ঋষিগণ বললেন -- বিশ্ববন্দিত ভগবান শংকর ! এবার আমরা বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য শ্রবণ করতে চাই ।
মহেশ্বর বললেন -- মুনিবরগণ ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মার থেকেও শ্রেষ্ঠ । সেই সনাতন পুরুষকে শ্রীহরি বলা হয় । তাঁর দেহকান্তি জাম্বূনদ নামক সুবর্ণের ন্যায় তেজস্বী । তিনি মেঘবিহীন আকাশে উদিত সূর্যের ন্যায় তেজস্বী । তাঁর দশ হাত এবং সেগুলি মহান তেজসম্পন্ন । তিনি দেবতাদের চির শত্রু দৈত্যদের বিনাশকারী । তাঁর বক্ষঃস্থলে শ্রীবৎসের চিহ্ন শোভা পায় । তিনি হৃষীক অর্থাৎ ইন্দ্রিয়াদির প্রভু হওয়ায় তাঁকে হৃষীকেশ বলা হয় ।
সমস্ত দেবতা তাঁর পূজা করেন । ব্রহ্মা তাঁর উদর থেকে এবং আমি তাঁর মস্তক থেকে উৎপন্ন হয়েছি । তাঁর মাথার চুল থেকে নক্ষত্র ও তারা উদ্ভূত হয়েছে । দেবতা এবং অসুর তাঁর দেহের রোম থেকে সৃষ্ট । সমস্ত ঋষি এবং সনাতনলোক তাঁর শ্রীবিগ্রহ থেকে উৎপন্ন । শ্রীহরি স্বয়ং সমস্ত দেবতা এবং ব্রহ্মার ধাম । তিনিই সমস্ত জগতের স্রষ্টা এবং ত্রিলোকের স্বামী ।
তিনিই সমস্ত চরাচরের প্রাণীদের সংহার করেন । তিনি দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , তাঁদের রক্ষক এবং শত্রুসন্তপ্তকারী । তিনি সর্বজ্ঞ , সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত , সর্বব্যাপক এবং সর্বদিকে মুখসম্পন্ন । তিনিই পরমাত্মা , ইন্দ্রিয়াদির প্রেরক এবং সর্বব্যাপী মহেশ্বর । ত্রিলোকে তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই । তিনিই সনাতন , মধুসূদন এবং গোবিন্দ ইত্যাদি নামে প্রসিদ্ধ ।
সজ্জনকে সম্মান প্রদর্শনকারী এই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সমস্ত রাজাদের সংহার করাবেন । তিনি দেবতাদের কার্যসিদ্ধির জন্য পৃথিবীতে মানব - শরীর ধারণ করে আবির্ভূত হয়েছেন । তার শক্তি এবং সহায়তা ছাড়া দেবতারা কোনো কাজই করতে পারেন না । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল প্রাণীর অগ্রগণা , তাই সমস্ত দেবতা তাঁর চরণে মাথা নত করে ।
দেবতাদের রক্ষা এবং তাঁদের কার্য - সাধনে রত এই ভগবান বাসুদেব ব্রহ্মস্বরূপ । তিনি ব্রহ্মর্ষিদের সর্বদা শরণ দিয়ে থাকেন । ব্রহ্মা এবং আমি ---- দুজনেই তাঁর শরীরের মধ্যে অত্যন্ত সুখে অবস্থান করি । সমস্ত দেবতাও তাঁর শ্রীবিগ্রহে সুখপূর্বক বাস করেন ।
তাঁর চোখদুটি কমলের মতো সুন্দর । তাঁর বক্ষঃস্থলে লক্ষ্মীর বাস , তিনি সর্বদা লক্ষ্মীর সঙ্গে বাস করেন । তাঁর বিশেষ অস্ত্র হল শার্ঙ্গধনুক , সুদর্শন চক্র , নন্দন নামক ধনুক ।তাঁর ধ্বজাতে গরুড়ের চিহ্ন আছে । তিনি উত্তম শীল , শম , দম , পরাক্রম , বীর্য , সুন্দর দেহ , সুন্দর দর্শন , সুডৌল আকৃতি , ধৈর্য , সরলতা , কোমলতা , রূপ ও বল ইত্যাদি সদ্গুণসম্পন্ন । সর্বপ্রকার দিব্য এবং অদ্ভূত অস্ত্রশস্ত্র তাঁর কাছে সর্বদা মজুত থাকে । তিনি যোগমায়াসম্পন্ন এবং সহস্র নেত্র সংবলিত । তাঁর কোনো বিনাশ নেই ।
তিনি উদারচিত্ত , মিত্রদের প্রশংসক , জ্ঞাতি এবং বন্ধু - বান্ধবদের প্রিয় , ক্ষমাশীল , অহংকাররহিত , ব্রাহ্মণভক্ত , বেদ উদ্ধারকারী , ভয়ার্ত মানুষের ভয় হরণকারী ও মিত্রদের আনন্দবর্ধনকারী । তিনি সমস্ত প্রাণীকে শরণ প্রদান করেন , দীনার্তের রক্ষায় সদা তৎপর , শাস্ত্রজ্ঞাতা , অর্থসম্পন্ন , সমস্ত জগতের বন্দনীয় , শরণাগত শত্রুকেও আশ্রয় প্রদান করেন , ধর্মজ্ঞ , নীতিজ্ঞ , নীতিমান , ব্রহ্মবাদী এবং জিতেন্দ্রিয় । সেই পরমেশ্বরকে পূজা করলে পরম ধর্মের সিদ্ধি হয় ।
তিনি মহাতেজস্বী দেবতা । তিনি প্রজাহিতার্থে ধর্মের জন্য কোটি কোটি ঋষি সৃষ্টি করেছেন । তাঁর সৃষ্ট সনৎকুমার প্রমুখ ঋষি আজও গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যায় রত আছেন , তাই ধর্মজ্ঞ উত্তম বক্তা বাসুদেবকে সর্বদা প্রণাম করা উচিত । ভগবান নারায়ণ দেবলোকে সর্বশ্রেষ্ঠা । যে তাঁকে বন্দনা করে , তিনিও তার বন্দনা করেন । যে তাঁকে সম্মান করে , তিনিও তাঁর সম্মান করেন ।
এইরূপ অর্চিত হলে অর্চনা করেন , পূজিত হলে পূজা করেন , দর্শনকারীদের ওপর সর্বদা কৃপাদৃষ্টি রাখেন এবং শরণাগতকে শরণ প্রদান করেন । আদিদেব ভগবান বিষ্ণুর এই উত্তম ব্রত । সজ্জন ব্যক্তি সর্বদাই তাঁর এই ব্রত আচরণ করেন । তিনি সনাতন দেবতা , তাই দেবগণ সর্বদাই তাঁকে পূজা করেন । যারা তাঁর অনন্যভক্ত , তাঁরা নিজেদের সাধনায় অনুরূপ নির্ভয়পদ প্রাপ্ত হন ।
দ্বিজগণের উচিত মন , বাক্য ও কর্মের দ্বারা সর্বদা সেই ভগবানের পূজা করা , প্রণাম করা এবং যত্নসহকারে উপাসনা করে দেবকীনন্দনকে দর্শন লাভ করা ।
মুনিবরগণ ! আমি আপনাদের এক উত্তম মার্গ জানালাম । কেবল ভগবান ভগবান বাসুদেবকে দর্শন করলে আপনাদের সব দেবতার দর্শন লাভ হবে ।
আমিও মহাবরাহরূপ ধারণকারী সর্বলোকপিতামহ জগদীশ্বরকে নিত্য প্রণাম করি । আমরা সকল দেবতা তাঁর শ্রীবিগ্রহে বাস করি , সুতরাং তাঁকে দর্শন করলে তিন দেবতার ( ব্রহ্মা , বিষ্ণু , মহেশ্বরের ) দর্শন লাভ হয় । এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
তপোধনগণ ! আমি আপনাদের ওপর অনুগ্রহ করে ভগবানের পবিত্র মাহাত্ম্য এই জন্য শোনালাম , যাতে আপনারা যত্ন সহকারে যদুশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন ।
দেবর্ষি নারদ বললেন - প্রভু ! ভগবান শংকর হিমালয় শিখরে যাঁর মাহাত্ম্য আমাদের বলেছিলেন , সেই ব্রহ্মভূত সনাতন পুরুষ আপনিই , শ্রীকৃষ্ণ । আপনার প্রভাবে আর একটি আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই যে আমরা আপনাকে দেখে বিস্মিত হয়েছি এবং আমাদের পূর্বকথা স্মরণ হয়েছে । প্রভো ! দেবাদিদেব ভগবান শংকর আপনার এরূপ মাহাত্ম্যের কথা বর্ণনা করেছিলেন ।
জয় রাধে
জয় শ্রীহরির জয় ।
জয় ভক্তগণের জয় ।
Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন