যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে , বিষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চোখে পড়ে না ?
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে । এমন বিষও হয়ে থাকে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অতি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধীরে ধীরে প্রভাবিত করার এক ভয়ানক সুমিষ্ট বিষ । তাই রাজসিক বিষয় সুখকে ভগবান পরিণামে বিষতুল্য বলেছেন ।
যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে , বিষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চোখে পড়ে না ?
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে । এমন বিষও হয়ে থাকে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অতি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধীরে ধীরে প্রভাবিত করার এক ভয়ানক সুমিষ্ট বিষ । তাই রাজসিক বিষয় সুখকে ভগবান পরিণামে বিষতুল্য বলেছেন ।
ভগবান গীতার ১৮\ ৩৮ শ্লোকে বলেছেন --
বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাৎ যৎ তৎ অগ্রে অমৃতোপমম্ ।
পরিণামে বিষম্ ইব তৎ সুখম্ রাজসম্ স্মৃতম্ ।
' যে সুখ বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগে হয় , যা ভোগকালের প্রারম্ভে অমৃতবৎ মনে হলেও পরিণামে তা বিষতুল্য - তাকে রাজসিক সুখ বলা হয় । '
যদি বলা হয় যে , আমরা তো বহু বহু বিষয় খেয়ে রেখেছি তাহলে এখন কী হবে ?
তার উপায় তো অনেক আছে । প্রথমে গ্রহণ করা বিষ বারও করা যেতে পারে , হজম করাও যেতে পারে । উত্তম বৈদ্য তার উপায় বলে দিতে পারেন কিন্তু প্রথমে বিশ্বাস আসা প্রয়োজন যে তা বস্তুত বিষ । বিশ্বাস হলে অন্ততপক্ষে ভবিষ্যতে তা খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে । যদি তা এখনও সেই ভাবেই গ্রহণ করা হয় তাহলে কেমন করে ভাবা যায় যে আমরা ভগবানের কথার উপর বিশ্বাস করে সেটিকে দুঃখপ্রদ ও বিষবৎ মনে করেছি ?
এই বিষসেবন ত্যাগ করা প্রয়োজন এবং তা অবিলম্বে না করলে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে । যে পর্যন্ত মৃত্যু দূরে আছে , দেহে প্রাণ আছে তার মধ্যেই অতি শীঘ্র উপায় করা প্রয়োজন । এ ভাবা ঠিক নয় যে তাড়া কীসের ! কিছু দিন পরে করে নেব । মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হবে তা কেউ বলতে পারে না । জীবনের কেনো স্থিরতা তো নেই । এদিকে বিষ বেড়েই যাচ্ছে । যদি রাত্রে মৃত্যু হয় তাহলে কী করার থাকবে ? অতএব এখনই জেগে উঠে পূর্ণ শক্তিতে লেগে পড়া প্রয়োজন । মানুষ কত কি বলবে তাদের কথা কান দিয়ে কি করবেন । তারা তো আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে না । যারা অজ্ঞানী , ইন্দ্রিয়সুখ -ভোগে আসক্ত তারা আপনাকে শুধু বিপথে নিয়ে যাবে তারা নিজেরা জানে না কি করে উদ্ধার হতে হবে আপনাকে কি আর সঠিক পথ দেখাতে পারে ।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ঈশ্বর লাভ , কারণ ঈশ্বরই একমাত্র পরম সুখ ও শাশ্বত শান্তির কেন্দ্র । তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং লাভ করবার সর্বাপেক্ষা যোগ্য পরম বস্তু , তাঁর প্রাপ্তিতেই জীবনের পূর্ণ ও যথার্থ সাফল্য নির্ভর করে এবং এই পরম লক্ষ্যকে লাভ করবার জন্য সতস যত্নশীল হওয়াই মানব জীবনের কর্তব্যপালন । এই কর্তব্যপালনে যতই ত্যাগ করা হোক না কেন , তাই অল্প । কেবল ত্যাগের প্রস্তুতি থাকা দরকার, ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হলে শাস্ত্র বলেন -- ঈশ্বর লাভ হয় আর তা লাভ করাও সহজ , আর এই বিশ্বাস ধারণ করা প্রয়োজন যে আমরা ঈশ্বর লাভের অধিকারী ।
যেমন মন দিয়ে পড়ালেখা করলে পাস করা যায় । ফেল করা কঠিন কিন্তু পাস করা সহজ । পাস করার জন্য একটু মন দিয়ে বুঝে শুনে পড়ালেখা করা । তেমনি ভগবানকে প্রাপ্ত করার জন্য মনোযোগ সহকারে তাকে ভক্তি করতে হবে । আমাদের মানবজন্ম তাঁকে প্রাপ্ত করার জন্যই হয়েছে । ভগবান আমাদের মুক্তির চাবিকাটি দিয়েছেন । যা কিছু বিফলতা হয় সব আমাদের দিক থেকে । তিনি মানবদেহে দিয়ে আমাদের মুুক্তির অধিকারী করে দিয়েছেন ।
এক্ষণে আমরা যদি প্রমাণ ও পাপ করি তাহলে তা তো আমাদের মূর্খতা । এমন মূর্খদের জন্য ভগবান বলেছেন -
তানহং দ্বিষতঃ ক্রূরান্ সংসারেষু নরাধমান্ ।
ক্ষিপামি অজস্রম্ অশুভান্ আসুরীষু এব যোনিষু । ( ১৬\ ১৯ )
' সেই দ্বেষপরায়ণ , পাপাচারী , ক্রূর , নরাধমদের আমি এই সংসারে বারংবার আসুরী যোনিতে নিক্ষেপ করি । '
আসুরী যোনিমাপন্না মূঢ়া জন্মনি জন্মনি ।
মামপ্রাপ্যৈব কৌন্তেয় ততো যান্ত্যধমাং গতিম্ ।। ১৬ \২০
হে অর্জুন ! সেই মূঢ় ব্যক্তিগণ আমাকে লাভ না করে জন্মে জন্মে আসুরী যোনি লাভ করে এবং ক্রমে তা থেকেও অত্যন্ত অধোগতি প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ ঘোর নরকে পতিত হয় । '
পাপাচারী ও ক্রূরকর্মা নরাধমদের জন্য আসুরী যোনি এবং নরকের বিধান করা তো যথার্থ । কিন্তু ভগবান যে বলেছেন - ' আমাকে লাভ না করে ' এর রহস্য কী ? সরকার বলতেই পারেন যে চোর , ডাকাত , তাকে বারংবার জেলে পাঠানো হবে , দীপান্তরে পাঠানো হবে । কিন্তু তাকে ' রাজ্য না দিয়ে জেলে পাঠানো হবে ' - এর মানে কী ? কথাটা এই যে ভগবান যখন কোনো জীবকে মানবদেহ দিয়ে পাঠান তখন তো তাকে মুক্তির অধিকার দিয়েই পাঠিয়েছেন ।
সেই মুক্তির অধিকার লাভ করে আসা জীব যখন ভগবানকে ভুলে গিয়ে নিজ জন্মসিদ্ধ অধিকার উপেক্ষা করে পাপ করে বলেন যে - দেখো , আমি একে আমাকে লাভ করবার অধিকার দিয়ে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আজ একে নরকে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে । এর চেয়ে বড় আক্ষেপ আর কী হতে পারে ?
যেমন কোনো রাজপুত্রের রাজ্যের উপর জন্মসিদ্ধ অধিকার থাকে কিন্তু যতক্ষণ সে নাবালক তাঁকে রাজ্যশাসনের যোগ্য মনে করা হয় না । রাজা স্বয়ংই রাজ্যের সমস্ত ব্যবস্থা করেন এবং রাজকুমার সাবালক হলে তাকে সমস্ত অধিকার অর্পণ করবার ইচ্ছা রাখেন । কিন্তু যদি সে অযোগ্য প্রমাণিত হয় এবং কুসঙ্গে পড়ে অনুচিত কর্ম করে , যার ফলে প্রজাদের ক্ষতি হয় তাহলে তেমন পরিস্থিতিকে জন্মসিদ্ধ স্বত্ব হলেও তাকে রাজ্যধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয় ।
শুধু তাই নয় তার জন্য দণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে । দণ্ড দেওয়ার সময়ে রাজা আক্ষেপ করেন । এমন কথা মানুষের জন্যও প্রযোজ্য । মানুষের ঈশ্বরলাভ জন্মসিদ্ধ অধিকার তবুও নিজ অযোগ্যতা ও বিপরীতাচরণ হেতু তাকে নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দণ্ড ভোগও করতে হয় । এর থেকে অধিক তার দুর্ভাগ্য কী হবে ? তাই ভগবান উপরের শ্লোকে ' আমাকে লাভ না করে ' অধম গতি লাভ করে - এমন কথা বলেছেন ।
বস্তুত এটি অতিশয় দুঃখ ও লজ্জার কথা যে , এইভাবে আমরা দয়ালু ভগবাগের দয়ার প্রতি সুবিচার না করে নিজে মানবজীবনকে ব্যর্থ করে তুলি । এটাই মানব জীবনের সব থেকে বড় বিফলতা এবং তা মানবের সব থেকে বড় ভুল । ভগবান বলেন - সত্বর চৈতন্যময় হও , কালের উপর ভরসা করে বিষয় ভুগে একটুুও বিভ্রান্ত হয়ো না । ভেবো না যে মানবদেহ সতত থাকবে ।
এও ভেবো না যে আমাকে ভুলে তুমি এতে একটুও সুখের স্পর্শ পাবে । এই মানবদেহে আমি তোমাকে বিশেষ কৃপাপূর্বক প্রদান করেছি নিজের দিকে আকর্ষণ করে পরমানন্দরূপ পরমধামে নিয়ে যাওয়ার জন্য । এই জন্ম অতিশয় দুর্লভ । কিন্তু তা অনিত্য , ক্ষণভঙ্গুর আর যে আমাকে ভুলে যায় তার জন্য তার জন্য নিতান্ত সুখরহিতও । তা লাভ করে কেবল প্রীতিপূর্বক আমারই ভজনা করো । তাহলেই তুুমি জীবনের পরম লক্ষ্যরূপ আমাকে লাভ করে ধন্য হতে পারবে ।
অনিত্য অসুখম্ লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্ ।। ( ৯\৩৩ )
জয় আমার প্রাণ শ্রীরাধাগোবিন্দের জয় ।
জয় ভক্তবৃন্দের জয় ।
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে । এমন বিষও হয়ে থাকে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অতি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধীরে ধীরে প্রভাবিত করার এক ভয়ানক সুমিষ্ট বিষ । তাই রাজসিক বিষয় সুখকে ভগবান পরিণামে বিষতুল্য বলেছেন ।
যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে , বিষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চোখে পড়ে না ?
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে । এমন বিষও হয়ে থাকে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অতি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধীরে ধীরে প্রভাবিত করার এক ভয়ানক সুমিষ্ট বিষ । তাই রাজসিক বিষয় সুখকে ভগবান পরিণামে বিষতুল্য বলেছেন ।
ভগবান গীতার ১৮\ ৩৮ শ্লোকে বলেছেন --
বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাৎ যৎ তৎ অগ্রে অমৃতোপমম্ ।
পরিণামে বিষম্ ইব তৎ সুখম্ রাজসম্ স্মৃতম্ ।
' যে সুখ বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগে হয় , যা ভোগকালের প্রারম্ভে অমৃতবৎ মনে হলেও পরিণামে তা বিষতুল্য - তাকে রাজসিক সুখ বলা হয় । '
যদি বলা হয় যে , আমরা তো বহু বহু বিষয় খেয়ে রেখেছি তাহলে এখন কী হবে ?
তার উপায় তো অনেক আছে । প্রথমে গ্রহণ করা বিষ বারও করা যেতে পারে , হজম করাও যেতে পারে । উত্তম বৈদ্য তার উপায় বলে দিতে পারেন কিন্তু প্রথমে বিশ্বাস আসা প্রয়োজন যে তা বস্তুত বিষ । বিশ্বাস হলে অন্ততপক্ষে ভবিষ্যতে তা খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে । যদি তা এখনও সেই ভাবেই গ্রহণ করা হয় তাহলে কেমন করে ভাবা যায় যে আমরা ভগবানের কথার উপর বিশ্বাস করে সেটিকে দুঃখপ্রদ ও বিষবৎ মনে করেছি ?
এই বিষসেবন ত্যাগ করা প্রয়োজন এবং তা অবিলম্বে না করলে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে । যে পর্যন্ত মৃত্যু দূরে আছে , দেহে প্রাণ আছে তার মধ্যেই অতি শীঘ্র উপায় করা প্রয়োজন । এ ভাবা ঠিক নয় যে তাড়া কীসের ! কিছু দিন পরে করে নেব । মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হবে তা কেউ বলতে পারে না । জীবনের কেনো স্থিরতা তো নেই । এদিকে বিষ বেড়েই যাচ্ছে । যদি রাত্রে মৃত্যু হয় তাহলে কী করার থাকবে ? অতএব এখনই জেগে উঠে পূর্ণ শক্তিতে লেগে পড়া প্রয়োজন । মানুষ কত কি বলবে তাদের কথা কান দিয়ে কি করবেন । তারা তো আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে না । যারা অজ্ঞানী , ইন্দ্রিয়সুখ -ভোগে আসক্ত তারা আপনাকে শুধু বিপথে নিয়ে যাবে তারা নিজেরা জানে না কি করে উদ্ধার হতে হবে আপনাকে কি আর সঠিক পথ দেখাতে পারে ।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ঈশ্বর লাভ , কারণ ঈশ্বরই একমাত্র পরম সুখ ও শাশ্বত শান্তির কেন্দ্র । তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং লাভ করবার সর্বাপেক্ষা যোগ্য পরম বস্তু , তাঁর প্রাপ্তিতেই জীবনের পূর্ণ ও যথার্থ সাফল্য নির্ভর করে এবং এই পরম লক্ষ্যকে লাভ করবার জন্য সতস যত্নশীল হওয়াই মানব জীবনের কর্তব্যপালন । এই কর্তব্যপালনে যতই ত্যাগ করা হোক না কেন , তাই অল্প । কেবল ত্যাগের প্রস্তুতি থাকা দরকার, ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হলে শাস্ত্র বলেন -- ঈশ্বর লাভ হয় আর তা লাভ করাও সহজ , আর এই বিশ্বাস ধারণ করা প্রয়োজন যে আমরা ঈশ্বর লাভের অধিকারী ।
যেমন মন দিয়ে পড়ালেখা করলে পাস করা যায় । ফেল করা কঠিন কিন্তু পাস করা সহজ । পাস করার জন্য একটু মন দিয়ে বুঝে শুনে পড়ালেখা করা । তেমনি ভগবানকে প্রাপ্ত করার জন্য মনোযোগ সহকারে তাকে ভক্তি করতে হবে । আমাদের মানবজন্ম তাঁকে প্রাপ্ত করার জন্যই হয়েছে । ভগবান আমাদের মুক্তির চাবিকাটি দিয়েছেন । যা কিছু বিফলতা হয় সব আমাদের দিক থেকে । তিনি মানবদেহে দিয়ে আমাদের মুুক্তির অধিকারী করে দিয়েছেন ।
এক্ষণে আমরা যদি প্রমাণ ও পাপ করি তাহলে তা তো আমাদের মূর্খতা । এমন মূর্খদের জন্য ভগবান বলেছেন -
তানহং দ্বিষতঃ ক্রূরান্ সংসারেষু নরাধমান্ ।
ক্ষিপামি অজস্রম্ অশুভান্ আসুরীষু এব যোনিষু । ( ১৬\ ১৯ )
' সেই দ্বেষপরায়ণ , পাপাচারী , ক্রূর , নরাধমদের আমি এই সংসারে বারংবার আসুরী যোনিতে নিক্ষেপ করি । '
আসুরী যোনিমাপন্না মূঢ়া জন্মনি জন্মনি ।
মামপ্রাপ্যৈব কৌন্তেয় ততো যান্ত্যধমাং গতিম্ ।। ১৬ \২০
হে অর্জুন ! সেই মূঢ় ব্যক্তিগণ আমাকে লাভ না করে জন্মে জন্মে আসুরী যোনি লাভ করে এবং ক্রমে তা থেকেও অত্যন্ত অধোগতি প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ ঘোর নরকে পতিত হয় । '
পাপাচারী ও ক্রূরকর্মা নরাধমদের জন্য আসুরী যোনি এবং নরকের বিধান করা তো যথার্থ । কিন্তু ভগবান যে বলেছেন - ' আমাকে লাভ না করে ' এর রহস্য কী ? সরকার বলতেই পারেন যে চোর , ডাকাত , তাকে বারংবার জেলে পাঠানো হবে , দীপান্তরে পাঠানো হবে । কিন্তু তাকে ' রাজ্য না দিয়ে জেলে পাঠানো হবে ' - এর মানে কী ? কথাটা এই যে ভগবান যখন কোনো জীবকে মানবদেহ দিয়ে পাঠান তখন তো তাকে মুক্তির অধিকার দিয়েই পাঠিয়েছেন ।
সেই মুক্তির অধিকার লাভ করে আসা জীব যখন ভগবানকে ভুলে গিয়ে নিজ জন্মসিদ্ধ অধিকার উপেক্ষা করে পাপ করে বলেন যে - দেখো , আমি একে আমাকে লাভ করবার অধিকার দিয়ে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আজ একে নরকে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে । এর চেয়ে বড় আক্ষেপ আর কী হতে পারে ?
যেমন কোনো রাজপুত্রের রাজ্যের উপর জন্মসিদ্ধ অধিকার থাকে কিন্তু যতক্ষণ সে নাবালক তাঁকে রাজ্যশাসনের যোগ্য মনে করা হয় না । রাজা স্বয়ংই রাজ্যের সমস্ত ব্যবস্থা করেন এবং রাজকুমার সাবালক হলে তাকে সমস্ত অধিকার অর্পণ করবার ইচ্ছা রাখেন । কিন্তু যদি সে অযোগ্য প্রমাণিত হয় এবং কুসঙ্গে পড়ে অনুচিত কর্ম করে , যার ফলে প্রজাদের ক্ষতি হয় তাহলে তেমন পরিস্থিতিকে জন্মসিদ্ধ স্বত্ব হলেও তাকে রাজ্যধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয় ।
শুধু তাই নয় তার জন্য দণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে । দণ্ড দেওয়ার সময়ে রাজা আক্ষেপ করেন । এমন কথা মানুষের জন্যও প্রযোজ্য । মানুষের ঈশ্বরলাভ জন্মসিদ্ধ অধিকার তবুও নিজ অযোগ্যতা ও বিপরীতাচরণ হেতু তাকে নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দণ্ড ভোগও করতে হয় । এর থেকে অধিক তার দুর্ভাগ্য কী হবে ? তাই ভগবান উপরের শ্লোকে ' আমাকে লাভ না করে ' অধম গতি লাভ করে - এমন কথা বলেছেন ।
বস্তুত এটি অতিশয় দুঃখ ও লজ্জার কথা যে , এইভাবে আমরা দয়ালু ভগবাগের দয়ার প্রতি সুবিচার না করে নিজে মানবজীবনকে ব্যর্থ করে তুলি । এটাই মানব জীবনের সব থেকে বড় বিফলতা এবং তা মানবের সব থেকে বড় ভুল । ভগবান বলেন - সত্বর চৈতন্যময় হও , কালের উপর ভরসা করে বিষয় ভুগে একটুুও বিভ্রান্ত হয়ো না । ভেবো না যে মানবদেহ সতত থাকবে ।
এও ভেবো না যে আমাকে ভুলে তুমি এতে একটুও সুখের স্পর্শ পাবে । এই মানবদেহে আমি তোমাকে বিশেষ কৃপাপূর্বক প্রদান করেছি নিজের দিকে আকর্ষণ করে পরমানন্দরূপ পরমধামে নিয়ে যাওয়ার জন্য । এই জন্ম অতিশয় দুর্লভ । কিন্তু তা অনিত্য , ক্ষণভঙ্গুর আর যে আমাকে ভুলে যায় তার জন্য তার জন্য নিতান্ত সুখরহিতও । তা লাভ করে কেবল প্রীতিপূর্বক আমারই ভজনা করো । তাহলেই তুুমি জীবনের পরম লক্ষ্যরূপ আমাকে লাভ করে ধন্য হতে পারবে ।
অনিত্য অসুখম্ লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্ ।। ( ৯\৩৩ )
জয় আমার প্রাণ শ্রীরাধাগোবিন্দের জয় ।
জয় ভক্তবৃন্দের জয় ।
Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন