‘হে ভারত (অর্জুন), ওঠ, হৃদয়ের এই দুর্বলতা ত্যাগ কর! উঠিয়া দাঁড়াও,সংগ্রাম কর। -এই তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোকটি দ্বারাই গীতার সূচনা। যুক্তিতর্ক করিতে গিয়া অর্জুনের উচ্চতর নৈতিক ধারনার প্রসঙ্গ আনিলেনঃ প্রতিরোধ করা অপেক্ষা প্রতিরোধ না করা কত ভাল, ইত্যাদি। তিনি নিজেকে সমর্থক করিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু তিনি কৃষ্ণকে ভুল বুঝাইতে পারিলেন না। কৃষ্ণ পরমাত্মা, স্ময়ং ভগবান্। তিনি অবিলম্বেই অর্জুনের যুক্তির আসল রূপ ধরিযা ফেলিলেন-ইহা দুর্বলতা। অর্জুন নিজের আত্মীয়স্বজনকে দেখিয়া অস্ত্রঘাত করিতে পারিতেছেন না।
অর্জুনের হৃদয়ে কর্তব্য আর মায়ার দ্বন্দ্ব। আমরা যতই মমতার নিকটবর্তী হই, ততই ভাবাবেগে নিমজ্জিত হই। ইহাকে আমারা ভালবাসা বলি। আসলে ইহা আত্ম-সম্মোহন। জীবজন্তুর মতো আমরাও আবেগের অধীন। বৎসর জন্য গাভী প্রান দিতে পারে -প্রত্যকেকটি জীবই পারে।তাহাতে কি ? অন্ধ পক্ষিসুলভ ভাবাবেগ পূর্নত্ব লইয়া যাইতে পারে না। অনন্তচৈতন্যলাভই মানবের লক্ষ্য। সেখানে আবেগের স্থান নাই, ভাবালুতার স্থান নাই, ইন্দ্রিয়গত কোন কিছু স্থান নাই,সেখানে কেবল বিশুদ্ধ বিচারের আলো, সেখানে মানুষ আত্মস্বরূপে দণ্ডায়মান।
অর্জুন এখন আবেগের অধীন। তাঁহার যাহা হওয়া উচিত, তিনি তাহা নন, প্রজ্ঞার অনন্ত আলোক কর্মরত আত্ম-নিয়ন্ত্রিত জ্ঞানী ঋষি হইতে হইবে। হৃদয়ের তাড়নায় মস্তিষ্ককে বিচলিত করিয়া,নিজেকে ভ্রান্ত করিয়া, ‘মমতা' প্রভৃতি সুন্দর আখ্যায় নিজের দুর্বলতাকে আবৃত করিবার চেষ্টা করিয়া তিনি শিশুর মতো হইয়াছেন, পশুর মতো হইয়াছেন। কৃষ্ণ তাহা দেখিতেছেন। অর্জুন সমান্য বিদ্যাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মতো কথা বলিতেছেন, বহু যুক্তির অবতারনা করিতেছেন; কিন্তু তিনি যাহা বলিতেছেন ,তাহা অজ্ঞের কথা।
জ্ঞানী ব্যাক্তি জীবিত বা মৃত কাহারও জন্যই শোক প্রকাশ করেননা। তুমি মরিতে পার না; আমিও না। এমন সময় কখনও ছিল না, যখন আমরা ছিলাম না। এমন সময় কখনও আসিবে না, যখন আমরা থাকিব না। ইহজীবনে মানুষ যেমন শৈশবস্থা হইতে আরম্ভ করিয়া ক্রমে যৌবন ও বার্ধক্য অতিক্রম করে, তেমনি মৃত্যুতে সে দে্হান্তরে গ্রহণ করে মাত্র। জ্ঞানী ব্যক্তি ইহাতে মুহ্যমান হইবে কেন? এই যে আবেগপ্রবন তোমায় পাইয়া বসিয়াছে, ইহার মূল কোথায়? ইন্দ্রিয়গ্রামে। শীত ও উষ্ণ, সুখ ও দুঃখ সকলের অস্তিত্ব ইন্দ্রিয়স্পর্শ হইতেই অনুভুত হয়। তাহারা আসে এবং যায়। এইক্ষনে মানুষ দুঃখী, আবার পরক্ষনেই সুখী। এরূপ অবস্থায় সে আত্মার স্বরুপ উপলব্ধি করিতে পারে না।
যাহা চিরকাল আছে(সৎ), তাহা নাই-এরুপ হইতে পারে না; আবার যাহা কখনও নাই (অসৎ), তাহা আছে-এরূপ হইতে পারেনা। সুতরাং যা্হা এই সমগ্র বিশ্বকে পরিব্যপ্ত করিযা আছে, তাহা আদি অন্তহীন অবিনাশী বলিয়া জানিবে। এই বিশ্বে এমন কিছুই নাই যাহা অপরিবর্তনীয় আত্মাকে পরিবর্তিত করিতে পারে। এই সময়ে আদি ও অন্ত আছে, কিন্তু যিনি দেহের মধ্যে বাস করেন, তিনি অনাদি ও অবিনশ্বর।’
- স্বামী বিবেকানন্দ।
বাণী ও রচনা ৮ম খণ্ড
অর্জুনের হৃদয়ে কর্তব্য আর মায়ার দ্বন্দ্ব। আমরা যতই মমতার নিকটবর্তী হই, ততই ভাবাবেগে নিমজ্জিত হই। ইহাকে আমারা ভালবাসা বলি। আসলে ইহা আত্ম-সম্মোহন। জীবজন্তুর মতো আমরাও আবেগের অধীন। বৎসর জন্য গাভী প্রান দিতে পারে -প্রত্যকেকটি জীবই পারে।তাহাতে কি ? অন্ধ পক্ষিসুলভ ভাবাবেগ পূর্নত্ব লইয়া যাইতে পারে না। অনন্তচৈতন্যলাভই মানবের লক্ষ্য। সেখানে আবেগের স্থান নাই, ভাবালুতার স্থান নাই, ইন্দ্রিয়গত কোন কিছু স্থান নাই,সেখানে কেবল বিশুদ্ধ বিচারের আলো, সেখানে মানুষ আত্মস্বরূপে দণ্ডায়মান।
অর্জুন এখন আবেগের অধীন। তাঁহার যাহা হওয়া উচিত, তিনি তাহা নন, প্রজ্ঞার অনন্ত আলোক কর্মরত আত্ম-নিয়ন্ত্রিত জ্ঞানী ঋষি হইতে হইবে। হৃদয়ের তাড়নায় মস্তিষ্ককে বিচলিত করিয়া,নিজেকে ভ্রান্ত করিয়া, ‘মমতা' প্রভৃতি সুন্দর আখ্যায় নিজের দুর্বলতাকে আবৃত করিবার চেষ্টা করিয়া তিনি শিশুর মতো হইয়াছেন, পশুর মতো হইয়াছেন। কৃষ্ণ তাহা দেখিতেছেন। অর্জুন সমান্য বিদ্যাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মতো কথা বলিতেছেন, বহু যুক্তির অবতারনা করিতেছেন; কিন্তু তিনি যাহা বলিতেছেন ,তাহা অজ্ঞের কথা।
জ্ঞানী ব্যাক্তি জীবিত বা মৃত কাহারও জন্যই শোক প্রকাশ করেননা। তুমি মরিতে পার না; আমিও না। এমন সময় কখনও ছিল না, যখন আমরা ছিলাম না। এমন সময় কখনও আসিবে না, যখন আমরা থাকিব না। ইহজীবনে মানুষ যেমন শৈশবস্থা হইতে আরম্ভ করিয়া ক্রমে যৌবন ও বার্ধক্য অতিক্রম করে, তেমনি মৃত্যুতে সে দে্হান্তরে গ্রহণ করে মাত্র। জ্ঞানী ব্যক্তি ইহাতে মুহ্যমান হইবে কেন? এই যে আবেগপ্রবন তোমায় পাইয়া বসিয়াছে, ইহার মূল কোথায়? ইন্দ্রিয়গ্রামে। শীত ও উষ্ণ, সুখ ও দুঃখ সকলের অস্তিত্ব ইন্দ্রিয়স্পর্শ হইতেই অনুভুত হয়। তাহারা আসে এবং যায়। এইক্ষনে মানুষ দুঃখী, আবার পরক্ষনেই সুখী। এরূপ অবস্থায় সে আত্মার স্বরুপ উপলব্ধি করিতে পারে না।
যাহা চিরকাল আছে(সৎ), তাহা নাই-এরুপ হইতে পারে না; আবার যাহা কখনও নাই (অসৎ), তাহা আছে-এরূপ হইতে পারেনা। সুতরাং যা্হা এই সমগ্র বিশ্বকে পরিব্যপ্ত করিযা আছে, তাহা আদি অন্তহীন অবিনাশী বলিয়া জানিবে। এই বিশ্বে এমন কিছুই নাই যাহা অপরিবর্তনীয় আত্মাকে পরিবর্তিত করিতে পারে। এই সময়ে আদি ও অন্ত আছে, কিন্তু যিনি দেহের মধ্যে বাস করেন, তিনি অনাদি ও অবিনশ্বর।’
- স্বামী বিবেকানন্দ।
বাণী ও রচনা ৮ম খণ্ড
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন