শ্রীভর্তৃহরি বলেন –
আদিীতাস্য গতাগতৈরহরহঃ সংক্ষীয়তে জীবিতং
ব্যাপারৈর্বহুকার্যভারগুরুভিঃ কালো ন বিজ্ঞায়তে ।
দৃষ্ট্বা জন্মজরাবিপত্তিমরণং ত্রাসশ্চ নোৎপদ্যতে
পীত্বা মোহময়ীং প্রমাদমদিরামুন্মত্তভূতং জগৎ ।।
অথাৎ , " সূর্যের উদয় ও অস্ত গমনাগমন দ্বারা প্রতিদিন আয়ুক্ষয় হয়ে থাকে কিন্ত ব্যবসা - ব্যবহার সম্বন্ধিত অনেক গুরুভারের জন্য মানুষ টের পায় না যে কতটা সময় অতিাবাহিত হয়ে গিয়েছে এবং জন্ম , বৃদ্ধাবস্থা , বিপত্তি ও মৃত্যু দেখেও তার ভয় উৎপন্ন হয় না । এইভাবে সমগ্র জগৎ প্রমাদরূপ মোহময় সুরা পান করে উন্মত্ত হয় অর্থাৎ সে নিজ কর্তব্যাকর্তব্যর বিবেক বিরহিত হয়ে প্রমত্তসম অজ্ঞান নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে । "
এই অবস্থায় প্রমাদে মত্ত না হয়ে সাবধানে আমাদের বিচার করা উচিাত যে আমাদের জীবনের কতটা সময় চলে গেল - আয়ু কতটা কমে গেল । ভেবে দেখলে জানা যাবে যে আমাদের অনোকটা সময় কেটে গিয়েছে , যা মুখ্য উদ্দেশ্য , যা প্রথম কর্তব্য তার দিকে দৃষ্টি রেখে ত্বরিৎ গতিতে সেই পথে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে ।
বঙ্গদেশের এক ঘটনা শোনা যাক -- কতদূর সত্য জানা নেই । এক ধনী ব্যবসায়ীর গৃহে এক দুগ্ধ বিক্রেতা গয়লানি এল আর সে দুধ দিয়ে তার দাম চাইল । হিসাবরক্ষক তাকে বললেন - ' প্রথমে বাজারে ঘুরে আয় , ঘরে যাওয়ার সময়ে পয়সা নিয়ে যাস । ' সেই গয়লানি তখন চলে গেল ও বাজারের কাজ সেরে আবার ব্যবসায়ীর গৃহে এল আর হিসাবরক্ষকের কাছে পয়সা চাইল । তিনি ব্যস্ত ছিলেন । দাঁড়াতে বললেন ।
সেই গয়লানি দুই তিন বার পয়সা চাইল কিন্তু হিসাবরক্ষক পয়সা দিলেন না । তখন সেই গয়লানি দুঃখিত হয়ে বলল - ' আর বেলা নাই । ' আমাকে বহুদূর যেতে হবে সূর্য গেল বলে । ' ধনী ব্যবসায়ী কাছেই বসে কাজ করছিলেন । সেই গয়লানির করুণ কথাগুলি তাঁর প্রাণে বাজল । তিনি হিসাবরক্ষককে বলে তার পয়সা দিয়ে দিলেন ।
ধনী ব্যবসায়ীর সেই কথা মনে ধরল । তিনি তখনই হিসাবরক্ষককে বললেন -- ' আমার দেনা - পাওনা বের করো ও ব্যবসা গুটিয়ে দাও । ' হিসাবরক্ষক তাঁর কথা শুনে আশ্চর্য হলেন আর বললেন -- ' আপনি এমন কথা কেন বলছেন ? '
ব্যবসায়ী বললেন -- ' তুমি শুনলে না , গয়লানি কী বলল ? ' সে বলল - ' আর বেলা নাই । ' কথাটা খুব সত্য । জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছি ভাই ! আমার আর সময় তো নেই । 'এই বলে কাজকর্ম সব বুঝিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী গৃহ ত্যাগ করলেন আর নিজ শেষ জীবন অহর্নিশ হরিনাম করে কাটালেন ।
আমাদের এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করা উচিবত । আমাদের আয়ু প্রতিক্ষণে ক্ষীণ হচ্ছে । যার বয়স চল্লিশ - পঞ্চাশ বৎসর তার তো জীবনের বেশির ভাগ আয়ু কেটেই গেছে কিছু অল্পই বাকি আছো । যার কম বয়স তারও নিশ্চিন্ত থাকবার উপায় আছেে কী ? মানবজীবনের পূর্ণায়ু শত বৎসর বলা হয়ে থাকে । কিন্তু এই যুগে পূর্ণায়ু আয়ু পার হওয়া কঠিন ।
আজকাল তো আশি বৎসরকেই পূর্ণায়ু ধরা উচিত এবং এই পরিমিত আয়ুর বিচারে আমাদের অল্প সময়ই বাকী আছে । তাই চৈতন্যলাভ করে অতি শীঘ্র আমাদের আসল লক্ষ্যে পৌঁছানো উচিাত । আমরা সতর্ক হয়ে অবশিষ্ট দিন এমনভাবে কাটাই যাতে জীবন উন্নত হয় ।
তাই একটা দামি কথা জেনে রাখা ভালো যা সকল শ্রেণীর ব্যক্তি করতে পারে এবং তা সহজ - সরল । এতো বেশি বুদ্ধির দরকার হয় না , বেশি পরিশ্রমেরও দরকার নেই । নির্গুণ নিরাকার উপাসনার জন্য তীব্র বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , এতে তাও প্রয়োজন নেই । আর তা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি অন্যন্যা ভক্তি ।
সহজ ও সরল পথ হলো ঈশ্বরের অনন্য ভক্তি । তা যেন অন্ধকে লাঠি ধরে নিয়ে গিয়ে পার করে দেওয়ার মতন সহজ - সরল ও নিশ্চিত পথ । ভগবদ্ভক্তির এই পথ এতই সহজ , নিষ্কন্টক ও অন্ধকাররহিত যে তাতে কোথাও হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই ।
শ্রীমদ্ভাগবতে ( ১১\ ২\ ৩৪ - ৩৫ ) বলা হয়েছে --
যে বৈ ভগবতা প্রোক্তা উপায়া হ্যাত্মলব্ধয়ে ।
অজ্ঞঃ পুংসামবিদুষাং বিদ্ধি ভাগবতান্ হি তান্ ।।
যানাস্থায় নরো রাজন্ ন প্রমাদ্যেত কর্হিচিৎ ।
ধাবন্ নিমীল্য বা নেত্রে ন স্খলেন্ন পতেদিহ ।। '
রাজন ! অজ্ঞ ব্যক্তিদের সত্বর নিশ্চিতভাবে পরমাত্মা লাভের যে উপায় ভগবান বলেছেন তাকেই তুমি ভগবৎ নিমিত্ত ধর্ম বলে জানবে , যার আশ্রয়ে মানুষ কখনো বিপরীতগামী হয় না । সে যদি সেই পথে চোখ বন্ধ করেও ছুটে চলে তাও সে পিছলে যায় না , পড়েও যায় না । '
আদিীতাস্য গতাগতৈরহরহঃ সংক্ষীয়তে জীবিতং
ব্যাপারৈর্বহুকার্যভারগুরুভিঃ কালো ন বিজ্ঞায়তে ।
দৃষ্ট্বা জন্মজরাবিপত্তিমরণং ত্রাসশ্চ নোৎপদ্যতে
পীত্বা মোহময়ীং প্রমাদমদিরামুন্মত্তভূতং জগৎ ।।
অথাৎ , " সূর্যের উদয় ও অস্ত গমনাগমন দ্বারা প্রতিদিন আয়ুক্ষয় হয়ে থাকে কিন্ত ব্যবসা - ব্যবহার সম্বন্ধিত অনেক গুরুভারের জন্য মানুষ টের পায় না যে কতটা সময় অতিাবাহিত হয়ে গিয়েছে এবং জন্ম , বৃদ্ধাবস্থা , বিপত্তি ও মৃত্যু দেখেও তার ভয় উৎপন্ন হয় না । এইভাবে সমগ্র জগৎ প্রমাদরূপ মোহময় সুরা পান করে উন্মত্ত হয় অর্থাৎ সে নিজ কর্তব্যাকর্তব্যর বিবেক বিরহিত হয়ে প্রমত্তসম অজ্ঞান নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে । "
এই অবস্থায় প্রমাদে মত্ত না হয়ে সাবধানে আমাদের বিচার করা উচিাত যে আমাদের জীবনের কতটা সময় চলে গেল - আয়ু কতটা কমে গেল । ভেবে দেখলে জানা যাবে যে আমাদের অনোকটা সময় কেটে গিয়েছে , যা মুখ্য উদ্দেশ্য , যা প্রথম কর্তব্য তার দিকে দৃষ্টি রেখে ত্বরিৎ গতিতে সেই পথে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে ।
বঙ্গদেশের এক ঘটনা শোনা যাক -- কতদূর সত্য জানা নেই । এক ধনী ব্যবসায়ীর গৃহে এক দুগ্ধ বিক্রেতা গয়লানি এল আর সে দুধ দিয়ে তার দাম চাইল । হিসাবরক্ষক তাকে বললেন - ' প্রথমে বাজারে ঘুরে আয় , ঘরে যাওয়ার সময়ে পয়সা নিয়ে যাস । ' সেই গয়লানি তখন চলে গেল ও বাজারের কাজ সেরে আবার ব্যবসায়ীর গৃহে এল আর হিসাবরক্ষকের কাছে পয়সা চাইল । তিনি ব্যস্ত ছিলেন । দাঁড়াতে বললেন ।
সেই গয়লানি দুই তিন বার পয়সা চাইল কিন্তু হিসাবরক্ষক পয়সা দিলেন না । তখন সেই গয়লানি দুঃখিত হয়ে বলল - ' আর বেলা নাই । ' আমাকে বহুদূর যেতে হবে সূর্য গেল বলে । ' ধনী ব্যবসায়ী কাছেই বসে কাজ করছিলেন । সেই গয়লানির করুণ কথাগুলি তাঁর প্রাণে বাজল । তিনি হিসাবরক্ষককে বলে তার পয়সা দিয়ে দিলেন ।
ধনী ব্যবসায়ীর সেই কথা মনে ধরল । তিনি তখনই হিসাবরক্ষককে বললেন -- ' আমার দেনা - পাওনা বের করো ও ব্যবসা গুটিয়ে দাও । ' হিসাবরক্ষক তাঁর কথা শুনে আশ্চর্য হলেন আর বললেন -- ' আপনি এমন কথা কেন বলছেন ? '
ব্যবসায়ী বললেন -- ' তুমি শুনলে না , গয়লানি কী বলল ? ' সে বলল - ' আর বেলা নাই । ' কথাটা খুব সত্য । জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছি ভাই ! আমার আর সময় তো নেই । 'এই বলে কাজকর্ম সব বুঝিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী গৃহ ত্যাগ করলেন আর নিজ শেষ জীবন অহর্নিশ হরিনাম করে কাটালেন ।
আমাদের এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করা উচিবত । আমাদের আয়ু প্রতিক্ষণে ক্ষীণ হচ্ছে । যার বয়স চল্লিশ - পঞ্চাশ বৎসর তার তো জীবনের বেশির ভাগ আয়ু কেটেই গেছে কিছু অল্পই বাকি আছো । যার কম বয়স তারও নিশ্চিন্ত থাকবার উপায় আছেে কী ? মানবজীবনের পূর্ণায়ু শত বৎসর বলা হয়ে থাকে । কিন্তু এই যুগে পূর্ণায়ু আয়ু পার হওয়া কঠিন ।
আজকাল তো আশি বৎসরকেই পূর্ণায়ু ধরা উচিত এবং এই পরিমিত আয়ুর বিচারে আমাদের অল্প সময়ই বাকী আছে । তাই চৈতন্যলাভ করে অতি শীঘ্র আমাদের আসল লক্ষ্যে পৌঁছানো উচিাত । আমরা সতর্ক হয়ে অবশিষ্ট দিন এমনভাবে কাটাই যাতে জীবন উন্নত হয় ।
তাই একটা দামি কথা জেনে রাখা ভালো যা সকল শ্রেণীর ব্যক্তি করতে পারে এবং তা সহজ - সরল । এতো বেশি বুদ্ধির দরকার হয় না , বেশি পরিশ্রমেরও দরকার নেই । নির্গুণ নিরাকার উপাসনার জন্য তীব্র বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , এতে তাও প্রয়োজন নেই । আর তা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি অন্যন্যা ভক্তি ।
সহজ ও সরল পথ হলো ঈশ্বরের অনন্য ভক্তি । তা যেন অন্ধকে লাঠি ধরে নিয়ে গিয়ে পার করে দেওয়ার মতন সহজ - সরল ও নিশ্চিত পথ । ভগবদ্ভক্তির এই পথ এতই সহজ , নিষ্কন্টক ও অন্ধকাররহিত যে তাতে কোথাও হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই ।
শ্রীমদ্ভাগবতে ( ১১\ ২\ ৩৪ - ৩৫ ) বলা হয়েছে --
যে বৈ ভগবতা প্রোক্তা উপায়া হ্যাত্মলব্ধয়ে ।
অজ্ঞঃ পুংসামবিদুষাং বিদ্ধি ভাগবতান্ হি তান্ ।।
যানাস্থায় নরো রাজন্ ন প্রমাদ্যেত কর্হিচিৎ ।
ধাবন্ নিমীল্য বা নেত্রে ন স্খলেন্ন পতেদিহ ।। '
রাজন ! অজ্ঞ ব্যক্তিদের সত্বর নিশ্চিতভাবে পরমাত্মা লাভের যে উপায় ভগবান বলেছেন তাকেই তুমি ভগবৎ নিমিত্ত ধর্ম বলে জানবে , যার আশ্রয়ে মানুষ কখনো বিপরীতগামী হয় না । সে যদি সেই পথে চোখ বন্ধ করেও ছুটে চলে তাও সে পিছলে যায় না , পড়েও যায় না । '
লেখকঃ Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন