১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

আপনি জানেন কি পবিত্র গঙ্গার জন্মের ইতিহাস ?

ভারতের প্রাচীন নদী গঙ্গা বহুযুগ ধরেই পূজিত হয়ে আসছেন মাতৃদেবী রূপে। পুরাণসাহিত্যে বহুভাবে তাঁর দেবীত্ত্ব ও মহাদেবীত্ত্বে মণ্ডিত করা হয়েছে। পদ্মপুরাণের এক কাহিনী অনুসারে প্রজাপতি ব্রহ্মার আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আদ্যাশক্তি থেকে উৎপন্ন হন সাতজন শক্তি – সাবিত্রী, সরস্বতী, লক্ষ্মী, উমা, শক্তিবীজা, তপস্বিনী ও গঙ্গা। 

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, দেবী গঙ্গা মূল প্রকৃতির প্রধানাংশদের অন্যতম। আবার মহাভাগবত পুরাণ মতে, মূলপ্রকৃতির বিদ্যারূপা শক্তি গঙ্গা, দুর্গা, সাবিত্রী, লক্ষ্মী ও সরস্বতী এই পঞ্চ অংশে বিভক্ত হন। জগতের কল্যানার্থে দেবী গঙ্গা মর্ত্যলোকে জন্মগ্রহণ করেন গিরিরাজ হিমালয় ও মেনকার কন্যা রূপে। গঙ্গা দেবী পার্বতীর অগ্রজা। একবার দেবতাদের অনুরোধে সঙ্গীতেশ্বর মহাদেব গান আরম্ভ করেন। সে গান শ্রবণ করে বিষ্ণুর দেহ বিগলিত হয়ে গঙ্গার জলে মগ্ন হতে থাকে। তখন ব্রহ্মা দ্রবীভূত বিষ্ণুময়ী গঙ্গাকে নিজ কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বামন অবতার কালে এই গঙ্গার জল দ্বারাই তিনি শ্রী হরির চরণ ধৌত করাতে গঙ্গা হন বিষ্ণুপদী। তারপর রাজা সগরের বংশধর ভগীরথের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দেবী যখন মর্ত্যে অবতরণ করেন তখন তিনি প্রাপ্ত করেন মহাদেবের জটায় তাঁর নিত্যস্থান। এই কারণেই আমরা বহুস্থানে পার্বতী ও গঙ্গার মধ্যে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ঈর্ষা মলিন সম্পর্ক দেখতে পাই। কিন্তু যিনি স্বীয় কণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা’ তাঁর আবার প্রতিদ্বন্দ্বী কে?


বৃহদ্ধর্মপুরানে এক অদ্ভূত সুন্দর কাহিনী আছে। একবার দেবী পার্বতীর সখী জয়া ও বিজয়া তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন সকল তীর্থ দর্শন ও তীর্থস্নান করাতে। দেবী তাঁদের অভিলাষপূর্তির আশ্বাস প্রদান করে তাঁদের গঙ্গাতটে নিয়ে যান ও সেখানে গঙ্গা দর্শন করিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। সখীদ্বয় বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, দেবী তাঁদের একটিমাত্র তীর্থ দর্শন কেন করালেন। দেবী পার্বতী তখন বলেন যে গঙ্গা সর্বতীর্থজননী ও সর্বধর্মের প্রসবিত্রী। তখন জয়া-বিজয়া গঙ্গাস্তুতি করেন ও অবশেষে দেবী গঙ্গা চতুর্ভুজা মকরবাহিনী রূপে আবির্ভূত হন। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবাদি সকল দেবতা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর আরাধনা করেন ও সকল তীর্থ মূর্তিমান হয়ে গঙ্গার দেহ থেকে উৎপন্ন হয়ে আবার তাঁরই মধ্যে বিলীন হন। সব শেষে গঙ্গা ও পার্বতী হন একরূপা। জয়া-বিজয়া উপলব্ধি করেন যে গঙ্গা ও দুর্গা স্বরূপতঃ এক ও অভিন্ন।
.
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া


কার্টেসীঃ তন্ময় সরকার

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।