২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

অনেকেই প্রশ্ন করেন বেদে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কেন প্রতিমা পূজা করে?

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী প্রতিমাপূজা আরাধনার সূচনাপর্বের বিষয়। প্রথমেই বলে রাখা উচিৎ, হিন্দুদের পূজা “মূর্তি পূজা” নয়, বরং এটা সঠিকভাবে বলা উচিত “প্রতিমা পূজা”।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কখনোই মূর্তিকে পূজা করে না; বরঞ্চ মূর্তির মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঈশ্বরকে আহ্বান করে ঈশ্বরকেই পূজা করা হয়। এজন্যই বলা হয় হিন্দুরা ‘মূর্তিকে’ নয়, ‘মূর্তিতে’ পূজা করে।

প্রতিমার মাধ্যমে ঈশ্বরের পূজা করার অর্থ হল ঈশ্বরের প্রতি নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ় করা। বেদ যখন রচিত হয় তখন মানুষের মধ্যে তেমন কোন কর্মচঞ্চলতা ছিল না। যজ্ঞানুষ্ঠানই ছিল ঋষিদের প্রধান কর্ম। যজ্ঞের মাধ্যমে হোমানল জ্বালিয়ে তখন দেবতাদের আহ্বান করা হত, অগ্নির মাধ্যমেই দেবতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হতো পুষ্পাঞ্জলি। তাই, বেদে প্রতিমা পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না।

এই কলিযুগে সনাতন ধর্মের নিরাকার উচ্চ স্তরের উপাসনা প্রায় অসম্ভব। কারণ, কলি যুগে আমাদের মন এতই চঞ্চল যে একে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। মনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, চোখের মধ্যে কোন বস্তুর ছবি ফেলা। পরবর্তীতে, ওই ছবিটি যদি নাও থাকে তাহলেও চোখের সামনে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে। তাই, সাধারণ মনোনিবেশ তথা চিত্তকে বিষয়বাসনা থেকে সরিয়ে একাগ্রচিত্তে ভগবানকে স্মরণ করার জন্য প্রতিমাপূজা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।

এর উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি শিশুকে প্রথম পাঠদানের সময় অনেক রঙিন ছবি সম্বলিত বই দেওয়া হয় যাতে ঐ বইটির প্রতি শিশুর আকর্ষণ বাড়ে। এখানে ছবি মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে বর্ণমালা। ঠিক তেমনি আমাদের চঞ্চল মন প্রতিমার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখানে, ঈশ্বরের করুণা লাভই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।

পরিশেষে একটি কথাই বলা যায় সনাতন ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদে নিরাকার উপাসনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, কলিযুগের জীবের উদ্দেশ্যে গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন যে, অব্যক্ত উপাসনা দেহাভিমানী জীবের পক্ষে সম্ভবপর নয়। তাই, দেহাভিমানী জীবের জন্য সগুণ সাকার উপাসনাই শ্রেষ্ঠ ও সহজতর। আর এই সকল কারণেই, বর্তমান কলিযুগে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিমা পূজার মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করে থাকে।

==========================

👉 লাইক এবং শেয়ার করে সকলকে জানার জন্য সুযোগ করে দিন।

(C) Pinakesh Chakraborty‎
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।