শ্রীভগবান্ উবাচ—
অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধির্জ্ঞানযোগব্যবস্তিতিঃ ।দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জ্জবম্ ॥১॥ অহিংসা সত্যমক্রোধস্ত্যাগঃ শান্তিরপৈশুনম্ । দয়াভূতেষ্বলোলুপ্ত্বং মার্দ্দবং হ্রীরচাপলম্ ॥২॥ তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ শৌচমদ্রোহো নাতিমানিতা । ভবন্তি সম্পদং দৈবী মভিজাতস্য ভারতঃ ॥৩॥ |
শ্রীভগবান্ উবাচ (শ্রীভগবান বলিলেন) অভয়ং (ভয়শূন্যতা) সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ (চিত্তের প্রসন্নতা) জ্ঞানযোগব্যবস্থিতিঃ (জ্ঞানোপায় অমানিত্বাদিতে নিষ্ঠা) দানং (দান) দমঃ (বাহ্যেন্দ্রিয় সংযম) যজ্ঞঃ চ (যজ্ঞ) স্বাধ্যায়ঃ (বেদপাঠ) তপঃ (তপস্যা) আর্জ্জবম্ (সরলতা) অহিংসা (হিংসা রাহিত্য) সত্যম্ (সত্য) অক্রোধঃ (ক্রোধাভাব) ত্যাগঃ (পুত্ত্রকলত্রাদিতে মমতা ত্যাগ) শান্তিঃ (মনঃ সংযম) অপৈশুনম্ (পরের দোষানুসন্ধান বর্জ্জন) ভূতেষু (প্রাণিগণের প্রতি) দয়া (করুণা) অলোলুপ্ত্বং (লোভের অভাব) মার্দ্দবং (মৃদুতা) হ্রীঃ (অসৎ কর্ম্মে লজ্জা) অচাপলম্ (অচঞ্চলভাব) তেজঃ (তেজ) ক্ষমা (সহিষ্ণুতা) ধৃতিঃ (ধৈর্য্য) শৌচম্ (বাহ্য ও অভ্যন্তরশুদ্ধি) অদ্রোহঃ (জিঘাংসারাহিত্য) ন অতিমানিতা (অভিমান শূন্যতা) [হে] ভারত ! (হে অর্জ্জুন !) [এতেগুণাঃ] (এই সকল গুণ ) দৈবীম্ (সাত্ত্বিক) সম্পদং (সম্পদের) অভিজাতস্য (অভিমুখে জাত ব্যক্তির) ভবন্তি (উদিত হইয়া থাকে) ॥১–৩॥
শ্রীভগবান্ কহিলেন—অভয়, চিত্তের প্রসন্নতা, আত্মজ্ঞানে দৃঢ়নিষ্ঠা, দান, বাহ্যেন্দ্রিয় সংযম, যজ্ঞ, বেদপাঠ, তপস্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্য, অক্রোধ, ত্যাগ, শান্তি, পরের দোষ না দেখা, জীবে দয়া, নির্লোভ, মূদুতা, লজ্জাশীলতা, অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য্য, শৌচ, অদ্রোহ ও অভিমানশূন্যতা—হে ভারত ! এই সকল গুণ সাত্ত্বিক সম্পদের অভিমুখে জাত ব্যক্তির উদিত হয় ॥১–৩॥
দম্ভো দর্পোঽভিমানশ্চ ক্রোধঃ পারুষ্যমেব চ । অজ্ঞানং চাভিজাতস্য পার্থ সম্পদমাসুরীম্ ॥৪॥ |
[হে] পার্থ ! (হে কুন্তীপুত্র !) দম্ভঃ (ধর্ম্মধ্বজিতা) দর্পঃ (বিদ্যাধন সৎকূলত্বাদি নিমিত্ত গর্ব্ব) অভিমানঃ চ (নিজের পূজ্যত্ব বুদ্ধি) ক্রোধঃ (ক্রোধ) পারুষ্যম্ এব চ (নিষ্ঠুরতা) অজ্ঞানং চ (অবিবেকিতা) [এ তে গুণাঃ] (এই সকল অসৎগুণ) আসুরীম্ (আসুরী) সম্পদম্ (সম্পদের) অভিজাতস্য (অভিমুখে জাত ব্যক্তির) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥৪॥
হে পার্থ! দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা, ও অবিবেকিতা—এই সকল অসৎগুণ আসুরী সম্পদের অভিমুখে জাত ব্যক্তির হইয়া থাকে ॥৪॥
দৈবীসম্পদ্বিমোক্ষায় নিবন্ধায়াসুরী মতা । মা শুচঃ সম্পদং দৈবীমভিজাতোঽসি পাণ্ডব ॥৫॥ |
দৈবী সম্পদ্ (দৈবী সম্পদ্) বিমোক্ষায় (বন্ধন মুক্তির) আসুরী [চ] (ও আসুরী সম্পদ্) নিবন্ধায় (বন্ধনের কারণ বলিয়া) মতা (কথিত হয), [হে] পাণ্ডব ! (হে পাণ্ডুপুত্ত্র !) [ত্বং] (তুমি) মা শু চঃ (শোক করিও না) দৈবীম্ (দৈবী) সম্পদং (সম্পদ্) অভি (আশ্রয় করিয়া) জাতঃ অসি (জন্মগ্রহণ করিয়াছ) ॥৫॥
দৈবসম্পদ্ বন্ধনমুক্তির এবং আসুরসম্পদ্ দৃঢ় বন্ধনের কারণ বলিয়া কথিত হয় । হে পাণ্ডব ! শোক করিও না, তুমি দৈবী সম্পদ্ আশ্রয় করিয়াই জন্মগ্রহণ করিয়াছ ॥৫॥
দ্বৌ ভুতসর্গৌ লোকেঽস্মিন্ দৈব আসুর এব চ । দৈবো বিস্তরশঃ প্রোক্ত আসুরং পার্থ মে শৃণু ॥৬॥ |
[হে] পার্থ ! (হে অর্জ্জুন !) অস্মিন্ (এই) লোকে (সংসারে) দৈবঃ (দেবপ্রকৃতি) আসুরঃ চ (ও অসুরপ্রকৃতি) দ্বৌ এব (এই দুই প্রকার) ভূতসর্গৌ (প্রাণিসৃষ্টি) [দৃশ্যতে] (দেখা যায়) । দৈবঃ (দেবপ্রকৃতির বিষয়) বিস্তরশঃ (বিস্তৃত ভাবে) প্রোক্তঃ (কথিত হইয়াছে), মে (আমার নিকট) আসুরং (অসুরপ্রকৃতির বিষয়) শৃণু (শ্রবণ কর) ॥৬॥
হে পার্থ! এই জগতে দেব-প্রকৃতি ও অসুর-প্রকৃতি—এই দুই প্রকার জীব-সৃষ্টি দেখা যায় । জীবের দৈবী সম্পৎ সম্বন্ধে তোমাকে সবিস্তারে বলিয়াছি, এক্ষণে আমার নিকট আসুরী সম্পদের বিষয় শ্রবণ কর ॥৬॥
প্রবৃত্তিঞ্চ নিবৃত্তিঞ্চ জনা ন বিদুরাসুরাঃ । ন শৌচং নাপি চাচারো ন সত্যং তেষু বিদ্যতে ॥৭॥ |
আসুরাঃ (অসুর প্রকৃতি) জনাঃ (লোকসমূহ) প্রবৃত্তিং চ (ধর্ম্মে প্রবৃত্তি) নিবৃত্তিং চ (ও অধর্ম্ম হইতে নিবৃত্তি) ন বিদুঃ (জানে না) ; তেষু (তাহাদের মধ্যে) শৌচং (শুচিতা) ন বিদ্যতে (নাই), আচারঃ অপি (সদাচারও) ন (নাই), সত্যং চ (এবং সত্যও) ন (নাই) ॥৭॥
অসুর প্রকৃতি লোকসমূহ ধর্ম্মে প্রবৃত্তি ও অধর্ম্ম হইতে নিবৃত্তির বিষয় জানে না ; তাহাদের মধ্যে শুচিতা সদাচার ও সত্যপরায়ণতার কিছুই নাই ॥৭॥
অসত্যমপ্রতিষ্ঠন্তে জগদাহুরনীশ্বরম্ । অপরস্পরসদ্ভূতং কিমন্যৎ কামহেতুকম্ ॥৮॥ |
তে (তাহারা অর্থাৎ অসুর প্রকৃতি লোক সমূহ) জগৎ (জগৎকে) অসত্যম্ (মিথ্যা) অপ্রতিষ্ঠং (নিরাশ্রয়) অনীশ্বরম্ (নিরীশ্বর) অপরস্পরসম্ভূতং (পরস্পর সংসর্গজাত) কিম্ অন্যৎ (অন্য কি কথা ? ) কাম হেতুকম্ (কেবল কামই জগৎ সৃষ্টির হেতু) আহুঃ (বলিয়া থাকে) ॥৮॥
অসুর-প্রকৃতি লোকগণ জগৎকে মিথ্যা, আশ্রয়হীন, নিরীশ্বর ও পরস্পর সংসর্গ-জাত বলে ; অন্য কি কথা ? তাহাদের সিদ্ধান্ত একমাত্র কামই বিশ্ব সৃষ্টির হেতু ॥৮॥
এতাং দৃষ্টিমবষ্টভ্য নষ্টাত্মানোঽল্পবুদ্ধয়ঃ । প্রভবন্ত্যুগ্রকর্ম্মাণঃ ক্ষয়ায় জগতোঽহিতাঃ ॥৯॥ |
এতাং (এই প্রকার) দৃষ্টিম্ (দর্শন) অবষ্টভ্য (আশ্রয় করিয়া) নষ্টাত্মানঃ (আত্মতত্ত্ব জ্ঞানহীন) অল্প বুদ্ধয়ঃ (ক্ষুদ্রবুদ্ধি) উগ্রকর্ম্মাণঃ (ভীষণকর্ম্মা) অহিতাঃ (অমঙ্গল স্বরূপ) [অসুরাঃ] (অসুরগণ) জগতঃ (জগতের) ক্ষয়ায় (ধ্বংসের জন্যই) প্রভবন্তি (প্রভাব লাভ করে) ॥৯॥
এইরূপ দর্শন আশ্রয় করিয়া আত্মজ্ঞানহীন অল্পবুদ্ধি, ভীষণকর্ম্মা ও অমঙ্গল স্বরূপ অসুরগণ জগধ্বংসের জন্যই প্রভাব লাভ করে ॥৯॥
কামমাশ্রিত্য দুষ্পূরং দম্ভমানমদান্বিতাঃ । মোহাদ্গৃহীত্বাঽসদ্গ্রাহান্ প্রবর্ত্তন্তেঽশুচিব্রতাঃ ॥১০॥ |
[তে] (তাদৃশ অসুরগণ) দুষ্পূরং (দুষ্পূরণীয়) কামম্ (বিষয়তৃষ্ণা) আশ্রিত্য (আশ্রয় করিয়া) দম্ভমানমদাম্বিতাঃ [সন্তঃ] (দম্ভ, মান ও মদে মত্ত হইয়া) মোহাৎ (মোহ বশতঃ) অসদ্গ্রাহান্ (অসৎ বিষয়ে আগ্রহ) গৃহীত্বা (অবলম্বন পূর্ব্বক) অশুচিব্রতাঃ [সন্তঃ] (ঘোর অনাচারে) প্রবর্ত্তন্তে (প্রবৃত্ত হয়) ॥১০॥
তাদৃশ অসুরগণ দুষ্পূরণীয় কামনা আশ্রয় করিয়া মোহবশতঃ অসৎ বিষয়ে আগ্রহ অবলম্বন পূর্ব্বক দম্ভ, মান, ও মদে মত্ত হইয়া ঘোর অনাচারে প্রবৃত্ত হয় ॥১০॥
চিন্তামপরিমেয়াঞ্চ প্রলয়ান্তামুপাশ্রিতাঃ । কামোপভোগপরমা এতাবদিতি নিশ্চিতাঃ ॥১১॥ আশাপাশশতৈর্ব্বদ্ধাঃ কামক্রোধপরায়ণাঃ । ঈহস্তে কামভোগার্থমন্যায়েনার্থসঞ্চয়ান্ ॥১২॥ |
[তে] (তাহারা) প্রলয়ান্তাম্ (মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত) অপরিমেয়াং চ (অপরিসীম) চিন্তাং (চিন্তাকে) উপাশ্রিতাঃ (আশ্রয় পূর্ব্বক) কামোপভোগপরমাঃ (কামোপভোগই চরম কার্য্য) এতাবৎ ইতি নিশ্চিতাঃ (এইরূপ নিশ্চয় করিয়া) আশাপাশশতৈঃ (শতশত আশাপাশে) বদ্ধাঃ (আবদ্ধ) কামক্রোধপরায়ণাঃ [সন্তঃ] (কাম ও ক্রোধ বশীভূত হইয়া) কামভোগার্থম্ (কাম ভোগের জন্য) অন্যায়েন (অন্যায়ভাবে) অর্থসঞ্চয়ান্ (অর্থ সংগ্রহের) ঈহন্তে (চেষ্টা করিয়া থাকে) ॥১১–১২॥
তাহারা আমৃত্যু অপরিসীম চিন্তাগ্রস্থ থাকিয়া কামোপভোগই চরম কার্য্য নিশ্চয় পূর্ব্বক শতশত আশাপাশে আবদ্ধ এবং কাম ও ক্রোধ বশীভূত হইয়া কামভোগের জন্য অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করিয়া থাকে ॥১১–১২॥
ইদমদ্য ময়া লব্ধনিদং প্রাপ্স্যে মনোরথম্ । ইদমস্তীদমপি মে ভবিষ্যতি পুনর্দ্ধনম্ ॥১৩॥ |
অদ্য (আজ) ময়া (আমি) ইদম্ (ইহা) লব্ধম্ (পাইলাম) [পুনঃ] (আবার) ইদং (এই) মনোরথম্ (অভীষ্ট বস্তু) প্রাপ্স্যে (পাইব), ইদম্ (এই ধন) অস্তি (আছে) পুনঃ (আবার) ইদম্ অপি ধনম্ (এই ধনও) মে (আমার) ভবিষ্যতি (হইবে) ॥১৩॥
আজ আমি ইহা পাইলাম, আবার এই অভীষ্ট প্রাপ্ত হইব, আমার এই সম্পত্তি আছে, আবার এই ধনও আমারই হইবে ॥১৩॥
অসৌ ময়া হতঃ শক্রর্হনিষ্যে চাপরানপি । ঈশ্বরোঽহমহং ভোগী সিদ্ধোঽহং বলবান্ সুখী ॥১৪॥ |
অসৌ (এই) শক্রঃ (শক্রুকে) ময়া (আমাকর্ত্তৃক) হতঃ (বিনষ্ট হইয়াছে) অপি চ (আরও) অপরান্ (অপর শক্রদিগকে) হনিষ্যে (বিনাশ করিব), অহম্ (আমি) ঈশ্বরঃ (প্রভু), অহং (আমি) ভোগী (ভোক্তা), অহং (আমি) সিদ্ধঃ (কৃতকৃত্য) বলবান্ ( বলবান্) সুখী (সুখী) ॥১৪॥
এই শত্রুকে আমি বধ করিলাম, অপর শত্রুগণকেও বিনাশ করিব, আমিই ঈশ্বর, আমিই ভোক্তা, আমিই কৃতকৃত্য, ও বলবান্ এবং আমিই সুখী ॥১৪॥
আঢ্যোঽভিজনবানস্মি কোঽন্যোঽস্তি সদৃশো ময়া । যক্ষ্যে দাস্যামি মোদিষ্য ইত্যজ্ঞানবিমোহিতাঃ ॥১৫॥ অনেকচিত্তবিভ্রান্তা মোহজালসমাবৃতাঃ । প্রসক্তাঃ কামভোগেষু পতন্তি নরকেঽশুচৌ ॥১৬॥ |
[অহং] (আমি) আঢ্যঃ (ধনী) অভিজনবান্ (কুলীন) অস্মি (হই) ময়া (আমার) সদৃশঃ (সমকক্ষ) অন্যঃ (অপর) কঃ (কে) অস্তি (আছে) ? [অহং] (আমি) যক্ষ্যে (যজ্ঞ করিব) দাস্যামি (দান করিব) মোদিষ্যে (ও আনন্দ করিব) ইতি (এইরূপ) অজ্ঞানবিমোহিতাঃ (অজ্ঞান—বিমোহিতা) অনেকচিত্তবিভ্রান্তাঃ (নানা চিন্তাতে বিভ্রান্ত চিত্ত) মোহজালসমাবৃতাঃ (মোহজালে আচ্ছন্ন) কামভোগেষু (ও বিষয়ভোগে) প্রসক্তাঃ [সন্তঃ] (অত্যন্ত আসক্ত হইয়া ইঁহারা) অশুচৌ (ঘৃণিত) নরকে (বৈতরণী প্রভৃতি নরকে) পতন্তি (পতিত হয়) ॥১৫–১৬॥
আমিই ধনী ও কুলীন, আমার সমকক্ষ কে আছে ? আমি যজ্ঞ করিব, প্রার্থীকে দান করিব এবং আনন্দ করিব—এইরূপ অজ্ঞান বিমোহিত, নানা চিন্তায় বিভ্রান্তচিত্ত, মোহজালে আচ্ছন্ন ও বিষয়ভোগে অতীব আসক্ত হইয়া ইহারা ঘৃণিত (বৈতরণী প্রভৃতি) নরকে পতিত হয় ॥১৫–১৬॥
আত্মসম্ভাবিতাঃ স্তব্ধা ধনমানমদান্বিতাঃ । যজন্তে নামযজ্ঞৈস্তে দম্ভেনাবিধিপূর্ব্বকম্ ॥১৭॥ |
আত্মসম্ভাবিতাঃ (নিজ নিজেই সম্মানিত) স্তব্ধাঃ (অবিনীত) ধনমানমদান্বিতাঃ (ধন ও মান হেতু মদমত্ত) তে (সেই সমস্ত অসুরগণ) দম্ভেন (দম্ভের সহিত) নামযজ্ঞৈঃ (নাম মাত্র যজ্ঞ দ্বারা) অবিধিপূর্ব্বকম্ (অশাস্ত্রীয়) যজন্তে (যজ্ঞ করিয়া থাকে) ॥১৭॥
নিজে নিজেই সম্মানিত, অবিনীত এবং ধন ও মানমদে মত্ত, সেই সকল অসুরগণ দম্ভের সহিত অবিধি পূর্ব্বক নামমাত্র (লোক দেখান) যজ্ঞ করিয়া থাকে ॥১৭॥
অহঙ্কারং বলং দর্পং কামং ক্রোধঞ্চ সংশ্রিতাঃ । মামাত্মপরদেহেষু প্রদ্বিষন্তোঽভ্যসূয়কাঃ ॥১৮॥ |
[তে] (তাহারা) অহঙ্কারং (অহঙ্কার) বলং (বল) দর্পং (দর্প) কামং (কাম) ক্রোধং চ (ও ক্রোধকে) সংশ্রিতাঃ (আশ্রয় করিয়া) আত্মপরদেহেষু (নিজের ও পরের দেহে) [স্থিতং] (অবস্থিত) মাম্ (আমাকে) প্রদ্বিষন্তঃ (অতিশয় দ্বেষ করিয়া) অভ্যসূয়কাঃ (সাধুদিগের গুণে দোষারোপকারী) [ভবন্তি] (হইয়া থাকে) ॥১৮॥
তাহারা অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করিয়া, নিজের ও অপরের দেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরূপ আমাকে অত্যন্ত দ্বেষ পূর্ব্বক (সাধুগণের) গুণে দোষারোপ করিয়া থাকে ॥১৮॥
তানহং দ্বিষতঃ ক্রূরান্ সংসারেষু নরাধমান্ । ক্ষিপাম্যজস্রমশুভানাসুরীষ্বেব যোনিষু ॥১৯॥ |
অহং (আমি) দ্বিষতঃ (দ্বেষকারী) ক্রূরান্ (নিষ্ঠুর) অশুভান্ (অমঙ্গলস্বরূপ) নরাধমান্ (নরাধম) তান্ (সেই অসুরগণকে) সংসারেষু (কর্ম্মচক্রে) আসুরীষু (অসুর) যোনিষু এব (যোনি সমূহেই) অজস্রম্ (অনবরত) ক্ষিপামি (নিক্ষেপ করি) ॥১৯॥
আমি সেই বিদ্বেষী, ক্রূর, অশুভ-গ্রহ ও নরাধম অসুরগণকে কর্ম্মচক্রে অবিরত আসুরী যোনি সমূহেই নিক্ষেপ করিয়া থাকি ॥১৯॥
আসুরীং যোনিমাপন্না মূঢ়া জন্মনি জন্মনি । মামপ্রাপ্যৈব কৌন্তেয় ততো যান্ত্যধমাং গতিম্ ॥২০॥ |
[হে] কৌন্তেয় ! (হে কুন্তীনন্দন !) জন্মনি জন্মনি (জন্মে জন্মে) আসুরীং (অসুরী) যোনিম্ (যোনি) আপন্নাঃ (প্রাপ্ত হইয়া) মূঢ়াঃ (সেই মূঢ়গণ) মাম্ (আমাকে) অপ্রাপ্য এব (না পাওয়ার হেতুই) ততঃ (তাহা হইতেও) অধমাং (নিকৃষ্ট) গতিম্ (গতি) যান্তি (লাভ করিয়া থাকে)॥২০॥
হে কৌন্তেয়! জন্মে জন্মে অসুর যোনি প্রাপ্ত হইয়া মূঢ়গণ পরমস্বরূপ আমাকে না পাওয়া হেতু তাহা হইতেও অধমগতি লাভ করিয়া থাকে ॥২০॥
ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ । কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তস্মাদেতত্ত্রয়ং ত্যজেৎ ॥২১॥ |
কামঃ (কাম) ক্রোধঃ (ক্রোধ) তথা লোভঃ (ও লোভ) ইদং (এই) ত্রিবিধং (তিন প্রকার) নরকস্য (নরক প্রাপ্তির) আত্মনঃ [চ] (ও আত্মার) নাশনম্ (সর্ব্বনাশকর) দ্বারং (দ্বার) তস্মাৎ (অতএব) এতৎ (এই) ত্রয়ং (তিনটীকে) ত্যজেৎ (ত্যাগ করিবে) ॥২১॥
কাম, ক্রোধ ও লোভ এই তিন প্রকার আত্মনাশকর নরক প্রাপ্তির দ্বারস্বরূপ, অতএব এই তিনটীকে পরিত্যাগ করিবে ॥২১॥
এতৈর্ব্বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমোদ্বারৈস্ত্রিভির্নরঃ । আচরত্যাত্মনঃ শ্রেয়স্ততো যাতি পরাং গতিম্ ॥২২॥ |
[হে] কৌন্তেয় ! (হে কৌন্তেয় !) এতৈঃ (এই) ত্রিভিঃ (তিন প্রকার) তমোদ্বারৈঃ (নরকদ্বার হইতে) বিমুক্তঃ (বিশেষভাবে মুক্ত) নরঃ (লোক) আত্মনঃ (নিজের আত্মার) শ্রেয়ঃ (মঙ্গল) আচরতি (সাধন করে) ততঃ (তাহাদ্বারা) পরাং (পরম) গতিম্ (গতি) যাতি (লাভ করে) ॥২২॥
হে কৌন্তেয়! এই তিন প্রকার নরকদ্বার হইতে বিমুক্ত মানব নিজের শ্রেয়ঃসাধন করেন এবং পরম গতি লাভ করিয়া থাকেন ॥২২॥
যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ত্ততে কামচারতঃ । ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ ॥২৩॥ |
যঃ (যে ব্যক্তি) শাস্ত্রবিধিম্ (শাস্ত্রবিধিকে) উৎসৃজ্য (উল্লঙ্ঘন করিয়া) কামচারতঃ (স্বেচ্ছাচারে) বর্ত্ততে (বর্ত্তমান) সঃ (সে) সিদ্ধিম্ (চিত্তশুদ্ধি) সুখং (সুখ) পরাং গতিম্ (বা পরাগতি) ন অবাপ্নোতি (কোনটীই লাভ করিতে পারে না) ॥২৩॥
যে ব্যক্তি শাস্ত্রেয় বিধি উল্লঙ্ঘন করিয়া স্বেচ্ছাচারে বর্ত্তমান, সে ব্যক্তি কখনও সিদ্ধি বা সুখ বা পরমগতি—কোনটীই লাভ করিতে পারে না ॥২৩॥
তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণন্তে কার্য্যাকার্য্যব্যবস্থিতৌ । জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম্ম কর্ত্তুমিহার্হসি ॥২৪॥ |
তস্মাৎ (অতএব) কার্য্যাকার্য্যব্যবস্থিতৌ (করণীয় ও অকরনীয়ের নির্ণয় বিষয়ে) শাস্ত্রং (শাস্ত্র বাক্যই) তে (তোমার পক্ষে) প্রমাণং (প্রমাণ) ইহ (এই কর্ম্মভূমিতে) শাস্ত্রবিধানোক্তং (শাস্ত্রবিহিত) কর্ম্ম (কর্ম্ম) জ্ঞাত্বা (জানিয়া) [তৎ] কর্ত্তুং (তাহা করিতে) অর্হসি (যোগ্য হও) ॥২৪॥
অতএব কর্ত্তব্য ও অকর্ত্তব্য কর্ম্মের নির্ণয় বিষয়ে শাস্ত্র-বাক্যই তোমার পক্ষে একমাত্র প্রমাণ । এই কর্ম্মভূমিতে শাস্ত্র বিহিত অর্থাৎ ভগবৎ-সুখ তাৎপর্য্যপর কর্ম্ম—বুঝিয়া তাহা করিতে যোগ্য হও ॥২৪॥
ইতি শ্রীমহাভারতে শতসাহস্র্যাং সংহিতায়াং বৈয়াসিক্যাং ভীষ্মপর্ব্বণি শ্রীমদ্ভবগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসংবাদে দৈবাসুর-সম্পদ্-বিভাগ যোগো নাম ষোড়শোঽধ্যায়ঃ ॥১৬॥ |
ইতি ষোড়শ অধ্যায়ের অন্বয় সমাপ্ত ॥
গ্রন্থ-সম্পাদক—
ত্রিদণ্ডিভিক্ষু—শ্রীভক্তিরক্ষক শ্রীধর
শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ, নবদ্বীপ
শ্রীজন্মাষ্টমী বঙ্গাব্দ ১৩৬৮ সাল
(১-৩) আসুরিক প্রকৃতির লোক তাঁহাকে চিনে না, সুতরাং অবজ্ঞা করে; দৈবী বা সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোক তাঁহাকে ভক্তি করে [৯|১১-১৩] । এই উভয় প্রকৃতির বিস্তারিত বর্ণনা এই অধ্যায়ে করা হইতেছে এবং আসুরী প্রকৃতির কিরূপে সংশোধন হয় তাহাও উপদেশ দেওয়া হইয়াছে ।
(৮) অথবা মতান্তরে, জগতের শাস্ত্রোক্ত কোন সৃষ্টি-পরম্পরা নাই । জগতের সকল পদার্থই মনুষ্যের কামনা-বাসনা তৃপ্ত করিবার জন্য । তাহাদের অন্য কোনও উপযোগ নাই ।
(১৭) এই সকল বিবেকহীন ব্যক্তি, বুদ্ধিভ্রংশকারী তামসী ও রাজসী প্রকৃতির বশে, আমাকে অবজ্ঞা করিয়া থাকে । উহাদের আশা ব্যর্থ, কর্ম নিষ্ফল, জ্ঞান নিরর্থক এবং চিত্ত বিক্ষিপ্ত । [৯|১২]
(১৮) আমি অন্তর্যামিরূপে সকলের মধ্যেই আছি, কিন্তু দম্ভবশে আমার অন্তর্যামিত্ব অস্বীকার করিয়া স্বদেহস্থিত আমাকে দ্বেষ করে এবং প্রাণি-হিংসাদি দ্বারা অন্য দেহেও আমাকে দ্বেষ করিয়া থাকে ।
(২৩) সিদ্ধি = পুরুষার্থ প্রাপ্তির যোগ্যতা (শঙ্কর); তত্ত্বজ্ঞান (শ্রীধর) ।
(২৪) শাস্ত্র = শ্রুতি-স্মৃতি-পুরাণাদি । ধর্মশাস্ত্র = কর্তব্যাকর্তব্য নির্ণায়ক শাস্ত্র; আধুনিকগণ ইহাকে নীতিশাস্ত্র বলেন । কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যে নীতিশাস্ত্র বলিতে কেবল রাজনীতিই বুঝায় । উহা ধর্মশাস্ত্রেরই অন্তর্গত ।
(২৪) ইহ = কর্মাধিকারে বর্তমান থাকিয়া (শ্রীধর); এই লোকে (তিলক); এই কর্মাধিকার-ভূমিতে অর্থাৎ ভারতবর্ষে (শঙ্কর) । ভারতবর্ষ কর্মভূমি, মোক্ষ সাধনার শ্রেষ্ঠ স্থান, দেবগণও এস্থানে জন্মগ্রহণ বাঞ্ছা করেন [বৃহন্নারদীয় পুরাণ ৩|৪৯-৫৬, ৬৯-৭৯; অপিচ, ভাগবত ৫|১৯-২৭] ।
সংগ্রহঃ ০১। sanatandharmatattva.wordpress.com
০২। http://www.scsmathinternational.com
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন