ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত শ্রুতিদেব বিদেহের রাজধানী মিথিলাতে বাস করতেন । গৃহস্থ ব্রাহ্মণ ভগবদ্ভক্তিতেই পূর্ণ , পরম শান্ত , জ্ঞানী ও বৈরাগ্যবান ছিলেন । তিনি কামনারহিত থেকে যা পেতেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন । প্রারব্ধানুসারে তিনি জীবন ধারণ নিমিত্ত সামগ্রী লাভ করে আনন্দে বর্ণাশ্রমোচিত ধর্মপালনে তৎপর থাকতেন । দেশের রাজাও ব্রাহ্মণের মতন ভক্তিমান ছিলেন । রাজা তখন বহুলাশ্ব ; তিনিও অহংকাররহিত ছিলেন । অতএব শ্রুতিদেব ও বহুলাশ্ব দুইজনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় ছিলেন ।
একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হয়ে দারুককে রথ আনতে বললেন আর তাতে আরোহন করে দ্বারকা থেকে বিদেহ দেশের দিকে প্রস্থান করলেন । শ্রীভগবানের সঙ্গে নারদ , বামদেব , অত্রি , বেদব্যাস , পরশুরাম , অসিত , শুকদেব , বৃহস্পতি , কণ্ব , মৈত্রেয় , চ্যবন আদি ঋষিগণও গিয়েছিলেন । পথে তাঁদের পূজার্চনা নিমিত্ত নাগরিকবৃন্দ ও গ্রামবাসীগণ মাঙ্গলিক দ্রব্যাদি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ।শ্রীভগবান এই সমরয় আনর্ত , ধন্ব , কুরুজাঙ্গল , কঙ্ক , মৎস্য , পাঞ্চাল , কুন্তি , মধু , কেকয় , কৌশল , অর্ণ আদি বহু দেশের নর - নারীদের সাক্ষাৎ দর্শন দিয়ে ধন্য করেছিলেন । পথে ভক্তগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সরল উন্মুক্ত হাস্য ও প্রেমে পূর্ণ কৃপাকটাক্ষযুক্ত বদনমণ্ডলের মকরন্দসুধা পান করে ধন্য হয়েছিলেন । তিনি দৃষ্টিদ্বারা পরম কল্যাণ ও তত্ত্বজ্ঞানও বিতরণ করেছিলেন । অবশেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিদেহ দেশে উপস্থিত হলেন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভাগমন বার্তা নাগরিকবৃন্দ ও গ্রামবাসীদের পরম আনন্দে পরিপূর্ণ করেছিল । তাঁরা মাঙ্গলিক দ্রব্যাদি সহিত অভ্যর্থনা করবার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করে তাঁদের চিত্ত ও বদনমণ্ডল প্রেমন ও আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল । তাঁরা সেই মুনিদের ও তার সঙ্গে শ্রীভগবানকে দেখে যুক্তকরে অবনত মস্তকে প্রণাম করেছিলেন । তাঁদের দর্শন করবার পরম সৌভাগ্য লাভ করে তাঁরা ধন্য হয়ে গিয়েছিলেন ।মিথিলা অধিপতি বহুলাশ্ব ও শ্রুতিদেব দুইজনই ভাবলেন যে শ্রীভগবান তাঁদেরই উপর অনুগ্রহ করে পদার্পণ করেছেন । তাঁরা দুই জনই শ্রীভগবানের পাদপদ্মে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে সকলের সঙ্গে আতিথ্য গ্রহণ করবার আবেদন জানালেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুইজনেরই প্রার্থনা স্বীকার করে উভয়কে প্রসন্ন করবার নিমিত্ত একই সময়ে দুইজনের কাছেই গমন করলেন । দুইজনই ভাবলেন যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল আমার গৃহেই পদার্পণ করেছেন অন্য কোথাও যাননি ।
বিদেহরাজ বহুলাশ্ব স্থিতধী ব্যক্তি ছিলেন । পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ও ঋষিমুনিগণ তাঁর গৃহে এসেছেন তা তাঁর কাছে পরম গৌরবের ছিল । তিনি অতিথিসকলকে অতি সুন্দর আসনে উপবেশন করালেন । তখন তাঁর বিচিত্র দশা । প্রেমাতিশয্যে ও ভক্তি প্রাবল্যে তিনি গদগদ হয়ে ছিলেন ; নয়নযুগল প্রেমাশ্রু ক্ষরণ করতে তৎপর ছিল । তিনি পূজ্যতম অতিথিদের পাদপদ্মে প্রণাম নিবেদন করে পাদপ্রক্ষালন করলেন ও সেই পাদোদক নিজ আত্মীয়স্বজন সমেত মস্তকে ধারণ করলেন ।অতঃপর তিনি শ্রীভগবানের ও ভগবদ্ভক্তস্বরূপ ঋষিদের গন্ধ মাল্য , বস্ত্র , অলংকার , ধূপ , দীপ , অর্ঘ্য , ধেনু , বৃষ আদি সমর্পণ করে পূজার্চনা করলেন ।
যখন সকলে আহার্য ধারণ করে তৃপ্ত হয়ে গেলেন তখন তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণযুগল নিজ অঙ্কে ধারণ করে তা সেবা করতে করতে স্তুতি করতে লাগলেন । ভক্ত যে শ্রীভগবানের নিজ স্বরূপ শ্রীবলরাম , অর্ধাঙ্গিনী লক্ষ্মী ও পুত্র ব্রহ্মা থেকে বেশি প্রিয় তাই প্রমাণ করবার জন্য শ্রীভগবান তাঁর মতন সাধারণ ভক্তকে দর্শন দিয়েছেন , এই কথা বহুলাশ্ব স্বীকার করে নিলেন ।তিনি প্রার্থনা করলেন যেন শ্রীভগবান মুনিঋষিদের সঙ্গে সেইখানে বসবাস করেন যাতে তাঁদের পদরজে নিমিবংশ পবিত্র হয়ে যায় । সকলের জীবনদাতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাজা বহুলাশ্বের প্রার্থনা স্বীকার করে মিথিলাবাসী জনগণের কল্যাণে সেইখানে কিছুদিন অবস্থান করলেন ।
যেমন রাজা বহুলাশ্ব ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও মুনিমণ্ডলকে পদার্পণ করতে দেখে আনন্দমগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন তেমনই ব্রাহ্মণ শ্রুতিদেব , ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং মুনিদের গৃহে পদার্পণ করতে দেখে আনন্দ বিহ্বল হয়ে গেলেন । তিনি প্রণাম নিবেদন করে নৃত্য করতে লাগলেন । অতঃপর শ্রুতিদেব মাদুর , পিঁড়ি , কুশাসন পেতে তার উপর অতিথিদের উপবেশন করালেন , স্বাগত ভাষণ আদি দ্বারা তাঁদের অভিনন্দিত করলেন ও নিজ ভার্যা সহিত অতি আনন্দে সকলের পাদপ্রক্ষালন করলেন ।মহান সৌভাগ্যবান শ্রুতিদেব ভগবান ও ঋষিদের পাদোদকে নিজ গৃহকে ও আত্মীয়স্বজনকে সিঞ্চিত করে দিলেন । তাঁর সকল মনোরথ পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল । তিনি আনন্দে মত্ত হয়ে পড়েছিলেন । তদনন্তর তিনি ফল , গন্ধ , সুবাসিত জল , সুগন্ধি মৃত্তিকা , তুলসী , কুশ , কমল আদি অনায়াসলব্ধ পূজাসাগ্রমী এবং সত্ত্বগুণ বৃদ্ধিকারী অন্নদ্বারা তাঁদের আরাধনা করলেন ।
শ্রুতিদেব নিজেকে গৃহস্থাশ্রমের অন্ধকার কূপে পতিত মনে করতেন ;তিনি সমস্ত তীর্থকে তীর্থের মর্যাদা প্রদানকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর নিবাসস্থান ঋষিমুনিদের পদরজ লাভকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না । যখন সকলে আতিথ্য স্বীকার করে বিশ্রাম করতে লাগলেন তখন শ্রুতিদেব নিজ স্ত্রী - পুত্র ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তাঁদের সেবার নিমিত্ত উপস্থিত হলেন । তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ধারণ করে স্তুতি করতে লাগলেন । তিনি ভগবানকে কী সেবা করবেন তাই জিজ্ঞাসা করলেন ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন - ' হে শ্রুতিদেব ! এই সকল মহান মুনিঋষিগণ তোমার উপর অনুগ্রহ করবার জন্যই এইখানে এসেছেন । এঁরা পদরজ দান করে জনগণের ও লোকসমূহের কল্যাণের জন্যই বিচরণ করছেন , সকলকে পবিত্র করছেন । দেবতা , পুণ্যক্ষেত্র এবং তীর্থ আদি তো দর্শন , স্পর্শ , অর্চন আদি দ্বারা ধীরে ধীরে বহুদিন ধরে পবিত্র করে থাকে কিন্তু এই সকল মহাপুরুষগণ নিজ দৃষ্টিদান করেই সকলকে পবিত্র করে থাকেন । দেবতাদিতে যে পবিত্র করবার শক্তি বিদ্যমান থাকে তাও এইসকল মহাপুরুষের কৃপা- দৃষ্টিদানে লাভ হয়ে থাকে । জগতে ব্রাহ্মণ যদি তপস্যা , বিদ্যা , সন্তোষ , আমার উপাসনা এবং আমার ভক্তিতে যুক্ত থাকে তাহলে তা অতি উৎকৃষ্ট ।
আমার এই চতুর্ভুজরূপও ব্রাহ্মণদের থেকে বেশি প্রিয় নয় কারণ ব্রাহ্মণ সর্ববেদময় আর আমি সর্বদেবময় । বুদ্ধিরহিত মানব এই কথা না জেনে কেবল বিগ্রাদিতেই পূজ্য বুদ্ধি রাখে এবং গুণের মধ্যেও দোষদর্শন করে আমারই আত্মস্বরূপ জগদ্গুরু ব্রাহ্মণের তিরস্কার করে । অতএব হে শ্রুতিদেব ! তুমি এই সকল ব্রহ্মর্ষিদের আমারই স্বরূপ জ্ঞানে পূর্ণ শ্রদ্ধা সহকারের পূজার্চনা করো । আমার পূজা তাতেই হয়ে যাবে । 'ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আদেশ লাভ করে শ্রুতিদেব শ্রীকৃষ্ণ ও সেই সকল ব্রহ্মর্ষিদের একাত্মভাবে আরাধনা করলেন ও তাঁদের কৃপায় তিনি ভগবদ্ স্বরূপ লাভ করলেন । রাজা বহুলাশ্বও সেই একই গতি লাভ করলেন । আশ্চর্য হতে হয় এই দেখে যে , যেমন ভক্ত ভগবানকে ভক্তি করে তেমনই ভগবানও ভক্তদের ভক্তি করেন । ভক্তযুগলকে প্রসন্ন করবার জন্য শ্রীভগবান দুই ভক্তের নিকটই এককালে কিছুদিন অবস্থান করে এক বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন ।
জয় ভক্তের জয় ।
জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয় ।
জয় শ্রীরাধাগোবিন্দের জয় ।
হরিবোল হরিবোল হরিবোল ।
একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হয়ে দারুককে রথ আনতে বললেন আর তাতে আরোহন করে দ্বারকা থেকে বিদেহ দেশের দিকে প্রস্থান করলেন । শ্রীভগবানের সঙ্গে নারদ , বামদেব , অত্রি , বেদব্যাস , পরশুরাম , অসিত , শুকদেব , বৃহস্পতি , কণ্ব , মৈত্রেয় , চ্যবন আদি ঋষিগণও গিয়েছিলেন । পথে তাঁদের পূজার্চনা নিমিত্ত নাগরিকবৃন্দ ও গ্রামবাসীগণ মাঙ্গলিক দ্রব্যাদি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ।শ্রীভগবান এই সমরয় আনর্ত , ধন্ব , কুরুজাঙ্গল , কঙ্ক , মৎস্য , পাঞ্চাল , কুন্তি , মধু , কেকয় , কৌশল , অর্ণ আদি বহু দেশের নর - নারীদের সাক্ষাৎ দর্শন দিয়ে ধন্য করেছিলেন । পথে ভক্তগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সরল উন্মুক্ত হাস্য ও প্রেমে পূর্ণ কৃপাকটাক্ষযুক্ত বদনমণ্ডলের মকরন্দসুধা পান করে ধন্য হয়েছিলেন । তিনি দৃষ্টিদ্বারা পরম কল্যাণ ও তত্ত্বজ্ঞানও বিতরণ করেছিলেন । অবশেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিদেহ দেশে উপস্থিত হলেন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভাগমন বার্তা নাগরিকবৃন্দ ও গ্রামবাসীদের পরম আনন্দে পরিপূর্ণ করেছিল । তাঁরা মাঙ্গলিক দ্রব্যাদি সহিত অভ্যর্থনা করবার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করে তাঁদের চিত্ত ও বদনমণ্ডল প্রেমন ও আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল । তাঁরা সেই মুনিদের ও তার সঙ্গে শ্রীভগবানকে দেখে যুক্তকরে অবনত মস্তকে প্রণাম করেছিলেন । তাঁদের দর্শন করবার পরম সৌভাগ্য লাভ করে তাঁরা ধন্য হয়ে গিয়েছিলেন ।মিথিলা অধিপতি বহুলাশ্ব ও শ্রুতিদেব দুইজনই ভাবলেন যে শ্রীভগবান তাঁদেরই উপর অনুগ্রহ করে পদার্পণ করেছেন । তাঁরা দুই জনই শ্রীভগবানের পাদপদ্মে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে সকলের সঙ্গে আতিথ্য গ্রহণ করবার আবেদন জানালেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুইজনেরই প্রার্থনা স্বীকার করে উভয়কে প্রসন্ন করবার নিমিত্ত একই সময়ে দুইজনের কাছেই গমন করলেন । দুইজনই ভাবলেন যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল আমার গৃহেই পদার্পণ করেছেন অন্য কোথাও যাননি ।
বিদেহরাজ বহুলাশ্ব স্থিতধী ব্যক্তি ছিলেন । পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ও ঋষিমুনিগণ তাঁর গৃহে এসেছেন তা তাঁর কাছে পরম গৌরবের ছিল । তিনি অতিথিসকলকে অতি সুন্দর আসনে উপবেশন করালেন । তখন তাঁর বিচিত্র দশা । প্রেমাতিশয্যে ও ভক্তি প্রাবল্যে তিনি গদগদ হয়ে ছিলেন ; নয়নযুগল প্রেমাশ্রু ক্ষরণ করতে তৎপর ছিল । তিনি পূজ্যতম অতিথিদের পাদপদ্মে প্রণাম নিবেদন করে পাদপ্রক্ষালন করলেন ও সেই পাদোদক নিজ আত্মীয়স্বজন সমেত মস্তকে ধারণ করলেন ।অতঃপর তিনি শ্রীভগবানের ও ভগবদ্ভক্তস্বরূপ ঋষিদের গন্ধ মাল্য , বস্ত্র , অলংকার , ধূপ , দীপ , অর্ঘ্য , ধেনু , বৃষ আদি সমর্পণ করে পূজার্চনা করলেন ।
যখন সকলে আহার্য ধারণ করে তৃপ্ত হয়ে গেলেন তখন তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণযুগল নিজ অঙ্কে ধারণ করে তা সেবা করতে করতে স্তুতি করতে লাগলেন । ভক্ত যে শ্রীভগবানের নিজ স্বরূপ শ্রীবলরাম , অর্ধাঙ্গিনী লক্ষ্মী ও পুত্র ব্রহ্মা থেকে বেশি প্রিয় তাই প্রমাণ করবার জন্য শ্রীভগবান তাঁর মতন সাধারণ ভক্তকে দর্শন দিয়েছেন , এই কথা বহুলাশ্ব স্বীকার করে নিলেন ।তিনি প্রার্থনা করলেন যেন শ্রীভগবান মুনিঋষিদের সঙ্গে সেইখানে বসবাস করেন যাতে তাঁদের পদরজে নিমিবংশ পবিত্র হয়ে যায় । সকলের জীবনদাতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাজা বহুলাশ্বের প্রার্থনা স্বীকার করে মিথিলাবাসী জনগণের কল্যাণে সেইখানে কিছুদিন অবস্থান করলেন ।
যেমন রাজা বহুলাশ্ব ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও মুনিমণ্ডলকে পদার্পণ করতে দেখে আনন্দমগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন তেমনই ব্রাহ্মণ শ্রুতিদেব , ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং মুনিদের গৃহে পদার্পণ করতে দেখে আনন্দ বিহ্বল হয়ে গেলেন । তিনি প্রণাম নিবেদন করে নৃত্য করতে লাগলেন । অতঃপর শ্রুতিদেব মাদুর , পিঁড়ি , কুশাসন পেতে তার উপর অতিথিদের উপবেশন করালেন , স্বাগত ভাষণ আদি দ্বারা তাঁদের অভিনন্দিত করলেন ও নিজ ভার্যা সহিত অতি আনন্দে সকলের পাদপ্রক্ষালন করলেন ।মহান সৌভাগ্যবান শ্রুতিদেব ভগবান ও ঋষিদের পাদোদকে নিজ গৃহকে ও আত্মীয়স্বজনকে সিঞ্চিত করে দিলেন । তাঁর সকল মনোরথ পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল । তিনি আনন্দে মত্ত হয়ে পড়েছিলেন । তদনন্তর তিনি ফল , গন্ধ , সুবাসিত জল , সুগন্ধি মৃত্তিকা , তুলসী , কুশ , কমল আদি অনায়াসলব্ধ পূজাসাগ্রমী এবং সত্ত্বগুণ বৃদ্ধিকারী অন্নদ্বারা তাঁদের আরাধনা করলেন ।
শ্রুতিদেব নিজেকে গৃহস্থাশ্রমের অন্ধকার কূপে পতিত মনে করতেন ;তিনি সমস্ত তীর্থকে তীর্থের মর্যাদা প্রদানকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর নিবাসস্থান ঋষিমুনিদের পদরজ লাভকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না । যখন সকলে আতিথ্য স্বীকার করে বিশ্রাম করতে লাগলেন তখন শ্রুতিদেব নিজ স্ত্রী - পুত্র ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তাঁদের সেবার নিমিত্ত উপস্থিত হলেন । তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ধারণ করে স্তুতি করতে লাগলেন । তিনি ভগবানকে কী সেবা করবেন তাই জিজ্ঞাসা করলেন ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন - ' হে শ্রুতিদেব ! এই সকল মহান মুনিঋষিগণ তোমার উপর অনুগ্রহ করবার জন্যই এইখানে এসেছেন । এঁরা পদরজ দান করে জনগণের ও লোকসমূহের কল্যাণের জন্যই বিচরণ করছেন , সকলকে পবিত্র করছেন । দেবতা , পুণ্যক্ষেত্র এবং তীর্থ আদি তো দর্শন , স্পর্শ , অর্চন আদি দ্বারা ধীরে ধীরে বহুদিন ধরে পবিত্র করে থাকে কিন্তু এই সকল মহাপুরুষগণ নিজ দৃষ্টিদান করেই সকলকে পবিত্র করে থাকেন । দেবতাদিতে যে পবিত্র করবার শক্তি বিদ্যমান থাকে তাও এইসকল মহাপুরুষের কৃপা- দৃষ্টিদানে লাভ হয়ে থাকে । জগতে ব্রাহ্মণ যদি তপস্যা , বিদ্যা , সন্তোষ , আমার উপাসনা এবং আমার ভক্তিতে যুক্ত থাকে তাহলে তা অতি উৎকৃষ্ট ।
আমার এই চতুর্ভুজরূপও ব্রাহ্মণদের থেকে বেশি প্রিয় নয় কারণ ব্রাহ্মণ সর্ববেদময় আর আমি সর্বদেবময় । বুদ্ধিরহিত মানব এই কথা না জেনে কেবল বিগ্রাদিতেই পূজ্য বুদ্ধি রাখে এবং গুণের মধ্যেও দোষদর্শন করে আমারই আত্মস্বরূপ জগদ্গুরু ব্রাহ্মণের তিরস্কার করে । অতএব হে শ্রুতিদেব ! তুমি এই সকল ব্রহ্মর্ষিদের আমারই স্বরূপ জ্ঞানে পূর্ণ শ্রদ্ধা সহকারের পূজার্চনা করো । আমার পূজা তাতেই হয়ে যাবে । 'ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আদেশ লাভ করে শ্রুতিদেব শ্রীকৃষ্ণ ও সেই সকল ব্রহ্মর্ষিদের একাত্মভাবে আরাধনা করলেন ও তাঁদের কৃপায় তিনি ভগবদ্ স্বরূপ লাভ করলেন । রাজা বহুলাশ্বও সেই একই গতি লাভ করলেন । আশ্চর্য হতে হয় এই দেখে যে , যেমন ভক্ত ভগবানকে ভক্তি করে তেমনই ভগবানও ভক্তদের ভক্তি করেন । ভক্তযুগলকে প্রসন্ন করবার জন্য শ্রীভগবান দুই ভক্তের নিকটই এককালে কিছুদিন অবস্থান করে এক বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন ।
জয় ভক্তের জয় ।
জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয় ।
জয় শ্রীরাধাগোবিন্দের জয় ।
হরিবোল হরিবোল হরিবোল ।
Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন