[১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অপরাহ্নে ধর্ম-মহাসমিতির পঞ্চম দিবসের অধিবেশনে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বিগণ স্ব স্ব ধর্মের প্রাধান্য-প্রতিপাদনের জন্য বাগ্বিতণ্ডায় নিযুক্ত হন; অবশেষে স্বামী বিবেকানন্দ এই গল্পটি বলিয়া সকলের মুখ বন্ধ করিয়া দেন।]
আমি আপনাদিগকে একটি ছোট গল্প বলিব। এইমাত্র যে সুবক্তা ভাষণ শেষ করিলেন, তাঁহার কথা আপনারা সকলেই শুনিয়াছেন—‘এস আমরা পরস্পরের নিন্দাবাদ হইতে বিরত হই।’ মানুষে মানুষে সর্বদা এতটা মতভেদ থাকিবে ভাবিয়া বক্তা-মহাশয় বড়ই দুঃখিত। তবে আমি আপনাদের একটি গল্প বলি, হয়তো তাহাতেই বুঝা যাইবে—এই মতভেদের কারণ কি।
একটি ব্যাঙ একটি কুয়ার মধ্যে বাস করিত। সে বহুকাল সেইখানেই আছে। যদিও সেই কুয়াতেই তাহার জন্ম এবং সেইখানেই সে বড় হইয়া উঠিয়াছে, তথাপি ব্যাঙটি আকারে অতিশয় ক্ষুদ্রই ছিল। অবশ্য তখন বর্তমান কালের ক্রমবিকাশবাদীরা কেহ ছিলেন না, তাই বলা যায় না, অন্ধকার কূপে চিরকাল বাস করায় ব্যাঙটি দৃষ্টিশক্তি হারাইয়াছিল কিনা; আমরা কিন্তু গল্পের সুবিধার জন্য ধরিয়া লইব তাহার চোখ ছিল। আর সে প্রতিদিন এরূপ উৎসাহে কুয়ার জল কীট ও জীবাণু হইতে মুক্ত রাখিত যে, সেরূপ উৎসাহ আধুনিক কীটাণুতত্ত্ববিদ্গণেরও শ্লাঘার বিষয়। এইরূপে ক্রমে ক্রমে সে দেহে কিছু স্থূল ও মসৃণ হইয়া উঠিল। একদিন ঘটনাক্রমে সমুদ্রতীরের একটি ব্যাঙ আসিয়া সেই কূপে পতিত হইল।
কূপমণ্ডূক জিজ্ঞাসা করিল, ‘কোথা থেকে আসা হচ্ছে?’
‘সমুদ্র থেকে আসছি।’
‘সমুদ্র? সে কত বড়? তা কি আমার এই কুয়োর মত বড়?’ এই বলিয়া কূপমণ্ডূক কূপের এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্তে লাফ দিল।
তাহাতে সাগরের ব্যাঙ বলিল, ‘ওহে ভাই, তুমি এই ক্ষুদ্র কূপের সঙ্গে সমুদ্রের তুলনা করবে কি করে?’
ইহা শুনিয়া কূপমণ্ডূক আর একবার লাফ দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমার সমুদ্র কি এত বড়?’
‘সমুদ্রের সঙ্গে কুয়োর তুলনা করে তুমি কি মূর্খের মত প্রলাপ বকছ?’
ইহাতে কূপমণ্ডূক বলিল, ‘আমার কুয়োর মত বড় কিছুই হতে পারে না, পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় আর কিছুই থাকতে পারে না; এ নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী, অতএব একে তাড়িয়ে দাও।’
হে ভ্রাতৃগণ, এইরূপ সংকীর্ণ ভাবই আমাদের মতভেদের কারণ। আমি একজন হিন্দু—আমি আমার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছি এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ বলিয়া মনে করিতেছি! খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী তাঁহার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন! মুসলমানও নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন! হে আমেরিকাবাসিগণ, আপনারা যে আমাদের এই ক্ষুদ্র জগৎগুলির বেড়া ভাঙিবার জন্য বিশেষ যত্নশীল হইয়াছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিতে হইবে। আশা করি, ভবিষ্যতে ঈশ্বর আপনাদের এই মহৎ উদ্দেশ্য-সম্পাদনে সহায়তা করিবেন।
আমি আপনাদিগকে একটি ছোট গল্প বলিব। এইমাত্র যে সুবক্তা ভাষণ শেষ করিলেন, তাঁহার কথা আপনারা সকলেই শুনিয়াছেন—‘এস আমরা পরস্পরের নিন্দাবাদ হইতে বিরত হই।’ মানুষে মানুষে সর্বদা এতটা মতভেদ থাকিবে ভাবিয়া বক্তা-মহাশয় বড়ই দুঃখিত। তবে আমি আপনাদের একটি গল্প বলি, হয়তো তাহাতেই বুঝা যাইবে—এই মতভেদের কারণ কি।
একটি ব্যাঙ একটি কুয়ার মধ্যে বাস করিত। সে বহুকাল সেইখানেই আছে। যদিও সেই কুয়াতেই তাহার জন্ম এবং সেইখানেই সে বড় হইয়া উঠিয়াছে, তথাপি ব্যাঙটি আকারে অতিশয় ক্ষুদ্রই ছিল। অবশ্য তখন বর্তমান কালের ক্রমবিকাশবাদীরা কেহ ছিলেন না, তাই বলা যায় না, অন্ধকার কূপে চিরকাল বাস করায় ব্যাঙটি দৃষ্টিশক্তি হারাইয়াছিল কিনা; আমরা কিন্তু গল্পের সুবিধার জন্য ধরিয়া লইব তাহার চোখ ছিল। আর সে প্রতিদিন এরূপ উৎসাহে কুয়ার জল কীট ও জীবাণু হইতে মুক্ত রাখিত যে, সেরূপ উৎসাহ আধুনিক কীটাণুতত্ত্ববিদ্গণেরও শ্লাঘার বিষয়। এইরূপে ক্রমে ক্রমে সে দেহে কিছু স্থূল ও মসৃণ হইয়া উঠিল। একদিন ঘটনাক্রমে সমুদ্রতীরের একটি ব্যাঙ আসিয়া সেই কূপে পতিত হইল।
কূপমণ্ডূক জিজ্ঞাসা করিল, ‘কোথা থেকে আসা হচ্ছে?’
‘সমুদ্র থেকে আসছি।’
‘সমুদ্র? সে কত বড়? তা কি আমার এই কুয়োর মত বড়?’ এই বলিয়া কূপমণ্ডূক কূপের এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্তে লাফ দিল।
তাহাতে সাগরের ব্যাঙ বলিল, ‘ওহে ভাই, তুমি এই ক্ষুদ্র কূপের সঙ্গে সমুদ্রের তুলনা করবে কি করে?’
ইহা শুনিয়া কূপমণ্ডূক আর একবার লাফ দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমার সমুদ্র কি এত বড়?’
‘সমুদ্রের সঙ্গে কুয়োর তুলনা করে তুমি কি মূর্খের মত প্রলাপ বকছ?’
ইহাতে কূপমণ্ডূক বলিল, ‘আমার কুয়োর মত বড় কিছুই হতে পারে না, পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় আর কিছুই থাকতে পারে না; এ নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী, অতএব একে তাড়িয়ে দাও।’
হে ভ্রাতৃগণ, এইরূপ সংকীর্ণ ভাবই আমাদের মতভেদের কারণ। আমি একজন হিন্দু—আমি আমার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছি এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ বলিয়া মনে করিতেছি! খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী তাঁহার নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন! মুসলমানও নিজের ক্ষুদ্র কূপে বসিয়া আছেন এবং সেটিকেই সমগ্র জগৎ মনে করিতেছেন! হে আমেরিকাবাসিগণ, আপনারা যে আমাদের এই ক্ষুদ্র জগৎগুলির বেড়া ভাঙিবার জন্য বিশেষ যত্নশীল হইয়াছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিতে হইবে। আশা করি, ভবিষ্যতে ঈশ্বর আপনাদের এই মহৎ উদ্দেশ্য-সম্পাদনে সহায়তা করিবেন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন