দানবীরদের মধ্যে অগ্রগণ্য রাজা নৃগ মহারাজ ইক্ষ্বাকুর পুত্র ছিলেন । বলা হয়ে থাকে যে রাজা নৃগ কর্তৃক দান করা ধেনুর সংখ্যা পৃথিবীর ধূলিকণা ,আকাশের নক্ষত্র ও বর্ষার ধারার সমতুল্য ছিল । সৎ উপায়ে অর্জিত ধনসম্পত্তি দ্বারা তিনি তাঁর রাজত্বকালে এই দান করেছিলেন । দান করা ধেনুসকল দুগ্ধবতী , তরুণ , সহস স্বভাব , সুন্দরদর্শন , সুলক্ষণা ও কপিলা সবৎসা হত ।
ধেনু সকলকে দানের পূর্বে সুবর্ণমণ্ডিত শৃঙ্গ ও রৌপ্যমণ্ডিত খুরযুক্ত করে বস্ত্রালংকার ও মাল্য বিভূষিতা করা হত । কেবল সেই সকল ব্রাহ্মণসন্তান দান গ্রহণের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতেন যাঁরা যুবাবস্থায়ই প্রতিষ্ঠিত , সদ্গুণসম্পন্ন , ক্লেশযুক্ত পরিজন সহায়ক , দম্ভরহিত তপস্বী , বেদ পাঠে নিত্যযুক্ত , শিষ্যদের নিত্য বিদ্যাদানে সচেষ্ট ও সচ্চরিত্র ।
দানের পূর্বে ব্রাহ্মণদেরও বস্ত্রাভূষণে অলংকৃত করা হত । তিনি ধেনু ছাড়া ভূমি , সুবর্ণ , বাসগৃহ , অশ্ব , হস্তী , দাসীসহিত কন্যা , পর্বতসম তিল , রৌপ্য , শয্যা , বস্ত্র , রত্ন , গৃহসামগ্রী , রথ আদিও প্রভূত দান করেছিলেন আর জনগণের কল্যাণে বহু যজ্ঞ সম্পাদন করেছিলেন ও কূপ পুষ্কারাদিও খন করিয়ে দিয়েছিলেন ।
এমন দানবীরের জীবনেও কিঞ্চিত অসতর্কতা হেতু দান করা দ্রব্যের জন্য বিষম ধর্মসংকট নেমে এসেছিল । কোনো এক অপ্রতিগ্রাহী তপস্বী ব্রাহ্মণের ধেনু দলছুট হয়ে নৃহরাজার ধেনুসকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল । ঘটনা তাঁর অজ্ঞাতে ঘটেছিল । সেই ধেনু উত্তমরূপে সজ্জিতা হয়ে নৃগ রাজা কর্তৃক এক অন্য ব্রাহ্মণকে দান করা হয়ে যায় ।
এমন দানবীরের জীবনেও কিঞ্চিত অসতর্কতা হেতু দান করা দ্রব্যের জন্য বিষম ধর্মসংকট নেমে এসেছিল । কোনো এক অপ্রতিগ্রাহী তপস্বী ব্রাহ্মণের ধেনু দলছুট হয়ে নৃহরাজার ধেনুসকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল । ঘটনা তাঁর অজ্ঞাতে ঘটেছিল । সেই ধেনু উত্তমরূপে সজ্জিতা হয়ে নৃগ রাজা কর্তৃক এক অন্য ব্রাহ্মণকে দান করা হয়ে যায় ।
দানগ্রহণ করে প্রসন্ন চিত্তে যখন ব্রাহ্মণ ধেনুসহ পথে যাচ্ছিলেন তখন ধেনুর প্রকৃত প্রভু ধেনুকে চিহ্নিত করে তা তাঁর ধেনু বলে দাবী করেন । ঘটনা দানগ্রাহী ব্রাহ্মণকে সমস্যায় ফেলে । তিনি যেহেতু সেই ধেনু রাজা নৃগ কর্তৃক দানরূপে লাভ করেছিলেন , তাই ধেনু তাঁর নিজের বলে বলেন । প্রসঙ্গ ক্রমশ জটিল হয়ে যায় যখন দুইজনেই সেই ধেনুর দাবি ছাড়তে অস্বীকার করেন ।
কলহে লিপ্ত হয়ে ব্রাহ্মণদ্বয় ধেনুসহ রাজা নৃগের কাছে বিচারের জন্য উপস্থিত হন । প্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ বললেন - ' রাজা নৃগ আমাকে ধেনু দান করেছেন তাই ধেনুর অধিকার আমার । ' প্রকৃত স্বামী বললেন - ' তাই যদি হয় তা হলে রাজা নৃগ আমার ধেনু অপহরণ করেছেন । ' তাঁদের বক্তব্য রাজা নৃগকে বিপদে ফেলল । তিনি ধর্মসংকটের মুখে দাঁড়িয়ে দুইজনের কাছেই দাবি ত্যাগ করবার জন্য অনুনয় - বিনয় করলেন ।
তিনি এও বললেন যে যিনি দাবি ত্যাগ করবেন তাঁকে এক লক্ষ ধেনু দান করবেন । তিনি আরও বললেন যে অজান্তে কৃত অপরাধের জন্য তাঁকে কৃপা করুন আর অশুচি নরকে পতিত হতে যাতে না হয় তাই করুন । প্রকৃত প্রভু অপ্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ ছিলেন । তিনি বলে গেলেন যে এর বদলে অন্য কিছু নেওয়া সম্ভব নয় । এই বলে তিনি স্থান ত্যাগ করলেন । প্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ বললেন যে এই ধেনুর পরিবর্তে এক লক্ষ উৎকৃষ্ট ধেনু কেন আরও দশ সহস্র গাভীও চাই না । তিনিও এই বলে স্থান ত্যাগ করলেন ।
কালের নিয়মে যথাকালে রাজা নৃগের আয়ুঃশেষ হল আর যমদূতগণ তাঁকে যমালয়ে নিয়ে গেল । যমরাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন - ' কী আগে ভোগ করতে চান ? শুভকর্মফল না অশুভ কর্মফল ? আপনার দানকর্মের উপার্জ্জিত দীপ্তিমান লোকের অন্ত দেখা যাচ্ছে না । ' রাজা নৃগ বললেন - ' হে যমরাজ ! আমি আগে অশুভ কর্মফল ভোগ করতে চাই । ' যমরাজ ' তাই হোক ' বলবার সঙ্গে সঙ্গে রাজা নৃগ এক গিরগিটিরূপে এক কূপে পতিত হলেন ।
রাজা নৃগকে কূপমধ্যে গিরগিটিরূপে যদুবংশীয় রাজকুমারগণ প্রথমে দেখেন । রাজকুমার শাম্ব , প্রদ্যুম্ন আদি সকল চিত্তবিনোদন নিমিত্ত উপবনে গমন করেছিলেন আর তৃষ্ণার্ত হয়ে কূপ সন্নিকটে এসেছিলেন । সেই প্রাণীকে উদ্ধার করতে অসমর্থ হয়ে তাঁর পিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এই সংবাদ দেন ও রাজা নৃগ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা উদ্ধারপ্রাপ্ত হন ।
অতঃপর সেই গিরগিটি শ্রীভগবানের স্পর্শ লাভ করে তপ্তকাঞ্চনবর্ণ এক স্বর্গীয় দেবমূর্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যান । তাঁর অঙ্গে অদ্ভূত বস্ত্রালংকার ও পুষ্পমাল্য শোভায়মান ছিল । সর্বজ্ঞ শ্রীভগবান সবই জানতেন তবুও সর্বসাধারণের কল্যাণে তাঁর কাছ থেকেই পূর্ণ বিবরণ পেলেন । রাজা নৃগের পাপকর্মফল ভোগ হয়ে গিয়েছিল । তিনি সচ্চিদাননন্দ সর্বান্তর্যামী বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে স্তবস্তুতি করে প্রণাম নিবেদন করলেন ও উত্তম বিমানে আরোহণ করে চলে গেলেন ।
নৃগরাজ উপাখ্যান দানীকে আরও সর্তক হতে বলে । ব্রাহ্মণদের দান করবার সময়ে আরও সাবধান হওয়া প্রয়োজন কারণ ব্রাহ্মণের ধন হলাহল থেকেও মারাত্মক । হলাহল বিষের চিকিৎসা হওয়া সম্ভব কিন্তু ব্রাহ্মণের ধন অপহরণের কোনো চিকিৎসা হয় না । অগ্নি নির্বাপণ জলদ্বারা সম্ভব হয় কিন্তু ব্রাহ্মণের ধনরূপ অরণি থেকে যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয় তা সমস্ত কুলকে সমূলে উৎপাটিত করে । এই পরম সত্য শ্রীভগবান স্বয়ং সমর্থন করেন ।
জয় শ্রীরাধাগোবিন্দের জয় ।
জয় হোক সকলের ।
ধেনু সকলকে দানের পূর্বে সুবর্ণমণ্ডিত শৃঙ্গ ও রৌপ্যমণ্ডিত খুরযুক্ত করে বস্ত্রালংকার ও মাল্য বিভূষিতা করা হত । কেবল সেই সকল ব্রাহ্মণসন্তান দান গ্রহণের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতেন যাঁরা যুবাবস্থায়ই প্রতিষ্ঠিত , সদ্গুণসম্পন্ন , ক্লেশযুক্ত পরিজন সহায়ক , দম্ভরহিত তপস্বী , বেদ পাঠে নিত্যযুক্ত , শিষ্যদের নিত্য বিদ্যাদানে সচেষ্ট ও সচ্চরিত্র ।
দানের পূর্বে ব্রাহ্মণদেরও বস্ত্রাভূষণে অলংকৃত করা হত । তিনি ধেনু ছাড়া ভূমি , সুবর্ণ , বাসগৃহ , অশ্ব , হস্তী , দাসীসহিত কন্যা , পর্বতসম তিল , রৌপ্য , শয্যা , বস্ত্র , রত্ন , গৃহসামগ্রী , রথ আদিও প্রভূত দান করেছিলেন আর জনগণের কল্যাণে বহু যজ্ঞ সম্পাদন করেছিলেন ও কূপ পুষ্কারাদিও খন করিয়ে দিয়েছিলেন ।
এমন দানবীরের জীবনেও কিঞ্চিত অসতর্কতা হেতু দান করা দ্রব্যের জন্য বিষম ধর্মসংকট নেমে এসেছিল । কোনো এক অপ্রতিগ্রাহী তপস্বী ব্রাহ্মণের ধেনু দলছুট হয়ে নৃহরাজার ধেনুসকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল । ঘটনা তাঁর অজ্ঞাতে ঘটেছিল । সেই ধেনু উত্তমরূপে সজ্জিতা হয়ে নৃগ রাজা কর্তৃক এক অন্য ব্রাহ্মণকে দান করা হয়ে যায় ।
এমন দানবীরের জীবনেও কিঞ্চিত অসতর্কতা হেতু দান করা দ্রব্যের জন্য বিষম ধর্মসংকট নেমে এসেছিল । কোনো এক অপ্রতিগ্রাহী তপস্বী ব্রাহ্মণের ধেনু দলছুট হয়ে নৃহরাজার ধেনুসকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল । ঘটনা তাঁর অজ্ঞাতে ঘটেছিল । সেই ধেনু উত্তমরূপে সজ্জিতা হয়ে নৃগ রাজা কর্তৃক এক অন্য ব্রাহ্মণকে দান করা হয়ে যায় ।
দানগ্রহণ করে প্রসন্ন চিত্তে যখন ব্রাহ্মণ ধেনুসহ পথে যাচ্ছিলেন তখন ধেনুর প্রকৃত প্রভু ধেনুকে চিহ্নিত করে তা তাঁর ধেনু বলে দাবী করেন । ঘটনা দানগ্রাহী ব্রাহ্মণকে সমস্যায় ফেলে । তিনি যেহেতু সেই ধেনু রাজা নৃগ কর্তৃক দানরূপে লাভ করেছিলেন , তাই ধেনু তাঁর নিজের বলে বলেন । প্রসঙ্গ ক্রমশ জটিল হয়ে যায় যখন দুইজনেই সেই ধেনুর দাবি ছাড়তে অস্বীকার করেন ।
কলহে লিপ্ত হয়ে ব্রাহ্মণদ্বয় ধেনুসহ রাজা নৃগের কাছে বিচারের জন্য উপস্থিত হন । প্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ বললেন - ' রাজা নৃগ আমাকে ধেনু দান করেছেন তাই ধেনুর অধিকার আমার । ' প্রকৃত স্বামী বললেন - ' তাই যদি হয় তা হলে রাজা নৃগ আমার ধেনু অপহরণ করেছেন । ' তাঁদের বক্তব্য রাজা নৃগকে বিপদে ফেলল । তিনি ধর্মসংকটের মুখে দাঁড়িয়ে দুইজনের কাছেই দাবি ত্যাগ করবার জন্য অনুনয় - বিনয় করলেন ।
তিনি এও বললেন যে যিনি দাবি ত্যাগ করবেন তাঁকে এক লক্ষ ধেনু দান করবেন । তিনি আরও বললেন যে অজান্তে কৃত অপরাধের জন্য তাঁকে কৃপা করুন আর অশুচি নরকে পতিত হতে যাতে না হয় তাই করুন । প্রকৃত প্রভু অপ্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ ছিলেন । তিনি বলে গেলেন যে এর বদলে অন্য কিছু নেওয়া সম্ভব নয় । এই বলে তিনি স্থান ত্যাগ করলেন । প্রতিগ্রাহী ব্রাহ্মণ বললেন যে এই ধেনুর পরিবর্তে এক লক্ষ উৎকৃষ্ট ধেনু কেন আরও দশ সহস্র গাভীও চাই না । তিনিও এই বলে স্থান ত্যাগ করলেন ।
কালের নিয়মে যথাকালে রাজা নৃগের আয়ুঃশেষ হল আর যমদূতগণ তাঁকে যমালয়ে নিয়ে গেল । যমরাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন - ' কী আগে ভোগ করতে চান ? শুভকর্মফল না অশুভ কর্মফল ? আপনার দানকর্মের উপার্জ্জিত দীপ্তিমান লোকের অন্ত দেখা যাচ্ছে না । ' রাজা নৃগ বললেন - ' হে যমরাজ ! আমি আগে অশুভ কর্মফল ভোগ করতে চাই । ' যমরাজ ' তাই হোক ' বলবার সঙ্গে সঙ্গে রাজা নৃগ এক গিরগিটিরূপে এক কূপে পতিত হলেন ।
রাজা নৃগকে কূপমধ্যে গিরগিটিরূপে যদুবংশীয় রাজকুমারগণ প্রথমে দেখেন । রাজকুমার শাম্ব , প্রদ্যুম্ন আদি সকল চিত্তবিনোদন নিমিত্ত উপবনে গমন করেছিলেন আর তৃষ্ণার্ত হয়ে কূপ সন্নিকটে এসেছিলেন । সেই প্রাণীকে উদ্ধার করতে অসমর্থ হয়ে তাঁর পিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এই সংবাদ দেন ও রাজা নৃগ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা উদ্ধারপ্রাপ্ত হন ।
অতঃপর সেই গিরগিটি শ্রীভগবানের স্পর্শ লাভ করে তপ্তকাঞ্চনবর্ণ এক স্বর্গীয় দেবমূর্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যান । তাঁর অঙ্গে অদ্ভূত বস্ত্রালংকার ও পুষ্পমাল্য শোভায়মান ছিল । সর্বজ্ঞ শ্রীভগবান সবই জানতেন তবুও সর্বসাধারণের কল্যাণে তাঁর কাছ থেকেই পূর্ণ বিবরণ পেলেন । রাজা নৃগের পাপকর্মফল ভোগ হয়ে গিয়েছিল । তিনি সচ্চিদাননন্দ সর্বান্তর্যামী বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে স্তবস্তুতি করে প্রণাম নিবেদন করলেন ও উত্তম বিমানে আরোহণ করে চলে গেলেন ।
নৃগরাজ উপাখ্যান দানীকে আরও সর্তক হতে বলে । ব্রাহ্মণদের দান করবার সময়ে আরও সাবধান হওয়া প্রয়োজন কারণ ব্রাহ্মণের ধন হলাহল থেকেও মারাত্মক । হলাহল বিষের চিকিৎসা হওয়া সম্ভব কিন্তু ব্রাহ্মণের ধন অপহরণের কোনো চিকিৎসা হয় না । অগ্নি নির্বাপণ জলদ্বারা সম্ভব হয় কিন্তু ব্রাহ্মণের ধনরূপ অরণি থেকে যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয় তা সমস্ত কুলকে সমূলে উৎপাটিত করে । এই পরম সত্য শ্রীভগবান স্বয়ং সমর্থন করেন ।
জয় শ্রীরাধাগোবিন্দের জয় ।
জয় হোক সকলের ।
Writer: Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন