তি বু‌দ্ধিহীন । এইরূপ ব্য‌ক্তির নিকট আ‌মি আমার আসলরূপে প্রকাশিত হই না ।

নাট‌কের সময় কেউ সঙ্ সাজ‌লে তখন সে অন্য‌দের কা‌ছে তার আসল প‌রিচয় দেয় না । কারণ সে তার আসল প‌রিচয় দি‌লে খেলাই পণ্ড হ‌য়ে যা‌বে । এইরূপ ভগবান যখন অবতার হ‌য়ে আ‌সেন তখন সক‌লের কা‌ছে নি‌জের আসল রূপ প্রকা‌শিত ক‌রেন না , সকল‌কে নিজ প‌রিচয়ও দেন না ,- ' নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য ( ৭\২৫) । কেননা নিজ প‌রিচয় দি‌লে আর লীলা কর‌তে পার‌বেন না । যেমন নাট‌কের সময় ভয়ংকর রূ‌পের কোন সঙ‌্কে দেখ‌লে তার আত্মীয়-স্বজনও চিন‌তে পা‌রে নো , ভ‌য় পায় । তখন সঙ্ সাজা লোক‌টি নিজের প্রিয়জন‌কে সঙ্কেতে নিজ প‌রিচয় দি‌য়ে ব‌লে , ' আ‌রে ! তুই ভয় পাস‌নে , আ‌মি তো সে-ই । ' তেম‌নি ভগবা‌নের অবতার -‌দেহ দে‌খে কোন ভক্ত ভয় পে‌লে ভগবান তা‌কে নি‌জ প‌রিচয় দি‌য়ে ব‌লেন , ' ভাই ! বয় পে‌য়ো না , আ‌মিই তো সে-ই । '

দুই বন্ধু ছিল । একজ‌ন বাজা‌রে গি‌য়ে দোকান খুলল এবং জি‌নিসপত্র সাজাল , যা‌তে খ‌রিদ্দার জি‌নিসপত্র দে‌খে কিন‌তে প‌া‌রে । অন্যজন পু‌লি‌শের বেশ ধারণ ক‌রে তার কাছে গি‌য়ে তা‌কে খুব ধমক দি‌তে লাগল । ' আ‌রো ! তুই এই রাস্তার ওপর কেন দোকান খু‌লে‌ছিস , শিগ‌্গির সব ওঠা , নাহ‌লে তোর না‌মে না‌লিশ পাঠা‌চ্ছি । ' তার কথায় সেই দোকানদার বন্ধু‌টি ভয় পে‌য়ে দোকান গোটা‌তে লাগল । তার এই ভীত ভাব দে‌খে পু‌লিশ সাজা বন্ধ‌ু‌টি বলল, ' আ‌রে ! তুই ভয় পাস‌্নে , আ‌মি তোর বন্ধু । ' এইরূপ অর্জু‌নের সাম‌নে ভগবান যখন‌ বিরাটরূ‌পে প্রক‌টিত হ‌লেন , তখন অর্জুন ভয় পে‌য়ে‌ছি‌লেন । তখন ভগবান নি‌জের সত্য প‌রিচয় দি‌য়ে অর্জুন‌কে সান্ত্বনা জানা‌লেন ।

COurtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।