বিবাহ ইংরেজি: Marriage, matrimony বা wedlock হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আরব জাতির ধর্মের চিন্তায় বিবাহ একটি চুক্তি মাত্র (contract), বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতিভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও সনাতন ধর্মে(হিন্দু)-বিবাহের আদর্শ বৈদিক যুগ হ’তে আজ পৰ্যন্ত ঠিক চলে আসছে স্মৃতির সংস্কারে, যার মূলনীতি আজও বদলায় নি।
বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম আলোচনায় আমরা দেখতে পাই যে ব্ৰহ্মচৰ্য্য আশ্ৰমের পর গৃহস্থ আশ্রম, এই গৃহী-জীবন ছিল কয়েক বৎসর মাত্ৰ স্থায়ী, কারণ, বৈদিক জীবন প্রণালীতে “পঞ্চাশোৰ্দ্ধং বনং ব্ৰজেৎ”, এই নিয়ম অনুসারে গৃহী বাণপ্ৰস্থ অবলম্বন করতেন। মোক্ষ প্রাপ্তিই সনাতন ধর্মে(হিন্দু)-জীবনের আদর্শ, সেই জন্য ভোগবিলাস তাকে আদর্শচ্যুত করতে পারত না। তিনি জানতেন যে কিছু দিন সংসার আশ্রম করার পর তাঁকে নিত্যবস্তুর সন্ধানে তপস্যায়-ব্রত হ’তে হবে, মনকে একাগ্র অভিমুখী করতে হবে। প্রথম জীবনের শিক্ষা তাঁর সহায় হয় সর্বত্র। তিনি জানেন যে, বিবাহিত-জীবনে মোহ আনায়, দুর্বলতা আনায়, এবং সে দুর্বলতা তাকে পরিহার করতে হবে বৃহৎ উদ্দেশ্যে। লক্ষ্য স্থির থাকায় বৃদ্ধ বয়সেও তাঁর চিত্তে অবসাদ আসত না-সহজে।
জগতে ভোগের যে কোন প্রয়োজনীযতা নেই তা-নয়, ভোগের স্বরূপ-বোধ থাকা চাই, ভোগ করতে জানা চাই। নতুবা, ভোগ অভিমুখী-শক্তি বহু বিভক্ত হ’য়ে পড়লে, সহজে কেন্দ্ৰ অভিমুখী হ’তে চায় না। মোক্ষ মানে বন্ধন হ’তে মুক্তি, তাতে চাই চিত্তের স্বাধীনতা, চিত্তবৃত্তিকে একাভিমুখী করা। নারী পুরুষের বর্তমান সমস্যা সমাধানে, উভয়কে ঐ আদর্শ্যের দিক দিয়ে বুঝতে হবে।- নারীর নারীত্ব বুঝতে হবে। নারীর অন্তর্মুখী বৃত্তি সমুদায়েব পূর্ণ বিবাশ যাতে হয় তা করতে গেলে নারীকেই এ-ভাব নিতে হবে।
কেন নারী বৈদিকে শাস্ত্রে গুরুত্ববহ-
জৈব বিবর্তনে সৰ্ব্বব্যাপী চৈতন্যের প্ৰকাশ ও ব্যক্ত অবস্থা। ঐ বিবর্তনের তিনটি রূপ- সৃষ্টি, স্থিতি ও ধ্বংস। ধংস মানে নতুন সৃষ্টি। প্রথম বিকাশ সৃষ্টির দ্যোতনা , স্থিতির লক্ষণ-শৃঙ্খলা-স্থাপন, ক্রমপ্রসার ও ক্রমোন্নতি, শৃঙ্খলার বিচ্যুতি, এলোমেলো গতি, মৃত্যুর চিহ্ন। জৈব বিবর্তন হয় বৈচিত্র্যে, নানাত্ব বোধ আসে এই বিশিষ্টতায় । এই ব্যক্ত প্রকৃতি। এই লক্ষণ আক্রান্ত বলেই নারী প্রকৃতিরূপা-শক্তিরূপা। একাভিমুখী গতিকে কেন্দ্রস্থ করতে পারলে, চিত্তবৃত্তি নিরোধের ফলে যে শক্তি উদ্বুদ্ধ হয়, তাতে অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়, শ্রদ্ধা জেগে উঠে, অন্তর্নিহিত শক্তির প্রকাশ হয়। শক্তিরূপিনী নারী-সমাজে যাতে আত্মবিস্মৃতি না আসে, আত্মশ্রদ্ধা সুপ্ত হয়ে না পড়ে, তার জন্য বেদপন্থী সমাজে নারীর ‘পতি-যোগ’ সাধনাই সর্ব্বোত্তম উপায় বলে শাস্ত্রে স্বীকৃত হয়েছে।
এই ‘যোগ’ মানে, সমষ্টি বোধ আনবার জন্য একাভিমুখী গতি, স্বামী স্ত্রী- একেরই যুগ্ম প্রকাশ, আপাত প্রতীয়মান ভেদ মাত্র! সমাজ যাতে আত্মবিস্মৃত না হয়, ধ্বংসের দিকে না যায়, কালের মত যাতে সমাজের অনাদি প্রবাহ বর্ত্তমান থাকে তার জন্য সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে আদর্শ সামনে রেখে, সর্ব্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে এই সেই প্রকৃতিরূপারই ছায়া-বহুধা বিভিন্ন শাখা প্রকাশার মূলে বিরাজিতা সেই মহামায়া।
সমাজে আদর্শ রক্ষায়, যুবক-যুবতীদের সুশৃঙ্খল রাখতে, আদর্শ চরিত্র গঠনে, উচ্ছৃঙ্খলতা রক্ষায়, সমাজের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে সকলেই যেন সংযত জীবন যাপনের মাধ্যমে শান্তি লাভ করে এবং জীবন কে ধন্য করতে পারে এই ছিল লক্ষ্য।
নারী কেন আবহমান কাল থেকে পুরুষের অধীন, এর বিবাদ নিষ্প্রয়োজন। পুরুষ ও নারী, উভয় নিয়েই সমাজ। সমাজ স্থাপনের মূলে নারী, কারণ নারী থেকেই সন্তান পালন ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ-চেষ্টা স্ত্রীপুরুষ উভয়েরই হৃদয়ে স্থিতিশীলতার আবশ্যকতা উপলব্ধ হয়, যার ফলে মানবমনে সূক্ষ্ম বৃত্তির অভিব্যক্তি হয়-স্নেহ গ্ৰীতি করুণা প্রভৃতি দিয়ে; তাতে উন্মেষ ঘটে স্বাৰ্থ-বিসর্জন-বুদ্ধি ও ত্যাগের। সুন্দর সমাজ গঠনে নারীর প্ৰয়োজনীয়তাই বেশী; ঐ সূক্ষ্ম মনোবৃত্তিকে কাৰ্য্যকর করার জন্য, শৃঙ্খলা আনার জন্য, নারীর বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্য সমাজে অবশ্যম্ভাবী। অথচ গোড়া থেকেই সমাজ-বদ্ধ নারী, পুরুষের অধীন থাকতে বাধ্য হয়েছে! গৰ্ভধাবণ, প্রসবভোগ ও সন্তান পালন প্রভৃতি ব্যাপারে নারী, পুরুষের ও আত্মীয় স্বজনের সাহায্য নিতে বাধ্য হন-বাৎসল্যের জন্যই মহাশক্তি নম্রা!
বৈদিক যুগে, বিবাহের মন্ত্ৰ হ’তে গৃহী জীবনে নারীর স্থান কোথায় তার আভাষ আমরা পাই, বিবাহের সময় সপ্তপদী গমনের বৈদিক মন্ত্রগুলি থেকে। এক এক চরণক্ষেপে এক একটি মন্ত্র বধূকে বলতে হয়। প্রথমে বর বধূকে সামনে পা বাড়িয়ে নিজ গৃহপানে আসতে আহ্বান করেন। বর বলেন “বিষ্ণুরূপ আমি প্রিয়ে! গৃহের সমস্ত আহার্য্য সামগ্রী তােমার সেবার জন্যই নিয়োজিত থাকবে”, “আজ হ’তে তুমি গৃহ অধিষ্ঠাত্রী হবে-প্ৰথম চরণ চালন মম গৃহপানে কর দেবী।
ক্রমশঃ
লেখকঃ কৃষ্ণকমল মিন্টু
⚠ নতুন নতুন পোষ্ট পেতে সনাতন সন্দেশ - Sanatan Swandesh
পেজটিতে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন।
(y) যে এখনো লাইক দেন নাই তাকে অতি শীঘ্রই পেইজটিতে একটি লাইক দেওয়ার জন্য বিনম্র ভাবে অনুরোধ করছি । এবং আপনার বন্ধুদের কে ইনভাইট করার জন্য অনুরোধ করছি।
বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম আলোচনায় আমরা দেখতে পাই যে ব্ৰহ্মচৰ্য্য আশ্ৰমের পর গৃহস্থ আশ্রম, এই গৃহী-জীবন ছিল কয়েক বৎসর মাত্ৰ স্থায়ী, কারণ, বৈদিক জীবন প্রণালীতে “পঞ্চাশোৰ্দ্ধং বনং ব্ৰজেৎ”, এই নিয়ম অনুসারে গৃহী বাণপ্ৰস্থ অবলম্বন করতেন। মোক্ষ প্রাপ্তিই সনাতন ধর্মে(হিন্দু)-জীবনের আদর্শ, সেই জন্য ভোগবিলাস তাকে আদর্শচ্যুত করতে পারত না। তিনি জানতেন যে কিছু দিন সংসার আশ্রম করার পর তাঁকে নিত্যবস্তুর সন্ধানে তপস্যায়-ব্রত হ’তে হবে, মনকে একাগ্র অভিমুখী করতে হবে। প্রথম জীবনের শিক্ষা তাঁর সহায় হয় সর্বত্র। তিনি জানেন যে, বিবাহিত-জীবনে মোহ আনায়, দুর্বলতা আনায়, এবং সে দুর্বলতা তাকে পরিহার করতে হবে বৃহৎ উদ্দেশ্যে। লক্ষ্য স্থির থাকায় বৃদ্ধ বয়সেও তাঁর চিত্তে অবসাদ আসত না-সহজে।
জগতে ভোগের যে কোন প্রয়োজনীযতা নেই তা-নয়, ভোগের স্বরূপ-বোধ থাকা চাই, ভোগ করতে জানা চাই। নতুবা, ভোগ অভিমুখী-শক্তি বহু বিভক্ত হ’য়ে পড়লে, সহজে কেন্দ্ৰ অভিমুখী হ’তে চায় না। মোক্ষ মানে বন্ধন হ’তে মুক্তি, তাতে চাই চিত্তের স্বাধীনতা, চিত্তবৃত্তিকে একাভিমুখী করা। নারী পুরুষের বর্তমান সমস্যা সমাধানে, উভয়কে ঐ আদর্শ্যের দিক দিয়ে বুঝতে হবে।- নারীর নারীত্ব বুঝতে হবে। নারীর অন্তর্মুখী বৃত্তি সমুদায়েব পূর্ণ বিবাশ যাতে হয় তা করতে গেলে নারীকেই এ-ভাব নিতে হবে।
কেন নারী বৈদিকে শাস্ত্রে গুরুত্ববহ-
জৈব বিবর্তনে সৰ্ব্বব্যাপী চৈতন্যের প্ৰকাশ ও ব্যক্ত অবস্থা। ঐ বিবর্তনের তিনটি রূপ- সৃষ্টি, স্থিতি ও ধ্বংস। ধংস মানে নতুন সৃষ্টি। প্রথম বিকাশ সৃষ্টির দ্যোতনা , স্থিতির লক্ষণ-শৃঙ্খলা-স্থাপন, ক্রমপ্রসার ও ক্রমোন্নতি, শৃঙ্খলার বিচ্যুতি, এলোমেলো গতি, মৃত্যুর চিহ্ন। জৈব বিবর্তন হয় বৈচিত্র্যে, নানাত্ব বোধ আসে এই বিশিষ্টতায় । এই ব্যক্ত প্রকৃতি। এই লক্ষণ আক্রান্ত বলেই নারী প্রকৃতিরূপা-শক্তিরূপা। একাভিমুখী গতিকে কেন্দ্রস্থ করতে পারলে, চিত্তবৃত্তি নিরোধের ফলে যে শক্তি উদ্বুদ্ধ হয়, তাতে অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়, শ্রদ্ধা জেগে উঠে, অন্তর্নিহিত শক্তির প্রকাশ হয়। শক্তিরূপিনী নারী-সমাজে যাতে আত্মবিস্মৃতি না আসে, আত্মশ্রদ্ধা সুপ্ত হয়ে না পড়ে, তার জন্য বেদপন্থী সমাজে নারীর ‘পতি-যোগ’ সাধনাই সর্ব্বোত্তম উপায় বলে শাস্ত্রে স্বীকৃত হয়েছে।
এই ‘যোগ’ মানে, সমষ্টি বোধ আনবার জন্য একাভিমুখী গতি, স্বামী স্ত্রী- একেরই যুগ্ম প্রকাশ, আপাত প্রতীয়মান ভেদ মাত্র! সমাজ যাতে আত্মবিস্মৃত না হয়, ধ্বংসের দিকে না যায়, কালের মত যাতে সমাজের অনাদি প্রবাহ বর্ত্তমান থাকে তার জন্য সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে আদর্শ সামনে রেখে, সর্ব্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে এই সেই প্রকৃতিরূপারই ছায়া-বহুধা বিভিন্ন শাখা প্রকাশার মূলে বিরাজিতা সেই মহামায়া।
সমাজে আদর্শ রক্ষায়, যুবক-যুবতীদের সুশৃঙ্খল রাখতে, আদর্শ চরিত্র গঠনে, উচ্ছৃঙ্খলতা রক্ষায়, সমাজের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে সকলেই যেন সংযত জীবন যাপনের মাধ্যমে শান্তি লাভ করে এবং জীবন কে ধন্য করতে পারে এই ছিল লক্ষ্য।
নারী কেন আবহমান কাল থেকে পুরুষের অধীন, এর বিবাদ নিষ্প্রয়োজন। পুরুষ ও নারী, উভয় নিয়েই সমাজ। সমাজ স্থাপনের মূলে নারী, কারণ নারী থেকেই সন্তান পালন ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ-চেষ্টা স্ত্রীপুরুষ উভয়েরই হৃদয়ে স্থিতিশীলতার আবশ্যকতা উপলব্ধ হয়, যার ফলে মানবমনে সূক্ষ্ম বৃত্তির অভিব্যক্তি হয়-স্নেহ গ্ৰীতি করুণা প্রভৃতি দিয়ে; তাতে উন্মেষ ঘটে স্বাৰ্থ-বিসর্জন-বুদ্ধি ও ত্যাগের। সুন্দর সমাজ গঠনে নারীর প্ৰয়োজনীয়তাই বেশী; ঐ সূক্ষ্ম মনোবৃত্তিকে কাৰ্য্যকর করার জন্য, শৃঙ্খলা আনার জন্য, নারীর বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্য সমাজে অবশ্যম্ভাবী। অথচ গোড়া থেকেই সমাজ-বদ্ধ নারী, পুরুষের অধীন থাকতে বাধ্য হয়েছে! গৰ্ভধাবণ, প্রসবভোগ ও সন্তান পালন প্রভৃতি ব্যাপারে নারী, পুরুষের ও আত্মীয় স্বজনের সাহায্য নিতে বাধ্য হন-বাৎসল্যের জন্যই মহাশক্তি নম্রা!
বৈদিক যুগে, বিবাহের মন্ত্ৰ হ’তে গৃহী জীবনে নারীর স্থান কোথায় তার আভাষ আমরা পাই, বিবাহের সময় সপ্তপদী গমনের বৈদিক মন্ত্রগুলি থেকে। এক এক চরণক্ষেপে এক একটি মন্ত্র বধূকে বলতে হয়। প্রথমে বর বধূকে সামনে পা বাড়িয়ে নিজ গৃহপানে আসতে আহ্বান করেন। বর বলেন “বিষ্ণুরূপ আমি প্রিয়ে! গৃহের সমস্ত আহার্য্য সামগ্রী তােমার সেবার জন্যই নিয়োজিত থাকবে”, “আজ হ’তে তুমি গৃহ অধিষ্ঠাত্রী হবে-প্ৰথম চরণ চালন মম গৃহপানে কর দেবী।
ক্রমশঃ
লেখকঃ কৃষ্ণকমল মিন্টু
⚠ নতুন নতুন পোষ্ট পেতে সনাতন সন্দেশ - Sanatan Swandesh
পেজটিতে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন।
(y) যে এখনো লাইক দেন নাই তাকে অতি শীঘ্রই পেইজটিতে একটি লাইক দেওয়ার জন্য বিনম্র ভাবে অনুরোধ করছি । এবং আপনার বন্ধুদের কে ইনভাইট করার জন্য অনুরোধ করছি।
1 Comments:
,,,বানান গুলো একটু সঠিক করতর হবে বানান গত কিছু ভুল আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন