অনিচ্ছা বা অপরের ইচ্ছায় কৃতকর্মকে ভগবানের লীলা মনে করুন কারণ সর্ববস্তুতে তো ভগবান অবস্থায় করেন । তাই তার দ্বারা কর্ম সবই ভগবানের লীলা । এই ভাব আসতে পারলে পরম শান্তি সুনিশ্চিত হয় , কেবল তা আনয়নের প্রয়োজন । আপনি যে কোনো কর্মে যুক্ত হতে পারেন তাতে বলবার কিছু নেই কিন্তু অন্তরে এই ভাব রাখা প্রয়োজন ।
এতো আপনার কিছুই খরচ করতে হয় না ; করতেও কোনো পরিশ্রম নেই বরং তা সহজ - সরল এবং আপনার মধ্যে যদি কোনো রকম দোষও বিদ্যামান থাকে তাহলে এই ভাবের মধ্যে এত শক্তি আছেি যে তাও ভস্ম করে ফেলবে । কেবল আপনার বুদ্ধিতে এই পবিত্রতম ভাব সতত জাগ্রত থাকতে হবে যে ,____ ' সব কিছু তত্ত্বত এক হরি , তাঁর দ্বারা যে কর্মসৃষ্টি হয় সবই তাঁর লীলা । '
যেভাবে স্বর্ণকার সুবর্ণ সহযোগে নানারকম অলংকার প্রস্তুত করে কিন্তু অলংকার প্রস্তুত করবার সময়ে তার বুদ্ধিতে স্থির নিশ্চিত থাকে যে তা সুবর্ণ আর সুবর্ণ গলিয়ে ফেলবার সময়েও তা সুবর্ণ , এই স্থির ধারণা থাকে । তেমনই আমাদেরও ' সবই এক ভগবান ' __ এ ভাবে সতত অধিরষ্ঠান করা উচিাত । এখন যে আমাদের বুদ্ধিতে জগতের নানাভাব আছে তা না হয়ে এক ভগবদ্ভাব হওয়া দরকার ।
আগো বলা হয়েছে যে ' স্বল্প সময় অবশিষ্ট আছো ' এই কথায় চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই । যেটুকু সময় অবশিষ্ট আছো তাতেই আমাদের উদ্ধার হওয়া সম্ভব ।
আপনি হয়তো জিজ্ঞাসা করবেন যে যার আয়ুতে দুই - এক দিনই অবশিষ্ট তার কী উদ্ধার হওয়া সম্ভব ? দু - এক দিন তো অনেকটা সময় ; যার দুই এক ঘন্টা হাতে আছো তারও উদ্ধার হতে পারে ।
ভাগবতকার বলেন -----
কিং প্রমত্তস্য বহুভিঃ পরোক্ষৈর্হায়নৈরিহ
বরং মুহূর্তং বিদিতং ঘটেত শ্রেয়সে যতঃ ।।
খট্বাঙ্গো নাম রাজার্সির্জ্ঞাত্বেয়ত্তামিহায়ুষঃ ।
মুহূর্তাৎ সর্বমুৎসৃজ্য গতবানভয়ং হরিম্ ।। ( ২\ ১\ ১২ -১৩ )
বরং মুহূর্তং বিদিতং ঘটেত শ্রেয়সে যতঃ ।।
খট্বাঙ্গো নাম রাজার্সির্জ্ঞাত্বেয়ত্তামিহায়ুষঃ ।
মুহূর্তাৎ সর্বমুৎসৃজ্য গতবানভয়ং হরিম্ ।। ( ২\ ১\ ১২ -১৩ )
অর্থ = ' প্রমত্ত অর্থাৎ ঈশ্বর - বিমুখ এবং বিষয়াসক্ত থেকে জগতে বহুকাল বেঁচে থাকায় কী লাভ ? আমাদের তো যাতে কল্যাণ হয় এমন ( ভগবদ্ভক্তিযুক্ত ) মুহূর্তের জীবনই ভালো মনে হয় । খট্বাঙ্গ নামের রাজর্ষির যখন নিজ জীবনের অন্ত বিদিত হয় তখন তিনি এক মুহূর্তে এইখানেই সর্বস্ব ছেড়ে অভয়দানকারী শ্রীহরিকে লাভ করলেন । '
জনৈক কবি জানিয়েছেন ---
জীবন থোড়া হী ভলা , জো হরি - সুমিরন
হোয় লাখ বরসকা জীবনা লেখে ধরৈ স কোয় ।।
হোয় লাখ বরসকা জীবনা লেখে ধরৈ স কোয় ।।
অর্থাৎ কেবল এর একটাই শর্ত আছেে - শ্রীভগবানকে কখনো ত্যাগ করবে না । তাঁকে সতত স্মরণ - মনন রাখবে । ভগবান গীতাতে বলেছেন -- ' মচ্চিত্তঃ সততং ভব ' ( ১৮\ ৫৭ ) -- চিত্ত সতত আমাতে সমাহিত রাখবে ।
যে সতত ঈশ্বরকে স্মরণ - মনন করে তাকে ঈশ্বর কেমন করে ছাড়তে পারেন ? সতত ভগবৎ - চিন্তায় নিমগ্ন ব্যক্তির অন্তকালে ভগবানের স্মৃতি থাকবেই আর অন্তকালে তাঁকে মনে থাকলে উদ্ধার হবেই এতেণ কোনো সন্দেহ নেই । স্বয়ং ভগবান বলেন --
অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্ত্বা কলেবরম্ ।
যঃ প্রয়াতি মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ।। ( গীতা ৮\ ৫ )
যঃ প্রয়াতি মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ।। ( গীতা ৮\ ৫ )
অর্থাৎ ' যিনি মুত্যুকালে আমাকেই স্মরণ করতে করতে দেহত্যাগ করেন তিনি আমাকেই লাভ করেন - এতে কোনো সংশয় নেই । '
আপনি বলবেন যে সতত স্মরণ হয় না । তার কারণ এই যে , শ্রদ্ধার অভাবে , সতত স্মরণের রহস্য ও প্রভাব আপনি জানেন না । নদীতে যে ডুবে যাচ্ছে সে যদি নৌকায় দড়ি ধরতে পারে তাহলে কেউ বললে সে তা কখনো ছাড়তে পারে ? কখনো নয় ।
তেমনই যদি ভগবানে আপনার বিশ্বাস থাকে তাহলে আপনি ভগবানকে ছাড়তে পারেন কী ? এই জগৎ সাগরসম । তাতে ভগবানের চরণই সুদৃঢ় নৌকা । যে ব্যক্তি ভগবানের পাদপদ্ম ভক্তিভাবে ধারণ করে সে অনায়াসেই পার হতে পারে । সেই সর্বশক্তিমান ভগবানের চরণযুগলকে মনে ধরে রাখো এবং সতত তার স্মরণ - মনন করো । তাই শরণাগতি । তার নামই ভক্তি ।
যদি বলেন যে সতত তাঁকে স্মরণে রাখা কঠিন তাহলে বলা হবে যে , তা ঠিক নয় । আপনি একেড় কঠিন মনে করে রেখেছেন তাই তা কঠিন মনে হয় । আপনি এর প্রকৃত তত্ত্ব , রহস্য ও প্রকৃত প্রেম এখনো বুঝতে পারেননি ; যদি বুঝতেন তাহলে তা কখনই ছাড়তে পারতেন না ।
যদি আপনি বুঝতেন যে যেই ভগবৎ - চিন্তা বন্ধ হবে তখনই আপনি সমুদ্রে তলিয়ে যাবেন তাহলে আপনার আর ভুল হত না । নিমজ্জমান ব্যক্তি এই তত্ত্বকে জানে যে নৌকাতেই তার রক্ষা সম্ভব । তাই একবার তা ধরে ফেললে সে তারপর তা ছাড়ে না ।
যদি বলেন আমরা তো পাপী ও আমাদের উদ্ধার এত তাড়াতাড়ি কেমন করে সম্ভব , তাহলে ভয় পেলে কি হবে ।
ভগবান স্বয়ং বলেন --
অপির চেৎ সুদুরাচারো ভজতে মামন্যন্যভাক্ ।
সাধুরের স মন্তব্যঃ সম্যগ্ব্যবসিতো হি স । ।
সাধুরের স মন্তব্যঃ সম্যগ্ব্যবসিতো হি স । ।
ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্মাত্মা শশ্বচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি ।
কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি ।। ( গীতা ৯\ ৩০ -৩১ )
কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি ।। ( গীতা ৯\ ৩০ -৩১ )
অর্থাৎ ' অতিা দুরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্য ভক্তির দ্বারা আমার ভজনা করে তবে তাকে সাধু বলে জানবে কারণ তার সংকল্প অতি শুভ । সেই ব্যক্তি শীঘ্রই ধর্মাত্মা হয়ে যায় এবং শাশ্বত শান্তি লাভ করে । হে কৌন্তেয় ! তুমি নিশ্চিত জেনো যে আমার ভক্ত কখনো বিনষ্ট হয় না । '
যে প্রাণপণে সাধনায় যুক্ত হয় ,সে কখনো হতোদ্যম হয় না । অকর্মণ্য হয় না -- গড়িমসি করে না , তার জন্য কোথাও কোনো বাধা আসলেও ভগবানের কৃপায় সে বাধা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না । যার একমাত্র ভগবানেই বিশ্বাস , যার বুদ্ধিতে এই ভাব গেঁথে গিয়েছে যে ভগবান দ্বারাই আমার উদ্ধার হবে এবং দৃঢ় বিশ্বাসে ভগবানেরই শরণাগত হয়েছে , তার কাছে যত কম সময়ই থাক , সে যেমন পাপীই হোক , ভক্তির এমন শক্তি যে তার উদ্ধার হয়ে যায় ।
লেখকঃ Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন