০৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ধর্ম, আদর্শ, গুরু, সদগুরু, ভগবান, ঈশ্বর, হরি, নারায়ন? এসব কি অলৌকিক ব্যাপার ও শব্দ?

ধর্ম:

ধর্মই স্বাস্থ্য ও শান্তির উপকরণ পাপই রোগ ও অশান্তির মূল কারণ

ধর্ম = ধৃ + মন, ধৃ ধাতুর অর্থ হলো ধারণ করা। অর্থাৎ যাহা অস্তিত্বকে ধারণ করে।

“যে অনুশীলনা সত্তাকে ধারণ, পালন ও পোষণে সম্বর্ধিত করে তোলে, তোমার বেলায় যেমন, অন্যের বেলায়ও তেমন। এগুলি হচ্ছে ধর্মাচরণ।” (ধৃতি-বিধায়না)

যার উপর যা কিছু সব দাড়িয়ে আছে, তাই ধর্ম, আর তিনিই পরমপুরুষ। (সত্যানুসরণ)

বাঁচা বাড়ার মর্ম যা, ঠিকই জেনো ধর্ম তা।

বাচঁতে নরের যা যা লাগে, তাই নিয়েইতো ধর্ম জাগে।

অন্যে বাচায় নিজে থাকে, ধর্ম বলে জানিস তাকে। (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র)




আদর্শ:

আদর্শ = আ + দৃশ + অল্, অর্থাৎ যার ভিতরে নিজেকে প্রতিফলিত করে দেখা যায়। আর মানুষ দেখতে পায় তার পথ যাতে জীবন বৃদ্ধিকে সহজ ও অটুট ভাবে আলিঙ্গন করতে পারে।

তাই আদর্শ মানে আয়না বা দর্পণ স্বরুপ।

“সব যা কিছু যার ভিতরবাঁচা বাড়ার উৎস

জীবন বৃদ্ধির অনুকূল হয়, তাই আদর্শ” (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র)



গুরু:

গু = অন্ধকার আর রু =নাশ করা। অজ্ঞাণতার অন্ধকার থেকে আলোর পথে যিনি নিয়ে যান, তিনি গুরু।

“বিপাক পথে হাত ধরে যে, চলার কায়দা জানিয়ে দেয়

তাকেই জানিস গুরু বলে, তাকে ধরলে নেইকো ভয়” (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র)

যিনি জানাইতে পারেন শ্রদ্ধা, ভক্তি, স্তুতি ইত্যাদি দ্বারা কোন কিছুকে হজম করিয়া, মানুষকে তাহা বিজ্ঞাপিত করিতে পারেন, তিনি গুরু। (আলোচনা প্রসঙ্গে)




সদ্ গুরু

যার কোন মূর্ত আদর্শ কর্মময় অটুট আসক্তি সময় ও সীমাকে ছাপিয়ে তাঁকে সহজভাবে ভগবান করে তুলেছে। যার বাক্য, দর্শন ও বিজ্ঞান মনের ভালো ও মন্দ বিচ্ছিন্ন সংস্কারগুলিকে ভেদ করে ঐ আদর্শেই সার্থক হয়ে উঠেছে, তিনিই সদ্গুরু । (সত্যানুসরণ)

বাঁচা ও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণগুলিকে যাঁর excellence এনেছেন, তিনি সদ্ গুরু। (নানা-প্রসঙ্গে)


ভগবান:

জগতের যার সমস্ত ঐশ্বর্য্য জানা, ভালবাসা ও কর্ম যার ভিতর সহজ উৎসারিত, আর যাঁর প্রতি আসক্তিতে মানুষের বিচ্ছিন্ন জীবন ও জগতের সমস্ত বিরোধের চরম সমাধান লাভ হয়, তিনিই মানুষের ভগবান। (সত্যানুসরণ)



ধনবান তিনিই যার ধন আছে। তেমনি জ্ঞানবান তিনিই যার জ্ঞাণ আছে। বান এর আগে ধন ও জ্ঞান এ দুটিই বিশেষণ পদ। তাহলে আমরা একথা নিশ্চয় বলতে পারি, ভগবান শব্দের ভগ শব্দটি একটি বিশেষণ তথা গুণবাচক শব্দ। ভগ হলো ছয়টি গুণের সমন্বয়। তাহলে চলুন দেখা যাক ঐ ছয়টা গুণ কি:

১. এশ্বর্য্য: সমগ্র ঐশ্ ে‡ র্যের ঐশ্বর্য্য, ঈশ্বরের ভাব, আধিপত্যের ভাব।

২. বীর্য্য: বিক্রম বীর, ঈর ধাতুর অর্থ হলো প্রেরণা। প্রেরণা যাতে actively move করছে, তিনি বীর।

৩. যশ: যশ্ ধাতুর অর্থ হলো বিস্তার ভাব।

৪. আশ্রয়: শ্রী ধাতু থেকে এসেছে। শ্রী ধাতুর অর্থ হলো সেবা।

৫. জ্ঞাণ: জ্ঞা ধাতু থেকে এসেছে। জ্ঞা ধাতুর অর্থ জানা।

৬. বৈরাগ্য: কোন কিছুতে রঞ্জিত না হওয়া। বি-পূর্বক রঞ্জন ধাতু, যার অর্থ সব সময় uncolored থাকা।

এই ছয়গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান তিনিই ভগবান। (নানা-প্রসঙ্গে)




ঈশ্বর:

ঈশ্বর শব্দটি এসেছে ঈশ্ ধাতু থেকে। ঈশ্ ধাতুর অর্থ আধিপত্য বা বিস্তার।

ঈশ্বর মানে ধারণ, পালন, সম্বেগ স্বতঃ উৎসারণশীল যেখানে তাই, তিনি সৎপদ অর্থাৎ সাত্বত্য অনুচলনই তাঁর স্বভাব। (আদর্শ বিনায়ক)

হরি

যিনি সবকিছু হরণ করেন তিনিই হরি। হরি মানে যিনি জগৎকে নিজের দিকে টেনে নেন।

যঃ পাপিন্যাং সর্ব পাপং হরতি হরিঃ (আলোচনা প্রসঙ্গে)

۞ আমরা একটা কথা হর-হামেশা শুনতে পাই,

‘রাখে হরি মারে কে?’

আসলে এ কথাটি আমরা যে অর্থে বলি তা কি সত্যি! তাহলে দেখি আমাদের অনুসন্ধান কি বলে।

এ কথাটির অর্থ হলো, হরিকে যে রাখে তাকে কেউ মারতে পারে না। অন্যদিকে, হরিকে যে মেরে রাখে তাকে কেউ বাচাঁতে পারে না। নিত ভোগ, অর্চ্চনা ও ইষ্টভৃতির মাধ্যমে আমাদের অন্তরের হরিকে সদা জাগ্রত ও জীবন্ত রাখতে হয়। হিন্দিতে বলা হয়, ‘যাকো রাখে সাঈয়া, মার ছাঁকে না কোঈ’।




নারায়ন

নারায়ন শব্দটি এসেছে র্না ধাতু থেকে। র্না ধাতুর অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। আয়ন শব্দটির অর্থ পথ।

তাহলে নারায়ন শব্দটির অর্থ দাড়ায়, বৃদ্ধি পাওয়ার পথ।

Present ideal of it time যিনি, তিনিই হলেন পথ। তাকে বলা যায় নারায়ন, তাঁর Realization অনুযায়ী তিনি যে নাম দেন ঐ নাম করায় দ্রুত উন্নতি হয়। ঐ মানুষটাই হলেন নামী। তাঁর ধ্যাণ ও নাম করতে হয়, নামে শরীর মুক্তি। 
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।