' যদহঙ্কারমাশ্রিত্য ' - প্রকৃতি থেকে মহত্তত্ত্ব এবং মহত্তত্ত্ব থেকে অহংকার উৎপন্ন হয়েছে । সেই অহংকারেরই এক বিকৃত অংশ - ' আমি শরীর ' এই ভাব । এই বিকৃত অহংকারের আশ্রয় গ্রহণকারী পুরুষ কখনো ক্রিয়ারহিত হতে পারে না । কারণ প্রকৃতি সর্বদা ক্রিয়াশীল ও পরিবর্তনশীল , তাই তার আশ্রয় গ্রহণকারী কোনো মানুষই কর্ম না করে থাকতে পারেন না ।
মানুষ যখন অহংকারবশত ক্রিয়াশীল প্রকৃতির বশীভূত হন , তখন তিনি কি করে বলেন যে আমি এই কর্মটি করব , ওই কর্মটি করব না ? অর্থাৎ প্রকৃতির বশ হয়ে মানুষ করা বা না করা - এই দুইয়ের থেকেই মুক্তি পান না । কারণ প্রকৃতির দ্বারা বশীভূত মানুষের কিছু ' করাও' কর্ম আর ' না করাও ' কর্ম ।
কিন্তু মানুষ যখন প্রকৃতির বশে থাকে না , নির্লিপ্তভাবে থাকে ( যা তার প্রকৃত স্বরূপ ) , তখন তার ক্ষেত্রে করা এবং না - করার কথা প্রয়োজ্য হয় না । তাৎপর্য হল এই যে , প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে কর্ম না করে থাকা সম্ভব নয় । কিন্তু যিনি প্রকৃতির সঙ্গে সম্বন্ধ ছেদন করেছেন বা সর্বতোভাবে ভগবানের শরণাগত হয়েছেন , তিনি কর্ম করতে বাধ্য থাকেন না ।
' ন যোৎস্য ইতি মন্যসে ' - দ্বিতীয় অধ্যায়ে অর্জুন ভগবানের শরণাগত হয়ে শিক্ষা চাইছিলেন - ' শিষ্যস্তেহহংশাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ' ( ২\৭ ) এবং তারপর অর্জুন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে ' আমি যুদ্ধ করব না - ' ন যৌৎসো ' ( ২\৯) । ভগবানে এই কথাটি মনঃপুত হয়নি । ভগবান দেখলেন যে , এ তো আমার শরণাগত হয়েছিল আর আমি কিছু বলার আগেই বলে কিনা ' আমি যুদ্ধ করব না । ' তাহলে এটা কি আমার শরণাগতি ? এ তো অহংকারে শরণাগতি হল ।
কারণ প্রকৃত শরণাগত ব্যক্তি ' আমি এটা করব , ওটা করব না ' বলে না । ভগবানের শরণাগত হলে , তিনি যেমন করাবেন , তেমনই করতে হবে । অর্জুনের কথা ভেবেই তাঁর অত্যধিক কৃপা ও স্নেহ থাকায় তিনি উপদেশ দিতে শুরু করুন , নচেৎ তখনই তিনি বলে দিতেন ' যেমন খুশি , তেমন কর ' - যথেচ্ছসি তথা কুরু ' ( ১৮\৬৩ ) । কিন্তু অর্জুনের এই যে কথাটি ' আমি যুদ্ধ করব না ' ভগবানের মনে বিদ্ধ হয়েছিল । তাই ভগবান সেই শব্দটি - ' ন যোৎস্যে ' এখানে উল্লেখ করে বলেছেন যে তুমি অহংকারেরই শরণাগত , আমার নয় ।
যদি আমার শরণাগত হতে তাহলে ' যুদ্ধ করব না ' একথা বলতেই পারতে না । আমার শরণাগত হলে তুমি কী করবে , আর কী না করবে - তার দায়িত্ব আমার ওপর থাকত । তাছাড়া আমার শরণাগত হলে এই প্রকৃতিও তোমাকে বাধা করত না । ত্রিগুণময়ী মায়া বা প্রকৃতি তাকেই বাধা করে , যে আমার শরণাগত হয় না । কারণ প্রকৃতির প্রবাহে থাকা প্রাণী প্রকৃতির গুণে সর্বদা বশীভূত থাকে ।
একটি অত্যন্ত সত্য কথা হল যে , মানুষ যেসব প্রাকৃত পদার্থকে নিজের বলে মনে করে , সে সেই পদার্থগুলির অধীন হয়ে পড়ে । সে ভ্রমবশত মনে করে যে , সে - ই সেগুলির মালিক , কিন্তু আসলে সে হয়ে ওঠে সেগুলির দাস ! কিন্তু যেগুলিকে নিজের বলে মনে করে না , সেগুলির বশ হয় না । যেমন আপনার হাতে যে মোবাইল আছে সেটা কি আপনার ? এটা কি চিরদিন আপনার থাকবে ? আগে কি এটা ছিল আপনার ? শুধু মাঝে কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার করে মোবাইলে প্রতি আকৃষ্ট হওয়া । যখন হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যাবে বা চুরি হবে বা নষ্ট হয়ে যাবে কোন কারণে তখন দুঃখ উৎপন্ন হবে কেননা মোবাইলের প্রতি যে আমাদের মোহ তার জন্য দুঃখ প্রাপ্তি ।
তাই মানুষের কোন প্রাকৃত পদার্থকে নিজের বলে মনে করা উচিত নয় । কারণ সেগুলি প্রকৃতই নিজস্ব নয় । ভগবানই বাস্তবে আপন । ভগবানকে নিজের বলে মনে করলে মানুষের অধীনতা চিরকালের মতো দূর হয় । তাৎপর্য হল এই যে মানুষ পদার্থ এবং ক্রিয়াগুলিকে নিজের বলে মনে করলে সর্বতোভাবে অধীন হয়ে যায় আর ভগবানকে নিজের মনে করলে , অনন্যভাবে শরণাগত হলে সর্বত্যেভাবে স্বাধীন হয়ে যায় । প্রভুর শরণাগত হলে পরাধীনতা লেশ থাকে না ---- শরণাগতির এই মহিমা । কিন্তু যিনি প্রভুর শরণাগত না হয়ে অহংকারের শরণ নেন , তিনি মৃত্যুর দিকে ( সংসার পথে ) অগ্রসর হন - নিবর্তন্তে মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি ' (৯\৩ ) ।
' মিথ্যৈষ ব্যবসায়ন্তে ' - ব্যবসায় অর্থাৎ সঙ্কল্প দুপ্রকারের , বাস্তবিক এবং অবাস্তবিক । পরমাত্মার সঙ্গে যে নিত্য সর্ম্পক , তাকে সঙ্কল্প করা বাস্তবিক আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে প্রাকৃত পদার্থের যে সঙ্কল্প করা , তা অবাস্তবিক । যে সঙ্কল্প পরমাত্মাকে ধরে হয় , তাতে স্ব -স্বরূপের প্রাধান্য থাকে আর যে সঙ্কল্প প্রকৃতিকে নিয়ে হয় , তাতে নিজের অন্তঃকরণের প্রাধান্য থাকে ।
তাই ভগবান এখানে অর্জুনকে বলেছেন যে , তুমি যে অহংকারের অর্থাৎ প্রকৃতির আশ্রয় নিয়ে বলছ যে তুমি যুদ্ধ করবে না , তোমার এই ( ক্ষত্রিয় - প্রকৃতির বিরুদ্ধ ) সঙ্কল্প অবাস্তবিক অর্থাৎ মিথ্যা । আশ্রয় একমাত্র পরমাত্মাকরই গ্রহণ করা উচিত , প্রকৃতি অথবা প্রকৃতির কার্য জগতের নয় ।
প্রাণী যদি সঠিকভাবে জানতে পারে যে আমি শুধু পরমাত্মারই অংশ এবং আমার তাঁকে লক্ষ্য করেই চলতে হবে , তাহলে তার এই সঙ্কল্প মহিমা ভগবান নবম অধ্যায়ের ত্রিশতম শ্লোকে বর্ণনা করে বলেছেন যে , অত্যন্ত দুরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্যভাবে আমার ভজনা করে , তাহলে তাকে দুরাচারী মনে করা উচিত নয় , সাধু বলে মানা উচিত । কারণ তার প্রকৃত সিদ্ধান্ত এই হয় যে , আমি ভগবানেরই এবং শুধু তাঁরই ভজনা করব ।
তাই আমাদের সর্বতোভাবে সবকিছু ত্যাগ করে ভগবানের শরণাগত হওয়া উচিত । মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে , ভগবান সর্বদা আমাকে রক্ষা করবেন এবং তিনি সবসময় সাথে থাকবেন । হৃদয়ের গভীর থেকে যদি অনুভব করা যায় তবেই সবকিছু সহজ হয়ে যাবে ।
Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
মানুষ যখন অহংকারবশত ক্রিয়াশীল প্রকৃতির বশীভূত হন , তখন তিনি কি করে বলেন যে আমি এই কর্মটি করব , ওই কর্মটি করব না ? অর্থাৎ প্রকৃতির বশ হয়ে মানুষ করা বা না করা - এই দুইয়ের থেকেই মুক্তি পান না । কারণ প্রকৃতির দ্বারা বশীভূত মানুষের কিছু ' করাও' কর্ম আর ' না করাও ' কর্ম ।
কিন্তু মানুষ যখন প্রকৃতির বশে থাকে না , নির্লিপ্তভাবে থাকে ( যা তার প্রকৃত স্বরূপ ) , তখন তার ক্ষেত্রে করা এবং না - করার কথা প্রয়োজ্য হয় না । তাৎপর্য হল এই যে , প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে কর্ম না করে থাকা সম্ভব নয় । কিন্তু যিনি প্রকৃতির সঙ্গে সম্বন্ধ ছেদন করেছেন বা সর্বতোভাবে ভগবানের শরণাগত হয়েছেন , তিনি কর্ম করতে বাধ্য থাকেন না ।
' ন যোৎস্য ইতি মন্যসে ' - দ্বিতীয় অধ্যায়ে অর্জুন ভগবানের শরণাগত হয়ে শিক্ষা চাইছিলেন - ' শিষ্যস্তেহহংশাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ' ( ২\৭ ) এবং তারপর অর্জুন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে ' আমি যুদ্ধ করব না - ' ন যৌৎসো ' ( ২\৯) । ভগবানে এই কথাটি মনঃপুত হয়নি । ভগবান দেখলেন যে , এ তো আমার শরণাগত হয়েছিল আর আমি কিছু বলার আগেই বলে কিনা ' আমি যুদ্ধ করব না । ' তাহলে এটা কি আমার শরণাগতি ? এ তো অহংকারে শরণাগতি হল ।
কারণ প্রকৃত শরণাগত ব্যক্তি ' আমি এটা করব , ওটা করব না ' বলে না । ভগবানের শরণাগত হলে , তিনি যেমন করাবেন , তেমনই করতে হবে । অর্জুনের কথা ভেবেই তাঁর অত্যধিক কৃপা ও স্নেহ থাকায় তিনি উপদেশ দিতে শুরু করুন , নচেৎ তখনই তিনি বলে দিতেন ' যেমন খুশি , তেমন কর ' - যথেচ্ছসি তথা কুরু ' ( ১৮\৬৩ ) । কিন্তু অর্জুনের এই যে কথাটি ' আমি যুদ্ধ করব না ' ভগবানের মনে বিদ্ধ হয়েছিল । তাই ভগবান সেই শব্দটি - ' ন যোৎস্যে ' এখানে উল্লেখ করে বলেছেন যে তুমি অহংকারেরই শরণাগত , আমার নয় ।
যদি আমার শরণাগত হতে তাহলে ' যুদ্ধ করব না ' একথা বলতেই পারতে না । আমার শরণাগত হলে তুমি কী করবে , আর কী না করবে - তার দায়িত্ব আমার ওপর থাকত । তাছাড়া আমার শরণাগত হলে এই প্রকৃতিও তোমাকে বাধা করত না । ত্রিগুণময়ী মায়া বা প্রকৃতি তাকেই বাধা করে , যে আমার শরণাগত হয় না । কারণ প্রকৃতির প্রবাহে থাকা প্রাণী প্রকৃতির গুণে সর্বদা বশীভূত থাকে ।
একটি অত্যন্ত সত্য কথা হল যে , মানুষ যেসব প্রাকৃত পদার্থকে নিজের বলে মনে করে , সে সেই পদার্থগুলির অধীন হয়ে পড়ে । সে ভ্রমবশত মনে করে যে , সে - ই সেগুলির মালিক , কিন্তু আসলে সে হয়ে ওঠে সেগুলির দাস ! কিন্তু যেগুলিকে নিজের বলে মনে করে না , সেগুলির বশ হয় না । যেমন আপনার হাতে যে মোবাইল আছে সেটা কি আপনার ? এটা কি চিরদিন আপনার থাকবে ? আগে কি এটা ছিল আপনার ? শুধু মাঝে কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার করে মোবাইলে প্রতি আকৃষ্ট হওয়া । যখন হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যাবে বা চুরি হবে বা নষ্ট হয়ে যাবে কোন কারণে তখন দুঃখ উৎপন্ন হবে কেননা মোবাইলের প্রতি যে আমাদের মোহ তার জন্য দুঃখ প্রাপ্তি ।
তাই মানুষের কোন প্রাকৃত পদার্থকে নিজের বলে মনে করা উচিত নয় । কারণ সেগুলি প্রকৃতই নিজস্ব নয় । ভগবানই বাস্তবে আপন । ভগবানকে নিজের বলে মনে করলে মানুষের অধীনতা চিরকালের মতো দূর হয় । তাৎপর্য হল এই যে মানুষ পদার্থ এবং ক্রিয়াগুলিকে নিজের বলে মনে করলে সর্বতোভাবে অধীন হয়ে যায় আর ভগবানকে নিজের মনে করলে , অনন্যভাবে শরণাগত হলে সর্বত্যেভাবে স্বাধীন হয়ে যায় । প্রভুর শরণাগত হলে পরাধীনতা লেশ থাকে না ---- শরণাগতির এই মহিমা । কিন্তু যিনি প্রভুর শরণাগত না হয়ে অহংকারের শরণ নেন , তিনি মৃত্যুর দিকে ( সংসার পথে ) অগ্রসর হন - নিবর্তন্তে মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি ' (৯\৩ ) ।
' মিথ্যৈষ ব্যবসায়ন্তে ' - ব্যবসায় অর্থাৎ সঙ্কল্প দুপ্রকারের , বাস্তবিক এবং অবাস্তবিক । পরমাত্মার সঙ্গে যে নিত্য সর্ম্পক , তাকে সঙ্কল্প করা বাস্তবিক আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে প্রাকৃত পদার্থের যে সঙ্কল্প করা , তা অবাস্তবিক । যে সঙ্কল্প পরমাত্মাকে ধরে হয় , তাতে স্ব -স্বরূপের প্রাধান্য থাকে আর যে সঙ্কল্প প্রকৃতিকে নিয়ে হয় , তাতে নিজের অন্তঃকরণের প্রাধান্য থাকে ।
তাই ভগবান এখানে অর্জুনকে বলেছেন যে , তুমি যে অহংকারের অর্থাৎ প্রকৃতির আশ্রয় নিয়ে বলছ যে তুমি যুদ্ধ করবে না , তোমার এই ( ক্ষত্রিয় - প্রকৃতির বিরুদ্ধ ) সঙ্কল্প অবাস্তবিক অর্থাৎ মিথ্যা । আশ্রয় একমাত্র পরমাত্মাকরই গ্রহণ করা উচিত , প্রকৃতি অথবা প্রকৃতির কার্য জগতের নয় ।
প্রাণী যদি সঠিকভাবে জানতে পারে যে আমি শুধু পরমাত্মারই অংশ এবং আমার তাঁকে লক্ষ্য করেই চলতে হবে , তাহলে তার এই সঙ্কল্প মহিমা ভগবান নবম অধ্যায়ের ত্রিশতম শ্লোকে বর্ণনা করে বলেছেন যে , অত্যন্ত দুরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্যভাবে আমার ভজনা করে , তাহলে তাকে দুরাচারী মনে করা উচিত নয় , সাধু বলে মানা উচিত । কারণ তার প্রকৃত সিদ্ধান্ত এই হয় যে , আমি ভগবানেরই এবং শুধু তাঁরই ভজনা করব ।
তাই আমাদের সর্বতোভাবে সবকিছু ত্যাগ করে ভগবানের শরণাগত হওয়া উচিত । মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে , ভগবান সর্বদা আমাকে রক্ষা করবেন এবং তিনি সবসময় সাথে থাকবেন । হৃদয়ের গভীর থেকে যদি অনুভব করা যায় তবেই সবকিছু সহজ হয়ে যাবে ।
Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন