এই হলো মীরার জীবন - কাহিনী । একটি জীবন যা ঈশ্বর অন্বেষণে নিঃশেষে নিয়োজিত , জগৎ ও জাগতিক ব্যাপারে মহা তেজস্বী ও সম্পূর্ণ উদাসীন , একটি জীবন যা মধুরভাবে ঈশ্বর সাধনায় পরম সিদ্ধ , যেমনটি ব্রজের গোপীরা লাভ করেছিলেন ; একটি জীবন যার কেন্দ্রবিন্দু হতে উৎসারিত অপ্রতিরোধ্য স্রোতধারায় আজও অভিস্নাত , উদ্দীপ্ত ভক্তিমার্গের অনুসারী সাধক ।
মীরা তো নিছক এক ব্যষ্টিমানবের হৃদ্ স্পন্দন নন , তিনি ভারতাত্মার প্রাণস্পন্দন । আর কেবল ভারতবর্ষই বা কেন ? সিদ্ধ মানবকে কি কোন জাতির বন্ধনে সীমায়িত করা যায় ? ঈশ্বর তাঁদের এবং তাঁরা ঈশ্বরের । কোন এক আঞ্চলিক কথ্যরূপই তাঁদের ভাষা নয় , তাঁদের ভাষা ঈশ্বরের জন্য আত্মার ব্যাকুলতা এখানে যদিও মীরার জীবনের কিছু ঘটনা বিবৃত করার প্রয়াস করা হয়েছে , তথাপি একথা স্বীকার করতেই হবে , তাঁর প্রকৃত জীবন আলেখ্য উপস্থিত করা আমাদের সাধ্যাতীত ।
কারণ মীরার প্রকৃতরূপ তাঁর নিত্যদিনের ঘটনা , পরম্পরায় প্রকাশিত নয় , সে রূপ প্রতিভাসিত তাঁর আত্মার ব্যাকুলতায় , তাঁর দুঃখ ও বিরহে , তাঁর রক্তাক্ত ও বেদনাদগ্ধ হৃদয়ের আর্তিতে ।
সেই প্রকৃত মীরার পরিচয় পেতে হলে কান পেতে শুনতে হবে তাঁর সেই সকল হৃদয় নিঙড়ানো সঙ্গীত কোন এক কৃষ্ণভক্ত আত্মনিবেদিত প্রেম সাধকের কন্ঠে ।
তখনই মীরার অন্তঃসত্তার কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যেতে পারে মাত্র । মীরা বেঁচে আছেন তাঁর সঙ্গীতকে অবলম্বন করে । বিদ্যুতের মৃত্যু যেমন সম্ভব নয় , তেমনই প্রেমের মৃত্যুর কথা আমরা ধারণা করতে পারি না । ভক্তি অবলম্বন করেই ভক্তের বেঁচে থাকা । ভক্তির প্রবাহ কখনো একমুখী নয় । তা হলো ভক্ত হৃদয়ে ভগবানের অভিসার এবং ভগবান হৃদয়ে ভক্তের অভিসার । ভক্তি হলো প্রিয় মিলন । ভক্তি হলো প্রিয়তমের প্রেমময় আলিঙ্গনে নিঃশেষে আত্মসমর্পণ । ভক্তি হলো যখন মনে হবে প্রিয়তম সঙ্গ ছেড়ে গেছেন তাঁর জন্য ব্যাকুল হওয়া । ভক্তি হলো প্রিয়তমের নিকট নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পিত করে দেওয়া ।
চার বছর বয়সে মীরা স্বপ্নে দেখেছিল গিরিধারীলালের সঙ্গে তাঁর বিবাহ অনুষ্ঠান । সে উপলক্ষে রচিত রাজ তোরণ এর দৃশ্যটিও তার অন্তরে ছবি হয়ে ফুটে আছে । তারপর , সেই যে ছোট্ট বালিকাটি মায়ের কাছে তার ' বর ' কে , এই প্রশ্নের উত্তরে জেনেছিল গিরিধারীলালাই তার স্বামী ; অতঃপর তার সারা জীবনে সেই একটি ধারণাই সে আঁকড়ে ছিল --
' মেরে তো গিরিধর গোপাল দুসরা ন কোঈ ।
যাকে সির মোর মুকুট মেরে পতি সোঈ . . . . . . '
যাকে সির মোর মুকুট মেরে পতি সোঈ . . . . . . '
' যাঁর শিরে শোভে ময়ূর মুকুট , সেই গিরিধারী গোপালই আমার স্বামী , তিনি ছাড়া আমার আর তো কেউ নেই । '
প্রিয়মিলনের পথে তাঁকে যে কত অন্তরায় অতিক্রম করতে হয়েছে , কত যাতনা সহ্য করতে হয়েছে , সে সকল প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর গানে । সত্য উচ্চারণে তিনি অতিরিক্ত পেলবতার আশ্রয় গ্রহণ করেননি । তাঁর প্রেমের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন নির্দ্বিধায় । সেখানে কোন লুকোচুরির প্রশ্রয় দেননি । তাঁর হৃদয় যাতনা এতই তীব্র ছিল যে জাগতিক ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হবার অবকাশ তাঁর ছিল না । তা তাঁকে করে তুলেছিল নির্ভীক , নিলাজ ।
গৃহ , নিরাপত্তা , মর্যাদা প্রভৃতি যে সকল বিষয় সাংসারিক মানুষের একান্ত কাঙ্ক্ষিত ধন , সে সকল হতে তিনি নিজেকে বঞ্চিত করে তাঁর প্রিয়তমের জন্য বরণ করেছিলেন সর্ববিধ নির্যাতন । কিন্তু এত করেও কি পাওয়া যায় তাঁর দর্শন অনুক্ষণ ? প্রেম তো দেওয়া হলো কিন্তু প্রিয়তমের দেখা কই ! মীরার যাতনার কি শেষ নেই ?
কত কাল তুমি গিয়াছ নাথ
কত যুগ হলো ভোর ;
তোমারি লাগি আঁখি হলো ভার
শান্তি নাহি মোর ।
মধুর তোমার কৃষ্ণ নামে
ব্যাকুল হিয়া সদাই কাঁপে
পথ চাহি তব ক্লান্ত আঁখি
এলে না তুমি তো প্রিয় ?
রাতগুলি মোর বিলম্বিত
প্রহর গণি বর্ষ সম
বিরহী প্রেমিকা পাঠায় প্রেম লিপি
প্রবাসী প্রেমিকের ঠিকানায় ।
কৃষ্ণ রাগে রঞ্জিতা মীরার দয়িত
আছেন তার অন্তরে ;
তাঁকে জানায় সে প্রেমবারতা
গানে গানে , একান্ত আলাপনে ।
কত যুগ হলো ভোর ;
তোমারি লাগি আঁখি হলো ভার
শান্তি নাহি মোর ।
মধুর তোমার কৃষ্ণ নামে
ব্যাকুল হিয়া সদাই কাঁপে
পথ চাহি তব ক্লান্ত আঁখি
এলে না তুমি তো প্রিয় ?
রাতগুলি মোর বিলম্বিত
প্রহর গণি বর্ষ সম
বিরহী প্রেমিকা পাঠায় প্রেম লিপি
প্রবাসী প্রেমিকের ঠিকানায় ।
কৃষ্ণ রাগে রঞ্জিতা মীরার দয়িত
আছেন তার অন্তরে ;
তাঁকে জানায় সে প্রেমবারতা
গানে গানে , একান্ত আলাপনে ।
লেখকঃ - Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন