২৩ নভেম্বর ২০১৭

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: অষ্টাদশ অধ্যায় – মোক্ষযোগ

অর্জ্জুন উবাচ—
সন্ন্যাসস্য মহাবাহো তত্ত্বমিচ্ছামি বেদিতুম্ ।
ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক্ কেশিনিসূদন ॥১॥

অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] মহাবাহো ! (হে মহাবীর !) [হে] হৃষীকেশ ! (হে ইন্দ্রিয়াধীশ !) [হে] কেশিনিসূদন ! (হে কেশিদৈত্যঘাতন !) সন্ন্যাসস্য (সন্ন্যাসের) ত্যাগস্য চ (এবং ত্যাগের) তত্ত্বম্ (স্বরূপ) পৃথক্ (পৃথক্রূপে) বেদিতুম্ (জানিতে) ইচ্ছামি (ইচ্ছা করি) ॥১॥

অর্জ্জুন বলিলেন—হে মহাবাহো ! হে হৃষীকেশ ! হে কেশিনিসূদন ! আমি সন্ন্যাস ও ত্যাগের প্রকৃত তত্ত্ব পৃথক্ রূপে জানিতে ইচ্ছা করি ॥১॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
কাম্যানাং কর্ম্মণাং ন্যাসং সন্ন্যাসং কবয়ো বিদুঃ ।
সর্ব্বকর্ম্মফলত্যাগং প্রাহুস্ত্যাগং বিচক্ষণাঃ ॥২॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ বলিলেন) বিচক্ষণাঃ (নিপুণ) কবয়ঃ (পণ্ডিতগণ) কাম্যানাং (সকাম) কর্ম্মণাং (কর্ম্মসমূহের) ন্যাসং (পরিত্যাগকে) সন্ন্যাসং (সন্ন্যাস বলিয়া) বিদুঃ (জানেন) সর্ব্বকর্ম্মফলত্যাগং (নিত্য, নৈমিত্তিক ও কাম্য সমুদয় কর্ম্মের ফল ত্যাগকেই) ত্যাগং (ত্যাগ) প্রাহুঃ (বলিয়া থাকেন) ॥২॥

শ্রীভগবান্ কহিলেন—বিচক্ষণ পণ্ডিতগণ কাম্যকর্ম্মসমূহের পরিত্যাগকে—সন্ন্যাস, আর (নিত্যনৈমিত্তিক ও কাম্য) সকল প্রকার কর্ম্মের ফল-ত্যাগকে—ত্যাগ বলিয়া থাকেন ॥২॥

ত্যাজ্যং দোষবদিত্যেকে কর্ম্ম প্রাহুর্ম্মনীষিণঃ ।
যজ্ঞদানতপঃকর্ম্ম ন ত্যাজ্যমিতি চাপরে ॥৩॥

একে মনীষিণঃ (সাংখ্যবাদী কোন কোন পণ্ডিতগণ) কর্ম্ম (কর্ম্মমাত্রই) দোষবৎ (হিংসাদি দোষযুক্ত) ইতি (বলিয়া) ত্যাজ্যং (পরিত্যাজ্য) প্রাহুঃ (বলেন) ; অপরে চ (এবং অপর মীমাংসকগণ) যজ্ঞদানতপঃকর্ম্ম (যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি শাস্ত্রোক্ত কর্ম্ম) ন ত্যাজ্যং (ত্যাজ্য নহে) ইতি [প্রাহুঃ] (এইরূপ বলিয়া থাকেন) ॥৩॥

কোন কোন পণ্ডিত (সাংখ্যমতানুসারী) কর্ম্মমাত্রই (হিংসাদি দোষযুক্ত বলিয়া) পরিত্যাজ্য বলেন ; আবার কেহ কেহ (মীমাংসকগণ) বলেন যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি (শাস্ত্রোক্ত) কর্ম্ম ত্যাজ্য নহে ॥৩॥

নিশ্চয়ং শৃণু মে তত্র ত্যাগে ভরতসত্তম ।
ত্যাগো হি পুরুষব্যাঘ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্ত্তিতঃ ॥৪॥

[হে] ভরতসত্তম ! (হে ভরতশ্রেষ্ঠ !) তত্র (সেই) ত্যাগে (ত্যাগ বিষয়ে) মে (আমার) নিশ্চয়ং (সিদ্ধান্ত) শৃণু (শ্রবণ কর) । [হে] পুরুষব্যাঘ্র ! (হে পুরুষপ্রবর !) হি (যেহেতু) ত্যাগঃ (ত্যাগ) ত্রিবিধঃ (তিনপ্রকার) সংপ্রকীর্ত্তিতঃ (কথিত হইয়াছে) ॥৪॥

হে ভরতশ্রেষ্ঠ ! সেই ত্যাগ-বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত শ্রবণ কর । হে পুরুষপ্রবর ! এই ত্যাগ তিন প্রকার—ইহা সুষ্পষ্ট কথিত হইয়াছে ॥৪॥

যজ্ঞদানতপঃকর্ম্ম ন ত্যাজ্যং কার্য্যমেব তৎ ।
যজ্ঞো দানং তপশ্চৈব পাবনানি মনীষিণাম্ ॥৫॥

যজ্ঞদানতপঃকর্ম্ম (যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম) ন ত্যাজ্যং (ত্যাজ্য নহে), তৎ (তাহা) কার্য্যম্ এব (অবশ্য কর্ত্তব্য) [যতঃ] (যেহেতু) যজ্ঞঃ (যজ্ঞ) দানং (দান) তপঃ চ (ও তপস্যা) মনীষিণাম্ (বিবেকিগণের) পাবনানি এব (চিত্ত-শুদ্ধিকরই) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৫॥

যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম—ত্যাজ্য নহে, তাহা অবশ্যই কর্ত্তব্য । কারণ যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি বিবেকী ব্যক্তিগণের চিত্তশুদ্ধি করে ॥৫॥

এতান্যপি তু কর্ম্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা ফলানি চ ।
কর্ত্তব্যানীতি মে পার্থ নিশ্চিতং মতমুত্তমম্ ॥৬॥

[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীনন্দন !) এতানি (এই) কর্ম্মাণি অপি তু (কর্ম্মগুলিও কিন্তু) সঙ্গং (আসক্তি) ফলানি চ (ও ফল কামনা) ত্যক্ত্বা (পরিত্যাগ করিয়া) কর্ত্তব্যানি (শুধু কর্ত্তব্য বোধে করা আবশ্যক), ইতি (ইহাই) মে (আমার) নিশ্চিতং (স্থির) উত্তমম্ (উত্তম) মতম্ (সিদ্ধান্ত) ॥৬॥

হে পার্থ ! এই সমুদয় কর্ম্মও আসক্তি ও ফল কামনা পরিত্যাগপূর্ব্বক কর্ত্তব্য—ইহাই আমার নিশ্চিত উত্তম সিদ্ধান্ত জানিবে ॥৬॥

নিয়তস্য তু সন্ন্যাসঃ কর্ম্মণো নোপপদ্যতে ।
মোহাত্তস্য পরিত্যাগস্তামসঃ পরিকীর্ত্তিতঃ ॥৭॥

তু (কিন্তু) নিয়তস্য (নিত্য) কর্ম্মণঃ (কর্ম্মের) সন্ন্যাসঃ (পরিত্যাগ) ন উপপদ্যতে (যুক্তিসঙ্গত নহে) ; মোহাৎ (মোহবশতঃ) তস্য (সেই নিত্যকর্ম্মের) পরিত্যাগঃ (পরিত্যাগকে) তামসঃ (তামসিক) পরিকীর্ত্তিতঃ (বলা হয়) ॥৭॥

নিত্যকর্ম্মের পরিত্যাগ কখনও যুক্তিযুক্ত নহে ; মোহবশতঃ সেই নিত্যকর্ম্ম পরিত্যাগ করিলে উহাকে তামসিক বলা হয় ॥৭॥

দুঃখমিত্যেব যৎ কর্ম্ম কায়ক্লেশভয়াত্ত্যজেৎ ।
স কৃত্বা রাজসং ত্যাগং নৈব ত্যাগফলং লভেৎ ॥৮॥

[যঃ] (যে ব্যক্তি) যৎকর্ম্ম (সেই নিত্যকর্ম্মও) দুঃখম্ এব (কেবল দুঃখই) ইতি [মত্বা] (ইহা মনে করিয়া) কায়ক্লেশভয়াৎ (শারীরিক কষ্টের ভয়ে) ত্যজেৎ (ত্যাগ করে), সঃ (সেই) রাজসং (রাজসিক) ত্যাগং (ত্যাগ) কৃত্বা (করিয়া) ত্যাগফলং (ত্যাগের ফল—জ্ঞান) ন লভেৎ এব (কখনও লাভ করিতে পারে না) ॥৮॥

যে ব্যক্তি ‘দুঃখজনক’ মনে করিয়া শারীরিক কষ্টের ভয়ে নিত্যকর্ম্ম পরিত্যাগ করে, সে এই রাজসিক ত্যাগ করিয়া ত্যাগের ফল (জ্ঞান) প্রাপ্ত হয় না ॥৮॥

কার্য্যমিত্যেব যৎ কর্ম্ম নিয়তং ক্রিয়তেঽর্জ্জুন ।
সঙ্গং ত্যক্ত্বা ফলঞ্চৈব স ত্যাগঃ সাত্ত্বিকো মতঃ ॥৯॥

[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) সঙ্গং (আসক্তি) ফলং এব চ (ও ফলকামনাই) ত্যক্ত্বা (ত্যাগ করিয়া) কার্য্যম্ ইতি এব (অবশ্য কর্ত্তব্য বোধেই) যৎ (যে) নিয়তং (নিত্য) কর্ম্ম (কর্ম্মের) ক্রিয়তে (অনুষ্ঠান হয়) সঃ (উহাই) ত্যাগঃ সাত্ত্বিকঃ (সাত্ত্বিক ত্যাগ বলিয়া) [মে] (আমার) মতঃ (অভিমত ) ॥৯॥

হে অর্জ্জুন ! কর্ত্তব্য বোধে নিত্যকর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়াও যিনি আসক্তি ও ফলকামনা পরিত্যাগ করেন, তাঁহার ত্যাগই সাত্ত্বিক বলিয়া আমার অভিমত ॥৯॥

ন দ্বেষ্ট্যকুশলং কর্ম্ম কুশলে নানুষজ্জতে ।
ত্যাগী সত্ত্বসমাবিষ্টো মেধাবী ছিন্নসংশয়ঃ ॥১০॥

সত্ত্বসমাবিষ্টঃ (সত্ত্বগুণ সম্পন্ন) মেধাবী (তীক্ষ্ণবুদ্ধি) ছিন্নসংশয়ঃ (সন্দেহ রহিত) ত্যাগী (সাত্ত্বিক ত্যাগী ব্যক্তি) অকুশলং (দুঃখপ্রদ) কর্ম্ম (কর্ম্মের প্রতি) ন দ্বেষ্টি (বিদ্বেষ করেন না), কুশলে (সুখদায়ক কর্ম্মেও ) ন অনুষজ্জতে (আসক্ত হন না) ॥১০॥

সুতীক্ষ্ণবুদ্ধি, নিঃসংশয়, সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন, ত্যাগী পুরুষ—দুঃখদায়ক কর্ম্মে বিদ্বেষ বা সুখজনক কর্ম্মে আসক্তি করেন না ॥১০॥

ন হি দেহভৃতা শক্যং ত্যক্তুং কর্ম্মাণ্যশেষতঃ ।
যস্তু কর্ম্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে ॥১১॥

দেহভৃতা (দেহধারী জীব) অশেষতঃ (নিঃশেষরূপে) কর্ম্মাণি (কর্ম্মসমূহ) ত্যক্তুং (ত্যাগ করিতে) ন শক্যং হি (পারেই না) । তু (কিন্তু) যঃ (যিনি) কর্ম্মফলত্যাগী (কর্ম্মফল ত্যাগকারী) সঃ (তিনিই) ত্যাগী (প্রকৃত ত্যাগী) ইতি (এইরূপ) অভিধীয়তে (কথিত হন) ॥১১॥

দেহধারী জীবের পক্ষে নিঃশেষে সমস্ত কর্ম্ম পরিত্যাগ—সম্ভবই হয় না । সুতরাং যিনি কর্ম্মসমূহের ফলমাত্র ত্যাগী—তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী বলিয়া অভিহিত হন ॥১১॥

অনিষ্টমিষ্টং মিশ্রঞ্চ ত্রিবিধং কর্ম্মণং ফলম্ ।
ভবত্যত্যাগিনাং প্রেত্য ন তু সন্ন্যাসিনাং ক্বচিৎ ॥১২॥

অত্যাগিনাং (সকাম ব্যক্তিগণের) প্রেত্য (দেহত্যাগের পর) অনিষ্টম্ (নারকিত্ব) ইষ্টং (দেবত্ব) মিশ্রং চ (ও মনুষ্যত্ব) কর্ম্মণঃ (কর্ম্মের) ইতি (এই) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) ফলম্ (ফল) ভবতি (হইয়া থাকে), তু (কিন্তু) সন্ন্যাসিনাং (সন্ন্যাসিগণের) ক্বচিৎ (কখনও) ন [ভবতি] (হয় না) ॥১২॥

সকাম ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর ভাল, মন্দ ও মিশ্র—এই তিন প্রকার কর্ম্মফল লাভ হয়, কিন্তু সন্ন্যাসিগণকে কখনও (এই কর্ম্ম ফল) স্পর্শ করে না ॥১২॥

পঞ্চৈতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে ।
সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্ব্বকর্ম্মণাম্ ॥১৩॥

[হে] মহাবাহো ! (হে মহাবীর !) সাংখ্যে (বেদান্ত শাস্ত্রে) কৃতান্তে (কর্ম্মবিষয়ক সিদ্ধান্ত) প্রোক্তানি (কথিত) সর্ব্বকর্ম্মণাম্ (সমস্ত কর্ম্মের) সিদ্ধয়ে (নিষ্পত্তির প্রতি) এতানি (এই) পঞ্চ (পাঁচটি) কারণানি (কারণ) মে (আমার নিকট) নিবোধ (অবগত হও) ॥১৩॥

হে মহাবাহো ! সাংখ্য বা বেদান্তশাস্ত্রে কথিত কর্ম্ম-সমূহের সিদ্ধির এই কারণপঞ্চক আমার নিকট অবহত হও ॥১৩॥

অধিষ্ঠানং তথা কর্ত্তা করণঞ্চ পৃথগ্বিধম্ ।
বিবিধাশ্চ পৃথক্ চেষ্টা দৈবঞ্চৈবাত্র পঞ্চমম্ ॥১৪॥

অধিষ্ঠানং (দেহ) তথা (এবং) কর্ত্তা (চিৎ ও জড়ের গ্রন্থিরূপ অহঙ্কার) পৃথগ্বিধম্ (পৃথক্ পৃথক্) করণং চ (চক্ষুঃকর্ণাদি ইন্দ্রিয়গণ) বিবিধাঃ (নানাবিধ) পৃথক্ চ (অথচ বিভিন্ন) চেষ্টা (প্রাণ ও অপানাদির ব্যাপার) অত্র পঞ্চ (এই পাঁচটি) দৈবং এব চ (অন্তর্য্যামীই) ॥১৪॥

শরীর, (চিজ্জেড়র গ্রন্থিরূপ) অহঙ্কার, পৃথক পৃথক ইন্দ্রিয়, বিভিন্ন চেষ্টা ও দৈব অর্থাৎ জগদ্ব্যাপার নিয়ামকের সহায়তা—এই পাঁচটী (কর্ম্ম সমূহের কারণ) ॥১৪॥

শরীরবাঙ্মনোভির্যৎ কর্ম্ম প্রারভতে নরঃ ।
ন্যায্যং বা বিপরীতং বা পঞ্চৈতে তস্য হেতবঃ ।১৫॥

নর (মনুষ্য) শরীরবাঙ্মনোভিঃ (কায়, বাক্য ও মনের দ্বারা) যৎ (যে) ন্যায্যং (ন্যায়) বিপরীতং বা (অথবা অন্যায়) কর্ম্ম (কর্ম্মের) প্রারভতে (অনুষ্ঠান করে) এতে (এই) পঞ্চ (পাঁচটি) তস্য (তাহার) হেতবঃ (কারণ) ॥১৫॥

মনুষ্য—কায়, মন ও বাক্যের দ্বারা যে কার্য্য করে তাহা ন্যায্য বা অন্যায্য যাহাই হউক—এই পাঁচটীই তাহার কারণ ॥১৫॥

তত্রৈবং সতি কর্ত্তারমাত্মানং কেবলন্তু যঃ ।
পশ্যত্যকৃতবুদ্ধিত্বান্ন স পশ্যতি দুর্ম্মতিঃ ॥১৬॥

এবং (এইরূপ) সতি (অবস্থায়) তত্র (সেই কর্ম্ম সম্পাদন বিষয়ে) যঃ (যে ব্যক্তি) তু (কিন্তু) কেবলং (কেবল মাত্র) আত্মানং (জীবাত্মাকেই) কর্ত্তারম্ (কর্ত্তা বলিয়া) পশ্যতি (দর্শন করে), সঃ (সেই ব্যক্তি) অকৃতবুদ্ধিত্বাৎ (অমার্জ্জিত বুদ্ধিবশতঃ) দুর্ম্মতিঃ (দুষ্টবুদ্ধি) [সঃ] ন পশ্যতি (সে যথার্থ দেখিতেই পায় না) ॥১৬॥

এইরূপ অবস্থায় যে কেবল আপনাকেই কর্ত্তা বলিয়া দেখে, অযুক্ত বিচার হেতু সেই দুষ্টবুদ্ধি দেখিতেই পায় না ॥১৬॥

যস্য নাহঃকৃতো ভাবো বুদ্ধির্যস্য ন লিপ্যতে ।
হত্বাপি স ইমাঁল্লোকান্ন হন্তি ন নিবধ্যতে ॥১৭॥

যস্য (যাঁহার) অহং কৃতঃ (অহং বুদ্ধি প্রসূত) ভাবঃ (মনোভাব) ন (নাই), যস্য (যাঁহার) বুদ্ধিঃ (বুদ্ধি) ন লিপ্যতে (কর্ম্মফলে আসক্ত হয় না), সঃ (তিনি) ইমান্ (এই সমস্ত) লোকান্ (লোককে) হত্বা অপি (বধ করিয়াও) ন হন্তি (যথার্থতঃ কাহাকেও হনন করেন না) ন নিবধ্যতে (এবং কর্ম্মফলেও আবদ্ধ হন না) ॥১৭॥

যিনি (দ্বিতীয়াভিনিবেশজ) অহঙ্কারের বশীভূত নহেন, এবং যাঁহার বুদ্ধি (জগদ্ব্যাপারে) লিপ্ত নহে—তিনি এই সমুদায় লোককে হত্যা করিয়াও—হত্যা করেন না বা হত্যাকারীর দোষভাক্ হন না ॥১৭॥

জ্ঞানং জ্ঞেয়ং পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্ম্মচোদনা ।
করণং কর্ম্ম কর্ত্তেতি ত্রিবিধঃ কর্ম্মসংগ্রহঃ ॥১৮॥

জ্ঞানং (জ্ঞান) জ্ঞেয়ং (জ্ঞাতব্য বস্তু) পরিজ্ঞাতা (ও যিনি জানেন) [ইতি] (এই) ত্রিবিধা (তিন প্রকার) কর্ম্ম চোদনা (কর্ম্মপ্রবৃত্তির হেতু), করণং (সাধন) কর্ম্ম (অভিলষিত বিষয়) কর্ত্তা (ও অনুষ্ঠাতা) ইতি (এই) ত্রিবিধঃ (তিনপ্রকার) কর্ম্মসংগ্রহঃ (কার্য্যের আশ্রয়) ॥১৮॥

জ্ঞান, জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা—এই তিনটি কর্ম্মপ্রবৃত্তির হেতু ; করণ, কর্ম্ম ও কর্ত্তা—এই তিনটী কর্ম্মের আশ্রয় ॥১৮॥

জ্ঞানং কর্ম্ম চ কর্ত্তা চ ত্রিধৈব গুণভেদতঃ ।
প্রোচ্যতে গুণসংখ্যানে যথাবচ্ছৃণু তান্যপি ॥১৯॥

গুণসংখ্যানে (সাংখ্যশাস্ত্রে) জ্ঞানং (জ্ঞান) কর্ম্ম চ (কর্ম্ম) কর্ত্তা চ (ও কর্ত্তা) [এতে] (ইহারা প্রত্যেকে) গুণভেদতঃ (সাত্ত্বিকাদি গুণ-ভেদানুসারে) ত্রিধা এব (তিন প্রকারই) প্রোচ্যতে (কথিত হইয়াছে) ; তানি অপি (সেই সমুদয়ও) যথাবৎ (যথাযথভাবে) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥১৯॥

সাংখ্যশাস্ত্রে জ্ঞান, কর্ম্ম ও কর্ত্তা—ইহারা প্রত্যেকে (সাত্ত্বিকাদি) গুণ-ভেদে তিন প্রকারই নির্ণীত হইয়াছে, সেই সকলও যথাযথরূপে শ্রবণ কর ॥১৯॥

সর্ব্বভূতেষু যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে ।
অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্ ॥২০॥

যেন (যে জ্ঞান দ্বারা) বিভক্তেষু (পরস্পর ভিন্ন) সর্ব্বভূতেষু (সকল জীবের মধ্যে) একং (এক) অবিভক্তং (অখণ্ড) অব্যয়ম্ (অবিনশ্বর) ভাবম্ (জীবাত্মাকে) ঈক্ষতে (দর্শন করা যায়), তৎ (সেই) জ্ঞানং (জ্ঞানকে) সাত্ত্বিকম্ (সাত্ত্বিকজ্ঞান বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥২০॥

যে জ্ঞান দ্বারা পরস্পর পৃথক্ সমস্ত প্রাণিতে বর্ত্তমান এক অবিনশ্বর ও অখণ্ড চিন্ময় তত্ত্বকে (জীবরূপ আমার পরাশক্তি তত্ত্বকে) দর্শন করা যায়, সেই জ্ঞানকেই সাত্ত্বিক জ্ঞান বলা হয় ॥২০॥

পৃথক্ত্বেন তু যজ্জ্ঞানং নানাভাবান্ পৃথগ্বিধান্ ।
বেত্তি সর্ব্বেষু ভূতেষু তজ্জ্ঞানং বিদ্ধি রাজসম্ ॥২১॥

যৎ (যে) জ্ঞানং (জ্ঞান), সর্ব্বেষু (সকল) ভূতেষু (প্রাণীমধ্যে) পৃথক্ত্বেন (পৃথক্ পৃথক্) পৃথগ্বিধান (নানাচেষ্টাযুক্ত) নানাভাবান্ (বহু পৃথক্ তত্ত্ব) বেত্তি (অনুভব করে) তৎ (সেই) জ্ঞানং তু (জ্ঞানকে) রাজসম্ (রাজসিক বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥২১॥

যে জ্ঞান—প্রাণী জগতে (পরস্পর স্বার্থ সংঘাতময়) পৃথক পৃথক নানা চেষ্টাযুক্ত, (স্বতন্ত্র) বহু পৃথক তত্ত্ব অনুভব করে—তাহাকে রাজস জ্ঞান বলে ॥২১॥

যত্তু কৃৎস্নবদেকস্মিন্ কার্য্যে সক্তমহৈতুকম্ ।
অতত্ত্বার্থবদল্পঞ্চ তত্তামসমুদাহৃতম্ ॥২২॥

যৎ তু (আর যে জ্ঞান) একস্মিন্কার্য্যে (কোন খণ্ড বিষয়ে) কৃৎস্নবৎ (পূর্ণবৎ) সক্তম্ (আকৃষ্ট) অহৈতুকম্ (হেতু রহিত) অতক্ত্বার্থবৎ (শাস্ত্রবিচার হীন) অল্পং চ (সঙ্কীর্ণ) তৎ (তাহা) তামসম্ (তামসিক জ্ঞান বলিয়া) উদাহৃতম্ (কথিত হয়) ॥২২॥

আর যে জ্ঞান কোন খণ্ড (তুচ্ছ) বিষয়ে পূর্ণবৎ (উত্তমের ন্যায়) আকৃষ্ট, হেতু-রহিত, শাস্ত্রবিচারহীন, ও (পশুবৎ) সঙ্কীর্ণ—তাহা তামস বলিয়া কথিত ॥২২॥

নিয়তং সঙ্গরহিতমরাগদ্বেষতঃ কৃতম্ ।
অফলপ্রেপ্সুনা কর্ম্ম যত্তৎ সাত্ত্বিকমুচ্যতে ॥২৩॥

অফলপ্রেপ্সুনা (অফলাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি) সঙ্গরহিতম্ (অনাসক্তভাবে) অরাগদ্বেষতঃ (রাগদ্বেষরহিত হইয়া) যৎ (যে) কর্ম্ম (কর্ম্ম) নিয়তং (নিত্য) কৃতম্ (সম্পাদন করেন) তৎ (তাহাকে) সাত্ত্বিকম্ (সাত্ত্বিক কর্ম্ম) উচ্যতে (বলা হয়) ॥২৩॥

ফলাকাঙ্ক্ষাশূন্য ব্যক্তি অনাসক্তভাবে রাগ-দ্বেষ বর্জ্জিত হইয়া, যে নিত্য-কর্ম্ম সম্পাদন করেন তাহাই সাত্ত্বিক কর্ম্ম ॥২৩॥

যত্তু কামেপ্সুনা কর্ম্ম সাহঙ্কারেণ বা পুনঃ ।
ক্রিয়তে বহুলায়াসং তদ্রাজসমুদাহৃতম্ ॥২৪॥

পুনঃ (আর) কামেপ্সুনা (ফলকামী) বা সাহঙ্কারেণ (অথবা অহঙ্কারী ব্যক্তি) বহুলায়াসং (অতিক্লেশসাধ্য) যৎ তু (যে) কর্ম্ম (কর্ম্ম) ক্রিয়তে (করে) তৎ (তাহাই) রাজসম্ (রাজসিক কর্ম্ম) উদাহৃতম্ (বলিয়া কথিত) ॥২৪॥

আর ফলকামী বা অহঙ্কারী ব্যক্তি বহু ক্লেশসাধ্য যে কর্ম্ম করে, তাহাই রাজসিক বলিয়া কথিত ॥২৪॥

অনুবন্ধং ক্ষয়ং হিংসামনপেক্ষ্য চ পৌরুষম্ ।
মোহাদারভ্যতে কর্ম্ম যত্তত্তামসমুচ্যতে ॥২৫॥

অনুবন্ধং (পরিণাম) ক্ষয়ং (ক্ষতি) হিংসাম্ (হিংসা) পৌরুষম্ চ (ও নিজ সামর্থ্য) অনপেক্ষ্য (পর্য্যালোচনা না করিয়া) মোহাৎ (মোহবশতঃ) যৎ কর্ম্ম (যে কর্ম্ম) আরভ্যতে (আরম্ভ করা হয়), তৎ (তাহাকেই) তামসম্ (তামসিক কর্ম্ম) উচ্যতে (বলা হয়) ॥২৫॥

আর পরিণাম, ক্ষতি, হিংসা ও নিজের সামর্থ্য—এই সকল পর্য্যালোচনা না করিয়া মোহবশতঃ যে কর্ম্ম আরম্ভ করা হয়, তাহাকেই তামসিক কর্ম্ম বলে ॥২৫॥

মুক্তসঙ্গোঽনহংবাদী ধৃত্যুৎসাহসমন্বিতঃ ।
সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোর্নির্ব্বিকারঃ কর্ত্তা সাত্ত্বিক উচ্যতে ॥২৬॥

মুক্তসঙ্গঃ (আসক্তি শূন্য) অনহংবাদী (অহঙ্কার বর্জ্জিত) ধৃত্যুৎসাহ সমন্বিতঃ (ধৈর্য্য ও উৎসাহশালী) সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ (কার্য্যফলের সিদ্ধি ও অসিদ্ধি বিষয়ে) নির্ব্বিকারঃ (অবিকৃতচিত্ত) কর্ত্তা (কর্ত্তাকে) সাত্ত্বিকঃ (সাত্ত্বিক কর্ত্তা) উচ্যতে (বলে) ॥২৬॥

আসক্তিশূন্য, নিরহঙ্কার অথচ দৈর্য্য ও উৎসাহশালী এবং ফলের সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্ব্বিকার কর্ত্তা—সাত্ত্বিক বলিয়া কথিত হন ॥২৬॥

রাগী কর্ম্মফলপ্রেপ্সুর্লুব্ধো হিংসাত্মকোঽশুচিঃ ।
হর্ষশোকান্বিতঃ কর্ত্তা রাজসঃ পরিকীর্ত্তিতঃ ॥২৭॥

রাগী (আসক্তিযুক্ত) কর্ম্মফলপ্রেপ্সুঃ (কর্ম্মফলাকাঙ্ক্ষী) লুব্ধঃ (লোভী) হিংসাত্মকঃ (হিংস্রস্বভাব) অশুচিঃ (অনাচারী) হর্ষশোকান্বিতঃ (হর্ষ শোকাদির বশীভূত) কর্ত্তা (কর্ত্তাকে) রাজসঃ (রাজসিক কর্ত্তা) পরিকীর্ত্তিতঃ (বলা হয়) ॥২৭॥

আসক্তিযুক্ত, ফলকামী, লোভী, হিংস্রস্বভাব, অনাচারী ও হর্ষ-শোকাদির বশীভূত কর্ত্তা—রাজসিক বলিয়া কথিত হয় ॥২৭॥

অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধঃ শঠো নৈষ্কৃতিকোঽলসঃ ।
বিষাদী দীর্ঘসূত্রী চ কর্ত্তা তামস উচ্যতে ॥২৮॥

অযুক্তঃ (অস্থিরমতি) প্রাকৃতঃ (নির্ব্বাধ) স্তব্ধঃ (অনম্র) শঠঃ (ধূর্ত্ত) নৈষ্কৃতিকঃ (পরের অপমানকারী) অলসঃ (অলস) বিষাদী (খিন্ন) দীর্ঘসূত্রী চ (ও দীর্ঘসূত্রী) কর্ত্তা (কর্ত্তাকে) তামসঃ (তামসিক কর্ত্তা) উচ্যতে (বলে) ॥২৮॥

অস্থিরমতি, জড়বুদ্ধি, অনম্র, ধূর্ত্ত, পরাপমানকারী, অলস, খিন্ন ও দীর্ঘসূত্রী কর্ত্তা—তামসিক বলিয়া কথিত হয় ॥২৮॥

বৃদ্ধের্ভেদং ধৃতেশ্চৈব গুণতস্ত্রিবিধং শৃণু ।
প্রোচ্যমানমশেষেণ পৃথক্ত্বেন ধনঞ্জয় ॥২৯॥

[হে] ধনঞ্জয় ! (হে ধনঞ্জয় !) বুদ্ধেঃ (বুদ্ধির) ধৃতেঃ চ এব (ও ধৃতির) গুণতঃ (গুণত্রয়ানুসারে) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) ভেদং (ভেদ) অশেষেণ (সম্পূর্ণরূপে) পৃথক্ত্বেন (ও পৃথক্ভাবে) প্রোচ্যমানং (বলিতেছি), শৃণু (শ্রবণ কর) ॥২৯॥

হে ধনঞ্জয় ! গুণানুসারে বুদ্ধি ও ধৃতির তিন প্রকার ভেদ সম্পূর্ণরূপে ও পৃথক্ভাবে বলিতেছি—শ্রবণ কর ॥২৯॥

প্রবৃত্তিঞ্চ নিবৃত্তিঞ্চ কার্য্যাকার্য্যে ভয়াভয়ে ।
বন্ধং মোক্ষঞ্চ যা বেত্তি বুদ্ধিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ॥৩০॥

[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) যা বুদ্ধিঃ (যে বুদ্ধি) প্রবৃত্তিং চ (ধর্ম্মে প্রবৃত্তি) নিবৃত্তিং চ (ও অধর্ম্ম হইতে নিবৃত্তি) কার্য্যাকার্য্যে (কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য), ভয়াভয়ে (ভয় ও অভয়) বন্ধং মোক্ষং চ (বন্ধন ও মোক্ষ), বেত্তি (যথার্থভাবে জানিতে পারে) সা (সেই বুদ্ধিই) সাত্ত্বিকী (সাত্ত্বিকী বুদ্ধি) ॥৩০॥

হে পার্থ ! যে বুদ্ধি-দ্বারা (ধর্ম্মে) প্রবৃত্তি ও (অধর্ম্মে) নিবৃত্তি, কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য, ভয় ও অভয় এবং বন্ধন ও মুক্তি (প্রভৃতির স্বরূপ) জানিতে পারা যায় তাহাই—সাত্ত্বিক বুদ্ধি ॥৩০॥

যয়া ধর্ম্মমধর্ম্মঞ্চ কার্য্যঞ্চাকার্য্যমেব চ ।
অযথাবৎ প্রজানাতি বুদ্ধিঃ সা পার্থ রাজসী ॥৩১॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) যয়া (যে বুদ্ধি দ্বারা) ধর্ম্মম্ (ধর্ম্ম) অধর্ম্মং চ (ও অধর্ম্ম), কার্য্যং চ (কার্য্য) অকার্য্যম্ এব চ (ও অকার্য্য) অযথাবৎ (অসম্যগ্রূপে) প্রজানাতি (জানিতে পারা যায়), সা বুদ্ধিঃ (সেই বুদ্ধিই) রাজসী (রাজসিক বুদ্ধি) ॥৩১॥

হে পার্থ ! যে বুদ্ধি-দ্বারা ধর্ম্ম ও অধর্ম্ম, কার্য্য ও অকার্য্য প্রভৃতির স্বরূপ অসম্যগ্ভাবে নির্ণীত হয় তাহাই—রাজসিক বুদ্ধি ॥৩১॥

অধর্ম্মং ধর্ম্মমিতি যা মন্যতে তমসাবৃতা ।
সর্ব্বার্থান্ বিপরীতাংশ্চ বুদ্ধিঃ সা পার্থ তামসী ॥৩২॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) যা বুদ্ধিঃ (যে বুদ্ধি) অধর্ম্মং (অধর্ম্মকে) ধর্ম্মম্ (ধর্ম্ম) সর্ব্বার্থান্ চ (এবং সমস্ত জ্ঞেয় পদার্থকে) বিপরীতান্ ইতি (বিপরীত বলিয়া) মন্যতে (মনে করে), সা (সেই বুদ্ধি) তমসা (তমোগুণে) আবৃতা (আচ্ছন্ন) তামসী (তামসিকী বুদ্ধি) ॥৩২॥

হে পার্থ ! যে বুদ্ধি-দ্বারা অধর্ম্মকে ধর্ম্ম তথা সমুদয় বিষয়কেই তাহার বিপরীতরূপে ধারণা হয়, সেই মোহাবৃত বুদ্ধিই—তামসিক বুদ্ধি ॥৩২॥

ধৃত্যা যয়া ধারয়তে মনঃপ্রাণেন্দ্রিয়ক্রিয়াঃ ।
যোগেনাব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ॥৩৩॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) যোগেন (চিত্তের একাগ্রতা বশতঃ) অব্যভিচারিণ্যা (অব্যভিচারিণী) যয়া (যে) ধৃত্যা (ধৃতি দ্বারা) মনঃপ্রাণেন্দ্রিয় ক্রিয়াঃ (মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয় সকলের চেষ্টাকে) ধারয়তে (নিয়মিত করে) সা ধৃতিঃ (সেই ধৃতিই) সাত্ত্বিকী (সাত্ত্বিকী ধৃতি) ॥৩৩॥

হে পার্থ ! যে ঐকান্তিকী ধৃতি নিষ্ঠার সহিত মন, প্রাণ, ইন্দ্রিয় ও তাহাদের ক্রিয়াসমূহ নিয়মিত করে, সেই ধৃতিই—সাত্ত্বিক ॥৩৩॥

যয়া তু ধর্ম্মকামার্থান্ ধৃত্যা ধারয়তেঽর্জ্জুন ।
প্রসঙ্গেন ফলাকাঙ্ক্ষী ধৃতিঃ সা পার্থ রাজসী ॥৩৪॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) [হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) যয়া (যে) ধৃত্যা (ধৃতি দ্বারা) ধর্ম্মকামার্থান্ (ধর্ম্ম, কাম ও অর্থকে) [প্রাধান্যেন] (প্রধান বলিয়া) ধারয়তে (ধারণ করে) [এবং] প্রসঙ্গেন (ইহাদের সঙ্গ বশতঃ) ফলাকাঙ্ক্ষী (ফলকামী) [ভবতি] (হয়) ; সা ধৃতিঃ (সেই ধৃতিই) রাজসী (রাজসিকী ধৃতি) ॥৩৪॥

হে পার্থ ! হে অর্জ্জুন ! যে ধৃতি ফলাকাঙ্ক্ষার সহিত ধর্ম্ম, অর্থ ও কামকে ধরিয়া থাকে তাহাকেই—রাজসিক ধৃতি বলা হয় ॥৩৪॥

যয়া স্বপ্নং ভয়ং শোকং বিষাদং মদমেব চ ।
ন বিমুঞ্চতি দুর্ম্মেধা ধৃতিঃ সা তামসী মতা ॥৩৫॥

দুর্ম্মেধাঃ (দুর্ব্বুদ্ধি ব্যক্তি) যয়া (যে ধৃতি দ্বারা) স্বপ্নং (নিদ্রা) ভয়ং (ভয়) শোকং (শোক) বিষাদং (দুঃখ) মদম্ এব চ (ও বিষয়ের গর্ব্বকে) ন বিমুঞ্চতি (পরিত্যাগ করে না) সা ধৃতিঃ (সেই ধৃতিই) তামসী (তামসিকী ধৃতি বলিয়া) মতা (কথিত হয়) ॥৩৫॥

দুর্ম্মতি ব্যক্তি যে ধৃতি দ্বারা নিদ্রা, ভয়, শোক, বিষাদ ও গর্ব্ব প্রভৃতিকে পরিত্যাগ করে না, সেই ধৃতিই—তামসিক ধৃতি ॥৩৫॥

সুখং ত্বিদানীং ত্রিবিধং শৃণু মে ভরতর্ষভ ।
অভ্যাসাদ্রমতে যত্র দুঃখান্তঞ্চ নিগচ্ছতি ॥৩৬॥
যত্তদগ্রে বিষমিব পরিণামেঽমৃতোপমম্ ।
তৎ সুখং সাত্ত্বিকং প্রোক্তমাত্মবুদ্ধিপ্রসাদজম্ ॥৩৭॥

[হে] ভরতর্ষভ ! (হে ভরতশ্রেষ্ঠ !) ইদানী তু (এখন) মে (আমার নিকট) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) সুখং (সুখের বিষয়) শৃণু (শ্রবণ কর) যত্র (যাহাতে) অভ্যাসাৎ (পুনঃ পুনঃ অনুশীলন দ্বারাক্রমে) রমতে (রতি জন্মে) দুঃখান্তং চ (এবং দুঃখের অবসান) নিগচ্ছতি (লাভ করে) ।
যৎ তৎ (যে কোন সুখ )অগ্রে (প্রথমে) বিষম্ ইব (বিষের মত) পরিণামে (অবশেষে) অমৃতোপমম্ (অমৃততুল্য), আত্মবুদ্ধিপ্রসাদজম্ (আত্মা সম্বন্ধিনী বুদ্ধির নির্ম্মলতা হইতে জাত) তৎ সুখং (সেই সুখকে) সাত্ত্বিকং (সাত্ত্বিক সুখ) প্রোক্তম্ (বলা হয়) ॥৩৬–৩৭॥

হে ভরতর্ষভ ! সম্প্রতি আমার নিকট তিন প্রকার সুখের বিষয় শ্রবণ কর । যাহাতে পুনঃ পুনঃ (অনুশীলনরূপ) অভ্যাস দ্বারা রতি জন্মে এবং দুঃখের অবসানও ঘটে, যাহা প্রথমে বিষেয় ন্যায় কষ্টকর কিন্তু পরিণামে যাহা অমৃততুল্য সুখকর এবং যাহা শুদ্ধ আত্মজ্ঞান হইতে উৎপন্ন, সেই সুখকেই—সাত্ত্বিক সুখ বলে ॥৩৬–৩৭॥

বিষয়েন্দ্রিয়সংযোগাদ্­যত্তদগ্রেঽমৃতোপমম্ ।
পরিণামে বিষমিব তৎ সুখং রাজসং স্মৃতম্ ॥৩৮॥

যৎ (যে সুখ) বিষয়েন্দ্রিয়সংযোগাৎ (বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হইতে) [জায়তে] (উৎপন্ন হয়), তৎ (সেই সুখ) অগ্রে (প্রথমে) অমৃতোপমম্ (অমৃত তুল্য) পরিণামে (অবশেষে) বিষম্ ইব (বিষের ন্যায়) তৎ সুখং (সেই সুখই) রাজসং (রাজসিক সুখ) স্মৃতম্ (বলে) ॥৩৮॥

যে সুখ, বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হইতে সঞ্জাত—যাহা প্রথমে অমৃতের মত এবং পরিণামে বিষতুল্য অনুভূত হয়, সেই সুখকেই—রাজসিক সুখ বলে ॥৩৮॥

যদগ্রে চানুবন্ধে চ সুখং মোহনমাত্মনঃ ।
নিদ্রালস্যপ্রমাদোত্থং তত্তামসমুদাহৃতম্ ॥৩৯॥

যৎ সুখং (যে সুখ) অগ্রে (আরম্ভে) অনুবন্ধে চ (ও পরিণামে) আত্মনঃ (আত্মার সম্বন্ধে) মোহনম্ (মোহ জনক) নিদ্রালস্যপ্রমাদোত্থং (নিদ্রা, আলস্য ও অবিবেক হইতে উৎপন্ন) তৎ (সেই সুখকে) তামসম্ (তামসিক সুখ) উদাহৃতম্ (বলা হয়) ॥৩৯॥

যে সুখ আগে ও পরে আত্মার মোহজনক, নিদ্রা, আলস্য ও অনবধানতা হইতে উত্থিত, সেই সুখকেই—তামসিক সুখ বলা হয় ॥৩৯॥

ন তদস্তি পৃথিব্যাং বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ ।
সত্ত্বং প্রকৃতিজৈর্মুক্তং যদেভিঃ স্যাত্ত্রিভির্গুণৈঃ ॥৪০॥

পুনঃ (আবার) পৃথিব্যাং (পৃথিবীতে) [মনুষ্যাদিষু] (মনুষ্যাদি জীবগণের মধ্যে) দিবি বা (অথবা স্বর্গে) দেবেষু বা (দেবগণের মধ্যেও) তৎ সত্ত্বং (সেইরূপ কোন প্রাণী বা অন্য বস্তু) ন অস্তি (নাই), যৎ (যাহার) প্রকৃতিজৈঃ (প্রকৃতি সম্ভূত) এভিঃ (এই) ত্রিভিঃ (তিন) গুণৈঃ (গুণ হইতে) মুক্তং স্যাৎ (স্বরূপতঃ মুক্ত থাকিবার সম্ভাবনা আছে) ॥৪০॥

এই পৃথিবীতে (মনুষ্য প্রভৃতি জীবগণের মধ্যে) অথবা স্বর্গে দেবগণের মধ্যে এমন কোন জীব বা বস্তু নাই, যাহা প্রকৃতিজাত এই তিনগুণ হইতে মুক্ত ॥৪০॥

ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রণাঞ্চ পরন্তপ ।
কর্ম্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ ॥৪১॥

[হে] পরন্তপ ! (হে শক্রবিমর্দ্দন !) ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্ত্রিয় ও বৈশ্যের) শূদ্রানাং চ (এবং শূদ্রগণের) কর্ম্মাণি (কর্ম্মসমূহ) স্বভাবপ্রভবৈঃ (প্রকৃতিজাত) গুণৈঃ (সত্ত্বাদি গুণ দ্বারা) প্রবিভক্তানি (প্রকৃতরূপে বিভাগ করা হইয়াছে) ॥৪১॥

হে পরন্তপ ! ব্রাহ্মণ, ক্ষত্ত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রগণের স্বভাবজাত সত্ত্বাদি গুণের দ্বারাই কর্ম্মসকল প্রকৃষ্টভাবে বিভক্ত (শ্রেণীবদ্ধ) করা হইয়াছে ॥৪১॥

শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জ্জবমেব চ ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম্ম স্বভাবজম্ ॥৪২॥

শমঃ (অন্তরিন্দ্রিয় সংযম) দমঃ (বাহ্যেন্দ্রিয় নিগ্রহ) তপঃ (তপস্যা) শৌচং (বাহ্য ও অভ্যন্তরে শুদ্ধি) ক্ষান্তিঃ (ক্ষমা) আর্জ্জবম্ এব চ (ও সরলতা) জ্ঞানং (শাস্ত্রজ্ঞান) বিজ্ঞানম্ (তত্ত্বানুভব) আস্তিক্যং (ও শাস্ত্র বাক্যে সুদৃঢ় বিশ্বাস) [এতানি] (এই সকলই) স্বভাবজম্ (স্বভাবজনিত) ব্রহ্মকর্ম্ম (ব্রহ্মণের কর্ম্ম) [ভবতি] (হয়) ॥৪২॥

শম, দম, তপস্যা, শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য—এই সকলই ব্রহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম্ম ॥৪২॥

শৌর্য্যং তেজো ধৃতির্দাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্ ।
দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষত্ত্রকর্ম্ম স্বভাবজম্ ॥৪৩॥

শৌর্য্যং (পরাক্রম) তেজঃ (তেজস্বিভাব) ধৃতিঃ (ধৈর্য্য) দাক্ষ্যং (কর্ম্ম কুশলতা) যুদ্ধে চ অপি (ও যুদ্ধে) অপলায়নম্ (অপরাঙ্মুখতা) দানম্ (দান) ঈশ্বর ভাবঃ চ (ও লোকনিয়ন্তত্ব) [এতানি] (এই সকলই) স্বভাবজম্ (স্বভাবজাত) ক্ষত্ত্রং কর্ম্ম (ক্ষত্ত্রিয়ের কর্ম্ম) [ভবতি] (হয়) ॥৪৩॥

শৌর্য্য, তেজ, ধৈর্য্য, দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন, দানশীলতা ও প্রভুত্ব—এই সকলই ক্ষত্রিয়ের স্বাভাবিক কর্ম্ম ॥৪৩॥

কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম্ম স্বভাবজম্ ।
পরিচর্য্যাত্মকং কর্ম্ম শূদ্রাস্যাপি স্বভাবজম্ ॥৪৪॥

কৃষিগোরক্ষ্য বাণিজ্যং (কৃষিকার্য্য, গোপালন ও বাণিজ্য) [এতানি] (এই সকল) স্বভাবজম্ (স্বাভাবিক) বৈশ্যকর্ম্ম (বৈশ্যের কর্ম্ম) । পরিচর্য্যাত্মকং (ব্রাহ্মণাদিবর্ণত্রয়ের সেবারূপ) কর্ম্ম অপি (কর্ম্মই) শূদ্রস্য (শূদ্রের পক্ষে) স্বভাবজম্ (স্বাভাবিক) ॥৪৪॥

কৃষিকার্য্য, গো-পালন ও বাণিজ্য এই সকলই বৈশ্যের স্বাভাবিক কর্ম্ম এবং ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের পরিচর্য্যারূপ কর্ম্মই (বা বিবিধ কর্ম্মের সহায়তাই) শূদ্রের স্বাভাবিক কর্ম্ম ॥৪৪॥

স্বে স্বে কর্ম্মণ্যভিরতঃ সংসিদ্ধিং লভতে নরঃ ।
স্বকর্ম্মনিরতঃ সিদ্ধিং যথা বিন্দতি তচ্ছৃণু ॥৪৫॥

স্বে স্বে (নিজ নিজ অধিকার বিহিত) কর্ম্মণি (কর্ম্মে) অভিরতঃ (পরিনিষ্ঠিত) নরঃ (মানব) সংসিদ্ধিং (স্বরূপজ্ঞান) লভতে (লাভ করে) । স্বকর্ম্মনিরতঃ (নিজ নজি অধিকার-বিহিত কর্ম্মানুষ্ঠানকারী) যথা (যে প্রকারে) সিদ্ধিং (সিদ্ধি) বিন্দতি (লাভ করে) তৎ (তাহা) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥৪৫॥

স্ব-স্ব অধিকার বিহিত কর্ম্মে তৎপর ব্যক্তি স্বরূপজ্ঞান লাভ করে ; নিজ নিজ অধিকার বিহিত কর্ম্মানুষ্ঠানকারী যেরূপে সিদ্ধিলাভ করে—তাহা শ্রবণ কর ॥৪৫॥

যতঃ প্রবৃত্তির্ভূতানাং যেন সর্ব্বমিদং ততম্ ।
স্বকর্ম্মণা তমভ্যর্চ্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ ॥৪৬॥

যতঃ (যাহা হইতে) ভূতানাং (জীবগণের) প্রবৃত্তিঃ (জন্মাদি) যেন (যিনি ব্যষ্টি ও সমষ্টিরূপে) ইদং (এই) সর্ব্বম্ (সমস্ত বিশ্বে) ততম্ (ব্যাপ্ত রহিয়াছেন), তম্ (সেই পরমেশ্বরকে) মানবঃ (মনুষ্য) স্বকর্ম্মণা (নিজ নিজ অধিকার-বিহিত কর্ম্মের দ্বারা) অভ্যর্চ্চ্য (আরাধনা করিয়া) সিদ্ধিং (সিদ্ধি) বিন্দতি (লাভ করে) ॥৪৬॥

যে পরমেশ্বর হইতে নিখিল প্রাণিগণের উৎপত্তি বা চেষ্টা এবং যিনি (ব্যাষ্টি ও সমষ্টিপ্রকাশ অধিকার করিয়া) এই সমগ্র বিশ্বে পরিব্যাপ্ত আছেন, সেই পরমেশ্বরকে মানব, নিজ নিজ অধিকার বিহিত কর্ম্মের দ্বারা আরাধনা করিয়া সিদ্ধিলাভ করে ॥৪৬॥

শ্রেয়ান্ স্বধর্ম্মো বিগুণঃ পরধর্ম্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ ।
স্বভাবনিয়তং কর্ম্ম কুর্ব্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্ ॥৪৭॥

স্বনুষ্ঠিতাৎ (সমক্­রূপে অনুষ্ঠিত) পরধর্ম্মাৎ (পরের ধর্ম্ম অপেক্ষা) বিগুণঃ (অসম্যক্­রূপে অনুষ্ঠিত) স্বধর্ম্মঃ (নিজ নিজ ধর্ম্ম) শ্রেয়ান্ (শ্রেষ্ঠ), স্বভাবনিয়তং (প্রকৃতি-প্রেরিত) কর্ম্ম (কর্ম্ম) কুর্ব্বন্ (করিয়া) [মানবঃ] (মানব) কিল্বিষম্ ন আপ্নোতি (পাপভাগী হয় না) ॥৪৭॥

স্বধর্ম্ম দোষযুক্ত হইলেও, সুষ্ঠু অনুষ্ঠিত অপরের ধর্ম্ম হইতে শ্রেষ্ঠ ; প্রকৃতি-প্রেরিত ধর্ম্ম করিয়া মনুষ্য পাপভাগী হয় না ॥৪৭॥

সহজং কর্ম্ম কৌন্তেয় সদোষমপি ন ত্যজেৎ ।
সর্ব্বারম্ভা হি দোষেণ ধূমেনাগ্নিরিবাবৃতাঃ ॥৪৮॥

[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) সদোষম্ অপি (দোষ যুক্ত হইলেও) সহজং (স্বভাববিহিত) কর্ম্ম (কর্ম্ম) ন ত্যজেৎ (ত্যাগ করিতে নাই) হি (কারণ) ধূমেন (ধূমের দ্বারা) অগ্নিঃ ইব (আবৃত অগ্নির ন্যায়) সর্ব্বারম্ভাঃ (সমস্ত কর্ম্মই) দোষেণ (দোষের দ্বারা) আবৃতাঃ (আবৃত) ॥৪৮॥

হে কৌন্তেয়! দোষযুক্ত হইলেও স্বভাববিহিত কর্ম্ম ত্যাগ করিতে নাই, কারণ ধূমের দ্বারা আবৃত বহ্নির ন্যায়—সমস্ত কর্ম্মই দোষের দ্বারা (নূনাধিক) আবৃত ॥৪৮॥

অসক্তবুদ্ধিঃ সর্ব্বত্র জিতাত্মা বিগতস্পৃহঃ ।
নৈষ্কর্ম্ম্যসিদ্ধিং পরমাং সন্ন্যাসেনাধিগচ্ছতি ॥৪৯॥

সর্ব্বত্র (প্রাকৃত সমস্ত বস্তুতে) অসক্তে বুদ্ধিঃ (অনাসক্ত বুদ্ধি) জীতাত্মা (বশীকৃত-চিত্ত) বিগতস্পৃহঃ (ও নিষ্কাম ব্যক্তি) সন্ন্যাসেন (কর্ম্মফলের পরিত্যাগ দ্বারা) পরমাং নৈষ্কর্ম্ম্যসিদ্ধিং (নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ পরমসিদ্ধি) অধিগচ্ছতি (লাভ করেন) ॥৪৯॥

প্রাকৃত সমুদয় বস্তুতে অনাসক্ত-বুদ্ধি, বশীকৃত-চিত্ত ও নিষ্কাম ব্যক্তি কর্ম্মফলের পরিত্যাগ দ্বারা নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ পরমসিদ্ধি লাভ করেন ॥৪৯॥

সিদ্ধিং প্রাপ্তো যথা ব্রহ্ম তথাপ্নোতি নিবোধ মে ।
সমাসেনৈব কৌন্তেয় নিষ্ঠা জ্ঞানস্য যা পরা ॥৫০॥

[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীনন্দন !) সিদ্ধিং প্রাপ্তঃ (নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ সিদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি) যথা (যেরূপে) ব্রহ্ম (ব্রহ্মকে) আপ্নোতি (প্রাপ্ত হন), যা (যে ব্রহ্মপ্রাপ্তি) জ্ঞানস্য (জ্ঞানের) পরা নিষ্ঠা (পরমগতি), তথা (তাহা) সমাসেন এব (সংক্ষেপে) মে (আমার নিকট) নিবোধ (শ্রবণ কর) ॥৫০॥

হে কৌন্তেয় ! নৈষ্কর্ম্ম্যরূপ সিদ্ধি প্রাপ্ত ব্যক্তি যেরূপে ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন,—যে ব্রহ্মপ্রাপ্তি (চিদাত্মবোধ) জ্ঞানের পরম গতি—তাহা তুমি আমার নিকট সংক্ষেপে শ্রবণ কর ॥৫০॥

বুদ্ধ্যা বিশুদ্ধয়া যুক্তো ধৃত্যাত্মানং নিয়ম্য চ ।
শব্দাদীন্ বিষয়াংস্ত্যক্ত্বা রাগদ্বেষৌ ব্যুদস্য চ ॥৫১॥
বিবিক্তসেবী লঘ্বাশী যতবাক্কায়মানসঃ ।
ধ্যানযোগপরো নিত্যং বৈরাগ্যং সমুপাশ্রিতঃ ॥৫২॥
অহঙ্কারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং পরিগ্রহম্ ।
বিমুচ্য নির্ম্মমঃ শান্তো ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥৫৩॥

বিশুদ্ধয়া (সাত্ত্বিকী) বুদ্ধ্যা (বুদ্ধি) যুক্তঃ [সন্] (যুক্ত হইয়া) ধৃত্যা (তাদৃশ ধৃতির দ্বারা) আত্মানং (মনকে) নিয়ম্য চ (সংযত করিয়া), শব্দাদীন্ (শব্দ, স্পর্শ প্রভৃতি) বিষয়ান্ (বিষয় সমূহকে) ত্যক্ত্বা (পরিত্যাগ পূর্ব্বক) রাগদ্বেষৌ (রাগ ও দ্বেষ) ব্যুদস্য চ (বিদূরিত করতঃ), বিবিক্তসেবী (বিষয়িসঙ্গ-রহিত) লঘ্বাশী (মিতভোজী) যতবাক্­কায়মানসঃ (কায়-মন-বাক্য-সংযমী) নিত্যং (সর্ব্বদা) ধ্যানযোগপরঃ (ভগবচ্চিন্তাপরায়ণ) বৈরাগ্যং সমুপাশ্রিতঃ (ও বৈরাগ্য-সমাশ্রিত হইয়া) অহঙ্কারং (অহঙ্কার) বলং (সামর্থ্য) দর্পং (দর্প) কামং (কাম) ক্রোধং (ক্রোধ) পরিগ্রহম্ (ও দানাদিগ্রহণ) বিমূচ্য (পরিত্যাগ পূর্ব্বক) নির্ম্মমঃ (মমতাশূন্য) শান্তঃ (শান্তিপরায়ণ পুরুষ) ব্রহ্মভূয়ায় (চিদাত্মবোধের) কল্পতে (যোগ্য হন) ॥৫১–৫৩॥

সাত্ত্বিক বুদ্ধিযুক্ত হইয়া, তাদৃশ ধৃতির দ্বারা মনকে সংযত করিয়া, শব্দাদি বিষয় সকলকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক, রাগ ও দ্বেষ বিদূরিত করতঃ, বিষয়িসঙ্গ-রহিত, মিতভোজী, কায়-মন-বাক্য-সংযমী, সর্ব্বদা ভগবচ্চিন্তা-পরায়ণ ও বৈরাগ্য-সমাশ্রিত হইয়া—অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ ও দানাদি-গ্রহণ পরিত্যাগ পূর্ব্বক, মমতাশূন্য ও শান্তিপরায়ণ ব্যক্তি চিদাত্মবোধের যোগ্য হন ॥৫১–৫৩॥

ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।
সমঃ সর্ব্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিং লভতে পরাম্ ॥৫৪॥

ব্রহ্মভূতঃ (চিৎ স্বরূপ প্রাপ্ত) প্রসন্নাত্মা (প্রসন্ন চিত্ত ব্যক্তি) ন শোচতি (শোক করেন না) ন কাঙ্ক্ষতি (আকাঙ্ক্ষাও করেন না) । সর্ব্বেষু (সকল) ভূতেষু (প্রাণীর প্রতি) সমঃ (আমার পরাশক্তি বিচারে সমদর্শী হইয়া) পরাম্ (নির্গুণা) মদ্­ভক্তিং (আমার ভক্তি) লভতে (লাভ করেন) ॥৫৪॥

চিৎ-স্বরূপ প্রাপ্ত ও প্রসন্ন-চিত্ত ব্যক্তি শোকও করেন না, আকাঙ্ক্ষাও করেন না ; তিনি সর্ব্বভূতে (আমার পরাশক্তি বিচারে) সমদর্শী হইয়া ক্রমশঃ আমার পরাভক্তি (প্রেমভক্তি) লাভ করেন ॥৫৪॥

ভক্ত্যা মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ ।
ততো মাং তত্ত্বতো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্ ॥৫৫॥

[অহং] (আমি) যাবান্ (যেরূপ বিভূতি সম্পন্ন) যঃ চ অস্মি (ও স্বরূপতঃ যাহা হই) মাম্ (আমাকে) [সঃ] (সেই জ্ঞানী ব্যক্তি) ভক্ত্যা (নির্গুণা ভক্তি দ্বারা) তত্ত্বতঃ (যথার্থরূপে) অভিজানাতি (সম্যক্ জানিতে পারেন) ; তত্ত্বতঃ (স্বরূপতঃ) জ্ঞাত্বা (আমাকে অবগত হইয়া) তদনন্তরম্ (তাহার পর) ততঃ (সেই ভক্তি প্রভাবে) মাং (আমার নিত্যলীলায়) বিশতে (প্রবেশ লাভ করেন) ॥৫৫॥

সেই পরাভক্তি প্রভাবে আমার ঐশ্বর্য্যময় ও মাধুর্য্যময় স্বরূপদ্বয় সম্যক্ জানিতে পারেন এবং তৎপর স্বরূপগত সম্বন্ধজ্ঞান উপলব্ধি করিয়া আমার অভিন্ন-স্বরূপ অন্তরঙ্গ পরিকরগণ মধ্যে প্রবেশ লাভ করেন ॥৫৫॥

সর্ব্বকর্ম্মাণ্যপি সদা কুর্ব্বাণো মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ ।
মৎপ্রসাদাদবাপ্নোতি শাশ্বতং পদমব্যয়ম্ ॥৫৬॥

মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ (আমার একান্ত আশ্রিত জন) সদা (সর্ব্বদা) সর্ব্ব কর্ম্মাণি (সর্ব্বপ্রকার কর্ম্ম) কুর্ব্বাণঃ অপি (করিয়াও) মৎপ্রসাদাৎ (আমার প্রসাদে) শাশ্বতং (নিত্য) অব্যয়ম্ (সমৃদ্ধ) পদম্ (সেবাপদ) অবাপ্নোতি (লাভ করেন) ॥৫৬॥

আমার একান্ত আশ্রিত জন সর্ব্বদা সর্ব্বপ্রকার কর্ম্ম করিয়াও—আমার অনুগ্রহে নিত্য সমৃদ্ধ সেবাপদ লাভ করেন ॥৫৬॥

চেতসা সর্ব্বকর্ম্মাণি ময়ি সংন্যস্য মৎপরঃ ।
বুদ্ধিযোগমুপাশ্রিত্য মচ্চিত্তঃ সততং ভব ॥৫৭॥

চেতসা (সর্ব্বান্তঃকরণে) সর্ব্ব কর্ম্মাণি (সমস্ত কর্ম্ম) ময়ি (আমাতে) সংন্যস্য (সমর্পণ পূর্ব্বক) মৎপরঃ (মৎপরায়ণ হইয়া) বুদ্ধিযোগম্ (নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধিকে) উপাশ্রিত্য (আশ্রয় করিয়া) সততং (সর্ব্বদা) মচ্চিত্তঃ (আমাতে অনুরক্ত) ভব (হও) ॥৫৭॥

সম্বন্ধ কৌশলে সমুদয় কর্ম্ম আমাতে সমর্পণ পূর্ব্বক, আমিই পরমগতি—নিশ্চয় করতঃ, বুদ্ধিযোগ (ব্যবহারিক কার্য্যে অনাসক্তি) আশ্রয় করিয়া—সর্ব্বদা আমাতে অনুরক্ত হও ॥৫৭॥

মচ্চিত্তঃ সর্ব্বদুর্গাণি মৎপ্রসাদাত্তরিষ্যসি ।
অথ চেত্ত্বমহঙ্কারান্ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি ॥৫৮॥

ত্বং (তুমি) মচ্চিত্তঃ (মদ্­গতচিত্ত হইয়া) মৎপ্রসাদাৎ (আমার অনুগ্রহে) সর্ব্বদুর্গাণি (সমস্ত বাধা-বিপত্তি) তরিষ্যসি (অতিক্রম করিবে) । অথ চেৎ (আর যদি) অহঙ্কারাৎ (অহঙ্কার বশে) ন শ্রোষ্যসি (না শুন), [তর্হি] (তাহা হইলে) বিনঙ্ক্ষ্যসি (বিনাশ প্রাপ্ত হইবে) ॥৫৮॥

তুমি মদ্­গত চিত্ত হইলে আমার অনুগ্রহে সর্ব্বপ্রকার দুস্তর বাধা-বিপদ উত্তীর্ণ হইতে পারিবে । আর যদি অহঙ্কার বশে আমার কথা না শুন তাহা হইলে বিনাশ প্রাপ্ত হইবে ॥৫৮॥

যদহঙ্কারমাশ্রিত্য ন যোৎস্য ইতি মন্যসে ।
মিথ্যৈব ব্যবসায়স্তে প্রকৃতিস্ত্বাং নিযোক্ষ্যতি ॥৫৯॥

অহঙ্কারম্ (অহঙ্কারকে) আশ্রিত্য (আশ্রয় করিয়া) ন যোৎস্যে (যুদ্ধ করিব না) ইতি (এইরূপ) যৎ মন্যসে (যে মনে করিতেছ), তে (তোমার) [এষঃ] (এই) ব্যবসায়ঃ (সঙ্কল্প) মিথ্যা এব (মিথ্যাই) [ভবিষ্যতি] (হইবে) । প্রকৃতিঃ (ক্ষত্রিয়োচিত স্বভাব) ত্বাং (তোমাকে) নিযোক্ষ্যতি (নিযুক্ত করিবে) ॥৫৯॥

অহঙ্কারকে আশ্রয় করিয়া ‘যুদ্ধ করিব না’ এইরূপ যে মনে করিতেছ—তোমার এই সংকল্প মিথ্যাই হইবে । কারণ তোমার (ক্ষত্রিয়োচিত) স্বভাব তোমাকে অবশ্যই যুদ্ধে নিযুক্ত করিবে ॥৫৯॥

স্বভাবজেন কৌন্তেয় নিবদ্ধঃ স্বেন কর্ম্মণা ।
কর্ত্তুং নেচ্ছসি যন্মোহাৎ করিষ্যস্যবশোঽপি তৎ ॥৬০॥

[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীপুত্র !) [ত্বং] (তুমি) মোহাৎ (মোহবশে) যৎ (যাহা) কর্ত্তুং (করিতে) ন ইচ্ছসি (ইচ্ছা করিতেছ না), স্বভাবজেন (স্বভাবজাত) স্বেন (নিজের) কর্ম্মণা (বৃত্তির দ্বারা) নিবদ্ধঃ [সন্] (বাধ্য হইয়া) তৎ অপি (সেই কর্ম্মই) অবশঃ [সন্] (অবশভাবেই) করিষ্যসি (করিবে) ॥৬০॥

হে কৌন্তেয় ! তুমি মোহবশে যাহা এখন করিতে ইচ্ছা করিতেছ না, স্বভাবজাত নিজের বৃত্তি দ্বারা বাধ্য হইয়াই (একটু পরে) সেই কর্ম্ম অবশভাবেই করিবে ॥৬০॥

ঈশ্বরঃ সর্ব্বভূতানাং হৃদ্দেশেঽর্জ্জুন তিষ্ঠতি ।
ভ্রাময়ন্ সর্ব্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া ॥৬১॥

[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) ঈশ্বরঃ (অন্তর্যামী শ্রীভগবান্) সর্ব্বভূতানি (জীবসমূহকে) যন্ত্রারূঢ়াণি [ইব] (যন্ত্রারূঢ় পুত্তলের ন্যায়) মায়য়া (নিজ মায়াশক্তি দ্বারা) ভ্রাময়ন্ (নানাভাবে ভ্রমণ করাইতে করাইতে) সর্ব্বভূতানাং (নিখিল জীবের) হৃদ্দেশে (হৃদয় দেশেই) তিষ্ঠতি (অবস্থান করিতেছেন) ॥৬১॥

হে অর্জ্জুন ! অন্তর্যামী শ্রীভগবান্ স্বীয় মায়াশক্তি প্রভাবে জীবগণকে যন্ত্রারূঢ় পুত্তলের ন্যায় (নানাভাবে) ভ্রমণ করাইতে করাইতে নিখিল জীবের হৃদয়দেশেই অবস্থান করিতেছেন ॥৬১॥

তমেব শরণং গচ্ছ সর্ব্বভাবেন ভারত ।
তৎপ্রসাদাৎ পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্ ॥৬২॥

[হে] ভারত ! (হে ভারত !) [অতঃ] (অতএব) সর্ব্বভাবেন (সর্ব্বতোভাবে) তম্ এব (তাঁহারই) শরণং গচ্ছ (শরণ গ্রহণ কর) । তৎপ্রসাদাৎ (তাঁহার কৃপায়) পরাং (পরম ) শান্তিং (শান্তি) শাশ্বতম্ (ও নিত্য) স্থানং (ধাম) প্রাপ্স্যসি (প্রাপ্ত হইবে) ॥৬২॥

হে ভারত ! সর্ব্বতোভাবে তাঁহারই শরণ গ্রহণ কর । তাঁহার কৃপায় পরম শান্তি ও নিত্যধাম লাভ করিবে ॥৬২॥

ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং গুহ্যাদ্­গুহ্যতরং ময়া ।
বিমৃশ্যৈতদশেষেণ যথেচ্ছসি তথা কুরু ॥৬৩॥

ইতি (এই পর্য্যন্ত) গুহ্যাৎ (গূঢ় হইতেও) গুহ্যতরং (গূঢ়তর) জ্ঞানম্ (জ্ঞানের কথা) ময়া (আমা কর্ত্তৃক) তে (তোমার নিকট) আখ্যাতং (কথিত হইল) ; এতৎ (ইহা) অশেষণ (সম্পূর্ণরূপে) বিমৃশ্য (পর্য্যালোচনা করিয়া) যথা (যেরূপ) ইচ্ছসি (ইচ্ছা কর) তথা (সেইরূপই) কুরু (কর) ॥৬৩॥

তোমাকে এই গূঢ় হইতেও গূঢ়তর জ্ঞানের কথা আমি বলিলাম। ইহা অশেষভাবে পর্য্যালোচনা করিয়া তোমার যেরূপ ইচ্ছা তাহাই কর ॥৬৩॥

সর্ব্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু মে পরমং বচঃ ।
ইষ্টোঽসি মে দৃঢ়মিতি ততো বক্ষ্যামি তে হিতম্ ॥৬৪॥

মে (আমার) সর্ব্বগুহ্যতমং (সর্ব্বগুহ্যতম) পরমং (সর্ব্বশ্রেষ্ঠ) বচঃ (উপদেশ) ভূয়ঃ (আবার) শৃণু (শুন) [ত্বং] (তুমি) মে (আমার) দৃঢ়ম্ (অতিশয়) ইষ্টঃ (প্রিয়) অসি (হও), ইতি ততঃ (সেইহেতু) তে (তোমাকে) হিতম্ (মঙ্গলের কথা) বক্ষ্যামি (বলিতেছি) ॥৬৪॥

আমার সর্ব্বগুহ্যতম সর্ব্বশ্রেষ্ঠ উপদেশ আবার শুন । তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়, এই জন্যই তোমার হিত বলিতেছি ॥৬৪॥

মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্­যাজী মাং নমস্কুরু ।
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োঽসি মে ॥৬৫॥

[ত্বং] (তুমি) মন্মনাঃ (আমাতেই সমর্পিত চিত্ত) মদ্ভক্তঃ (আমারই শ্রবণ কীর্ত্তনাদি ভক্তি পরায়ণ) মদ্­যাজী (ও অমারই পূজক) ভব (হও), মাং (আমাকে) নমস্কুরু (নমস্কার কর) । [তর্হি] (তাহা হইলে) মাম্ এব (আমাকেই) এষ্যসি (প্রাপ্ত হইবে), তে (তোমার নিকট) সত্যং (সত্য) প্রতিজানে (প্রতিজ্ঞা করিতেছি), [যতঃ ত্বং] (যে হেতু তুমি) মে (আমার) প্রিয়ঃ অসি (প্রিয় হও) ॥৬৫॥

তুমি আমারই চিন্তা কর, আমারই সেবা কর, আমারই পূজা কর, ও আমাকেই আত্মনিবেদন কর ; তাহা হইলে আমাকেই প্রাপ্ত হইবে—তোমার নিকট প্রতিজ্ঞা করিয়া সত্য বলিতেছি, কারণ তুমি আমার প্রিয় সখা ॥৬৫॥

সর্ব্বধর্ম্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ।
অহং ত্বাং সর্ব্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ॥৬৬॥

সর্ব্বধর্ম্মান্ (সর্ব্বপ্রকার ধর্ম্ম) পরিত্যজ্য (সম্পূর্ণ বিসর্জ্জন দিয়া) একং (একমাত্র) মাম্ (আমারই) শরণং ব্রজ (শরণ লও) ; অহং (আমি) ত্বাং (তোমাকে) সর্ব্বপাপেভ্যঃ (সর্ব্ব প্রকার পাপ হইতে) মোক্ষয়িষ্যামি (মুক্ত করিব), মা শুচঃ (শোক করিও না) ॥৬৩॥

সর্ব্বপ্রকার ধর্ম্ম সম্পূর্ণ বিসর্জ্জন দিয়া একমাত্র আমারই শরণ লও । আমি তোমাকে সর্ব্বপ্রকার পাপ হইতে মুক্ত করিব, তুমি শোক করিও না ॥৬৬॥

ইদন্তে নাতপস্কায় নাভক্তায় কদাচন ।
ন চাশুশ্রূষবে বাচ্যং ন চ মাং যোঽভ্যসূয়তি ॥৬৭॥

ইদং (এই কথা) তে (তুমি) অতপস্কায় (আরাম প্রিয়) অভক্তায় ন (অভক্ত), অশুশ্রূষবে ন চ (সেবা-বিমুখ), যঃ চ (ও যে) মাং (আমাতে) অভ্যসূয়তি (অসূয়াকারী অর্থাৎ মৎসর—তাহাদিগকে) কদাচন (কখনও) ন বাচ্যং (বলিবে না) ॥৬৭॥

এই কথা তুমি কখনও আরামপ্রিয়, শ্রদ্ধাহীন, সেবা-বিমুখ ও আমাতে অসূয়াকারী অর্থাৎ মৎসর ব্যক্তিগণকে বলিবে না ॥৬৭॥

য ইমং পরমং গুহ্যং মদ্ভক্তেষ্বভিধাস্যতি ।
ভক্তিং ময়ি পরাং কৃত্বা মামেবৈষ্যত্যসংশয়ঃ ॥৬৮॥

যঃ (যিনি) পরমং (সর্ব্বোৎকৃষ্ট) গুহ্যং (গোপনীয়) ইমং (এই সংবাদ) সদ্ভক্তেষু (আমার ভক্তগণের নিকট) অভিধাস্যতি (কীর্ত্তন করিবেন), [সঃ] (তিনি) ময়ি (আমার) পরাং (পরা) ভক্তিং (ভক্তি) কৃত্বা (লাভ করিয়া) অসংশয়ঃ (নিঃসন্দেহে) মাম্ এব (আমাকেই) এষ্যসি (প্রাপ্ত হইবেন) ॥৬৮॥

যিনি এই গোপনীয় পরম তত্ত্ব আমার ভক্তগণের নিকট কীর্ত্তন করিবেন, তিনি আমার পরাভক্তি লাভ করিয়া আমাকেই প্রাপ্ত হইবেন, ইহাতে কোন সংশয় নাই ॥৬৮॥

ন চ তস্মান্মনুষ্যেষু কশ্চিন্মে প্রিয়কৃত্তমঃ ।
ভবিতা ন চ মে তস্মাদন্যঃ প্রিয়তরো ভুবি ॥৬৯॥

মনুষ্যেষু (মনুষ্য সমাজে) তস্মাৎ (তাঁর অর্থাৎ গীতা প্রচারকের অপেক্ষা) কশ্চিৎ (কেহ) মে (আমার) প্রিয়কৃত্তমঃ (অধিক প্রিয়কারী) ন চ (নাই), ভুবি চ (এবং পৃথিবীতে) তস্মাৎ (তাঁহার অপেক্ষা) অন্যঃ (অপর কেহ) মে (আবার) প্রিয়তরঃ (প্রিয়তরও) ন ভবিতা (হইবে না) ॥৬৯॥

মানব সমাজে তাঁর (গীতা প্রচারকের) অপেক্ষা কেহই আমার অধিক প্রিয়কারী নাই, এবং (ভবিষ্যতে) পৃথিবীতে তাঁহা অপেক্ষা আমার প্রিয়তরও কেহ হইবে না ॥৬৯॥

অধ্যেষ্যতে চ য ইমং ধর্ম্ম্যং সংবাদমাবয়োঃ ।
জ্ঞানযজ্ঞেন তেনাহমিষ্টঃ স্যামিতি মে মতিঃ ॥৭০॥

যঃ চ (আর যিনি) আবয়োঃ (আমাদের উভয়ের) ইমং (এই) ধর্ম্ম্যং (ধর্ম্ম) সংবাদম্ (সংলাপ) অধ্যেষ্যতে (পাঠ করিবেন), অহং (আমি) জ্ঞানযজ্ঞেন (জ্ঞানযজ্ঞদ্বারা) তেন (তৎকর্ত্তৃক) ইষ্টঃ (আরাধিত) স্যাম্ (হইব), ইতি (ইহাই) মে (আমার) মতিঃ (অভিমত) ॥৭০॥

আর যিনি আমাদের উভয়ের এই ধর্ম্ম-সংলাপ পাঠ করিবেন, আমি জ্ঞান-যজ্ঞের দ্বারা তৎকর্ত্তৃক আরাধিত হইব, ইহাই আমার অভিমত ॥৭০॥

শ্রদ্ধাবাননসূয়শ্চ শৃণুয়াদপি যো নরঃ ।
সোঽপি মুক্তঃ শুভান্­লোকান্ প্রাপ্নুয়াৎ পুণ্যকর্ম্মণাম্ ॥৭১॥

শ্রদ্ধাবান্ (শ্রদ্ধাযুক্ত) অনসূয়ঃ চ (ও দোষদৃষ্টি রহিত) যঃ (যে) নরঃ (মানব) শৃণুয়াৎ অপি (কেবল শ্রবণ করেন), সঃ অপি (তিনিও) [পাপাৎ] (পাপ হইতে) মুক্তঃ [সন্] (মুক্ত হইয়া) পুণ্যকর্ম্মণাম্ (পুণ্যকারিগণের) [প্রাপ্য] (লভ্য) শুভান্ (উত্তম) লোকন্ (ধাম সকল) প্রাপ্নুয়াৎ (প্রাপ্ত হইবেন) ॥৭১॥

যে শ্রদ্ধাবান্ জন নির্মৎসর ভাবে কেবল শ্রবণও করিবেন, তিনিও মুক্ত হইয়া সুকৃতিশালী জনের যোগ্য মঙ্গলময় লোক সকল লাভ করিবেন ॥৭১॥

কচ্চিদেৎ শ্রুতং পার্থ ত্বয়ৈকাগ্রেণ চেতসা ।
কচ্চিদজ্ঞানসম্মোহঃ প্রণষ্টস্তে ধনঞ্জয় ॥৭২॥

[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) ত্বয়া কচ্চিৎ (তুমি কি) একাগ্রেণ (একাগ্র) চেতসা (চিত্তে) এতৎ (এই গীতা শাস্ত্র) শ্রুতং (শ্রবণ করিয়াছ ?) [হে] ধনঞ্জয় ! (হে অর্জ্জুন !) তে (তোমার) অজ্ঞান সম্মোহঃ (অজ্ঞান জনিত বিপরীত বুদ্ধি) প্রণষ্টঃ কচ্চিৎ (বিনষ্ট লইল কি ?) ॥৭২॥

হে পার্থ ! তুমি কি একাগ্রচিত্তে ইহা শ্রবণ করিলে ? হে ধনঞ্জয় ! তোমার অজ্ঞানোত্থ মোহ কি বিদূরিত হইল ? ॥৭২॥

অর্জ্জুন উবাচ—
নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা ত্বৎপ্রসাদান্ময়াচ্যুত ।
স্থিতোঽস্মি গতসন্দেহঃ করিষ্যে বচনং তব ॥৭৩॥

অর্জ্জুন উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] অচ্যুত ! (হে শ্রীকৃষ্ণ !) ত্বৎ প্রসাদাৎ (তোমার অনুগ্রহে) [মে] (আমার) মোহঃ (মোহ) নষ্টঃ (দূর হইয়াছে), ময়া (আমি) স্মৃতিঃ (আত্মস্মৃতি) লব্ধা (লাভ করিয়াছি), স্থিতঃ অস্মি (স্থিরতা প্রাপ্ত হইলাম), গত সন্দেহঃ (সংশয় দূর হইয়াছে) তব (তোমার) বচনং (আদেশ) করিষ্যে (পালন করিব)॥৭৩॥

অর্জ্জুন কহিলেন—হে অচ্যুত ! তোমার কৃপায় আমার মোহ বিনষ্ট হইয়াছে, আমি স্বরূপস্মৃতি লাভ করিয়াছি, আমি নিঃসংশয়ে শরণাপত্তিতে অবস্থিত হইলাম,—তোমার আদেশ পালন করিব ॥৭৩॥

সঞ্জয় উবাচ—
ইত্যহং বাসুদেবস্য পার্থস্য চ মহাত্মনঃ ।
সম্বাদমিমমশ্রৌষমদ্ভুতং রোমহর্ষণম্ ॥৭৪॥

সঞ্জয় উবাচ (সঞ্জয় বলিলেন) অহং (আমি) ইতি (এই প্রকারে) মহাত্মনঃ (মহাত্ম) বাসুদেবস্য (বাসুদেবের) পার্থস্য চ (ও অর্জ্জুনের) ইমম্ (এই) অদ্ভুতঃ (আশ্চর্য্য) রোমহর্ষণম্ (রোমাঞ্চকর) সংবাদম্ (কথোপকথন) অশ্রৌষম্ (শ্রবণ করিলাম) ॥৭৪॥

সঞ্জয় কহিলেন—এইরূপে আমি মহাত্মা বাসুদেব ও অর্জ্জুনের—এই অদ্ভুত রোমাঞ্চকর সংলাপ শ্রবণ করিলাম॥৭৪॥

ব্যাসপ্রসাদাৎ শ্রুতিবানিমং গুহ্যমহং পরম্ ।
যোগং যোগেশ্বরাৎ কৃষ্ণাৎ সাক্ষাৎ কথয়তঃ স্বয়ম্ ॥৭৫॥

অহং (আমি) ব্যাসপ্রসাদাৎ (ব্যাসদেবের কৃপায়) ইমং (এই) পরম্ (পরম) গুহ্যম্ (গোপনীয়) যোগং (কর্ম্ম, জ্ঞান ও ভক্তিযোগ) সাক্ষাৎ কথয়তঃ (স্বমুখে উপদেশ করিতে প্রবৃত্ত) যোগেশ্বরাৎ (যোগেশ্বর) স্বয়ম্ (স্বয়ংরূপ) কৃষ্ণাৎ (কৃষ্ণ হইতে) শ্রুতবান্ (শ্রবণ করিলাম) ॥৭৫॥

আমি শ্রীব্যাসদেবের অনুগ্রহে যোগেশ্বর স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শ্রীমুখগাথা হইতে এই গুহ্য সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যোগ—শ্রবণ করিয়াছি ॥৭৫॥

রাজন্ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য সম্বাদমিমমদ্ভুতম্ ।
কেশবার্জ্জুনয়োঃ পুণ্যং হৃষ্যামি চ মুহুর্মুহুঃ ॥৭৬॥

[হে] রাজন্ ! (হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র !) কেশবার্জ্জুনয়োঃ (শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের) ইমম্ (এই) পুণ্যং (পবিত্র) অদ্ভুতম্ (বিস্ময়কর) সংবাদম্ (কথোপকথন) সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য (পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিয়া) মুহুর্ম্মহুঃ চ (বারংবারই) হৃষ্যামি (রোমাঞ্চিত হইতেছি) ॥৭৬॥

হে মহারাজ ! শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের এই পুণ্যময়, অতি বিস্ময়কর সংলাপ পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিতে করিতে আমি মুহুর্মুহুঃ হর্ষে পুলকিত হইতেছি ॥৭৬॥

তচ্চ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য রূপমত্যদ্ভুতং হরেঃ ।
বিস্ময়ো মে মহান্ রাজন্ হৃষ্যামি চ পুনঃ পুনঃ ॥৭৭॥

[হে] রাজন্ ! (হে মহারাজ !) হরেঃ চ (আর শ্রীহরির) অত্যদ্ভুতং (অতি আশ্চর্য্য) তৎ রূপম্ (সেই বিশ্বরূপ) সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য (পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিয়া) মে (আমার) মহান্ (পরম) বিস্ময়ঃ (বিস্ময়) [ভবতি] (হইতেছে) পুনঃ পুনঃ চ (এবং আমি বারংবার) হৃষ্যামি (রোমাঞ্চিত হইতেছি) ॥৭৭॥

হে রাজন্ ! আবার ভগবান্ শ্রীহরির সেই মহান্ অত্যাশ্চর্য্যময় বিশ্বরূপ বারংবার স্মরণ করিতে করিতে আমার অত্যন্ত বিস্ময় ও পুনঃ পুনঃ পুলকোদ্গম হইতেছে ॥৭৭॥

যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্দ্ধরঃ ।
তত্র শ্রীর্ব্বিজয়ো ভূতির্ধ্রুবা নীতির্ম্মতির্ম্মম ॥৭৮॥

যত্র (যেখানে) যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণঃ (যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ) যত্র (ও যেখানে) ধনুর্দ্ধরঃ পার্থঃ (ধনুর্দ্ধর ধনঞ্জয়) তত্র (সেইখানেই) শ্রীঃ (রাজলক্ষ্মী) বিজয়ঃ (জয়শ্রী) ভূতিঃ (সম্পদ্বৃদ্ধি) নীতিঃ (ও ন্যায়) ধ্রুবা (প্রতিষ্ঠিত), [ইতি] (ইহাই) মম (আমার) মতিঃ (অভিমত) ॥৭৮॥

যেখাবে ভগবান্ যোগেশ্বর স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ও যেখানে স্বয়ং ধনঞ্জয় ধনুর্দ্ধর—সেইখানেই রাজলক্ষ্মী, সেইখানেই জয়শ্রী, সেইখানেই সমৃদ্ধি ও সেইখানেই সুনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত—ইহাই আমার অভিমত ॥৭৮॥

ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং
ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং
যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুন-সংবাদে মোক্ষযোগো
নামাষ্টাদশোঽধ্যায়ঃ ॥১৮॥

ইতি অষ্টাদশ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥

                                                                                                   গ্রন্থ-সম্পাদক—
                                                                                       ত্রিদণ্ডিভিক্ষু—শ্রীভক্তিরক্ষক শ্রীধর
                                                                                         শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ, নবদ্বীপ
                                                                                        শ্রীজন্মাষ্টমী বঙ্গাব্দ ১৩৬৮ সাল

১) কেশিনিসূদন = শ্রীকৃষ্ণ ব্রজলীলায় কেশী নামক অসুরকে বধ করিয়াছিলেন

সন্ন্যাস ও ত্যাগের ব্যাখ্যা – সন্ন্যাস ও ত্যাগ এই দুইটির ধাত্বর্থ একই = পরিত্যাগ করা, ছাড়া । কিন্তু ‘সন্ন্যাস’ শব্দের একটি বিশেষ অর্থ এই যে, সর্বকর্ম ত্যাগ করিয়া চতুর্থ আশ্রম অবলম্বন করা । এই চতুর্থাশ্রম শাস্ত্রবিহিত এবং সন্ন্যাস অবলম্বন ব্যতীত মোক্ষলাভ হয় না, এই মতও সুপ্রচলিত । অর্জুনও মনে করিয়াছিলেন, শ্রীভগবান্‌ অবশ্য এই কথা শেষে বলিবেন । কিন্তু তিনি এ পর্যন্ত কোথাও কর্মত্যাগের উপদেশ দিলেন না । তিনি আরও এই কথা বলিলেন যে, যিনি আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেন তিনিই নিত্য সন্ন্যাসী । সেই জন্যই অর্জুন প্রশ্ন করিলেন যে, তিনি ত্যাগ ও সন্ন্যাস এই শব্দ দুইটি কি অর্থে ব্যবহার করিতেছেন । ইহাদের মধ্যে অর্থগত কোন পার্থক্য আছে কিনা এবং থাকিলে, তাহা কি ? এই কথার উত্তরেই শ্রীভগবান্‌কর্মযোগ-মার্গের সারার্থ পুনরায় স্পষ্টীকৃত করিয়া গীতাশাস্ত্রের উপসংহার করিয়াছেন ।

২) কাম্য কর্মের ত্যাগই সন্ন্যাস । কিন্তু সূক্ষদর্শী পণ্ডিতগণ বলেন যে, সকল কর্মের ফল-ত্যাগই প্রকৃত ত্যাগ; সুতরাং যিনি ফল ত্যাগ করেন, তিনি কর্ম করিলেও প্রকৃতপক্ষে সন্ন্যাসী ।

৬) পূর্বে বলা হইয়াছে যে, কর্তৃত্বাভিমান ও ফলকামনা বর্জন করিয়া ঈশ্বরার্পণ বুদ্ধিতে সমস্ত কর্ম করা উচিত । শ্রৌত স্মার্ত যজ্ঞদানাদি কর্মও ঠিক সেই ভাবেই করা কর্তব্য । ইহাই নিষ্কাম কর্মযোগ ।

৭) (স্বভাব)নিয়ত কর্ম – স্বধর্মানুসারে যথাধিকার প্রাপ্ত কর্ম । জীবের স্বভাব বা প্রকৃতির গুণভেদবশতঃই বর্ণভেদ ও কর্মভেদ শাস্ত্রে বিহিত হইয়াছে । সুতরাং যথাধিকার শাস্ত্রবিহিত কর্মই নিয়ত কর্ম । ইহাকেই স্বধর্ম, স্বকর্ম, সহজ কর্ম, স্বভাবজ কর্ম ইত্যাদি বলা হইয়াছে ।

৮) ত্যাগের ফল কর্মবন্ধন হইতে মুক্ত হওয়া অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করা । কিন্তু কায়ক্লেশভয়ে কর্তব্য কর্ম ত্যাগ করিলে তাহাতে মোক্ষ লাভ হয় না । এইরূপ ত্যাগকে রাজসত্যাগ বলে ।

১৩) সাংখ্যে কৃতান্তে – এস্থলে ‘সাংখ্যে’ পদটি ‘কৃতান্ত’ পদের বিশেষণ । সাংখ্য = কাপিল সাংখ্য অথবা বেদান্তশাস্ত্র । কৃতান্ত = সিদ্ধান্ত শাস্ত্র । সুতরা ‘সাংখ্যে কৃতান্তে’ = কাপিল সাংখ্যশাস্ত্র অথবা
বেদান্তশাস্ত্র ।

১৪) কোন কর্ম হইতে গেলেই কর্তা, করণ বা সাধন (যন্ত্র), অধিকরণ বা স্থান এবং কর্তার নানাবিধ চেষ্টা প্রয়োজন । বেদান্তাদি শাস্ত্রের পরিভাষায় অহঙ্কারই কর্তা, চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয় করণ, দেহই অধিষ্ঠান এবং প্রাণ অপানাদির ব্যাপারই চেষ্টা বলিয়া গৃহীত হয় । এই সকলের সহায়তাই কর্ম সম্পন্ন হয় । এতদ্ব্যতীতও আমাদের প্রযত্নের প্রয়োজক ও অনুকূল এমন কোন ব্যাপার আছে যাহা আমরা জানি না এবং দেখি না – ইহাকেই দৈব বলা হয় ।

১৪,১৫) দৈব কি ? – শাস্ত্রে চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের প্রত্যেকের আনুকূল্যকারী এক একটি অধিষ্টাত্রী দেবতার উল্লেখ আছে । যেমন, শরীরের দেবতা পৃথিবী, চক্ষুর – অর্ক, হস্তের – ইন্দ্র, অহঙ্কারের – রুদ্র, মনের – চন্দ্র, ইত্যাদি । এই দেবগণের সাহায্যে ও শক্তিতেই ইন্দ্রিয়াদির কার্য সম্পন্ন হয় । অনেক টীকাকার ইহাকেই ‘দৈব’ বলিয়াছেন । কেহ কেহ বলেন ‘সর্বপ্রেরক অন্তর্যামী’ অথবা ‘ধর্মাধর্ম-সংস্কার’ । মূল তত্ত্বটি একই । সেইটিই বুঝা প্রয়োজন ।
প্রশ্ন এই – জীব কর্ম করে কেন ? কর্ম-প্রবৃত্তি কোথা হইতে আসিল ? জন্ম, কর্ম, সংসার, সৃষ্টি – ইহার আদি কোথায়, ইহার মূল কারণ কি ? ইহার মূলে ব্রহ্মসঙ্কল্প – ‘আমি এক আছি, বহু হইব’ – পরব্রহ্মের এই সঙ্কল্প হইতেই ব্রহ্মাদি স্তম্ব পর্যন্ত সর্বভূতের উৎপত্তি ও সকলের স্ব স্ব কার্যে প্রবৃত্তি । বলীবর্দাদি চতুষ্পদ জন্তু যেমন নাসিকায় বদ্ধ হইয়া মনুষ্যের ইচ্ছায় তাহার নিমিত্ত কর্ম করে, আমরা সকলেই সেইরূপ ত্রিগুণে বদ্ধ হইয়া ঈশ্বরের ইচ্ছায় তাঁহার কর্ম করি (শ্রীভাগবতে ব্রহ্মার বাক্য ৫।১।২৪) ।
সুতরাং সৃষ্টিকালে অথবা সৃষ্টির প্রাক্কালে (শ্রীশ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা) যাহার ললাটে যাহা লিখিত হইয়াছে অর্থাৎ যাহার পক্ষে যাহা নির্দিষ্ট হইয়াছে, সকলেই তদনুসারে কর্ম করিতেছে, ইহার অন্যথা করিবার কাহারও সাধ্য নাই ।
এই ঈশ্বর-সঙ্কল্পকেই মহানিয়তি বা দৈব বলে । হরিহরব্রহ্মাও ইহা লঙ্ঘন করিতে পারেন না, কেননা তাঁহারাও এই সঙ্কল্পের অধীন । সৃষ্টি হইতে প্রলয় পর্যন্ত জগতে যাহা কিছু কর্ম হয় তাহা এই নিয়তিবলেই সম্পন্ন হয় । এই নিয়তিবলেইচন্দ্র-সূর্য, বায়ু-বরুণাদি স্ব স্ব কার্যে ব্যাপৃত আছেন, এই নিয়তিবলেই আদিত্যাদি দেবগণ চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের শক্তি দান করিতেছেন, এই হেতু এই শক্তিকেই ‘দৈব’ বলা হইয়াছে । এই ঈশ্বর-সঙ্কল্পকেই কেহ কেহ ‘সর্বপ্রেরক অন্তর্যামী’ বলিয়াছেন । এই নিয়তিই প্রাক্তন বা পূর্বজন্মের ‘ধর্মাধর্ম সংস্কার’রূপে প্রকাশিত হয় এবং জন্মে জন্মে জীবের জন্মকর্মের ফলবৈষম্য উৎপন্ন করে, ইহাকেই লোকে অদৃষ্ট বলে ।
অনেকে মনে করেন, দৈবের যখন খণ্ডন নাই, তখন পুরুষকার অবলম্বন করা বৃথা । তাঁহারা বুঝিতে পারেন না যে, দৈব পুরুষকাররূপেই কর্মের নিয়ন্তা হয়, পুরুষকার আশ্রয় করিয়াই দৈব ফল প্রদান করে । শস্য উৎপাদনার্থ বীজ ও ক্ষেত্র উভয়েরই প্রয়োজন; দৈব কর্মের বীজস্বরূপ এবং সুপ্রযুক্ত পুরুষকার কর্ষিত ক্ষেত্রস্বরূপ; এই উভয়ের সংযোগে কর্মফল লাভ হয় ।

১৭) স্থিতপ্রজ্ঞ কর্মযোগী পাপপুণ্যের অতীত । প্রকৃতিই কর্ম করে, আত্মা অকর্তা, নিঃসঙ্গ । দেহ ইন্দ্রিয় অহঙ্কার এবং দৈব বা ঈশ্বর-সঙ্কল্প এই সকলই কর্মঘটনার কারণ, আত্মা বা ‘আমি’ ইহার কোনটির মধ্যেই নয় । সুতরাং যে মনে করে, আত্মা বা ‘আমিই’ কর্তা, সে অজ্ঞান, সে প্রকৃত তত্ত্ব জানে না । এই অজ্ঞানতাপ্রসূত কর্তৃত্বাভিমানবশতঃই তাহার কর্মবন্ধন হয় । যাঁহার অহং অভিমান নাই, বুদ্ধি যাঁহার নির্লিপ্ত, তাঁহার কর্মবন্ধন হয় না, সে কর্ম লোকরক্ষাই হউক, লোকহত্যাই হউক, তাহাতে কিছু আসে যায় না । এইরূপ কর্তৃত্বাভিমান ও কামনাবর্জিত আত্মজ্ঞানী পুরুষই স্থিতপ্রজ্ঞ, ব্রহ্মভূত, ত্রিগুণাতীত, জীবন্মুক্ত ইত্যাদি নামে অভিহিত হন । ঈদৃশ শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত-স্বভাব ব্যক্তিগণের ব্যবহার সম্বন্ধে পাপ-পুণ্য, ধর্ম-অধর্ম, নীতি-অনীতি ইত্যাদির বিচার চলে না, কেননা তাঁহারা পাপ-পুণ্যাদি দ্বন্দ্বের অতীত (শঙ্করাচার্য) । কৌষীতকী উপনিষদে ইন্দ্র প্রতর্দনকে বলিতেছেন যে, বৃত্র অর্থাৎ ব্রাহ্মণকে বধ করিলেও আমার পাপ হয় না, একথার মর্মও ইহাই ।

১৮) কর্মচোদনা ও কর্মসংগ্রহ – কোন কর্ম আরম্ভ করিবার পূর্বে একটি প্রেরণা চাই, এই প্রেরণার জন্য জ্ঞান, জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা, এই তিনটির প্রয়োজন । স্থুল কথা কর্মচোদনা = কর্মবিষয়ক মানসিক প্রেরণা, কর্মসংগ্রহ = সেই প্রেরণার বাহ্য প্রকাশ ।

২০) সাত্ত্বিক-জ্ঞান – জগতের নানাত্বের মধ্যে যে একত্ব দর্শন তাহাই প্রকৃত জ্ঞান । একমাত্র অদ্বয় অব্যয় সদ্বস্তুই আছেন, যাহা কিছু ছিল, আছে বা থাকিতে পারে, সমস্তই তাঁহাতেই আছে, তিনি ‘সব’, সমস্তই বাসুদেব; ইহাই অদ্বৈত জ্ঞান । এই জ্ঞান লাভ জীবের পরম নিঃশ্রেয়স্‌, উহাই মুক্তি । আত্মজ্ঞান, ব্রহ্মজ্ঞান, ব্রহ্মাত্ম্যৈক্যজ্ঞান, সর্বত্র সমদর্শন ইত্যাদি নানা কথায় এই জ্ঞানের বর্ণনা পূর্বে করা হইয়াছে । এই সাত্ত্বিক জ্ঞানলাভ করিয়া সাত্ত্বিক কর্তা বা কর্মযোগী সাত্ত্বিক (নিষ্কাম) কর্ম করেন ।

২১) রাজস জ্ঞান – সর্বভূতে ভেদবুদ্ধি, একত্বের মধ্যে নানাত্ব দর্শন, ইহাই বদ্ধ জীবের জ্ঞান বা অজ্ঞান । ইহাতেই বদ্ধ হইয়া জীব জন্মমৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হয় । এই রাজস জ্ঞান বা ভেদজ্ঞান হইতেই সংসার, ইহা হইতেই রাগদ্বেষ দম্ভদর্পাদি সর্ববিধ রাজস প্রবৃত্তি অ কাম্য কর্মের উৎপত্তি ।

২২) তামস জ্ঞান – তুচ্ছ একই বিষয়ে অভিনিবিষ্ট থাকে, উহার বাহিরে যায় না । যেমন মৃত্তিকা, পাথর, বৃক্ষাদিকেই একমাত্র উপাস্য বস্তু মনে করা, উহা ব্যতীত ঈশ্বরের অন্যবিধ স্বরূপ বা সত্তার ধারণা না থাকা । নিজের দেহ বা পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই যে আসক্ত – তাহারও তামসিক জ্ঞান ।

২৪) কামনা ও অহঙ্কার থাকিলেই দুরাকাঙ্ক্ষা ও দুশ্চিন্তা অনিবার্য । অনেক-স্থলে নিজের অত্যধিক স্বার্থচিন্তায় অপরের স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি থাকে না, তাহাতে সংঘর্ষ উপস্থিত হয় । আবার দুরাকাঙ্ক্ষাবশতঃ অনেকে কঠোর শারীরিক কষ্ট সহ্য করিয়াও স্বার্থ সাধনে যত্নপর হয়, এই সব কারণেই বলা হইয়াছে যে, সকাম কর্ম বহু আয়াসসাধ্য ।

২৫) ত্রিবিধ কর্ম – নিষ্কাম কর্ম = সাত্ত্বিক কর্ম, সকাম কর্ম = রাজসিক ও তামসিক কর্ম, নিষিদ্ধ কর্ম = সকাম কর্মের কতকগুলিকে শাস্ত্রে নিষিদ্ধ কর্ম বলা হইয়া থাকে । বিশেষ দ্রষ্টব্য – কর্মের এই শ্রেণী-বিভাগ কর্মেরই বাহ্য প্রকৃতি বা পরিণাম বিচার করিয়া করা হয় নাই, কর্তার বুদ্ধি অনুসারেই করা হইয়াছে । গীতার মতে কর্মের কর্তব্যাকর্তব্য-বিচারে কর্মের ফলাফল না দেখিয়া কর্তার বাসনাত্মিকা বুদ্ধিরই বিচার করা হয় । এইরূপ বিচারে হিংসাত্মক যুদ্ধাদি কর্মও সাত্ত্বিক হইতে পারে, আবার অবস্থা-বিশেষে লোকহিতকর দানাদি কর্মও রাজসিক বা তামসিক হইতে পারে । আবার একই কর্ম এক জনের পক্ষে সাত্ত্বিক হইতে পারে, অপরের পক্ষে রাজসিক বা তামসিক হইতে পারে । যেমন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকর্ম – ইহা অর্জুনের পক্ষে সাত্ত্বিক, কেননা তিনি স্বধর্ম বলিয়া নিষ্কামভাবে উহা অনুষ্ঠান করিয়াছেন । কর্ণাদি যোদ্ধৃগণের পক্ষে ইহা রাজসিক, কেননা তাঁহারা ধনমানাদির আশায় উহাতে যোগদান করিয়াছিলেন; দুর্যোধনের পক্ষে উহা তামসিক, কেননা তিনি নিজের সামর্থ্য, শক্তিক্ষয়, ভাবিফল ইত্যাদি বিবেচনা না করিয়া মোহবশতঃ উহাতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন ।

২৮) দীর্ঘসূত্রী = আজ না, কাল করিব এইরূপ ভাবে যে কাল-বিলম্ব করে ।

৩০) সাত্ত্বিকী বুদ্ধি ও সদসদ্বিবেক (Conscience) :
পাশ্চাত্য নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী সদসদ্বিবেক (Conscience) হল মানুষের এক স্বাভাবিক স্বতন্ত্র শক্তি যাহাদ্বারা সে বিনা বিচারে (intuitionally) ভাল-মন্দ নির্ণয় করিতে পারে । কিন্তু চোর বা সাধুর conscience পৃথক হয় কেন, তাহার কোন সন্তোষজনক উত্তর পাশ্চাত্য শাস্ত্রের কাছে নাই । ভারতীয় দর্শনে এরূপ কোনো স্বতন্ত্র শক্তির অস্তিত্ব স্বীকৃত হয় নাই । হিন্দু-দর্শনমতে ভাল-মন্দ বা যাহা-কিছু বিচারের শক্তি একমাত্র বুদ্ধির । বুদ্ধি যখন আত্মনিষ্ঠ হইয়া শুদ্ধ হয় তখনই তাহার বিচার যথার্থরূপ হয়, কেননা তখন উহা আত্মার প্রেরণা বা স্বাধর্ম্য লাভ করে, ইহাই সাত্ত্বিকী বুদ্ধি । সাত্ত্বিকী বুদ্ধিই সন্দেহস্থলে প্রমাণস্বরূপ, কিন্তু রাজসী ও তামসী বুদ্ধি লোককে বিপথে চালিত করে । এই হেতুই পাশ্চাত্যগণ যাহাকে conscience বলেন, তাহা সকলের সমান হয় না । কেননা প্রকৃতির গুণভেদে বুদ্ধি বিভিন্ন হয় ।

২৯,৩৩,৩৫) ত্রিবিধ ধৃতি – সেই মানসিক শক্তি যাহাতে মনুষ্য কোন কর্মে দৃঢ়ভাবে লাগিয়া থাকিতে পারে ।
সাত্ত্বিকী ধৃতি = যাহা দ্বারা সাত্ত্বিক বা নিষ্কাম কর্মে লাগিয়া থাকা যায়;
রাজসী ধৃতি= যাহাতে অর্থকামাদি রাজসিক বিষয়ে লাগিয়া থাকে;
তামসী ধৃতি = যাহা দ্বারা শোক, ভয় ইত্যাদি তামসিক ভাবে লাগিয়া থাকে ।

৩৯) প্রমাদ = কর্তব্যের ভ্রম বা বিস্মৃতি । অনবধানতা ।

কর্মতত্ত্ব বিশ্লেষণ :
যে কোনো কর্ম সম্পাদনের পক্ষে অধিষ্ঠান, কর্তা, করণ, নানাবিধ চেষ্টা এবং দৈব – এই সকল কারণ বিদ্যমান থাকে । সুতরাং যে মনে করে, কেবল ‘আমিই’ কর্ম করি, সে দুর্মতি প্রকৃত তত্ত্ব বোঝে না । যাহার ‘আমি কর্তা’ এই ভাব নাই, তিনি কর্মের শুভাশুভ ফলে আবদ্ধ হন না । কর্মপ্রবৃত্তির হেতু = (i)জ্ঞান, (ii)জ্ঞেয়, (iii)জ্ঞাতা । ক্রিয়ার আশ্রয় = (i)কর্তা, (ii)কর্ম, (iii)করণ । তন্মধ্যে জ্ঞান, কর্তা ও কর্ম গুণভেদে ত্রিবিধ হয় । আবার কর্তার বুদ্ধি, ধৃতি এবং যে-সুখলাভার্থ কর্ম করা হয় সেই সুখও গুণভেদে ত্রিবিধ । এইরূপ গুণভেদবশতই বিভিন্ন কর্তার, বিভিন্ন কর্মের বিভিন্ন ফল হয় । যেমন সাত্ত্বিক জ্ঞান (সর্বত্র সমদর্শন) হইতে সাত্ত্বিক কর্তা (কর্মযোগী) সাত্ত্বিক কর্ম (নিষ্কাম কর্ম) করেন, তাঁহার সাত্ত্বিকী বুদ্ধি (বন্ধমোক্ষ-নির্ণয়-সমর্থা) এই কর্ম নিশ্চয় করিয়া দেয় । সাত্ত্বিকী ধৃতি তাঁহাকে এই কর্মে স্থির রাখে এবং তিনি এই সাত্ত্বিক কর্মের যে-ফল সাত্ত্বিক সুখ, নির্মল আত্মপ্রসাদ (আত্মানন্দ), তাহা লাভ করেন । রাজসিক ও তামসিক কর্তার কর্ম এবং তাহার ফলও এইরূপ গুণভেদে বিভিন্ন হয় ।

৪২,৪৪) গুণভেদে বর্ণভেদ ও কর্মভেদ; বর্ণভেদ ও জাতিভেদ

৪৬) স্বধর্ম বা কর্তব্য পালনেই ঈশ্বরের অর্চনা – তাহাতেই সিদ্ধি । কর্ম ভগবানেরই সৃষ্টি এবং তাহা হইতেই জীবের কর্ম-প্রবৃত্তি । ইহাই তাঁহার লীলা । জীব কর্মে বিরত হইলে তৎক্ষণাৎ ভবলীলা শেষ হয় । সুতরাং তাঁহার সৃষ্টি-রক্ষার্থ গীতার ভাষায় লোকসংগ্রহার্থ বা ভক্তিশাস্ত্রের ভাষায় তাঁহার লীলাপুষ্টির জন্য জীবের যথাপ্রাপ্ত কর্ম করিতে হয় । হিন্দুর কর্ম-জীবনে ও ধর্ম-জীবনে পার্থক্য নাই । তাহার সমস্ত কর্মই ধর্মশাস্ত্রনির্দিষ্ট । এই সমস্ত কর্ম, ফলকামনা ত্যাগ করিয়া একমাত্র শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকাম হইয়া, করিতে পারিলেই তাঁহার অর্চনা হয় এবং তাহাতেই সদ্গতি লাভ হয়, ইহা সমস্ত ভক্তিশাস্ত্রের সিদ্ধান্ত ।

৪৮) ক্ষত্রিয়ের যুদ্ধকর্মে বা কৃষকের কৃষিকর্মেও প্রাণিহিংসা অনিবার্য; কিন্তু এইরূপ হিংসাদিযুক্ত হইলেও তাহা ত্যাগ করিয়া অন্য বর্ণের কর্ম গ্রহণ করা কর্তব্য নয় । কেননা কর্মমাত্রই দোষযুক্ত, যেহেতু উহা বন্ধনের কারণ, কর্ম করিলেই তাহার শুভাশুভ ফলভোগার্থ পুন; পুনঃ জন্মগ্রহণ ও সংসার-যাতনা ভোগ অনিবার্য । তবে কর্মত্যাগই ত শ্রেয়ঃকল্প ? না, কর্ম করিয়াও যাহাতে কর্মবন্ধন না হয় তাহার উপায় আছে । (পরের শ্লোক) ।

৪৯) জিতাত্মা = জিতেন্দ্রিয় (শঙ্কর), নিরহঙ্কার (শ্রীধর) ।

৪৯) নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধি = কর্মবন্ধন হইতে মুক্তি । সমস্ত অধ্যাত্ম-শাস্ত্রের মূল কথাই হইতেছে, কিরূপে জীব জন্ম-কর্মচক্র হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিতে পারে তাহার উপায় নির্দেশ ।

৫৩) পরিগ্রহম্‌ = শরীরধারণার্থ বা ধর্মানুষ্ঠানার্থ লোকের নিকট হইতে অর্থ বা দ্রব্যাদি গ্রহণ । প্রকৃত যোগযুক্ত সাধু পুরুষ এ সকলও ত্যাগ করেন ।

৫৪-৫৬) নিষ্কাম কর্ম -> নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধি -> সাত্ত্বিকী বুদ্ধি -> ব্রহ্মভূত (ব্রহ্মভাব প্রাপ্তি) -> পরাভক্তি -> মোক্ষ (ভগবৎ-প্রাপ্তি)

এস্থলে জ্ঞানবাদী ও ভক্তিবাদীর মধ্যে এক সূক্ষ তর্ক উপস্থিত হয় । জ্ঞানবাদী বলেন, জ্ঞান ব্যতীত মুক্তি নাই এবং এই হেতুই – আমাকে স্বরূপতঃ জানিয়া আমাতে প্রবেশ করেন – এস্থলে এই কথা আছে । ভক্তিবাদী বলেন, ব্রহ্মভাবলাভেই জীবের মুক্তি, ইহাই জ্ঞানমার্গের চরম অবস্থা । কিন্তু এস্থলে শ্রীভগবান্‌ বলিতেছেন, ব্রহ্মভাবলাভ হইলেই আমাতে পরাভক্তি জন্মে এবং ভক্তিদ্বারাই আমার স্বরূপের অবগতি হইলে ভক্ত আমাকে প্রাপ্ত হন । সুতরাং এস্থলে ভক্তিরই প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে; বস্তুত পরম জ্ঞান ও পরাভক্তিতে কোন পার্থক্য নাই, সাধক যে পথেই সাধনা আরম্ভ করুক না কেন, একটি থাকিলে অপরটি আসিবেই, সুতরাং জ্ঞান-ভক্তির প্রাধান্য লইয়া বিবাদ নিরর্থক ।

৫৭) বুদ্ধিযোগ : গীতায় শ্রীভগবান যে যোগ বলিতেছেন, তাহাকে কখনো বুদ্ধিযোগ, কখনো বা কেবল যোগ শব্দদ্বারাই প্রকাশ করিয়াছেন । এ-স্থলে বুদ্ধি অর্থ শুদ্ধ সাম্য-বুদ্ধি, উহাই কর্মযোগের মূল, কর্ম করিবার সময় বুদ্ধিকে স্থির, পবিত্র সম ও শুদ্ধ রাখাই সেই যোগ, ‘যুক্তি’ বা কৌশল যাহাতে কর্মের বন্ধন হয় না, সে কর্ম যাহাই হউক-না-কেন । এই হেতুই ‘কর্ম হইতে বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ’ [২|৪৮-৫১] ।

৫৯-৬৩) প্রকৃতি-পারতন্ত্র ও আত্মস্বাতন্ত্র্য – এস্থলে শ্রীভগবান্‌ বলিতেছেন – তুমি ইচ্ছা না করিলেও প্রকৃতি তোমাকে স্বাভাবিক কর্মে প্রবর্তিত করিবে, তোমাকে অবশভাবেই সে কর্ম করিতে হইবে । প্রকৃতির প্রেরণায় কর্ম, কর্মফলে সদসৎ যোনিতে জন্ম, জন্মিয়া আবার কর্ম, কর্মফলে আবার জন্ম । সুতরাং দেখা যায়, জীবকে অবিরত জন্ম-কর্মের ভবচক্রেই ঘুরিতে হয় । এই প্রকৃতি-পারতন্ত্র বা কর্মবিপাক হইতে মুক্তিলাভের উপায় কি ? জ্ঞানলাভার্থ, মোক্ষার্থ জীবের কি কোন স্বাতন্ত্র্য নাই ? অধ্যাত্মশাস্ত্র বলেন, আছে । পরমাত্মা শুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বভাব এবং তিনিই বা তাঁহারই সনাতন অংশ জীবাত্মারূপে দেহে আছেন; তিনি কখনও প্রকৃতির পরতন্ত্র হইতে পারেন না । দেহেন্দ্রিয়াদির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় তাঁহাকে বদ্ধ অ পরাধীনের ন্যায় বোধ হয়; তিনি মায়াধীন হন । কিন্তু তাহা হইলেও স্বতঃই তাঁহার মুক্ত হইবার প্রেরণা আসে । গুরুপদেশ, সাধুসং প্রভৃতি অনুকূল অবস্থায় সেই প্রেরণা মন এবং বুদ্ধির উপর কার্য করে, তাহাতেই মনুষ্যের মনে আত্মোন্নতি বা মোক্ষানুকূল কর্ম করিবার প্রবৃত্তি জন্মে ।

আমাদের মধ্যে দুইটি ‘আমি’ আছে – (i)কাঁচা আমি, বদ্ধ আমি, অহঙ্কারী আমি, প্রকৃতির দাস আমি (Lower-self, ego-sense); (ii) পাকা আমি, শুদ্ধ, বুদ্ধ, স্বতন্ত্র্য আমি (Higher self, soul) । এই পাকা আমি দ্বারা কাঁচা আমি উদ্ধার করিতে হইবে । এই গেল জ্ঞানমার্গের কথা ।

কৃপাবাদ – কিন্তু ভক্তিমার্গে বলা হয় যে, শ্রীভগবান্‌ই অন্তর্যামীরূপে হৃদয়ে অধিষ্ঠিত থাকিয়া জীবকে যন্ত্রারূঢ় পুত্তলিকার ন্যায় মায়াদ্বারা চালাইতেছেন, সুতরাং সর্বতোভাবে তাঁহার শরণ লইলেই তাঁহার প্রসাদে মুক্তিলাভ হয় । মনে রাখা প্রয়োজন, কৃপাবাদ অর্থ নিশ্চেষ্টতা নয়, আত্মচেষ্টা ব্যতীত ভগবৎকৃপা হয় না ।

ইচ্ছা-স্বাতন্ত্র্য (Freedom of the Will) – পাশ্চাত্য দার্শনিকগণ ইহা সম্বন্ধে অনেক গবেষণা করিয়াছেন, কিন্তু কোন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারিয়াছেন বলিয়া বোধ হয় না । আর্য ঋষিগণ সাংখ্য-বেদান্তাদি শাস্ত্রে মনস্তত্ত্ব ও আত্মতত্ত্বের যে সূক্ষানুসূক্ষ বিশ্লেষণ করিয়াছেন তাহা পর্যালোচনা করিলে দেখা যায় যে, ‘ইচ্ছা-স্বাতন্ত্র্য’ শব্দটিই একরূপ অর্থহীন । কারণ, ইচ্ছা মনের ধর্ম; মন বুদ্ধির দ্বারা চালিত হয়, মনবুদ্ধি প্রকৃতিরই পরিণাম এবং প্রকৃতির গুণানুসারেই বিভিন্ন হয়, সুতরাং ইচ্ছাও সর্বদাই প্রকৃতির অধীন – উহার স্বাতন্ত্র্য নাই । উহার স্বাতন্ত্র্য তখনই হয়, যখন জীব ত্রিগুণাতীত বা নিত্যসত্ত্বস্থ হয়, অর্থাৎ জীবের স্বাতন্ত্র্য-ইচ্ছা থাকে না, যখন জীবের ইচ্ছা এবং ঈশ্বরেচ্ছা এক হইয়া যায় – প্রকৃতপক্ষে উহা আত্ম-স্বাতন্ত্র্য, ‘ইচ্ছা-স্বাতন্ত্র্য’ নহে । এই হেতুই গীতায় মিশ্র-সাত্ত্বিক বুদ্ধিকেও বন্ধনের কারণ বলা হইয়াছে ।

৬৪,৬৬) সর্বধর্মত্যাগ করিয়া আমার শরণ লও (শরণাগতি)

অর্জুনের মোহ অপসারণার্থে শ্রীভগবান্‌ এ পর্যন্ত কর্মজ্ঞান-ভক্তিমিশ্র অপূর্ব যোগধর্মের উপদেশ প্রদান করিলেন । পরিশেষে সর্বগুহ্যতম এই সারকথাটি বলিয়া দিলেন – শ্রুতি, স্মৃতি বা লোকাচারমূলক নানা ধর্মের নানারূপ বিধিনিষেধের দাসত্ব ত্যাগ করিয়া (abandoning all rules of conduct – Aurobindo) তুমি সর্বতোভাবে আমার শরণ লও, আমার কর্মবোধে যথাপ্রাপ্ত কর্তব্য কর্ম করিয়া যাও, তোমাত কোন ভয় নাই, আমিই তোমাকে সর্বপাপ হইতে মুক্ত করিব । ইহাই গীতায় শ্রীভগবানের অভয়বাণী, ইহাই ভক্তমার্গের সারকথা । ইহারই নাম ভগবৎ-শরণাগতি বা আত্মসমর্পণ-যোগ । ভক্তিশাস্ত্রে শরণাগতির ষড়্‌বিধ লক্ষণ বর্ণিত আছে – (i) শ্রীভগবানের প্রীতিজনক কার্যে প্রবৃত্তি, (ii) প্রতিকূল কার্য হইতে নিবৃত্তি, (iii) তিনি রক্ষা করিবেন বলিয়া দৃঢ় বিশ্বাস, (iv) রক্ষাকর্তা বলিয়া তাঁহাকেই বরণ, (v) তাঁহাতে সম্পূর্ণ আত্ম-সমর্পণ, (vi) ‘রক্ষা কর’ বলিয়া দৈন্য ও আর্তি প্রকাশ ।

৬৭) শুশ্রূষা শব্দের দুই অর্থ – (i) শ্রবণের ইচ্ছা, (ii) পরিচর্যা, সেবা । এস্থলে যে কোন অর্থ গ্রহণ করা যায় ।

৭৮) এস্থলে “যোগেশ্বর ও ধনুর্ধর” এই বিশেষণের সার্থকতা লক্ষ করিবার বিষয় । যুক্তি ও শক্তি মিলিত হইলেই কার্য-সফলতা সম্ভবপর, নচেৎ কেবল বলে বা কেবল বুদ্ধিদ্বারা কৃতকার্য হওয়া যায় না, উদাহরণ জরাসন্ধ-বধ ।

সংগ্রহঃ ০১। sanatandharmatattva.wordpress.com
             ০২। http://www.scsmathinternational.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।