২৩ নভেম্বর ২০১৭

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : অষ্টম অধ্যায় – অক্ষরব্রহ্ম-যোগ


অর্জ্জুন উবাচ—
কিন্তদ্ব্রহ্ম কিমধ্যাত্মং কিং কর্ম্ম পুরুষোত্তম ।
অধিভূতঞ্চ কিং প্রোক্তমধিদৈবং কিমুচ্যতে ॥১॥
অধিযজ্ঞঃ কথং কোঽত্র দেহেঽস্মিন্ মধুসূদন ।
প্রয়াণকালে চ কথং জ্ঞেয়োঽসি নিয়তাত্মভিঃ ॥২॥

অর্জ্জুনঃ উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] পুরুষোত্তম ! (হে পুরুষোত্তম !) তৎ (সেই) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) কিং ? (কি ?) অধ্যাত্মং কিম্ ? (অধ্যাত্ম কি ?) কর্ম্ম কিং ? (কর্ম্ম কি ?), অধিভূতং চ (এবং অধিভূত) কিং প্রোক্তম্ ? (কাহাকে বলে ?) কিম্ চ (কাহাকেই বা) অধিদৈবং (অধিদৈব) উচ্যতে ? (বলা যায় ?) । [হে] মধুসূদন ! (হে মধুসূদন !) অত্র দেহে (এই দেহে) অধিযজ্ঞঃ কঃ ? (অধিয়জ্ঞ কে ?) অস্মিন্ [দেহে] (এবং এই দেহে) কথং (কি প্রকারে) [স্থিতঃ ?] (অবস্থান করেন ?)প্রয়াণকালে চ (এবং মরণ কালে) নিয়তাত্মভিঃ (সমাহিত চিত্ত পুরুষগণ কর্ত্তৃক) [ত্বং] (তুমি) কথং (কিরূপে) জ্ঞেয়ঃ অসি ? (জ্ঞেয় হও ?) ॥১–২॥

অর্জ্জুন বলিলেন—হে পুরুষোত্তম ! সেই ব্রহ্ম কি ? অধ্যাত্ম কি ? কর্ম্ম কি ? এবং অধিভূত কাহাকে বলে ? কাহাকেই বা অধিদৈব বলা যায় ? হে মধুসূদন ! এই দেহে অধিযজ্ঞ কে ?এবং এই দেহে কি প্রকারে অবস্থিত আছেন ? এবং মরণকালে সংযতচিত্ত মানবগণকর্ত্তৃক তুমি কি প্রকারে জ্ঞেয় হও ? ॥১–২॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
অক্ষরং পরমং ব্রহ্ম স্বভাবোঽধ্যাত্মমুচ্যতে ।
ভূতভাবোদ্ভবকরো বিসর্গঃ কর্ম্মসংজ্ঞিতঃ ॥৩॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান্ বলিলেন) পরমং অক্ষরং (পরম নিত্য-তত্ত্বই) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), স্বভাবঃ (শুদ্ধজীব) অধ্যাত্মম্ (অধ্যাত্ম বলিয়া) উচ্যতে (কথিত হয়) । ভূতভাবোদ্ভবকরঃ (স্থূলসূক্ষ্মভূতদ্বারা মনুষ্যাদি দেহের জনক) বিসর্গঃ (দেবোদ্দেশে ত্যাগ) কর্ম্মসংজ্ঞিতঃ (কর্ম্ম শব্দে কথিত হয়) ॥৩॥

শ্রীভগবান্ কহিলেন—বিনাশ-রহিত এবং অবস্থান্তর-শূন্য তত্ত্বই ব্রহ্ম, শুদ্ধজীব অধ্যাত্ম বলিয়া কথিত হয় । স্থূলসূক্ষ্ম ভূতের দ্বারা মনুষ্যাদি দেহের জনক দেবতা উদ্দেশে ত্যাগ অর্থাৎ দান যজ্ঞাদিই কর্ম্মনামে অভিহিত হয় ॥৩॥

অধিভূতং ক্ষরো ভাবঃ পুরুষশ্চাধিদৈবতম্ ।
অধিযজ্ঞোঽহমেবাত্র দেহে দেহভৃতাং বর ॥৪॥

[হে] দেহভৃতাং বর ! (হে প্রাণিশ্রেষ্ঠ অর্জ্জুন !) ক্ষরঃ (বিনাশী) ভাবঃ (পদার্থ) অধিভূতং (অধিভূত শব্দে কথিত), পুরুষঃ (আদিত্যাদি দেবতার অধিষ্ঠাতা সমষ্টি বিরাট্ পুরুষ) অধিদৈবতম্ (সমস্ত দেবতার অধিপতি বলিয়া অধিদৈবত শব্দ বাচ্য), অহম্ এব চ (এবং আমিই) অত্র দেহে (এই দেহে) অধিযজ্ঞঃ (অন্তর্যামিরূপে যজ্ঞাদি কর্ম্মপ্রবর্ত্তক ও তৎ ফল দাতা বলিয়া অধিযজ্ঞ ) ॥৪॥॥

হে জীবশ্রেষ্ঠ অর্জ্জুন ! ক্ষণভঙ্গুর দেহাদি পদার্থকে অধিভূত বলা যায়, আদিত্যাদি দেবতার অধিষ্ঠাতা সমষ্টি বিরাট্ পুরুষই সমস্ত দেবতার অধিপতি বলিয়া অধিদৈবত নামে অভিহিত হন । এবং আমিই এই সকল জীবদেহে অন্তর্যামিরূপে যজ্ঞাদি কর্ম্ম প্রবর্ত্তকও তৎফলদাতা বলিয়া অধিযজ্ঞ নামে কথিত হই ॥৪॥

অন্তকালে চ মামেব স্মরন্ মুক্ত্বা কলেবরম্ ।
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ॥৫॥

অন্তকালে চ (মরণ সময়ে ও) যঃ (যিনি) মাম্ এব (আমাকেই) স্মরন্ (চিন্তা করিয়া) কলেবরম্ (শরীর) মুক্ত্বা (পরিত্যাগ করিয়া) প্রয়াতি (প্রস্থান করেন), সঃ (তিনি) মদ্ভাবং (আমার স্বভাব) যাতি (প্রাপ্ত হন) । অত্র (এই বিষয়ে) সংশয়ঃ (সন্দেহ) নাস্তি (নাই) ॥৫॥॥

মৃত্যুকালেও আমাকেই চিন্তা করিতে করিতে শরীর পরিত্যাগ পূর্ব্বক যিনি প্রয়াণ করেন, তিনিই আমার স্বভাব লাভ করেন । ইহাতে কোনও সংশয় নাই ॥৫॥

যং যং বাপি স্মরন্ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্ ।
তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতঃ ॥৬॥

[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীনন্দন !) [যঃ] (যিনি) যং যং বা অপি (যেই যেই) ভাবং (পদার্থ) স্মরন্ (স্মরণ করিয়া) অন্তে (মৃত্যুকালে) কলেবরম্ (দেহ) ত্যজতি (ত্যাগ করেন), সদা (সর্ব্বদা) তদ্ভাবভাবিতঃ (সেই সেই পদার্থের ভাবনায় তন্ময় চিত্ত হইয়া) তং তম্ এব (সেই সেই পদার্থই) এতি (প্রাপ্ত হন) ॥৬॥॥

হে কুন্তীপুত্ত্র ! মরণকালে যে ব্যক্তি যেই যেই পদার্থকে চিন্তা করিতে করিতে কলেবর ত্যাগ করেন, সর্ব্বদা সেই পদার্থের ভাবনায় তন্ময়চিত্ত হেতু তিনি সেই সেই পদার্থকেই প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ॥৬॥

তস্মাৎ সর্ব্বেষু কালেষু মামনুস্মর যুধ্য চ ।
ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্ন্মামেবৈষ্যস্যসংশয়ঃ ॥৭॥

তস্মাৎ (অতএব) সর্ব্বেষু কালেষু (সকল সময়ে) মাম্ (আমাকে) অনুস্মর (নিরন্তর স্মরণ কর), যুধ্য চ (এবং স্বধর্ম্ম যুদ্ধ কর) । ময়ি (আমাতে) অর্পিতমনোবুদ্ধিঃ (মন বুদ্ধি অর্পণ করিয়া) মাম্ এব (আমাকেই) এষ্যসি (পাইবে) [অত্র] (এ বিষয়ে) অসংশয়ঃ (কোনও সংশয় নাই) ॥৭

অতএব সর্ব্বকালে আমাকে স্মরণ কর, এবং স্বধর্ম্ম যুদ্ধ কর । আমাতে মন ও বুদ্ধি অর্পণ পূর্ব্বক কার্য্য করিলে আমাকেই প্রাপ্ত হইবে, এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই ॥৭॥

অভ্যাসযোগযুক্তেন চেতসা নান্যগামিনা ।
পরমং পুরুষং দিব্যং যাতি পার্থানুচিন্তয়ন্ ॥৮॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) অভ্যাসযোগযুক্তেন (অভ্যাসরূপ যোগযুক্ত) ন অন্যগামিনা (অনন্যগামী) চেতসা (মনের দ্বারা) দিব্যং (জ্যোতির্ম্ময়) পরমং পুরুষং (পরম পুরুষকে) অনুচিন্তয়ন্ (অনুক্ষণ চিন্তা করিয়া) [যোগী] (যোগী) [তমেব] (সেই পরম পুরুষকেই) যাতি (প্রাপ্ত হন) ॥৮

হে পার্থ ! অভ্যাসরূপ যোগযুক্ত অনন্যগামী মনের দ্বারা জ্যোতির্ম্ময় পরম পুরুষকে নিরন্তর চিন্তা করিতে করিতে যোগী ব্যক্তি সেই পরম পুরুষকেই লাভ করিয়া থাকেন ॥৮॥

কবিং পুরাণমনুশাসিতার-
মণোরণীয়াংসমনুস্মরেদ্ যঃ ।
সর্ব্বস্য ধাতারমচিন্ত্যরূপ-
মাদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ ॥৯॥
প্রয়াণকালে মনসাঽচলেন,
ভক্ত্যা যুক্তোযোগবলেন চৈব ।
ভ্রুবোর্ম্মধ্যে প্রাণমাবেশ্য সম্যক্,
স তং পরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম্ ॥১০॥

যঃ (যিনি) কবিং (সর্ব্বজ্ঞ) পুরাণম্ (অনাদি) অনুশাসিতারম্ (কৃপাপূর্ব্বক স্বভক্তিশিক্ষক) অণোঃ অণীয়াংসম্ (অণু হইতেও অতি সূক্ষ্ম) সর্ব্বস্য ধাতারম্ (সমস্ত বস্তুর ধারক অর্থাৎ পরমমহৎ পরিমাণ) অচিন্ত্যরূপম্ (অপ্রাকৃত রূপবিশিষ্ট অর্থাৎ মধ্যম পরিমাণ) আদিত্যবর্ণং (সূর্য্যবৎ স্ব-পরপ্রকাশক স্বরূপবিশিষ্ট) তমসঃ পরস্তাৎ (প্রকৃতির অতীত) [পুরুষং] (পরম পুরুষকে) প্রয়াণকালে (মৃত্যুকালে) যোগবলেন (যোগাভ্যাস বলে) অচলেন মনসা (অচঞ্চল মনের দ্বারা) ভক্ত্যা যুক্তঃ (নিরন্তর স্মরণরূপ ভক্তিযুক্ত হইয়া) ভ্রুবোঃ মধ্যে চ (এবং ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে) প্রাণম্ (প্রাণকে) সম্যক্ আবেশ্য (স্থিরভাবে স্থাপন করিয়া) অনুস্মরেৎ (চিন্তা করেন) সঃ (তিনি) তং (সেই) দিব্যম্ (জ্যোতির্ম্ময়) পরং (পরম) পুরুষম্ এব (পুরুষকেই) উপৈতি (প্রাপ্ত হন) ॥৯–১০

যিনি সর্ব্বজ্ঞ, অনাদি, কৃপাপূর্ব্বক নিজভক্তি-শিক্ষাদানকারী, অণুপরিমাণ হইতেও অতি সূক্ষ্ম, তৎসত্ত্বেও সমস্ত পদার্থের ধারক অর্থাৎ সর্ব্ব বৃহৎ পরিমাণ ; অপ্রাকৃতরূপশালী অর্থাৎ মধ্যম পরিমাণ, তাহা হইলেও আদিত্যের মত স্ব-পরপ্রকাশক-স্বরূপ-বিশিষ্ট এবং মায়াতীত স্বরূপ সেই পরমপুরুষকে মরণ সময়ে যোগাভ্যাস বলে নিশ্চল মনের দ্বারা নিরন্তর স্মরণরূপভক্তিযুক্ত হইয়া এবং ভ্রূদ্বয়ের মধ্যে (আজ্ঞাচক্রে) প্রাণকে সম্যক্­রূপে স্থাপন পূর্ব্বক অনুস্মরণ (চিন্তা) করেন, তিনি জ্যোতির্ম্ময় সেই পরম পুরুষকেই প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ॥৯–১০॥

যদক্ষরং বেদবিদো বদন্তি,
বিশন্তি যদ্যতয়ো বীতরাগাঃ ।
যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্য্যং চরন্তি,
তত্তে পদং সংগ্রহেণ প্রবক্ষ্যে ॥১১॥

বেদবিদঃ (বেদবেত্তা পণ্ডিতগণ) যৎ (যাঁহাকে) অক্ষরং (ব্রহ্মের বাচক ওঁকার) বদন্তি (বলেন), বীতরাগাঃ (বিষয়বাসনাহীন) যতয়ঃ (যতিগণ) যৎ (অক্ষর বাচ্য যাঁহাতে) বিশন্তি (প্রবেশ করেন) যৎ (যাঁহাকে) ইচ্ছন্তঃ (পাইবার জন্য) [ব্রহ্মচারিণঃ] (ব্রহ্মচারিগণ) ব্রহ্মচর্য্যং (ব্রহ্মচর্য্য) চরন্তি (পালন করেন) তৎ (সেই) পদং (প্রাপ্য বস্তুর কথা) তে (তোমাকে) সংগ্রহেণ (উপায়ের সহিত) প্রবক্ষ্যে (বলিতেছি) ॥১১

বেদবিৎ পণ্ডিতেরা যাঁহাকে ব্রহ্মের বাচক ওঙ্কার বলিয়া থাকেন, নিস্পৃহ যতি সকল অক্ষর বাচ্য যাঁহাতে প্রবেশ করেন, যাঁহাকে প্রাপ্ত হইবার ইচ্ছায় ব্রহ্মচারিগণ ব্রহ্মচর্য্য ব্রত পালন করেন, সেই প্রাপ্য বস্তুর বিষয় তোমাকে উপায়ের সহিত বলিতেছি ॥১১॥

সর্ব্বদ্বারাণি সংযম্য মনো হৃদি নিরুধ্য চ ।
মূর্দ্ধ্ন্যাধায়াত্মনঃ প্রাণমাস্থিতো যোগধারণাম্ ॥১২॥
ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্মামনুস্মরন্ ।
য প্রয়াতি ত্যজন্ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্ ॥১৩॥

সর্ব্বদ্বারাণি (সমস্ত ইন্দ্রিয়রূপ দ্বারাসমূহ) সংযম্য (বিষয় হইতে প্রত্যাহৃত করিয়া) মনঃ (মনকে) হৃদি (হৃদয়ে) নিরুধ্য (নিরোধ পূর্ব্বক) মূর্দ্ধ্নি (ভ্রদ্বয়-মধ্যে) প্রাণম্ (প্রাণকে) আধায় (স্থাপন করিয়া) আত্মনঃ (আত্মবিষয়ক) যোগধারণাম্ আস্থিতঃ (সমাধি অবলম্বন পূর্ব্বক) ওম্ ইতি (ওম্ এই) একাক্ষরং (একাক্ষর) ব্রহ্ম (ব্রহ্মবাচক শব্দ) ব্যাহরন্ (উচ্চারণ করিতে করিতে) মাম্ (আমাকে) অনুস্মরন্ (অনুক্ষণ স্মরণ করতঃ) দেহং ত্যজন্ (দেহ ত্যাগ করিয়া) যঃ (যিনি) প্রয়াতি (প্রয়াণ করেন) সঃ (তিনি) পরমাং গতিম্ (আমার সালোক্য) যাতি (প্রাপ্ত হন) ॥১২–১৩

সমস্ত ইন্দ্রিয়রূপ দ্বার সকলকে বিষয় গ্রহণ হইতে সংযত করিয়া, মনকে হৃদয়ে নিরোধ পূর্ব্বক, ভ্রূদ্বয়ের মধ্যে প্রাণকে স্থাপন ও আত্মবিষয়ক সমাধি অবলম্বন করতঃ ওম্ এই একাক্ষর ব্রহ্ম বাচক শব্দ উচ্চারণ করিতে করিতে, আমাকে অনুক্ষণ স্মরণপূর্ব্বক দেহত্যাগ করেন, তিনি আমার সালোক্য প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ॥১২-১৩॥

অনন্যচেতাঃ সততং যো মাং স্মরতি নিত্যশঃ ।
তস্যাহং সুলভঃ পার্থ নিত্যযুক্তস্য যোগিনঃ ॥১৪॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) অনন্যচেতাঃ (কর্ম্মজ্ঞানাদি সাধন বা স্বর্গাপবর্গাদি সাধ্যে নিস্পৃহচিত্ত হইয়া) যঃ (যিনি) সততং (দেশকালাদি শুদ্ধি নিরপেক্ষভাবে) নিত্যশঃ (সর্ব্বদা) মাং (আমাকে) স্মরতি (স্মরণ করেন) তস্য (সেই) নিত্যযুক্তস্য (নিত্যমদ্যোগাভিলাষী) যোগিনঃ (দাস্য সখ্যাদি সম্বন্ধবিশিষ্ট ব্যাক্তির পক্ষে) অহং (আমি) সুলভঃ (সুখ লভ্য হই) ॥১৪

হে পার্থ ! কর্ম্মজ্ঞানাদি সাধন বা স্বর্গাপবর্গাদি সাধ্যে স্পৃহাশূন্য চিত্ত হইয়া, যিনি দেশকালাদির শুদ্ধি অশুদ্ধি বিচার-নিরপেক্ষভাবে সর্ব্বদা আমাকে স্মরণ করেন, সেই নিত্যমদ্যোগাভিলাষী দাস্য সখ্যাদি সম্বন্ধবিশিষ্ট ভক্তের পক্ষে আমি সুখলভ্যই হইয়া থাকি ॥১৪॥

মামুপেত্য পুনর্জন্মদুঃখালয়মশাশ্বতম্ ।
নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ ॥১৫॥

পরমাং সংসিদ্ধিং (আমার লীলার পরিকরত্ব) গতাঃ (প্রাপ্ত) মহাত্মানঃ (মহাত্মগণ) মাম্ (আমাকে) উপেত্য (লাভ করিয়া) পুনঃ (পুনরায়) দুঃখালয়ম্ (দুঃখপূর্ণ) অশাশ্বতম্ (অনিত্য) জন্ম (জন্ম) ন আপ্নুবন্তি (পরিগ্রহ করেন না) ॥১৫

আমার লীলার পরিকরত্ব প্রাপ্ত মহাত্মা ভক্তগণ আমাকে প্রাপ্ত হইয়া পুনর্ব্বার দুঃখের নিলয়স্বরূপ অনিত্য জন্ম কখনও গ্রহণ করেন না ॥১৫॥

আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ পুনরাবর্ত্তিনোঽর্জ্জুন ।
মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ॥১৬॥

[হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) আব্রহ্মভুবনাৎ (ব্রহ্মলোক হইতে আরম্ভ করিয়া অধস্তন) লোকাঃ (সমস্ত লোক বা লোকবাসীই) পুনঃ আবর্ত্তিনঃ (পুনঃ পুনঃ আবর্ত্তনশীল), তু (কিন্তু) [হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীপুত্ত্র !) মাম্ (আমাকে) উপেত্য (আশ্রয় করিলে) পুনঃ জন্ম (পুনর্জন্ম) ন বিদ্যতে (থাকে না) ॥১৬

হে অর্জ্জুন ! ব্রহ্মলোক হইতে আরম্ভ করিয়া অধস্তন সমস্ত লোক অথবা লোকবাসী জীবগণই পুনরাবৃত্তিশীল, কিন্তু হে কৌন্তেয় ! আমাকে প্রাপ্ত হইলে পুনরায় জন্ম হয় না ॥১৬॥

সহস্রযুগপর্য্যন্তমহর্যদ্ব্রহ্মণো বিদুঃ ।
রাত্রিং যুগসহস্রান্তাং তেঽহোরাত্রবিদো জনাঃ ॥১৭॥

সহস্রযুগপর্য্যন্তম্ (চতুর্যুগ সহস্র পরিমিত) ব্রহ্মণঃ (ব্রহ্মার) যৎ অহঃ (যে দিন) যুগসহস্রান্তাং (এবং চতুর্যুগ সহস্র পরিমিত) রাত্রিং (রাত্রি) [যে] (যাঁহারা) বিদুঃ (অবগত আছেন) তে (সেই সকল) জনাঃ (ব্যক্তিগণ) অহোরাত্রবিদঃ (দিবারাত্রিবিৎ) ॥১৭

সহস্র চতুর্যুগ পর্য্যন্ত ব্রহ্মার একদিন এবং সেইরূপ সহস্র চতুর্যুগ পরিমিত কাল ব্রহ্মার রাত্রি বলিয়া যাঁহারা অবগত আছেন সেই সকল ব্যক্তিগণই প্রকৃত অহোরাত্রবেত্তা ॥১৭॥*
*নোট—দেবমানে একযুগ=মানবগণের চতুর্যুবগ জানিবেন

অব্যক্তাদ্ব্যক্তয়ঃ সর্ব্বাঃ প্রভবন্ত্যহরাগমে ।
রাত্র্যাগমে প্রলীয়ন্তে তত্রৈবাব্যক্তসংজ্ঞকে ॥১৮॥

অহরাগমে (ব্রহ্মার দিন সমুপস্থিত হইলে) অব্যক্তাৎ (নিদ্রা হইতে উত্থিত ব্রহ্মা হইতে) সর্ব্বাঃ ব্যক্তয়ঃ (শরীর-ইন্দ্রিয়-ভোগ্যবিষয়-ভোগস্থান প্রভৃতির সহিত সমস্ত প্রজা) প্রভবন্তি (উৎপন্ন হয়), [পুনঃ] (পুনরায়) রাত্র্যাগমে (রাত্রিকাল সমাগত হইলে) অব্যক্তসংজ্ঞকে (অব্যক্ত সংজ্ঞক) তত্র এব (সেই ব্রহ্মাতেই) প্রলীয়ন্তে (লয় পায়) ॥১৮

ব্রহ্মার দিন সমুপস্থিত হইলে সুপ্তোত্থিত সেই ব্রহ্মা হইতে শরীর-ইন্দ্রিয়-ভোগ্যবিষয়-ভোগস্থান প্রভৃতির সহিত সমস্ত প্রজাগণ উৎপন্ন হয়, পুনরায় রাত্রিকাল সমাগত হইলে অব্যক্ত সংজ্ঞক সেই ব্রহ্মাতেই সমস্ত লয়প্রাপ্ত হয় ॥১৮॥

ভূতগ্রামঃ স এবায়ং ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে ।
রাত্র্যাগমেঽবশঃ পার্থ প্রভবত্যহরাগমে ॥১৯॥

d [হে] পার্থ (হে পার্থ !) সঃ এব (সেই) অয়ং (এই) ভূতগ্রামঃ (প্রাণিগণ) অবশঃ [সন্] (কর্ম্মপরতন্ত্র হইয়া) অহরাগমে (ব্রহ্মার দিবসাগমনে) ভূত্বা ভূত্বা (পুনঃ পুনঃ উৎপন্ন হইয়া) রাত্র্যাগমে (রাত্রির আগমনে) প্রলীয়তে (লয় প্রাপ্ত হয়) [পুনঃ অহরাগমে] (পুনরায় দিবস আগত হইলে) প্রভবতি (উৎপন্ন হয়) ॥১৯

হে পার্থ ! সেই এই প্রাণিসকলই কর্ম্মপরতন্ত্র হইয়া ব্রহ্মার দিবসাগমনে পুনঃ পুনঃ উৎপন্ন হইয়া আবার ব্রহ্মার রাত্রির আগমনে প্রলীন হয় । আবার ব্রহ্মার দিবস উপস্থিত হইলে উৎপন্ন হইয়া থাকে ॥১৯॥

পরস্তস্মাত্তু ভাবোঽন্যোঽব্যক্তাঽব্যক্তাৎ সনাতনঃ ।
যঃ স সর্ব্বেষু ভূতেষু নশ্যৎসু ন বিনশ্যতি ॥২০॥

তু (পরন্তু) তস্মাৎ অব্যক্তাৎ (সেই অব্যক্ত [হিরণ্যগর্ভ] হইতে) পরঃ (শ্রেষ্ঠ) অন্যঃ (তদ্বিলক্ষণ) অব্যক্তঃ (চক্ষুরাদির অগোচর) সনাতনঃ (অনাদি) যঃ (যে) ভাবঃ (পদার্থ) [অস্তি] (আছেন), সঃ (তিনি) সর্ব্বেষু ভূতেষু (হিরণ্যগর্ভ পর্য্যন্ত সমস্ত প্রাণী) নশ্যৎসু (নষ্ট হইলেও) ন বিনশ্যতি (নষ্ট হন না) ॥২০

কিন্তু সেই অব্যক্ত ব্রহ্মা হইতেও শ্রেষ্ঠ অন্য, চক্ষু-কর্ণাদি জীবেন্দ্রিয়ের অগোচর সনাতন যে পদার্থ আছেন, তিনি—হিরণ্যগর্ভ ব্রহ্মা পর্য্যন্ত সমুদয় প্রাণী নষ্ট হইলেও বিনষ্ট হন না ॥২০॥

অব্যক্তোঽক্ষর ইত্যুক্তস্তমাহুঃ পরমাং গতিম্ ।
যং প্রাপ্য ন নিবর্ত্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম ॥২১॥

[সঃ] (সেই) অব্যক্তঃ অক্ষরঃ ইতি [চ] উক্তঃ (অব্যক্ত অক্ষর শব্দে কথিত হন) তম্ (তাঁহাকে) পরমাং গতিম্ (পরম প্রাপ্য) আহুঃ (বলা হয়) । যং প্রাপ্য (যাঁহাকে পাইয়া) [জীবাঃ] (জীবগণ) ন নিবর্ত্তন্তে (সংসারে পুনঃ প্রত্যাবৃত্ত হয় না) তৎ (তাহাই) মম (আমার) পরমং ধাম (পরম ধাম বলিয়া) [বিদ্ধি] (জানিবে) ॥২১

সেই অব্যক্ত অক্ষর বলিয়া উক্ত হন, (বেদান্ত সকল) তাঁহাকে পরমগতি বলিয়া থাকেন । যাঁহাকে পাইলে সংসারে পুনরায় আসিতে হয় না তাহাই আমার পরমধাম জানিবে ॥২১॥

পুরুষঃ স পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যস্ত্বনন্যয়া ।
যস্যান্তঃস্থানি ভূতানি যেন সর্ব্বমিদং ততম্ ॥২২॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) ভূতানি (সমস্ত ভূতগণ) যস্য (যাঁহার) অন্তঃস্থানি (অভ্যন্তরে অবস্থিত) যেন (যাঁহার দ্বারা) ইদং (এই) সর্ব্বম্ (সমস্ত জগৎ) ততম্ (পরিব্যাপ্ত), সঃ (সেই) পরমঃ পুরুষঃ (পরম পুরুষ) [অহং] (আমি) অনন্যয়া (কর্ম্ম জ্ঞান যাগাদি সম্পর্ক রহিত ঐকান্তিকী) ভক্ত্যা তু (ভক্তি দ্বারাই) লভ্যঃ [ভবামি] (লভ্য হইয়া থাকি) ॥২২

হে পার্থ ! সমুদয় ভূতগণ যাঁহার অভ্যন্তরে অবস্থান করিতেছে, এবং যাঁহার দ্বারা এই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড পরিব্যাপ্ত, সেই পরম পুরুষ আমি কর্ম্ম জ্ঞান যোগাদির সম্পর্কশূন্য একমাত্র ঐকান্তিকী ভক্তি-দ্বারাই লভ্য হইয়া থাকি ॥২২॥

যত্র কালে ত্বনাবৃত্তিমাবৃত্তিঞ্চৈব যোগিনঃ ।
প্রয়াতা যান্তি তং কালং বক্ষ্যামি ভরতর্ষভ ॥২৩॥

[হে] ভরতর্ষভ ! (হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জ্জুন !) যত্র কালে তু (যে কালোপলক্ষিত মার্গে) প্রয়াতাঃ (গমন করিলে অর্থাৎ মৃত্যু হইলে) যোগিনঃ (যোগিগণ ও কর্ম্মিগণ) অনাবৃত্তিম্ (অনাবৃত্তি) আবৃত্তিং চ (ও আবৃত্তি) যান্তি (লাভ করেন) [অহং] (আমি) তং কালং এব (সেই কালই) বক্ষ্যামি (বলিতেছি) ॥২৩

হে ভরতর্ষভ ! যে কালোপলক্ষিত মার্গে গমনকারী অর্থাৎ মৃত যোগিগণ বা কর্ম্মিগণ জন্ম নিবৃত্তি ও পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন, আমি তোমাকে সেই কালদ্বারা উপলক্ষিত মার্গের কথা বলিতেছি ॥২৩॥

অগ্নির্জ্যোতিরহঃ শুক্লঃ ষণ্মাসা উত্তরায়ণম্ ।
তত্র প্রয়াতা গচ্ছন্তি ব্রহ্ম ব্রহ্মবিদো জনাঃ ॥২৪॥

[যত্র] (যে মার্গে) অগ্নিঃ জ্যোতিঃ (অগ্নি ও জ্যোতিঃ শব্দে অর্চ্চির অভিমানিনী দেবতা), অহঃ (দিবসাভিমানিনী দেবতা), শুক্লঃ (শুক্লপক্ষাভিমানিনী দেবতা) উত্তরায়ণম্ ষণ্মাসাঃ (ছয়মাসপরিমিত উত্তরায়ণাভিমানিনী দেবতা) [অবস্থিতঃ] (অবস্থান করেন) তত্র (সেই মার্গে) প্রয়াতাঃ (গমনকারী অর্থাৎ দেহত্যাগকারী) ব্রহ্মবিদঃ জনাঃ (ব্রহ্মবিৎ পুরুষগণ) ব্রহ্ম (ব্রহ্মকে) গচ্ছন্তি (প্রাপ্ত হন) ॥২৪

অগ্নি বা সূর্য্যাদি জ্যোতিযুক্ত দিবাভাগে শুক্লপক্ষে উত্তরায়ণকালে দেহত্যাগকারী জ্ঞানিগণ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ॥২৪॥

ধূমো রাত্রিস্তথা কৃষ্ণঃ ষণ্মাসা দক্ষিণায়নম্ ।
তত্র চান্দ্রমসং জ্যোতির্যোগী প্রাপ্য নিবর্ত্ততে ॥২৫॥

[যত্র] (যে মার্গে) ধূমঃ (ধূমাভিমানিনী দেবতা) রাত্রিঃ (রাত্র্যভিমানিনী দেবতা) কৃষ্ণঃ (কৃষ্ণপক্ষাভিমানিনী দেবতা) তথা (এবং) দক্ষিণায়নম্ যণ্মাসাঃ (ছয়মাস পরিমিত দক্ষিণায়নাভিমানিনী দেবতা) [অবস্থিতঃ] (অবস্থিত) তত্র (সেইমার্গে) [প্রয়াতঃ] (গমনকারী অর্থাৎ দেহ পরিত্যাগকারী) যোগী (কর্ম্মিপুরুষ) চান্দ্রমসং জ্যোতিঃ (স্বর্গলোক) প্রাপ্য (লাভ করিয়া) নিবর্ত্ততে (পুনরাবৃত্ত হইয়া থাকেন) ॥২৫

অন্ধকারযুক্ত রাত্রিকালে, কৃষ্ণপক্ষেও দক্ষিণায়নকালে দেহত্যাগকারী কর্ম্মযোগী স্বর্গলোক প্রাপ্ত হইয়া পুনরাবর্ত্তন করেন ॥২৫॥

শুক্লকৃষ্ণে গতি হ্যেতে জগতঃ শাশ্বতে মতে ।
একয়া যাত্যনাবৃত্তিমন্যয়াবর্ত্ততে পুনঃ ॥২৬॥

জগতঃ (জগতের জ্ঞানকর্ম্মাধিকারী ব্যক্তিগণের) এতে (এই) শুক্লকৃষ্ণে (শুক্ল ও কৃষ্ণ) গতী (পথদ্বয়) শাশ্বতে হি (নিত্য বলিয়াই) মতে (প্রসিদ্ধ আছে) । একয়া (একটীর দ্বারা) অনাবৃত্তিম্ (মোক্ষ) যাতি (প্রাপ্ত হয়) অন্যয়া (অন্যটীর দ্বারা) পুনঃ আবর্ত্ততে (পুনঃ পুনঃ সংসারে আসে) ॥২৬

জগতস্থ জ্ঞানকর্ম্মাধিকারী ব্যক্তিগণের সম্বন্ধে এই শুক্লমার্গ ও কৃষ্ণমার্গ নামক পথ দুইটী নিত্য বলিয়াই সর্ব্ববাদি সম্মত । শুক্লমার্গ দ্বারা অনাবৃত্তি লাভ করেন, কৃষ্ণমার্গ দ্বারা পুনরায় সংসারে জন্ম হইয়া থাকে ॥২৬॥

নৈতে সৃতী পার্থ জানন্ যোগী মুহ্যতি কশ্চন ।
তস্মাৎ সর্ব্বেষু কালেষু যোগযুক্তো ভবার্জ্জুন ॥২৭॥

[হে] পার্থ ! (হে পার্থ !) এতে (এই) সৃতী (মার্গদ্বয়) জানন্ (অবগত হইয়া) কশ্চন যোগী (কোনও ভক্তিযোগী) ন মুহ্যতি (মোহ প্রাপ্ত হন না) । তস্মাৎ (অতএব) [হে] অর্জ্জুন ! (হে অর্জ্জুন !) সর্ব্বেষু কালেষু (সর্ব্বদা) [ত্বং] (তুমি) যোগযুক্তঃ (সমাহিত চিত্ত) ভব (হও) ॥২৭

হে পার্থ ! এই শুক্ল-কৃষ্ণ-পথদ্বয় অবগত হইয়া কোনও ভক্তিযোগী মোহপ্রাপ্ত হন না । সুতরাং হে অর্জ্জুন ! তুমি সর্ব্বদা সেই মার্গদ্বয়ের অতীত অনন্য ভক্তিযোগ অবলম্বন কর ॥২৭॥

বেদেষু যজ্ঞেষু তপঃসু চৈব,
দানেষু যৎ পুণ্যফলং প্রদিষ্টম্ ।
অত্যেতি তৎ সর্ব্বমিদং বিদিত্বা,
যোগী পরং স্থানমুপৈতি চাদ্যম্ ॥২৮॥

বেদেষু (বেদে) যজ্ঞেষু (যজ্ঞে) তপঃসু (তপস্যায়) দানেষু চ এব (এবং দানে) যৎ (যেই) পুণ্যফলং (পুণ্যফল) প্রদিষ্টম্ (উক্ত হইয়াছে), যোগী (ভক্তিমান্ ব্যক্তি) ইদং (আমার ও আমার ভক্তির মাহাত্ম্য) বিদিত্বা (অবগত হইয়া) তৎসর্ব্বম্ (সেই সকল ফল) অত্যেতি (অতিক্রম করেন) চ (এবং) পরং (উৎকৃষ্ট) আদ্যম্ (অপ্রাকৃত) স্থানম্ (স্থান) উপৈতি (প্রাপ্ত হন) ॥২৮

বেদে, যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানে যে সকল পুণ্যফল উক্ত হইয়াছে, ভক্তিমান্ পুরুষ আমার ও আমার প্রতি ভক্তির বৈশিষ্ট্য বিদিত হইয়া সেই সমস্ত ফল অতিক্রম করিয়া তাহা হইতে শ্রেষ্ঠ অপ্রাকৃত আমার ধাম প্রাপ্ত হইয়া থাকেন ॥২৮


ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং
ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং
যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে তারকব্রহ্ম-
যোগো নামাষ্টমোঽধ্যায়ঃ ॥৮॥

ইতি অষ্টম অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥

                                                                                                   গ্রন্থ-সম্পাদক—
                                                                                       ত্রিদণ্ডিভিক্ষু—শ্রীভক্তিরক্ষক শ্রীধর
                                                                                         শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ, নবদ্বীপ
                                                                                        শ্রীজন্মাষ্টমী বঙ্গাব্দ ১৩৬৮ সাল

১,২) পূর্বাধ্যায়ের শেষে ব্রহ্ম, অধ্যাত্ম প্রভৃতি যে সকল তত্ত্ব উল্লেখ করা হইয়াছে, সেই সকলের প্রকৃত মর্ম কি তাহা এই দুইটি শ্লোকে অর্জুন জিজ্ঞাসা করিলেন । ভগবান্‌ পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকে সংক্ষেপে উহার উত্তর দিয়াছেন এবং পরে অক্ষর ব্রহ্মস্বরূপের বিস্তারিত বর্ণনা করিয়াছেন ।

৩,৪) ব্রহ্ম = পরমাত্মা; যাঁহার ক্ষয় নাই, বিকার নাই, অব্যক্ত অক্ষর বস্তুতত্ত্ব ।
স্ব-ভাব ও অধ্যাত্ম = জীবাত্মা; পরব্রহ্মের প্রত্যগাত্মভাবে প্রতি-দেহে অবস্থিতি; দেহ অধিকৃত করিয়া থাকেন; স্ব-ভাব = ব্রহ্মের সগুণ বিভাব ।
কর্মতত্ত্ব – স্বভাব হইতেই বিসর্গ অর্থাৎ বিশ্বশক্তির সমস্ত কর্মের উৎপত্তি ।
অধিভূত/ক্ষরভাব – কর্মের যে ফল, অর্থাৎ নশ্বর জগৎ-প্রপঞ্চ; ক্ষর স্বভাব দেহাদি যাহা-কিছু প্রাণিমাত্রকেই অধিকার করিয়া উৎপন্ন হয় ।
অধিদৈবত – ভূতসমূহে অধিষ্ঠান-চৈতন্যরূপে যাহা অবস্থিত; সমস্ত দেবতা যাঁহার অঙ্গীভূত, যিনি সমস্ত প্রাণী ও ইন্দ্রিয়াদির নিয়ন্তা, সেই আদি পুরুষ ।
যজ্ঞ – সৃষ্টি রক্ষার্থ জীবের নিষ্কাম কর্ম ।
অধিযজ্ঞ – সকল কর্মের নিয়ন্তা, সর্বযজ্ঞের ভোক্তা, অন্তর্যামি, বিষ্ণু । – [শ্রীঅরবিন্দ]

মূল কথা, সকলই আমি, সকলই আমার বিভাব । সৃষ্টি-রক্ষার্থ বা লোকসংগ্রহার্থ জীবের যে কর্ম, উহাও আমারই কর্ম । সুতরাং জীব আমাকে জানিলেই ব্রহ্মতত্ত্ব, অধ্যাত্মতত্ত্ব, কর্মতত্ত্ব সবই বুঝিতে পারে, এবং অধিভূত, অধিদৈবতাদি আমার বিভিন্ন বিভাব-সহ সমগ্র আমাকে জানিয়া মুক্তিলাভ করিতে পারে ।

১৭,১৮) অব্যক্ত : সাংখ্যমতে মূল প্রকৃতিই অব্যক্ত । ভিন্ন মতে আদি পুরুষ হিরণ্যগর্ভ বা ব্রহ্মার নিদ্রাবস্থা ।

সৃষ্টি ও প্রলয়তত্ত্বে কাল-গণনা : ব্রহ্মার একদিনে এক কল্প । এই কল্পারম্ভেই সৃষ্টি এবং এই কল্পক্ষয়ে প্রলয় । এইরূপ পুনঃ পুনঃ হইতেছে । সুতরাং মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত জীবগণকে কল্পে কল্পেই জন্ম মরণ দুঃখ ভোগ করিতে হয় । [ব্রহ্মাণ্ডের সময়]

২০) পূর্বের প্রকৃতি বা হিরণ্যগর্ভকেই অব্যক্ত শব্দে লক্ষ্য করা হইয়াছে (১৮শ শ্লোক) । কিন্তু সেই অব্যক্ত হইতেও শ্রেষ্ঠ যে অব্যক্ত বস্তুতত্ত্ব, পরমাত্মা বা পরমেশ্বর, তাঁহার কিছুতেই বিনাশ নাই ।

২৩) এস্থলে ‘কাল’ শব্দে দিবারাত্রি ইত্যাদি কালের অভিমানিনী দেবতা বা তাহাদিগের প্রদর্শিত মার্গ এইরূপ বুঝিতে হইবে । বস্তুতঃ কোন্‌ কালে মৃত্যু হইলে মোক্ষ লাভ হয় বা হয় না, তাহা এই স্থলে বলা উদ্দেশ্য নয় । কোন্‌ কর্ম-ফলে কোন্‌ পথে গমন করিলে মোক্ষ বা পরমপদ প্রাপ্তি হয় এবং কোন্‌ পথে গমন করিলে উহা হয় না, তাহাই পরবর্তী তিন শ্লোকে বলা হইয়াছে । এস্থলে যোগী শব্দ সাধারণভাবে ‘সাধক’ এই অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে । উহাতে ব্রহ্মোপাসক ও কর্মকাণ্ডী সাধক উভয়ই বুঝিতে হইবে ।

২২) ব্রহ্মভক্ত : আধুনিক ব্রাহ্মগণ ব্রহ্মভক্ত, তাঁহারা ব্রহ্মকেই দয়াময়, প্রেমময় ভগবান বলিয়া জানেন, কিন্তু সাকার-বিগ্রহাদির প্রয়োজন বোধ করেন না, মানেনও না । মায়াবাদী ব্রহ্মচিন্তকের নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্ম, ব্রাহ্ম-ভক্তের নিরাকার সগুণ ব্রহ্ম, বৈষ্ণব-ভক্তের সাকার সগুণ ব্রহ্ম, এ -সকলই এক । ‘আমি নির্গুণ হইয়াও সগুণ’ [১৩|১৪-১৫], ‘নিরাকার হইয়াও সাকার’ [৪|৬], ‘আমাকে ভক্তি করিলেই ব্রহ্মজ্ঞান হয়’ [৮|২২], ‘আবার ব্রহ্মজ্ঞান হইলেই আমাতে ভক্তি হয়’ [১৮|৫৪], ‘জ্ঞানীই আমার শ্রেষ্ঠ ভক্ত’ [৭|১৭], ‘আমাতে অব্যভিচারিণী ভক্তিই জ্ঞান’ [১৩|১০] । সুতরাং গীতামতে ব্রহ্মজ্ঞানে ও ভগবদ্ভক্তিতে কোনো বিরোধ নাই ।

২৬) দেবযান, পিতৃযান ও তৃতীয় মার্গ :
দেবযান / অর্চিরাদি / শুক্ল / উত্তরায়ণ মার্গ : যাঁহারা অরণ্যে শ্রদ্ধা ও তপস্যাদির উপাসনা করেন, তাঁহারা অর্চিঃ অর্থাৎ জ্যোতিঃকে প্রাপ্ত হন, অর্চিঃ হইতে দিবা, দিবা হইতে শুক্লপক্ষ, শুক্লপক্ষ হইতে উত্তরায়ণ ছয়মাস, মাস হইতে সংবৎসর, বৎসর হইতে আদিত্য, আদিত্য হইতে চন্দ্রমা, চন্দ্রমা হইতে বিদ্যুৎ প্রাপ্ত হন, পরে এক অমানব পুরুষ ইহাদিগকে ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত করান, ইহাই দেবযান পন্থা । যাঁহারা ব্রহ্মোপাসনা করেন, যাঁহারা নিবৃত্তি-মার্গাবলম্বী তাঁহারা এই মার্গে ব্রহ্মলোকে গমন করেন ।

পিতৃযান / ধূম্রাদি / কৃষ্ণ / দক্ষিণ মার্গ : যাঁহারা গ্রামে গৃহস্থাশ্রমে থাকিয়া ইষ্টাপূর্ত (যাগাদি ও জলাশয় খননাদি-পুণ্যকর্ম) এবং দানাদি কর্ম করেন, তাঁহারা ধূমকে প্রাপ্ত হন; ধূম হইতে রাত্রি, রাত্রি হইতে কৃষ্ণপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ হইতে ছয়মাস দক্ষিণায়ন; ইহারা বৎসরকে প্রাপ্ত হন না, মাস হইতে পিতৃলোক, তথা হইতে আকাশ ও আকাশ হইতে চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হন । যাগযজ্ঞাদি-পুণ্যফলে এই পথে যাঁহারা চন্দ্রলোকাদিতে গমন করেন, তাঁহাদিগকে পুণ্যক্ষয়ে আবার সংসারে প্রত্যাবর্তন করিতে হয় ।

ক্রমমুক্তি / বিদেহমুক্তি : ব্রহ্মলোক-প্রাপ্ত সগুণ ব্রহ্মোপাসকগণ ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল পর্যন্ত সেখানে বাস করেন । ব্রহ্মলোক যখন বিনষ্ট হয় তখন তাঁহাদের পুনর্জন্ম অবশ্যম্ভাবী; কিন্তু ব্রহ্মলোকে অবস্থানকালে যদি তাঁহাদের সম্যক জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তবে তাঁহারা পরব্রহ্মেই লীন হন অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করেন । দেহত্যাগের পর ব্রহ্মলোকে গিয়া মুক্তি হয় বলিয়া ইহাকে বিদেহমুক্তিও বলে ।

জীবন্মুক্তি / সদ্যোমুক্তি : শুদ্ধ অদ্বৈতবাদিগণ বলেন, যাঁহারা নির্গুণ ব্রহ্মোপাসক এবং যাঁহাদের আত্মজ্ঞান লাভ হইয়াছে, তাঁহাদিগের আর উৎক্রান্তি হয় না, তাঁহাদের ব্রহ্মলোকে যাইতে হয় না, তাঁহারা ব্রহ্মই হন । গীতার মতে এই অবস্থায়ই ভগবানে পরাভক্তি জন্মে এবং নিষ্কাম কর্মও থাকিতে পারে ।

তৃতীয় (আসুরী) মার্গ : যাহারা জ্ঞানালোচনা বা পুণ্যকর্ম কিছুই করে না, কেবল যাবজ্জীবন পাপাচরণ করে, তাহারা পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গাদি তির্যক-যোনিতে পুনঃপুনঃ জন্মগ্রহণ করে [ছান্দোগ্যোপনিষৎ|৫|১০|৮; কঠোপনিষৎ|২|৩|৪; গীতাতেও আসুরী পুরুষদিগের নিরয়গতি হয়, এইরূপ উল্লেখ আছে [গী|১৬|১৯-২১] ।

ভীষ্মদেব শরশয্যায় উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন [মভা|ভীষ্ম|১২০|অনু|১৬৭] । ইহাতে বোধ হয়, দিন, শুক্লপক্ষ, উত্তরায়ণকাল কোনো-সময় মরণের প্রশস্ত কাল বলিয়া গণ্য হইত । লোকমান্য তিলক বলেন – ‘আমি স্থির করিয়াছি, উত্তর গোলার্ধের যে স্থানে সূর্য ক্ষিতিজের উপর বরাবর ছয় মাস দৃশ্য হইয়া থাকে, সেই স্থানে অর্থাৎ ধ্রুবের নিকট অথবা মেরুস্থানে বৈদিক ঋষিগণের যখন বসতি ছিল, তখন হইতেই ছয় মাস উত্তরায়ণের প্রকাশ-কালকেই মৃত্যুর প্রশস্ত কাল বলিয়া মানিবার প্রথা প্রচলিত হইয়া থাকিবে ।’

২৮) ‘এই তত্ত্ব জানিয়া’ অর্থাৎ কাম্যকর্মাদি দ্বারা স্বর্গলাভ হইলেও পুনরায় সংসার প্রাপ্তি অনিবার্য্য, ইহা জানিয়া স্বর্গাদি ফল ভোগ তুচ্ছ করিয়া থকেন এবং যোগযুক্ত হইয়া সেই পরম পুরুষকে প্রাপ্ত হন ।

সংগ্রহঃ ০১। sanatandharmatattva.wordpress.com
             ০২। http://www.scsmathinternational.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।