বৈদিক বিবাহের সাত পাকের দ্বিতীয় পাক বাড়ানোর সময়েও বর বলেন “বিষ্ণুরূপ আমি প্রিয়ে! আমি তোমার ভার গ্রহণে সমর্থ। প্রথম উক্তির উত্তরে বধূ নিজের আনন্দ প্ৰকাশ করেন, দ্বিতীয় উক্তিতে তিনি বলেন “চিরদিন শক্তিরূপে বিরাজিব আমি তব বাম পার্শ্বভাগে। দুঃখে ধৈৰ্য ধরব, হৃষ্টচিত্ত হয়ে সুখে তোমার কুটুম্বদের নিত্য হাসিমুখে নিয়ত সেবা করব।” এই রকম ৪র্থবারে বরের উক্তি, “ধীরে সতী ধীরে। চতুর্থ চরণ ফেল, মোর গৃহ পানে চল সুখে অবহেলে তবলোকে লুকাবে আঁধারের রাত্ৰি, সকল সুখের মোর তুমি অধিষ্ঠাত্রী।” যষ্ঠ পাক বাড়ানোর সময় বধূর উক্তি “সৰ্ব্বকাৰ্য্যে তব বামে করি অধিষ্ঠান, সম্পাদিব মনের হরষে! যা করাবে তুমি, তব অনুগামী আমি-সেই ভাবে করব পালন। আমি তব অর্দ্ধাঙ্গিনী আমি তব পরিচালিকা।” সপ্তম পদ গমনেব সময় বরের উক্তি,-"প্রিয়তমে লো সঙ্গিনী। এ মহামুহুৰ্ত্তে তুমি এস সপ্তপদ। ভূ-আদি সপ্তলোকে যা কিছু সম্পদ তোমার অধীন হোক্। আমি বিষুরূপ! হে অনুগামিনী, তুমি বুঝে স্বরূপ, এস মোর গৃহপানে এস গৃহলক্ষ্মী।" এখানেও বধূর উক্তিও মহান। সপ্তপদ গমনের পর বর বলেন “আমরা সপ্তপদ গমন করেছি, আমরা পরস্পর পরস্পরের সখা, আমরা যেন অবিযুক্তই থাকি, যেন আমরা উভয়ে পরামর্শ ক’রে সংসার পথে বিচরণ করি’ ইত্যাদি।
বিবাহের কয়েকটি মন্ত্রে উল্লেখ আছে-শুধু অনুবাদ অংশ তুলে ধরছি-
- আমাদের মন দেহ এক হোক, আমাদের অবিভক্ত যুগল হৃদয়ের দ্বারা আমাদের জীবন-ব্রত সিদ্ধিলাভ করুক, তুমি ঋক, আমি সাম, তুমি ভূলোক, আমি দ্যূলোক, আমি মন, তুমি ভাষা। তুমি আমার অনুব্রতা হও। হে সত্যপ্রিয়ে! তুমি শ্রীরূপে, ঐশ্বর্য্যে ও পুত্র জননীরূপে প্রতিষ্ঠিতা হও। যুগল-আত্মা আমাদের অভেদ, যুগল-হৃদয় আমাদের অভেদ, নাভি, শরীরও অভেদ, তুমি আমার অনুব্রতা হও। আমার ত্বকের দ্বারা তোমার ত্বক, মাংস দ্বারা তোমার মাংস, অস্থির দ্বারা তোমার অস্থি-আমার প্রাণের দ্বারা তোমার প্রাণ ধারণ করছি। আমার ব্রতে তোমার হৃদয় সন্নিবিষ্ট কর, আমার চিত্ত তোমার চিত্ত অনুয়ায়ী হোক। একই ধ্রুব-ভূমিতে দ্যুলোক, ভূলোক ও সমস্ত জগত প্রতিষ্ঠিত সেরুপ অচর ধ্রুবরূপ পরম কল্যাণের দ্বারা এই স্ত্রী প্রতিকূলে সুপ্রতিষ্ঠিতা হয়ে বিবাহ করুক। অন্নময় দেহের দ্বারা, মণিময় প্রাণসূত্রের দ্বারা, সত্যগ্রন্থির দ্বারা আমি তোমার হৃদয় মন বেঁধে ফেলেছি, তোমার হৃদয় আমার হােক, এই আমার হৃদয় তোমার হােক।” কন্যাগৃহে বর বধূর দিকে চেয়ে, বধূর অবয়ব নিরীক্ষণ ক’রে বলেন, (‘অঘোর পতিঘ্নোষি-চতুষ্পদ’) “বধু! তুমি স্নিগ্ধদৃষ্টিসম্পন্ন হও, পতিকুলের কল্যাণদায়িনী হও, তোমার হৃদয় অমৃতে পূর্ণ হােক, তােমার দৃষ্টি জ্যোতিঃ হ্মরণ করুক, তুমি দেবভক্ত হও, তোমার কীৰ্ত্তি বিশ্বব্যাপিনী হােক, তুমি আমার প্রিয় পরিজনের এবং গবাদি পশুর আনন্দদায়িনী হও।”
বৈদিক বিবাহের রীতিনীতি অনুয়ায়ী বিবাহের পর ব্রহ্মচর্য্য অবশ্য পালনীয় ছিল, সাধারনতঃ তিনরাত্র পালনীয়, আশ্বলয়ন গৃহসূত্ৰ মতে, তিন রাত্র বা বার রাত্র, কিন্তু ঋষি কল্প সূত্ৰ প্ৰার্থী হলে বিবােহান্তে একবৎসর ব্রহ্মচৰ্য্য অবশ্য-পালনীয়। কাত্যায়ন বলেন যে একবৎসর ব্রহ্মচর্য্যই বিধি, আর ত্রিরাত্র, ছয়রাত্র বা দ্বাদশরাত্র বিকল্পে। ব্ৰহ্মপুরাণে বরকন্যার বয়স হিসাবে পৃথক পৃথক বিধান আছে। ‘হৃদয়-সম্মার্জন’ মন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বদেবগণ’ আমাদের হৃদয় সংযুক্ত করুন, বায়ু ও ব্রহ্মা আমাদের যুগ্মহৃদয়ের ঐক্য সম্পাদন করুন, আমাদের হৃদয়মনের পূর্ণ ঐক্য সম্পাদনকারী বাক্যাবলী এই সময়ে দেবী সরস্বতী আমাদের প্রদান করুন।’ ‘সমাবেশন মন্ত্রে’র মধ্যে সন্তান উৎপাদনের একটি উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, ‘আমি এই বিশ্বভূবনের অন্তর্গত হয়ে পিতৃলোকের তৃপ্তির জন্য জায়াতে সন্তান উৎপাদন করি…...চল আমরা দেবতার পরিচর্য্যা করি।’
বিবাহে, সামাজিক রীতি-নীতি সৰ্বস্থানে এক নয়, যা এক সমাজে দূষণীয়, অন্য সমাজে তা দূষণীয নয়। আদর্শ কোন স্থানে বহির্মুখী, কোন স্থানে অন্তর্মুখী। পিতৃ পুরুষের তৃপ্তিব জন্য—পিতৃ ঋণ হ’তে মুক্ত হওয়ার জন্য আৰ্য্য বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন, এমন কি ‘সপ্তপদী’ গমনের সঙ্গে শক্তির (কুণ্ডলিনীর) সপ্তচক্ৰ ভেদের সম্বন্ধ বৰ্ত্তমান। এ ভাব আৰ্য্য ছাড়া অন্যত্র নেই। পিতৃঋণ কখনও শোধ হয় না, কিছু পরিশোধ হয় সন্তান হ’লে। কারণ, সন্তান হ’লে তখন পিতামাতার বাৎসল্য কেমন বুঝতে পারা যায়। বিশ্বমাতার ভালবাসার কণাই মাতৃহৃদয়ে বৰ্ত্তমান। বাৎসল্যের অনুভূতি বিশ্বমাতার দিকে এগিয়ে দেয়। তাই আৰ্য্য পুত্রার্থী। মানুষ কতগুলি ঋণ নিয়ে জগতে আসে। তার মধ্যে পিতৃঋণ একটি, এই সমস্ত ঋণই পরিশোধ হয় একমাত্ৰ সন্ন্যাসে, কারণ, বিশ্বমাতার সমদৰ্শীত্ব তখন সন্ন্যাসী লাভ করেন। আৰ্য্য জাতি ছাড়া এভাবও কোন স্থানে নেই।
বিভিন্ন সভ্যতায় বিবাহেব আদর্শ মার্জ্জিত আকার ধারণ করেছে, কিন্তু এখনও সেখানে বিবাহের উদ্দেশ্য তিনটি (1) 'Procreation of Children' বা বংশবৃদ্ধি (2) 'a remedy against sin বা পাপের প্রতিষেধক (3) “to avoid fornication' বা ব্যভিচার হতে আত্মরক্ষা।
ব্রত অনুষ্ঠান সমূহ জাতির মধ্যে অধ্যাত্মশক্তির বীজ, জাতীয়ত্বের বীজ জনশক্তি ধরে বেখেছে আজও। শিক্ষিত অভিমানীদের মধ্যে ঐগুলির আদব ক’মে এলেও সৎ সন্তানের জন্য ভগবানের কাছে কামনা করেন মা।
(এই ধারাবাহিক লেখার উদ্দেশ্য, স্বজাতিয়দের নিজ ধর্ম সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। যদি আমরা আমাদের এই সংস্কৃতিকে ঠিক ঠিক লালন করি তবে এই ধর্মান্তর, সাংসারিক কলহরূপ অনেক সমস্যার অবসান ঘটবে।)
স্মৃতিকার। ভগবান মনু “আৰ্য্য’ সম্বন্ধে এই সংজ্ঞা দিয়েছেন "সৎসস্তান কামনার ফলে যার জন্ম হয়েছে, সেই আৰ্য্য”। ভগবানেব নিকট সন্তানদের কামনা না করে যাঁদের জন্ম হয় স্মৃতিকারের মতে তারা অনার্য্য। সন্তানের জন্য ভগবানের নিকট কামনা করতে হবে। অভিশাপ অসন্তোষের মধ্যে যাদের জন্ম, সংযমের অসামর্থ্য হেতু, উত্তেজনার অতর্কিত সুযোগে যারা জগতে আবির্ভূত হয়, সেই সব সন্তানের কাছে আবার কি আশা করা যায় ?”
দশরথ পুত্ৰেষ্টি যজ্ঞ করেছিলেন, পুত্ৰ পাবার জন্য। অনেক ব্রত ও অনুষ্ঠান এখন বিলুপ্ত হলেও আজও সন্তানবতী নারী ষষ্ঠী পূজাদি করেন ভবিষ্যৎ সন্তানের মঙ্গলের জন্য, তুলসী তলায় বা বিল্বমূলে বসে তিনি সন্তান না হওয়া পর্য্যন্ত নিত্য জপ ধ্যানে ব্রতী থাকেন, এছাড়া গ্রাম্য দেবতার কাছে, তীর্থ-দেবতার কাছে সন্তানের জন্য ‘মানত’ করা ত আছেই। বিবাহের মন্ত্রে আমরা দেখেছি দম্পতির সম্বন্ধ। গর্ভাধানেব মন্ত্রে, সত্ত্বগুণবিশিষ্ট আত্মানন্দময় সন্তানেব কামনা করা হয়। ঋতুমতী কন্যা ভিন্ন গর্ভাধান হয় না।
বিবাহ অনুষ্ঠানে দশবিধ সংস্কারের একটি সংস্কার গর্ভাধান, এর মন্ত্র অর্থ অনুধাবন করে দেখুন কি গভীর দর্শন এতে নিহিত-
'বিষ্ণু, তোমাব গর্ভস্থানকে শক্তি দান করুন, ত্বষ্টা তোমার গর্ভে রূপ নিৰ্ম্মাণ করুন, ভগবতী সিনী বলি। এই বধূত গর্ভাধান কর, পদ্মমালাধারী অশ্বিনীকুমারদ্বয় তোমার গর্ভাধান করুন-যে অশ্বিনীকুমারদ্ধয়ের অধিষ্ঠানে সমূৎপন্ন সন্তান দেবকুলের প্রিয়, স্বভাব-নম্র, বিনয়ী, সত্ত্বগুণযুক্ত, সম্পদশালী ও আত্মানন্দময় হয়।’
ক্রমশঃ
লেখকঃ কৃষ্ণকমল মিন্টু
বিবাহের কয়েকটি মন্ত্রে উল্লেখ আছে-শুধু অনুবাদ অংশ তুলে ধরছি-
- আমাদের মন দেহ এক হোক, আমাদের অবিভক্ত যুগল হৃদয়ের দ্বারা আমাদের জীবন-ব্রত সিদ্ধিলাভ করুক, তুমি ঋক, আমি সাম, তুমি ভূলোক, আমি দ্যূলোক, আমি মন, তুমি ভাষা। তুমি আমার অনুব্রতা হও। হে সত্যপ্রিয়ে! তুমি শ্রীরূপে, ঐশ্বর্য্যে ও পুত্র জননীরূপে প্রতিষ্ঠিতা হও। যুগল-আত্মা আমাদের অভেদ, যুগল-হৃদয় আমাদের অভেদ, নাভি, শরীরও অভেদ, তুমি আমার অনুব্রতা হও। আমার ত্বকের দ্বারা তোমার ত্বক, মাংস দ্বারা তোমার মাংস, অস্থির দ্বারা তোমার অস্থি-আমার প্রাণের দ্বারা তোমার প্রাণ ধারণ করছি। আমার ব্রতে তোমার হৃদয় সন্নিবিষ্ট কর, আমার চিত্ত তোমার চিত্ত অনুয়ায়ী হোক। একই ধ্রুব-ভূমিতে দ্যুলোক, ভূলোক ও সমস্ত জগত প্রতিষ্ঠিত সেরুপ অচর ধ্রুবরূপ পরম কল্যাণের দ্বারা এই স্ত্রী প্রতিকূলে সুপ্রতিষ্ঠিতা হয়ে বিবাহ করুক। অন্নময় দেহের দ্বারা, মণিময় প্রাণসূত্রের দ্বারা, সত্যগ্রন্থির দ্বারা আমি তোমার হৃদয় মন বেঁধে ফেলেছি, তোমার হৃদয় আমার হােক, এই আমার হৃদয় তোমার হােক।” কন্যাগৃহে বর বধূর দিকে চেয়ে, বধূর অবয়ব নিরীক্ষণ ক’রে বলেন, (‘অঘোর পতিঘ্নোষি-চতুষ্পদ’) “বধু! তুমি স্নিগ্ধদৃষ্টিসম্পন্ন হও, পতিকুলের কল্যাণদায়িনী হও, তোমার হৃদয় অমৃতে পূর্ণ হােক, তােমার দৃষ্টি জ্যোতিঃ হ্মরণ করুক, তুমি দেবভক্ত হও, তোমার কীৰ্ত্তি বিশ্বব্যাপিনী হােক, তুমি আমার প্রিয় পরিজনের এবং গবাদি পশুর আনন্দদায়িনী হও।”
বৈদিক বিবাহের রীতিনীতি অনুয়ায়ী বিবাহের পর ব্রহ্মচর্য্য অবশ্য পালনীয় ছিল, সাধারনতঃ তিনরাত্র পালনীয়, আশ্বলয়ন গৃহসূত্ৰ মতে, তিন রাত্র বা বার রাত্র, কিন্তু ঋষি কল্প সূত্ৰ প্ৰার্থী হলে বিবােহান্তে একবৎসর ব্রহ্মচৰ্য্য অবশ্য-পালনীয়। কাত্যায়ন বলেন যে একবৎসর ব্রহ্মচর্য্যই বিধি, আর ত্রিরাত্র, ছয়রাত্র বা দ্বাদশরাত্র বিকল্পে। ব্ৰহ্মপুরাণে বরকন্যার বয়স হিসাবে পৃথক পৃথক বিধান আছে। ‘হৃদয়-সম্মার্জন’ মন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বদেবগণ’ আমাদের হৃদয় সংযুক্ত করুন, বায়ু ও ব্রহ্মা আমাদের যুগ্মহৃদয়ের ঐক্য সম্পাদন করুন, আমাদের হৃদয়মনের পূর্ণ ঐক্য সম্পাদনকারী বাক্যাবলী এই সময়ে দেবী সরস্বতী আমাদের প্রদান করুন।’ ‘সমাবেশন মন্ত্রে’র মধ্যে সন্তান উৎপাদনের একটি উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, ‘আমি এই বিশ্বভূবনের অন্তর্গত হয়ে পিতৃলোকের তৃপ্তির জন্য জায়াতে সন্তান উৎপাদন করি…...চল আমরা দেবতার পরিচর্য্যা করি।’
বিবাহে, সামাজিক রীতি-নীতি সৰ্বস্থানে এক নয়, যা এক সমাজে দূষণীয়, অন্য সমাজে তা দূষণীয নয়। আদর্শ কোন স্থানে বহির্মুখী, কোন স্থানে অন্তর্মুখী। পিতৃ পুরুষের তৃপ্তিব জন্য—পিতৃ ঋণ হ’তে মুক্ত হওয়ার জন্য আৰ্য্য বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন, এমন কি ‘সপ্তপদী’ গমনের সঙ্গে শক্তির (কুণ্ডলিনীর) সপ্তচক্ৰ ভেদের সম্বন্ধ বৰ্ত্তমান। এ ভাব আৰ্য্য ছাড়া অন্যত্র নেই। পিতৃঋণ কখনও শোধ হয় না, কিছু পরিশোধ হয় সন্তান হ’লে। কারণ, সন্তান হ’লে তখন পিতামাতার বাৎসল্য কেমন বুঝতে পারা যায়। বিশ্বমাতার ভালবাসার কণাই মাতৃহৃদয়ে বৰ্ত্তমান। বাৎসল্যের অনুভূতি বিশ্বমাতার দিকে এগিয়ে দেয়। তাই আৰ্য্য পুত্রার্থী। মানুষ কতগুলি ঋণ নিয়ে জগতে আসে। তার মধ্যে পিতৃঋণ একটি, এই সমস্ত ঋণই পরিশোধ হয় একমাত্ৰ সন্ন্যাসে, কারণ, বিশ্বমাতার সমদৰ্শীত্ব তখন সন্ন্যাসী লাভ করেন। আৰ্য্য জাতি ছাড়া এভাবও কোন স্থানে নেই।
বিভিন্ন সভ্যতায় বিবাহেব আদর্শ মার্জ্জিত আকার ধারণ করেছে, কিন্তু এখনও সেখানে বিবাহের উদ্দেশ্য তিনটি (1) 'Procreation of Children' বা বংশবৃদ্ধি (2) 'a remedy against sin বা পাপের প্রতিষেধক (3) “to avoid fornication' বা ব্যভিচার হতে আত্মরক্ষা।
ব্রত অনুষ্ঠান সমূহ জাতির মধ্যে অধ্যাত্মশক্তির বীজ, জাতীয়ত্বের বীজ জনশক্তি ধরে বেখেছে আজও। শিক্ষিত অভিমানীদের মধ্যে ঐগুলির আদব ক’মে এলেও সৎ সন্তানের জন্য ভগবানের কাছে কামনা করেন মা।
(এই ধারাবাহিক লেখার উদ্দেশ্য, স্বজাতিয়দের নিজ ধর্ম সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। যদি আমরা আমাদের এই সংস্কৃতিকে ঠিক ঠিক লালন করি তবে এই ধর্মান্তর, সাংসারিক কলহরূপ অনেক সমস্যার অবসান ঘটবে।)
স্মৃতিকার। ভগবান মনু “আৰ্য্য’ সম্বন্ধে এই সংজ্ঞা দিয়েছেন "সৎসস্তান কামনার ফলে যার জন্ম হয়েছে, সেই আৰ্য্য”। ভগবানেব নিকট সন্তানদের কামনা না করে যাঁদের জন্ম হয় স্মৃতিকারের মতে তারা অনার্য্য। সন্তানের জন্য ভগবানের নিকট কামনা করতে হবে। অভিশাপ অসন্তোষের মধ্যে যাদের জন্ম, সংযমের অসামর্থ্য হেতু, উত্তেজনার অতর্কিত সুযোগে যারা জগতে আবির্ভূত হয়, সেই সব সন্তানের কাছে আবার কি আশা করা যায় ?”
দশরথ পুত্ৰেষ্টি যজ্ঞ করেছিলেন, পুত্ৰ পাবার জন্য। অনেক ব্রত ও অনুষ্ঠান এখন বিলুপ্ত হলেও আজও সন্তানবতী নারী ষষ্ঠী পূজাদি করেন ভবিষ্যৎ সন্তানের মঙ্গলের জন্য, তুলসী তলায় বা বিল্বমূলে বসে তিনি সন্তান না হওয়া পর্য্যন্ত নিত্য জপ ধ্যানে ব্রতী থাকেন, এছাড়া গ্রাম্য দেবতার কাছে, তীর্থ-দেবতার কাছে সন্তানের জন্য ‘মানত’ করা ত আছেই। বিবাহের মন্ত্রে আমরা দেখেছি দম্পতির সম্বন্ধ। গর্ভাধানেব মন্ত্রে, সত্ত্বগুণবিশিষ্ট আত্মানন্দময় সন্তানেব কামনা করা হয়। ঋতুমতী কন্যা ভিন্ন গর্ভাধান হয় না।
বিবাহ অনুষ্ঠানে দশবিধ সংস্কারের একটি সংস্কার গর্ভাধান, এর মন্ত্র অর্থ অনুধাবন করে দেখুন কি গভীর দর্শন এতে নিহিত-
'বিষ্ণু, তোমাব গর্ভস্থানকে শক্তি দান করুন, ত্বষ্টা তোমার গর্ভে রূপ নিৰ্ম্মাণ করুন, ভগবতী সিনী বলি। এই বধূত গর্ভাধান কর, পদ্মমালাধারী অশ্বিনীকুমারদ্বয় তোমার গর্ভাধান করুন-যে অশ্বিনীকুমারদ্ধয়ের অধিষ্ঠানে সমূৎপন্ন সন্তান দেবকুলের প্রিয়, স্বভাব-নম্র, বিনয়ী, সত্ত্বগুণযুক্ত, সম্পদশালী ও আত্মানন্দময় হয়।’
ক্রমশঃ
লেখকঃ কৃষ্ণকমল মিন্টু
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন