মীরা ঃ এক চারণ কবি ( ২ )
অনেক বাধা , অনেক নির্যাতন অন্তে , অবশেষে মীরার বিজয়ী কন্ঠস্বর উদ্ঘোষিত -- এতটুকু আত্মগরিমার অবকাশ না রেখে ঃ
সত্য কথা বলব লো সই ,
শরম আমার কী সে ?
প্রিয়ের লাগি হাসি গাই
নাচি পথে পথে ।
প্রেম শরে বিদ্ধা মীরা
আহার নিদ্রা ভুল
কৃষ্ণ সাথে প্রণয় লীলা
ত্যাজি জাতিকুল ।
দিব্যলীলা প্রচার করি
আত্মবন্ধু সাথে
মধুক্ষরা নামে তাঁরি
ভক্ত জোটে লাখে ।
হরি নামের পীযূষ পিয়ে
মত্ত শ্রোতকুল ;
কৃষ্ণ দাসী মীরা হিয়ে
আজি আনন্দ আকুল ।
অপূর্ব এক ভজনে মীরা ব্যক্ত করেছেন তাঁর বিশ্বাসের গভীরতা তাঁর অননুকরণীয় ভাষায় ঃ
স্বামী মোর প্রিয় মোর প্রভুগিরিধারী
ময়ূর মুকুট শিরে শোভন মনোহারী ।
নাহি পিতা মাতা ভাই আত্মীয় স্বজন
নাহি কেহ মোর ওগো পতিত -পাবন।
তুচ্ছ জ্ঞানে ত্যাজিয়াছি জাতি - কুল - মান
কে বা ক্ষতি করে মোর , কি বা অপমান ?
সাধু সঙ্গে সদা করি আলাপ কীর্তন
লজ্জাভয় বিসর্জন কৃষ্ণে রাখি মন ।
ছেড়েছি জরির সাজ , মণি - মুক্ত - মালা
বিরহ যাতনা কারো বা বলি
ওগো নিঠুর প্রিয়তম ?
চক্ষে যেন শল্য বেঁধে ;
পথ পানে তব চাহি
মিলন রাতি আসিবে কবে
ধৈর্য কত বা সহি !
কত রাতি কাটে ব্যর্থ জাগরণে
তব আশে , ওগো দুঃখহারী ।
নিতিদিন মীরা বৃথা ক্রন্দনে
ডাকে কোথা প্রিয় গিরিধারী ?
এমন বহু গানে মীরা উন্মোচন করেছেন তাঁর বিরহকাতর আগ্নেয় অন্তরজ্বালা , তাঁর অসহনীয় ভগবৎ ব্যাকুলতার আর্তি । কিছু গানে রচনা করেছেন তিনি কৃষ্ণলীলার দিব্য আলেখ্য , কিছু গানে বর্ণনা করেছেন উদ্দীপনাময়ী প্রাকৃতিক শোভা এবং কোথাও বা এক সাধিকার আবেদন - প্রার্থনা । কোন কোন গান আত্মজীবনীমূলক এবং কিছু ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক জীবনের পথ নির্দেশ । দীর্ঘ বিরহ ও কষ্টভোগের পর অবশেষে এল সেই পরম আনন্দঘন মিলন মুহূর্ত ।
তিনি গাইলেন ঃ
বহুকাল পর এল প্রিয় মোর
মিলন মধু হলো সই ;
বিরহ রাতি যুগকাল ভাতি
আজি বুঝি হলো ভোর ।
দীপ আরতি , জানাই প্রণতি
আবাহন করি মম গেহে
দয়াল হরি করুণা বিতরি
মীরাকে বাঁধিলেন স্নেহে ।
এস এস ভাই , হরিনাম গাই
আনন্দ করি সবে মিলে
এ মিলন রাতে এস প্রিয় সাথে
উৎসব করি সুখে ।
প্রিয় - সঙ্গ সুখে মীরা রসে ভাসে অঙ্গনে বহে প্রেমধারা
নিরখি নিরখি শ্যামঅঙ্গরূপ
মীরা আত্মহারা ।
মীরার এ দিব্যসুখ তো কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না ! তার এ প্রিয়মিলন তো ছিন্ন হবার নয় !
গভীর আত্মবিশ্বাসে তিনি তাই জানালেন ঃ
নিরাভরণ অঙ্গে মোর তুচ্ছ বনমালা ।
পল্লবিত প্রস্ফুটিত প্রেমলতা খানি
অশ্রু সিঞ্চনে দিল আনন্দ - ফল আনি ।
মন্থন করিয়া দুগ্ধ ভক্তি অনুরাগে
নবনীত পরম প্রাপ্তি , তত্রু সহযোগে ।
জন্মিল মীরা করিতে ভক্তি আস্বাদন
সংসার চক্রে সে , হায় , লভিল বন্ধন ।
বন্দীশালা হতে প্রভু কর হে উদ্ধার
জনম দাসী মীরা ভকত তোমার ।
এই আনন্দ , ধর্ম - জীবনের সার এই অমৃত , মীরা একান্ত ভক্তি সাধনার দ্বারা লাভ করেছিলেন । নিজেদের সুখ - শান্তি ও হিতের জন্য এই অমৃতের অধিকারী আমরাও হতে পারি যদি আমরা চাই , তা সে যে - ই হোক না কেন । মীরার জীবন - কাহিনী কখনো সমাপ্ত হবে না । তিনি ভক্তদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। মীরা মতো ভক্তি যার জীবনে এসেছে বা আসবে তার জীবন ধন্য । আমাদের সকলের উচিত মীরার মতো একান্তভাবে শ্রীহরি সেবা করা নিঃস্বার্থভাবে । তিনি যদি কৃপা করেন তবে অসাধ্যও সাধ্য হবে ।
জয় হোক স্বামী বুধানন্দের যিনি কৃপা করে কৃষ্ণপ্রিয়া মীরা লিপিবদ্ধ করেছেন । ওনার চরণে প্রণতি নিবেদন করি ।
ভক্তগণ এই ছিল কৃষ্ণপ্রিয়া মীরাবাঈ এর ভক্তিকথা । আমি শ্রীরাধাকৃষ্ণের কৃপায় শুধু প্রচেষ্টা করলাম । জানি না কতটুকু করতে পেরেছি । প্রচারকালে যদি লেখা ই অন্যকোন বিষয় যদি ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তবে সকলের চরণে ক্ষমা প্রার্থনা করছি । সকল ভক্তবৃন্দ মার্জনা করবেন ।
জয় হোক শ্রীরাধাগোবিন্দের ।
জয় হোক গিরিধারীলালের ।
জয় হোক ভক্তিমতি মীরার ।
জয় হোক সকল বৈষ্ণববৃন্দের ।
জয় হোক সকল ভক্তবৃন্দের ।
নিতাই গৌর প্রেমানন্দে একবার হরি হরি বল
লেখকঃ - Joy Shree Radha Madhav
অনেক বাধা , অনেক নির্যাতন অন্তে , অবশেষে মীরার বিজয়ী কন্ঠস্বর উদ্ঘোষিত -- এতটুকু আত্মগরিমার অবকাশ না রেখে ঃ
সত্য কথা বলব লো সই ,
শরম আমার কী সে ?
প্রিয়ের লাগি হাসি গাই
নাচি পথে পথে ।
প্রেম শরে বিদ্ধা মীরা
আহার নিদ্রা ভুল
কৃষ্ণ সাথে প্রণয় লীলা
ত্যাজি জাতিকুল ।
দিব্যলীলা প্রচার করি
আত্মবন্ধু সাথে
মধুক্ষরা নামে তাঁরি
ভক্ত জোটে লাখে ।
হরি নামের পীযূষ পিয়ে
মত্ত শ্রোতকুল ;
কৃষ্ণ দাসী মীরা হিয়ে
আজি আনন্দ আকুল ।
অপূর্ব এক ভজনে মীরা ব্যক্ত করেছেন তাঁর বিশ্বাসের গভীরতা তাঁর অননুকরণীয় ভাষায় ঃ
স্বামী মোর প্রিয় মোর প্রভুগিরিধারী
ময়ূর মুকুট শিরে শোভন মনোহারী ।
নাহি পিতা মাতা ভাই আত্মীয় স্বজন
নাহি কেহ মোর ওগো পতিত -পাবন।
তুচ্ছ জ্ঞানে ত্যাজিয়াছি জাতি - কুল - মান
কে বা ক্ষতি করে মোর , কি বা অপমান ?
সাধু সঙ্গে সদা করি আলাপ কীর্তন
লজ্জাভয় বিসর্জন কৃষ্ণে রাখি মন ।
ছেড়েছি জরির সাজ , মণি - মুক্ত - মালা
বিরহ যাতনা কারো বা বলি
ওগো নিঠুর প্রিয়তম ?
চক্ষে যেন শল্য বেঁধে ;
পথ পানে তব চাহি
মিলন রাতি আসিবে কবে
ধৈর্য কত বা সহি !
কত রাতি কাটে ব্যর্থ জাগরণে
তব আশে , ওগো দুঃখহারী ।
নিতিদিন মীরা বৃথা ক্রন্দনে
ডাকে কোথা প্রিয় গিরিধারী ?
এমন বহু গানে মীরা উন্মোচন করেছেন তাঁর বিরহকাতর আগ্নেয় অন্তরজ্বালা , তাঁর অসহনীয় ভগবৎ ব্যাকুলতার আর্তি । কিছু গানে রচনা করেছেন তিনি কৃষ্ণলীলার দিব্য আলেখ্য , কিছু গানে বর্ণনা করেছেন উদ্দীপনাময়ী প্রাকৃতিক শোভা এবং কোথাও বা এক সাধিকার আবেদন - প্রার্থনা । কোন কোন গান আত্মজীবনীমূলক এবং কিছু ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক জীবনের পথ নির্দেশ । দীর্ঘ বিরহ ও কষ্টভোগের পর অবশেষে এল সেই পরম আনন্দঘন মিলন মুহূর্ত ।
তিনি গাইলেন ঃ
বহুকাল পর এল প্রিয় মোর
মিলন মধু হলো সই ;
বিরহ রাতি যুগকাল ভাতি
আজি বুঝি হলো ভোর ।
দীপ আরতি , জানাই প্রণতি
আবাহন করি মম গেহে
দয়াল হরি করুণা বিতরি
মীরাকে বাঁধিলেন স্নেহে ।
এস এস ভাই , হরিনাম গাই
আনন্দ করি সবে মিলে
এ মিলন রাতে এস প্রিয় সাথে
উৎসব করি সুখে ।
প্রিয় - সঙ্গ সুখে মীরা রসে ভাসে অঙ্গনে বহে প্রেমধারা
নিরখি নিরখি শ্যামঅঙ্গরূপ
মীরা আত্মহারা ।
মীরার এ দিব্যসুখ তো কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না ! তার এ প্রিয়মিলন তো ছিন্ন হবার নয় !
গভীর আত্মবিশ্বাসে তিনি তাই জানালেন ঃ
নিরাভরণ অঙ্গে মোর তুচ্ছ বনমালা ।
পল্লবিত প্রস্ফুটিত প্রেমলতা খানি
অশ্রু সিঞ্চনে দিল আনন্দ - ফল আনি ।
মন্থন করিয়া দুগ্ধ ভক্তি অনুরাগে
নবনীত পরম প্রাপ্তি , তত্রু সহযোগে ।
জন্মিল মীরা করিতে ভক্তি আস্বাদন
সংসার চক্রে সে , হায় , লভিল বন্ধন ।
বন্দীশালা হতে প্রভু কর হে উদ্ধার
জনম দাসী মীরা ভকত তোমার ।
এই আনন্দ , ধর্ম - জীবনের সার এই অমৃত , মীরা একান্ত ভক্তি সাধনার দ্বারা লাভ করেছিলেন । নিজেদের সুখ - শান্তি ও হিতের জন্য এই অমৃতের অধিকারী আমরাও হতে পারি যদি আমরা চাই , তা সে যে - ই হোক না কেন । মীরার জীবন - কাহিনী কখনো সমাপ্ত হবে না । তিনি ভক্তদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। মীরা মতো ভক্তি যার জীবনে এসেছে বা আসবে তার জীবন ধন্য । আমাদের সকলের উচিত মীরার মতো একান্তভাবে শ্রীহরি সেবা করা নিঃস্বার্থভাবে । তিনি যদি কৃপা করেন তবে অসাধ্যও সাধ্য হবে ।
জয় হোক স্বামী বুধানন্দের যিনি কৃপা করে কৃষ্ণপ্রিয়া মীরা লিপিবদ্ধ করেছেন । ওনার চরণে প্রণতি নিবেদন করি ।
ভক্তগণ এই ছিল কৃষ্ণপ্রিয়া মীরাবাঈ এর ভক্তিকথা । আমি শ্রীরাধাকৃষ্ণের কৃপায় শুধু প্রচেষ্টা করলাম । জানি না কতটুকু করতে পেরেছি । প্রচারকালে যদি লেখা ই অন্যকোন বিষয় যদি ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তবে সকলের চরণে ক্ষমা প্রার্থনা করছি । সকল ভক্তবৃন্দ মার্জনা করবেন ।
জয় হোক শ্রীরাধাগোবিন্দের ।
জয় হোক গিরিধারীলালের ।
জয় হোক ভক্তিমতি মীরার ।
জয় হোক সকল বৈষ্ণববৃন্দের ।
জয় হোক সকল ভক্তবৃন্দের ।
নিতাই গৌর প্রেমানন্দে একবার হরি হরি বল
লেখকঃ - Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন