সাধু সাবধান! ধর্ম পালন করতে গিয়ে সমালোচিত হবেন না। কোনটি উচিত আর কোনটি অনুচিত সেগুলো ধর্ম পালনের পূর্বে চিন্তা করুন। নিজে সতর্ক হয়ে অন্যকে সতর্ক করুন।
মাঝে মাঝে কয়েকটি বিষয়ে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হই । আমরা জানি যে অধিকাংশ হিন্দু পাড়া গুলোতে সাপ্তাহিক হরিসভার আয়োজন করা হয়। যেখানে সন্ধ্যা আরতি থেকে শুরু করে গুরুর গান, গৌর আরতি, দেহতত্ত্ব, পঞ্চতত্ত্ব, ভক্তিগীতি, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও ভাগবত পাঠ সহ ভিবিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আমি আমার নিজ এলাকা সহ বেশকিছু এলাকায় খেয়াল করি যে হরিসভার মধ্যবর্তী সময়ে মুড়ি, চানাচুর , চা, পান ইত্যাদির জল খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে উপস্থিত ভক্ত বৃন্দদের জন্য।
উক্ত খাবার গুলো খাওয়া শেষে আবার তারা হরিসভা শুরু করে। হরিসভা বলুন আর গোবিন্দের সেবা বলুন আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ভক্তি সহকারে গোবিন্দের সেবা করা এবং ঠাকুর ঘরে যদি অন্যান্য দেব-দেবী থাকে তাদের সাথে গুরু সেবা দেওয়া। পাশাপাশি কিছু ভক্তিমূলক গান, হরিনাম সংকীর্তন, গীতা পাঠ সহ ধর্মীয় ও ভক্তিমূলক আলোচনা করা এবং পূজার শেষ প্রসাদ নেওয়া। এখন প্রশ্ন হলো মাঝখানে চা, মুড়ি, চানাচুর, এমনকি পান সিগারেট দিয়ে যে জলখাবারে পর্ব আয়োজন করা হয় তাকে কি আপনি ধর্ম পালন ব্যবস্থার নিয়ম হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন নাকি নিয়মের বাহিরের কর্ম কান্ডে স্বীকার করবেন ??
আমাদের ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে খাবারের উচ্ছিষ্ট বলে একটা কথা প্রায় শুনা যায়। হরিসভার মাঝখানে এইসব মুড়ি, চানাচুর, চা, পান খেয়ে একই জায়গায় বসে মৃদঙ্গ, করতাল, কাসা, জুড়ি ও হারমুনিয়াম দিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করা ও ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে কতটুকু শুদ্ধতা বজায় থাকে তা আপনারই ভাল বলতে পারেন।
পরের বিষটি পড়ার পর বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কিছু নামধারী বৈষ্ণব আমাকে গালমন্দ করতে এক মিনিটও সময় নিবে না। কিন্তু তাতে কি? সঠিক নিয়মে আসার জন্য ভুলকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। মহোৎসবে গোবিন্দ, জগন্নাথের ভোগের শেষে যে প্রসাদ ভক্তদের মাঝে বিতরন করা হয় তাই মহাপ্রসাদ। আচ্ছা, ধরুন অদ্য দিবসে আপনার বাড়িতে মহোৎসব, এক হাজার ভক্তের জন্য প্রসাদ তৈরি করতেছে পাঁচ থেকে ছয় জন বৈষ্ণব। আপনার হঠাৎ চোখে পড়লো কয়েকজন বৈষ্ণব মহাপ্রসাদ রান্নার চলাকালীন সময়ে মুখে পান সুপারি দিয়ে বেশ চিবাচ্ছে অথবা চা কিংবা কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে প্রশান্তি নিচ্ছে। সত্যি করে বলুনতো বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখবেন?
নামধারী ঐসব বৈষ্ণবরা কি শুদ্ধতা ও সঠিক নিয়মকানুন মেনে মহাপ্রসাদ রান্না করতেছে ? নাকি শুধু ভোগের জন্য আলাদা করে পরিমাণ মতো তৈরি করে ভক্তদের জন্য চিরাচরিতভাবে সম্পূর্ণ শুদ্ধতা ও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে দায়িত্ব পালন করতেছে। আমি মনে করি এসবের জন্য শুধু নামধারী
বৈষ্ণবদের দোষারপ না করে নিজদেরকে (আয়োজনকারী) সচেতন হতে হবে। তাহলেই এই সীমাবদ্ধতা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবো আমরা। আর তা না হলে ধর্ম পালন করতে গিয়ে এই ধরনের ভুল ত্রুটি বংশ পরম্পরাক্রম যেইভাবে চলে আসতেছে সেইভাবে ভবিষৎ প্রজন্মে চলতে থাকবে।
বাপ্পী চন্দ্র কুরী।।
(সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন