ঘটনা অল্পেই রুষ্ট মহামুনিকে ক্রোধান্বিত করেছিল । তিনি নিজ জটার শেষাংশ উৎপাটন করে তার দ্বারা অম্বরীষকে বধ করবার জন্য এক কৃত্যা উৎপন্ন করলেন । রাক্ষসী কৃত্যা প্রলয়কারীন অগ্নিসম দেদীপ্যমান ছিল । তা অগ্নিসম প্রজ্বলিত হয়ে হস্তে তরবারি ধারণ করে রাজা অম্বরীষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । তার পদভারে ধরণি প্রকম্পিত হচ্ছিল । রাজা অম্বরীষ কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না ।
এক পাও না সরে তিনি পূর্ববৎ দাঁড়িয়ে রইলেন । পরমপুরুষ পরমাত্মা শ্রীভগবান নিজ সেবককে রক্ষানিমিত্ত পূর্বেই সুদর্শন চক্রকে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন । যেমন অগ্নি ক্রোধান্বিত সর্পকে ভস্মসাৎ করে তেমনভাবেই চক্র দুর্বাসা মুনির কৃত্যাকে দগ্ধ করে ভস্মে পরিণত করল ।
যখন শ্রীদুর্বাসা দেখলেন যে তাঁর সৃষ্ট কৃত্যা দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে আর সুদর্শন চক্র তাঁর দিকেই ছুটে আসছে , তিনি তখন ভীত হয়ে প্রাণরক্ষা হেতু পলায়ন করতে লাগলেন । প্রজ্বলিত দাবানলসম চক্র আসছে দেখে তিনি সুমেরু পর্বত গহ্বরের দিকে ছুটলেন । মহামুনি প্রাণরক্ষা হেতু দিক , আকাশ , পৃথিবী , পাতাললোক , সমুদ্র , লোকপাল এবং তাঁদের দ্বারা সুরক্ষিত লোক এবং স্বর্গ পর্যন্ত গেলেন কিন্তু সহ্যাতীত তেজ সুদর্শন চক্র তাঁকে রেহাই দিল না । রক্ষক না পেয়ে তিনি আরও ভয় পেয়ে গেলেন ।
প্রাণ রক্ষা হেতু তিনি দেবশ্রেষ্ঠ শ্রীব্রহ্মার কাছে গিয়ে বললেন - ' হে শ্রীব্রহ্মা ! আপনি তো স্বয়ম্ভু । ভগবানের এই তেজযুক্ত চক্র থেকে আমাকে রক্ষা করুন । '
শ্রীব্রহ্মা বললেন - ' যখন আমার দুই পরার্ধ আয়ু সমাপন হবে এবং কালস্বরূপ ভগবান নিজ লীলা সংবরণ করে নেবেন ও জগৎকে ভস্মসাৎ করতে চাইবেন তখন তাঁর ভ্রূচালনায় সমস্ত জগৎ এবং আমার লোকও লীন হয়ে যাবে । তাঁর ভক্তদ্রোহে অভিযুক্তকে আমি রক্ষা করতে সমর্থ নই । '
তখন দুর্বাসা মুনি ভগবান শংকরের শরণাগত হলেন ।
শ্রীমহাদেব বললেন -- ' আমরা নিরুপায় ! স্বয়ং আমি , সৎকুমার , নারদ , ভগবান ব্রহ্মা , কপিলদেব -- কেউই ভগবানের মায়াকে জানতে সক্ষম হইনি । আমরাও তাঁরা মায়াধীন । চক্র বিশ্বেশ্বরের অস্ত্র । একমাত্র তাঁর শরণাগতিই তোমাকে রক্ষা করতে সমর্থ । '
মহামুনি অগত্যা শ্রীভগবানের পরমধাম বৈকুন্ঠলোকে প্রবেশ করলেন । তা লক্ষ্মীপতির নিবাসস্থান ; লক্ষ্মীসহিত তিনি সেইখানে অধিষ্ঠিত । সুদর্শন চক্রের তাপে সন্তপ্ত শ্রীদুর্বাসা তাঁরই শরণাগত হলেন । তিনি জানালেন যে তাঁর মহাপরাধ হয়েছে । তিনি যেন তাঁকে ক্ষমা করেন ।
শ্রীভগবান তখন মহামুনিকে বললেন - ' হে শ্রীদুর্বাসা ! আমি সতত ভক্তাধীন , স্বতন্ত্র নই । ভক্তগণ আমাকে প্রেমপ্রীতি প্রদান করেন আমিও তাঁদের রক্ষা করি । যে ভক্ত আমার প্রীতিতে দারা , পুত্র , গৃহ , গুরুজন , প্রাণ , ধনসম্পদ , ইহলোক ও পরলোক সব ত্যাগ করে , তাঁকে ত্যাগ করবার কথা আমি কল্পনাও করতেন পারি না । আমার প্রেমী ভক্ত আমার হৃদয় আর আমি তাদের হৃদয় স্বয়ং । একটা উপায় আছে । যাঁর অনিষ্ট সাধন করতে গিয়ে এই বিপত্তি হয়েছে তাঁর শরণাগত হলে অপরাধ স্খালন ও শান্তি লাভ সম্ভব ।
নিরপরাধ সাধুর অনিষ্ট চেষ্টা করলে অনিষ্ঠকারীরই অমঙ্গল হয়ে থাকে । নাভাগনন্দন পরম ভাগ্যবান রাজা অম্বরীষই এর প্রতিবিধানে সমর্থ ।
অতএব মহামুনি দুর্বাসাকে আবার সেই অম্বরীষের নিকটেই আসতে হল , সুদর্শন চক্রের তাপে সন্তপ্ত মহামুনি রাজা অম্বরীষের পদযুগল ধারণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । শ্রীদুর্বাসা মুনির এই আচরণ রাজা অম্বরীষকে লজ্জিত করল । দয়ায় পরিপূর্ণ রাজা তখন সুদর্শন চক্রের স্তুতি করতে লাগলেন ।
রাজা অম্বরীষ বললেন -- ' হে প্রভু সুদর্শন ! আপনি অগ্নিস্বরূপ । আপনি ____ সূর্য , চন্দ্র , জল , পৃথিবী , আকাশ , বায়ু , পঞ্চতম্মাত্রা এবং সম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়সমূহ । আপনিই __ ধর্ম , আপনিই মধুর ও সত্য বাণী । আপনি সকল যজ্ঞের অধিপতি ও স্বয়ং যজ্ঞ । আপনি ত্রিলোকরক্ষক ও সর্বলোকস্বরূপ । আপিনই পরমপুরুষ পরমাত্মার শ্রেষ্ঠ তেজ । আপনি কৃপা করে আমার কুলের কল্যাণে শ্রীদুর্বাসার কল্যাণ করুন ।
আমি আপনার অনুগ্রহকে মস্তকে ধারণ করে রাখব । যদি আমি কিছু কখনো দান করে থাকে , যজ্ঞ করে থাকি অথবা নিজ ধর্ম পালন করে থাকি আর যদি আমার বংশের সকলে ব্রাহ্মণদের নিজ আরাধ্য দেবতা জ্ঞান করে থাকেন তাহলে যেন আপনার কৃপায় মুহামুনি দুর্বাসার সন্তাপ অপসৃত হয় । শ্রীভগবান সকল গুণের একমাত্র আশ্রয় । যদি আমি তাঁকে সমস্ত প্রাণীর আত্মাররূপে দেখে থাকি আর তিনি আমার উপর প্রসন্ন থাকেন তাহলে যেন শ্রীদুর্বাসার হৃদয়ের সমস্ত দহন শান্ত হয়ে যায় ।
রাজা অম্বরীষের স্তুতি চক্রকে শান্ত করল । মহামুনি দুর্বাসা তখন রাজা অম্বরীষকে উত্তম আশীর্বাদ দানে আপ্লুত করলেন । তিনি ভগবানের প্রেমী ভক্তদের মাহাত্ম্য স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন ।
যখন মহামুনি পলায়ন করছিলেন তখন থেকে রাজা অম্বরীষ আহার্য গ্রহণ করেননি । এই এক বৎসর কাল তিনি তাঁর দর্শনের আকাঙ্ক্ষায় কেবল জল পান করেই কাল যাপন করেছিলেন । মহামুনিকে চক্রের হাত থেকে রক্ষা করে তিনি তাঁর চরণযুগল ধারণ করলেন এবং তাঁকে প্রসন্ন করে সসম্মানে আহার করালেন । মহামুনি দুর্বাসা তখন পরিতৃপ্ত ।
তিনি আশীর্বাদাদি করে স্থান ত্যাগ করলেন । মহামুনির প্রস্থানের পর তাঁর প্রসাদের অন্ন রাজা অম্বরীষ গ্রহণ করলেন । নিজের জন্য মহামুনির দুঃখ ও তাঁর প্রার্থনায়ই মহামুনির নিষ্কৃতি তিনি শ্রীভগবানের মহিমারূপে দেখলেন । অতঃপর পুত্রদের রাজ্যভার অর্পণ করে তিনি শ্রীভগবানের নিত্য যুক্ত হয়ে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করলেন ।
লেখকঃ - Joy Shree Radha Madhav
এক পাও না সরে তিনি পূর্ববৎ দাঁড়িয়ে রইলেন । পরমপুরুষ পরমাত্মা শ্রীভগবান নিজ সেবককে রক্ষানিমিত্ত পূর্বেই সুদর্শন চক্রকে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন । যেমন অগ্নি ক্রোধান্বিত সর্পকে ভস্মসাৎ করে তেমনভাবেই চক্র দুর্বাসা মুনির কৃত্যাকে দগ্ধ করে ভস্মে পরিণত করল ।
যখন শ্রীদুর্বাসা দেখলেন যে তাঁর সৃষ্ট কৃত্যা দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে আর সুদর্শন চক্র তাঁর দিকেই ছুটে আসছে , তিনি তখন ভীত হয়ে প্রাণরক্ষা হেতু পলায়ন করতে লাগলেন । প্রজ্বলিত দাবানলসম চক্র আসছে দেখে তিনি সুমেরু পর্বত গহ্বরের দিকে ছুটলেন । মহামুনি প্রাণরক্ষা হেতু দিক , আকাশ , পৃথিবী , পাতাললোক , সমুদ্র , লোকপাল এবং তাঁদের দ্বারা সুরক্ষিত লোক এবং স্বর্গ পর্যন্ত গেলেন কিন্তু সহ্যাতীত তেজ সুদর্শন চক্র তাঁকে রেহাই দিল না । রক্ষক না পেয়ে তিনি আরও ভয় পেয়ে গেলেন ।
প্রাণ রক্ষা হেতু তিনি দেবশ্রেষ্ঠ শ্রীব্রহ্মার কাছে গিয়ে বললেন - ' হে শ্রীব্রহ্মা ! আপনি তো স্বয়ম্ভু । ভগবানের এই তেজযুক্ত চক্র থেকে আমাকে রক্ষা করুন । '
শ্রীব্রহ্মা বললেন - ' যখন আমার দুই পরার্ধ আয়ু সমাপন হবে এবং কালস্বরূপ ভগবান নিজ লীলা সংবরণ করে নেবেন ও জগৎকে ভস্মসাৎ করতে চাইবেন তখন তাঁর ভ্রূচালনায় সমস্ত জগৎ এবং আমার লোকও লীন হয়ে যাবে । তাঁর ভক্তদ্রোহে অভিযুক্তকে আমি রক্ষা করতে সমর্থ নই । '
তখন দুর্বাসা মুনি ভগবান শংকরের শরণাগত হলেন ।
শ্রীমহাদেব বললেন -- ' আমরা নিরুপায় ! স্বয়ং আমি , সৎকুমার , নারদ , ভগবান ব্রহ্মা , কপিলদেব -- কেউই ভগবানের মায়াকে জানতে সক্ষম হইনি । আমরাও তাঁরা মায়াধীন । চক্র বিশ্বেশ্বরের অস্ত্র । একমাত্র তাঁর শরণাগতিই তোমাকে রক্ষা করতে সমর্থ । '
মহামুনি অগত্যা শ্রীভগবানের পরমধাম বৈকুন্ঠলোকে প্রবেশ করলেন । তা লক্ষ্মীপতির নিবাসস্থান ; লক্ষ্মীসহিত তিনি সেইখানে অধিষ্ঠিত । সুদর্শন চক্রের তাপে সন্তপ্ত শ্রীদুর্বাসা তাঁরই শরণাগত হলেন । তিনি জানালেন যে তাঁর মহাপরাধ হয়েছে । তিনি যেন তাঁকে ক্ষমা করেন ।
শ্রীভগবান তখন মহামুনিকে বললেন - ' হে শ্রীদুর্বাসা ! আমি সতত ভক্তাধীন , স্বতন্ত্র নই । ভক্তগণ আমাকে প্রেমপ্রীতি প্রদান করেন আমিও তাঁদের রক্ষা করি । যে ভক্ত আমার প্রীতিতে দারা , পুত্র , গৃহ , গুরুজন , প্রাণ , ধনসম্পদ , ইহলোক ও পরলোক সব ত্যাগ করে , তাঁকে ত্যাগ করবার কথা আমি কল্পনাও করতেন পারি না । আমার প্রেমী ভক্ত আমার হৃদয় আর আমি তাদের হৃদয় স্বয়ং । একটা উপায় আছে । যাঁর অনিষ্ট সাধন করতে গিয়ে এই বিপত্তি হয়েছে তাঁর শরণাগত হলে অপরাধ স্খালন ও শান্তি লাভ সম্ভব ।
নিরপরাধ সাধুর অনিষ্ট চেষ্টা করলে অনিষ্ঠকারীরই অমঙ্গল হয়ে থাকে । নাভাগনন্দন পরম ভাগ্যবান রাজা অম্বরীষই এর প্রতিবিধানে সমর্থ ।
অতএব মহামুনি দুর্বাসাকে আবার সেই অম্বরীষের নিকটেই আসতে হল , সুদর্শন চক্রের তাপে সন্তপ্ত মহামুনি রাজা অম্বরীষের পদযুগল ধারণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । শ্রীদুর্বাসা মুনির এই আচরণ রাজা অম্বরীষকে লজ্জিত করল । দয়ায় পরিপূর্ণ রাজা তখন সুদর্শন চক্রের স্তুতি করতে লাগলেন ।
রাজা অম্বরীষ বললেন -- ' হে প্রভু সুদর্শন ! আপনি অগ্নিস্বরূপ । আপনি ____ সূর্য , চন্দ্র , জল , পৃথিবী , আকাশ , বায়ু , পঞ্চতম্মাত্রা এবং সম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়সমূহ । আপনিই __ ধর্ম , আপনিই মধুর ও সত্য বাণী । আপনি সকল যজ্ঞের অধিপতি ও স্বয়ং যজ্ঞ । আপনি ত্রিলোকরক্ষক ও সর্বলোকস্বরূপ । আপিনই পরমপুরুষ পরমাত্মার শ্রেষ্ঠ তেজ । আপনি কৃপা করে আমার কুলের কল্যাণে শ্রীদুর্বাসার কল্যাণ করুন ।
আমি আপনার অনুগ্রহকে মস্তকে ধারণ করে রাখব । যদি আমি কিছু কখনো দান করে থাকে , যজ্ঞ করে থাকি অথবা নিজ ধর্ম পালন করে থাকি আর যদি আমার বংশের সকলে ব্রাহ্মণদের নিজ আরাধ্য দেবতা জ্ঞান করে থাকেন তাহলে যেন আপনার কৃপায় মুহামুনি দুর্বাসার সন্তাপ অপসৃত হয় । শ্রীভগবান সকল গুণের একমাত্র আশ্রয় । যদি আমি তাঁকে সমস্ত প্রাণীর আত্মাররূপে দেখে থাকি আর তিনি আমার উপর প্রসন্ন থাকেন তাহলে যেন শ্রীদুর্বাসার হৃদয়ের সমস্ত দহন শান্ত হয়ে যায় ।
রাজা অম্বরীষের স্তুতি চক্রকে শান্ত করল । মহামুনি দুর্বাসা তখন রাজা অম্বরীষকে উত্তম আশীর্বাদ দানে আপ্লুত করলেন । তিনি ভগবানের প্রেমী ভক্তদের মাহাত্ম্য স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন ।
যখন মহামুনি পলায়ন করছিলেন তখন থেকে রাজা অম্বরীষ আহার্য গ্রহণ করেননি । এই এক বৎসর কাল তিনি তাঁর দর্শনের আকাঙ্ক্ষায় কেবল জল পান করেই কাল যাপন করেছিলেন । মহামুনিকে চক্রের হাত থেকে রক্ষা করে তিনি তাঁর চরণযুগল ধারণ করলেন এবং তাঁকে প্রসন্ন করে সসম্মানে আহার করালেন । মহামুনি দুর্বাসা তখন পরিতৃপ্ত ।
তিনি আশীর্বাদাদি করে স্থান ত্যাগ করলেন । মহামুনির প্রস্থানের পর তাঁর প্রসাদের অন্ন রাজা অম্বরীষ গ্রহণ করলেন । নিজের জন্য মহামুনির দুঃখ ও তাঁর প্রার্থনায়ই মহামুনির নিষ্কৃতি তিনি শ্রীভগবানের মহিমারূপে দেখলেন । অতঃপর পুত্রদের রাজ্যভার অর্পণ করে তিনি শ্রীভগবানের নিত্য যুক্ত হয়ে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করলেন ।
লেখকঃ - Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন