মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী বলা হয়ে থাকে , সে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবে , আর ভেবে দেখলে মনে হয় যে ভগবান মানুষের রচনায় বৈশিষ্ট্যও রেখেছেন । কিন্তু মানুষকে প্রকৃতভাবে তখনই শ্রেষ্ঠ বলা যায় যখন সে জীবনের প্রধান লক্ষ্যে স্থির থেকে নিজ কর্তব্য পালন করে । কিন্তু যখন আমরা বর্তমান জগতের দিকে তাকিয়ে দেখি তখন দেখি যে , লক্ষ্য স্থির রেখে কর্তব্যে অবিচল থাকা তো দূরের কথা , লক্ষ্য ও কর্তব্য যে কী তাই সাধারণত লোকেরা জানে না , আর জানতে আগ্রহীও নয় ।
বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত যে নিজ জ্ঞানে শাস্ত্রের কথা বুঝতে সক্ষম না হলে কোনো জীবন্মুক্ত মহাপুরুষের কাছে যাওয়া , তেমন কাউকে না পেলে ধর্মের জ্ঞাতা ধর্মাচরণকারী ব্যক্তির কাছে থেকে আর তাও যদি না পাওয়া যায় তবে নিজ বুদ্ধিতে যাঁকে ধর্মজ্ঞানী মনে হয় তাঁকে জিজ্ঞাসা করে নিজ কর্তব্য জেনে নেওয়া । তাও যদি সম্ভব না হলে অন্ততপক্ষে নিজ অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত । একজন ব্যক্তি বলেন ' সত্যই ধর্ম ' অন্যজন বলেন , ' ধর্ম - কর্ম বলে কিছু নেই ' এমন অবস্থায় নিজ অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ।
বুদ্ধিকে বলা উচিত যে সে যেন নিরপেক্ষভাবে তার মতামত জানায় । এভাবে অন্তরাত্মা বা বুদ্ধি থেকে এই সাড়া পাওয়া যাবে যে - সত্য কথা বলাই সঠিক , কারণ সত্য সকলের পক্ষেই শুভ । এই ভাবেই ব্রহ্মচর্য , অহিংসাদি অন্যান্য প্রসঙ্গেও ভেবে দেখা উচিত এবং অন্তরাত্মা বা বুদ্ধির সিদ্ধান্ত জানার পর সেই ভাবে কার্য সম্পাদনে তৎপর হয়ে যাওয়া উচিত । এভাবে নির্দেশ লাভ করেও যে যথাযথভাবে তা পালন করে না সে তো নিজের পতনের কারণ নিজেই হয় । ভালো কথা বুঝেও তা পালন না করা এবং মন্দ ভেবেও তা ত্যাগ না করা হলে তার তো অবশ্যই পতন হওয়া উচিত ।
শ্রীভগবান বলেন -
উদ্ধরেৎ - আত্মনা - আত্মানম্ ন - আত্মানম্ - অবসাদয়েৎ ।
আত্মা এব হি আত্মন্ বন্ধুঃ আত্মা এব রিপুঃ আত্মনঃ ।। ৬\ ৫
' নিজের দ্বারাই নিজেকে সংসার বন্ধন থেকে উদ্ধার করবে এবং নিজেকে কখনো অধোগতির পথে যেতে দেবে না , কারণা মানুষ ( আত্মা) নিজেই নিজের বন্ধু আবার নিজেই নিজের শত্রু ।
আমাদের যে রাগ ( আসক্তি ) - দ্বেষ , শোক - ভয় প্রভৃতি অনুভূতি হয় , তা কেন হয় ?
সকলে ভাবে যে প্রারব্ধবশত ( ভাগ্য) হয় কিন্তু তা ঠিক নয় । তা অজ্ঞানবশত হয়ে থাকে । শোক - ভয়ের জন্য রাগ - দ্বেষ হয় আর রাগ - দ্বেষই হল প্রধান ক্লেশ । অবিদ্যা অথবা অজ্ঞানই হল এর কারণ । অবিদ্যার নাশ হলে এই সবের আপনাআপনি বিনাশ হয়ে যায় ।
ধনসম্পদ লাভ করা অথবা নষ্ট হওয়া , অসুস্থ অথবা সুস্থ হওয়া আর জন্ম - মৃত্যু আদি সকলের মূলে তো প্রারব্ধ ( ভাগ্য ) কিন্তু চিন্তা ,ভয় , শোক , মোহ আদিতে অজ্ঞানই প্রধান কারণ । অজ্ঞান নাশ হলে শোক - মোহ থাকে না ।
শ্রুতি বলেন -
তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ । ( ঈশ ৭ )
হর্ষশোকৌ জহাতি । ( কঠ ১\ ২\ ১২ )
শোকাদিতে যদি প্রারব্ধ কারণ হত তাহলে ভগবান অর্জুনকে কেমন করে বলতেন -
অশোচ্যান্ অন্বশোচঃ ত্বম্ প্রজ্ঞাবাদান্ চ ভাষসে ।
গত অসূন্ অগত অসূন্ চ ন অনুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ ।
হে অর্জুন ! যাদের জন্য শোক করা উচিত নয় এমন মানুষদের জন্য তুমি শোক করছ আবার পণ্ডিতের মতন কথাও বলছ , কিন্তু পণ্ডিতগণ মৃত অথবা জীবিত কারো জন্যই শোক করেন না । '
জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞানের বিনাশ হয় । সাধনা করে আমাদের সেই জ্ঞান লাভ করা উচিত যাতে শোক - মোহ , চিন্তা -ভয় , চুুরি - ব্যভিচার , মিথ্যা - কপট এবং আলস্য - অকর্মণ্যতা আদি দোষসকলকে সতত নাশ করে । জ্ঞান হলে , অজ্ঞানের এই সকল কার্য ( পরিণাম ) থাকে না । ধরা যাক - খুব ভালো রান্না হয়েছে , মিষ্টান্ন অতিশয় সুস্বাদু , আমরা মন দিয়ে খেতে বসেছি । দুই গ্রাস মুখে তুলেছি , তখনই একজন চুপিচুপি এসে খবর দিল - ' মিষ্টান্নে বিষ আছে , খেও না । ' তখন তা শুনেই মুখের গ্রাস তখনই ফেলে দিই , থালা সরিয়ে দিই । আর গিলে ফেলা গ্রাসকে ভেতর থেকে বমি করে বের করার চেষ্টা করি । বিষের কথা শোনা মাত্রই যতই মধুর ও সুস্বাদু বস্তু হোক না কেন আমরা তা খেতে পারি না । জগতের সুখ - ভোগ সম্বন্ধেও ঠিক একই কথা বলা যায় । আমরা যদি শাস্ত্র , ভগবান বা সন্ত ব্যক্তির কথায় বিশ্বাস করি তাহলে এই ভোগের প্রতি কখনো মন টানবে না ।
ভগবান স্বয়ং বলেন --
যে হি সংস্পর্শজা ভোগা দুঃখযোনয় এব তে ।
আদ্যন্তবন্ত কৌন্তেয় ন তেষু রমতে বুধঃ ।। ( গীতা ৫\ ২২ )
' ইন্দ্রিয় ও বিষয়াদির সংযোগে উৎপন্ন যে ভোগ - যদিও বিষয়ী ব্যক্তিদের কাছে তা সুখরূপে বিবেচিত হয় কিন্তু আসলে তা দুঃখেরই হেতু । এর আদি অন্ত আছে অর্থাৎ এ অনিত্য । সেইজন্য হে কৌন্তেয় ! বুদ্ধিমান বিবেকশীল ব্যক্তি তাতে রমণ করেন না ।
এই কথা জেনেও যদি কেউ এতে মন দেয় তাহলে তো সে অতি মূর্খ ।
যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে , বিষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চোখে পড়ে না ?
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে । এমন বিষও হয়ে থাকে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অতি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধীরে ধীরে প্রভাবিত করার এক ভয়ানক সুমিষ্ট বিষ । তাই রাজসিক বিষয় সুখকে ভগবান পরিণামে বিষতুল্য বলেছেন ।
ভগবান গীতার ১৮\ ৩৮ শ্লোকে বলেছেন --
বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাৎ যৎ তৎ অগ্রে অমৃতোপমম্ ।
পরিণামে বিষম্ ইব তৎ সুখম্ রাজসম্ স্মৃতম্ ।
' যে সুখ বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগে হয় , যা ভোগকালের প্রারম্ভে অমৃতবৎ মনে হলেও পরিণামে তা বিষতুল্য - তাকে রাজসিক সুখ বলা হয় । '
বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত যে নিজ জ্ঞানে শাস্ত্রের কথা বুঝতে সক্ষম না হলে কোনো জীবন্মুক্ত মহাপুরুষের কাছে যাওয়া , তেমন কাউকে না পেলে ধর্মের জ্ঞাতা ধর্মাচরণকারী ব্যক্তির কাছে থেকে আর তাও যদি না পাওয়া যায় তবে নিজ বুদ্ধিতে যাঁকে ধর্মজ্ঞানী মনে হয় তাঁকে জিজ্ঞাসা করে নিজ কর্তব্য জেনে নেওয়া । তাও যদি সম্ভব না হলে অন্ততপক্ষে নিজ অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত । একজন ব্যক্তি বলেন ' সত্যই ধর্ম ' অন্যজন বলেন , ' ধর্ম - কর্ম বলে কিছু নেই ' এমন অবস্থায় নিজ অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ।
বুদ্ধিকে বলা উচিত যে সে যেন নিরপেক্ষভাবে তার মতামত জানায় । এভাবে অন্তরাত্মা বা বুদ্ধি থেকে এই সাড়া পাওয়া যাবে যে - সত্য কথা বলাই সঠিক , কারণ সত্য সকলের পক্ষেই শুভ । এই ভাবেই ব্রহ্মচর্য , অহিংসাদি অন্যান্য প্রসঙ্গেও ভেবে দেখা উচিত এবং অন্তরাত্মা বা বুদ্ধির সিদ্ধান্ত জানার পর সেই ভাবে কার্য সম্পাদনে তৎপর হয়ে যাওয়া উচিত । এভাবে নির্দেশ লাভ করেও যে যথাযথভাবে তা পালন করে না সে তো নিজের পতনের কারণ নিজেই হয় । ভালো কথা বুঝেও তা পালন না করা এবং মন্দ ভেবেও তা ত্যাগ না করা হলে তার তো অবশ্যই পতন হওয়া উচিত ।
শ্রীভগবান বলেন -
উদ্ধরেৎ - আত্মনা - আত্মানম্ ন - আত্মানম্ - অবসাদয়েৎ ।
আত্মা এব হি আত্মন্ বন্ধুঃ আত্মা এব রিপুঃ আত্মনঃ ।। ৬\ ৫
' নিজের দ্বারাই নিজেকে সংসার বন্ধন থেকে উদ্ধার করবে এবং নিজেকে কখনো অধোগতির পথে যেতে দেবে না , কারণা মানুষ ( আত্মা) নিজেই নিজের বন্ধু আবার নিজেই নিজের শত্রু ।
আমাদের যে রাগ ( আসক্তি ) - দ্বেষ , শোক - ভয় প্রভৃতি অনুভূতি হয় , তা কেন হয় ?
সকলে ভাবে যে প্রারব্ধবশত ( ভাগ্য) হয় কিন্তু তা ঠিক নয় । তা অজ্ঞানবশত হয়ে থাকে । শোক - ভয়ের জন্য রাগ - দ্বেষ হয় আর রাগ - দ্বেষই হল প্রধান ক্লেশ । অবিদ্যা অথবা অজ্ঞানই হল এর কারণ । অবিদ্যার নাশ হলে এই সবের আপনাআপনি বিনাশ হয়ে যায় ।
ধনসম্পদ লাভ করা অথবা নষ্ট হওয়া , অসুস্থ অথবা সুস্থ হওয়া আর জন্ম - মৃত্যু আদি সকলের মূলে তো প্রারব্ধ ( ভাগ্য ) কিন্তু চিন্তা ,ভয় , শোক , মোহ আদিতে অজ্ঞানই প্রধান কারণ । অজ্ঞান নাশ হলে শোক - মোহ থাকে না ।
শ্রুতি বলেন -
তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ । ( ঈশ ৭ )
হর্ষশোকৌ জহাতি । ( কঠ ১\ ২\ ১২ )
শোকাদিতে যদি প্রারব্ধ কারণ হত তাহলে ভগবান অর্জুনকে কেমন করে বলতেন -
অশোচ্যান্ অন্বশোচঃ ত্বম্ প্রজ্ঞাবাদান্ চ ভাষসে ।
গত অসূন্ অগত অসূন্ চ ন অনুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ ।
হে অর্জুন ! যাদের জন্য শোক করা উচিত নয় এমন মানুষদের জন্য তুমি শোক করছ আবার পণ্ডিতের মতন কথাও বলছ , কিন্তু পণ্ডিতগণ মৃত অথবা জীবিত কারো জন্যই শোক করেন না । '
জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞানের বিনাশ হয় । সাধনা করে আমাদের সেই জ্ঞান লাভ করা উচিত যাতে শোক - মোহ , চিন্তা -ভয় , চুুরি - ব্যভিচার , মিথ্যা - কপট এবং আলস্য - অকর্মণ্যতা আদি দোষসকলকে সতত নাশ করে । জ্ঞান হলে , অজ্ঞানের এই সকল কার্য ( পরিণাম ) থাকে না । ধরা যাক - খুব ভালো রান্না হয়েছে , মিষ্টান্ন অতিশয় সুস্বাদু , আমরা মন দিয়ে খেতে বসেছি । দুই গ্রাস মুখে তুলেছি , তখনই একজন চুপিচুপি এসে খবর দিল - ' মিষ্টান্নে বিষ আছে , খেও না । ' তখন তা শুনেই মুখের গ্রাস তখনই ফেলে দিই , থালা সরিয়ে দিই । আর গিলে ফেলা গ্রাসকে ভেতর থেকে বমি করে বের করার চেষ্টা করি । বিষের কথা শোনা মাত্রই যতই মধুর ও সুস্বাদু বস্তু হোক না কেন আমরা তা খেতে পারি না । জগতের সুখ - ভোগ সম্বন্ধেও ঠিক একই কথা বলা যায় । আমরা যদি শাস্ত্র , ভগবান বা সন্ত ব্যক্তির কথায় বিশ্বাস করি তাহলে এই ভোগের প্রতি কখনো মন টানবে না ।
ভগবান স্বয়ং বলেন --
যে হি সংস্পর্শজা ভোগা দুঃখযোনয় এব তে ।
আদ্যন্তবন্ত কৌন্তেয় ন তেষু রমতে বুধঃ ।। ( গীতা ৫\ ২২ )
' ইন্দ্রিয় ও বিষয়াদির সংযোগে উৎপন্ন যে ভোগ - যদিও বিষয়ী ব্যক্তিদের কাছে তা সুখরূপে বিবেচিত হয় কিন্তু আসলে তা দুঃখেরই হেতু । এর আদি অন্ত আছে অর্থাৎ এ অনিত্য । সেইজন্য হে কৌন্তেয় ! বুদ্ধিমান বিবেকশীল ব্যক্তি তাতে রমণ করেন না ।
এই কথা জেনেও যদি কেউ এতে মন দেয় তাহলে তো সে অতি মূর্খ ।
যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে , বিষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চোখে পড়ে না ?
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে । এমন বিষও হয়ে থাকে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অতি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধীরে ধীরে প্রভাবিত করার এক ভয়ানক সুমিষ্ট বিষ । তাই রাজসিক বিষয় সুখকে ভগবান পরিণামে বিষতুল্য বলেছেন ।
ভগবান গীতার ১৮\ ৩৮ শ্লোকে বলেছেন --
বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাৎ যৎ তৎ অগ্রে অমৃতোপমম্ ।
পরিণামে বিষম্ ইব তৎ সুখম্ রাজসম্ স্মৃতম্ ।
' যে সুখ বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগে হয় , যা ভোগকালের প্রারম্ভে অমৃতবৎ মনে হলেও পরিণামে তা বিষতুল্য - তাকে রাজসিক সুখ বলা হয় । '
Writer : Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন