যে ভাবে ভক্তকবি সুরদাসকে পথপ্রদর্শনের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং এসে গিয়েছিলেন সেইভাবেই তিনি ভক্তিপথের ব্যক্তিদের সঠিক পথ বলে দেওয়ার জন্য স্বয়ং উপস্থিত হন । যখন ভক্ত সুরদাস বেলকাঁটা চোখে ফুটিয়ে ভগবানের দর্শনের লালসায় অরণ্যে ঘুরছিলেন তখন ভগবান বালকরূপে এসে তাঁকে নিজের হাতে মিষ্টান্ন দিয়েছিলেন । সেই দুর্লভ প্রসাদ লাভ করে সুরদাসের চিত্ত আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে । তিনি জিজ্ঞাসা করায় বালক সাধারণ পরিচয় দিয়ে চলে গেল ।
এক দিন সেই বালক আবার এল , কথা প্রসঙ্গে বৃন্দাবনের কথা উঠল । সে সুরদাসের লাঠি ধরে তাঁকে পথ দেখানোর জন্য আগে আগেে চলল । সুরদাস তার হাত ধরলেন , ভগবানের হাতের স্পর্শ লাভ করে দেহে যেন প্রেমানন্দের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হল । তিনি বুঝতে পারলেন যে বালক সাক্ষাৎ ভগবান । তিনি ভগবানের হাত আরও জোরে চেপে ধরলেন কিন্তু ভগবান তো জোর করে ছাড়িয়ে নিলেন ।
তখন ভক্তকবি সুরদাস বললেন --
হাথ ছুড়ায়ে জাত হৌ নিবল জানি কৈ মোহি ।
হিরদৈ তেঁ জাহুগে মরদ বদৌঁগো তোহি ।।
' প্রাণপ্রিয় ! তুমি আমাকে দুর্বল জেনে হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছ তাতে আর তোমার বাহাদুরি কি আছে ? তোমার পরাক্রম তো আমি তখন স্বীকার করব যখন তুমি আমার অন্তর থেকে চলে যাবে । '
নিজের উপর কতটা বিশ্বাস । প্রেমের সুদৃঢ় রজ্জুতে ( দড়িতে ) যে ঈশ্বরকে নিজ হৃদয়ে বেঁধে রেখেছে তার অন্তর থেকে প্রান গোবিন্দ কেমন করে যাবেন । তাঁর ভক্তি ও প্রেম দেখে ভগবান তার সম্মুখেই আবির্ভূত হলেন আর সাক্ষাৎ দর্শন দান করে তাঁকে কৃতার্থ করলেন ।
ভগবানের আশ্রয় নিয়ে যে সাধনা করে তার জন্য কত সহজ - সরল নিশ্চিত উপায় । ভগবান স্বয়ং গীতায় বলেন --
তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যুসংসারসাগরাৎ ।
ভবামি নচিরাৎ পার্থ ময্যাবেশিতচেতসাম ।।
( গীতা ১২\ ৭ )
অর্থাৎ " হে অর্জুন ! সেই সকল মদ্গতচিত্ত ভক্তকে আমি অতি্ শীঘ্রই মৃত্যুরূপ সংসার সাগর হতে উদ্ধার করি । '
শুধু তাই নয় , সেই অনন্য ভক্তের যোগক্ষেমের দায়িত্বও ভগবান নিজের উপর নিয়ে যান । তিনি বলেন ---
অনন্যাচিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে ।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্ ।।
( গীতা ৯\ ২২ )
অর্থাৎ ' অনন্যচিত্তে যে ভক্তগণ আমাকে সর্বদা নিষ্কামভাবে ভজনা করেন সেই নিত্য সমাহিত মুমুক্ষগণের যোগক্ষেম আমি স্বয়ং বহন করি । '
এখন প্রশ্ন ওঠেন যে এই অনন্যচিত্তে চিন্তা করবার উপায় কী ? তার জন্য অতি সহজ ও সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হল -- সর্বত্র ভগবদ্বুদ্ধি করা । ভগবান বলেছেন --------------
বহূনাং জন্মানামন্তে জ্ঞানবান্ মাং প্রপদ্য তে ।
বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ ।।
( গীতা ৭\ ১৯ )
অর্থাৎ ' বহু জন্মের শেষে এই জন্মে তত্ত্বজ্ঞানী পুরুষ ' সর্বকিছুই বাসুদেব ' -- এইরূপ জেনে আমরা ভজনা করেন ; এইরূপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ । '
শ্রীরামচরিত্রমানসে শ্রীরঘুনাথ শ্রীহনুমানকে বলেছেন ---
সো অনন্য জাকেঁ অসিঃ মতি ন টরই হনুমন্ত ।
মৈঁ সেবক সচরাচর রূপ স্বামি ভগবন্ত । ।
অর্থাৎ ' যার বুদ্ধি কখনো বিচ্যুত হয় না -- সতত , এভাবে অটল থাকে যে , এই বিশ্বচরাচর জগৎ বলে দৃশ্য সব কিছুই সর্বলোক মহেশ্বর ভগবান শ্রীহরি আর আমি- তাঁর দাস -- সেই অনন্য ভক্ত । '
শ্রীভগবানের কথার উপর বিশ্বাস করে একটি বিশেষভাবে বোঝবার চেষ্টা করা উচিত । যেমন সবুজ রঙের চশমা পড়লে মানুষ সব কিছু তেমনই দেখে -- সবুজই দেখে , সেই ভাবে যে হৃদয় নেত্রে হরিরূপ চশমা লাগিয়ে নেয় সে সর্বত্র শ্রীহরিকেই দেখতে থাকে । তাই নিজ অন্তরের ভাবকে হরিময় করে নিতে হয় । এমন হলে বাইরো থেকে অন্য বস্তু দেখা গেলেও অন্তরে শ্রীহরিই দেখা যেতে থাকবে ।
যেমন মৃত্তিকা নির্মিত বস্তু - ঘড়া , সরা , প্রদীপ সব তত্ত্বত এক মৃত্তিকা , তদনুরূপ লৌহ নির্মিত ছুরি , কাঁচি , তরবারি সকল বস্তুই লৌহ । সেইভাবে সম্পূর্ণ জগৎ - সমস্ত জাগতিক বস্তু তত্ত্বত একমাত্র হরি । এই হল বাস্তবিক সিদ্ধান্ত । তা বুঝে সচেষ্ট হলে সত্বর এমন ভাব হওয়া অসম্ভব নয় ।
এক দিন সেই বালক আবার এল , কথা প্রসঙ্গে বৃন্দাবনের কথা উঠল । সে সুরদাসের লাঠি ধরে তাঁকে পথ দেখানোর জন্য আগে আগেে চলল । সুরদাস তার হাত ধরলেন , ভগবানের হাতের স্পর্শ লাভ করে দেহে যেন প্রেমানন্দের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হল । তিনি বুঝতে পারলেন যে বালক সাক্ষাৎ ভগবান । তিনি ভগবানের হাত আরও জোরে চেপে ধরলেন কিন্তু ভগবান তো জোর করে ছাড়িয়ে নিলেন ।
তখন ভক্তকবি সুরদাস বললেন --
হাথ ছুড়ায়ে জাত হৌ নিবল জানি কৈ মোহি ।
হিরদৈ তেঁ জাহুগে মরদ বদৌঁগো তোহি ।।
' প্রাণপ্রিয় ! তুমি আমাকে দুর্বল জেনে হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছ তাতে আর তোমার বাহাদুরি কি আছে ? তোমার পরাক্রম তো আমি তখন স্বীকার করব যখন তুমি আমার অন্তর থেকে চলে যাবে । '
নিজের উপর কতটা বিশ্বাস । প্রেমের সুদৃঢ় রজ্জুতে ( দড়িতে ) যে ঈশ্বরকে নিজ হৃদয়ে বেঁধে রেখেছে তার অন্তর থেকে প্রান গোবিন্দ কেমন করে যাবেন । তাঁর ভক্তি ও প্রেম দেখে ভগবান তার সম্মুখেই আবির্ভূত হলেন আর সাক্ষাৎ দর্শন দান করে তাঁকে কৃতার্থ করলেন ।
ভগবানের আশ্রয় নিয়ে যে সাধনা করে তার জন্য কত সহজ - সরল নিশ্চিত উপায় । ভগবান স্বয়ং গীতায় বলেন --
তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যুসংসারসাগরাৎ ।
ভবামি নচিরাৎ পার্থ ময্যাবেশিতচেতসাম ।।
( গীতা ১২\ ৭ )
অর্থাৎ " হে অর্জুন ! সেই সকল মদ্গতচিত্ত ভক্তকে আমি অতি্ শীঘ্রই মৃত্যুরূপ সংসার সাগর হতে উদ্ধার করি । '
শুধু তাই নয় , সেই অনন্য ভক্তের যোগক্ষেমের দায়িত্বও ভগবান নিজের উপর নিয়ে যান । তিনি বলেন ---
অনন্যাচিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে ।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্ ।।
( গীতা ৯\ ২২ )
অর্থাৎ ' অনন্যচিত্তে যে ভক্তগণ আমাকে সর্বদা নিষ্কামভাবে ভজনা করেন সেই নিত্য সমাহিত মুমুক্ষগণের যোগক্ষেম আমি স্বয়ং বহন করি । '
এখন প্রশ্ন ওঠেন যে এই অনন্যচিত্তে চিন্তা করবার উপায় কী ? তার জন্য অতি সহজ ও সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হল -- সর্বত্র ভগবদ্বুদ্ধি করা । ভগবান বলেছেন --------------
বহূনাং জন্মানামন্তে জ্ঞানবান্ মাং প্রপদ্য তে ।
বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ ।।
( গীতা ৭\ ১৯ )
অর্থাৎ ' বহু জন্মের শেষে এই জন্মে তত্ত্বজ্ঞানী পুরুষ ' সর্বকিছুই বাসুদেব ' -- এইরূপ জেনে আমরা ভজনা করেন ; এইরূপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ । '
শ্রীরামচরিত্রমানসে শ্রীরঘুনাথ শ্রীহনুমানকে বলেছেন ---
সো অনন্য জাকেঁ অসিঃ মতি ন টরই হনুমন্ত ।
মৈঁ সেবক সচরাচর রূপ স্বামি ভগবন্ত । ।
অর্থাৎ ' যার বুদ্ধি কখনো বিচ্যুত হয় না -- সতত , এভাবে অটল থাকে যে , এই বিশ্বচরাচর জগৎ বলে দৃশ্য সব কিছুই সর্বলোক মহেশ্বর ভগবান শ্রীহরি আর আমি- তাঁর দাস -- সেই অনন্য ভক্ত । '
শ্রীভগবানের কথার উপর বিশ্বাস করে একটি বিশেষভাবে বোঝবার চেষ্টা করা উচিত । যেমন সবুজ রঙের চশমা পড়লে মানুষ সব কিছু তেমনই দেখে -- সবুজই দেখে , সেই ভাবে যে হৃদয় নেত্রে হরিরূপ চশমা লাগিয়ে নেয় সে সর্বত্র শ্রীহরিকেই দেখতে থাকে । তাই নিজ অন্তরের ভাবকে হরিময় করে নিতে হয় । এমন হলে বাইরো থেকে অন্য বস্তু দেখা গেলেও অন্তরে শ্রীহরিই দেখা যেতে থাকবে ।
যেমন মৃত্তিকা নির্মিত বস্তু - ঘড়া , সরা , প্রদীপ সব তত্ত্বত এক মৃত্তিকা , তদনুরূপ লৌহ নির্মিত ছুরি , কাঁচি , তরবারি সকল বস্তুই লৌহ । সেইভাবে সম্পূর্ণ জগৎ - সমস্ত জাগতিক বস্তু তত্ত্বত একমাত্র হরি । এই হল বাস্তবিক সিদ্ধান্ত । তা বুঝে সচেষ্ট হলে সত্বর এমন ভাব হওয়া অসম্ভব নয় ।
লেখকঃ Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন