২৩ নভেম্বর ২০১৭

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: সপ্তদশ অধ্যায় – শ্রদ্ধাত্রয়‌-বিভাগযোগ

অর্জ্জুন উবাচ—
যে শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ ।
তেষাং নিষ্ঠা তু কা কৃষ্ণ সত্ত্বমাহো রজস্তমঃ ॥১॥

অর্জ্জুন উবাচ (অর্জ্জুন বলিলেন) [হে] কৃষ্ণ ! (হে কৃষ্ণ !) যে (যাহারা) শাস্ত্রবিধিম্ (শাস্ত্রবিধি) উৎসৃজ্য (পরিত্যাগ পূর্ব্বক) তু (কিন্তু) শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ [সন্তঃ] (শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া) যজন্তে (পূজা করে), তেষাং (তাহাদের) নিষ্ঠা (নিষ্ঠা) কা (কি বলা যায় ?) [স কিম্] (তাহা কি) সত্ত্বম্ (সাত্ত্বিক) আহো (কথিত হয়) রজঃ (বা রাজসিক) [উত] তমঃ (অথবা তামসিক ?) ॥১॥

অর্জ্জুন বলিলেন—হে কৃষ্ণ ! যাহারা শাস্ত্রবিধিকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক, শ্রদ্ধা সহকারে পূজা করে, তাহাদের নিষ্ঠাকে কি বলা যায় ? উহা কি সাত্ত্বিক বা রাজসিক, অথবা তামকিস ? ॥১॥

শ্রীভগবান্ উবাচ—
ত্রিবিধা ভবতি শ্রদ্ধা দেহিনাং সা স্বভাবজা ।
সাত্ত্বিকী রাজসী চৈব তামসী চেতি তাং শৃণু ॥২॥

শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভাগবান্ বলিলেন) দেহিনাং (জীবগণের) শ্রদ্ধা (শ্রদ্ধাই) সাত্ত্বিকী (সাত্ত্বিক) রাজসী (রাজসিক) তামসী চ (ও তামসিক) ইতি (এই) ত্রিবিধা (তিনপ্রকার) ভবতি (হইয়া থাকে) । সা (সেই শ্রদ্ধা) স্বভাবজা (পূর্ব্ব সংস্কার হইতে জাত) তাং (তাহা) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥২॥

শ্রীভগবান্ কহিলেন—সেই শ্রদ্ধাই তিন প্রকার ; উহা জীবের পূর্ব্ব সংস্কার সঞ্জাত । উহা সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক ভেদে তিন প্রকার—তাহা শ্রবণ কর ॥২॥

সত্ত্বানুরূপা সর্ব্বস্য শ্রদ্ধা ভবতি ভারত ।
শ্রদ্ধাময়োঽয়ং পুরুষো যো যচ্ছ্রদ্ধঃ স এব সঃ ॥৩॥

[হে] ভারত ! (হে ভারতবংশীয় !) সর্ব্বস্য (সকল মানবেরই) শ্রদ্ধা (শ্রদ্ধা) সত্ত্বানুরূপা (চিত্তবৃত্তির অনুরূপ) ভবতি (হইয়া থাকে) । অয়ং (এই) পুরুষঃ (জীব) শ্রদ্ধাময়ঃ (ত্রিবিধ শ্রদ্ধা বিশিষ্ট) যঃ (যিনি) যচ্ছ্রদ্ধবঃ (যে প্রকার সাত্ত্বিকাদি শ্রদ্ধা বিশিষ্ট) সঃ (তিনি) সঃ এব (তৎস্বরূপেই পরিচিত হন) ॥৩॥

হে ভারত ! সকল মানবেরই শ্রদ্ধা নিজ নিজ চিত্তবৃত্তির অনুরূপ হইয়া থাকে । জীব মাত্রেই শ্রদ্ধাময় অর্থাৎ শ্রদ্ধানুরূপ তাহার বাহ্যাভ্যন্তর গঠিত, সুতরাং যাহার যেরূপ পূজ্যে শ্রদ্ধা হয়, তিনিও তৎস্বরূপই হইয়া থাকেন ॥৩॥

যজন্তে সাত্ত্বিকা দেবান্ যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ ।
প্রেতান্ ভূতগণাংশ্চান্যে যজন্তে তামসা জনাঃ ॥৪॥

সাত্ত্বিকাঃ (সাত্ত্বিক শ্রদ্ধা বিশিষ্টগণ) দেবান্ (সত্ত্ব-প্রকৃতি দেবতাগণের) যজন্তে (পূজা করেন), রাজসাঃ (রাজসিক শ্রদ্ধাবন্তগণ) যক্ষরক্ষাংসি (রজঃপ্রকৃতি যক্ষ ও রাক্ষসগণের) যজন্তে (পূজা করেন), অন্যে (অপর) তামসাঃ জনাঃ (তামসিক শ্রদ্ধাযুক্তগণ) প্রেতান্ ভূতগণান্ চ (তমঃপ্রকৃতি প্রেত ও ভূতগণের) [যজন্তে] (পূজা করে) ॥৪॥

সাত্ত্বিক শ্রদ্ধাবন্তগণ সত্ত্বপ্রকৃতি দেবতাগণের পূজা করেন, রাজসিক শ্রদ্ধাবিশিষ্টগণ রজঃপ্রকৃতি যক্ষ ও রাক্ষসগণের এবং তামসিক শ্রদ্ধাযুক্তগণ তমঃপ্রকৃতি প্রেত ও ভূতগণের পূজা করে ॥৪॥

অশাস্ত্রবিহিতং ঘোরং তপ্যন্তে যে তপো জনাঃ ।
দম্ভাহঙ্কারসংযুক্তাঃ কামরাগবলান্বিতাঃ ॥৫॥
কর্শয়ন্তঃ শরীরস্থং ভূতগ্রামমচেতসঃ ।
মাঞ্চৈবান্তঃশরীরস্থং তাং বিদ্ধ্যাসুরনিশ্চয়ান্ ॥৬॥

যে (যে সকল) অচেতসঃ (অবিবেকী) জনাঃ (ব্যক্তি) দম্ভাহঙ্কার সংযুক্তঃ (দম্ভ ও অহঙ্কার অবলম্বন পূর্ব্বক) কামরাগবলান্বিতাঃ (কামনা মূলে মানসিক ও দৈহিক বিক্রম প্রকাশে) শরীরস্থং (দেহস্থিত) ভূতগ্রামম্ (পঞ্চভূতকে) কর্শয়ন্তঃ (কৃশ করিয়া) অন্তঃশরীরস্থং (শরীরাভ্যন্তরে স্থিত) মাং চ এব (আমার অংশ ভূত জীবাত্মাকেও) [দুঃখয়ন্তঃ] (দুঃখ প্রদান পূর্ব্বক) অশাস্ত্রবিহিতং (শাস্ত্রবিধির বহির্ভূত) ঘোরং (উৎকট) তপঃ (তপস্যা) তপ্যন্তে (অনুষ্ঠান করে), তান্ (তাহাদিগকে) আসুরনিশ্চয়ান্ (আসুর ধর্ম্মে নিষ্ঠীত বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥৫–৬॥

যে সকল অবিবেকী ব্যক্তি দম্ভ ও অহঙ্কার অবলম্বন পূর্ব্বক কামনামূলে মানসিক ও দৈহিক বিক্রমপ্রকাশে দেহস্থিত ভূতগণ ও তদভ্যন্তরে আমার অংশভূত জীবাত্মাকেও দুঃখ প্রদান পূর্ব্বক শাস্ত্রবিধির বহির্ভূত উৎকট তপস্যা করে, তাহাদিগকে আসুরধর্ম্মে নিষ্টিত বলিয়া জানিবে ॥৫–৬॥

আহারস্ত্বপি সর্ব্বস্য ত্রিবিধা ভবতি প্রিয়ঃ ।
যজ্ঞস্তপস্তথা দানং তেষাং ভেদমিমং শৃণু ॥৭॥

[গুণ ভেদাৎ] (গুণত্রয়ের ভেদ হেতু) সর্ব্বস্য (সমস্ত প্রাণীর) ত্রিবিধঃ (তিন প্রকার) আহারঃ তু অপি (আহারও) প্রিয়ঃ (প্রীতিজনক) ভবতি (হইয়া থাকে) তথা (সেইরূপ) যজ্ঞঃ (যজ্ঞ) তপঃ (তপস্যা) দানং (ও দান) [ত্রিবিধং] (তিন প্রকার), তেষাং (তাহাদের) ইমং (এই) ভেদম্ (ভেদ) শৃণু (শ্রবণ কর ) ॥৭॥

গুণত্রয়ের ভেদ হেতু সমস্ত প্রাণীর আহারও তিন প্রকার প্রিয় হইয়া থাকে এবং সেইরূপ যজ্ঞ, তপস্যা ও দান সমস্তই ত্রিবিধ হয় ; তাহাদের এই ভেদ শ্রবণ কর ॥৭॥

আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্দ্ধনাঃ ।
রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ ॥৮॥

আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্দ্ধনাঃ (আয়ুঃ, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতির বৃদ্ধিকারক) রস্যাঃ (রসযুক্ত) স্নিগ্ধাঃ (স্নেহযুক্ত) স্থিরাঃ (স্থির-গুণযুক্ত) হৃদ্যাঃ (চিত্তাকর্ষক) আহারাঃ (ভক্ষ্য ভোজ্যাদি) সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ (সাত্ত্বিকগণের প্রিয়) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৮॥

আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতির বর্দ্ধনকারী, রসযুক্ত, স্নেহযুক্ত, স্থিরগুণবিশিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী ভক্ষ্য ভোজ্যাদি—সাত্ত্বিক প্রকৃতির প্রিয় হইয়া থাকে ॥৮॥

কট্বম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্ণরুক্ষবিদাহিনঃ ।
আহারা রাজসস্যেষ্টা দুঃখশোকাময়প্রদাঃ ॥৯॥

কট্বাম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্ণরুক্ষবিদাহিনঃ (অতিকটু, অত্যম্ল, অতি লবন, অত্যুষ্ণ, অতিতীক্ষ্ণ, অতিরুক্ষ, অতি বিদাহী) দুঃখ শোকাময়প্রদাঃ (দুঃখ, শোক ও রোগজনক) আহারাঃ (ভক্ষ্যদ্রব্য সমূহ) রাজসস্য (রাজসগণের) ইষ্টাঃ (প্রিয়) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৯॥

অতিকুট (নিম্বাদি), অত্যম্ল, অতিলবন, অত্যুষ্ণ, অতিতীক্ষ্ণ, (লঙ্কামরিচাদি) অতিরুক্ষ, (ভৃষ্ট চনকাদি) অতিবিদাহী, (সর্ষপাদি)—দুঃখ, শোক ও রোগপ্রদ ভক্ষ্যদ্রব্যসকল—রাজস প্রকৃতির ব্যক্তিদের প্রিয় হইয়া থাকে ॥৯॥

যাতযামং গতরসং পূতি পর্য্যুষিতঞ্চ যৎ ।
উচ্ছিষ্টমপি চামেধ্যং ভোজনং তামসপ্রিয়ম্ ॥১০॥

যাতযামং (ঠাণ্ডা) গতরসং (নীরস) পূতি (দুর্গন্ধযুক্ত) পর্য্যুষিতং চ (বাসী দ্রব্য) উচ্ছিষ্টম্ অপি (গুরুজন ভিন্ন অপরের ভুক্তাবশিষ্ট) অমেধ্যং চ (ও অভক্ষ্য-পেয়াজ, মদ্য, মাংস প্রভৃতি) যৎ (যে সকল) ভোজনং (আহার্য্য বস্তু) [তৎ] (তাহা) তামসপ্রিয়ম্ (তামসগণের প্রিয়) [ভবতি] (হইয়া থাকে) ॥১০॥

প্রহরাধিক লাক পূর্ব্বে পক্ব হেতু ঠাণ্ডা, নীসর, দুর্গন্ধ যুক্ত, পূর্ব্বদিনের পক্ব, (গুরুজন ভিন্ন) অন্যের ভোজনাবশেষ ও অপবিত্র (পেয়াজ, মদ্য-মাংসাদি) ভজ্যাদি তামস জনের প্রিয় হইয়া থাকে ॥১০॥

অফলাকাঙ্ক্ষিভির্যজ্ঞো বিধিদিষ্টো য ইজ্যতে ।
যষ্টব্যমেবেতি মনঃ সমাধায় স সাত্ত্বিকঃ ॥১১॥

অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ (ফলাকাঙ্ক্ষা রহিত ব্যক্তি) যষ্টব্যম্ এব (যজ্ঞ অবশ্যই কর্ত্তব্য) ইতি (এই বিচারে) মনঃ (মনকে) সমাধায় (সুস্থির করিয়া) বিধিদিষ্টঃ (শাস্ত্রবিধি সস্মত) যঃ (যে) যজ্ঞঃ (যজ্ঞের) ইজ্যতে (অনুষ্ঠান করেন) সঃ (তাহাই) সাত্ত্বিকঃ (সাত্ত্বিক) ॥১১॥

ফলাকাঙ্ক্ষারহিত ব্যক্তি অবশ্যকর্ত্তব্য বোধে মনকে সুস্থির করিয়া, শাস্ত্রবিধি সম্মত যে যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন,—তাহাই সাত্ত্বিক ॥১১॥

অভিসন্ধায় তু ফলং দম্ভার্থমপি চৈব যৎ ।
ইজ্যতে ভরতশ্রেষ্ঠ তং যজ্ঞং বিদ্ধি রাজসম্ ॥১২॥

[হে] ভরতশ্রেষ্ঠ ! (হে ভারত !) তু (কিন্তু) ফলং (ফলের) অভিসন্ধায় (অভিসন্ধান পূর্ব্বক) দম্ভার্থং অপি চ এব (ও দম্ভ প্রকাশের জন্যই) যৎ (যে) ইজ্যতে (যজ্ঞ করা হয়) তং (সেই) যজ্ঞং (যজ্ঞ) রাজসং (রাজসিক বলিয়া) বিদ্ধি (জানিবে) ॥১২॥

হে ভারত! কিন্তু ফলের অভিসন্ধি পূর্ব্বক ও দম্ভ প্রকাশ নিমিত্তই যে যজ্ঞ করা হয়—তাহাকে রাজসিক বলিয়া জানিবে ॥১২॥

বিধিহীনমসৃষ্টান্নং মন্ত্রহীনমদক্ষিণম্ ।
শ্রদ্ধাবিরহিতং যজ্ঞং তামসং পরিচক্ষতে ॥১৩॥

বিধিহীনম্ (অশাস্ত্রীয়) অসৃষ্টান্নং (অন্নাদিদান রহিত) মন্ত্রহীনম্ (মন্ত্র বর্জ্জিত) অদক্ষিণম্ (দক্ষিণা শূন্য) শ্রদ্ধাবিরহিতং (অশ্রদ্ধাকৃত) যজ্ঞং (যজ্ঞকে) তামসং (তামসিক) পরিচক্ষতে (বলা হয়) ॥১৩॥

শাস্ত্রবিধিহীন, অন্নাদি-দানরহিত, মন্ত্রবর্জ্জিত, দক্ষিণাশূন্য ও অশ্রদ্ধাকৃত যজ্ঞকে তামসিক বলা হয় ॥১৩॥

দেবদ্বিজগুরুপ্রাজ্ঞপূজনং শৌচমার্জ্জবম্ ।
ব্রহ্মচর্য্যমহিংসা চ শারীরং তপ উচ্যতে ॥১৪॥

দেবদ্বিজগুরুপ্রাজ্ঞপূজনং (দেবতা, ব্রাহ্মণ, গুরু ও প্রাজ্ঞজনের পূজা) শৌচম্ (বাহ্যাভ্যন্তর শুদ্ধি) আর্জ্জবম্ (সরলতা) ব্রহ্মচর্য্যম্ (ব্রহ্মচর্য্য) অহিংসা চ (ও অহিংসাকে) শারীরং (শারীরিক) তপঃ (তপস্যা) উচ্যতে (বলা হয়) ॥১৪॥

দেবতা, ব্রাহ্মণ, গুরু ও প্রাজ্ঞজনের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য্য ও অহিংসা—এই সরলকে শারিরীক তপস্যা বলা হয় ॥১৪॥

অনুদ্বেগকরং বাক্যং সত্যং প্রিয়হিতঞ্চ যৎ ।
স্বাধ্যায়াভ্যসনং চৈব বাঙ্­ময়ং তপ উচ্যতে ॥১৫॥

অনুদ্বেগকরং (অবেদনাদায়ক) সত্যং (সত্য) প্রিয়হিতং চ (ও প্রিয় অথচ হিতকর) যৎ (যে) বাক্যং (বাক্য) স্বাধ্যায়াভ্যসনং চ এব (এবং বেদপাঠাভ্যাসকে) বাঙ্­ময়ং (বাচিক) তপঃ (তপস্যা) উচ্যতে (বলা হয়) ॥১৫॥

অন্যের অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় অথচ হিতকর যে বাক্য এবং বেদাভ্যাস—এই সকলকে বাচিক তপস্যা বলা হয় ॥১৫॥

মনঃপ্রসাদঃ সৌম্যত্ত্বং মৌনমাত্মবিনিগ্রহঃ ।
ভাবসংশুদ্ধিরিত্যেতত্তপো মানসমুচ্যতে ॥১৬॥

মনঃ প্রসাদঃ (চিত্তের প্রসন্নতা) সৌম্যত্বং (স্নিগ্ধতা) মৌনম্ (স্থৈর্য্য) আত্মবিনিগ্রহঃ (সংযম) ভাবসংশুদ্ধিঃ (পবিত্রতা) ইতি এতৎ (এই সকলকে) মানসং (মানসিক) তপঃ (তপস্যা) উচ্যতে (বলা হয়) ॥১৬॥

চিত্তের প্রসন্নতা, স্নিগ্ধগাম্ভীর্য্য, স্থৈর্য্য, সংযম ও ভাবশুদ্ধি এই সকলই মানসিক তপস্যা বলিয়া কথিত হয় ॥১৬॥

শ্রদ্ধয়া পরয়া তপ্তং তপস্তত্ত্রিবিধং নরৈঃ ।
অফলাকাঙ্ক্ষিভির্যুক্তৈঃ সাত্ত্বিকং পরিচক্ষতে ॥১৭॥

তৎ (সেই) ত্রিবিধং (কায়িক, বাচিক ও মানসিক রূপ তিন প্রকার) তপঃ (তপস্যা) অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ (নিষ্কাম) যুক্তৈঃ (একনিষ্ঠ) নরৈঃ (পুরুষগণ কর্ত্তৃক) পরয়া (পরম) শ্রদ্ধয়া (শ্রদ্ধা সহকারে) তপ্তং (অনুষ্ঠিত হইলে) (তাহাকে) সাত্ত্বিকং (সাত্ত্বিক) পরিচক্ষতে (বলিয়া অভিহিত হয়) ॥১৭॥

নিষ্কাম, একনিষ্ঠ জনের ভগবৎপর শ্রদ্ধা সহকারে অনুষ্ঠিত—সেই ত্রিবিধ তপস্যাকে সাত্ত্বিক বলা হয় ॥১৭॥

সৎকারমানপূজার্থং তপো দম্ভেন চৈব যৎ ।
ক্রিয়তে তদিহ প্রোক্তং রাজসং চলম ধ্রুবম্ ॥১৮॥

সৎকারমানপূজার্থং (লাভ, পূজা, প্রতিষ্ঠার জন্য) দম্ভেন চ এব (ও দম্ভের সহিত) যৎ (যে) তপঃ (তপস্যা) ক্রিয়তে (কৃত হয়) তৎ (তাহা) ইহ (এই জগতে) চলম্ (অনিত্য) অধ্রুবম্ (অনিশ্চিত) রাজসং (রাজসিক তপস্যা) প্রোক্তং (বলিয়া অভিহিত হয়) ॥১৮॥

লাভ, পূজা ও প্রতিষ্ঠার জন্য দম্ভের সহিত যে তপস্যা কৃত হয়, সেই অনিত্য ও অনিশ্চিত তপস্যা রাজসিক বলিয়া অভিহিত হয় ॥১৮॥

মূঢ়গ্রাহেণাত্মনো যৎ পীড়য়া ক্রিয়তে তপঃ ।
পরস্যোৎসাদনার্থং বা তত্তামসমুদাহৃতম্ ॥১৯॥

মূঢ়গ্রাহেণ (বিচারহীন আগ্রহের সহিত) আত্মনঃ (নিজেকে) পীড়য়া (পীড়া দিয়া) বা (অথবা) পরস্য (পরের) উৎসাদনার্থং (বিনাশের জন্য) যৎ (যে) তপঃ (তপস্যা) ক্রিয়তে (কৃত হয়) তৎ (তাহা) তামসম্ (তামসিক তপস্যা) উদাহৃতম্ (বলিয়া কথিত হয়) ॥১৯॥

মূঢ়ের ন্যায় বিচারহীন আগ্রহের সহিত নিজেকে পীড়া দিয়া অথবা পরের বিনাশের জন্য, যে তপস্যা কৃত হয়—তাহাকেই তামসিক তপস্যা বলা হয় ॥১৯॥

দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেঽনুপকারিণে ।
দেশে কালে চ পাত্রে চ তদ্দানং সাত্ত্বিকং স্মৃতম্ ॥২০॥

অনুপকারিণে (প্রত্যুপকার লাভের বাসনা রহিত হইয়া) দেশে (তীর্থাদি পুণ্যক্ষেত্রে) কালে চ (শুভযোগাদি সময়ে) পাত্রে চ (এবং যোগ্যপাত্রে) দাতব্যম্ (দান করা অবশ্য কর্ত্তব্য) ইতি (এইরূপ বুদ্ধিতে) যৎ (যাহা) দানং (দান) দীয়তে (করা যায়) তৎ (সেই) দানং (দানকেই) সাত্ত্বিকং (সাত্ত্বিক দান) স্মৃতম্ (বলা হয়) ॥২০॥

প্রত্যুপকার লাভের বাসনা রহিত হইয়া, কর্ত্তব্যবোধে, উপযুক্ত দেশ, কাল ও পাত্র বিচারপূর্ব্বক, যে দান করা যায়, তাহাই সাত্ত্বিক দান বলিয়া কথিত হয় ॥২০॥

যত্তু প্রত্যুপকারার্থং ফলমুদ্দিশ্য বা পুনঃ ।
দীয়তে চ পরিক্লিষ্টং তদ্দানং রাজসং স্মৃতম্ ॥২১॥

যৎ তু (আর যাহা) প্রত্যুপকারার্থং (প্রত্যুপকারের নিমিত্ত) বা (অথবা) ফলং (ফলের) উদ্দিশ্য (উদ্দেশ্য করিয়া) পুনঃ চ (আবার) পরিক্লিষ্টং (অতি কষ্টে) দীয়তে (দেওয়া হয়) তৎ দানং (সেই দান) রাজসং (রাজসিক দান বলিয়া) স্মৃতম্ (কথিত হয়) ॥২১॥

আর, প্রত্যুপকার লাভের জন্য বা স্বর্গাদি কামনা করিয়া ও অতিশয় মনঃকষ্টের সহিত যে দান করা যায়, সেই দানকে রাজসিক দান বলা হয় ॥২১॥

অদেশকালে যদ্দানমপাত্রেভ্যশ্চ দীয়তে ।
অসৎকৃতমবজ্ঞাতং তত্তামসমুদাহৃতম্ ॥২২॥

অদেশকালে (অস্থানে ও অকালে) অপাত্রেভ্যঃ (অযোগ্য ব্যক্তিকে) অসৎকৃতং (অনাদর) অবজ্ঞাতং চ (ও অবজ্ঞার সহিত) যৎ (যে) দানং (দান) দীয়তে (দেওয়া হয়) তৎ (সেই দান) তামসং (তামসিক দান বলিয়া) উদাহৃতম্ (কথিত হয়) ॥২২॥

অস্থানে, অকালে ও অযোগ্য পাত্রে অনাদর ও অবজ্ঞার সহিত যে দান দেওয়া হয়, সেই দানকে তামসিক দান বলা যায় ॥২২॥

ওঁ তৎ সদিতি নির্দ্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ ।
ব্রাহ্মণাস্তেন বেদাশ্চ যজ্ঞাশ্চ বিহিতাঃ পুরা ॥২৩॥

ওঁ তৎ সৎ (ওঁ তৎ সৎ) ইতি (এই) ত্রিবিধঃ (তিন প্রকার) ব্রহ্মণঃ (পরব্রহ্মের) নির্দ্দেশঃ (উদ্দেশক) স্মৃতঃ (বলিয়া উক্ত হইয়াছে) তেন (সেই শব্দত্রয়ের দ্বারা) পুরা (পূর্ব্বকালে) ব্রাহ্মণাঃ (ব্রাহ্মণ) বেদাঃ চ (বেদ) যজ্ঞাঃ চ (ও যজ্ঞসমূহ) বিহিতাঃ (বিহিত হইয়াছে) ॥২৩॥

ওঁ তৎ সৎ এই তিনটিই পরব্রহ্মের উদ্দেশক বলিয়া শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে । সেই শব্দত্রয়ের সহিত সৃষ্টির আদিকালে ব্রাহ্মণ, বেদ ও যজ্ঞ সমূহও বিহিত হইয়াছে ॥২৩॥

তস্মাদোমিত্যুদাহৃত্য যজ্ঞদানতপঃক্রিয়াঃ ।
প্রবর্ত্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততং ব্রহ্মবাদিনাম্ ॥২৪॥

তস্মাৎ (অতএব) ওঁ ইতি (ওঁ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ) উদাহৃত্য (উচ্চারণ করিয়া) ব্রহ্মবাদিনাম্ (বেদবাদিগণের) বিধানোক্তাঃ (শাস্ত্রোক্ত) যজ্ঞদানতপঃক্রিয়া (যজ্ঞ ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম) সততং (সর্ব্বদা) প্রবর্ত্তন্তে (অনুষ্ঠিত হয়) ॥২৪॥

সেই হেতু বেদবাদিগণের শাস্ত্রোক্ত যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতি কর্ম্ম, সর্ব্বদা ওঁ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ উচ্চারণ করিয়া অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে ॥২৪॥

তদিত্যনভিসন্ধায় ফলং যজ্ঞতপঃক্রিয়াঃ ।
দানক্রিয়াশ্চ বিবিধাঃ ক্রিয়ন্তে মোক্ষকাঙ্ক্ষিভিঃ ॥২৫॥

তৎ ইতি (তৎ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ) [উদাহৃত] (উচ্চারণ পূর্ব্বক) ফলং (কর্ম্মের ফল) অনভিসন্ধায় (কামনা না করিয়া) মোক্ষকাঙ্ক্ষিভি (মোক্ষকামিগণ) বিবিধাঃ (বিভিন্ন প্রকার) যজ্ঞ তপঃক্রিয়াঃ (যজ্ঞ ও তপস্যার অনুষ্ঠান) দানক্রিয়াঃ চ (ও দান কার্য্য) ক্রিয়ান্তে (সম্পন্ন করিয়া থাকেন) ॥২৫॥

মোক্ষ-কামিগণ কর্ম্মের ফল কামনা না করিয়া তৎ এই ব্রহ্মোদ্দেশক শব্দ উচ্চারণ পূর্ব্বক বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞ ও তপস্যার অনুষ্ঠান ও দান কার্য্য সম্পন্ন করিয়া থাকেন ॥২৫॥

সদ্ভাবে সাধুভাবে চ সদিত্যেতৎ প্রযুজ্যতে ।
প্রশন্তে কর্ম্মণি তথা সচ্ছব্দঃ পার্থ যুজ্যতে ॥২৬॥

[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীনন্দন !) সদ্ভাবে (ব্রহ্মত্বে) সাধুভাবে চ (ও ব্রহ্মজ্ঞতে) সৎ ইতি (সৎ এই শব্দ) প্রযুজ্যতে (প্রযুক্ত হয়) । তথা (তদ্রূপ) প্রশস্তে (মাঙ্গলিক) কর্ম্মাণি (অনুষ্ঠানে) এতৎ সৎ শব্দঃ (এই ব্রহ্মবাচক সৎ শব্দ) যুজ্যতে (ব্যবহৃত হয়) ॥২৬॥

হে পার্থ! সৎ শব্দের লক্ষ্য—সত্য ও সত্যনিষ্ঠ জন এবং মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানেও এই সৎ শব্দ প্রযুক্ত হয় ॥২৬॥

যজ্ঞে তপসি দানে চ স্থিতিঃ সদিতি চোচ্যতে ।
কর্ম্ম চৈব তদর্থীয়ং সদিত্যেবাভিধীয়তে ॥২৭॥

যজ্ঞে (যজ্ঞে) তপসি (তপস্যায়) দানে চ (এবং দানেও) স্থিতিঃ চ (তাৎপর্য্যের নিত্যত্ব) সৎ ইতি চ (এই সৎ শব্দে) উচ্যতে (কথিত হয়) । তদর্থীয়ং (ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত) কর্ম্ম চ এব (কর্ম্মও) সৎ ইতি এব (সৎ এই শব্দেই) অভিধীয়তে (কথিত হয়) ॥২৭॥

যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানেও তাৎপর্য্যের নিত্যত্ব লক্ষ্য করিয়া সৎ শব্দ প্রযুক্ত হয় । ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত কর্ম্মও সৎ শব্দেই অভিহিত হইয়া থাকে ॥২৭॥

অশ্রদ্ধয়া হুতং দত্তং তপস্তপ্তংকৃতঞ্চ যৎ ।
অসদিত্যুচ্যতে পার্থ ন চ তৎ প্রেত্য নো ইহ ॥২৮॥

[হে] পার্থ ! (হে অর্জ্জুন !) অশ্রদ্ধয়া (অশ্রদ্ধার সহিত) হুতং (হোম) দত্তং (দান) তপ্তং (অনুষ্ঠিত হয়) তপঃ (তপস্যা) যৎ চ (ও অন্যান্য যাহা) কৃতং (অনুষ্ঠিত হয়), তৎ (সেই সমস্তই) অসৎ ইতি (অসৎ বলিয়া) উচ্যতে (কথিত হয়) । [যতঃ তৎ] (যেহেতু সেই সমস্ত কর্ম্মই) নো ইহ (না ইহলোকে) ন চ প্রেত্য (না পরলোকে) [ফলতি] (ফলদান করে) ॥২৮॥

হে পার্থ ! অশ্রদ্ধার সহিত যে হোম, দান ও তপস্যা এবং কর্ম্ম অনুষ্ঠিত হয়, সেই সমস্তই অসৎ বলিয়া কথিত হয় । উহা কি ইহলোকে কি পরলোকে কোথাও সুফল দান করে না ॥২৮॥

ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং
ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভবগদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং
যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগ-
যোগো নাম সপ্তদশোঽধ্যায়ঃ ॥১৭॥

ইতি সপ্তদশ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥

                                                                                                   গ্রন্থ-সম্পাদক—
                                                                                       ত্রিদণ্ডিভিক্ষু—শ্রীভক্তিরক্ষক শ্রীধর
                                                                                         শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ, নবদ্বীপ
                                                                                        শ্রীজন্মাষ্টমী বঙ্গাব্দ ১৩৬৮ সাল

(৪) কিন্তু সকাম দেবোপসনা মিশ্রসাত্ত্বিক । উহাতে কাম্যবস্তু বা দেব-লোকাদি প্রাপ্তি হয়, ভগবৎ-প্রাপ্তি হয় না । নিষ্কামভাবে একমাত্র ভগবানের আরাধনাই শুদ্ধ সাত্ত্বিকী শ্রদ্ধা, ভাগবতে ইহাকেই নির্গুণা শ্রদ্ধা বলা হইয়াছে [ভাগবত ১১|২৫|২৬] ।

ত্রিবিধ শ্রদ্ধা :
শ্রদ্ধাই উপাসনার প্রাণ; যজ্ঞ, দান, ব্রত-নিয়মাদিরও মুখ্য কথা শ্রদ্ধা । প্রেমভক্তি-পথের প্রথম কথাই শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধা হইতে ক্রমে রুচি, রাগ, ভাব ও নির্মল প্রেমের বিকাশ । – [ভক্তিরসামৃতসিন্ধু|১|৪|১১, চৈ.চ. মধ্য|২৩|৯|১০]
শ্রদ্ধা মনের ধর্ম, মন স্বভাবতই অন্ধ, শ্রদ্ধাও অন্ধ; বুদ্ধিদ্বারা চালিত না হইলে উহা অযোগ্য বস্তুতেই শ্রদ্ধা জন্মাইয়া জীবকে অধঃপাতিত করে । পক্ষান্তরে, মনে যদি শ্রদ্ধা না থাকে, লোকে যদি কেবল বুদ্ধিদ্বারাই চালিত হয়, তবে কেবল শুষ্ক পাণ্ডিত্য, বিতর্ক ও নাস্তিকতা আনয়ন করে ।
বুদ্ধিও সাত্ত্বিকাদি-ভেদে ত্রিবিধ এবং শ্রদ্ধা এই বুদ্ধিকর্তৃক চালিত হয় বলিয়া উহাও ত্রিবিধ হয় । তামসিকবুদ্ধি-প্রসূত তামসিক শ্রদ্ধা – দস্যুগণের নরবলি দিয়া কালীপূজা করা । রাজসিকবুদ্ধি-প্রসূত রাজসিক শ্রদ্ধা – ছাগমহিষাদি বলিদান করা । সাত্ত্বিকবুদ্ধি-প্রসূত সাত্ত্বিক শ্রদ্ধা – ছাগমহিষাদিকে কামক্রোধাদি পাশব বৃত্তির প্রতীকমাত্র বুঝিয়া ঐ সকল রিপুকে বলিদান করাই মায়ের শ্রেষ্ঠ অর্চনা বলিয়া মনে করা ।

(১০) সাত্ত্বিকাদি-ভেদে তিন প্রকার আহার :-
সাত্ত্বিক আহার : যাহা আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, চিত্ত-প্রসন্নতা ও রুচি বর্ধনকারী এবং সরস, স্নেহযুক্ত, সারবান এবং প্রীতিকর ।
রাজস আহার : অতি কটু, অতি অম্ল, অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, তীক্ষ্ণ, বিদাহী এবং দুঃখ, শোক ও রোগ-উৎপাদক ।
তামস আহার : যে খাদ্য বহু পূর্বে পক্ক, যাহার রস শুষ্ক হইয়া গিয়াছে, যা হা দুর্গন্ধ, পর্যুষিত (বাসি) উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র ।

আহার-শুদ্ধি
সর্বপ্রকার সাধনপক্ষেই, বিশেষতঃ ভক্তিমার্গে, আহারশুদ্ধির বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয় । ‘আহার শুদ্ধ হইলে চিত্ত শুদ্ধ হয়, চিত্ত শুদ্ধ হইলে সেই শুদ্ধ চিত্তে সর্বদা ঈশ্বরের স্মৃতি অব্যাহত থাকে’ [ছান্দোগ্য ৭|২৬] ।
(1) শ্রীমৎ রামানুজাচার্যের মতে আহার = খাদ্য (food) । তাঁহার মতে খাদ্যের ত্রিবিধ দোষ পরিহার করা কর্তব্য । (i) জাতিদোষ অর্থাৎ খাদ্যের প্রকৃতিগত দোষ – যেমন মদ্য, মাংস, রশুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি উত্তেজক খাদ্য; (ii) আশ্রয় দোষ – অর্থাৎ যে ব্যক্তির নিকট হইতে খাদ্য গ্রহণ করা যায়, তাহার দোষে খাদ্যে যে দোষ জন্মে – যেমন অশুচি, অতিকৃপণ, আসুর-স্বভাব, কুৎসিত-রোগাক্রান্ত খাদ্যবিক্রেতা, দাতা, পাচক বা পরিবেশনকারী প্রভৃতি; (iii) নিমিত্ত দোষ – অর্থাৎ খাদ্যে ধুলি, ময়লা, কেশ, মুখের লালা ইত্যাদি অপবিত্র দ্রব্যের সংস্পর্শ ।
(2) শ্রীমৎ শঙ্করাচার্যের মতে আহার = ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়জ্ঞান অর্থাৎ যাহা গ্রহণ করা যায় তাহাই আহার । তাঁহার মতে আহারশুদ্ধি অর্থ রাগ, দ্বেষ, মোহ এই ত্রিবিধ দোষবর্জিত হইয়া ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বিষয়গ্রহণ ।
(3) স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন – “এই দুইটি ব্যাখ্যা আপাতবিরোধী বলিয়া বোধ হইলেও উভয়টিই সত্য ও প্রয়োজনীয় । সূক্ষ শরীর বা মনের সংযম, মাংস-পিণ্ডময় স্থূল শরীরের সংযম হইতে উচ্চতর কার্য বটে, কিন্তু সূক্ষের সংযম করিতে হইলে অগ্রে স্থূলের সংযম করা বিশেষ আবশ্যক । সুতরাং ইহা যুক্তিসিদ্ধ বোধ হইতেছে যে, খাদ্যাখাদ্যের বিচার মনের স্থিরতারূপ উচ্চাবস্থা লাভের জন্য বিশেষ আবশ্যক । নতুবা সহজে এই স্থিরিতা লাভ করা যায় না । কিন্তু আজকাল আমাদের অনেক সম্প্রদায়ে এই আহারাদির বিচারের এত বাড়াবাড়ি, এত অর্থহীন নিয়মের বাঁধাবাধি, এই বিষয়ে এত গোঁড়ামি যে, তাঁহারা যেন ধর্মটিকে রান্নাঘরের ভিতর পুরিয়াছেন । এইরূপ ধর্ম এক বিশেষ প্রকার খাঁটি জড়বাদ মাত্র । উহা জ্ঞান নহে, ভক্তিও নহে, কর্মও নহে ।” [ভক্তির সাধন, ভক্তিযোগ, স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ৪০-৪১]

(১১) ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে শ্রীকৃষ্ণ এইরূপ সাত্ত্বিক যজ্ঞ করিতেই উপদেশ দিয়াছিলেন এবং তিনিও কর্তব্যানুরোধে নিষ্কামভাবে উহা সম্পন্ন করিয়াছিলেন । যুধিষ্ঠির বলিয়াছিলেন – “রাজপুত্রি, আমি কর্মফলান্বেষী হইয়া কোন কর্ম করি না; দান করিতে হয় তাই দান করি, যজ্ঞ করিতে হয় তাই যজ্ঞ করি; ধর্মাচরণের বিনিময়ে যে ফল চাহে, সে ধর্মবণিক, ধর্মকে সে পণ্যদ্রব্য করিয়াছে । সে হীন, জঘন্য ।” [মভাঃ বনপর্ব ৩১|২৫]

(১৫) অপ্রিয় সত্য বলা অনুচিত – মনু ৪|১৩৮ । অপ্রিয় সত্য ও হিত্যবাক্য বলার ও শোনার লোক অতি বিরল – মহাভারতে বিদুরবাক্য ।

(১৮) সৎকার = সাধুকার অর্থাৎ এই ব্যক্তি বড় সাধু, তপস্বী – এইরূপ প্রশংসা-বাক্যাদি । মান = মানন অর্থাৎ প্রত্যুত্থান (আসিতে দেখিয়া উঠিয়া দাঁড়ান), অভিবাদন প্রভৃতি দ্বারা সম্মান প্রদর্শন । পূজা = পাদ প্রক্ষালন, আসনাদি দান, ভোজন করান ইত্যাদি ।

(১৮) এইরূপ তপস্যায় আত্মোন্নতি বা পারলৌকিক কোন স্থায়ী ফল হয় না, কেবল ইহলোকে ক্ষণস্থায়ী প্রতিষ্ঠা লাভ হইতে পারে । কিন্তু সেইরূপ প্রতিষ্ঠা লাভও যে হইবে তাহারও নিশ্চয়তা নাই । এই জন্য ইহাকে অনিত্য ও অধ্রুব বলা হইয়াছে ।

(২০) সাত্ত্বিক দান
সাত্ত্বিক দানের তিনটি লক্ষণ – (1) ফলাকাঙ্ক্ষা না করিয়া নিষ্কাম কর্তব্য-বুদ্ধিতে দান, (2) অনুপকারী ব্যক্তিকে দান (যে পূর্বে উপকার করেনি অথবা পরেও প্রত্যুপকার করিবে না তাহাকে দান নচেৎ উহা আদান-প্রদান হইয়া যায়), (3) উপযুক্ত দেশ, কাল ও পাত্র বিবেচনা করিয়া দান ।

(3a) উপযুক্ত দেশের উদাহরণ – যে গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, তথায়ই পুষ্করিণী প্রতিষ্ঠায় জলদানের ফল হয়, বড় শহরে উহার কোন প্রয়োজন নাই । প্রাচীন টীকাকারগণদের সঙ্কীর্ণ মতে কুরুক্ষেত্রাদি পুণ্যক্ষেত্র ।

(3b) উপযুক্ত কালের উদাহরণ – কলেরার প্রাদুর্ভাবমাত্রেই ঔষধ দানের ব্যবস্থা করা বিধেয়, পূর্বে বা পরে উহাতে অর্থব্যয় করা নিষ্ফল । প্রাচীন টীকাকারগণদের সঙ্কীর্ণ মতে সংক্রান্তি গ্রহণাদি পুণ্যকাল ।

(3c) উপযুক্ত পাত্রের উদাহরণ – অভাবগ্রস্থ বিপন্ন ব্যক্তিকেই দান করিতে হয়, অর্থশালীকে দান করা নিষ্ফল । প্রাচীন টীকাকারগণদের সঙ্কীর্ণ মতে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ (শঙ্কর) ।

কিন্তু আধুনিকগণ এইরূপ সঙ্কীর্ণ অর্থ অনুমোদন করেন না । যেমন মনস্বী বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন – “সর্বনাশ ! আমি যদি স্বদেশে বসিয়া (অর্থাৎ পুণ্যক্ষেত্রাদিতে নয়) ১লা হইতে ২৯শে তারিখের মধ্যে (অর্থাৎ সংক্রান্তিতে নয়) কোন দিনে অতি দীনদুঃখী, পীড়ায় কাতর একজন মুচি বা ডোমকে (অর্থাৎ ব্রাহ্মণকে নয়) কিছু দান করি, তবে সে দান ভগবদভিপ্রেত দান হইল না ! এইরূপে কখন কখন ভাষ্যকারদিগের বিচারে অতি উন্নত, উদার ও সার্বভৈমিক যে ধর্ম তাহা অতি সঙ্কীর্ণ এবং অনুদার উপধর্মে পরিণত হইয়াছে । ইহারা যাহা বলেন তাহা ভগবদ্বাক্যে নাই, স্মৃতিশাস্ত্রে আছে । কিন্তু বিনা বিচারে ঋষিদিগের বাক্যসকল মস্তকের উপর এতকাল বহন করিয়া এই বিশৃঙ্খলা, অধর্ম ও দুর্দশায় আসিয়া পড়িয়াছি । এখন আর বিনা বিচারে বহন কর্তব্য নহে ।” [ধর্ম্মতত্ত্ব (অনুশীলন), বঙ্কিম রচনাসমগ্র]

প্রকৃত পক্ষে এ বিষয়ে ঋষিশাস্ত্রের কোনরূপ অনুদারতা নাই । শাস্ত্রের মর্ম বুঝিবার বা বুঝাইবার ত্রুটিতে আমাদের দুর্দশা । শাস্ত্রে দীনদুঃখী, আর্ত, পীড়িত, অভ্যাগত (visitor), এমন কি পশুপক্ষী, বৃক্ষলতাদির পর্যন্ত ধারণ-পোষণের ব্যবস্থা আছে । সর্বভূতের রক্ষাই গার্হস্থ্য ধর্ম, ইহাই শাস্ত্রের অনুশাসন । তবে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দান সর্বশ্রেষ্ঠ দান বলিয়া উল্লিখিত কারণ তাঁহারা হিন্দু-সমাজের প্রতিষ্ঠা ও বর্ণাশ্রম ধর্মাদির ব্যবস্থা করিয়াও অর্থাগমের যাবতীয় কর্মেই (যেমন রাজত্ব, প্রভুত্ব, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যাদি) অন্য জাতির অধিকার দিয়াছেন । নিজেরা উঞ্ছবৃত্তি বা অযাচিত দানের (প্রতিগ্রহ) উপর নির্ভর করিয়া সামান্য গ্রাসাচ্ছাদনে সন্তুষ্ট থাকিয়া সমাজে ধর্ম (যজন-যাজন) ও জ্ঞান (অধ্যয়ন, অধ্যাপনা) বিস্তারের ভার লইয়াছেন । ঈদৃশ পরার্থপর ত্যাগী ব্রাহ্মণজাতির রক্ষাকল্পে শাস্ত্রের যে সকল ব্যবস্থা তাহা সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত ও সমাজরক্ষার অনুকূল । আবার, বেদজ্ঞানহীন নিরগ্নি (অর্থাৎ স্বধর্ম পালনে পরাঙ্মুখ) দ্বিজবন্ধুদিগকে দান করিলে নিরয়গামী (condemned to hell) হইতে হয়, শাস্ত্রে এমন কঠোর অনুশাসনও রহিয়াছে । সুতরাং ঋষিশাস্ত্রের অনুদারতা বা পক্ষপাতিতা কোথাও নাই ।

গ্রহণাদি সময়ে বা পুণ্যক্ষেত্রাদিতে লোকের সাত্ত্বিক ভাব বৃদ্ধি হওয়ারই সম্ভাবনা থাকে, এই হেতু সেই কাল বা স্থান-দানাদি কর্মে প্রশস্ত বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকিবে, কেননা দানাদি কর্ম সাত্ত্বিক শ্রদ্ধার সহিত নিষ্পন্ন না হইলে নিষ্ফল হয় [গীতা ১৭|২৮] । কিন্তু কাল পরিবর্তনে ব্রাহ্মণজাতির ব্রাহ্মণত্ব বা তীর্থক্ষেত্রাদির মাহাত্ম্য যদি লোপ পায় এবং তদ্দরুণ লোকের ভক্তিশ্রদ্ধার যদি ব্যত্যয় ঘটে, তবে এই সকল বিধি-ব্যবস্থার কোন মূল্য থাকে না, তাহা বলাই বাহুল্য । সে স্থলে শাস্ত্রের প্রকৃত মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝিইয়া তদনুসারে কর্তব্যাকর্তব্য নির্ণয় করাই শ্রেয়কল্প; সংস্কারবশতঃ প্রাণহীন অনুষ্ঠান লইয়া বসিয়া থাকিলে ক্রমশঃ অধোগতি সুনিশ্চিত ।

(২৬) সদ্ভাব = থাকার ভাব বা অস্ত্যর্থে ।

(২৭) ওঁ তৎ সৎ (স্ফোট) – এই তিনটি ব্রহ্মবাচক । তিনটির পৃথক্‌ও ব্যবহার হয়, এক সঙ্গেও ব্রহ্ম নির্দেশার্থ ব্যবহৃত হয় । ওঁ (অ-উ-ম্‌) বা প্রণব বা শব্দব্রহ্ম বা স্ফোটরূপী ওঙ্কার হইতেই জগতের সৃষ্টি । ” ‘ওঁ’ – গূঢ়াক্ষররূপী বৈদিক মন্ত্র; ‘তৎ’ – তাহা অর্থাৎ দৃশ্য জগতের অতীত দূরবর্তী অনির্বাচ্য তত্ত্ব; ‘সৎ’ – চক্ষুর সম্মুখস্থ দৃশ্য জগৎ । এই তিন মিলিয়া সমস্তই ব্রহ্ম, ইহাই এই সঙ্কল্পের অর্থ ।” – লোকমান্য তিলক । এ স্থলে বলা হইতেছে যে – ‘ওঁ তৎ সৎ’ এই ব্রহ্মনির্দেশ হইতে ব্রাহ্মণাদি কর্তা, করণরূপ বেদ এবং কর্মরূপ যজ্ঞ সৃষ্টি হইয়াছে । ইহারই নাম শব্দব্রহ্মবাদ । এই ওঙ্কারই জগতের অভিব্যক্তির আদি কারণ শব্দব্রহ্ম । ইহার নাম স্ফোট । স্ফোট হইতে কিরূপে জগতের সৃষ্টি হইল তাহা শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত আছে [ভা | ১২|৬|৩৩-৩৭] :-
১) সমাধিমগ্ন ব্রহ্মার হৃদাকাশ হইতে প্রথমত নাদ উৎপন্ন হইল;
২) নাদ হইতে ত্রিমাত্রা ওঙ্কার উৎপন্ন হইল যাহা সমস্ত বৈদিক মন্ত্রোপনিষদের বীজস্বরূপ;
৩) অব্যক্ত ওঙ্কারের অকার, উকার, মকার এই তিন বর্ণ প্রকাশ পাইল;
৪) এই তিন বর্ণ হইতে ক্রমশ সত্ত্বাদি গুণ, ঋগাদি বেদ, ভূর্ভুবাদি লোক অর্থাৎ জগৎপ্রপঞ্চ সৃষ্ট হইল ।

কর্মে ব্রহ্মনির্দেশ :
পূর্বে বলা হইয়াছে, ব্রহ্মবাচক স্ফোটরূপী ওঙ্কার হইতেই জগতের সৃষ্টি । জগতের ধারণ-পোষণের জন্য যজ্ঞসৃষ্টি । যজ্ঞ-শব্দে ব্যাপক অর্থে চাতুর্বর্ণ্যের আচরণীয় সমস্ত কর্ম বুঝায় । এই যজ্ঞ-কর্মের ব্যবস্থাই বেদে আছে এবং যজ্ঞরক্ষার ভার প্রধানত ব্রাহ্মণের উপর । ব্রাহ্মণ, বেদ ও যজ্ঞ পরব্রহ্ম হইতেই উৎপন্ন হইয়াছে; সুতরাং ব্রহ্মবাচক ‘ওঁ তৎ সৎ’ এই সঙ্কল্পই সমগ্র সৃষ্টির মূল । যজ্ঞ বা কর্মদ্বারাই সৃষ্টিরক্ষা হয়, সুতরাং ‘ওঁ তৎ সৎ’ এই সঙ্কল্পদ্বারাই সমস্ত কর্ম করিতে হয় । ইহার স্থূল মর্ম এই যে, সর্বকর্মই পরমাত্মাকে স্মরণ করিয়া ঈশ্বরার্পণ-বুদ্ধিতে করিবে অর্থাৎ কর্মকে ব্রহ্মকর্মে পরিণত করিবে, তাহা ত্যাগ করিবে না ।

সংগ্রহঃ ০১। sanatandharmatattva.wordpress.com
০২। http://www.scsmathinternational.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।