২৩ নভেম্বর ২০১৭

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: একাদশ অধ্যায় – বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ

শ্রীঅর্জ্জুন উবাচ—
মদনুগ্রহায় পরমং গুহ্যমধ্যাত্মসংজ্ঞিতম্ ।
যত্ত্বয়োক্তং বচস্তেন মোহোঽয়ং বিগতো মম ॥১॥

অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন কহিলেন) মদনুগ্রহায় (আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া) পরমং (অতীব) গুহ্যম্ (গোপনীয়) অধ্যাত্মসংজ্ঞিতম্ (আত্মবিভূতিবিষয়ক) যৎ বচঃ (যে বাক্য) ত্বয়া (আপনা কর্ত্তৃক) উক্তং (কথিত হইল), তেন (তদ্দ্বারা) মম (আমার) অয়ং (এই) মোহঃ (আপনার ঐশ্বর্য়্য বিষয়ক অজ্ঞান) বিগতঃ (দূর হইল) ॥১॥

অর্জ্জুন কহিলেন—আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া পরম গোপ্য আপনার নিজ বিভূতি বিষয়ক যে বাক্য আপনি বলিয়াছেন । তাহাতে আমার এই মোহ অর্থাৎ ভবদীয় ঐশ্বর্য্য বিষয়ক অজ্ঞান সম্যক্ দূর হইল ॥১॥

ভবাপ্যয়ৌ হি ভূতানাং শ্রুতৌ বিস্তরশো ময়া ।
ত্বত্তঃ কমলপত্রাক্ষ মাহাত্ম্যমপি চাব্যয়ম্ ॥২॥

[হে] কমলপত্রাক্ষ ! (হে পদ্মপলাশলোচন !) হি (নিশ্চিতভাবে) ত্বত্তঃ (আপনার নিকট হইতে) ভূতানাং (ভূত সকলের) ভবাপ্যয়ৌ (উৎপত্তি ও বিনাশের বিষয়) ময়া (আমা কর্ত্তৃক) বিস্তরশঃ (বিস্তৃতভাবে) শ্রুতৌ (শ্রুত হইল) অব্যয়ম্ চ (এবং অবিনশ্বর) [তব] (তোমার) মাহাত্ম্যম্ অপি (মহিমাও) [শ্রুতম্] (শ্রুত হইল) ॥২॥

হে পদ্মপলাশলোচন ! আপনার নিকট হইতে জীবগণের উৎপত্তি ও প্রলয় বিষয়ক তথ্য আমি নিশ্চিত সবিস্তারে শ্রবণ করিলাম, এবং আপনার নিত্য অবিনশ্বর মাহাত্ম্যের কথাও শুনিলাম ॥২॥

এবমেতদ্ যথাত্থ ত্বমাত্মানং পরমেশ্বর ।
দ্রুষ্টুমিচ্ছামি তে রূপমৈশ্বরং পুরুষোত্তম ॥৩॥

[হে] পরমেশ্বর ! (হে পরমেশ্বর !) ত্বম্ (আপনি) আত্মানং (নিজের ঐশ্বর্য্য সম্বন্ধে) যথা (যেরূপ) আত্থ (বলিলেন) এতৎ (ইহা) এবম্ (এইরূপই) [তথাপি] [হে] পুরুষোত্তম ! (হে পুরুষশ্রেষ্ঠ !) তে (আপনার) ঐশ্বরং (সেই ঐশ্বর্য্যময়) রূপম্ (রূপ) দ্রষ্টুম্ (দেখিতে) ইচ্ছামি (ইচ্ছা করি) ॥৩॥

হে পরমেশ্বর ! আপনি নিজ ঐশ্বর্য্যবিষয় যেরূপ বলিলেন ইহা এইরূপই বটে, হে পুরুষোত্তম ! তথাপি আপনার সেই ঐশ্বর রূপটী আমি দর্শন করিতে ইচ্ছা করি ॥৩॥

মন্যসে যদি তচ্ছক্যং ময়া দ্রষ্টুমিতি প্রভো ।
যোগেশ্বর ততো মে ত্বং দর্শয়াত্মানমব্যয়ম্ ॥৪॥

[হে] প্রভো ! (হে প্রভো !) যদি (যদি) তৎ (সেই ঐশ্বররূপ) ময়া (আমি) দ্রষ্টুম্ (দর্শন করিতে) শক্যং (সমর্থ হইব) ইতি (ইহা) মন্যসে (মনে করেন), ততঃ (তাহা হইলে) [হে] যোগেশ্বর ! (হে যোগেশ্বর !) ত্বং (আপনি) মে (আমাকে) অব্যয়ম্ (অবিনাশী) আত্মানম্ (নিজের স্বরূপ) দর্শয় (প্রদর্শন করান) ॥৪॥

হে প্রভো ! যদি সেই ঐশ্বর্য্যময় রূপটী আমি দর্শন করিতে সক্ষম হইব ইহা মনে হয়, হে যোগেশ্বর ! তবে আপনি আমাকে সেই অবিনাশী নিজের স্বরূপটী দেখান ॥৪॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
পশ্য মে পার্থ রূপাণি শতশোঽথ সহস্রশঃ ।
নানাবিধানি দিব্যানি নানাবর্ণাকৃতীনি চ ॥৫॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ কহিলেন) [হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) মে (আমার) দিব্যানি (অলৌকিক) নানাবিধানি (নানাপ্রকার) নানাবর্ণাকৃতীনি চ (এবং বিবিধ বর্ণ ও আকৃতি বিশিষ্ট) শতশঃ (শত শত) অথ সহস্রশঃ (এবং সহস্র সহস্র) রূপানি (রূপসকল) [ত্বং] (তুমি) পশ্য (দর্শন কর) ॥৫॥

শ্রীভগবান্ বলিলেন—হে পার্থ ! আমার দিব্য নানাপ্রকার এবং নানাবর্ণ ও আকৃতিবিশিষ্ট শত শত এবং সহস্র সহস্র রূপসমূহ তুমি দর্শন কর ॥৫॥

পশ্যাদিত্যান্ বসূন্ রুদ্রানশ্বিনৌ মরুতস্তথা ।
বহূন্যদৃষ্টপূর্ব্বাণি পশ্যাশ্চর্য্যাণি ভারত ॥৬॥

[হে] ভারত ! (হে ভরতবংশীয় !) আদিত্যান্ (দ্বাদশ আদিত্য), বসূন্ (অষ্টবসু), রুদ্রান্ (একাদশ রুদ্র), অশ্বিনৌ (অশ্বিনীকুমারদ্বয়), তথা মরুতঃ (এবং ঊনপঞ্চাশ বায়ু সকলকে) পশ্য (দর্শন কর) ; অদৃষ্টপূর্ব্বাণি (পূর্ব্বে অদৃষ্ট) বহূনি (বহুবিধ) আশ্চর্য্যাণি (অদ্ভুত রূপ সকল) [ত্বং] (তুমি) পশ্য (দর্শন কর) ॥৬॥

হে ভারত ! আদিত্যগণ, বসুগণ, রুদ্রগণ, অশ্বিনীকুমারদ্বয়, এবং ঊনপঞ্চাশ বায়ু প্রভৃতি দেবতা সকলকে দেখ, এবং বহুবিধ পূর্ব্বে অদৃষ্ট আশ্চর্য্যজনকরূপ সকলও তুমি দর্শন কর ॥৬॥

ইহৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং পশ্যাদ্য সচরাচরম্ ।
মম দেহে গুড়াকেশ যচ্চান্যদ্ দ্রষ্টুমিচ্ছসি ॥৭॥

[হে] গুড়াকেশ ! (হে জিতনিদ্র !) ইহ (এই) মম (আমার) দেহে (দেহ মধ্যে) একস্থং (একস্থানেই অবস্থিত) সচরাচরম্ (স্থাবর ও জঙ্গমের সহিত) কৃৎস্নং (সমস্ত) জগৎ (বিশ্ব), অন্যৎ চ (এবং অন্য) যৎ (স্বজয়পরাজয়াদির যাহা) দ্রষ্টুম্ (দেখিতে) ইচ্ছসি (ইচ্ছা কর) [তদপি] (তাহাও) অদ্য (আজই) পশ্য (দর্শন কর) ॥৭॥

হে জিতনিদ্র অর্জ্জুন ! আমার এই দেহমধ্যে একস্থানেই অবস্থিত স্থাবর ও জঙ্গমের সহিত সমগ্র জগৎ এবং অপর নিজের জয়পরাজয়াদিরও যাহা কিছু দেখিতে ইচ্ছা কর সে সমস্তই দর্শন কর ॥৭॥

ন তু মাং শক্যসে দ্রষ্টুমনেনৈব স্বচক্ষুষা ।
দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ॥৮॥

তু (কিন্তু) অনেন (এই) স্বচক্ষুষা এব (তোমার বর্ত্তমান চক্ষু দ্বারা) মাং (আমাকে) দ্রষ্টুম্ (দেখিতে) ন শক্যসে (সমর্থ হইবে না), [অতএব] তে (তোমাকে) দিব্যং (অতিলৌকিক) চক্ষুঃ (চক্ষু) দদামি (দিতেছি), মে (আমার) ঐশ্বরম্ (ঐশ্বরিক) যোগম্ (যোগশক্তি) পশ্য (দর্শন কর) ॥৮॥

তোমার নিজের এই বর্ত্তমান চক্ষু দ্বারাই আমাকে দেখিতে সমর্থ হইবে না, অতএব তোমাকে অতিলৌকিক দৃষ্টি প্রদান করিতেছি তদ্দ্বারা আমার ঈশ্বরত্ব সম্বন্ধীয় যোগশক্তি দর্শন কর ॥৮॥

সঞ্জয় উবাচ—
এবমুক্ত্বা ততো রাজন্ মহাযোগেশ্বরো হরিঃ ।
দর্শয়ামাস পার্থায় পরমং রূপমৈশ্বরম্ ॥৯॥

সঞ্জয়ঃ উবাচ (সঞ্জয় কহিলেন) [হে] রাজন্ ! (হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র!) মহাযোগেশ্বরঃ (সর্ব্বশক্তিমান্) হরিঃ (শ্রীকৃষ্ণ) এবম্ (এইরূপ) উক্ত্বা (বলিয়া) ততঃ (তারপর) পার্থায় (অর্জ্জুনকে) পরমং (উৎকৃষ্ট) ঐশ্বরম্ (ঈশ্বরীয়) রূপম্ (রূপ) দর্শয়ামাস (দেখাইলেন) ॥৯॥

সঞ্জয় কহিলেন—হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র ! মহাযোগেশ্বর শ্রীহরি অর্জ্জুনকে এইরূপ বলিয়া তৎপর তাঁহাকে নিজের উত্তম ঐশ্বর্য্যময় রূপ দেখাইলেন ॥৯॥

অনেকবক্ত্রনয়নমনেকাদ্ভুতদর্শনম্ ।
অনেকদিব্যাভরণং দিব্যানেকোদ্যতায়ুধম্ ॥১০॥
দিব্যমাল্যাম্বরধরং দিব্যগন্ধানুলেপনম্ ।
সর্ব্বাশ্চর্য্যময়ং দেবমনন্তং বিশ্বতোমুখম্ ॥১১॥

অনেকবক্ত্রনয়নম্ (বহুমুখ ও বহুনেত্র বিশিষ্ট) অনেকাদ্ভুতদর্শনম্ (অনেক আশ্চর্য্য সমাবেশযুক্ত), অনেকদিব্যাভরণং (বহু দিব্য অলঙ্কারে ভূষিত) দিব্যানেকোদ্যতায়ুধম্ (বহুদিব্য অস্ত্রধারী) । দিব্যমাল্যাম্বরধরং (দিব্যমাল্য ও বস্ত্রে সুশোভিত) দিব্যগন্ধানুলেপনম্ (দিব্য গন্ধদ্রব্যের দ্বারা অনুলিপ্ত) সর্ব্বাশ্চর্য্যময়ং (সর্ব্ববিধ আশ্চর্য্যে পরিপূর্ণ) দেবম্ (দ্যুতিশীল) অনন্তং (অসংখ্য) বিশ্বতোমুখম্ (সর্ব্বত্র মুখ বিশিষ্ট) [রূপং দর্শয়ামাস) (রূপ দেখাইলেন) ॥১০–১১॥

অনেক মুখ ও অনেক চক্ষুযুক্ত, বহু আশ্চর্য্য দর্শনীয় সমাবেশবিশিষ্ট, অনেক দিব্যভূষণে ভূষিত, অনেক দিব্য অস্ত্রযুক্ত, দিব্যমাল্য ও বস্ত্রে শোভিত, দিব্যগন্ধের দ্বারা অনুলিপ্ত, সর্ব্বপ্রকার আশ্চর্য্যের সমাবেশপূর্ণ, উজ্জ্বল, অসীম ও সর্ব্বত্রমুখবিশিষ্ট রূপ দেখাইলেন ॥১০–১১॥

দিবি সূর্য্যসহস্রস্য ভবেদ্ যুগপদুত্থিতা ।
যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ্ভাসস্তস্য মহাত্মনঃ ॥১২॥

যদি (যদি) দিবি (আকাশে) সূর্য্যসহস্রস্য (সহস্র সূর্য্যের) ভাঃ (প্রভা) যুগপৎ (একই সময়ে) উত্থিতা (উদিত) ভবেৎ (হয়) [তর্হি] (তাহা হইলে) সা (সেই প্রভা) তস্য (সেই) মহাত্মনঃ (বিশ্বরূপী পুরুষের) ভাসঃ (দীপ্তির)সদৃশী (তুল্য) স্যাৎ (হইতে পারে) ॥১২॥

যদি আকাশে সহস্র সূর্য্যের প্রভা একই কালে উদিত হয়, তবে সেই প্রভা উক্ত বিশ্বরূপধারী ভগবানের প্রভার কতক পরিমাণে তুল্য হইতে পারে ॥১২॥

তত্রৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং প্রবিভক্তমনেকধা ।
অপশ্যদ্দেবদেবস্য শরীরে পাণ্ডবস্তদা ॥১৩॥

তদা (তখন) পাণ্ডবঃ (অর্জ্জুন) তত্র (সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রেই) দেবদেবস্য (দেবগণের ও দেবতা শ্রীকৃষ্ণের) শরীরে (দেহে) অনেকধা (নানাভাবে) প্রবিভক্তম্ (পৃথক্ পৃথক্ রূপে অবস্থিত) কৃৎস্নং (সমগ্র) জগৎ (ব্রহ্মাণ্ড) একস্থং (একদেশে অবস্থিত) অপশ্যৎ (দেখিতে পাইলেন) ॥১৩॥

তখন অর্জ্জুন সেই যুদ্ধস্থলেই দেবদেব শ্রীকৃষ্ণের দেহে অনেকপ্রকারে ও পৃথক্­রূপে অবস্থিত সমস্ত বিশ্বকে একস্থানেই দেখিতে পাইলেন ॥১৩॥

ততঃ স বিস্ময়াবিষ্টো হৃষ্টরোমা ধনঞ্জয়ঃ ।
প্রণম্য শিরসা দেবং কৃতাঞ্জলিরভাষত ॥১৪॥

ততঃ (তদনন্তর) সঃ ধনঞ্জয়ঃ (সেই অর্জ্জুন) বিস্ময়াবিষ্টঃ (বিস্ময়ে অভিভূত) হৃষ্টরোমাঃ [সন্] (ও রোমাঞ্চিত দেহ হইয়া) শিরসা (অবনত মস্তকে) [তং] দেবং (সেই দেবতা শ্রীকৃষ্ণকে) প্রণম্য (প্রণাম করিয়া) কৃতাঞ্জলিঃ (করযোড়ে) অভাষত (বলিতে লাগিলেন) ॥১৪॥

এবম্প্রকার রূপ দর্শন করিয়া সেই অর্জ্জুন বিস্ময়ান্বিত ও পুলকিত দেহ হইয়া সেই দেবদেব শ্রীকৃষ্ণকে মস্তকদ্বারা প্রণাম করিয়া অঞ্জলিবন্ধন পূর্ব্বক বলিতে লাগিলেন ॥১৪॥

অর্জ্জুন উবাচ—
পশ্যামি দেবাংস্তব দেব দেহে
সর্ব্বাংস্তথা ভূতবিশেষসঙ্ঘান্ ।
ব্রহ্মাণমীশং কমলাসনস্থম্
ঋষীংশ্চ সর্ব্বানুরগাংশ্চ দিব্যান্ ॥১৫॥

অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] দেব ! (হে দেব !) তব (আপনার) দেহে (শরীরে) সর্ব্বান্ (সকল) দেবান্ (দেবতাগণকে) তথা (এবং) ভূতবিশেষসঙ্ঘান্ (জরায়ুজাদি জীবসমূহকে), দিব্যান্ (দিব্য) ঋষীন্ (ঋষিগণকে), সর্ব্বান্ (সকল) উরগান্ চ (সর্পসমূহকে) ঈশং চ (এবং মহাদেবকে) কমলাসনস্থম্ (পদ্মাসন) ব্রহ্মাণম্ (ব্রহ্মাকেও) পশ্যামি (দেখিতেছি) ॥১৫॥

অর্জ্জুন কহিলেন—হে বিরাট্­রূপিন্ ! আপনার শরীরে দেবতাগণকে জরায়ুজাদি জীবগণকে, দিব্য ঋষি ও উরগগণকে, এবং মহাদেব ও পদ্মাসন সেই ব্রহ্মাকেও দেখিতেছি ॥১৫॥

অনেকবাহূদরবক্ত্রনেত্রং,
পশ্যামি ত্বাং সর্ব্বতোঽনন্তরূপম্ ।
নান্তং ন মধ্যং ন পুনস্তবাদিং,
পশ্যামি বিশ্বেশ্বর বিশ্বরূপ ॥১৬॥

[হে] বিশ্বেশ্বর ! (হে বিশ্বপতি !) [হে] বিশ্বরূপ ! (হে বিরাট্পুরুষ !) অনেকবাহূদরবক্ত্রনেত্রং (বহুবাহু, বহুউদর, বহুমুখ ও বহুনয়নবিশিষ্ট) অনন্তরূপম্ (অনন্ত রূপধারী) ত্বাং (আপনাকে) সর্ব্বতঃ (সকল দিকেই) পশ্যামি (দেখিতেছি), পুনঃ (কিন্তু) তব (আপনার) ন আদিং (না আদি), ন মধ্যং (না মধ্য) ন অন্তং (না অন্ত) পশ্যামি (দেখিতেছি, অর্থাৎ আপনার আদি, মধ্য ও অন্ত কিছুই দেখিতে পাইতেছি না) ॥১৬॥

হে বিশ্বেশ্বর ! হে বিশ্বরূপ ! বহু বাহু, বহু উদর, বহু মুখ ও বহু নেত্রবিশিষ্ট অনন্তরূপী আপনাকে সর্ব্বত্রই দেখিতেছি, কিন্তু আপনার আদি, মধ্য ও অন্ত কিছুই দেখিতে পাইতেছি না ॥১৬॥

কিরীটিনং গদিনং চক্রিণঞ্চ
তেজোরাশিং সর্ব্বতো দীপ্তিমন্তম্ ।
পশ্যামি ত্বাং দুর্নিরীক্ষ্যং সমন্তাদ্
দীপ্তানলার্কদ্যুতিমপ্রমেয়ম্ ॥১৭॥

কিরীটিনং (মুকুটধারী) গদিনং (গদাহস্ত) চক্রিণং চ (ও চক্রধারী), সর্ব্বতঃ (সর্ব্বত্র) দীপ্তিমন্তম্ (প্রকাশমান) তেজোরাশিং (তেজঃপুঞ্জস্বরূপ) দীপ্তনলার্কদ্যুতিম্ (প্রদীপ্ত অগ্নি ও সূর্য্যের ন্যায় প্রভাবিশিষ্ট) [অতঃ] (অতএব) দুর্নিরীক্ষ্যং (দুর্দ্দর্শ) অপ্রমেয়ম্ (ও অনিরূপণীয় স্বরূপ) ত্বাং (আপনাকে) সমন্তাৎ (সকলদিকেই) পশ্যামি (দেখিতেছি) ॥১৭॥

মুকুটশোভিত, গদাধারী ও চক্রধারী, সকলদিকেই প্রকাশমান তেজঃপুঞ্জস্বরূপ, প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ও সূর্য্যের ন্যায় প্রভাযুক্ত অতএব দুর্দ্দর্শনীয় ও কল্পনাতীত স্বরূপ আপনাকে সর্ব্বত্রই দেখিতে পাইতেছি ॥১৭॥

ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং,
ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ ।
ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্ম্মগোপ্তা,
সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে ॥১৮॥

ত্বম্ (আপনি) বেদিতব্যং (বেদবেদ্য) পরমং অক্ষরং (পরমব্রহ্মস্বরূপ) ত্বম্ (আপনি) অস্য (এই) বিশ্বস্য (বিশ্বের) পরং (একমাত্র) নিধানম্ (আকর), ত্বম্ (আপনি) অব্যয়ঃ (অবিনাশী) শাশ্বতধর্ম্মগোপ্তো (বেদোক্ত নিত্য ধর্ম্মের পালক) ত্বং (আপনি) সনাতনঃ (সনাতন) পুরুষঃ (পুরুষ) [ইতি] (ইহা) মে (আমার) মতঃ (অভিমত) ॥১৮॥

আপনি বেদবেদ্য পরমব্রহ্মস্বরূপ, আপনি এই জগতের একমাত্র আকর, আপনিই অবিনাশী বেদোক্ত সনাতনধর্ম্মের পালক এবং আপনিই সনাতন পুরুষ, ইহাই আমার আভিমত ॥১৮॥

অনাদি-মধ্যান্তমনন্তবীর্য্যম্
অনন্তবাহুং শশিসূর্য্যনেত্রম্ ।
পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্ত্রং,
স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপন্তম্ ॥১৯॥

অনাদিমধ্যান্তম্ (আদি, মধ্য ও অন্তরহিত), অনন্তবীর্য্যং (অসীম শক্তিশালী), অনন্তবাহুং (অসংখ্য হস্তবিশিষ্ট), শশি-সূর্য্যনেত্রম্ (চন্দ্র ও সূর্য্যরূপ নয়নযুক্ত), দীপ্তহুতাশবক্ত্রং (প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতুল্য মুখবিশিষ্ট), স্বতেজসা (নিজ তেজের দ্বারা) ইদং (এই) বিশ্বম্ (বিশ্বকে) তপন্তম্ (সন্তাপনকারী) ত্বাং (আপনাকে) [অহং] (আমি) পশ্যামি (দেখিতেছি) ॥১৯॥

আদি, মধ্য ও অন্তহীন, অসীম শক্তিশালী, অসংখ্যহস্তযুক্ত, চন্দ্র ও সূর্য্যতুল্য চক্ষুবিশিষ্ট, প্রজ্জ্বলিত হুতাশনসদৃশ বদনমণ্ডিত এবং নিজের তেজের দ্বারা এই ব্রহ্মাণ্ডকে সন্তপ্তকারী স্বরূপে আমি আপনাকে দেখিতে পাইতেছি ॥১৯॥

দ্যাবাপৃথিব্যোরিদমন্তরং হি,
ব্যাপ্তং ত্বয়ৈকেন দিশশ্চ সর্ব্বাঃ ।
দৃষ্ট্বাদ্ভুতং রূপমিদং তবোগ্রং,
লোকত্রয়ং প্রব্যথিতং মহাত্মন্ ॥২০॥

দ্যাবাপৃথিব্যোঃ (স্বর্গ ও পৃথিবীর) ইদম্ (এই) অন্তরং (মধ্যস্থল অন্তরীক্ষকে) সর্ব্বাঃ দিশঃ চ (ও দিকসমূহকে) একেন হি (একাই) ত্বয়া (আপনি) ব্যাপ্তং (পরিব্যাপ্ত করিয়াছেন) । [হে] মহাত্মন্ ! (হে বিরাটপুরুষ !) তব (আপনার) ইদং (এই) অদ্ভুতং (আশ্চর্য্য) উগ্রং(ও ভয়ানক) রূপম্ (রূপ) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) লোকত্রয়ং (ত্রিলোকস্থ জীবমাত্রেই) প্রব্যথিতং (অতিশয় ভীত হইতেছে দেখিতেছি) ॥২০॥

স্বর্গ ও মর্ত্ত্যের এই মধ্যবর্ত্তীস্থান অন্তরীক্ষ ও দিক্ সমূহকে আপনি একাই ব্যাপিয়া রহিয়াছেন, হে বিশ্বরূপ ! আপনার আশ্চর্য্যজনক ও ভয়ানক এই রূপ দেখিয়া ত্রিলোকস্থিত সকলেই অত্যন্ত ভীত হইতেছে ॥১০॥

অমী হি ত্বাং সুরসঙ্ঘা বিশন্তি,
কেচিদ্ভীতাঃ প্রাঞ্জলয়ো গৃণন্তি ।
স্বস্তীত্যুক্ত্বা মহর্ষিসিদ্ধসঙ্ঘাঃ,
স্তুবন্তি ত্বাং স্তুতিভিঃ পুষ্কলাভিঃ ॥২১॥

হি (যেহেতু) অমী (এই সকল) সুরসঙ্ঘাঃ (দেবতাগণ) ত্বাং (আপনাতে) বিশন্তি (প্রবেশ করিতেছেন), কেচিৎ (কেহ কেহ) ভীতাঃ [সন্তঃ] (ভীত হইয়া) প্রাঞ্জলয়ঃ (কৃতাঞ্জলিপুটে) গৃণন্তি (স্তুতি করিতেছেন), মহর্ষিসিদ্ধসঙ্ঘাঃ (মহর্ষিগণ ও সিদ্ধগণ) স্বস্তি ইতি উক্ত্বা (‘বিশ্বের মঙ্গল হউক’ এই বলিয়া) পুষ্কলাভিঃ (উত্তম) স্তুতিভিঃ (স্তুতিবাক্য সমূহের দ্বারা) ত্বাং (আপনাকে) স্তুবন্তি (স্তুতি করিতেছেন) ॥২১॥

যেহেতু এই সকল দেবতাগণ আপনাতে প্রবেশ করিতেছেন, কেহ কেহ ভীত হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে স্তব করিতেছেন । মহর্ষিগণ ও সিদ্ধগণ ‘বিশ্বের মঙ্গল হউক’ এইরূপ বলিয়া উত্তম স্তুতিপূর্ণ বাক্য সমূহের দ্বারা আপনাকে স্তুতি করিতেছেন ॥২১॥

রুদ্রাদিত্যা বসবো যে চ সাধ্যা,
বিশ্বেঽশ্বিনৌ মরুতশ্চোষ্মপাশ্চ ।
গন্ধর্ব্বযক্ষাসুরসিদ্ধসঙ্ঘা,
বীক্ষন্তে ত্বাং বিস্মিতাশ্চৈব সর্ব্বে ॥২২॥

রুদ্রাদিত্যাঃ (রুদ্রগণ ও আদিত্যগণ), বসবঃ (বসুগণ) যে চ (আর যাঁহারা) সাধ্যাঃ (সাধ্যগণ), বিশ্বে (বিশ্বদেবগণ) অশ্বিনৌ (অশ্বিনীকুমারদ্বয়), মরুতঃ (বায়ু দেবতাগণ) উষ্মপাঃ চ (ও পিতৃদেবতাগণ) গন্ধর্ব্বযক্ষাসুরসিদ্ধসঙ্ঘাঃ চ (এবং গন্ধর্ব্ব, যক্ষ, অসুর ও সিদ্ধগণ) [তে] (তাঁহারা) সর্ব্বে এব (সকলেই) বিস্মিতাঃ [সন্তঃ] (বিস্মিত হইয়া) ত্বাং (আপনাকে) বীক্ষন্তে (দর্শন করিতেছেন) ॥২২॥

রুদ্রগণ, আদিত্যগণ, বসুগণ, এবং যাঁহারা সাধ্য, বিশ্বদেব, অশ্বিনীকুমার, পবনদেব ও পিতৃদেব, এবং গন্ধর্ব্ব, যক্ষ, অসুর ও সিদ্ধ তাঁহারা সকলেই আপনাকে বিস্মিত হইয়া দর্শন করিতেছেন ॥২২॥

রূপং মহত্তে বহুবক্ত্রনেত্রং,
মহাবাহো বহুবাহূরুপাদম্ ।
বহূদরং বহুদংষ্ট্রাকরালং,
দৃষ্ট্বা লোকাঃ প্রব্যথিতাস্তথাহম্ ॥২৩॥

[হে] মহাবাহো ! (হে মহাবীর কৃষ্ণ !) তে (আপনার) বহুবক্ত্রনেত্রং (বহুমুখ ও বহুনয়ন যুক্ত), বহুবাহূরুপাদম্ (বহু বাহু, বহু উরু ও বহুচরণবিশিষ্ট), বহূদরং (অনেক উদর বিশিষ্ট) বহুদংষ্ট্রাকরালং (বহুদশনদ্বারা অতিভীষণ), মহৎ (বিশাল) রূপং (মূর্ত্তি) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) লোকাঃ (লোক সকল) তথা অহম্ (এবং আমি) প্রব্যথিতাঃ (সকলেই অত্যন্ত ভীত হইয়াছি) ॥২৩॥

হে মহাবাহো ! আপনার বহু মুখ ও বহু নেত্রযুক্ত, বহু বাহু, বহু উরু, বহু চরণ, বহু উদর ও বহু দংষ্ট্রাবিশিষ্ট এই ভয়ানক বিশালরূপ দেখিয়া লোকসমূহ ও আমি অতিশয় ভীত হইয়াছি ॥২৩॥

নভস্পৃশং দীপ্তমনেকবর্ণং,
ব্যাত্তাননং দীপ্তবিশালনেত্রম্ ।
দৃষ্ট্বা হি ত্বাং প্রব্যথিতান্তরাত্মা,
ধৃতিং ন বিন্দামি শমঞ্চ বিষ্ণো ॥২৪॥

[হে] বিষ্ণো ! (হে বিশ্বব্যাপিন্ !) নভস্পৃশং (আকাশস্পর্শী) দীপ্তম্ (তেজোযুক্ত) অনেকবর্ণং (নানা বর্ণ বিশিষ্ট) ব্যাত্তাননং (ব্যাদিতমুখ) দীপ্তবিশালনেত্রম্ (এবং জলন্ত ও প্রকাণ্ড চক্ষুবিশিষ্ট) ত্বাং (আপনাকে) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) প্রব্যথিতান্তরাত্মা (অতীব ভয়কাতর চিত্ত) [অহং] (আমি) হি (কোনক্রমে) ধৃতিং (ধৈর্য্য) শমং চ (ও শান্তি) ন বিন্দামি (লাভ করিতে পারিতেছি না) ॥২৪॥

হে বিশ্বরূপ ! আকাশস্পর্শী, তেজময়, বিচিত্রবর্ণ বিশিষ্ট বিস্ফারিতবদন ও জলন্ত বিশাল চক্ষুবিশিষ্ট—আপনাকে দর্শন করিয়া আমার অন্তরাত্মা অতিশয় ভয়বিহ্বল, আমি কোনক্রমেই ধৈর্য্য ও শান্তি লাভ করিতে পারিতেছি না ॥২৪॥

দংষ্ট্রাকরালানি চ তে মুখানি,
দৃষ্ট্বৈব কালানলসন্নিভানি ।
দিশো ন জানে ন লভে চ শর্ম্ম,
প্রসীদ দেবেশ জগন্নিবাস ॥২৫॥

তে (আপনার) দংষ্ট্রাকরালানি (দশন সমূহের দ্বারা ভীষণ) কালানলসন্নিভানি চ (এবং প্রলয়কালীন হুতাসন সদৃশ) মুখানি (মুখ সকল) দৃষ্ট্বা এব (দেখিয়াই) [অহং](আমি) দিশঃ (দিক্­সকল) ন জানে (জানিতে পারিতেছি না) শর্ম্ম চ (এবং সুখও) ন লভে (পাইতেছি না), [হে] দেবেশ ! (হে দেবদেব !) [হে] জগন্নিবাস ! (হে জগদাশ্রয় !) [ত্বং] (তুমি) প্রসীদ (প্রসন্ন হও) ॥২৫॥

দশন-ভীষণ ও প্রলয় হুতাসন তুল্য আপনার বদনমণ্ডল সমূহ দর্শন করিয়াই আমি দিক্-বিভ্রান্ত হইয়াছি, হে সর্ব্বদেবেশ্বর ! হে জগদাশ্রয় ! আপনি প্রসন্ন হউন ॥২৫॥

অমী চ ত্বাং ধৃতরাষ্ট্রস্য পুত্ত্রাঃ,
সর্ব্বে সহৈবাবনিপালসঙ্ঘৈঃ ।
ভীষ্মো দ্রোণঃ সূতপুত্ত্রস্তথাসৌ,
সহাস্মদীয়ৈরপি যোধমুখ্যৈঃ ॥২৬॥
বক্ত্রাণি তে ত্বরমাণা বিশন্তি,
দংষ্ট্রাকরালানি ভয়ানকানি ।
কেচিদ্বিলগ্না দশনান্তরেষু,
সংদৃশ্যন্তে চূর্ণিতৈরুত্তমাঙ্গৈঃ ॥২৭॥

অবনিপালসঙ্ঘৈঃ সহ এব (নৃপতিগণের সহিতই) অমী চ সর্ব্বে (এই সমস্ত) ধৃতরাষ্ট্রস্য (ধৃতরাষ্ট্রের) পুত্ত্রাঃ (পুত্ত্রগণ) তথা (এবং) ভীষ্মঃ (ভীষ্ম), দ্রোণঃ (দ্রোণ), অসৌ সূতপুত্ত্রঃ (এই কর্ণ) অস্মদীয়ৈঃ (আমাদের পক্ষীয়) যোধমুখ্যৈঃ (প্রধান প্রধান যোদ্ধাদিগের) সহ অপি (সহিতই) ত্বরমাণাঃ (ধাবিত হইয়া) তে (আপনার) দ্রংষ্ট্রাকরালানি (দশন সমূহের দ্বারা বিকট) ভয়ানকানি (ও ভয়ঙ্কর) বক্ত্রাণি (মুখ সমূহের মধ্যে) বিশন্তি (প্রবেশ করিতেছেন) । কেচিৎ (কেহ কেহ) চুর্ণিতৈঃ (চুর্ণিত) উত্তমাঙ্গৈঃ (মস্তক সহিত) দশনান্তরেষু (দন্তসমূহের সন্ধিস্থলে) বিলগ্নাঃ (লীনরূপে) সংদৃশ্যন্তে (সম্যক্ দেখা যাইতেছে) ॥২৬–২৭॥

ঐ ধৃতরাষ্ট্রপুত্ত্রগণ, সমস্ত রাজগণের সহিত এবং ভীষ্ম, দ্রোণ, ঐ কর্ণ—আমাদেরও প্রধান প্রধান যোদ্ধাগণকে সঙ্গে করিয়া মহাবেগে আপনার দন্ত-বিকট ও ভয়ানক মুখমণ্ডল মধ্যে প্রবেশ করিতেছেন ; কেহ কেহ চূর্ণিত মস্তকের সহিত আপনার দন্তের অন্তরে লগ্ন হইয়া লক্ষিত হইতেছেন ॥২৬–২৭॥

যথা নদীনাং বহবোঽম্বুবেগাঃ
সমুদ্রমেবাতিমুখা দ্রবন্তি ।
তথা তবামী নরলোকবীরা,
বিশন্তি বক্ত্রাণ্যভিতো জ্বলন্তি ॥২৮॥

যথা (যেরূপ) নদীনাং(নদীসমূহের) বহবঃ (বহু) অম্বুবেগাঃ (জলপ্রবাহ) অভিমুখাঃ [সন্তঃ] (সমুদ্রের দিকে ধাবিত হইয়া) সমুদ্রম্ এব (সমুদ্রেই) দ্রবন্তি (প্রবেশ করে ), তথা (তদ্রূপ) অমী (এই সকল) নরলোকবীরাঃ (নরলোকের বীর পুরুষগণ) তব (আপনার) অভিতঃ (চতুর্দ্দিকে) জ্বলন্তি (দীপ্যমান) বক্ত্রাণি (মুখ সমূহে) বিশন্তি (প্রবেশ করিতেছেন) ॥২৮॥

যেমন নদী সমূহের পৃথক্ পৃথক্ বহু জলপ্রবাহ সমূহ সমুদ্রের অভিমুখে ধাবিত হইয়া সেই সমুদ্রেই প্রবেশ করে, সেইরূপ এই মর্ত্ত্যবাসী বীরপুরুষগণ সর্ব্বতো দীপ্তিমান্ আপনার মুখবিবরে প্রবেশ করিতেছে ॥২৮॥

যথা প্রদীপ্তং জ্বলনং পতঙ্গা,
বিশন্তি নাশায় সমৃদ্ধবেগাঃ ।
তথৈব নাশায় বিশন্তি লোকাস্
তবাপি বক্ত্রাণি সমৃদ্ধবেগাঃ ॥২৯॥

যথা (যেমন) পতঙ্গাঃ (পতঙ্গসমূহ) সমৃদ্ধবেগাঃ (প্রবল বেগে) নাশায় (মরণের জন্য) প্রদীপ্তং (প্রজ্জ্বলিত) জ্বলনং (অগ্নিতে) বিশন্তি (প্রবেশ করে), তথা (সেই প্রকার) লোকাঃ অপি (লোক সকলও) নাশায় এব (মরণের জন্যই) সমৃদ্ধবেগাঃ [সন্তঃ] (অতি বেগবান্ হইয়া) তব (আপনার) বক্ত্রাণি (মুখ সমূহের মধ্যে) বিশন্তি (প্রবিষ্ট হইতেছে) ॥২৯॥

যেরূপ পতঙ্গগণ প্রবলবেগে মরণের জন্য প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে প্রবেশ করে, সেইরূপ এই লোকসমূহও মরণের জন্যই অত্যন্ত বেগবান্ হইয়া আপনার মুখগহ্বর মধ্যে প্রবেশ করিতেছে ॥২৯॥

লেলিহ্যসে গ্রসমানঃ সমন্তাল্
লোকান্ সমগ্রান্ বদনৈর্জ্বলদ্ভিঃ ।
তেজোভিরাপূর্য্য জগৎ সমগ্রং,
ভাসস্তবোগ্রাঃ প্রতপন্তি বিষ্ণো ॥৩০॥

[হে] বিষ্ণো ! (হে বিশ্বব্যাপিন্ !) [ত্বং] (আপনি) গ্রসমানঃ [সন্] (গ্রাস করিতে উদ্যত হইয়া) সমগ্রান্ (এই সমস্ত) লোকান্ (লোকদিগকে) জ্বলন্তিঃ (দীপ্তিমান) বদনৈঃ (মুখ সমূহ দ্বারা) সমন্তাৎ (চতুর্দ্দিকে) লেলিহ্যসে (সর্ব্বতোভাবে ভক্ষণ করিতেছেন) ; তব (আপনার) উগ্রাঃ (তীব্র) ভাসঃ (দীপ্তিসমূহ) তেজোভিঃ (তেজোবিস্ফুরণসমূহ দ্বারা) সমগ্রং (সমস্ত) জগৎ (বিশ্বকে) আপূর্য্য (পরিপূরিত করিয়া) প্রতপন্তি (সন্তপ্ত করিতেছে) ॥৩০॥

হে বিরাট্পুরুষ ! আপনি এই সমস্ত লোকদিগকে গ্রাস করিতে সমুদ্যত হইয়া প্রদীপ্ত মুখ সমূহের দ্বারা প্রচুরভাবে ভক্ষণ করিতেছেন ; আর আপনার ভীষণ অঙ্গকান্তি সমূহ তেজোরাশি দ্বারা সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডকে ব্যাপিয়া সন্তাপিত করিতেছে ॥৩০॥

আখ্যাহি মে কো ভবানুগ্ররূপো,
নমোঽস্তু তে দেববর প্রসীদ ।
বিজ্ঞাতুমিচ্ছামি ভবন্তমাদ্যং,
ন হি প্রজানামি তব প্রবৃত্তিম্ ॥৩১॥

উগ্ররূপঃ (ভীষণ মূর্ত্তি) ভবান্ (আপনি) কঃ (কে) [তৎ] (তাহা) মে (আমাকে) অখ্যাহি (বলুন) ; তে (আপনাকে) নমঃ অস্তু (নমস্কার করি) [হে] দেববর ! (হে দেবশ্রেষ্ঠ !) [ত্বাং] (আপনি) প্রসীদ (প্রসন্ন হউন) । আদ্যং (আদি পুরুষ) ভবন্তম্ (আপনাকে) বিজ্ঞাতুম্ (বিশেষভাবে জানিতে) ইচ্ছামি (ইচ্ছা করি), হি (যেহেতু) তব (আপনার) প্রবৃত্তিম্ (চেষ্টা) ন প্রজানামি (সম্যক্ জানিতে পারিতেছি না) ॥৩১॥

ভীষণমূর্ত্তি আপনি কে, তাহা আমাকে বলুন ; আপনাকে নমস্কার করি, হে দেববর ! আপনি প্রসন্ন হউন । আদি পুরুষ আপনাকে বিশেষভাবে জানিবার জন্য ইচ্ছা করি, যেহেতু অপনার কার্য্যের উদ্দেশ্য ভাল বুঝিতেছি না ॥৩১॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
কালোঽস্মি লোকক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধো,
লোকান্ সমাহর্ত্তুমিহ প্রবৃত্তঃ ।
ঋতেঽপি ত্বাং ন ভবিষ্যন্তি সর্ব্বে,
যেঽবস্থিতাঃ প্রত্যনীকেষু যোধাঃ ॥৩২॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ কহিলেন) [অহং] (আমি) লোকক্ষয়কৃৎ (লোক সংহারক) প্রবৃদ্ধঃ (অত্যুগ্র) কালঃ অস্মি (কাল) ; ইহ (এই জগতে) লোকান্ (জীব সকলকে) সমাহর্ত্তুম্ (সংহার করিতে) প্রবৃত্তঃ (প্রবৃত্ত হইয়াছি) । ত্বাং ঋতে অপি (তুমি বধ না করিলেও) প্রত্যনীকেষু (প্রতিপক্ষীয় সৈন্য মধ্যে) যে যোধাঃ (যে সকল যুদ্ধার্থী বীরগণ) অবস্থিতাঃ (অবস্থান করিতেছেন), [তে] (তাহারা) সর্ব্বে অপি (সকলেই) ন ভবিষ্যন্তি (বাঁচিবে না) ॥৩২॥

শ্রীভগবান্ বলিলেন—আমি লোকক্ষয়কারী প্রবল কাল ; এখানে লোকসমূহকে গ্রাস করিবার নিমিত্ত প্রবৃত্ত হইয়াছি । বিপক্ষ সৈন্য মধ্যে যে সকল যোদ্ধা রহিয়াছেন, তুমি বধ না করিলেও তাহারা কেহই বাঁচিবে না ॥৩২॥

তস্মাত্ত্বমুত্তিষ্ঠ যশো লভস্ব,
জিত্বা শত্রূন্ ভুঙ্ক্ষ্ব রাজ্যং সমৃদ্ধম্ ।
ময়ৈবৈতে নিহতাঃ পূর্ব্বমেব,
নিমিত্তমাত্রং ভব সব্যসাচিন্ ॥৩৩॥

তস্মাৎ (অতএব) ত্বম্ (তুমি) উত্তিষ্ঠ (যুদ্ধার্থে উত্থিত হও) যশঃ (কীর্ত্তি) লভস্ব (লাভ কর) শত্রূন্ (শত্রুদিগকে) জিত্বা (জয় করিয়া) সমৃদ্ধম্ (নিষ্কণ্টক) রাজ্যং (রাজ্য) ভুঙ্ক্ষ্ব (ভোগ কর) । এতে (এই সকল বীরগণ) ময়া এব (আমা কর্ত্তৃকই) পূর্ব্বম্ এব (বহু পূর্ব্বেই) নিহতাঃ (নিহত হইয়াছে), [হে] সব্যসাচিন্ ! (হে বাম হস্তদ্বারা শরসন্ধানকারী অর্জ্জুন !) [ত্বং] (তুমি) নিমিত্তমাত্রং (নিমিত্তমাত্র) ভব (হও) ॥৩৩॥

অতএব তুমি যুদ্ধনিমিত্ত দণ্ডায়মান হও, যশঃ লাভ কর, শত্রু সকলকে জয় করিয়া সমৃদ্ধিশালী রাজ্য ভোগ কর । এই সকল বীরগণকে পূর্ব্বেই আমি বধ করিয়া রাখিয়াছি । হে সব্যসাচিন্ ! তুমি কেবল নিমিত্তভাগী হও ॥৩৩॥

দ্রোণঞ্চ ভীষ্মঞ্চ জয়দ্রথঞ্চ,
কর্ণং তথান্যানপি যোধবীরান্ ।
ময়া হতাংস্ত্বং জহি মা ব্যথিষ্ঠা,
যুধ্যস্ব জেতাসি রণে সপত্নান্ ॥৩৪॥

ময়া (আমা কর্ত্তৃক) হতান্ (পূর্ব্বনিহত) দ্রোণং চ (দ্রোণ) ভীষ্মং চ (ভীষ্ম) জয়দ্রথং (জয়দ্রথ) কর্ণং চ (ও কর্ণ) তথা (এবং) অন্যান্ (অন্যান্য) যোধবীরান্ অপি (যুদ্ধার্থী বীরগণকেও) ত্বং (তুমি) জহি (বধ কর); মা ব্যথিষ্ঠাঃ (কাতর হইও না) যুধ্যস্ব (যুদ্ধ কর), রণে (যুদ্ধে) সপত্নান্ (শত্রুগণকে) জেতা অসি (জয় করিতে পারিবে)॥৩৪॥

আমা কর্ত্তৃক পূর্ব্বেই নিহত দ্রোণাচার্য্য, ভীষ্ম, জয়দ্রথ ও কর্ণ, এবং অন্যান্য যোদ্ধৃগণকেও তুমি (আবার) বধ কর ; কাতর হইও না, যুদ্ধ কর, যুদ্ধে শত্রুগণকে নিশ্চয়ই জয় করিতে পারিবে ॥৩৪॥

সঞ্জয় উবাচ—
এতচ্ছ্রত্বা বচনং কেশবস্য,
কৃতাঞ্জলির্বেপমানঃ কিরীটী ।
নমস্কৃত্বা ভূয় এবাহ কৃষ্ণং,
সগদ্গদং ভীতভীতঃ প্রণম্য ॥৩৫॥

সঞ্জয়ঃ উবাচ (সঞ্জয় বলিলেন) কেশবস্য (শ্রীকৃষ্ণের) এতৎ (এই) বচনং (বাক্য) শ্রুত্বা (শুনিয়া) বেপমানঃ (কম্পমান) কিরীটী (অর্জ্জুন) কৃতাঞ্জলিঃ [সন্] (কৃতাঞ্জলি হইয়া) নমস্কৃতা (নমস্কার পূর্বক) ভীতভীতঃ এব (অতি ভীত চিত্তেই) ভূয়ঃ (পুনরায়) প্রণম্য (প্রণাম করিয়া) সগদ্­গদং (গদ্­গদস্বরে) কৃষ্ণং (শ্রীকৃষ্ণকে) আহ (বলিলেন) ॥৩৫॥

সঞ্জয় কহিলেন—কেশবের এইসকল বাক্য শ্রবণ করিয়া কম্পিত শরীরে অর্জ্জুন কৃতাঞ্জলি পূর্ব্বক নমস্কার করিয়া অতি ভীত চিত্তেই শ্রীকৃষ্ণকে পুনরায় প্রণতিপূর্ব্বক গদ্­গদ বাক্যে বলিতে লাগিলেন ॥৩৫॥

অর্জ্জুন উবাচ—
স্থানে হৃষীকেশ তব প্রকীর্ত্ত্যা,
জগৎ প্রহৃষ্যত্যনুরজ্যতে চ ।
রক্ষাংসি ভীতানি দিশো দ্রবন্তি,
সর্ব্বে নমস্যন্তি চ সিদ্ধসঙ্ঘাঃ ॥৩৬॥

অর্জ্জুন উবাচ (অর্জ্জুন কহিলেন) [হে] হৃষীকেশ ! (হে ইন্দ্রিয়াধিপতে !) তব (আপনার) প্রকীর্ত্ত্যা (মাহাত্মা সংকীর্ত্তন দ্বারা) জগৎ (বিশ্ব) প্রহৃষ্যতি (প্রহৃষ্ট হইতেছে) অনুরজ্যতে চ (এবং অনুরক্ত হইতেছে), রক্ষাংসি (রাক্ষসগণ) ভীতানি [সন্তঃ] (ভীত হইয়া) দিশঃ (চতুর্দ্দিকে) দ্রবন্তি (পলায়ন করিতেছে) সর্ব্বে সিদ্ধসঙ্ঘাঃ চ (এবং সমস্ত সিদ্ধগণ) নমস্যন্তি (নমস্কার করিতেছেন) [এতচ্চ] (এই সমস্তই] স্থানে (যুক্তিযুক্ত) ॥৩৬॥

অর্জ্জুন বলিলেন—হে হৃষীকেশ ! আপনার যশঃকীর্ত্তন দ্বারা জগৎ পরমানন্দ লাভ করে ও আপনাতে অনুরাগ প্রাপ্ত হয় । রাক্ষসগণ ভীত হইয়া চারিদিকে পলায়ন করে এবং সিদ্ধ সকল প্রণত হইয়া থাকেন, এই সমস্তই যুক্তিযুক্ত ॥৩৬॥

কস্মাচ্চ তে ন নমেরন্মহাত্মন্,
গরীয়সে ব্রহ্মণোঽপ্যাদিকর্ত্রে ।
অনন্ত দেবেশ জগন্নিবাস,
ত্বমক্ষরং সদসত্তৎপরং যৎ ॥৩৭॥

[হে] মহাত্মন্ ! (হে বিরাট্ পুরুষ !) [হে] অনন্ত ! (হে সর্ব্বস্বরূপ !) [হে] দেবেশ ! (হে দেবদেব !) [হে] জগন্নিবাস ! (হে জগদাধার !) ব্রহ্মণঃ অপি (ব্রহ্মারও) গরীয়সে (পূজ্য) আদিকর্ত্রে চ (আদি কর্ত্তা অর্থাৎ স্রষ্টা) তে (আপনাকে) [সর্ব্বে] (সকলে) কস্মাৎ (কেন) ন নমেরন্ (নমস্কার করিবেন না ?) সৎ (কার্য্য) অসৎ (কারণ) অক্ষরং (ব্রহ্ম) তৎপরম্ (এবং তাহা হইতেও উৎকৃষ্ট) যৎ (যাহা) [তদপি] (তাহাও) ত্বম্ (আপনি) ॥৩৭॥

হে মহাত্মন্ ! হে অনন্ত ! হে দেবেশ ! হে জগন্নিবাস ! ব্রহ্মারও পূজ্য এবং স্রষ্টা আপনাকে তাঁহারা সকলে কেনই বা নমস্কার না করিবেন ? কার্য্য বা কারণ যে ব্রহ্মতত্ত্ব তাহা হইতেও শ্রেষ্ঠ আপনি ॥৩৭॥

ত্বমাদিদেবঃ পুরুষঃ পুরাণস্
ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ ।
বেত্তাসি বেদ্যঞ্চ পরঞ্চ ধাম,
ত্বয়া ততং বিশ্বমনন্তরূপ ॥৩৮॥

ত্বম্ (আপনি) আদিদেবঃ (আদি দেবতা), পুরাণঃ পুরুষঃ (সনাতন পুরুষ), ত্বম্ (আপনি) অস্য (এই) বিশ্বস্য (বিশ্বের) পরং (একমাত্র) নিধানম্ (আকর স্থান), [ত্বং] (আপনি) বেত্তা (জ্ঞাতা) বেদ্যং চ (ও জ্ঞেয়) পরং ধাম চ অসি (এবং গুণাতীত স্বরূপ) [হে] অনন্তরূপ ! (হে অনন্তরূপ !) ত্বয়া (আপনা কর্ত্তৃকই) বিশ্বম্ (জগৎ) ততং (ব্যাপ্ত রহিয়াছে) ॥৩৮॥

আপনি সর্ব্বদেবের আদি চিরন্তন পুরুষ, আপনিই এই বিশ্বের একমাত্র আশ্রয় স্থান, আপনিই জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় এবং গুণাতীত স্বরূপ । হে অনন্তরূপ আপনা কর্ত্তৃকই এই বিশ্ব ব্যাপ্ত রহিয়াছে ॥৩৮॥

বায়ুর্যমোঽগ্নিবরুণঃ শশাঙ্কঃ,
প্রজাপতিস্ত্বং প্রপিতামহশ্চ ।
নমো নমস্তেঽস্তু সহস্রকৃত্বঃ,
পুনশ্চ ভূয়োঽপি নমো নমস্তে ॥৩৯॥

ত্বং (আপনি) বায়ুঃ (বায়ু), যমঃ (যম), অগ্নিঃ (অগ্নি), বরুণঃ (বরুণ), শশাঙ্কঃ (চন্দ্র), প্রজাপতিঃ (ব্রহ্মা), প্রপিতামহঃ চ (এবং ব্রহ্মারও পিতা) তে (আপনাকে) সহস্রকৃত্বঃ (সহস্র সহস্রবার) নমঃ অস্তু (নমস্কার) পুনঃ চ নমঃ (পুনরায় নমস্কার) ভূয়ঃ অপি (আবারও) তে (আপনাকে) নমঃ নমঃ (নমস্কার নমস্কার) ॥৩৯॥

আপনি বায়ু, যম, অগ্নি, বরুণ, চন্দ্র, লোকপিতামহ ব্রহ্মা এবং ব্রহ্মারও জনক । আপনাকে সহস্র সহস্রবার নমস্কার, পুনরায় নমস্কার, আবারও আপনাকে নমস্কার ॥৩৯॥

নমঃ পুরস্তাদথ পৃষ্ঠতস্তে,
নমোঽস্তু তে সর্ব্বত এব সর্ব্ব ।
অনন্তবীর্য্যামিতবিক্রমস্ত্বং,
সর্ব্বং সমাপ্নোষি ততোঽসি সর্ব্বঃ ॥৪০॥

[হে] সর্ব্ব ! (হে সর্ব্ব-স্বরূপ !) তে (আপনাকে) পূরস্তাৎ (সম্মুখে) অথ (ও) পৃষ্ঠতঃ (পশ্চাৎদিকে) নমঃ (নমস্কার), তে (আপনাকে) সর্ব্বতঃ এব (সকলদিকেই) নমঃ অস্তু (নমস্কার করি) । [হে] অনন্তবীর্য্য ! (হে অসীম শক্তিশালিন্ !) ত্বং (আপনি) অমিতবিক্রমঃ (অপরিমিত পরাক্রমশালী) সর্ব্বং (সমস্ত জগৎ) সমাপ্নোষি (সম্যক্ ব্যাপিয়া রহিয়াছেন) ততঃ (সেইহেতু) সর্ব্বঃ অসি (সর্ব্বস্বরূপ) ॥৪০॥

হে সর্ব্ব-স্বরূপ ! আপনার সম্মুখে নমস্কার, পশ্চাৎভাগে নমস্কার, আপনার সকলদিকেই নমস্কার । হে অনন্ত-বিক্রম ! আপনি অসীম-শক্তিমান্-সমগ্র জগৎকে সম্যক্­রূপে ব্যাপিয়া রহিয়াছেন বলিয়াই সর্ব্ব-স্বরূপ ॥৪০॥

সখেতি মত্বা প্রসভং যদুক্তং,
হে কৃষ্ণ হে যাদব সখেতি ।
অজানতা মহিমানং তবেদং,
ময়া প্রমাদাৎ প্রণয়েন বাপি ॥৪১॥
যচ্চাবহাসার্থমসৎকৃতোঽসি,
বিহারশয্যাসনভোজনেষু ।
একোঽথবাপ্যচ্যুত তৎসমক্ষং,
তৎ ক্ষাময়ে ত্বামহমপ্রমেয়ম্ ॥৪২॥

তব (আপনার) মহিমানং (মহিমা) ইদং চ (ও এই বিশ্বরূপের বিষয়) অজানতা (না জানিয়া) ময়া (আমা কর্ত্তৃক) প্রমাদাৎ (মোহ বশতঃ) প্রণয়েন বা অপি (অথবা প্রণয়বশতঃ) সখা ইতিমত্বা (তুমি সখা ইহা মনে করিয়া) হে কৃষ্ণ ! (হে কৃষ্ণ !) হে যাদব ! (হে যাদব !) হে সখে ! (হে সখে !) ইতি (এইরূপ) প্রসভং (হঠাং তিরস্কার পূর্ব্বক) যৎ (যাহা) উক্তং (বলা হইয়াছে), [হে] অচ্যুত ! (হে অচ্যুত !) বিহারশয্যাসনভোজনেষু (বিহার, শয়ন, উপবেশন ও আহারাদি সময়ে) একঃ (একাকী) অথবা (কিম্বা) তৎসমক্ষং (সেই বন্ধুগণের সাক্ষাতেই) অবহাসার্থম্ (পরিহাস নিমিত্ত) যৎ (যে) অসৎকৃতঃ (অসম্মানিত) অসি (হইয়াছেন), অহম্ (আমি) অপ্রমেয়ম্ (অচিন্ত্য প্রভাব বিশিষ্ট) ত্বাম্ (আপনার নিকট) তৎ (সেই সমস্ত) ক্ষাময়ে (ক্ষমা চাহিতেছি) ॥৪১–৪২॥

আপনার মহিমা ও এই বিশ্বরূপের বিষয় না জানিয়া আমি মোহবশে বা প্রণয়পূর্ব্বক সখা মনে করিয়া হে কৃষ্ণ ! হে যাদব ! হে সখে ! ইত্যাদি হটকারিভাবে যাহা বলিয়াছি ; হে অচ্যুতে ! বিবিধ ক্রীড়া, শয়ন, উপবেশন ও আহারাদি সময়ে একাকী অথবা বন্ধুগণের সাক্ষাতেই পরিহাস নিমিত্ত যে অনাদৃত হইয়াছেন, অচিন্ত্য মহিমাশালী আপনার নিকট আমি তাহার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করিতেছি ॥৪১–৪২॥

পিতাসি লোকস্য চরাচরস্য,
ত্বমস্য পূজ্যশ্চ গুরুর্গরীয়ান্ ।
ন ত্বৎসমোঽস্ত্যভধিকঃ কুতোঽন্যো,
লোকত্রয়েঽপ্যপ্রতিমপ্রভাব ॥৪৩॥

[হে] অপ্রতিমপ্রভাব ! (হে অতুলনীয় মহিমা শালিন্ !) ত্বম্ (আপনি) অস্য (এই) চরাচরস্য (স্থাবর জঙ্গমাত্মক) লোকস্য (বিশ্বের) পিতা (জনক) পূজ্যঃ (পূজনীয়) গুরুঃ (গুরু) গরীয়ান্ চ অসি (এবং তদপেক্ষাও পূজ্যতর) ; [অতঃ] (অতএব) লোকত্রয়ে (ত্রিজগতের মধ্যে) ত্বৎসমঃ অপি (আপনার সমানই) ন অস্তি (নাই) অভ্যধিকঃ (আপনা হইতে শ্রেষ্ঠ) অন্যঃ (অপর) কুতঃ (কোথা হইতে হইবে ?) ॥৪৩॥

হে অদ্বিতীয়প্রভাব ! আপনি এই চরাচর বিশ্বের পিতা, পূজনীয়, গুরু এবং তাহা হইতেও অধিক পূজ্যতর, সুতরাং ত্রিলোকের মধ্যে আপনার সমানই কেহ নাই, আপনা হইঁতে শ্রেষ্ঠ অপর কেহ কোথা হইতে থাকিবে ? ॥৪৩॥

তস্মাৎ প্রণম্য প্রণিধায় কায়ং,
প্রসাদয়ে ত্বামহমীশমীড্যম্ ।
পিতেব পুত্ত্রস্য সখেব সখ্যুঃ,
প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম্ ॥৪৪॥

[হে] দেব ! (হে দেব !) তস্মাৎ (অতএব) অহম্ (আমি) কায়ং (দেহকে) প্রণিধায় (দণ্ডবৎ ভূতলে স্থাপন করিয়া) প্রণম্য (প্রণাম পূর্ব্বক) ঈড্যম্ (বন্দনীয়) ঈশম্ (ঈশ্বর) ত্বাম্ (আপনাকে) প্রসাদয়ে (প্রসন্ন করিতেছি) । পিতা ইব (পিতা যেমন) পুত্ত্রস্য (পুত্ত্রের), সখা ইব (সখা যেমন) সখ্যুঃ (সখার), প্রিয়ঃ [ইব] (প্রিয়জন যেমন) প্রিয়ায়াঃ (প্রিয়ার) [অপরাধং সহতে] (অপরাধ ক্ষমা করেন) [তথা] (সেইরূপ) [ত্বং] (আপনি) [মম] (আমার) [অপরাধং] (অপরাধ) সোঢ়ুম্ (ক্ষমা করিতে) অর্হসি (অনুগ্রহ করুন) ॥৪৪॥

হে দেব ! সেই হেতু আমি (দণ্ডের মত) আমার দেহকে ভূতলে পাতিত করিয়া প্রণাম পূর্ব্বক পূজ্য প্রভু আপনার প্রসন্নতা প্রার্থনা করিতেছি । পিতা যেমন পুত্ত্রের, সখা যেমন সখার ও প্রিয়জন যেমন নিজ প্রিয়ার অপরাধ ক্ষমা করেন ; তদ্রূপ আপনি আমার অপরাধ অনুগ্রহপূর্ব্বক ক্ষমা করুন ॥৪৪॥

অদৃষ্টপূর্ব্বং হৃষিতোঽস্মি দৃষ্ট্বা,
ভয়েন চ প্রব্যথিতং মনো মে ।
তদেব মে দর্শয় দেব রূপং,
প্রসীদ দেবেশ জগন্নিবাস ॥৪৫॥

[হে] দেব ! (হে দেব !) অদৃষ্টপূর্ব্বং (পূর্ব্বে অদৃষ্ট) [ইদং] (আপনার এই বিশ্বরূপ) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) হৃষিতঃ অস্মি (আমি তুষ্ট হইয়াছি), মে (আমার) মনঃ (মন) ভয়েন (ভয়ে) প্রব্যথিতং চ (আবার ব্যাকুলিত হইতেছে) । [হে] দেবেশ ! (হে দেবদেব !) [হে] জগন্নিবাস ! (হে জগদাধার !) তৎ (সেই) রূপং এব (চতুর্ভুজ রূপই) মে (আমাকে) দর্শয় (দেখান) প্রসীদ (প্রসন্ন হউন) ॥৪৫॥

হে দেব! পূর্ব্বে অদৃষ্ট আপনার এই বিশ্বরূপ দেখিয়া আমি হৃষ্ট হইয়াছি বটে, কিন্তু ভয়ে আমার মন ব্যাকুল হইতেছে । অতএব হে দেবেশ ! আপনার সেই পূর্ব্ব চতুর্ভুজ রূপই আমাকে দেখান । হে জগন্নিবাস ! প্রসন্ন হউন ॥৪৫॥

কিরীটিনং গদিনং চক্রহস্তম্
ইচ্ছামি ত্বাং দ্রষ্টুমহং তথৈব ।
তেনৈব রূপেণ চতুর্ভুজেন,
সহস্রবাহো ভব বিশ্বমূর্ত্তে ॥৪৬॥

অহং (আমি) ত্বাং (আপনাকে) তথা এব (পূর্ব্বের মতই) কিরীটিনং (মুকুটধারী) গদিনং (গদাহস্ত) চক্রহস্তম্ (ও চক্রধারীরূপে) দ্রষ্টুম্ (দেখিতে) ইচ্ছামি (ইচ্ছা করি) । [হে] সহস্রবাহো ! (হে সহস্রহস্তদেব !) [হে বিশ্বমূর্ত্তে ! (হে বিশ্বরূপ !) তেন (সেই) চতুর্ভুজেন (চতুর্ভুজ) রূপেণ এব (মূর্ত্তিতেই) ভব (প্রকাশিত হউন) ॥৪৬॥

আমি আপনাকে পূর্ব্বের মতই মুকুটমস্তক, গদাধারী ও চক্রধারিরূপে দেখিতে ইচ্ছা করি । হে সহস্র বাহো ! হে বিশ্বরূপ ! সেই চতুর্ভুজ রূপেই প্রকাশিত হউন ॥৪৬॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
ময়া প্রসন্নেন তবার্জ্জুনেদং,
রূপং পরং দর্শিতমাত্মযোগাৎ ।
তেজোময়ং বিশ্বমনন্তমাদ্যং,
যন্মে ত্বদন্যেন ন দৃষ্টপূর্ব্বম্ ॥৪৭॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ কহিলেন) [হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) ময়া (আমি) প্রসন্নেন (সন্তুষ্ট হইয়া) আত্মযোগাৎ (নিজ যোগমায়া বলে) তব (তোমাকে) ইদং (এই) তেজোময়ং (তেজঃপূর্ণ) অনন্তম্ (অনন্ত) আদ্যং (আদিভূত) মে (আমার) পরং (শ্রেষ্ঠ) বিশ্বম্ (বিশ্বাত্মক) রূপং (বিরাট্­রূপ) দর্শিতম্ (দেখাইয়াছি), যৎ (যে রূপ) ত্বদন্যেন (তুমি ভিন্ন অপরকেহ) ন দৃষ্টপূর্ব্বম্ (পূর্ব্বে দেখিতে পায় নাই) ॥৪৭॥

শ্রীভগবান্ বলিলেন—হে অর্জ্জুন ! আমি তোমার প্রতি প্রসন্ন হইয়া আমার যোগমায়া শক্তিকে আশ্রয় পূর্ব্বক তেজোময়, বিশ্বব্যাপী, অনন্ত ও আদিভূত আমার এই প্রধান বিরাট্­রূপ অদ্য তোমাকে দেখাইলাম । তুমি ব্যতীত অপর কেহই পূর্ব্বে এই রূপ কখনও দেখিতে পায় নাই ॥৪৭॥

ন বেদযজ্ঞাধ্যয়নৈর্ন দানৈর্
ন চ ক্রিয়াভির্ন তপোভিরুগ্রৈঃ ।
এবং রূপঃ শক্যঅহং নৃলোকে,
দ্রষ্টুং ত্বদন্যেন কুরুপ্রবীর ॥৪৮॥

[হে] কুরুপ্রবীর ! (হে কৌরববীরশ্রেষ্ঠ !) নৃলোকে (মনুষ্যলোকে) ত্বদন্যেন (তুমি ভিন্ন ভক্তিহীন অপর কেহ) ন বেদযজ্ঞাধ্যয়নৈঃ (কি বেদবিদ্যা যজ্ঞবিদ্যার অধ্যয়ন) ন দানৈঃ (কি ভূম্যাদিদান) ন চ ক্রিয়াভিঃ উগ্রৈঃ তপোভিঃ (কি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম্ম এবং উগ্র চান্দ্রায়ণাদিব্রত ইহাদের কোনটির দ্বারাই) এবং রূপঃ (এবম্বিধ বিশ্বরূপী) অহং (আমাকে) দ্রষ্টুং (দর্শন করিতে) ন শক্যঃ (সমর্থ হয় না) ॥৪৮॥

হে কৌরবশ্রেষ্ঠ অর্জ্জুন ! এই নরলোকে বৈদিক যজ্ঞ, দান, স্বাধ্যায়, অগ্নিহোত্রাদিকর্ম্ম এবং উগ্র তপস্যা প্রভৃতিরও দর্শনাতীত বিরাট্­রূপী আমাকে তুমি ভিন্ন অপর কেহ দর্শন করিতে পারে না ॥৪৮॥

মা তে ব্যথা মা চ বিমূঢ়ভাবো,
দৃষ্ট্বা রূপং ঘোরমীদৃঙ্মমেদম্ ।
ব্যপেতভীঃ প্রীতমনাঃ পুনস্ত্বং,
তদেব মে রূপমিদং প্রপশ্য ॥৪৯॥

ঈদৃক্ (এই প্রকার) মম (আমার) ঘোরম্ (ভয়ানক) ইদম্ রূপং (এই বিশ্বরূপ) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) তে (তোমার) ব্যথা (ভয়) মা [অস্তু] (না হউক), বিমূঢ়ভাবঃ চ (এবং মোহভাব ও যেন) মা [অস্তু] (না হয়) ব্যাপেতভীঃ (ভয় শূন্য) প্রীতমনাঃ [সন্] (ও প্রসন্নচিত্ত হইয়া) ত্বং (তুমি) পুনঃ (পুনর্ব্বার) মে (আমার) ইদং (এই) তৎরূপং এব (সেই চতুর্ভুজ রূপই) প্রপশ্য (প্রকৃষ্টভাবে দেখ) ॥৪৯॥

এইপ্রকার আমার ভীষণ এই বিশ্বরূপ দেখিয়া তোমার ভয় বা বিমূঢ়ভাব না থাকুক্ । ভীতি রহিত ও সন্তুষ্টচিত্ত হইয়া তুমি পুনরায় আমার পূর্ব্বদৃষ্ট সেই চতুর্ভুজ মূর্ত্তিই দর্শন কর ॥৪৯॥

সঞ্জয় উবাচ—
ইত্যর্জ্জুনং বাসুদেবস্তথোক্ত্বা,
স্বকং রূপং দর্শয়ামাস ভূয়ঃ ।
আশ্বাসয়ামাস চ ভীতমেনং,
ভূত্বা পুনঃ সৌম্যবপুর্মহাত্মা ॥৫০॥

সঞ্জয়ঃ উবাচ (সঞ্জয় কহিলেন) বাসুদেবঃ (শ্রীকৃষ্ণ) অর্জ্জুনং (অর্জ্জুনকে) ইতি (এইরূপ) উক্ত্বা (বলিয়া) ভূয়ঃ (পুনরায়) তথা (সেই প্রকার) স্বকং রূপং (স্বীয় চতুর্ভুজরূপ) দর্শয়ামাস (দেখাইলেন), পুনঃ (পুনর্ব্বার) মহাত্মা (পরম কৃপালু শ্রীকৃষ্ণ) সৌম্যবপুঃ (পীতাম্বরাদিযুক্ত দ্বিভুজ স্বরূপ) ভূত্বা (হইয়া) ভীতম্ (ভীত) এনং (এই অর্জ্জুনকে) আশ্বাসয়ামাস (আশ্বাস প্রদান করিলেন) ॥৫০॥

সঞ্জয় বলিলেন—শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে এইপ্রকার বলিয়া পুনরায় (অর্জ্জুনের প্রার্থনানুযায়ী চতুর্ভুজ) নিজ মূর্ত্তি দেখাইলেন ও তৎপর আবার উদার হৃদয় শ্রীকৃষ্ণ (স্বীয় পীতাম্বরাদিযুক্ত দ্বিভুজ) সৌম্যমূর্ত্তি প্রকাশ করিয়া ভীতচিত্ত অর্জ্জুনকে আশ্বাস প্রদান করিলেন ॥৫০॥

অর্জ্জুন উবাচ—
দৃষ্ট্বেদং মানুষং রূপং তব সৌম্যং জনার্দ্দন ।
ইদানীমস্মি সংবৃত্তঃ সচেতাঃ প্রকৃতিং গতঃ ॥৫১॥

অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] জনার্দ্দন ! (হে শ্রীকৃষ্ণ !) তব (আপনার) ইদং (এই) সৌম্যং (মনোহর) মানুষং (মনুষ্যাকার দ্বিভুজ) রূপং (মূর্ত্তি) দৃষ্ট্বা (দেখিয়া) ইদানীম্ (এখন) সচেতাঃ সংবৃত্তঃ (প্রসন্নচিত্ত হইলাম) প্রকৃতিং গতঃ অস্মি (এবং স্বাস্থ্যলাভ করিলাম) ॥৫১॥

অর্জ্জুন কহিলেন—হে জনার্দ্দন ! আপনার এই মনোহর (দ্বিভুজ) মানব রূপ দর্শন করিয়া এখন আমার চিত্ত প্রসন্ন হইল এবং ভয়াদি দূর হওয়ায় প্রকৃত স্বাস্থ্য লাভ করিলাম ॥৫১॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
সুদুর্দ্দর্শমিদং রূপং দৃষ্টবানসি যন্মম ।
দেবা অপ্যস্য রূপস্য নিত্যং দর্শনকাঙ্ক্ষিণঃ ॥৫২॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ কহিলেন) [ত্বং] (তুমি) যৎ (যে দ্বিভুজ মনুষ্যাকার রূপ) দৃষ্টবান্ অসি (দেখিতেছ), মম (আমার) ইদং (এই) রূপং (সচ্চিদানন্দময় নরমূর্ত্তি) সুদুর্দ্দর্শম্ (অতীব দুর্ল্লভ দর্শন) । দেবাঃ অপি (দেবতাগণও) অস্য (এই) রূপস্য (রূপের) নিত্যং (সর্ব্বদা) দর্শনকাঙ্ক্ষিণঃ (দর্শনাভিলাষী) ॥৫২॥

শ্রীভগবান্ বলিলেন—হে অর্জ্জুন ! তুমি এই যে নরাকৃতি দ্বিভুজ রূপ দর্শন করিতেছ, আমার এই সচ্চিদানন্দময় নরমূর্ত্তির দর্শন অত্যন্ত সুদুর্ল্লভ । দেবতারাও এই রূপের নিত্য দর্শনাভিলাষী ॥৫২॥

নাহং বেদৈর্ন তপসা ন দানেন ন চেজ্যয়া ।
শক্য এবংবিধোর্দ্রষ্টুং দৃষ্টবানসি যন্মম ॥৫৩॥

[ত্বং] (তুমি) মম (আমার) যৎ (যে এই নিত্য নরাকার রূপ) দৃষ্টবান্ অসি (দর্শন করিতেছ), এবংবিধঃ (এতাদৃশ রূপবিশিষ্ট) অহং (আমাকে) ন বেদৈঃ (কি বেদাধ্যয়ন) ন তপসা (কি চান্দ্রায়ণাদি কঠোর ব্রত) ন দানেন (কি ভূম্যাদিদান) ইজ্যয়া চ (এবং কি অগ্নিষ্টোমাদি যজ্ঞ ইহাদের কোনটির দ্বারাই) দ্রষ্টুং (দর্শন করিতে) [কৈশ্চিৎ] (কেহই) ন শক্যঃ (সমর্থ হন না) ॥৫৩॥

তুমি আমার যে নিত্য নরাকার পরব্রহ্মরূপটি দর্শন করিতেছ এতাদৃশ রূপবিশিষ্ট আমাকে কেহই বেদপাঠ, তপস্যা, দান, বা বিবিধ যজ্ঞ, কোনটির দ্বারাই দর্শন করিতে সমর্থ হয় না ॥৫৩॥

ভক্ত্যা ত্বনন্যয়া শক্য অহমেবংবিধোঽর্জ্জুন ।
জ্ঞাতুং দ্রষ্টুঞ্চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুঞ্চ পরন্তপ ॥৫৪॥

[হে] পরন্তপ ! (হে শত্রুতাপন !) [হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) এববিধঃ (এতাদৃশ রূপবিশিষ্ট) অহম্ (আমি) তু (কিন্তু সুদুর্দ্দর্শ হইলেও) অনন্যয়া (ঐকান্তিকী বা কেবলা) ভক্ত্যা (ভক্তি দ্বারা) [ভক্তেন] (শুদ্ধভক্তকর্ত্তৃক) তত্ত্বেন (যথার্থরূপে) জ্ঞাতুং (জানিতে) দ্রষ্টুং চ (ও দেখিতে) প্রবেষ্টুং চ (এবং লীলায় প্রবেশ করিতে) শক্যঃ [অস্মি] (যোগ্য হই) ॥৫৪॥

হে শত্রুতাপন অর্জ্জুন ! এতাদৃশ রূপবিশিষ্ট আমি কিন্তু অন্য প্রকারে দুর্ল্লভ-দর্শন হইলেও ঐকান্তিকী ভক্তিদ্বারা শুদ্ধভক্তগণ আমাকে যথার্থরূপে জানিতে ও দেখিতে এবং আমার লীলাতে প্রবেশ করিতে সমর্থ ॥৫৪॥

মৎকর্ম্মকৃন্মৎপরমো মদ্­ভক্তঃ সঙ্গবর্জ্জিতঃ ।
নির্ব্বৈরঃ সর্ব্বভূতেষু যঃ স মামেতি পাণ্ডব ॥৫৫॥

[হে] পাণ্ডব ! (হে পাণ্ডুপুত্ত্র !) যঃ (যিনি) মৎকর্ম্মকৃৎ (আমার নিমিত্তই কর্ম্মানুষ্ঠানকারী) মৎ পরমঃ (আমিই যাহার পরম পুরুষার্থ) মদ্­ভক্তঃ (আমাতে শ্রবণাদি ভক্তিযুক্ত) সঙ্গবর্জ্জিতঃ (বিষয়াসক্তিশূন্য) সর্ব্বভূতেষু (সকল জীবের প্রতি) নির্ব্বৈরঃ (শত্রুভাবরহিত) সঃ (তিনি) মাম্ (আমাকে) এতি (প্রাপ্ত হন) ॥৫৫॥

হে অর্জ্জুন ! যে ব্যক্তি আমারই সেবাকার্য্যে নিরত, আমিই যাহার পরম আশ্রয়, আমাতেই ভক্তিযুক্ত, বিষয়ে অনাসক্ত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাবশূন্য তিনিই আমাকে লাভ করেন ॥৫৫॥

ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং
ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং
যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে বিশ্বরূপদর্শন-
যোগো নামৈকাদশোঽধ্যায়ঃ ॥১১॥

ইতি একাদশ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥

                                                                                                   গ্রন্থ-সম্পাদক—
                                                                                       ত্রিদণ্ডিভিক্ষু—শ্রীভক্তিরক্ষক শ্রীধর
                                                                                         শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ, নবদ্বীপ
                                                                                        শ্রীজন্মাষ্টমী বঙ্গাব্দ ১৩৬৮ সাল

১) ‘সপ্তম অধ্যায়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান আরম্ভ করিয়া সপ্তম ও অষ্টমে পরমেশ্বরের অক্ষর অথবা অব্যক্ত রূপের এবং নবম ও দশমে অনেক ব্যক্ত রূপের যে জ্ঞান বলিয়াছে, তাহাকেই অর্জুন প্রথম শ্লোকে ‘অধ্যাত্ম’ বলিয়াছেন ।’ – [গীতারহস্য, লোকমান্য তিলক] । আমার এই মোহ বিনষ্ট হইল অর্থাৎ তোমার প্রকৃত তত্ত্ব জানিয়া, তুমিই সর্বভূতের নিয়ন্তা, সর্ব কর্মের নিয়ামক, ইহা বুঝিতে পারিয়া ‘আমি কর্তা’, ‘আমার কর্ম’ ইত্যাদি রূপে যে আমার মোহ তাহা অপগত হইল, আমি বুঝিতেছি, তুমিই কর্তা, তুমিই যন্ত্রী, আমি যন্ত্রমাত্র ।
৩) তুমি পরমেশ্বর । ‘আমি একাংশে জগৎ ধারণ করিয়া আছি’ ইত্যাদি যাহা তুমি বলিলে তাহা সত্য । আমার বড় ইচ্ছা হইতেছে আমি তোমার সেই বিশ্বরূপ দর্শন করি ।
৭) ‘অপর যাহা কিছু’ এ কথার তাৎপর্য্য এই যে, ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান ত্রিকালের যত কিছু ঘটনা সকলি আমার এই দেহে বিদ্যমান । এই যুদ্ধের জয়-পরাজয়াদি ভবিষ্যৎ ঘটনা যাহা দেখিতে ইচ্ছা কর, তাহাও এই দেহে দেখিতে পাইবে (১১|১৬-৩৩ ইত্যাদি শ্লোক দ্রষ্টব্য) ।
১২) এই শ্লোকে অপূর্ব শব্দবিন্যাসকৌশলে শব্দের ধ্বনি দ্বারাই কিরূপে অর্থ দ্যোতনা হইতেছে, তাহা লক্ষ্য করিবার বিষয় ।
১৯) ‘অনন্ত বাহু’, ‘আদি অন্ত মধ্যহীন’ ইত্যাদি বর্ণনা পূর্বে করা হইয়াছে । কিন্তু হর্ষ-বিস্ময়াদি রসের বর্ণনায় পুনরুক্তি দোষজনক হয় না – “প্রমাদে বিস্ময়ে হর্ষে দ্বিস্ত্রিরুক্তং ন দুষ্যতি ।”
২০) অর্জুন বিশ্বরূপ ব্যতীত আর কিছুই দেখিতেছেন না এবং তিনি এই রূপ দেখিয়া স্বয়ং অত্যন্ত ভীত হইয়াছেন । ‘ত্রিলোক ভীত হইয়াছে’ যে বলিতেছেন উহা তাঁহারই মনের ভাব মাত্র । বস্তুতঃ অর্জুন ব্যতীত আর কেহ বিশ্বরূপ দেখিতে পারে না, দেখেও নাই ।
২২) উষ্মপাঃ = পিতৃগণ; শ্রাদ্ধে পিতৃগণকে যে অন্নাদি দেওয়া হয় তাহা উষ্ণ থাকিলেই তাঁহারা উহার উষ্মভাগ অর্থাৎ তৎতৎ-পদার্থে নিহিত প্রকৃত তেজঃশক্তি গ্রহণ করেন । শাস্ত্রে সাত প্রকার পিতৃগণের উল্লেখ আছে [গী|১০|২৯] ।
২৭) ভগবানের ভূত-ভবিষ্যত নাই, তাঁহার সকলই বর্তমান । তাঁহার দেহে ত্রৈকালিক ঘটনার একত্র সমাবেশ । সুতরাং যুদ্ধ ব্যাপারে যাহা ঘটিবে ভগবান তাঁহার বিরাট দেহে তাহাই দেখাইতেছেন ।
৩১) আমি আপনার বিশ্বরূপ ও বিভূতিসমূহ দেখিতে চাহিয়াছিলাম । কিন্তু আপনার এই সংহারমূর্তি দেখিয়া আমি বুঝিতেছি না, আপনি কে ও কি কার্যে প্রবৃত্ত ।
৩৩) সব্যসাচী = যিনি বাম হস্তে শর-সন্ধান করিতে অভ্যস্ত; অর্জুন
দুর্যোধন যখন সন্ধির সকল প্রস্তাবই অগ্রাহ্য করিলেন, তখন ভীষ্মদেব শ্রীকৃষ্ণকে বলিয়াছিলেন – ‘বুঝিতেছি, এই ক্ষত্রিয়েরা কালপক্ক হইয়া উঠিয়াছে ।’ – [মহাভারত উদ্যোগপর্ব |১২৭|৩২] । এই কাল কি এবং কালপক্ক কাহাকে বলে, তাহাই শ্রীভগবান বিশ্বরূপে অর্জুনকে প্রত্যক্ষ দেখাইলেন ।
৩৯) প্রজাপতি, প্রপিতামহ : ব্রহ্মা হইতে মরীচি আদি মানস-পুত্রের উৎপত্তি, মরীচি হইতে কশ্যপ এবং কশ্যপ হইতে সমস্ত প্রজার উৎপত্তি । ব্রহ্মা, মরীচি-আদির পিতা, এই জন্য তাঁহাকে পিতামহ বলা হয় এবং ব্রহ্মারও পিতা অর্থাৎ যিনি পরমেশ্বর তিনি প্রপিতামহ । কশ্যপদিকেও প্রজাপতি বলে । কিন্তু এখানে প্রজাপতি শব্দ একবচনান্ত থাকাতে উহার অর্থ ব্রহ্মা বলিয়াই গ্রহণ করা সঙ্গত ।
৪৫-৪৬) ঐশ্বর্য ও মাধুর্য :
একাদশ অধ্যায়ে বিশ্বরূপের বর্ণনা, ইহা অদ্ভুতরসের বর্ণনা – ইহাতে ভয়, বিস্ময়, বিহ্বলতা আনয়ন করে – ইহাতে মাধুর্য, শান্তি ও প্রীতির ভাব নাই । তাই সৌন্দর্য-রস-পিপাসু ভক্তগণ সেই অনন্তস্বরূপের অনন্ত ঐশ্বর্যের চিন্তা করেন না – তাঁহার শান্ত সৌম্য লীলাবিগ্রহই ধ্যান করেন – উহার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করেন । ঐশ্বর্য ও মাধুর্যে এই প্রভেদ । কথাটি রসতত্ত্ব-বিচারে পাশ্চাত্য দার্শনিকগণও বেশ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করিয়াছেন । যেমন –
“The beautiful calms and pacifies us; the sublime brings disorders into our faculties.” [Weber’s History of Philosophy]
“The sublime is incompatible with charms; and as the mind is not merely attracted by the object but continually in turn repelled, satisfaction in the sublime does not so much contain positive pleasure as admiration and respect.” [Kant]
“The beautiful is the infinite represented in the finite form”. [Schelling]
৪৭) শ্রীকৃষ্ণের চতুর্ভুজ ও দ্বিভুজ রূপ : এ-স্থলে অর্জুন ভগবানের চতুর্ভুজ বিষ্ণুমূর্তি দেখিতে চাহিতেছেন । কৃষ্ণলীলায় ভগবান দ্বিভুজ; কিন্তু বাসুদেবগৃহে তিনি শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী চতুর্ভুজ-রূপেই আবির্ভূত হইয়াছিলেন । পরে কংসভয়ে ভীত বসুদেবের প্রার্থনায় দুই বাহু সংবরণ করেন । কিন্তু সময়-সময় চতুর্ভুজ মূর্তিও ধারণ করিয়াছেন । [ভাগবত |১০|৮৩|২৮]
৫৪) একমাত্র অনন্যা ভক্তি দ্বারাই পরমেশ্বরের স্বরূপ জ্ঞান হয়, তাঁহার সাক্ষাৎকার হয় এবং পরিশেষে তাঁহার সহিত তাদাত্ম্য লাভ হয় । এই শেষ অবস্থাকে ভক্তিশাস্ত্রে অধিরূঢ়ভাব বলে (১৮|৫৫ দ্রষ্টব্য) ।
৫৫) অহিংস-নীতি ও ধর্ম্যযুদ্ধ :
ব্যবহারিক ধর্মতত্ত্ব বড় সূক্ষ্ম ও জটিল । অহিংসনীতি ও অত্যাচারীর সংহার, সত্যকথন ও দস্যুতাড়িত পলায়নপর আশ্রিতের রক্ষা, ইত্যাদি স্থলে যখন পরস্পর বিরোধ উপস্থিত হয়, তখন কোনটি ধর্ম, কোনটি অধর্ম – তাহা নির্ণয় করা বড় সহজ নহে । এই হেতু মহাভারতে পুনঃপুনঃ বলা হইয়াছে, ‘সূক্ষ্মা গতির্হি ধর্মস্য’ । [ভূমিকা |জগদীশ্চন্দ্র|9.1.8]
বিশ্বরূপ ও ভূমাবাদ :
দুইটি শ্রুতিবাক্যকে সনাতন ধর্মের ভিত্তি বলা যায় :-
‘একমেবাদ্বিতীয়ং ব্রহ্ম’ – ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়
‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম’ – এই সমস্তই ব্রহ্ম
কিন্তু এই বাক্য দুইটির ব্যাখ্যায় বৈদান্তিকগণের মধ্যে মর্মান্তিক মতভেদ আছে । এক পক্ষ বলেন, – একমাত্র ব্রহ্মই আছেন, তিনি অখণ্ড অদ্বৈত-তত্ত্ব, তাহার মধ্যে নানাত্ব নাই – তিনি ভূমা । ভ্রমবশত সেই ব্রহ্ম-বস্তুতেই জগতের অধ্যাস হয় – যেমন রজ্জুতে সর্পভ্রম হয়, মরীচিকায় জলভ্রম হয় । এই ভ্রমের কারণ মায়া বা অজ্ঞান; অজ্ঞান বিদূরিত হইলেই ব্রহ্ম উদ্ভাসিত হন ।
অপরপক্ষ বলেন – ব্রহ্ম অদ্বিতীয় তাহা ঠিক, ব্রহ্মই এই সমস্ত হইয়াছেন । তিনিই জগতের নিমিত্ত কারণ ও উপাদান কারণ । তিনি আপনাকে জগৎরূপে পরিণত করিয়াছেন । জগৎ ব্রহ্মের শরীর, বিশ্ব তাঁহার রূপ বা দেহ, এইজন্য তিনি বিশ্বরূপ । তিনিই ভূমা । ইহা ভূমাবাদের অন্য দিক ।

সংগ্রহঃ ০১। sanatandharmatattva.wordpress.com
             ০২। http://www.scsmathinternational.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।