জীবমাত্রেরই স্বভাব হচ্ছে যে সে কারো না কারো আশ্রয় গ্রহণ করতে চায় এবং আশ্রিত থাকে । মনুষ্য ,পশু , পক্ষী , বৃক্ষ , লতা ইত্যাদি সমস্তই কারো না করো আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে , কারণ জীবমাত্রই সাক্ষাৎ পরমাত্মার অংশ । তারই জন্য জীব যতক্ষণ নিজ অংশী পরমাত্মার আশ্রয় গ্রহণ না করে , ততক্ষণ সে অপরের আশ্রয় নিতে থাকে , পরাধীন হতে থাকে এবং দুঃখও পেতে থাকে ।
মানুষের বিবেকবোধ আছে অথচ নিজ বিবেককে গুরত্ব না দিয়ে সে স্বয়ং সাক্ষাৎ অবিনাশী পরমাত্মার চেতন অংশ হওয়া সত্ত্বেও বিনাশশীল জড়বস্তুর আশ্রয় গ্রহণ করে অর্থাৎ শরীর , বল , বুদ্ধি , যোগ্যতা , আত্মীয়- স্বজন , ধন - সম্পত্তি ইত্যাদির আশ্রিত হয় - এটি মনুষ্য - জীবনের একটি মারাত্ম ভ্রান্তি ।
গীতায় অর্জুন ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেই নিজ কল্যাণের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন । যতক্ষণ পর্যনাত অর্জুন ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেন নি , ততক্ষণ গীতার উপদেশ আরম্ভ হয় নি । উপদেশের আরম্ভ এবং অবসান ভগবৎ আশ্রয়েরই কথা বলা হয়েছে ।
ঈশ্বরপ্রদত্ত স্বাধীনতায় মানুষ তার ইচ্ছামতো যে কারোরই আশ্রয় গ্রহণ বরতে পারে । সুতরাং কেউ কেউ নিজ কামনাপূর্তির উদ্দেশ্যে দেবতাদের আশ্রয় গ্রহণ করে । কিন্তু পরিণামে তারা বিনাশশীল ফলই লাভ করে থাকে । কিছু মানুষ ভোগাদি কামনায় বেদোক্ত সকাম অনুষ্ঠানের আশ্রয় নেয় এবং পরিণামে তারা পুনঃ পুনঃ মর্ত্যলোকে আগমন করে ।
কিছু মানুষ আবার ভগবানেরও আশ্রয় নেয় না এবং ভগবানকে ভগবান বলে মনে করে না , সুতরাং এইসব মানুষের মধ্যে কেউ আসুরীভাবের আশ্রয় নেয় । কিছু ব্যক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃতির আশ্রয় নেয় । কেউ কেউ অপূরণীয় কামনায় বশীভূত হয় । কেউ আমৃত্যু অপার চিন্তার আশ্রয় নেয় । কেউ অহংকার , দুরাগ্রহ , গর্ব , কামনা এবং ক্রোধের আশ্রয় নেয় । এই আশ্রয় নেয় । এই আশ্রয় নেওয়ার ফলস্বরূপ তাদের বাবংবার চুরাশী লক্ষ যোনি এবং নরকে পরিভ্রমণ করতে হয় । এও এক তার ভ্রান্তি ।
ভগবদ্মুখীন মানুষ ভগবানের এবং তাঁর দয়া , ক্ষমা , সমতা ইত্যাদি গুণগুণির ( দৈবী সম্পদের ) আশ্রয় গ্রহণ করে এবং পরিণামে ভগবানকে লাভ করে । সুতরাং গীতায় ' মামুপাশ্রিতঃ ' ( ৪\১০) , ' মদাশ্রয়ঃ ' ( ৭\১ ) , ' মামেব যে প্রপদ্যন্তে ( ৭\১৪ ) , ' মামাশ্রিত্য যতন্তি যে ' ( ৭\২৯ ) , ' মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিতা ' ( ৯\৩২ ) , মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ ' ( ১৮\৫৬ ) , ' তমেব শরণয় গচ্ছ ' ( ১৮\৬২ ) , ' মামেকং শরণং ব্রজ ' ( ১৮\৬৬ ) ইত্যাদি পদগুলিতে ভগবানের আশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে , এবং ' দৈবী প্রকৃতিমাশ্রিতা ' ( ৯\১৩ ) এবং ' বুদ্ধিযোগমুপাশ্রিত্য' ' ( ১৮\৫৭) পদগুলিতে দৈবী সম্পদের আশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে ।
এর তাৎপর্য এই যে , গীতায় যেসকল সাধন প্রণালীর কথা বলা হয়েছে , তার মধ্যে সব থেকে শ্রেষ্ঠ এবং সহজ সাধন হলো ভগবানের শরণাগত হওয়া । যে ভগবানের শরণাগত হয়ে সাধনা করে তার সাধনার সিদ্ধি খুবই শীঘ্র এবং সহজে হয় ।
এই কথা ভগবান গীতায় স্পষ্টভাবেই বলেছেন , যে আমার শরণাগত হয়ে সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পন করে , আমি সেই ভক্তকে মৃত্যুরূপ সংসার- সাগর থেকে অচিরাৎ উদ্ধার করে থাকি । যারা আমার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিলাভের জন্য যত্ন করে তারা ব্রহ্ম , অধ্যাত্ম এবং সম্পূর্ণ কর্ম তথা অধিভূত , অধিদৈব এবং অধিযজ্ঞ সহ আমাকে জানতে পারে অর্থাৎ আমার সমগ্ররূপ অবগত হয় । ভগবান তাঁর আশ্রয় গ্রহণকারী ভক্তদের সমস্ত যোগীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে জানিয়েছেন । সুতরাং সাধকদের উচিত তাঁরা যে সাধনাই করুন ভগবানের আশ্রয় নিয়েই তা করা ।
জীব স্বয়ং পরমাত্মার অংশ এবং স্থূল , সূক্ষ্ম ও কারণ -শরীর প্রকৃতির অংশ । ক্রিয়া এবং পদার্থের যে আশ্রয় তা স্থূল শরীরের আশ্রয় ( স্থল শরীর ছাড়াও অর্থ , গৃহ , পুত্র , পৌত্র , আত্মীয় , জমি - জায়গা ইত্যাদির যে আশ্রয় তা তো বিশেষভাবেই জড়ত্বের আশ্রয় ) । বিদ্যা , বুদ্ধি , সদ্গুণ , যোগ্যতা প্রভৃতির যে আশ্রয় তথা চিন্তা , ধ্যান , মননের যে আশ্রয় তা সবই সূক্ষ্ম - শরীরের আশ্রয় ।
যাতে ব্যুত্থান ( উত্তরণ ) হয় , সেই সমাধির আশ্রয় নেওয়া হলো কারণ - শরীরের আশ্রয় । আর সমাধি দ্বারা যে সকল সিদ্ধি প্রাপ্তি হয় , নিজের মধ্যে যা মহত্ত্বরূপে প্রকাশিত হয় সে সবই সমাধিকেন্দ্রিক কার্যের আশ্রয় - এ সবই হলো বিনাশশীল বস্তুর আশ্রয় ।
জপ - ধ্যান , কথা - কীর্তন ইত্যাদির আশ্রয় হলো সাধনের আশ্রয় । ' আমি ভগবানেরই ' - এইপ্রকার ভগবানের সঙ্গে একমাত্র সম্পর্কিত হওয়া হলো সাধ্যের ( ভগরানের ) আশ্রয় । সাধনের আশ্রয় নিলে সাধন - ভজন করতে হয় , কিন্তু সাধ্যের আশ্রয় নিলে সাধন স্বতঃস্ফূর্ত হয় , করতে হয় না । বিনাশশীলের আশ্রয় দূরীভূত হলেই ভগবৎপ্রাপ্তির অনুভূতি স্বতঃই হয়ে যায় ।
কারণ ভগবান নিত্যপ্রাপ্ত , কেবল ক্ষণভঙ্গুর আশ্রয় গ্রহনই হলো ঈশ্বর- প্রাপ্তির একমাত্র অন্তরায় । তাই সবকিছু ত্যাগ করে কেবলামাত্র ভগবানের চরণে আশ্রয় নিলে তিনিই তাকে নিজের আশ্রয় নেবেন । ভক্ত হলেন ভগবানের আর ভগবান ভক্তের । প্রেম- প্রীতি , ভাব -ভক্তি না থাকলে তা কখনই হয় ।
মানুষের বিবেকবোধ আছে অথচ নিজ বিবেককে গুরত্ব না দিয়ে সে স্বয়ং সাক্ষাৎ অবিনাশী পরমাত্মার চেতন অংশ হওয়া সত্ত্বেও বিনাশশীল জড়বস্তুর আশ্রয় গ্রহণ করে অর্থাৎ শরীর , বল , বুদ্ধি , যোগ্যতা , আত্মীয়- স্বজন , ধন - সম্পত্তি ইত্যাদির আশ্রিত হয় - এটি মনুষ্য - জীবনের একটি মারাত্ম ভ্রান্তি ।
গীতায় অর্জুন ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেই নিজ কল্যাণের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন । যতক্ষণ পর্যনাত অর্জুন ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেন নি , ততক্ষণ গীতার উপদেশ আরম্ভ হয় নি । উপদেশের আরম্ভ এবং অবসান ভগবৎ আশ্রয়েরই কথা বলা হয়েছে ।
ঈশ্বরপ্রদত্ত স্বাধীনতায় মানুষ তার ইচ্ছামতো যে কারোরই আশ্রয় গ্রহণ বরতে পারে । সুতরাং কেউ কেউ নিজ কামনাপূর্তির উদ্দেশ্যে দেবতাদের আশ্রয় গ্রহণ করে । কিন্তু পরিণামে তারা বিনাশশীল ফলই লাভ করে থাকে । কিছু মানুষ ভোগাদি কামনায় বেদোক্ত সকাম অনুষ্ঠানের আশ্রয় নেয় এবং পরিণামে তারা পুনঃ পুনঃ মর্ত্যলোকে আগমন করে ।
কিছু মানুষ আবার ভগবানেরও আশ্রয় নেয় না এবং ভগবানকে ভগবান বলে মনে করে না , সুতরাং এইসব মানুষের মধ্যে কেউ আসুরীভাবের আশ্রয় নেয় । কিছু ব্যক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃতির আশ্রয় নেয় । কেউ কেউ অপূরণীয় কামনায় বশীভূত হয় । কেউ আমৃত্যু অপার চিন্তার আশ্রয় নেয় । কেউ অহংকার , দুরাগ্রহ , গর্ব , কামনা এবং ক্রোধের আশ্রয় নেয় । এই আশ্রয় নেয় । এই আশ্রয় নেওয়ার ফলস্বরূপ তাদের বাবংবার চুরাশী লক্ষ যোনি এবং নরকে পরিভ্রমণ করতে হয় । এও এক তার ভ্রান্তি ।
ভগবদ্মুখীন মানুষ ভগবানের এবং তাঁর দয়া , ক্ষমা , সমতা ইত্যাদি গুণগুণির ( দৈবী সম্পদের ) আশ্রয় গ্রহণ করে এবং পরিণামে ভগবানকে লাভ করে । সুতরাং গীতায় ' মামুপাশ্রিতঃ ' ( ৪\১০) , ' মদাশ্রয়ঃ ' ( ৭\১ ) , ' মামেব যে প্রপদ্যন্তে ( ৭\১৪ ) , ' মামাশ্রিত্য যতন্তি যে ' ( ৭\২৯ ) , ' মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিতা ' ( ৯\৩২ ) , মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ ' ( ১৮\৫৬ ) , ' তমেব শরণয় গচ্ছ ' ( ১৮\৬২ ) , ' মামেকং শরণং ব্রজ ' ( ১৮\৬৬ ) ইত্যাদি পদগুলিতে ভগবানের আশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে , এবং ' দৈবী প্রকৃতিমাশ্রিতা ' ( ৯\১৩ ) এবং ' বুদ্ধিযোগমুপাশ্রিত্য' ' ( ১৮\৫৭) পদগুলিতে দৈবী সম্পদের আশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে ।
এর তাৎপর্য এই যে , গীতায় যেসকল সাধন প্রণালীর কথা বলা হয়েছে , তার মধ্যে সব থেকে শ্রেষ্ঠ এবং সহজ সাধন হলো ভগবানের শরণাগত হওয়া । যে ভগবানের শরণাগত হয়ে সাধনা করে তার সাধনার সিদ্ধি খুবই শীঘ্র এবং সহজে হয় ।
এই কথা ভগবান গীতায় স্পষ্টভাবেই বলেছেন , যে আমার শরণাগত হয়ে সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পন করে , আমি সেই ভক্তকে মৃত্যুরূপ সংসার- সাগর থেকে অচিরাৎ উদ্ধার করে থাকি । যারা আমার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিলাভের জন্য যত্ন করে তারা ব্রহ্ম , অধ্যাত্ম এবং সম্পূর্ণ কর্ম তথা অধিভূত , অধিদৈব এবং অধিযজ্ঞ সহ আমাকে জানতে পারে অর্থাৎ আমার সমগ্ররূপ অবগত হয় । ভগবান তাঁর আশ্রয় গ্রহণকারী ভক্তদের সমস্ত যোগীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে জানিয়েছেন । সুতরাং সাধকদের উচিত তাঁরা যে সাধনাই করুন ভগবানের আশ্রয় নিয়েই তা করা ।
জীব স্বয়ং পরমাত্মার অংশ এবং স্থূল , সূক্ষ্ম ও কারণ -শরীর প্রকৃতির অংশ । ক্রিয়া এবং পদার্থের যে আশ্রয় তা স্থূল শরীরের আশ্রয় ( স্থল শরীর ছাড়াও অর্থ , গৃহ , পুত্র , পৌত্র , আত্মীয় , জমি - জায়গা ইত্যাদির যে আশ্রয় তা তো বিশেষভাবেই জড়ত্বের আশ্রয় ) । বিদ্যা , বুদ্ধি , সদ্গুণ , যোগ্যতা প্রভৃতির যে আশ্রয় তথা চিন্তা , ধ্যান , মননের যে আশ্রয় তা সবই সূক্ষ্ম - শরীরের আশ্রয় ।
যাতে ব্যুত্থান ( উত্তরণ ) হয় , সেই সমাধির আশ্রয় নেওয়া হলো কারণ - শরীরের আশ্রয় । আর সমাধি দ্বারা যে সকল সিদ্ধি প্রাপ্তি হয় , নিজের মধ্যে যা মহত্ত্বরূপে প্রকাশিত হয় সে সবই সমাধিকেন্দ্রিক কার্যের আশ্রয় - এ সবই হলো বিনাশশীল বস্তুর আশ্রয় ।
জপ - ধ্যান , কথা - কীর্তন ইত্যাদির আশ্রয় হলো সাধনের আশ্রয় । ' আমি ভগবানেরই ' - এইপ্রকার ভগবানের সঙ্গে একমাত্র সম্পর্কিত হওয়া হলো সাধ্যের ( ভগরানের ) আশ্রয় । সাধনের আশ্রয় নিলে সাধন - ভজন করতে হয় , কিন্তু সাধ্যের আশ্রয় নিলে সাধন স্বতঃস্ফূর্ত হয় , করতে হয় না । বিনাশশীলের আশ্রয় দূরীভূত হলেই ভগবৎপ্রাপ্তির অনুভূতি স্বতঃই হয়ে যায় ।
কারণ ভগবান নিত্যপ্রাপ্ত , কেবল ক্ষণভঙ্গুর আশ্রয় গ্রহনই হলো ঈশ্বর- প্রাপ্তির একমাত্র অন্তরায় । তাই সবকিছু ত্যাগ করে কেবলামাত্র ভগবানের চরণে আশ্রয় নিলে তিনিই তাকে নিজের আশ্রয় নেবেন । ভক্ত হলেন ভগবানের আর ভগবান ভক্তের । প্রেম- প্রীতি , ভাব -ভক্তি না থাকলে তা কখনই হয় ।
COurtesy by: Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন