• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

৩১ অক্টোবর ২০১৭

গুরু ও শিষ্যের লক্ষণ

গুরু চিনব কি করে???

সূর্যকে প্রকাশ করতে মশালের প্রয়োজন হয় না।সূর্যকে দেখার জন্য আর বাতি জ্বালতে হয় না।সূর্য উঠলে আমরা স্বভাবতই জানতে পারি যে সূর্য উঠেছে।এইরূপ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য লোকগুরুর আবির্ভাব হলে আত্মা স্বভাবতই জানতে পারে যে,তার উপর সত্যের সূর্যালোকপাত শুরু হয়েছে।সত্য স্বতঃপ্রমাণ,তাকে প্রমাণ করতে অপর কোন সাক্ষের প্রয়োজন নাই-এটা স্বপ্রকাশ।সত্য আমাদের অন্তস্থলে প্রবেশ করে,এর সামনে সমগ্র জগত এসে দাড়ালেও সে বলবে-"আমিই সত্য"।যে সকল আচার্যের হৃদয়ে জ্ঞান ও সত্য সূর্যালোকের ন্যায় উজ্বল,তারা জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ পুরুষ।জগতের অধিকাংশ লোকই তাদের ঈশ্বর বলে পুজা করে।

কিন্তু আমরা অপেক্ষাকৃত অল্প জ্ঞানীর নিকটও আধ্যাত্বিক সাহায্য লাভ করতে পারি।আর আমাদের অন্তর্দৃষ্টি এমন প্রখর এবং নিখুত নয় যে,আমরা আচার্যের বা গুরুর সম্পর্কে যথার্থ বিচার করব।তাই গুরু-শিষ্যে দুজনেরই কতগুলি পরীক্ষা আবশ্যক।


শিষ্যের এই গুণগুলি আবশ্যক-পবিত্রতা,প্রকৃত জ্ঞানপিপাসা ও অধ্যবসায়।অশুদ্ধাত্মা পুরুষ কখনও ধার্মিক হতে পারে না।কেননা কায়মনোবাক্যে কেউ পবিত্র না হলে সে ধার্মিক হতে পারবে না।আর জ্ঞানতৃষ্ণা সম্পর্কে বলা যায়,আমরা যা চাই,তা পাই-এটাই সনাতন নিয়ম।কিন্তু অন্তরের সাথে একাত্ন না হয়ে চাইলেই কি সেই কাম্য প্রাপ্ত হয়?

ধর্মের জন্য প্রকৃত ব্যাকুলতা অনেক বড় জিনিস।আমরা ধর্মকে সচারচর যতটা সহজ মনে করি,ঠিক ততটা সহজ নয়।শুধুমাত্র ধর্মকথা শুনলে বা ধর্মগ্রন্থ পড়লেই প্রমানিত হয় না ধর্মপিপাসার কথা।যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণে ব্যাকুলতা জাগ্রত না হবে,যতদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণে প্রবৃত্তির উপর জয়লাভ না হবে,ততদিন আমাদের সংগ্রাম আবশ্যক।এই সংগ্রাম হবে পাশব প্রকৃতি ও অভ্যাসের উপর।দুই একদিনের কাজ নয় এটি,বছরের পর বছর,যুগান্তর কিংবা কয়েক জন্মও কেটে যেতে পারে।কারো জন্যে সহজেই সিদ্ধিলাভ হয়,আবার কারো জন্যে ধীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়।যদি অপেক্ষার কাল আসে তবে সেক্ষেত্রেও ধৈর্য ধরতে হবে।

যেই শিষ্য এইরূপ অধ্যবসায় সহকারে সাধনে প্রবৃত্ত হয়,তার সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।


গুরু সম্পর্কে এটা দেখা দরকার তিনি শাস্ত্রের মর্মজ্ঞ কিনা।জগতের সকলেই বেদ,পুরান বা অন্যান্য গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করে।কিন্তু শাস্ত্রসমূহ কেবল কতগুলো শব্দ এবং ব্যাকরণ - ধর্মের কয়েকটি অস্থি মাত্র।যে গুরু শব্দ নিয়ে আলোচনা করেন এবং মনকে শুধু শব্দের ব্যাখ্যা দ্বারা চালাতে চান,তিনি ভাব হারিয়ে ফেলেন।আর শাস্ত্রের মর্ম যিনি জানেন,উনিই যথার্থ ধর্মাচার্য।
শাস্ত্রের শব্দজাল যেন মহারণ্য, মানুষ নিজেকে একবার হারিয়ে ফেললে পথ খুজে পায় না।
"শব্দজালং মহারণ্যং চিত্তভ্রমণকারণম।"(বিবেকচূড়ামণি)
অর্থাৎ শব্দজাল মহারণ্যের ন্যায়,চিত্তের ভ্রমনের কারন।শব্দযোজনা হচ্ছে বক্তৃতা ও শাস্ত্র মর্ম ব্যাখ্যা করবার জন্য,এটা কোনভানেই মুক্তির সহায়ক নয়।যারা এমন করেন,তাদের ইচ্ছা লোকসমাজে তাদের সম্মান হোক,পণ্ডিত বলে সবাই গণ্য করুক।কিন্তু জগতের প্রধান ধর্মাচার্যগণ কেউ এইভাবে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করেন নি।তারা শাস্ত্রের শব্দার্থ ও অর্থ নিয়ে প্যাচান নাই,বরং জগৎকে শাস্ত্রের মহান ভাব শিক্ষা দিয়েছেন।আর যাদের শেখানোর কিছুই নেই,তারা দুই একটা শব্দ নিয়েই গবেষণা করে তার নাড়ি নক্ষত্র বের করার প্রয়াস করেন।


এক আম বাগানে কয়েকজন বেড়াতে গেল।বাগানে গিয়ে তারা হিসাব আরম্ভ করল-কয়টা আম গাছ,কি রকম আম ধরেছে,কোন ডালে কত পাতা,শাখা-প্রশাখা কেমন,আমের বর্ণ,আকৃতি,গন্ধ ইত্যাদি।পরস্পরের মধ্যে এরূপ বিচারে যুক্তি তর্ক বাধতে শুরু করল এক সময়।এদের মধ্যে একজন ছিলেন বিচক্ষন।সে আমের বিচার না করে আম পেড়ে খেতে শুরু করল।কে বেশি বুদ্ধিমান???
আম খেলে পুষ্টি পাবে,পাতা গুনে লাভ কি।পাতা গোনা এবং অন্যকে জানানো বন্ধ করে দাও।অবশ্য এরূপ কাজের কিছুটা উপযোগিতা আছে।তবে সেটা ধর্মরাজ্যে নয়।যারা এইরূপ পাতা গুনে বেড়ায় তাদের ভিতর থেকে একটি ধর্মকথাও বের করা সম্ভব হয় না।ধর্ম যদি জীবনের লক্ষ্য হয়,তবে সেই লক্ষ্যে পৌছাবার জন্য পাতা গোনার মত এতো কষ্ট না করলেও হবে।যদি ভক্ত হতে একান্তই ইচ্ছা জাগে,তবে শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় কিংবা ব্রজে জন্মেছিলেন,শৈশবে কিংবা যৌবনে কি কাজ করেছিলেন,তা জানার আবশ্যকতা নেই।গীতায় কর্তব্য ও প্রেম সম্পর্কে যে সুন্দর শিক্ষা আছে,আগ্রহের সাথে তা অনুসরন করাই হবে ভক্তের কাজ।
শাস্ত্র প্রণেতা সম্পর্কে অন্যান্য বিষদ বিষয় জানা কেবল পন্ডিতদের আমোদের জন্য।তারা যা চায়,তাই নিয়ে থাকুক।তাদের পন্ডিতি তর্কবিচারে "শান্তিঃ শান্তিঃ" বলে আমাদের আম খাওয়াই শ্রেয়।


গুরুর নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক।অনেক সময়ে লোকে বলিয়া থাকে ,"গুরুর চরিত্র,গুরু কি করেন না করেন,দেখিবার প্রয়োজন কি? তিনি যা বলেন,তাহাই বিচার করিতে হইবে।সেইটি লইয়াই কাজ করা প্রয়োজন।" এ কথা ঠিক নয়।গতি-বিজ্ঞান,রসায়ন বা অন্য জড়-বিজ্ঞানের শিক্ষক যাহাই হউন না কেন,কিছু আসে যায় না।কারন উহাতে কেবল বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োজন হয়।কিন্তু অধ্যাত্মবিজ্ঞানের আচার্য অশুদ্ধচিত্ত হইলে তাঁহাতে আদৌ ধর্মালোক থাকিতে পারে না।অশুদ্ধচিত্ত ব্যক্তি কী ধর্ম শিখাইবে? নিজে আধ্যাত্মিক সত্য উপলব্ধি করিবার বা অপরে শক্তি সঞ্চার করিবার একমাত্র উপায়-হৃদয় ও মনের পবিত্রতা।

যতদিন না চিত্তশুদ্ধি হয়,ততদিন ভগবদ্দর্শন বা সেই অতীন্দ্রিয় সত্তার আভাসজ্ঞানও অসম্ভব। সুতরাং ধর্মাচার্যের সম্বন্ধে প্রথমেই দেখা আবশ্যক তিনি কি চরিত্রের লোক,তারপর তিনি কি বলেন তাহাও দেখিতে হইবে।তাহার সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধচিত্ত হওয়া আবশ্যক।তবেই তাহার কথার প্রকৃত একটা গুরুত্ব থাকে,কারন তাহা হইলেই তিনি প্রকৃত শক্তি সঞ্চারকের যোগ্য হইতে পারেন।নিজের মধ্যেই যদি সেই শক্তি না থাকে,তবে তিনি সঞ্চার করিবেন কি?গুরুর মন এরূপ প্রবল আধ্যাত্বিক স্পন্দন সম্পন্ন হওয়া চাই যে তাহা যেন সমবেদনাবশে শিষ্যে সঞ্চারিত হইয়া যায়।গুরুর বাস্তবিক কার্যই এই- কিছু সঞ্চার করা,কেবল শিষ্যের বুদ্ধিবৃত্তি বা অন্য কোন শক্তি উত্তেজিত করিয়া দেওয়া নয়।বেশ স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়,গুরু হইতে শিষ্যে যথার্থই একটি শক্তি আসিতেছে।সুতরাং গুরুর শুদ্ধচিত্ত হওয়া আবশ্যক।


দেখা আবশ্যক,গুরুর উদ্দেশ্য কি? 

গুরু যেন অর্থ,নাম যশ বা কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মশিক্ষাদানে প্রবৃত্ত না হন- সমগ্র মানবজাতির প্রতি শুদ্ধ প্রেমই যেন কার্যের নিয়ামক হয়।আধ্যাত্বিক শক্তি শুদ্ধ প্রেমের মাধ্যমেই সঞ্চারিত করা যাইতে পারে।কোনরূপ স্বার্থপূর্ণ ভাব,লাভ বা যশের ইচ্ছা এক মুহূর্তে এই সঞ্চারের মাধ্যম নষ্ট করিয়া ফেলে।ভগবান প্রেমস্বরূপ,আর যিনি ভগবানকে প্রেমস্বরূপ বলিয়া জানিয়াছেন,তিনিই মানুষকে ভগবদ্ভাব শিক্ষা দিতে পারেন।

আর যদি গুরুতে এই সব লক্ষণ বর্তমান থাকে,তবে জানিতে হইবে কোন আশঙ্কা নাই।নতুবা তাহার নিকট শিক্ষায় বিপদ আছে,তিনি হৃদয়ে সদ্ভাব সঞ্চার করিতে না পারেন,হয়তো অসদ্ভাব সঞ্চার করিবেন।এই বিপদ হইতে নিজেকে সর্বতোভাবে সাবধান রাখিতে হইবে।"যিনি বিদ্বান,নিষ্পাপ ও কামগন্ধহীন,যিনি শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ" তিনিই প্রকৃত সদগুরু।

গুরুই ধর্মশিক্ষার্থীর চক্ষু খুলিয়া দেন।সুতরাং কোন ব্যক্তির সহিত তাহার বংশধরের যে সম্বন্ধ,গুরুর সহিত শিষ্যেরও ঠিক সেই সম্বন্ধ।গুরুর প্রতি বিশ্বাস,বিনয়নম্র আচরণ,তাহার নিকট শরণগ্রহন ও তাহার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ব্যতিরেকে আমাদের হৃদয়ে ধর্মের বিকাশ হইতেই পারে না।আর ইহাও বিশেষ লক্ষ্য করিবার বিষয় যে,যে সব দেশে গুরু শিষ্যের এরূপ সম্বন্ধ আছে,কেবল সেই সব দেশেই অসাধারন ধর্মবীরগণ জন্মিয়াছেন।আর যেসব দেশে গুরু শিষ্যের এ সম্বন্ধ রক্ষা করা হয় নাই,সে সব দেশে ধর্মের শিক্ষক কেবল বক্তামাত্র।


Share:

গুরুর প্রয়োজনীয়তা

জীবাত্নামাত্রেই পূর্ণতা লাভ করিবেই করিবে-শেষ পর্যন্ত সকলেই সিদ্ধাবস্থা লাভ করিবে।আমরা এখন যাহা হইয়াছি,তাহা আমাদের অতীত কার্য ও চিন্তারাশির ফলস্বরূপ।আর ভবিষ্যতে যাহা হইব,তাহা বর্তমানে যেরূপ চিন্তা ও কার্য করিতেছি,তাহার ফলস্বরূপ হইবে।কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের অদৃষ্ট গঠন করিতেছি বলিয়া যে বাহির হইতে আমাদের কোন সহায়তার আবশ্যক নাই,তাহা নয়।বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরূপ সহায়তা একান্তভাবে প্রয়োজন।যখন এই সহায়তা পাওয়া যায়,তখন আত্মার উচ্চতর শক্তি ও আপাত-অব্যক্ত ভাবগুলি ফুটিয়া উঠে,আধ্যাত্মিক জীবন সতেজ হইয়া উঠে,উহার উন্নতি ত্বরান্বিত হয়,সাধক অবশেষে শুদ্ধভাব ও সিদ্ধভাব হইয়া যায়।


এই সঞ্জীবনী শক্তি গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় না।একটি আত্মা কেবল মাত্র অন্য একটি আত্মা থেকেই শক্তি লাভ করতে পারে।আমরা সারাজীবন বই পড়ে ডিগ্রি নিতে পারি,বুদ্ধিমান হতে পারি কিন্তু আধ্যাত্বিক উন্নতি হবে না কিছুতেই।বুদ্ধির উন্নতি মানে যে আধ্যাত্বিক উন্নতি নয়,তা আমাদের বোধগম্য হয় না।আমরা যারা আধ্যাত্বিক কথা বা তথ্য জানার চেষ্টা করি,ধর্মজীবন যাপনে দেখা যাবে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তিতে ভরা।তার একটাই অর্থ দাড়ায়,আমাদের আধ্যাত্বিক জ্ঞানের প্রাচুর্য কম।তাই জীবাত্মার শক্তি জাগ্রত করতে হলে অপর এক আত্মা হতে শক্তির সঞ্চারন প্রয়োজন।
যে ব্যক্তির আত্মা হতে শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকেই গুরু বলে,যে ব্যক্তির আত্মায় শক্তি সঞ্চারিত হয় তাকে বলে শিষ্য।শক্তি সঞ্চার করতে হলে প্রথমেই যে ব্যক্তি সঞ্চার করবেন তার সেই শক্তি থাকা আবশ্যক।আর যে ব্যক্তির আত্মায় এই শক্তি দেয়া হবে তার সেই শক্তি গ্রহনের সামর্থ থাকা প্রয়োজন।সঠিক অঙ্কুরোদগম এর জন্য বীজ যেমন সতেজ হওয়া প্রয়োজন,ঠিক তেমন মাটিও গুনাগুন সম্পন্ন হওয়া দরকার।ধর্মের প্রকৃত বক্তা অবশ্যই আশ্চর্য পুরুষ হবেন,শ্রোতাও সুনিপুণ হওয়া চাই।যখন উভয়েই আশ্চর্য ও সুনিপুণ হয়,তখনই আধ্যাত্বিক উন্নতি ঘটে।ঐরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত গুরু এবং এইরূপ ব্যক্তিই প্রকৃত শিষ্য-মুমুক্ষু সাধক।


সকলে ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা করছে মাত্র,কিছুটা কৌতুহল আছে বৈকী কিন্তু তবুও তারা এখনও ধর্মচক্রবালের বাইরেই আছে।এটারও মুল্য আছে অবশ্যই।কেননা সময়কালে এর থেকেও ধর্ম পিপাসা জাগতে পারে।আর প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল এই যে,যখনই ক্ষেত্র উপযুক্ত হয় তখনই বীজ আসে।অর্থাৎ যখন আত্মার ধর্মলাভের আগ্রহ প্রবল হয়,তখনই ধর্মশক্তি সঞ্চারক পুরুষ সেই আত্মার সহায়তার জন্য অবশ্যই আসবেন।
"যখন গ্রহীতার ধর্মালোক আকর্ষন করিবার শক্তি পূর্ণ ও প্রবল হয়,তখন সেই আকর্ষনে আকৃষ্ট আলোকশক্তি অবশ্যই আসিয়া থাকেন।"
তবে পথে কতগুলি মহাবিঘ্ন আছে,যথা-ক্ষনস্থায়ী ভাবোচ্ছাসকে প্রকৃত ধর্ম পিপাসা বলে ভুল হবার সম্ভাবনা।আমরা নিজেরাই এরূপ খেয়াল করিতে পারি।হয়তো কাউকে খুব ভালোবাসতাম,তার মৃত্যুতে আঘাত পেলাম।মনে হতে পারে,যা ধরছি তাই বুঝি হাত ফসকে চলে যাচ্ছে।আমাদের একটি দৃঢ় আশ্রয় খুজতে হবে,এর জন্য ধর্ম অতীব জরুরী।কিন্তু কয়েকদিন পরে দেখা গেল,সেই ভাব তরঙ্গ আর নেই।আমরা যেইভাবে ছিলাম,সেইভাবেই আছি।আর যতদিন এই মিথ্যা ভাবোচ্ছাসকে ভুল করে ধর্ম পিপাসা মনে করব,ততদিন ধর্মের জন্য যথার্থ ব্যকুলতা জন্মাবে না।আর ততদিন শক্তি সঞ্চারককারী পুরুষেরও সাক্ষাৎ পাব না।
বাধা আরো আছে।অনেকে অজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়েও অহংকারে নিজেকে সর্বজ্ঞ মনে করে।
"অজ্ঞানে আচ্ছন্ন,অতি নির্বুদ্ধি হইলেও নিজেদের মহাপন্ডিত মনে করিয়া মূঢ় ব্যক্তিগণ অন্ধের দ্বারা নীয়মান অন্ধের ন্যায় প্রতিপদবিক্ষেপেই স্থলিতপদ হইয়া পরিভ্রমন করে।"
এইরূপ মানুষেই জগত পরিপূর্ণ।সকলেই গুরু হতে চায়,ভিখারী লক্ষ টাকা দান করতে চায়।এমন লোক যেমন সকলের নিকট হাস্যাস্পদ হয়,এই গুরুগণও তেমনি।

লেখকঃ সুমন সরকার
Share:

২৫ অক্টোবর ২০১৭

ভগবান আর ভগবা‌নের নাম জ‌পের মাহাত্ম্য কি ভিন্ন - না একই ?

যে বস্তুর নাম গুড় , তার সেই না‌মে গুড় নামক বস্তুর অভাব আ‌ছে অর্থাৎ গু‌ড়ের নাম‌টির ম‌ধ্যে গুড় নেই । যতক্ষণ রস‌নে‌ন্দ্রিয় বা জি‌ভের স‌ঙ্গে সম্বন্ধ না করা হ‌চ্ছে ততক্ষণ মুখ মিষ্টতা লাভ করে না , কেননা জি‌ভে গুড় নেই । ঠিক এইরকম ধনীর নাম নি‌লে ধন প্রাপ্ত হয় না । কেননা ধনী নাম‌টির স‌ঙ্গে ধ‌নের কোন অ‌স্তিত্ব নেই । কিন্তু ভগবা‌নের নাম‌টির স‌ঙ্গে ভগবান সর্বদা হ‌া‌জির । নামী ( ভগবান ) থে‌কে নাম আলাদা নন এবং নাম থে‌কে নামী ( ভগবান ) আলাদা নন । নামী‌তে নাম উপ‌স্থিত এবং না‌মেও নামী হা‌জির । অতএব নামীর অর্থাৎ ভগবা‌নের নাম নি‌লে ভগবান‌কে পাওয়া যায় ও নামী স্বয়ং প্রক‌টিত হন ।

কৃষ্ণে‌তি নামা‌নিচি নিঃসর‌ন্তি রা‌ত্রি‌ন্দিবং বৈ প্র‌তি‌রোমকূপাৎ ।

যস্যার্জুনস্য প্র‌তি তং সুগীতগী‌তে ন না‌ম্নো ম‌হিমা ভ‌বেৎ কিম্ ।।

নাম এবং নামী অর্থাৎ ভগবন্নাম এবং ভগবান অ‌ভেদ , অতএব দু‌টি‌কে ম্মরণ করার একই মাাহাত্ম্য । ভগবন্নাম তিনরূ‌পে নেওয়া যায় --

১। ম‌নের দ্বারা - ম‌নের দ্বারা নাম স্মরণ হয় , যার বর্ণনা ভগবান ' যো মাং স্মর‌তি নিত্যশঃ ' ( ৮\১৪ ) পদদ্বারা ক‌রে‌ছেন ।

২ । বাণীর দ্বারা - বাণীর দ্বারা নামজপ হয় , যা‌কে ভগবান ' যজ্ঞানাং জপয‌জ্ঞোহ‌স্মি ' ( ১০\২৫ ) পদদ্বার‌া নি‌জের স্বরূপ ব‌লে‌ছেন।

গীতায় ভগবান ওঁ , তৎ , সৎ পরমাত্মার এই তিন‌টি নাম ব‌লে‌ছেন - " ওঁ তৎস‌দি‌তি নি‌র্দে‌শো ব্রহ্মণস্ত্রি‌বিধঃ স্মৃতঃ । প্রণব বা ওঁকার‌কে ভগবান নি‌জের স্বরূপ ব‌লে জানি‌য়ে‌ছেনন। ' প্রণব সর্ব‌বে‌দেষ‌ু ( ৭\৮ ) । ' গিরাম‌স্ম্যেকমক্ষ‌রম্ ' ( ১০\২৫ ) । ভগবান ব‌লে‌ছেন , যে মানুষ ওঁ - এই অক্ষর প্রণব উচ্চারণ ক‌রে এবং আমা‌কে স্মরণ ক‌রে শরীর ত্যাগ ক‌রে , সে পরমগ‌তি প্রাপ্ত হয় । ( ৮\১৩)

অর্জুনও ভগবা‌নের বিরাট রূ‌পের স্তু‌তি দ্বার‌া ম‌হিমা কীর্তন ক‌রে‌ছেন , যেমন - ' হে প্রভু ! অ‌নেক দেবতা বিহ্বল হ‌য়ে হাত জোড় ক‌রে আপনার ম‌হিমা কীর্তন কর‌ছেন । ' হে অন্তর্যামী ভগবান ! আপনার নাম ইত্যা‌দির কীর্তন করার এই সম্পূর্ণ জগৎ আন‌ন্দে বি‌ভোর হ‌য়ে প্রেমানুরাগ প্রাপ্ত হ‌চ্ছে । আপনার নামা‌দি কীর্তনে ভীত হয়ে রাক্ষসগণ দশ‌দি‌কে ছু‌টে পালা‌চ্ছে এবং সিদ্ধগণ আপনা‌কে নমস্কার জানা‌চ্ছে ।

জ্ঞাতব্য == সুষু‌প্তি বা গভীর নিদ্রার সম‌য়ে সকল ই‌ন্দ্রিয় ম‌নে , মন বু‌দ্ধি‌তে , ব‌ু‌দ্ধি অহং - এ এবং অহং অ‌বিদ্যা‌তে লীন হ‌য়ে যায় , অর্থাৎ সুষুপ্তি‌তে অহংভা‌বের আভাসও থা‌কে না । গভীর নিদ্রাভ‌ঙ্গে প্রথ‌মে অহংভা‌বের আভাস হয় , প‌রে ক্রমশঃ দেশ , কাল , অবস্থা ইত্যা‌দির আভাস হয় । কিন্তু গভীর নিদ্রায় নি‌দ্রিত ব্য‌ক্তির নাম ধ‌রে ডাক‌লে সে জে‌গে ও‌ঠে , অর্থাৎ অ‌বিদ্যা‌তে লীন হওয়া গভীর নিদ্রায় নি‌দ্রিত ব্য‌ক্তি পর্যন্ত শব্দ পৌঁছায় । তাৎপর্য এই যে শ‌ব্দে অ‌চিন্তীয় শ‌ক্তি আ‌ছে , তাই শব্দ অ‌বিদ্যা‌কে ভেদ ক‌রে অহং পর্যন্ত পৌঁছায় । যেমন অনা‌দিকাল থে‌কে অবিদ্যায় আচ্ছা‌দিত জ্ঞানহীন ব্য‌ক্তির ম‌তো সংসা‌রে মোহগ্রস্ত ব্য‌ক্তির গুরুমু‌খে উপ‌দেশ শ্রবণ কর‌লে নি‌জের স্বরূপ সম্ব‌ন্ধে বোধ জাগ্রত হয় , অর্থাৎ অ‌বিদ্যাসম্পন্ন মানুষ‌কে শব্দদ্বারা তত্ত্বজ্ঞান করা‌নো যায় । শ‌ব্দে এমন বি‌শেষ শ‌ক্তি আ‌ছে যে , যা ই‌ন্দ্রি‌য়ের সাম‌নে নেই , শব্দ সেই প‌রোক্ষ বিষ‌য়ের জ্ঞান ক‌রি‌য়ে দেয় । এইরূপ যে ব্য‌ক্তি তৎপরতার স‌ঙ্গে ভগবৎ- নাম জপ ক‌রে , ঐ নাম তার স্বরূ‌পের বোধ করায় এবং ভগবা‌নের দর্শন পাই‌য়ে দেয় ।

তত্ত্বজ্ঞ জীবন্মুক্ত মহাপুরু‌ষের মুখ‌নিঃসৃত বাণী‌তে যে শব্দ ( উপদেশ ) নিঃসৃত হয় , শ্রদ্ধাসহকা‌রে য‌দি তা কেউ শো‌নে তবে তার আচরণ , ভাব সব‌কিছু শুধ‌রে যায় এবং অজ্ঞান দূরীভূত হ‌য়ে সে বোধসম্পন্ন হয় । কিন্তু যার বাণী‌তে অসত্য , কটুত্ব , বৃথা বাগাড়ম্বর , নিন্দা পরচর্চা ইত্যা‌দির দোষ থা‌কে তার কথায় কা‌রো উপর কোন প্রভাব প‌ড়ে না , কারণ তার এরূপ আচরণের ফ‌লে শ‌ব্দের শ‌ক্তি সংকু‌চিত হয় , তা‌তে শ‌ক্তি থা‌কে না । এইভা‌বেই স্বয়ং বক্তার মধ্যেও ভ্রম , প্রমাদ , লিপ্সা এবং করণাপাটব -- এই চার প্রকার দোষ থা‌কে ।

ভ্রম == বক্তা যে বিষয়‌টি বর্ণনা কর‌ছেন , তি‌নি য‌দি তা ঠিকম‌তো না জা‌নেন অর্থাৎ কিছুটা জা‌নেন আর কিছুটা জা‌নেন না - ত‌বে এ‌কে ' ভ্রম ' বলা হয় ।

প্রমাদ == যি‌নি উপ‌দেশ দেবার সময় সর্তক থা‌কেন না ,;‌বেপ‌রোয়া হ‌য়ে কথা ব‌লেন , শ্রোতা কোন শ্রেণীর , তারা কতটা বোঝে এই সমস্ত তি‌নি উপেক্ষা ক‌রেন - এ‌কে বলা হয় ' প্রমাদ ' ।

‌লিপ্সা = যে কোন ভা‌বে ( আমার ) পূজা হোক , সম্মান হোক , শ্রোতারা প্রচুর টাকা দিক , আমার স্বাথূ সিদ্ধ হোক , শ্রোতারা কোন প্রকা‌রে অধীন হোক , সব প‌রি‌স্থি‌তি অনুকূল হোক , বক্তা যদি এই সব ইচ্ছা রা‌খেন , - তা‌কে বল‌া হয় ' লিপ্সা ' ।

করণাপাটাব === ব‌ক্তব্যের শৈলী‌তে কুশলতা নেই , বক্তা শ্রোতার ভাষা জা‌নেন না , শ্রোতা কি ধর‌নের কথা বুঝ‌তে পার‌বে অর্থাৎ কিভা‌বে বর্ণনা কর‌লে শ্রোতারা বুঝ‌তে পার‌বে তা জা‌নে না , এ‌কে বলা হয় করণাপাটাব ।

এই চার দোষ বক্তার ম‌ধ্যে থাক‌লে তাঁর কথার শ্রোতার জ্ঞান উৎপন্ন হয় না । এই সকল দোষর‌হিত যে সকল শব্দ , তার দ্বারা শ্রোতার জ্ঞান উৎপন্ন হয় । শ্রোতাও য‌দি শ্রদ্ধা , বিশ্বাস , জিজ্ঞাসা , তৎপরতা , সংযতেন্দ্রিয়তা ইত্যা‌দি‌তে যুক্ত হয় এবং পরমাত্মাপ্রা‌প্তি য‌দি তার উ‌দ্দে‌শ্য হয় , তাহ‌লে বক্তার কথায় তাঁর জ্ঞান হয় । এর তাৎপর্য এই যে , বক্তা অ‌যোগ্য হ‌লে শ্রোতার ওপর কোন প্রভাব প‌ড়ে না এবং শ্রোতা অ‌যোগ্য হ‌লে তার ওপর বক্তার কোন প্রভাব প‌ড়ে না । দুজ‌নের যোগ্যতা থাক‌লে তাহ‌লেই বক্তার কথার প্রভাব শ্রোতার ওপর প‌ড়ে । কিন্তু ভগবা‌নের নামে এমনই শ‌ক্তি যে , মানুষ যেভা‌বেই তাঁর নামজপ করুক না কেন তার তা‌তে মঙ্গলই হয় ।

শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হ‌য়ে‌ছে

সা‌ঙ্কেতাং প‌রিহাস্যং বা স্তোডং হেলন‌মেব বা ।

‌বৈকুন্ঠনামগ্রহণ‌শেষাঘহ‌রং বিদুঃ ।। ( ৬\২\৯৪)

ভগবান নি‌জের নাম সম্ব‌ন্ধে ব‌লে‌ছেন , ' যে জীব শ্রদ্ধা বা অব‌হেলা‌তেও আমার নাম উচ্চারণ ক‌রে , তার নাম সর্বদা আমার অন্ত‌রে থা‌কে ' ---

শ্রদ্ধয়া হেলয়া নাম রট‌ন্তি মম জন্তবঃ ।

‌তেযাং নাম সদা পার্থ বর্ততে হৃদ‌য়ে মম ।।

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

শ্রীভগবা‌নের অবতারবাদ

সর্বাগ‌মেষু যে প্রোক্তা অবতারা জগৎপ্র‌ভোঃ ।
তদ্রহস্যং হি গীতায়াং কৃ‌ষ্ণেন ক‌থিতং স্বয়ম্ ।।

যি‌নি নিজ স্থি‌তি থে‌কে নি‌ম্নে অবত‌রণ ক‌রেন তাঁ‌কে ' অবতার ' বলা হয় । যেমন কোন শিক্ষক কোন বালক‌কে পড়াব‌ার সময় তার সমক্ষক হ‌য়ে পড়াতে থা‌কেন অর্থাৎ তি‌নি নি‌জে ' ক খ গ ঘ ইত্যা‌দি অক্ষর উচ্চারণ ক‌রে বালক‌কে উচ্চারণ শেখান এবং হাত ধরে তাকে অক্ষরগু‌লি লিখ‌তে শেখান , এ‌টি হল সেই বাল‌কের কা‌ছে শিক্ষকের অবতার অর্থাৎ অবতরণ । গুরুও যেমন নিজ শি‌ষ্যের সম-‌স্থি‌তি‌তে এ‌সে অর্থাৎ শিষ্য যা‌তে বুঝ‌তে পা‌রে , এমনভা‌বে তার যোগ্যতা অনুসা‌রে উপ‌দেশ দেন , তেম‌নি ভগবান মানুষ‌কে ঠিকমত ব্যবহার এবং পারমা‌র্থিক শিক্ষা দেবার জন্য মানু‌ষের সম-‌স্থি‌তি‌তে আ‌সেন , অবতাররূপ ধারণ ক‌রেন ।

ভগবান সাধারণ মানু‌ষের ম‌তো জন্মান না । জন্ম না নি‌লেও তি‌নি জন্মের লীলা ক‌রেন , অর্থাৎ মাতৃগ‌র্ভেই আ‌সেন , কিন্তু মানু‌ষের ম‌তো গ‌র্ভে প্র‌বিষ্ট হন না । যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর আশ্রয় নি‌লেন , তখন প্রথ‌মে তি‌নি বসু‌দে‌বের ম‌নে উদয় হ‌লেন ও চক্ষু দ্বারা দেবকীর ম‌ধ্যে প্র‌বিষ্ট হ‌লেন এবং দেবকী মনের দ্বারা তাঁ‌কে ধারণ কর‌লেন ।

ত‌তো জগন্মঙ্গলমচ্যুতাংশং সমা‌হিতং শূরসূ‌তেন দেবী ।
দধার সর্বাত্মকমাত্মভূতং কাষ্ঠা যথাহহনন্দকরং মনস্তুঃ । ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০\২\১৮ )

--- যথা দীক্ষাকা‌লে গুরুঃ শিষ্যায় ধ্যানমুপ‌দিশ‌তি শিষ্যশ্চ ধ্যা‌নোক্তাং মূ‌র্তিং হৃ‌দি নি‌বেশয়‌তি তথা বসু‌দে‌বো দেবকীদৃ‌ষ্টেী স্বদৃ‌ষ্টিং নিদ‌ধৌ ।

দৃ‌ষ্টিদ্বারা চ হ‌রিঃ সংক্রামন্ দেবকীগ‌র্ভে আ‌র্ব্বিভূব । এ‌তেন রে‌তোরূ‌পেণাধানং নিরস্তম্ । ' ( অন্বিতার্থ - প্রকা‌শিকা )

গীতায় ভগবান বলে‌ছেন --- ' আমি অজ ( জন্মর‌হিত ) হওয়া স‌ত্ত্বেও জন্মগ্রহণ ক‌রি , অর্থাৎ আমার জন্মর‌হিত স্বভাব যেমন তেম‌নি থা‌কে । আ‌মি অব্যয় ( স্বরূ‌পে নিত্য ) আত্ম‌া হয়েও অন্তর্ধান হই অর্থাৎ আমার তা‌তে নিত্য - প্রকা‌শিত স্বভাবের কিছুমাত্র হা‌নি হয় না । আ‌মি সমস্ত প্রা‌ণিকু‌লের , সমস্ত জগৎ -সংসা‌রের ঈশ্বর বা প্রভু হওয়া স‌ত্ত্বেও অবতাররূপে মাতা‌পিতার আজ্ঞা পালন ক‌রি , তা‌তে আমার ঈশ্বরত্ব বা ঐশ্বর্য কিছুমাত্র ক‌মে না । মানুষ নিজ -স্বভা‌বের বা প্রকৃ‌তির বশ ক‌রে স্বাধীনভাবে স্বেচ্ছায় অবতার রূ‌পে জন্মগ্রহণ ক‌রি ( ৪\৬ )
ভগবান নি‌জের অবতারত্ব গ্রহ‌ণের কাল চি‌হ্নিত কর‌তে গি‌য়ে বলে‌ছেন , 'যখন ধর্ম হ্রাস পে‌য়ে অধর্ম ব‌র্ধিত হয়ে ও‌ঠে তখন আ‌মি অবতাররূ‌পে জন্মগ্রহণ ক‌রি , জগ‌তে প্রকাশিত হই । নি‌জের অবতর‌ণের প্র‌য়োজন জানা‌তে গি‌য়ে বল‌লেন , ' ভক্ত‌দের এবং তা‌দের ভাব রক্ষার জন্য , অন্যায় - অত্যাচারকারী দুষ্ট‌দের দম‌নের জন্য , ধ‌র্মের সংস্থাপন বা দৃঢ়রূ‌পে প্র‌তিষ্ঠা এবং ধ‌র্মের পুনরুত্থা‌নের জন্য আ‌মি যু‌গে যু‌গে অবতীর্ণ হই । এইরূপ জন্মর‌হিত অ‌বিনাশী এবং ঈশ্বররূপ আমা‌র ম‌হেশ্বর পরমভাব‌কে না জে‌নে যেসব মানুষ আমা‌কে অবহেলা ক‌রে , তিরস্কার ক‌রে , তারা মূর্খ । এইসব মূর্খ , মূঢ় ব্য‌ক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃ‌তির বশবর্তী হ‌য়ে যা কিছু আশা করে , যা কিছু শুভকর্ম ক‌রে , যে বিদ্যা আহরণ ক‌রে , তা সমস্তই ব্যর্থ হ‌য়ে যায় অর্থাৎ তা‌তে কোনও সৎ ফল পাওয়া যায় না । যে মানুষ আমার সর্ব‌শ্রেষ্ঠ অ‌বিনাশী পরম ভাবব না জে‌নে অব্যক্ত পরমাত্মাকে জন্ম-মৃত্যু চ‌ক্রে আবদ্ধ ব‌লে ম‌নে ক‌রে , সে ব্যক্তি বু‌দ্ধিহীন । এইরূপ ব্য‌ক্তির নিকট আ‌মি আমার আসলরূপে প্রকাশিত হই না ।

নাট‌কের সময় কেউ সঙ্ সাজ‌লে তখন সে অন্য‌দের কা‌ছে তার আসল প‌রিচয় দেয় না । কারণ সে তার আসল প‌রিচয় দি‌লে খেলাই পণ্ড হ‌য়ে যা‌বে । এইরূপ ভগবান যখন অবতার হ‌য়ে আ‌সেন তখন সক‌লের কা‌ছে নি‌জের আসল রূপ প্রকা‌শিত ক‌রেন না , সকল‌কে নিজ প‌রিচয়ও দেন না ,- ' নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য ( ৭\২৫) । কেননা নিজ প‌রিচয় দি‌লে আর লীলা কর‌তে পার‌বেন না । যেমন নাট‌কের সময় ভয়ংকর রূ‌পের কোন সঙ‌্কে দেখ‌লে তার আত্মীয়-স্বজনও চিন‌তে পা‌রে নো , ভ‌য় পায় । তখন সঙ্ সাজা লোক‌টি নিজের প্রিয়জন‌কে সঙ্কেতে নিজ প‌রিচয় দি‌য়ে ব‌লে , ' আ‌রে ! তুই ভয় পাস‌নে , আ‌মি তো সে-ই । ' তেম‌নি ভগবা‌নের অবতার -‌দেহ দে‌খে কোন ভক্ত ভয় পে‌লে ভগবান তা‌কে নি‌জ প‌রিচয় দি‌য়ে ব‌লেন , ' ভাই ! বয় পে‌য়ো না , আ‌মিই তো সে-ই । '

দুই বন্ধু ছিল । একজ‌ন বাজা‌রে গি‌য়ে দোকান খুলল এবং জি‌নিসপত্র সাজাল , যা‌তে খ‌রিদ্দার জি‌নিসপত্র দে‌খে কিন‌তে প‌া‌রে । অন্যজন পু‌লি‌শের বেশ ধারণ ক‌রে তার কাছে গি‌য়ে তা‌কে খুব ধমক দি‌তে লাগল । ' আ‌রো ! তুই এই রাস্তার ওপর কেন দোকান খু‌লে‌ছিস , শিগ‌্গির সব ওঠা , নাহ‌লে তোর না‌মে না‌লিশ পাঠা‌চ্ছি । ' তার কথায় সেই দোকানদার বন্ধু‌টি ভয় পে‌য়ে দোকান গোটা‌তে লাগল । তার এই ভীত ভাব দে‌খে পু‌লিশ সাজা বন্ধ‌ু‌টি বলল, ' আ‌রে ! তুই ভয় পাস‌্নে , আ‌মি তোর বন্ধু । ' এইরূপ অর্জু‌নের সাম‌নে ভগবান যখন‌ বিরাটরূ‌পে প্রক‌টিত হ‌লেন , তখন অর্জুন ভয় পে‌য়ে‌ছি‌লেন । তখন ভগবান নি‌জের সত্য প‌রিচয় দি‌য়ে অর্জুন‌কে সান্ত্বনা জানা‌লেন ।

COurtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

বর্তমা‌নে ধর্ম লোপ পাচ্ছে এবং অধর্ম বে‌ড়ে যা‌চ্ছে এবং উন্নতমনা পুরু‌ষেরাও দুঃখ পা‌চ্ছেন , তবুও ভগবান কেন অবতাররূ‌পে জন্মগ্রহণ কর‌ছেন না ?


এখনও ভগবা‌নের অবতর‌ণের সময় হয় নি । কারণ শা‌স্ত্রে , ক‌লিযু‌গে যেরূপ অধঃপত‌নের কথা বলা হ‌য়ে‌ছে , তার থে‌কেও বে‌শি অধঃপতন যদি হয় তবেই ভগবান অবতার-‌দেহ ধারণ কর‌বেন । এখনও সেই সময় হয় নি । ত্রেতাযু‌গে রাক্ষ‌সেরা ঋ‌ষি-মু‌নিদের মেরে খে‌য়ে হা‌ড়ের পাহাড় তৈরী ক‌রে‌ছিল , ত‌বেই ভগবান অবতরণ ক‌রেছি‌লেন ।

বর্তমা‌ন ক‌লিযু‌গে দেখা যায় যে , সেইরূপ অত্যাচার-অনাচার এখনও হয় নি । ধর্ম য‌দিও সামান্য মাত্রায় হ্রাস পায় , তখন ভগবান আ‌ধিকা‌রিক পুরুষ‌দের পা‌ঠি‌য়ে তা ঠিকম‌তো চালাবার ব্যবস্থা ক‌রেন অথবা স্থা‌নে স্থা‌নে সাধু- মহাত্ম্য প্রক‌টিত হ‌য়ে তাঁ‌দের আচরণ এবং ভাষণ দ্বার‌া মানুষ‌কে স‌ঠিক প‌থে প‌রিচা‌লনা ক‌রেন ।

একভা‌বে দেখ‌তে গে‌লে ভগবা‌নের অবতার নিত্য । এই জগৎ-সংসার ভগবা‌নেরই অবতার-রূপ । সাধকগ‌ণের কাছে সাধ্য এবং সাধনরূ‌পেই ভগবান অবর্তীণ । ভক্ত‌দের জন্য ভ‌ক্তিরূ‌পে , জ্ঞান‌যোগী‌দের কা‌ছে জ্ঞেয়রূ‌পে , কর্ম‌যোগী‌গ‌ণের কা‌ছে কর্তব্যরূ‌পে ভগবানই অবতার । ক্ষ‌ু‌ধি‌তের কা‌ছে অন্নরূ‌পে , পিপাসার্ত‌দের কা‌ছে জলরূ‌পে , বস্ত্রহীন‌দের কা‌ছে বস্ত্ররূ‌পে এবং রো‌গী‌দের কা‌ছে ঔষধরূ‌পে তাঁরই অবতাররূপ ।

ভোগী‌দের কা‌ছে ভোগরূ‌পে , লোভী‌দের কা‌ছে অর্থ , বস্তু ইত্যা‌দি রূ‌পেই তি‌নি অবতীর্ণ । গর‌মে শীতল ছায়া , শী‌তে উষ্ণ বস্ত্র ভগবা‌নের অবতার রূপ । এর তাৎপর্য এই যে , জড় -চেতন , স্থাবর -জঙ্গম ইত্যা‌দি সকল রূপই তাঁর অবতার রূপ , কেননা বাস্ত‌বে তি‌নি ছাড়া দ্বিতীয় কোন কিছুর অ‌স্তিত্বই নেই - ' বাসু‌দেব সর্বম্ ' ( ৭\১৯ ) , ' সদসচ্চাহম্ ' ( ৯\১৯ ) । কিন্তু যে ব্য‌ক্তি জগৎ-সংসার রূ‌পে প্রক‌টিত প্রভু‌কে ভোগ্য ম‌নে ক‌রে নি‌জে‌কে তার অধিকারী ভা‌বে , তার পতন হয় এবং সে জন্ম- মরণ চ‌ক্রে আব‌র্তিত হ‌তে থা‌কে ।

যাঁরা ম‌নে ক‌রেন ভগবান শুধুই নিরাকার , সাকার হন না , তাঁদের সে ধারণা এ‌কেবা‌রেই ভুল । কেননা প্রা‌ণিমাত্রই অব্যক্ত ( নিরাকার ) এবং ব্য‌ক্ত ( সাকার ) হ‌য়ে থা‌কে । এর অর্থ এই যে সমস্ত প্রাণী প্রথ‌মে অব্যক্ত ( অপ্রকাশিত ) , মাঝে ব্যক্ত ( প্রকা‌শিত ) , এবং শে‌ষে আবার অব্যক্ত ( অপ্রকা‌শিত ) হ‌য়ে যায় ( ২\২৮ ) । পৃ‌থিবীরও দুই রূপ নিরাকার এবং সাকার ।

পৃ‌থিবী তন্মাত্ররূ‌পে নিরাকার এবং স্থূলরূ‌পে সাকার হয়ে আ‌ছে । জল পরমাণুরূ‌পে নিরাকার এবং মেঘ , বৃ‌ষ্টি , শিলারূ‌পে সাকার হ‌য়ে আ‌ছে । বায়ু নিষ্পন্দরূ‌পে নিরাকার , স্পন্দনরূ‌পে সাকার । দিয়াশলাই , কাঠ , পাথর ইত্যা‌দি আগুন নিরাকাররূ‌পে অব‌স্থিত এবং ঘর্ষণ ইত্যা‌দি সাধন দ্বারা সাকার রূপ ধারণ ক‌রে । এইরূপে সৃ‌ষ্টিমাত্রই নিরাকার এবং সাকার হ‌তে থা‌কে ।

প্রলয় এবং মহাপ্রলয় কা‌লে সৃ‌ষ্টি নিরাকার থা‌কে এবং কল্প ও মহাক‌ল্পের সম‌য়ে সাকার রূপ ধারণ ক‌রে । য‌দি প্রা‌ণিকুল নিরাকার ও সাকার হ‌তে পারে , পৃ‌থিবী , জল ইত্যা‌দি মহাভূত নিরাকার ও সাকার হ‌তে পা‌রে , সৃ‌ষ্টিও নিরাকার - সাকার হ‌তে পারে , তাহ‌লে ভগবান কি নিরাকার ও সাকার হ‌তে পারে না ? তাঁর নিরাকার ও সাকার হওয়া‌তে কি‌সের বাধা ?

এইজন্য ভগবান গীতায় ব‌লে‌ছেন , ' সমস্ত জগৎ আমার অব্যক্ত স্বরূ‌পে ব্যাপ্ত হ‌য়ে আ‌ছে ' - ' ময়া তত‌মিদং সর্বং জগদব্যক্তমূ‌র্তিনা ' ( ৯\৪ ) । এখা‌নে ভগবান নি‌জে‌কে ' ময়া ' পদ দ্বারা ব্যক্ত বা সাকার এবং ' অব্যক্তমূ‌র্তিনা ' বাক্য দ্বারা অব্যক্ত বা নিরাকার ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন ।

সপ্তম অধ্যা‌য়ের চতু‌র্বিংশ শ্লো‌কে ভগবান ব‌লে‌ছেন , ' যারা আমা‌কে অব্যক্ত বা নিরাকার ব‌লেই শুধু মা‌নে , ব্যক্ত বা সাকার বলে নয় , তারা বু‌দ্ধিহীন আর যারা ব্যক্ত বা সাকার ব‌লে ম‌নে ক‌রে , অব্যক্ত বা নিরাকার ব‌লে নয় , তারাও বুুদ্ধিহীন । কেননা এই দুই পক্ষই আমার পরম ভ‌াব‌কে জা‌নে না । 'ভগবান হ‌চ্ছেন সাকার নিরাকার উভয়ই । যি‌নি পূর্ণরূ‌পে এই তত্ত্ব জা‌নেন তি‌নি প্রকৃত জ্ঞানী ।

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

গীতায় আশ্রয়ের বর্ণনা

জীবমা‌ত্রেরই স্বভাব হ‌চ্ছে যে সে কা‌রো না কা‌রো আশ্রয় গ্রহণ কর‌তে চায় এবং আশ্রিত থা‌কে । মনুষ্য ,পশু , পক্ষী , বৃক্ষ , লতা ইত্যা‌দি সমস্তই কা‌রো না করো আশ্রয় গ্রহণ ক‌রে থা‌কে , কারণ জীবমাত্রই সাক্ষাৎ পরমাত্মার অংশ । তারই জন্য জীব যতক্ষণ নিজ অংশী পরমাত্মার আশ্রয় গ্রহণ না ক‌রে , ততক্ষণ সে অপ‌রের আশ্রয় নি‌তে থা‌কে , পরাধীন হ‌তে থা‌কে এবং দুঃখও পে‌তে থা‌কে ।

মানু‌ষের বি‌বেক‌বোধ আ‌ছে অথচ নিজ বি‌বেক‌কে গুরত্ব না দি‌য়ে সে স্বয়ং সাক্ষাৎ অ‌বিনাশী পরমাত্মার চেতন অংশ হওয়া সত্ত্বেও বিনাশশীল জড়বস্তুর আশ্রয় গ্রহণ ক‌রে অর্থাৎ শরীর , বল , বু‌দ্ধি , যোগ্যতা , আত্মীয়- স্বজন , ধন - সম্প‌ত্তি ইত্যা‌দির আশ্রিত হয় - এ‌টি মনুষ্য - জীব‌নের এক‌টি মারাত্ম ভ্রা‌ন্তি ।

গীতায় অর্জুন ভগবা‌নের আশ্রয় গ্রহণ কর‌েই নিজ কল্যা‌ণের কথা জিজ্ঞাসা ক‌রে‌ছেন । যতক্ষণ পর্যনাত অর্জুন ভগবা‌নের আশ্রয় গ্রহণ ক‌রেন নি , ততক্ষণ গীতার উপ‌দেশ আরম্ভ হয় নি । উপ‌দে‌শের আরম্ভ এবং অবসান ভগবৎ আশ্র‌য়েরই কথা বলা হ‌য়ে‌ছে ।

ঈশ্বরপ্রদত্ত স্বাধীনতায় মানুষ তার ইচ্ছাম‌তো যে কা‌রোরই আশ্রয় গ্রহণ বর‌তে পা‌রে । সুতরাং কেউ কেউ নিজ কামনাপূ‌র্তির উ‌দ্দে‌শ্যে দেবতা‌দের আশ্রয় গ্রহণ ক‌রে । কিন্তু প‌রিণা‌মে তারা বিনাশশীল ফলই লাভ ক‌রে থা‌কে । কিছু মানুষ ভোগা‌দি কামনায় বে‌দোক্ত সকাম অনুষ্ঠা‌নের আশ্রয় নেয় এবং প‌রিণা‌মে তারা পুনঃ পুনঃ মর্ত্য‌লো‌কে আগমন ক‌রে ।

কিছু মানুষ আবার ভগবা‌নেরও আশ্রয় নেয় না এবং ভগবান‌কে ভগবান ব‌লে ম‌নে ক‌রে না , সুতরাং এইসব মানু‌ষের মধ্যে কেউ আসুরীভা‌বের আশ্রয় নেয় । কিছু ব্য‌ক্তি আসুরী , রাক্ষসী এবং মোহিনী প্রকৃতির আশ্রয় নেয় । কেউ কেউ অপূরণীয় কামনায় বশীভূত হয় । কেউ আমৃত্যু অপার চিন্তার আশ্রয় নেয় । কেউ অহংকার , দুরাগ্রহ , গর্ব , কামনা এবং ক্রোধের আশ্রয় নেয় । এই আশ্রয় নেয় । এই আশ্রয় নেওয়ার ফ‌লস্বরূপ তা‌দের বাবংবার চুরাশী লক্ষ যো‌নি এবং নর‌কে পরিভ্রম‌ণ কর‌তে হয় । এও এক তার ভ্রা‌ন্তি ।

ভগবদ্মুখীন মানুষ ভগবা‌নের এবং তাঁর দয়া , ক্ষমা , সমতা ইত্যা‌দি গুণগু‌ণির ( দৈবী সম্প‌দের ) আশ্রয় গ্রহণ ক‌রে এবং প‌রিণা‌মে ভগবান‌কে লাভ ক‌রে । সুতরাং গীতায় ' মামুপা‌শ্রিতঃ ' ( ৪\১০) , ' মদাশ্রয়ঃ ' ( ৭\১ ) , ' মা‌মেব যে প্রপদ্য‌ন্তে ( ৭\১৪ ) , ' মামা‌শ্রিত্য যত‌ন্তি যে ' ( ৭\২৯ ) , ' মাং হি পার্থ ব্যপা‌শ্রিতা ' ( ৯\৩২ ) , মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ ' ( ১৮\৫৬ ) , ' ত‌মেব শরণয় গচ্ছ ' ( ১৮\৬২ ) , ' মা‌মেকং শরণং ব্রজ ' ( ১৮\৬৬ ) ইত্যা‌দি পদগু‌লি‌তে ভগবা‌নের আশ্র‌য়ের কথা বলা হ‌য়ে‌ছে , এবং ' দৈবী প্রকৃ‌তিমা‌শ্রিতা ' ( ৯\১৩ ) এবং ' বু‌দ্ধি‌যোগমুপাশ্রিত্য' ' ( ১৮\৫৭) পদগু‌লি‌তে দৈবী সম্প‌দের আশ্র‌য়ের কথা বলা হ‌য়ে‌ছে ।

এর তাৎপর্য এই যে , গীতায় যেসকল সাধন প্রণালীর কথা বলা হ‌য়ে‌ছে , তার ম‌ধ্যে সব থে‌কে শ্রেষ্ঠ এবং সহজ সাধন হ‌লো ভগবা‌নের শরণাগত হওয়া । যে ভগবা‌নের শরণাগত হয়ে সাধনা ক‌রে তার সাধনার সি‌দ্ধি খুবই শীঘ্র এবং সহজে হয় ।

এই কথা ভগবা‌ন গীতায় স্পষ্টভা‌বেই ব‌লে‌ছেন , যে আমার শরণাগত হয়ে সমস্ত কর্ম আমা‌তে অর্পন ক‌রে , আ‌মি সেই ভক্তকে মৃত্যুরূপ সংসার- সাগর থে‌কে অ‌চিরাৎ উদ্ধার ক‌রে থা‌কি । যারা আমার আশ্রয় নি‌য়ে মু‌ক্তিলা‌ভের জন্য যত্ন ক‌রে তারা ব্রহ্ম , অধ্যাত্ম এবং সম্পূর্ণ কর্ম তথা অ‌ধিভূত , অ‌ধি‌দৈব এবং অ‌ধিযজ্ঞ সহ আমা‌কে জান‌তে পা‌রে অর্থাৎ আমার সমগ্ররূপ অবগত হয় । ভগবান তাঁর আশ্রয় গ্রহণকারী ভক্ত‌দের সমস্ত যোগী‌দের ম‌ধ্যে শ্রেষ্ঠ ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন । সুতরাং সাধ‌কদের উ‌চিত তাঁরা যে সাধনাই করুন ভগবা‌নের আশ্রয় নি‌য়েই তা করা ।

জীব স্বয়ং পরমাত্মার অংশ এবং স্থূল , সূক্ষ্ম ও কারণ -শরীর প্রকৃ‌তির অংশ । ক্রিয়া এবং পদা‌র্থের যে আশ্রয় তা স্থূল শরী‌রের আশ্রয় ( স্থল শরীর ছাড়াও অর্থ , গৃহ , পুত্র , পৌত্র , আত্মীয় , জ‌মি - জায়গা ইত্যা‌দির যে আশ্রয় তা তো বি‌শেষভা‌বেই জড়‌ত্বের আশ্রয় ) । বিদ্যা , বু‌দ্ধি , সদ্গুণ , যোগ্যতা প্রভৃ‌তির যে আশ্রয় তথা চিন্তা , ধ্যান , মননের যে আশ্রয় তা সবই সূক্ষ্ম - শরী‌রের আশ্রয় ।

যাতে ব্যুত্থান ( উত্তরণ ) হয় , সেই সমা‌ধির আশ্রয় নেওয়া হ‌লো কারণ - শরী‌রের আশ্রয় । আর সমা‌ধি দ্বারা যে সকল সি‌দ্ধি প্র‌া‌প্তি হয় , নি‌জের ম‌ধ্যে যা মহত্ত্বরূ‌পে প্রকা‌শিত হয় সে সবই সমা‌ধি‌কে‌ন্দ্রিক কা‌র্যের আশ্রয় - এ সবই হ‌লো বিনাশশীল বস্তুর আশ্রয় ।

জপ - ধ্যান , কথা - কীর্তন ইত্যা‌দির আশ্রয় হ‌লো সাধ‌নের আশ্রয় । ' আ‌মি ভগবা‌নেরই ' - এইপ্রকার ভগবা‌নের সঙ্গে একমাত্র সম্প‌র্কিত হওয়া হ‌লো সা‌ধ্যের ( ভগরা‌নের ) আশ্রয় । সাধ‌নের আশ্রয় নি‌লে সাধন - ভজন কর‌তে হয় , কিন্তু সা‌ধ্যের আশ্রয় নি‌লে সাধন স্বতঃস্ফূর্ত হয় , কর‌তে হয় না । বিনাশশীলের আশ্রয় দূরীভূত হ‌লেই ভগবৎপ্রা‌প্তির অনুভূ‌তি স্বতঃই হ‌য়ে যায় ।

কারণ ভগবান নিত্যপ্রাপ্ত , কেবল ক্ষণভঙ্গুর আশ্রয় গ্রহনই হ‌লো ঈশ্বর- প্রাপ্তির একমাত্র অন্তরায় । তাই সব‌কিছু ত্যাগ ক‌রে কেবলামাত্র ভগবা‌নের চর‌ণে আশ্রয় নিলে তি‌নিই তা‌কে নি‌জের আশ্রয় নে‌বেন । ভক্ত হ‌লেন ভগবা‌নের আর ভগবা‌ন ভ‌ক্তের । প্রেম- প্রী‌তি , ভাব -ভ‌ক্তি না থাক‌লে তা কখনই হয় ।

COurtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

নাম‌তো কেবলমাত্র শব্দ , তার দ্বারা কী কার্য সিদ্ধ হ‌বে ?

সাধারণভা‌বেও শব্দমাত্রে অ‌চিন্ত্য শ‌ক্তি আ‌ছে এবং না‌মে ভগবা‌নের স‌ঙ্গে সম্বন্ধ তৈ‌রি ক‌রার এক বি‌শেষ ক্ষমতা আ‌ছে অতএব ভগবা‌নের নাম যে কোন প্রকারেই নেওয়া হোন না কেন , তার দ্বারা মঙ্গলই হয় । যে বি‌শেষ ভাবসহ নাম জপ করে তার খুব শীঘ্রই লাভ হয় ।

নামজ‌পের সময় য‌দি ভাব কম হয় তাহ‌লেও নাম জ‌পে লাভ হয় , তবে কত‌দিন পর হ‌বে - তা বলা যায় না । নামজ‌পের সংখ্যা বেশী বা‌ড়ি‌য়ে দি‌লে ভাব তৈরী হয় , কেননা যাঁরা নাম জপ ক‌রেন , তাঁ‌দের অন্ত‌রে সূক্ষভাব থা‌কেই , না‌মের সংখ্যা বাড়া‌লে সেই ভাব প্রক‌টিত হয় ।

নামজপ কোন নিছক ক্রিয়া নয় । এ‌টি এক প্রকা‌রের উপাসনা , কারণ নামজপে জপকারীর লক্ষ্য এবং সম্বন্ধ ভগবা‌নের দি‌কেই থা‌কে । যেমন কর্মদ্বারা কল্যাণ হয় না , কর্ম নি‌জের ফল দান ক‌রে নষ্ট হ‌য়ে যায় , কিন্তু ক‌র্মের স‌ঙ্গে মুখ্যভা‌বে য‌দি নিষ্কামভাব থা‌কে তাহ‌লে সেই কম কল্যাণকারী হয়ে ও‌ঠে ।

তেম‌নি নামজপ য‌দি মুখ্যভাবে ভগবান‌কে লক্ষ্য রে‌খে করা হয় , তা হ‌লে নামজ‌পের দ্বারা ভগবৎসাক্ষাৎকার হ‌য়ে যায় । ভগবানকেই মুখ্যরূ‌পে লক্ষ্য কর‌লে নাম চিন্ময় হ‌য়ে ও‌ঠে এবং তা ক্রিয়ারূ‌পে থা‌কে না । শুধু তাই নয় , সেই চিন্ময়তা জপকারী‌তেও নে‌মে আ‌সে , অর্থাৎ যে ব্যক্তি জপ ক‌রেন তাঁর শরীরও চিন্ময় হয়ে যায় , তাঁর শরী‌রের জড়ত্ব নষ্ট হয় ।

যেমন , সন্ত তুকারাম সশরী‌রে ঈশ্বরধা‌মে গমন ক‌রে‌ছি‌লেন , ভ‌ক্তিম‌তি মীরার দেহ ভগবা‌নের বিগ্র‌হে মি‌শে গি‌য়ে‌ছিল , কবী‌রের দেহ অদৃশ্য হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছিল এবং সেই স্থা‌নে ফুল পাওয়া গি‌য়ে‌ছিল । চোখা‌মেলার ভক্তের অ‌স্তি‌তে ' বিট্ঠল ' না‌মের ধ্ব‌নি শোনা যেত । এই সব নাম ভগবা‌নের নাম জপের ফল ।

ভগবান কখন কা‌কে ভ‌ক্তিপ্রদান কর‌বেন তা ভ‌ক্তের উপর নির্ভর ক‌রে । যে যেভাব নি‌য়ে ভগবান‌কে ডা‌কেন ভগবান তা‌কে সেই ভাবই দান ক‌রেন । তাই ভগবা‌নের কাছে প্রার্থনা ক‌রি , যেন সর্বদা তাঁর নাম জ‌পে মত্ত থাক‌তে পা‌রি । যত বাধা আসুক তা যেন কিছু‌তেই নাম জ‌পে বিচ‌লিত কর‌তে না পা‌রে ।

শাস্ত্র এবং সাধু‌সন্তগণ ভগবৎনা‌মের যে ম‌হিমা গান ক‌রে‌ছেন , তা পু‌রোপু‌রি সত্য । শুধু তাই নয় , আজ পর্যনাত যত নাম -ম‌হিমা গীত হ‌য়ে‌ছে তা‌তেও তাঁর নাম‌ম‌হিমা পুরোপু‌রি কীর্তন করা হয়‌নি । এখা‌নো অ‌নেক নাম‌মহিমা বাকী আ‌ছে । কারণ ভগবান অনন্ত , তাই তাঁর নাম - ম‌হিমাও অনন্ত - হ‌রি অনন্ত , হ‌রিকথা অনন্তা । আমার যতটুকু জা‌নি তা সামান্যমাত্র । ভগবা‌নের ম‌হিমা ভগবা‌ন ছাড়া আর কে -বা বল‌তে প‌া‌রেন । এমন কি কেউ আ‌ছেন যে সম্পূর্ন নাম - ম‌হিমা কীর্তন করতে পা‌রেন ? তাই ভগবা‌নের প্র‌তি বিশ্বাস , শ্রদ্ধা , ভক্তি , ভাব , প্রেম ইত্যা‌দি রে‌খে তার নাম জপ করা ।

নামের মাহাত্মা‌কে স্বীকার না কর‌লে নাম‌কে অব‌হেলা বা অপমান করা হয় , তাই সেই নাম তত প্রভাব ফে‌লে না । মন দি‌য়ে নামজপ না করা , ই‌ষ্টের প্র‌তি ধ্যান সহকা‌রে নাম জপ না করা এবং হৃদয় থে‌কে নামকে মাহাত্ম্য না দেওয়া ইত্যা‌দি দোষ;ঘট‌লে নামের মাহাত্ম্য শীঘ্র দেখা;যায় না । হ্যাঁ , কোনভা‌বে মু‌খে নাম - জপ করতে থাক‌লে তা‌তেও লাভ হয় , তবে এ‌তে সময় লা‌গে ।

মন লাগুক না লাগুন নিরন্তর নামজপ কর‌লে , কখন‌ো বাদ না দি‌লে নাম মহারা‌জের কৃপায় সব কাজ হ‌য়ে যায় অর্থাৎ মন লা‌গতে থা‌কে , না‌মের ওপর শ্রদ্ধা জাগ্রত হয় ।য‌দি ভগবৎনা‌মে অনন্য ভ‌ক্তি থা‌কে এবং নিরন্তর নামজপ হ‌তে থাকে , ত‌বে স‌ত্যই তা‌তে লাভ হয় । কারণ , ভগবৎনাম জাগ‌তিক না‌মের ম‌তো নয় । ভগবান চিন্ময় , তাঁর নামও তাই চিন্ময় বা চেতন ।

রাজস্থা‌নে বুধারাম নামে একজন সাধু ছি‌লেন । তি‌নি তৎপরতার স‌ঙ্গে নামজপ শুরু কর‌লেন ।ক্র‌মে এমন হল যে স্বল্প সম‌য়ের জন্যও নামজপ বাদ পড়‌লে তাঁর অসহ্য ম‌নে হ‌তো । খাবার তৈরী হ‌য়ে গেল মা খে‌তে ডাক‌তেন , তিনি খে‌য়ে এ‌সে আবার নামজপ কর‌তে লে‌গে যে‌তেন । এক‌দিন তি‌নি মা‌কে বল‌লেন , ' মা ' রু‌টি খে‌তে অ‌নেক সময় লা‌গে , তু‌মি কেবল দা‌লিয়া ( গ‌মের খিচু‌ড়ি ) ক‌রে থালায় প‌রি‌বেশন কর‌বে , ঠাণ্ডা হ‌য়ে গেলে আমা‌কে খেতে ডাক‌বে ।

মা তখন সেইমত ব্যবস্থা কর‌লেন । আবার কিছু‌দিন পর বুধারাম বল‌লেন , ' মা খিচু‌ড়ি খে‌তেও সময় লা‌গে , এবার থে‌কে রাব্ ( আটা এবং জ‌লের মিশ্রণ বি‌শেষ ) কোরো আবার ঠাণ্ডা হ‌লে তখন খে‌তে ডা‌কো । ' এইভা‌বে তি‌নি নামজ‌পে বিভোর থাক‌তেন সবসময় । আর নামজপ কর‌তে থাক‌লে ত‌বেই বাস্ত‌বিক লাভ হয় । না‌মে অনন্ত শ‌ক্তি , শ্রদ্ধা - বিশ্বা‌সে নামের শ‌ক্তি বা‌ড়ে এবং শ্রদ্ধা - বিশ্বাস না থাক‌লে ক‌মে - একথা ঠিক নয় । ত‌বে যাঁ‌দের না‌মে শ্রদ্ধা -বিশ্বাস থা‌কে তাঁরা না‌মের দ্বারা লাভবান হয় এবং যাঁদের তা থা‌কে না তাঁ‌দের লাভ হয় না । দ্বিতীয়তঃ যাঁরা না‌মে শ্রদ্ধা - বিশ্বাস ক‌রেন না , তাঁদের নামাপরাধ হয় ।

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

গীতায় এক প্রত্যয়ের ম‌হিমা

জীবাত্মায় এক অং‌শে পরমাত্মা অপর অং‌শে প্রকৃ‌তির অ‌ধিষ্ঠান । জীবাত্মা যখন পরমাত্মার দি‌কে অগ্রসর হয় , তখন তার ম‌ধ্যে নিশ্চয়া‌ত্মিকা বু‌দ্ধি আ‌সে আর যখন সে প্রকৃ‌তির অংশ শরীর ও সংসা‌রের দি‌কে চা‌লিত হয় , তখন তার বু‌দ্ধি বহু দি‌কে ধা‌বিত হয় , ত‌ার অব্যবসা‌য়া‌ত্মিকা ব‌ু‌দ্ধি হয় ।

তাৎপর্য এই যে , পারমা‌র্থিক সাধ‌কের এইপ্রকার নিশ্চয়া‌ত্মিকা বু‌দ্ধি হয় যে , " পরমাত্মা‌কে পে‌তে হ‌বে , তা‌তে যাই হোন না কেন । ' কিন্তু যে ব্য‌ক্তি সাংসা‌রিক ধন - সম্পত্তি সংগ্রহ কর‌তে ও জাগ‌তিক সুখ‌ভোগ কর‌তে চায় , তার পরমাত্মাপ্রা‌প্তির উপায়স্বরূপ নিশ্চয়া‌ত্মিকা বু‌দ্ধি হয় না ।

অপরপ‌ক্ষে জাগ‌তিক ভোগ প্রা‌প্তির জন্য তার ম‌নে বিচা‌রের শেষ থা‌কে না । এর কারণ হ‌চ্ছে যে , পরমাত্মা এক এবং তাঁ‌কে পাবার নিশ্চয়া‌ত্মিকা বু‌দ্ধিও একই হয় । সাংসা‌রিক ভোগ অসংখ্য এবং তা ভোগ করবার ( ধন - সম্পত্তি ) সাধনও অ‌নেক , তাই সেইসব প্রা‌প্তির এক‌নিষ্ঠ বু‌দ্ধিও হয় না ।

পরমাত্মা সগুণ , নির্গুণ ইত্যা‌দি স্বরূ‌পের ভেদ থাক‌লে‌ও এইসকল স্বরূপ তত্ত্বতঃ এক এবং নিত্য । সুতরাং পরমাত্মার কোন এক‌টি স্বরূ‌পের প্রা‌প্তির নিশ্চয়তাও একই হয় । পরমাত্মাপ্রা‌প্তির লক্ষ্য য‌দি এক নিশ্চয় হয় , তাহ‌লে সমস্ত সাধনই সহজ সরল হ‌য়ে যায় এবং উ‌দ্দে‌শ্যে সি‌দ্ধির জন্য তৎপরতাও স্বতঃই হ‌য়ে যায় ।

যেমন কেউ য‌দি নি‌জে‌কে ঈশ্ব‌রের ভক্ত ব‌লে মে‌নে নেয় , তাহলে ঈশ্ব‌রের ভ‌ক্তি করা তার প‌ক্ষে স্বাভাবিক হ‌য়ে যায় । অর্থাৎ ভ‌ক্তি সম্বন্ধীয় কথা সে তখন গ্রহণ ক‌রে এবং ভ‌ক্তি -‌বি‌রোধী কথা সে তৎক্ষণাৎ ত্যাগ ক‌রে । কারণ সে তখন এই কথাই ভা‌বে যে , ' আ‌মি ভক্ত , কা‌জেই ভ‌ক্তি -‌বিরুদ্ধ কাজ আম‌ার করা উ‌চিত নয় । '

কিন্তু যা‌দের লক্ষ্য থা‌কে সংসা‌র- ভো‌গের , তা‌দের কখনও এ‌দি‌কে কখনও ও‌দি‌কে , এইরূপ নানারকম বাসনা ম‌নে জন্মা‌তে থা‌কে । সেই বাসনার কখনও অন্ত হয় না , কেননা এক বাসনা পূ‌রিত হবার সঙ্গে স‌ঙ্গে নতুন বাসনা উৎপন্ন হ‌তে থা‌কে । ফলে জীবন দুঃ‌খে প‌রিপূর্ণ হয়ে যায় ।

এই ব্যবসায়া‌ত্মিকা ( নিয়শ্চা‌ত্মিকা ) বুুদ্ধির এমনই ম‌হিমা যে অতি দুরাচার বা অ‌তি পাপ্র‌ি ব্য‌ক্তিও য‌দি , " আ‌মি পরমাত্ম‌া‌কে প্রাপ্ত হব ' - এইরূপ সিদ্ধান্ত ক‌রে , তাহ‌লে সে খুব শীঘ্র ধর্মাত্মা হ‌য়ে যায় । শুধু ধর্মাত্মাই নয় , তার নিত্য শা‌ন্তি লাভ হয় অর্থাৎ তার উ‌দ্দেশ্য সিদ্ধ হয় ।

অব্যবসায়া‌ত্মিকা বুদ্ধিযুক্ত মানুষ যতবার জন্ম নেয় ততবারই সে নানা উ‌দ্যোগ , প‌রিশ্রম কর‌তে থা‌কে , কিন্তু তার বাসনার পরিপূ‌র্তি হয় না । আস‌লে , নতুন নতুন বাসনা জন্মা‌তে থা‌কে , যার কখনো শেষ হয় না । য‌দি কখনও কোনও বাসনার পূ‌র্তি হয় , তাহ‌লে সেটিও ভ‌বিষ্য‌তে নতুন - নতুন কামনা সৃ‌ষ্টির কার‌ণ প‌রিণত হবে ।

এই তাৎপর্য এই যে , ব্যবসায়া‌ত্মিকা বু‌দ্ধি হ‌লে অব্যবসায়া‌ত্মিকা ব‌ু‌দ্ধি চ‌লে যায় , কিন্তু অব্যবসায়া‌ত্মিকা বু‌দ্ধি থাক‌া‌তে কখনো ব্যবসায়া‌ত্মিকা ( নিশ্চয়া‌ত্মিকা ) বু‌দ্ধি হয় না । সুতরাং মানু‌ষের উ‌চিত যে ,সে যেন শীঘ্র পরমাত্মা - প্রাপ্তি‌কে স্থির লক্ষ্য ক‌রে নেয় । কারণ পরমাত্মা - প্র‌া‌প্তির জন্য শরীর পাত হ‌য়ে গে‌লে আমরা ভগবৎপ্রা‌প্তি থে‌কে ব‌ঞ্চিতই র‌য়ে যায় ।


Courtsy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

ভ‌ক্তেরা ভগবান‌কে যে ভোগ অর্পন ক‌রেন , তা যে ভগবান গ্রহণ ক‌রেন তার প্রমাণ কি ?

ভগবা‌নের রাজত্বে বস্তুর প্রাধা‌ন্য নেই , আ‌ছে ভা‌বের প্রাধান্য । ভা‌বের জন্যই ভগবান ভক্ত-অ‌র্পিত বস্তু এবং পূজা‌দি ক্রিয়াকর্ম স্বীকার ক‌রেন । ভ‌ক্তের য‌দি ভাব হয় ভগবা‌নকে খাওয়াবার তখন ভগবানেরও খি‌দে পায় এবং তি‌নি প্রকট হ‌য়ে ভোজন ক‌রেন । ভ‌ক্তের ভাব বা ভা‌লোবাসা‌তে ভগবান যে বস্তু গ্রহণ ক‌রেন , সে বস্তু আর বিনষ্ট হয় না । তা দিব্য বা চিন্ময় হ‌য়ে যায় । য‌দি এইরূপ ভাব না - ও হয় , কিছু কম হয় , তাহ‌লেও ভক্ত ভোগ অর্পণ কর‌লেই ভগবান সন্তুষ্ট হন । ভগবা‌নের সন্তু‌ষ্টি বিধা‌নের জন্য বস্তু বা ক্রিয়ার প্রাধান্য নেই , শুধু ভা‌বেরই প্রাধান্য ।

একজন ব্যক্তি ছি‌লেন তাঁর একজন সাধুর উপ‌রে খুব শ্রদ্ধা ছিল এবং তি‌নি সাধুর খুব যত্ন কর‌তেন । তি‌নি বল‌তেন , ' সাধুর যখনই পিপাসা লাগত আমার ম‌নে হ‌তো যে তাঁর পিপাস‌া পে‌য়ে‌ছে , অতএব আ‌মি জল নি‌য়ে যেতাম এবং তি‌নি জল পান কর‌তেন । '

সেইরূপ যাঁরা প‌তিব্রতা স্ত্রী , তাঁরাও স্বামীর ক্ষুধা -তৃষ্ণার খবর ঠিক ম‌তো বুঝ‌তে পা‌রেন এবং স্বামী কি খে‌তে ভালবা‌সেন তাও তাঁরা বুঝ‌তে পা‌রেন । স্বামী‌কে খে‌তে দি‌লে তি‌নিও ব‌লে ও‌ঠেন , ' আজ আমার এইটাই খাবার ইচ্ছা হ‌য়ে‌ছিল । ' এইভা‌বেই যাঁর মন ভগবান‌কে ভোগ দেবারর আন্ত‌রিক বাসনা হয় তাঁর স্বতঃই ভগবা‌নের রু‌চি এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণার বিষ‌য়ে ধারণা হ‌য়ে যায় ।

এক ম‌ন্দি‌রে একজন পূজারী‌ ছি‌লেন । তাঁর ইষ্ট ছি‌লেন গোপাল । তি‌নি রোজ ছোট লাড্ডু বানা‌তেন এবং রা‌তে যখন গোপাল‌কে শয়ন করা‌তেন ,তখন মাথার কা‌ছে লাড্ডু রে‌খে দি‌তেন । কারণ বাল‌কের রা‌তে ক্ষুধা পেয়ে যায় । এক‌দিন পূজা‌রী লাড্ডু রাখ‌তে ভু‌লে যান , তখন গোপাল পূজারী‌কে স্ব‌প্নে দেখা দেন এবং ব‌লেন তাঁর ক্ষি‌ধে পে‌য়ে‌ছে । তারপর থে‌কে পূজারী প্র‌তি‌দিন লাড্ডু রাখ‌তেন । এমন আরেক‌টি ঘটনা আ‌ছে ।

এক সা‌ধু ছি‌লেন । ই‌নি প্র‌তিবছর দেওয়ালীর পর ঠাণ্ডার সময় ভগবান‌কে কাজু , বামা , পেস্তা , আখ‌রোট ইত্যা‌দি ভোগ দি‌তেন ল পরে কাজু , বাদাম ইত্যা‌দির দাম খুব বে‌ড়ে যাওয়ায় তি‌নি চীনা বাদাম দি‌য়ে ভোগ দিতে শুরু ক‌র‌লেন । এক‌দিন রা‌তে ভগবান স্ব‌প্নে জিজ্ঞাসা কর‌লেন , ' কি‌রে , তুই আমা‌কে শুধু চীনা বাদামই খাওয়া‌বি ?

সেই‌দি‌নের পর থে‌কে পুনরায় ভগবা‌নকে কাজু ইত্যা‌দি দি‌য়ে ভোগ দি‌তে আরম্ভ কর‌লেন । প্রথ‌মে তাঁর ম‌নে কিছু দ্বিধা ছিল যে , ' কি জা‌নি ভগবান ভোগ গ্রহণ ক‌রেন কিনা ? যখন ভগবান স্ব‌প্নে এইভা‌বে বল‌লেন তখন তাঁর দ্বিধা দূর হল । এর তাৎপর্য এই যে কেউ ভগবান‌কে আদর ক‌রে ভোগ দি‌লে তাঁরও ক্ষুধা পায় এবং তি‌নি তা গ্রহণ ক‌রেন ।

এক সাধু ছি‌লেন তাঁর আহার অত্যন্ত বেশী ছিল । একবার তাঁর দেহ রোগগ্রস্ত হয় । কোন এক ব্য‌ক্তি তাঁ‌কে পরামর্শ দেয় যে , ' মহারাজ , আপ‌নি গরুর দুধ খান এবং বাছুর‌টি দুধ খাওয়ার পর যেটুকু বাঁচ‌বে মাত্র সেইটুকুই খা‌বেন । ' তি‌নি সেই মত কর‌তে লাগলেন । গো- বৎস পেট ভ‌রে মা‌য়ের দু‌ধ খাওয়ার পর তি‌নি গরুর দুধ দোহা‌তেন , তা‌তে মাত্র এক‌পো বা দেড়‌পো পেতেন , কিন্তু তা‌তেই তাঁর পেট ভ‌রে যেত । কিছু‌দি‌নের ম‌ধ্যেই তাঁর অসুখ সে‌রে গেল এবং তি‌নি সুস্থ হ‌লেন ।

এর তাৎপর্য এই যে সাধুটি বিশ্বাস নি‌য়ে তা ক‌রে‌ছি‌লেন ফ‌লে তাঁর অসুখ সেরে যায় । য‌দি ন্যায়সঙ্গত বস্তু‌তে এ‌তো শ‌ক্তি থাক‌তে থা‌কে যে অল্পমাত্রায় গ্রহণ কর‌লেও তৃ‌প্তি হয় এবং অসুখ সে‌রে যায় তাহ‌লে যে বস্তু ভাবপূর্বক ভগবান‌কে দেওয়া হয় তার সম্ব‌ন্ধে কিছু আর বলার অ‌পেক্ষা থা‌কে না । কারণ এখা‌নে বিশ্বাস আ‌ছে যে ভগবান অবশ্যই গ্রহণ ক‌রবেন য‌দি তা ভ‌ক্তিভ‌রে অর্পন করা হয় ।

সক‌লেই অনুভব করে থা‌কেন যে কেউ য‌দি ভাব দ্বারা বা অনুরাগ সহকা‌রে ভোজন করায় তাহ‌লে সেই আহা‌রে সুস্বাদ পাওয়া যায় এবং সেই আহার দ্বারা বৃ‌ত্তিসকলও ভা‌লো থা‌কে । শুধু মানুষের ওপর নয় , পশু‌দের ওপরও এর প্রভাব প‌ড়ে । যে গোবৎ‌সের মা - গাভী‌টি মারা যায় , লো‌কে তা‌কে অন্য গাভীর দুধ খাওয়ায় , তা‌তে সেই বাছুর‌টি বেঁ‌চে যায় ।

য‌দি মানুষ বা পশুর ওপ‌রে ভা‌বের প্রভাব প‌ড়ে তাহ‌লে অন্তর্যামী ভগবা‌নের ওপ‌রেও সে ভা‌বের প্রভাব পড়‌বে তা‌তে আর বলার কি আ‌ছে ? বিদু‌রের স্ত্রীর এইরূপ ভাব ছিল ব‌লেই ভগবান তাঁর হাত থে‌কে কল‌ার খোসা পর্যন্ত খে‌য়ে‌ছি‌লেন । গোপিনী‌দের এইভাব ছিল বলেই ভগবান তাঁ‌দের হাত থে‌কে কেড়ে দই , মাখন খে‌য়ে‌ছি‌লেন ।

শ্রীব্রহ্মা‌কে ভগবান ব‌লে‌ছি‌লেন --

‌নৈ‌বেদ্যং পুর‌তো ন্যস্তং চক্ষুষা গৃহ্য‌তে ময়া ।

রসং চ দাস‌জিহ্বায়ামশ্না‌মি কম‌লোদ্ভব ।।

' হে কম‌লোদ্ভব ! আমার সাম‌নে অ‌র্পিত ভোগসমূহ আ‌মি নেত্র দ্বারা গ্রহণ ক‌রি , কিন্তু তার স্বাদ আ‌মি ভক্ত‌দের জিহ্বাদ্বারাই গ্রহণ ক‌রি ।

ভাবদ্বারা অ‌র্পিত ভোগদ্রব্য ভগবান কখনও দৃ‌ষ্টি দ্বারা , কখনও স্পর্শ দ্বারা আবার কখনও স্বয়ং কিছুটা গ্রহণও ক‌রেন ।

হামাগু‌ড়ি দেওয়া শিশু কোন বস্তু নি‌য়ে তার বাবা‌কে দি‌লে যেমন তি‌নি খুব খু‌শি হন এবং অ‌নেক উঁচু‌তে হাত দেখিয়ে ব‌লেন , ' বাবু , তু‌ই এতবড় হ , অর্থাৎ , আমার থে‌কেও বড় হয়ে ওঠ । ' কেন , বস্তু‌টি কি অলভ্য ছিল যে ‌শিশু‌টি সে‌টি দেওয়ায় তার বাবা বি‌শেষ কিছু পে‌লেন ? না , তা নয় ! কেবল শিশুর দেবার ভাব‌টি দে‌খে বাবা প্রসন্ন হ‌লেন ।

এইরূপ ভগবা‌নেরও কোন জি‌নি‌সের অভাব সেই , অথবা তাঁর কোন কিছু প্রাপ্তিরও ইচ্ছা নেই , কেবল ভ‌ক্তের দেবার ভাব‌টির জন্যই তি‌নি প্রসন্ন হন । কিন্তু যারা লোক দেখা‌নোর জন্য বা লোক ঠকা‌নো‌র জন্য ম‌ন্দির সাজায় ,ভগবা‌নের বিগ্রহ সাজায় , ভাল ভাল জি‌নিস দি‌য়ে ভোগ অর্পন ক‌রে , তা‌দের নৈ‌বেদ্য ভগবান গ্রহণ ক‌রেন না । কেননা তা ভগবা‌নের প্রকৃত পূজা নয় , সে‌টি আস‌লে ব্য‌ক্তিগত স্বা‌র্থের ও অ‌র্থেরই পূজা ।

যাঁর‌া ভগবান‌কে ভোগ নি‌বেদন ক‌রেন এবং তাঁর পূজা - অর্চনা ক‌রেন , এইরকম ব্য‌ক্তি‌কে যারা পাষণ্ড ব‌লে এবং অহংকারবশতঃ ভা‌বে , ' আ‌মি ও‌দের থে‌কে ভাল , আ‌মি পাষণ্ড নই ' তা‌দের কখ‌নো কল্যাণ হয় না । যে সব ব্য‌ক্তি যে ভা‌বেই হোক কোন উত্তম কর্ম করেন , তাঁ‌দের কা‌জের সেই অংশ তো ভাল হয়ই , তাঁ‌দের ব্যবহার , চলা‌ফেলার ম‌ধ্যেও ভালত্ব প্রকাশ পায় । কিন্তু যারা অহংকারবশতঃ উত্তম ব্যবহার প‌রিত্যাগ ক‌রে , প‌রিণা‌মে তা‌দের অকল্যাণই হয় ।

তাই যারা ভগবান‌কে ভোগ অর্পন কর‌বেন তা‌দের ভগবা‌নের প্র‌তি প্রেম - ভাব , ভ‌ক্তিভাব , বিশ্বাস , শ্রদ্ধা , প্রী‌তিপূর্ব্বক অর্পন কর‌তে হ‌বে । ম‌নে বিশ্বাস রা‌খতে হ‌বে যে ভগবান আমার অ‌র্পিত ভোগ গ্রহণ কর‌বেন । ত‌বেই ভগবান তা গ্রহণ ক‌রেন । ভগবান গীতায় ব‌লে‌ছেন , যি‌নি আমা‌কে প্রী‌তিপূর্ব্বক পত্র , পুষ্প , ফল ও জল ভ‌ক্তিস‌হিত অর্পন ক‌রেন আ‌মি তার সেই প্রদত্ত বস্তু গ্রহণ ক‌রি । তাই সর্বদা ভগবা‌নের প্র‌তি বিশ্বাস রাখুন ।

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

চূড়‌ালার কা‌হিনী

পৌরা‌ণিক সা‌হি‌ত্যে আমরা দেখ‌তে পাই , দুইজন মহীয়সী নারী অতুল বৈভ‌রের ম‌ধ্যে জীবনযাপন করেও ব্রহ্মজ্ঞান লাভ ক‌রে‌ছি‌লেন । একজন ঋতধ্বজ রাজার পত্নী মদালসা , আর একজন মালবরাজ শি‌খিধ্ব‌জের পত্নী চূড়ালা । গৃহসংসা‌রের সহস্র প্র‌লোভ‌নের মধ্যে থে‌কেও অ‌বিচ‌লিতভা‌বে আধ্যা‌ত্মিক সাধনা যে কত বড় তপস্যা , তা মদালসার মত চূড়ালাও দে‌খি‌য়ে‌ছেন ।

চূড়ালা তপ‌স্বিনী হ‌লেও রাজম‌হিষীর নিত্য কর্ম্মসাধ‌নে তাঁর বিন্দুমাত্র ক্রটি ছিল না । স্বামীর স‌হিত সর্ব‌বিষ‌য়ে সহ‌যো‌গিতা‌তেও তাঁর কোন ভুলভ্রান্ত্রি হত না । চূড়ালার সাধনা ছিল নিভৃ‌তে - এই সাধনার সন্ধান তাঁর স্বামীও রাখ‌তেন না । চূড়ালা যে দিব্যজ্ঞান লাভ ক‌রে‌ছি‌লেন - তাঁর অ‌ঙ্গে দিব্য‌জ্যো‌তি‌তে তা প্র‌তিফ‌লিত হত । অ‌ঙ্গের অসামান্য জ্যোতি কোথা হ‌তে আ‌সল , শি‌খিধ্বজ তা বুঝ‌তে পার‌তেন না । তি‌নি ভাব‌তেন - বু‌ঝি রাজ‌ভো‌গেই ঐ কা‌ন্তি তাঁর অ‌ঙ্গে সঞ্চা‌রিত হ‌য়ে‌ছে ।

চূড়ালা অবশ্য রাজ‌ভোগ্য উপকরণ কিছুই বর্জ্জন ক‌রেন নাই - অনাসক্তভা‌বে তি‌নি ভোগ কর‌তেন । তাঁর কা‌ছে স্বর্ণপাত্র ও মা‌টির পাত্র কোন প্র‌ভেদ ছিল না । রাজ‌র্ষি জনক যেভা‌বে রা‌জৈশ্ব‌র্য্যের ম‌ধ্যেই সাধনা ক‌রে‌ছি‌লেন , চূড়ালাও সেইভা‌বেই যোগ , ধ্যান , তপ - জপ ইত্যা‌দি অনুষ্ঠানে সাধনা কর‌তেন ।

পরম সা‌ধিকা মীরাবাঈ চরম প্রেমভ‌ক্তি লাভ কর‌লে ভোগাসক্ত স্বামীর অনুব‌র্ত্তিনী হ‌য়ে থাক‌তে পা‌রেন নি । কিন্তু চূড়ালা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ ক‌রেও তা পে‌রে‌ছি‌লেন । অরুন্ধতী , অনসূয়া , লোপামুদ্রা ইত্যা‌দি ঋ‌ষিপত্নীর জীব‌নে এইরূপ সমস্যাই ঘটে নি ।

চূড়ালার স‌হিত ধর্ম্মপ‌থে শি‌খিধ্ব‌জের কোন যোগ ছিল না । আশ্চ‌র্য্যের বিষয় , তবু কেবল চূড়ালার সংস‌র্গেই শি‌খিধ্ব‌জের ম‌নে ক্র‌মে বৈরা‌গ্যের উদয় হল । ম‌নে বৈরা‌গ্যের উদয় হওয়ামাত্র শি‌খিধ্বজ রাজসংসার ত্যাগ ক‌রে নিকটবর্ত্তী এক আশ্রমে চ‌লে গে‌লেন ।

চূড়াল‌া দেখ‌লেন - বিনা সাধনায় সহসা যে বৈরা‌গ্যের উদয় হ‌য়ে‌ছে , তা স্থায়ী হয় না । অথচ রাজার ম‌নে পরম ধ‌নের জন্য যে পিপাসা জ‌ন্মে‌ছে , তা নষ্ট হ‌য়ে যায় , তাও বাঞ্ছনীয় নয় ।

চূড়ালা রাজ্যম‌ধ্যে প্রচার কর‌লেন , রাজা তীর্থপ‌রিক্রমায় যাত্রা ক‌রে‌ছেন । যত‌দিন না ফি‌রেন , তত‌দিন তি‌নিই রাজ্যপালন কর‌বেন । চূড়ালা সারাদিন নিয়মমত ধর্ম্মানুসা‌রে রাজকার্য্য কর‌তেন । রা‌ত্রিকা‌লে পুরুষ‌বে‌শে রাজার আশ্রমে গি‌য়ে রাজা‌কে জ্ঞান ও উপ‌দেশ দি‌তেন । পুরুষ‌বেশী চূড়ালাই রাজার গুরু হ‌লেন । ক্র‌মে রাজা সংসা‌রের অসারতা সম্যক্- রূ‌পে বুঝ‌তে লাগ‌লেন । চূড়ালা গুরুরূ‌পে রাজা‌কে রাজসংসা‌রে ফি‌রে যে‌তে আ‌দেশ দি‌লেন , কিন্তু রাজা আর ফিরতে চাই‌লেন না ।

চূড়াল‌ি এইবার রাজাকে ব্রহ্ম‌বিদ্যা সম্ব‌ন্ধে উপ‌দেশ দি‌তে লাগ‌লেন । ক্র‌মে রাজার ব্রহ্মজ্ঞান জ‌ন্মে । এই ব্রহ্মজ্ঞা‌ন লাভ ক‌রে রাজা বু‌ঝতে পা‌র‌লেন - রাজধর্ম্মপালন ব্রহ্মজ্ঞানের বি‌রোধী নয় , ব্রহ্মজ্ঞানীর প‌ক্ষে সংসা‌রে আর সন্ন্যা‌সে কোন প্র‌ভেদ নাই , ব‌নে ও ভব‌নে কোন পার্থক্য নাই , স্বর্ণ ও শিখাখ‌ণ্ডে কোন তফাৎ নেই ।

তখন চূড়ালা আত্মপ্রকাশ ক‌রে রাজা‌কে আবার রাজসংসা‌রে ফি‌রে আন‌লেন । শি‌খিধ্বজও রাজ‌র্ষি জন‌কের মত রাজধর্ম্ম পালন কর‌তে লাগলেন ।

( যোগ‌বা‌শিষ্ঠ রামায়ণ ও বিষ্ণুপুরাণ )

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

আমা‌দের কি ত্যাগ কর‌তে হ‌বে এবং কার শরণাগত হব ?

' যদহঙ্কারমা‌শ্রিত্য ' - প্রকৃ‌তি থে‌কে মহত্তত্ত্ব এবং মহত্তত্ত্ব থে‌কে অহংকার উৎপন্ন হ‌য়ে‌ছে । সেই অহংকা‌রেরই এক বিকৃত অংশ - ' আ‌মি শরীর ' এই ভাব । এই বিকৃত অহংকা‌রের আশ্রয় গ্রহণকারী পুরুষ কখ‌নো ক্রিয়ার‌হিত হ‌তে পা‌রে না । কারণ প্রকৃ‌তি সর্বদা ক্রিয়া‌শীল ও প‌রিবর্তনশীল , তাই তার আশ্রয় গ্রহণকারী কো‌নো মানুষই কর্ম না ক‌রে থাক‌তে পা‌রেন না ।

মানুষ যখন অহংকারবশত ক্রিয়াশীল প্রকৃ‌তির বশীভূত হন , তখন তি‌নি কি ক‌রে ব‌লেন যে আ‌মি এই কর্ম‌টি করব , ওই কর্ম‌টি করব না ? অর্থাৎ প্রকৃ‌তির বশ হয়ে মানুষ করা বা না করা - এই দুই‌য়ের থে‌কেই মু‌ক্তি পান না । কারণ প্রকৃ‌তির দ্বারা বশীভূত মানুষের কিছু ' করাও' কর্ম আর ' না করাও ' কর্ম ।

কিন্তু মানুষ যখন প্রকৃ‌তির ব‌শে থা‌কে না , নি‌র্লিপ্তভা‌বে থা‌কে ( যা তার প্রকৃত স্বরূপ ) , তখন তার ক্ষে‌ত্রে করা এবং না - করার কথা প্র‌য়োজ্য হয় না । তাৎপর্য হল এই যে , প্রকৃ‌তির স‌ঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কর‌লে কর্ম না ক‌রে থাকা সম্ভব নয় । কিন্তু যি‌নি প্রকৃ‌তির স‌ঙ্গে সম্বন্ধ ছেদন ক‌রে‌ছেন বা সর্ব‌তোভা‌বে ভগবা‌নের শরণাগত হ‌য়ে‌ছেন , তি‌নি কর্ম কর‌তে বাধ্য থা‌কেন না ।

' ন যোৎস্য ই‌তি মন্য‌সে ' - দ্বিতীয় অধ্যা‌য়ে অর্জুন ভগবা‌নের শরণাগত হ‌য়ে শিক্ষা চাই‌ছি‌লেন - ' শিষ্য‌স্তেহহংশা‌ধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ' ( ২\৭ ) এবং তারপর অর্জুন স্পষ্ট ভাষায় জা‌নি‌য়ে দি‌লেন যে ' আ‌মি যুদ্ধ করব না - ' ন যৌৎ‌সো ' ( ২\৯) । ভগবানে এই কথা‌টি মনঃপুত হয়‌নি । ভগবান দেখ‌লেন যে , এ তো আমার শরণাগত হ‌য়ে‌ছিল আর আমি কিছু বলার আ‌গেই ব‌লে কিনা ' আ‌মি যুদ্ধ করব না । ' তাহ‌লে এটা কি আমার শরণাগ‌তি ? এ তো অহংকা‌রে শরণাগ‌তি হল ।

কারণ প্রকৃত শরণাগত ব্য‌ক্তি ' আ‌মি এটা করব , ওটা করব না ' ব‌লে না । ভগবা‌নের শরণাগত হ‌লে , তি‌নি যেমন করা‌বেন , তেমনই কর‌তে হ‌বে । অর্জু‌নের কথা ভে‌বেই তাঁর অত্য‌ধিক কৃপা ও স্নেহ থাকায় তি‌নি উপ‌দেশ দি‌তে শুরু করুন , ন‌চেৎ তখনই তি‌নি ব‌লে দি‌তেন ' যেমন খু‌শি , তেমন কর ' - য‌থেচ্ছ‌সি তথা কুরু ' ( ১৮\৬৩ ) । কিন্তু অর্জুনের এই যে কথা‌টি ' আ‌মি যুদ্ধ ক‌রব না ' ভগবা‌নের ম‌নে বিদ্ধ হ‌য়ে‌ছিল । তাই ভগবান সেই শব্দ‌টি - ' ন যোৎ‌স্যে ' এখা‌নে উ‌ল্লেখ ক‌রে ব‌লে‌ছেন যে তু‌মি অহংকারেরই শরণাগত , আমার নয় ।

য‌দি আমার শরণাগত হ‌তে তাহ‌লে ' যুদ্ধ করব না ' একথা বল‌তেই পার‌তে না । আমার শরণাগত হ‌লে তু‌মি কী কর‌বে , আর কী না কর‌বে - তার দা‌য়িত্ব আমার ওপর থাকত । তাছাড়া আমার শরণাগত হ‌লে এই প্রকৃ‌তিও তোমা‌কে বাধা করত না । ত্রিগুণময়ী মায়া বা প্রকৃতি তা‌কেই বাধা ক‌রে , যে আমার শরণাগত হয় না । কারণ প্রকৃ‌তির প্রবা‌হে থাকা প্রাণী প্রকৃ‌তির গু‌ণে সর্বদা বশীভূত থা‌কে ।

এক‌টি অত্যন্ত সত্য কথা হল যে , মানুষ যেসব প্রাকৃত পদার্থ‌কে নি‌জের ব‌লে ম‌নে ক‌রে , সে সেই পদার্থগু‌লির অধীন হ‌য়ে প‌ড়ে । সে ভ্রমবশত ম‌নে ক‌রে যে , সে - ই সেগু‌লির মা‌লিক , কিন্তু আস‌লে সে হ‌য়ে ও‌ঠে সেগুলির দাস ! কিন্তু যেগু‌লি‌কে নি‌জের ব‌লে ম‌নে ক‌রে না , সেগু‌লির বশ হয় না । যেমন আপনার হা‌তে যে মোব‌াইল আ‌ছে সেটা কি আপনার ? এটা কি চির‌দিন আপনার থাক‌বে ? আ‌গে কি এটা ছিল আপনার ? শুধু মা‌ঝে কিছু সম‌য়ের জন্য ব্যবহার ক‌রে মোবাই‌লে প্র‌তি আকৃষ্ট হ‌ওয়া । যখন হাত থে‌কে প‌ড়ে ভে‌ঙ্গে যা‌বে বা চু‌রি হ‌বে বা নষ্ট হ‌য়ে যা‌বে কোন কার‌ণে তখন দুঃখ উৎপন্ন হ‌বে কেননা মোব‌াই‌লের প্র‌তি যে আমা‌দের মোহ তার জন্য দুঃখ প্রা‌প্তি ।

তাই মানু‌ষের কোন প্রাকৃত পদার্থ‌কে নি‌জের ব‌লে ম‌নে করা উ‌চিত নয় । কারণ সেগু‌লি প্রকৃতই নিজস্ব নয় । ভগবানই বাস্ত‌বে আপন । ভগবান‌কে নি‌জের ব‌লে ম‌নে কর‌লে মানুষের অধীনতা চিরকা‌লের ম‌তো দূর হয় । তাৎপর্য হল এই যে মানুষ পদার্থ এবং ক্রিয়াগু‌লি‌কে নি‌জে‌র ব‌লে ম‌নে কর‌লে সর্ব‌তোভা‌বে অধীন হ‌য়ে যায় আর ভগবান‌কে নি‌জের ম‌নে কর‌লে , অনন্যভা‌বে শরণাগত হ‌লে সর্ব‌ত্যেভা‌বে স্বাধীন হ‌য়ে যায় । প্রভুর শরণাগত হ‌লে পরাধীনতা লেশ থা‌কে না ---- শরণাগ‌তির এই ম‌হিমা । কিন্তু যি‌নি প্রভুর শরণাগত না হ‌য়ে অহংকা‌রের শরণ নেন , তি‌নি মৃত্যুর দি‌কে ( সংসার প‌থে ) অগ্রসর হন - নিবর্ত‌ন্তে মৃত্যুসংসারবর্ত্ম‌নি ' (৯\৩ ) ।

' মিথ্যৈষ ব্যবসায়‌ন্তে ' - ব্যবসায় অর্থাৎ সঙ্কল্প দুপ্রকা‌রের , বাস্ত‌বিক এবং অবাস্ত‌বিক । পরমাত্মার স‌ঙ্গে যে নিত্য সর্ম্পক , তা‌কে সঙ্কল্প করা বাস্ত‌বিক আর প্রকৃ‌তির স‌ঙ্গে মি‌লে প্রাকৃত পদা‌র্থের যে সঙ্কল্প করা , তা অবাস্ত‌বিক । যে সঙ্কল্প পরমাত্মাকে ধ‌রে হয় , তা‌তে স্ব -স্বরূ‌পের প্রাধান্য থা‌কে আর যে সঙ্কল্প প্রকৃ‌তি‌কে নি‌য়ে হয় , তা‌তে নি‌জের অন্তঃকর‌ণের প্রাধান্য থা‌কে ।

তাই ভগবান এখা‌নে অর্জুন‌কে ব‌লে‌ছেন যে , তু‌মি যে অহংকা‌রের অর্থাৎ প্রকৃ‌তির আশ্রয় নি‌য়ে বলছ যে তু‌মি যুদ্ধ কর‌বে না , তোমার এই ( ক্ষত্রিয় - প্রকৃ‌তির বিরুদ্ধ ) সঙ্কল্প অবাস্ত‌বিক অর্থাৎ মিথ্যা । আশ্রয় একমাত্র পরমাত্মা‌করই গ্রহণ করা উ‌চিত , প্রকৃ‌তি অথবা প্রকৃ‌তির কার্য জগ‌তের নয় ।

প্রাণী য‌দি স‌ঠিকভা‌বে জান‌তে পারে যে আ‌মি শুধু পরমাত্মারই অংশ এবং আমার তাঁ‌কে লক্ষ্য ক‌রেই চল‌তে হ‌বে , তাহ‌লে তার এই সঙ্কল্প ম‌হিমা ভগবান নবম অধ্যা‌য়ের ত্রিশতম শ্লো‌কে বর্ণনা ক‌রে ব‌লে‌ছেন যে , অত্যন্ত দুরাচারী ব্য‌ক্তিও য‌দি অনন্যভা‌বে আমার ভজনা ক‌রে , তাহ‌লে তা‌কে দুরাচারী ম‌নে করা উ‌চিত নয় , সাধু ব‌লে ম‌ানা উ‌চিত । কারণ তার প্রকৃত সিদ্ধান্ত এই হয় যে , আ‌মি ভগবা‌নেরই এবং শুধু তাঁরই ভজনা করব ।

তাই আমা‌দের সর্বতোভা‌বে সব‌কিছু ত্যাগ ক‌রে ভগবা‌নের শরণাগত হওয়া উ‌চিত । ম‌নে বিশ্বাস রাখ‌তে হবে যে , ভগবান সর্বদা আমা‌কে রক্ষা কর‌বেন এবং তি‌নি সবসময় সা‌থে থাক‌বেন । হৃদয়ের গভীর থে‌কে য‌দি অনুভব করা যায় ত‌বেই সব‌কিছু সহজ হ‌য়ে যাবে ।


Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

গীতায় দৈবী এবং আসুরী সম্পদ্

দৈবী এবং আসুুরী - এ‌ই দু‌টি শ‌ব্দের ম‌ধ্যে ' দেব ' নাম দেবতা‌দের নয় , তা হ‌লো পরমাত্মার , এবং ' অসুর ' নাম রাক্ষস‌দের নয় , তা আস‌লে প্রা‌ণে রমণকারী‌দের নাম । গীতায় ' দেব‌দেব ' ( ১০\১৫ ) , ' দেবম্ ' ( ১১ \১১ , ১৪ ) , ' দেব‌দেবস্য ' ( ১১\১৩ ) , ' দেব ' ( ১১ \১৫ ) ইত্যা‌দি প‌দে পরমাত্মার উ‌দ্দে‌শ্যেই ' দেব ' শব্দ প্র‌য়োগ করা হ‌য়ে‌ছে । ' আসুরং ভাবম্ ' ( ৭\১৫ ) , ' অাসুরঃ ' ( ১৬\৬ ) , ' আসুর‌নিশ্চয়ান্ ' ( ১৭\৬ ) ইত্যা‌দি পদ প্রা‌ণে আস‌ক্তিসম্পন্ন ব্য‌ক্তিদের জন্য ' আসুর ' শ‌ব্দের প্র‌য়োগ হ‌য়ে‌ছে ।

' দেব ' অর্থাৎ পরমাত্মার যত গুণ আ‌ছে সেগু‌লি‌কে ' দৈবী গুণ ' ব‌লে । এই দৈবীগুণ পরমাত্মা‌কে প্রাপ্ত করার পুঁ‌জি হওয়ায় এ‌কে ' দেবী সম্পদ্ ' বলা হয় - ';‌দৈবী সম্পদ‌্ -বি‌মোক্ষায় ' ( ১৬ \ ৫ ) । সাধকেরা এই দেবী সম্প‌দের আশ্রয় নিয়ে ভগবা‌নের ভজনা ক‌রেন ( ৯\১৩ ) ।

' অসু ' প্র‌া‌ণের নাম । সেই প্রা‌ণের নাম। সেই প্রা‌ণে যে রমণ ক‌রে , প্রা‌ণের ভরণ - পোষণ - রক্ষণ কর‌তে চায় , তা‌কে অসুর ব‌লে , এবং ঐসব অসুর‌দের যে স্বভাব , যে গুণ থা‌কে তা‌কেই ' আসুরী গুণ ' ব‌লে । এই আসুরীগুণ মানুষ‌কে বারংবার জন্ম - মৃত্যু চক্র , চুরাশী লক্ষ যো‌নি এবং নর‌কে নি‌য়ে যাওয়ার কারণ হওয়ার তা‌কে আসুরী সম্পদ্ ব‌লে - ' নিবদ্ধায়াসুরী মতা ' ( ১৬\৫ ) । মূঢ় ব্য‌ক্তিগণই আসুরী সম্প‌দের আশ্রয় নেয় ( ৯\১২ ) ।

সংসার থে‌কে বিমুখ হ‌য়ে এবং দৈবী সম্প‌দের আশ্রয় নি‌য়ে পরমাত্মার প্রা‌প্তি লাভ কর‌তে ইচ্ছুক ব্য‌ত্তি দুই প্রকা‌রের ----

১ । সগু‌ণোপাসক ( ভক্ত ) --- সগু‌ণোপাসক‌দের ম‌ধ্যে শ্রদ্ধা , বিশ্বাস এবং ভা‌বের প্রাধান্য হয় , অতএব সে ' অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ --- নাতিমা‌নিতা ' ( ১৬ \ ১ - ৩ ) - এই ২৬টি গুণ ধারণ ক‌রে । যেমন ভয়শূন্যতা , সত্তার প‌বিত্রতা , পারমা‌র্থিক জ্ঞা‌নের অনুশীলন , দান , আত্মসংযম , যজ্ঞ অনুষ্ঠান , বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন , তপশ্চর্যা , সরলতা , অ‌হিংসা , সত্যবা‌দিতা , ক্রোধশূন্যতা , বৈরাগ্য , শা‌ন্তি , অ‌ন্যের দোষ দর্শন না করা , সমস্ত জী‌বে দয়া , লোভহীনতা , মৃদুতা , লজ্জা , অচপলতা , তেজ , ক্ষমা , ধৈর্য , শে‌ৗচ , মাৎসর্য শূন্যতা , অ‌ভিমান শূন্যতা । এই সাধক সর্বত্র ভগবান‌কে দর্শন ক‌রেন এবং সর্বপ্রথম অভয় হ‌য়ে যায় , তখন তার ম‌ধ্যে অমা‌নিত্ব স্বাভা‌বিকভা‌বে এ‌সে যায় ।

২ । নির্গুণোপাসক ( জ্ঞানী ) - নির্গুণ উপাসক‌দের শরীর - শরীরীর ( আত্মা ) বি‌বেক - বিচা‌রের প্রাধান্য থা‌কে , সুতরাং সে , ' অমা‌নিত্বমদ‌ম্ভিত্ব ---- তত্ত্বজ্ঞানার্থদর্শনম্ ' ( ১৩ \ ৭ - ১১ ) - এই ২০ প্রকার গুণ ধারণ ক‌রে। অমা‌নিত্ব , দম্ভশূন্যতা , অ‌হিংসা , স‌হিষ্ণুতা , সরলতা , সদ্গুরুর সেবা , শে‌ৗচ , স্থৈর্য , আত্মসংযম , ইন্দ্রিয় - বিষ‌য়ে বৈরাগ্য অহঙ্কারশূনতা জন্ম - মৃত্যু - জরা - ব্যাধি - দুঃখ আ‌দির দোষ দর্শন , স্ত্রী - পুত্রা‌দি‌তে আস‌ক্তিশূন্যতা , স্ত্রী - পুত্রা‌দির সুখ - দুঃ‌খে ঔদাসীন্য , সর্বদা সম‌চিত্তত্ব , আমার প্র‌তি অনন্যা ও অব্য‌ভিচারিণী ভ‌ক্তি , নির্জন স্থা‌নে প্রিয়তা , জনাকীর্ণ স্থা‌নে অরু‌চি অধ্যাত্ম জ্ঞা‌নে নিত্যত্ববু‌দ্ধি এবং তত্ত্বজ্ঞা‌নের প্র‌য়োজন অনুসন্ধান - এই সমস্ত জ্ঞান ব‌লে ক‌থিত হয় এবং এর বিপরীত যা কিছু তা সবই অজ্ঞান । এইরূপ সাধ‌কে প্রথ‌মে অমা‌নিত্ব ভাব আ‌সে এবং তারপর সে সর্বত্র পরমাত্মা‌কে অনুভব ক‌রে অভয় হ‌য়ে যায় ।

উপ‌রিউক্ত দুই প্রকা‌রের সাধ‌কের ম‌ধ্যে দৈবী সম্পদ্ সাধন রূ‌পে থা‌কে । সিদ্ধ মহাপুরুষ‌দের ম‌ধ্যে এই দেবী সম্পদ্ স্বতঃ স্বাভাবিকভা‌বে থা‌কে । বাস্ত‌বে সিদ্ধ মহাপুরুষ গুণাতীত , কিন্তু তি‌নি সাধন অবস্থায় প্রথম‌দি‌কে দৈবী সম্প‌দের সহা‌য়েই সাধনা ক‌রে‌ছেন । সুতরাং সিদ্ধ হওয়ার পরও তাঁর দৈবী - স্বভাব বজায় থা‌কে । ঐ সিদ্ধপুরুষ‌দের ম‌ধ্যে সিদ্ধভক্তদের স্বাভা‌বিক দৈবী সম্পদের গু‌ণের বর্ণনা দ্বাদশ অধ্যা‌য়ের ত্র‌য়োদশ শ্লোক থে‌কে উন‌বিংশ শ্লোক পর্যন্ত করা হ‌য়ে‌ছে এবং সিদ্ধ - জ্ঞানী‌দের স্বাভা‌বিক দৈবী সম্প‌দের গু‌ণের বর্ণনা চতুর্দশ অধ্যা‌য়ের বাইশ থে‌কে পঁ‌চিশ সংখ্যক শ্লোক পর্যন্ত করা হ‌য়ে‌ছে ।

আসুরী সম্পদ ধারণকারীও দুই প্রকা‌রের হয় --

১ । সকামভা‌বে দেবতা‌দের উপাসনাকারী - সকামভা‌বে দেবতা‌দির পূজা - উপাসনা ক‌রে ব্রহ্ম‌লোক পর্যন্ত গমনকারী সমস্ত মানুষই আসুরী সম্প‌দের অ‌ধিকারী । কারণ তা‌দের উ‌দ্দেশ্য ভোগ উপ‌ভোগ করা , তাই তারা ভো‌গে‌তেই আসক্ত ও তম্ময় থা‌কে ( ২\ ৪২ - ৪৪ , ৭\ ২০ - ২৩ , ৯\ ২০ - ২১ ) । এরূপ মানু‌ষেরা যে ফল লাভ ক‌রে তা বিনাশশীল , অন্তহীন নয় - ' অন্তুবত্তু ফলং তেষাম্ ' ( ৭\২৩ ) এবং তারা পুনঃপুনঃ জন্ম - মৃত্যু চ‌ক্রে আব‌র্তিত হয় -- ' গতাগতং কামকামা লভ‌ন্তে ' ( ৯\২১ ) ।

তাৎপর্য এই যে , যা‌দের উ‌দ্দে‌শ্যে সুখ , আরাম , ভোগ - বিলাস ও বিনাশশীল পদার্থ , তারা সক‌লেই আসুরী সম্পদ্ যুক্ত এবং যা‌দের উ‌দ্দে‌শ্যে ভগবা‌নের প্রসন্নতা , লোকসংগ্রহ এবং জগ‌তের কল্যা‌ণে কর্ম করা , তারা সক‌লে দৈবী সম্পদ্ সম্পন্ন হয় ।

২ । কাম - ক্রোধা‌দির আশ্রয় নি‌য়ে দুর্গুণ - দুরাচা‌রে প্রবৃত্ত ব্য‌ক্তি - যেসব মানুষ কাম , ক্রোধ , অহংকার ইত্যা‌দির আশ্রয় গ্রহণ ক‌রে তারা মিথ্যা , কপটতা , ছলনা , বিশ্বাসঘাতকতা , শঠতা , হিংসা ইত্যা‌দির দ্বারা অপর‌কে দুঃ‌খ দেয় । এইসব ব্য‌ক্তি পা‌পের তারতম্য অনুযায়ী পশু , পক্ষী , কীট , পতঙ্গ , বৃক্ষ , লতা আ‌দি আসুরী জন্ম লাভ ক‌রে ( ১৬\১৯ ) এবং কুম্ভীপাক , রৌরব ইত্যা‌দি নর‌কে গমন ক‌রে ( ১৬ \১৬ ) ।

এর তাৎপর্য এই যে , ভগবৎপরায়ণ হ‌লে দৈবী সম্পদ্ প্রকট হয় , য‌া মানুষ‌কে সংসা‌রবন্ধন থে‌কে মুক্ত ক‌রে । পিণ্ড‌পোষণপরায়ণ , ভোগপরায়ণ হ‌লে এবং নতুন নতুন বস্তু আশা করা ও প্রাপ্ত বস্তু ধ‌রে রাখা - এই ভাব হ‌লে আসুরী সম্প‌ত্তি আ‌সে , যা মানু‌ষের বন্ধন ও পত‌নের কারণ । সুতরাং সাধ‌কের উ‌চিত যে , সে যেন দৈবী সম্পদ‌্কে গুরুত্ব দেয় এবং আসুরী ভাব‌কে সদা প‌রিত্যাগ ক‌রে । তাহ‌লে তার উ‌দ্দে‌শ্য শেষ পর্যন্ত সিদ্ধ হ‌বেই ।

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

ভক্ত ও ভগবান

ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের পরম ভক্ত শ্রু‌তি‌দেব বি‌দে‌হের রাজধানী মি‌থিলাতে বাস কর‌তেন । গৃহস্থ ব্রাহ্মণ ভগবদ্ভ‌ক্তি‌তেই পূর্ণ , পরম শান্ত , জ্ঞানী ও বৈরাগ্যবান ছি‌লেন । তি‌নি কামনার‌হিত থে‌কে যা পে‌তেন তা‌তেই সন্তুষ্ট থাক‌তেন । প্রারব্ধানুসা‌রে তি‌নি জীবন ধারণ নি‌মিত্ত সামগ্রী লাভ ক‌রে আন‌ন্দে বর্ণাশ্রমো‌চিত ধর্মপালনে তৎপর থাক‌তেন । দে‌শের রাজাও ব্রাহ্ম‌ণের মতন ভ‌ক্তিমান ছি‌লেন । রাজা তখন বহুলাশ্ব ; তি‌নিও অহংকারর‌হিত ছি‌লেন । অতএব শ্রু‌তিদেব ও বহুলাশ্ব দুইজনই ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের প্রিয় ছি‌লেন ।

একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উভ‌য়ের উপর সন্তুষ্ট হ‌য়ে দারুককে রথ আন‌তে বল‌লেন আর তা‌তে আ‌রোহন ক‌রে দ্বারকা থে‌কে বি‌দেহ দে‌শের দি‌কে প্রস্থান কর‌লেন । শ্রীভগবা‌নের স‌ঙ্গে নারদ , বাম‌দেব , অত্রি , বেদব্যাস , পরশুরাম , অ‌সিত , শুক‌দেব , বৃহস্প‌তি , কণ্ব , মৈ‌ত্রেয় , চ্যবন আ‌দি ঋ‌ষিগণও গি‌য়ে‌ছি‌লেন । প‌থে তাঁ‌দের পূজার্চনা নি‌মিত্ত নাগ‌রিকবৃন্দ ও গ্রামবাসীগণ মাঙ্গ‌লিক দ্রব্যা‌দি নি‌য়ে অপেক্ষা কর‌ছি‌লেন ।শ্রীভগবান এই সমরয় আনর্ত , ধন্ব , কুরুজাঙ্গল , কঙ্ক , মৎস্য , পাঞ্চাল , কু‌ন্তি , মধু , কেকয় , কৌশল , অর্ণ আ‌দি বহু দে‌শের নর - নারী‌দের সাক্ষাৎ দর্শন দিয়ে ধন্য ক‌রে‌ছি‌লেন । প‌থে ভক্ত‌গণ ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের সরল উন্মুক্ত হাস্য ও প্রে‌মে পূর্ণ কৃপাকটাক্ষযুক্ত বদনমণ্ড‌লের মকরন্দসুধা পান ক‌রে ধন্য হ‌য়ে‌ছি‌লেন । তি‌নি দৃ‌ষ্টিদ্বারা পরম কল্যাণ ও তত্ত্বজ্ঞানও বিতরণ ক‌রে‌ছি‌লেন । অব‌শে‌ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বি‌দেহ দে‌শে উপ‌স্থিত হ‌লেন ।

ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের শুভাগমন বার্তা নাগ‌রিকবৃন্দ ও গ্রামবাসী‌দের পরম আ‌নন্দে প‌রিপূর্ণ ক‌রে‌ছিল । তাঁরা মাঙ্গ‌লিক দ্রব্যা‌দি স‌হিত অভ্যর্থনা করবার জন্য এ‌গি‌য়ে এ‌সে‌ছি‌লেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ‌কে দর্শন ক‌রে তাঁ‌দের চিত্ত ও বদনমণ্ডল প্রেমন ও আন‌ন্দে উৎফুল্ল হ‌য়ে উ‌ঠে‌ছিল । তাঁরা সেই মু‌নি‌দের ও তার স‌ঙ্গে শ্রীভগবান‌কে দে‌খে যুক্তক‌রে অবনত মস্ত‌কে প্রণাম ক‌রে‌ছি‌লেন । তাঁ‌দের দর্শন করবার পরম সৌভাগ্য লাভ ক‌রে তাঁরা ধন্য হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছিলেন ।মি‌থিলা অধিপতি বহুলাশ্ব ও শ্রু‌তি‌দেব দুইজনই ভাব‌লেন যে শ্রীভগবান তাঁ‌দেরই উপর অনুগ্রহ ক‌রে পদার্পণ ক‌রে‌ছেন । তাঁরা দুই জনই শ্রীভগবা‌নের পাদপদ্মে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম ক‌রে সক‌লের স‌ঙ্গে আ‌তিথ্য গ্রহণ করবার আ‌বেদন জানা‌লেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুইজ‌নেরই প্রার্থনা স্বীকার ক‌রে উভয়‌কে প্রসন্ন করবার নি‌মিত্ত একই সম‌য়ে দুইজ‌নের কা‌ছেই গমন কর‌লেন । দুইজনই ভাব‌লেন যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল আমার গৃ‌হেই পদার্পণ ক‌রে‌ছেন অন্য কোথাও যান‌নি ।

বি‌দেহরাজ বহুলাশ্ব স্থিতধী ব্য‌ক্তি ছি‌লেন । পর‌মেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ও ঋ‌ষিমু‌নিগণ তাঁর গৃ‌হে এ‌সে‌ছেন তা তাঁর কা‌ছে পরম গৌর‌বের ছিল । তি‌নি অ‌তি‌থিসকল‌কে অ‌তি সুন্দর আস‌নে উপ‌বেশন করা‌লেন । তখন তাঁর বি‌চিত্র দশা । প্রেমা‌তিশয্যে ও ভ‌ক্তি প্রাব‌ল্যে তি‌নি গদগদ হ‌য়ে ছি‌লেন ; নয়নযুগল প্রেমাশ্রু ক্ষরণ কর‌তে তৎপর ছিল । তি‌নি পূজ্যতম অ‌তি‌থি‌দের পাদপ‌দ্মে প্রণাম নি‌বেদন ক‌রে পাদপ্রক্ষালন কর‌লেন ও সেই পাদোদক নিজ আত্মীয়স্বজন স‌মেত মস্তকে ধারণ কর‌লেন ।অতঃপর তি‌নি শ্রীভগবানের ও ভগবদ্ভক্তস্বরূপ ঋ‌ষিদের গন্ধ মাল্য , বস্ত্র , অলংকার , ধূপ , দীপ , অর্ঘ্য , ধেনু , বৃষ আ‌দি সমর্পণ ক‌রে পূজার্চনা কর‌লেন ।

যখন সক‌লে আহার্য ধারণ ক‌রে তৃপ্ত হ‌য়ে গে‌লেন তখন তি‌নি ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের চরণযুগল নি‌জ অ‌ঙ্কে ধারণ ক‌রে তা সেবা কর‌তে কর‌তে স্তু‌তি কর‌তে লাগ‌লেন । ভক্ত যে শ্রীভগবা‌নের নিজ স্বরূপ শ্রীবলরাম , অর্ধা‌ঙ্গিনী লক্ষ্মী ও পুত্র ব্রহ্মা থে‌কে বে‌শি প্রিয় তাই প্রমাণ করবার জন্য শ্রীভগবান তাঁর মতন সাধারণ ভক্ত‌কে দর্শন দি‌য়ে‌ছেন , এই কথা বহুলাশ্ব স্বীকার ক‌রে নি‌লেন ।‌তি‌নি প্রার্থনা কর‌লেন যেন শ্রীভগবান মু‌নিঋ‌ষি‌দের স‌ঙ্গে সেইখা‌নে বসবাস ক‌রেন যা‌তে তাঁ‌দের পদর‌জে নি‌মিবংশ পবিত্র হ‌য়ে যায় । সক‌লের জীবনদাতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাজা বহুলা‌শ্বের প্রার্থনা স্বীকার ক‌রে মি‌থিলাবাসী জনগণের কল্যা‌ণে সেইখা‌নে কিছু‌দিন অবস্থান কর‌লেন ।

যেমন রাজা বহুলাশ্ব ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও মু‌নিমণ্ডল‌কে পদার্পণ কর‌তে দে‌খে আনন্দমগ্ন হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছি‌লেন তেমনই ব্রাহ্মণ শ্রু‌তি‌দেব , ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং মু‌নিদের গৃ‌হে পদার্পণ কর‌তে দে‌খে আনন্দ বিহ্বল হ‌য়ে গে‌লেন । তি‌নি প্রণাম নি‌বেদন ক‌রে নৃত্য কর‌তে লাগ‌লেন । অতঃপর শ্রু‌তি‌দেব মাদুর , পিঁ‌ড়ি , কুশাসন পে‌তে তার উপর অ‌তি‌থি‌দের উপ‌বেশন করা‌লেন , স্বাগত ভাষণ আ‌দি দ্বারা তাঁ‌দের অ‌ভিন‌ন্দিত কর‌লেন ও নিজ ভার্যা স‌হিত অ‌তি আন‌ন্দে সক‌লের পা‌দপ্রক্ষালন কর‌লেন ।মহান সৌভাগ্যবান শ্রু‌তি‌দেব ভগবান ও ঋ‌ষি‌দের পা‌দোদ‌কে নিজ গৃহ‌কে ও আত্মীয়স্বজন‌কে সি‌ঞ্চিত ক‌রে দি‌লেন । তাঁর সকল ম‌নোরথ পূর্ণ হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছিল । তি‌নি আন‌ন্দে মত্ত হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছি‌লেন । তদনন্তর তি‌নি ফল , গন্ধ , সুবা‌সিত জল , সুগ‌ন্ধি মৃত্তিকা , তুলসী , কুশ , কমল আ‌দি অনায়াসলব্ধ পূজাসাগ্রমী এবং সত্ত্বগুণ বৃ‌দ্ধিকারী অন্নদ্বার‌া তাঁ‌দের আ‌রাধনা কর‌লেন ।

শ্রু‌তি‌দেব নি‌জে‌কে গৃহস্থাশ্র‌মের অন্ধকার কূ‌পে পতিত ম‌নে কর‌তেন ;তি‌নি সমস্ত তীর্থ‌কে তী‌র্থের মর্যাদা প্রদানকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর নিবাসস্থান ঋ‌ষিমু‌নি‌দের পদরজ লাভ‌কে বিশ্বাস কর‌তে পার‌ছি‌লেন না । যখন সক‌লে আতিথ্য স্বীকার ক‌রে বিশ্রাম কর‌তে লাগ‌লেন তখন শ্রু‌তি‌দেব নিজ স্ত্রী - পুত্র ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজ‌নের স‌ঙ্গে তাঁ‌দের সেবার নি‌মিত্ত উপ‌স্থিত হ‌লেন । তি‌নি ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের পাদপদ্ম ধারণ করে স্তু‌তি কর‌তে লাগ‌লেন । তি‌নি ভগবানকে কী সেবা কর‌বেন তাই জিজ্ঞাস‌া কর‌লেন ?

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বল‌লেন - ' হে শ্রু‌তি‌দেব ! এই সকল মহান মু‌নিঋ‌ষি‌গণ তোম‌ার উপর অনুগ্রহ করবার জন্যই এইখা‌নে এ‌সে‌ছেন । এঁরা পদরজ দান ক‌রে জনগ‌ণের ও লোকসমূ‌হের কল্যা‌ণের জন্যই বিচরণ করছেন , সকল‌কে প‌বিত্র কর‌ছেন । দেবতা , পুণ্য‌ক্ষেত্র এবং তীর্থ আ‌দি তো দর্শন , স্পর্শ , অর্চন আ‌দি দ্বারা ধী‌রে ধী‌রে বহু‌দিন ধ‌রে প‌বিত্র ক‌রে থা‌কে কিন্তু এই সকল মহাপুরুষগণ নিজ দৃ‌ষ্টিদান কর‌েই সকল‌কে প‌বিত্র ক‌রে থা‌কেন । দেবতা‌দি‌তে যে প‌বিত্র করবার শ‌ক্তি বিদ্যমান থা‌কে তাও এইসকল মহাপুরু‌ষের কৃপা- দৃ‌ষ্টিদা‌নে লাভ হ‌য়ে থা‌কে । জগ‌তে ব্রাহ্মণ য‌দি তপস্যা , বিদ্যা , স‌ন্তোষ , আমার উপাসনা এবং আমার ভ‌ক্তি‌তে যুক্ত থাকে তাহ‌লে তা অ‌তি উৎকৃষ্ট ।

আমার এই চতুর্ভুজরূপও ব্রাহ্মণ‌দের থে‌কে বে‌শি প্রিয় নয় কারণ ব্রাহ্মণ সর্ব‌বেদময় আর আ‌মি সর্ব‌দেবময় । বু‌দ্ধির‌হিত মানব এই কথা না জে‌নে কেবল বিগ্রা‌দি‌তেই পূজ্য বু‌দ্ধি রা‌খে এবং গু‌ণের ম‌ধ্যেও দোষদর্শন ক‌রে আমারই আত্মস্বরূপ জগদ্গুরু ব্রাহ্ম‌ণের তিরস্কার ক‌রে । অতএব হে শ্রু‌তি‌দেব ! তু‌মি এই সকল ব্রহ্ম‌র্ষি‌দের আমারই স্বরূপ জ্ঞা‌নে পূর্ণ শ্রদ্ধা সহকা‌রের পূজার্চন‌া ক‌রো । আমার পূজা তা‌তেই হ‌য়ে যা‌বে । 'ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের এই আ‌দেশ লাভ ক‌রে শ্রু‌তিদেব শ্রীকৃষ্ণ ও সেই সকল ব্রহ্ম‌র্ষি‌দের একাত্মভা‌বে আরাধনা কর‌লেন ও তাঁ‌দের কৃপায় তি‌নি ভগবদ্ স্বরূপ লাভ কর‌লেন । রাজা বহুলাশ্বও সেই একই গ‌তি লাভ করলেন । আশ্চর্য হ‌তে হয় এই দে‌খে যে , যেমন ভক্ত ভগবান‌কে ভ‌ক্তি ক‌রে তেমনই ভগবানও ভ‌ক্তদের ভ‌ক্তি ক‌রেন । ভক্তযুগল‌কে প্রসন্ন করবার জন্য শ্রীভগবান দুই ভ‌ক্তের নিকটই এককা‌লে কিছু‌দিন অবস্থান ক‌রে এক বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন কর‌লেন ।

জয় ভক্তের জয় ।

জয় ভগবা‌ন শ্রীকৃ‌ষ্ণের জয় ।

জয় শ্রীরাধা‌গোবি‌ন্দের জয় ।

হ‌রি‌বোল হ‌রি‌বোল হ‌রিবোল ।

Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

গ‌জেন্দ্র মোক্ষণ লীলা

অযুত যোজন উচ্চ ত্রিকূট পর্বত অতীব রমণীয় স্থান ছিল । তার চা‌রদি‌কে ছিল ক্ষীর সাগ‌রের প‌রি‌বেষ্টন । বিশাল পর্বতমালায় তিন‌টি শৃঙ্গ তার অনুপম সৌন্দ‌র্যের অঙ্গস্বরূপ ছিল । এই স্বর্ণময় , রে‌ৗপ্যময় ও লৌহময় তিন‌টি শৃঙ্গ , সমুদ্র , দিক্ সকল ও আকা‌শেও শোভাম‌ণ্ডিত ক‌রে রাখত । পর্বতমালা , বৃক্ষ , লতা , গুল্ম পরি‌শো‌ভিত ছিল ।

চতু‌র্দি‌ক থে‌কে সমু‌দ্রের ঢেউ এ‌সে পর্ব‌তের পাদবন্দনা করত । পর্ব‌তে হ‌রিতবর্ণ মরকত প্রস্ত‌রের উপর চা‌রদি‌কের ভূ‌মি শ্যামল ছিল । পব‌র্তের গুহায় সিদ্ধ , চারণ গন্ধর্ব , বিদ্যাধর , নাগ , কিন্নর ও অপ্সরা সক‌লের আগমন হত । তা‌দের সংগী‌তের সুর যখন পর্ব‌তে প্র‌তিধ্ব‌নিত হত তখন অন্যান্য অহংকারী সিংহকুল ভিন্ন সিংহের গর্জন ম‌নে ক‌রে অ‌সহিষ্ণু হ‌য়ে আরও জো‌রে গর্জন ক‌রে উঠত ।

পর্বত উপত্যকা ছিল বন্য পশু‌দের নিবাসস্থান । দেবকাননসম অরণ্যভূ‌মিতে বৃক্ষে বৃ‌ক্ষে সুন্দর পা‌খি‌দের সুমধুর ডাক শোনা যেত । তা‌দের মধুর কলকাক‌লি প‌রি‌বেশ‌কে আনন্দময় ক‌রে রাখত । পর্ব‌তে বহু সুন্দর ঝরনা ও নদীসহ অ‌নেকগু‌লি স‌রোবরও ছিল । তা‌দের তটভূ‌মি ম‌ণিময় বাল‌ুকণা দ্বারা সু‌শো‌ভিত ছিল । দেবাঙ্গনাসকল স্নান করায় তা‌দের অঙ্গস্পর্শ লাভ ক‌রে স‌রোব‌রের জল সুর‌ভিত হ‌য়ে থাকত । সেই সকল নদী ও স‌রোব‌বের সুগন্ধযুক্ত জলকণাবাহী বায়ু অ‌তিশয় সুখসেব্য ছিল ।

পর্বতরাজ ত্রিকূ‌টের পাদ‌দে‌শে ভগবদ্ভক্ত মহাত্মা বরু‌ণের ঋতুমান না‌মে এক‌টি উদ্যান ছিল যা দেবাঙ্গনাস‌ক‌লের ক্রীড়াস্থলরূ‌পে প‌রি‌চিত ছিল । উদ্যান‌টি সারা বছর পুষ্প ও ফ‌লে সমৃদ্ধ থাকত । বি‌ভিন্ন বৃক্ষ‌শো‌ভিত সেই উদ্যা‌নে প‌ক্ষীর কূজন ও ভ্রম‌রের গুঞ্জন অতীব ম‌নোরম ম‌নে হত । সেই উদ্যা‌নে এক বিশাল স‌রোবর ছিল । সরোব‌রে ম‌নোহর স্বর্ণকমল ফু‌টে থাকত । এই পরম আনন্দময় পরি‌বে‌শে স‌রোব‌রের এক বর্ণনাতীত সৌন্দর্য ছিল ।

এই পব‌র্তের গভীর জঙ্গ‌লে এক বিশাল হস্তীবা‌হিনী ছিল । গ‌জেন্দ্র সেই বা‌হিনীর প্রধানরূ‌পে প‌রি‌চিত ছিল । এক‌দিন গ‌জেন্দ্র কন্টকাকীর্ণ কীচক বাঁশ , বেত আ‌দি বিশাল লতা , গুল্ম ও নানা বৃক্ষ লণ্ডভণ্ড ক‌রে ঘু‌রে বেড়া‌চ্ছিল । তার সেই উদ্মত্ত আচরণ ও মদস্রাবগন্ধ অন্যান্য হস্তীসকলর, সিংহ , ব্যাঘ্র , সর্প আ‌দি হিংস্র জন্তুসকল‌কে ভ‌য়ে তার থে‌কে দূরে স‌রি‌য়ে রেখেছিল । কিন্তু তার অভয় লাভ ক‌রে অন্যান্য নিরীহ পশুগণ ওই অঞ্চ‌লে নির্ভ‌য়ে বিচরণ কর‌তে লাগল । প্রবল গ্রীষ্মা‌ধি‌ক্যে গজেন্দ্র অনুগামী হস্তীবা‌হিনী পদভা‌বে পর্বত‌কেও ক‌ম্পিত ক‌রে এ‌গি‌য়ে যা‌চ্ছিল ।

গণ্ডস্থল থে‌কে নির্গত মদস্রাবগন্ধ ভ্রমরকু‌ল‌কে প্রলুব্ধ ক‌রে‌ছিল আর তাই তারা গ‌জেন্দের সঙ্গ ছাড়‌ছিল না । তৃষ্ণাকুল হস্তীবা‌হিনীকে স‌ঙ্গে নি‌য়ে মদ‌বিহ্বল ন‌য়নে গ‌জেন্দ্র দূর থে‌কে পদ্ম‌রেণুগন্ধবাহী বায়ুর আঘ্রা‌ণ লাভ ক‌রে সেই সরোব‌রের তী‌রে অ‌তি দ্রুতগ‌তি‌তে উপনীত হল । স্বর্ণকমল ও রক্তব‌র্ণের কম‌লের কেশ‌রে সুর‌ভিত মধুর নির্মল স‌রোব‌রে সে অবতরণ করল আর শুড় দি‌য়ে সেই জল পান ও স্নান করল । সে অন্য হস্তীবা‌হিনী সদস্য‌দেরও জ‌লে স্নান ক‌রি‌য়ে দিল ও তা পানও করাল । শ্রীভগবা‌নের মায়ায় মো‌হিত হ‌য়ে গ‌জেন্দ্র ক্র‌মেই উন্মত্তসম আচরণ কর‌তে লাগল । তার বিপদ যে এত স‌ন্নি‌কটে তা সে জান‌তেও পারল না ।

গণ্ডস্থল থে‌কে নির্গত মদস্রাবগন্ধ ভ্রমরকু‌ল‌কে প্রলুব্ধ ক‌রে‌ছিল আর তাই তারা গ‌জেন্দের সঙ্গ ছাড়‌ছিল না । তৃষ্ণাকুল হস্তীবা‌হিনীকে স‌ঙ্গে নি‌য়ে মদ‌বিহ্বল ন‌য়নে গ‌জেন্দ্র দূর থে‌কে পদ্ম‌রেণুগন্ধবাহী বায়ুর আঘ্রা‌ণ লাভ ক‌রে সেই সরোব‌রের তী‌রে অ‌তি দ্রুতগ‌তি‌তে উপনীত হল । স্বর্ণকমল ও রক্তব‌র্ণের কম‌লের কেশ‌রে সুর‌ভিত মধুর নির্মল স‌রোব‌রে সে অবতরণ করল আর শুড় দি‌য়ে সেই জল পান ও স্নান করল । সে অন্য হস্তীবা‌হিনী সদস্য‌দেরও জ‌লে স্নান ক‌রি‌য়ে দিল ও তা পানও করাল । শ্রীভগবা‌নের মায়ায় মো‌হিত হ‌য়ে গ‌জেন্দ্র ক্র‌মেই উন্মত্তসম আচরণ কর‌তে লাগল । তার বিপদ যে এত স‌ন্নি‌কটে তা সে জান‌তেও পারল না ।

গ‌জেন্দ্র যখন উন্মত্তসম ব্যবহার কর‌ছিল তখন দৈব‌প্রে‌রিত এক অ‌তি বলবান কুমির ( গ্রাহ ) স‌ক্রো‌ধে তার পা কাম‌ড়ে ধরল । অ‌তি বলবান গ‌জেন্দ্রও তার সমস্ত শক্তি দি‌য়ে নি‌জে‌কে কুমি‌রের কামড় থে‌কে মুক্ত কর‌তে পারল না । হস্তীবা‌হিনীও দলপ‌তিকে কু‌মি‌রের কামড় থে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে আন‌তে সক্ষম হল না । গ‌জেন্দ্র ও কুমির উভ‌য়েই পূর্ণশ‌ক্তি প্র‌য়োগ ক‌রে‌ছিল । কা‌জেই উভয় পক্ষ শ‌ক্তিশা‌লী হওয়ায় টানাহেঁচড়া চল‌তেই থাকল ।

এভা‌বে সহস্র বৎসর অ‌তিক্রান্ত হয়ে গেল । এই যু‌দ্ধ দেবতা‌দেরও আশ্চর্য করল । অব‌শে‌ষে দেখা গেল যে প্রবল পরাক্রমশালী গ‌জেন্দ্র শারী‌রিক ও মান‌সিক শ‌ক্তি হা‌রি‌য়ে অবসন্ন হ‌য়ে পড়ছে । এই অবস্থায় গ‌জেন্দ্র বুঝ‌তে পারল যে কু‌মিররূ‌পে কালই তা‌কে গ্রাস কর‌তে উদ্যত হ‌য়ে‌ছে আর তা‌কে রক্ষা কেবল শ্রীভগবানই কর‌তে পা‌রেন । এইবার সে নিজ বু‌দ্ধি‌তে মন‌কে চিত্তভূ‌মিতে স্থির ক‌রে পূর্ব জ‌ন্মের সংর‌ক্ষিত শ্রেষ্ঠ স্তোত্রসকল দ্বারা শ্রীভগবা‌নের স্তু‌তি কর‌তে লাগল ।

তখন ভ‌ক্তের রক্ষার জন্য সর্বাত্মা সর্ব‌দেবস্বরূপ ভগবান শ্রীহ‌রি স্বয়ং আ‌বির্ভূত হ‌লেন । জগদাত্মা শ্রীহ‌রি গ‌জেন্দ্র‌কে অ‌তি কাতর অবস্থায় দেখ‌লেন আর উচ্চা‌রিত স্তু‌তি শ্রবণ ক‌রে বেদময় গরু‌ড়ে আ‌রোহণ ক‌রে চক্রপা‌ণি শ্রীভগবান‌কে আ‌সতে দে‌খে গ‌জেন্দ্র তার শুঁড় দি‌য়ে এক‌টা কমল তু‌লে কাতর স্ব‌রে বলে উঠল - ' হে নারায়ণ ! হে জগদ্গুরু ! হে শ্রীভগবান ! আপনা‌কে প্রণাম । '

শ্রীহ‌রি গরুড় থে‌কে অবতরণ ক‌রে করুণা পূর্বক স্বয়ং জ‌লে নে‌মে তৎক্ষণাৎ গ‌জে‌ন্দ্রের স‌ঙ্গে কু‌মির‌কে আকর্ষণ ক‌রে স‌রোব‌রের তী‌রে নি‌য়ে এ‌লেন । সেইখা‌নে দেবতাগণও উপ‌স্থিত হ‌য়ে‌ছি‌লেন । তাঁ‌দের সম্মু‌খেই চক্রদ্বার‌া শ্রীভগবান কু‌মি‌রের মুখ‌কে ছিন্ন‌ভিন্ন ক‌রে গ‌জেন্দ্র‌কে মুক্ত কর‌লেন । শ্রীহ‌রির কা‌র্যে সন্তুষ্ট দেবতাগণ পুষ্পবৃ‌ষ্টি কর‌তে লাগ‌লেন । স্ব‌র্গে দুন্দ‌ুভি বে‌জে উঠল , গর্ন্ধবগণ নৃত্যগীত কর‌তে লাগল এবং ঋ‌ষি , চারণ ও সিদ্ধগণ ভগবান পুরু‌ষোত্তমের স্তু‌তি কর‌তে লাগ‌লেন ।

শ্রীভগবানের স্পর্শ লাভ ক‌রে সেই কু‌মির তৎক্ষণাৎ পরমসুন্দর দিব্য দেহ ধারণ কর‌ল । কু‌মির পূবূজ‌ন্মে ' হূহূ ' না‌মে এক শ্রেষ্ঠ গর্ন্ধব ছিল । ঋ‌ষি দেব‌লের অ‌ভিশা‌পে তার কুমির দেহ ধারণ করা । শ্রীভগবা‌নের কৃপায় সে শাপমুক্ত হ‌ল । তার সমস্ত পাপ - তাপ বিনষ্ট হল । শ্রীভগবা‌নের প্রণাম ও স্তু‌তি ক‌রে সে তৎক্ষণাৎ গন্ধর্বলো‌কে গমন করল ।

গ‌জেন্দ্রও শ্রীভগবা‌নের স্পর্শলাভ ক‌রে অজ্ঞা‌নের বন্ধন থে‌কে মু‌ক্তি পেল । সে ভগবানসদৃশ রূপ ধারণ ক‌রে পীতবসন চতুর্ভুজ মূ‌র্তি লাভ করল । এই গ‌জেন্দ্র পূর্বজ‌ন্মে দ্র‌বিড় দে‌শের পাণ্ড্যবং‌শের রাজা ছি‌লেন । তাঁর নাম ছিল ইন্দ্রদ্যুম্ন । একবার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজ্য ত্যাগ ক‌রে মলয় পর্ব‌তে বাস কর‌ছি‌লেন । তি‌নি শ্রীভগবা‌নের উত্তম উপাসক ও যশস্বী ছি‌লেন । মলয় পর্ব‌তে নিবাসকা‌লে তি‌নি তপস্বীসম বসন ও জটা ধারণ ক‌রে‌ছিলেন ।

এক‌দিন যখন তি‌নি স্নান ক‌রে মৌনব্রত ধারণ ক‌রে একাগ্র‌চিত্তে শ্রীভগবা‌নের পূজা কর‌ছি‌লেন তখন দৈবব‌শে মহাযশস্বী অগস্ত্য মু‌নির স‌শিষ্য আগমন হ‌য়ে‌ছিল । রাজা ইন্দ্রদ্যু‌ম্নের আচরণ মহামু‌নি‌কে ক্রোধা‌ন্বিত করল আর তি‌নি গমনকা‌লে অ‌ভিশাপ দি‌লেন - ' শিক্ষাভা‌বে অহংকারী রাজা নিজ কর্তব্য ভু‌লে গি‌য়ে ব্রাহ্মণ‌কে অপমান ক‌রে‌ছে । সে হস্তীসম জড়বু‌দ্ধি তাই সে সেই ঘোর অন্ধকারময় হস্তী‌যো‌নি‌তেই গমন করুক । ' তাই রাজা ইন্দ্রদ্যু‌ম্নের হস্তীজন্ম হ‌য়ে‌ছিল কিন্তু শ্রীভগবা‌নের আরাধনার প্রভা‌বে তার শ্রীভগবা‌নের স্মৃ‌তি অক্ষত ছিল ।

ভগবান শ্রীহ‌রি এইভা‌বে গ‌জেন্দ্র‌কে উদ্ধার ক‌রে তাঁ‌কে তাঁর পার্ষদ কর‌লেন । গন্ধর্ব , সিদ্ধ ও দেবগণ তাঁর এই লীলার কীর্তন কর‌তে লাগলেন এবং ভগবান শ্রী‌বিষ্ণ‌ু তাঁর পার্ষদ গ‌জেন্দ্র‌কে নি‌য়ে গরু‌ড়ে আ‌রোহণ ক‌রে বৈকু‌ন্ঠে প্রত্যাগমণ করলেন ।

জয় রা‌ধে ।

জয় ভ‌ক্তের জয় ।

জয় শ্রীভগবা‌নের জয় ।
Writer: Joy Shree Radha Madhav
Share:

নৃগরাজ উপাখ্যান

দানবীর‌দের ম‌ধ্যে অগ্রগণ্য রাজা নৃগ মহারাজ ইক্ষ্বাকুর পুত্র ছি‌লেন । বলা হ‌য়ে থা‌কে যে রাজা নৃগ কর্তৃক দান করা ধেনুর সংখ্যা পৃ‌থিবীর ধূ‌লিকণ‌া ,আকা‌শের নক্ষত্র ও বর্ষার ধারার সমতুল্য ছিল । সৎ উপায়ে অ‌র্জিত ধনসম্প‌ত্তি দ্বারা তি‌নি তাঁর রাজত্বকা‌লে এই দান ক‌রে‌ছি‌লেন । দান করা ধেনুসকল দুগ্ধবতী , তরুণ , সহস স্বভাব , সুন্দরদর্শন , সুলক্ষণা ও ক‌পিলা সবৎসা হত ।

‌ধেনু সকলকে দানের প‌ূ‌র্বে সুবর্ণম‌ণ্ডিত শৃঙ্গ ও রৌপ্যম‌ণ্ডিত খুরযুক্ত ক‌রে বস্ত্র‌ালংকার ও মাল্য বিভূ‌ষিতা করা হত । কেবল সেই সকল ব্রাহ্মণসন্তান দান গ্রহ‌ণের উপযুক্ত ব‌লে বি‌বে‌চিত হ‌তেন যাঁর‌া যুবাবস্থায়ই প্র‌তি‌ষ্ঠিত , সদ্গুণসম্পন্ন , ক্লেশযুক্ত প‌রিজন সহায়ক , দম্ভর‌হিত তপস্বী , বেদ পা‌ঠে নিত্যযুক্ত , শিষ্য‌দের নিত্য বিদ্যাদা‌নে স‌চেষ্ট ও স‌চ্চরিত্র ।

দা‌নের পূ‌র্বে ব্রাহ্মণ‌দেরও বস্ত্রাভূষ‌ণে অলংকৃত করা হত । তি‌নি ধেনু ছাড়া ভূ‌‌মি , সুবর্ণ , বাসগৃহ , অশ্ব , হস্তী , দাসীসহিত কন্যা , পর্বতসম তিল , রৌপ্য , শয্যা , বস্ত্র , রত্ন , গৃহসামগ্রী , রথ আ‌দিও প্রভূত দান কর‌ে‌ছি‌লেন আর জনগ‌ণের কল্যা‌ণে বহু যজ্ঞ সম্প‌াদন ক‌রে‌ছি‌লেন ও কূপ পুষ্কারা‌দিও খন ক‌রি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি‌লেন ।

এমন দানবী‌রের জীব‌নেও কিঞ্চিত অসতর্কতা হেতু দান করা দ্র‌ব্যের জন্য বিষম ধর্মসংকট নে‌মে এ‌সে‌ছিল । কো‌নো এক অপ্রতিগ্রাহী তপস্বী ব্রাহ্ম‌ণের ধেনু দলছুট হ‌য়ে নৃহরাজ‌ার ধেনুসকলের স‌ঙ্গে মি‌শে গি‌য়ে‌ছিল । ঘটনা তাঁর অজ্ঞা‌তে ঘ‌টে‌ছিল । সেই ধেনু উত্তমরূ‌পে স‌জ্জিতা হ‌য়ে নৃগ রাজা কর্তৃক এক অন্য ব্রাহ্মণ‌কে দান করা হ‌য়ে যায় ।

এমন দানবী‌রের জীব‌নেও কিঞ্চিত অসতর্কতা হেতু দান করা দ্র‌ব্যের জন্য বিষম ধর্মসংকট নে‌মে এ‌সে‌ছিল । কো‌নো এক অপ্রতিগ্রাহী তপস্বী ব্রাহ্ম‌ণের ধেনু দলছুট হ‌য়ে নৃহরাজ‌ার ধেনুসকলের স‌ঙ্গে মি‌শে গি‌য়ে‌ছিল । ঘটনা তাঁর অজ্ঞা‌তে ঘ‌টে‌ছিল । সেই ধেনু উত্তমরূ‌পে স‌জ্জিতা হ‌য়ে নৃগ রাজা কর্তৃক এক অন্য ব্রাহ্মণ‌কে দান করা হ‌য়ে যায় ।

দানগ্রহণ ক‌রে প্রসন্ন চি‌ত্তে যখন ব্রাহ্মণ ধেনুসহ প‌থে যা‌চ্ছি‌লেন তখন ধেনুর প্রকৃত প্রভু ধেনুকে চি‌হ্নিত ক‌রে তা তাঁর ধেনু ব‌লে দাবী ক‌রেন । ঘটনা দানগ্রাহী ব্রাহ্মণ‌কে সমস্যায় ফে‌লে । তি‌নি যে‌হেতু সেই ধেন‌ু রাজা নৃগ কর্তৃক দানরূ‌পে লাভ ক‌রে‌ছি‌লেন , তাই ধেনু তাঁর নি‌জের ব‌লে ব‌লেন । প্রসঙ্গ ক্রমশ জ‌টিল হ‌য়ে যায় যখন দুইজ‌নেই সেই ধেনুর দা‌বি ছা‌ড়‌তে অস্বীকার ক‌রেন ।

কল‌হে লিপ্ত হ‌য়ে ব্রাহ্মণদ্বয় ধেনুসহ রাজা নৃ‌গের কা‌ছে বিচা‌রের জন্য উপস্থিত হন । প্র‌তিগ্রাহী ব্রাহ্মণ বল‌লেন - ' রাজা নৃগ আমা‌কে ধেনু দান ক‌রেছেন তাই ধেনুর অ‌ধিকার আমার । ' প্রকৃত স্বামী বল‌লেন - ' তাই য‌দি হয় তা হ‌লে রাজা নৃগ আমার ধেনু অপহরণ ক‌রে‌ছেন । ' তাঁ‌দের বক্তব্য রাজা নৃগ‌কে বিপ‌দে ফেলল । তি‌নি ধর্মসংক‌টের মু‌খে দাঁ‌ড়ি‌য়ে দুইজ‌নের কা‌ছেই দা‌বি ত্যাগ করবার জন্য অনুনয় - বিনয় কর‌লেন ।

তি‌নি এও বল‌লেন যে যি‌নি দা‌বি ত্যাগ করবেন তাঁ‌কে এক লক্ষ ধেনু দান কর‌বেন । তি‌নি আরও বল‌লেন যে অজা‌ন্তে কৃত অপরাধের জন্য তাঁ‌কে কৃপা করুন আর অশু‌চি নর‌কে প‌তিত হ‌তে যা‌তে না হয় তাই করুন । প্রকৃত প্রভু অপ্র‌তিগ্রাহী ব্রাহ্মণ ছি‌লেন । তি‌নি ব‌লে গে‌লেন যে এর বদ‌লে অন্য কিছু নেওয়া সম্ভব নয় । এই ব‌লে তি‌নি স্থ‌ান ত্যাগ কর‌লেন । প্র‌তিগ্রাহী ব্রাহ্মণ বল‌লেন যে এই ধেনুর প‌রিব‌র্তে এক লক্ষ উৎকৃষ্ট ধেনু কেন আরও দশ সহস্র গাভীও চাই না । তি‌নিও এই ব‌লে স্থান ত্যাগ কর‌লেন ।

কা‌লের নিয়‌মে যথাকা‌লে রাজা নৃ‌গের আয়ুঃ‌শেষ হ‌ল আর যমদূতগণ তাঁ‌কে যমাল‌য়ে নি‌য়ে গেল । যমরাজ তাঁ‌কে জিজ্ঞাসা কর‌লেন - ' কী আ‌গে ভোগ কর‌তে চান ? শুভকর্মফল না অশুভ কর্মফল ? আপনার দানক‌র্মের উপা‌র্জ্জিত দী‌প্তিমান লো‌কের অন্ত দেখা যা‌চ্ছে না । ' রাজা নৃগ বল‌লেন - ' হে যমরাজ ! আ‌মি আ‌গে অশুভ কর্মফল ভোগ কর‌তে চাই । ' যমরাজ ' তাই হোক ' বলবার স‌ঙ্গে সঙ্গে রাজা নৃগ এক গি‌রগি‌টিরূ‌পে এক কূ‌পে প‌তিত হ‌লেন ।

রাজা নৃগ‌কে কূপম‌ধ্যে গির‌গি‌টিরূ‌পে যদুবংশীয় রাজকুমারগণ প্রথ‌মে দে‌খেন । রাজকুমার শাম্ব , প্রদ্যুম্ন আ‌দি সকল চিত্ত‌বি‌নোদন নি‌মিত্ত উপব‌নে গমন ক‌রে‌ছি‌লেন আর তৃষ্ণার্ত হ‌য়ে কূপ স‌ন্নিক‌টে এ‌সে‌ছি‌লেন । সেই প্রাণী‌কে উদ্ধার করতে অসমর্থ হ‌য়ে তাঁর পিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ‌কে এই সংবাদ দেন ও রাজা নৃগ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা উদ্ধারপ্রাপ্ত হন ।

অতঃপর সেই গি‌রগি‌টি শ্রীভগবা‌নের স্পর্শ লাভ ক‌রে তপ্তকাঞ্চনবর্ণ এক স্বর্গীয় দেবমূ‌র্তি‌তে প‌রিব‌র্তিত হ‌য়ে যান । তাঁর অ‌ঙ্গে অদ্ভূত বস্ত্রালংকার ও পুষ্পমাল্য শোভায়মান ছিল । সর্বজ্ঞ শ্রীভগবান সবই জান‌তেন তবুও সর্বসাধার‌ণের কল্যা‌ণে তাঁর কাছ থে‌কেই পূর্ণ বিবরণ পে‌লেন । রাজা নৃ‌গের পাপকর্মফল ভোগ হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছিল । তি‌নি স‌চ্চিদাননন্দ সর্বান্তর্যামী বাসু‌দেব শ্রীকৃষ্ণ‌কে স্তবস্তু‌তি ক‌রে প্রণাম নি‌বেদন কর‌লেন ও উত্তম বিমা‌নে আ‌রোহণ ক‌রে চ‌লে গে‌লেন ।

নৃগরাজ উপাখ্যান দানী‌কে আরও সর্তক হ‌তে ব‌লে । ব্রাহ্মণ‌দের দান করবার সময়ে আরও সাবধান হওয়া প্র‌য়োজন কারণ ব্রাহ্ম‌ণের ধন হলাহল থে‌কেও মারাত্মক । হলাহল বি‌ষের চিকিৎসা হওয়া সম্ভব কিন্তু ব্রাহ্ম‌ণের ধন অপহ‌রণের কে‌া‌নো চিকিৎসা হয় না । অ‌গ্নি নির্বাপণ জলদ্বারা সম্ভব হয় কিন্তু ব্রাহ্ম‌ণের ধনরূপ অর‌ণি থে‌কে যে অ‌গ্নি প্রজ্ব‌লিত হয় তা সমস্ত কুল‌কে সমূলে উৎপা‌টিত ক‌রে । এই পরম সত্য শ্রীভগবান স্বয়ং সমর্থন ক‌রেন ।

জয় শ্রীরাধা‌গো‌বিন্দের জয় ।

জয় হোক সক‌লের ।
Writer: Joy Shree Radha Madhav
Share:

আমা‌দের লক্ষ্য ও কর্তব্য - ( ১ )

মানুষ‌কে সর্ব‌শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলা হ‌য়ে থা‌কে , সে নি‌জে‌কে শ্রেষ্ঠ ভা‌বে , আর ভে‌বে দেখ‌লে ম‌নে হয় যে ভগবান মানু‌ষের রচনায় বৈ‌শিষ্ট্যও রে‌খে‌ছেন । কিন্তু মানুষকে প্রকৃতভা‌বে তখনই শ্রেষ্ঠ বলা যায় যখন সে জীব‌নের প্রধান লক্ষ্যে স্থির থে‌কে নিজ কর্তব্য পালন ক‌রে । কিন্তু যখন আমরা বর্তমা‌ন জগ‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে দে‌খি তখন দে‌খি যে , লক্ষ্য স্থির রে‌খে কর্তব্যে অ‌বিচল থাকা তো দূরের কথা , লক্ষ্য ও কর্তব্য যে কী তাই সাধারণত লো‌কেরা জা‌নে না , আর জান‌তে আগ্রহীও নয় ।

বু‌দ্ধিমান ব্য‌ক্তির উ‌চিত যে নিজ জ্ঞানে শা‌স্ত্রের কথ‌া বুঝ‌তে সক্ষম না হ‌লে কে‌া‌নো জীবন্মুক্ত মহাপুরু‌ষের কা‌ছে যাওয়া , তেমন কাউ‌কে না পেলে ধ‌র্মের জ্ঞাতা ধর্মাচরণকারী ব্য‌ক্তির কা‌ছে থে‌কে আর তাও য‌দি না পাওয়া যায় ত‌বে নিজ বু‌দ্ধি‌তে যাঁ‌কে ধর্মজ্ঞানী ম‌নে হয় তাঁকে জিজ্ঞাসা ক‌রে নিজ কর্তব্য জে‌নে নেওয়া । তাও য‌দি সম্ভব না হ‌লে অন্ততপক্ষে নিজ অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞাসা করা উ‌চিত । একজন ব্য‌ক্তি ব‌লেন ' সত্যই ধর্ম ' অন্যজন ব‌লেন , ' ধর্ম - কর্ম ব‌লে কিছু নেই ' এমন অবস্থায় নিজ অন্তরাত্মা‌কে জিজ্ঞাসা করা উ‌চিত ।

বু‌দ্ধি‌কে বলা উ‌চিত যে সে যেন নির‌পেক্ষভা‌বে তার মতামত জানায় । এভা‌বে অন্তরাত্মা বা বু‌দ্ধি থে‌কে এই সাড়া পাওয়া যা‌বে যে - সত্য কথা বলাই স‌ঠিক , কারণ সত্য সক‌লের পক্ষেই শুভ । এই ভা‌বেই ব্রহ্মচর্য , অহিংসা‌দি অন্যান্য প্রস‌ঙ্গেও ভে‌বে দেখ‌া উচিত এবং অন্তরাত্মা বা বু‌দ্ধির সিদ্ধান্ত জানার পর সেই ভা‌বে কার্য সম্পাদ‌নে তৎপর হ‌য়ে যাওয়া উ‌চিত । এভা‌বে নি‌র্দেশ লাভ ক‌রেও যে যথাযথভাবে তা প‌ালন ক‌রে ন‌া সে তো নি‌জের পতনের কারণ নি‌জেই হয় । ভা‌লো কথা বু‌ঝেও তা পালন না করা এবং মন্দ ভে‌বেও তা ত্যাগ না করা হ‌লে তার তো অবশ্যই পতন হওয়া উ‌চিত ।

শ্রীভগবান ব‌লেন -

উদ্ধ‌রেৎ - আত্মনা - আত্মানম্ ন - আত্মানম্ - অবসাদ‌য়েৎ ।
আত্মা এব হি আত্মন্ বন্ধুঃ আত্মা এব রিপুঃ আত্মনঃ ।। ৬\ ৫

' নি‌জের দ্বারাই নি‌জে‌কে সংসার বন্ধন থে‌কে উদ্ধার কর‌বে এবং নি‌জে‌কে কখ‌নো অ‌ধোগ‌তি‌র প‌থে যে‌তে দে‌বে না , কারণা মানুষ ( আত্মা) নি‌জেই নি‌জের বন্ধু আবার নি‌জেই নি‌জের শত্রু ।
আমা‌দের যে রাগ ( আস‌ক্তি ) - দ্বেষ , শোক - ভয় প্রভৃ‌তি অনুভূ‌তি হয় , তা কেন হয় ?

সক‌লে ভা‌বে যে প্রারব্ধবশত ( ভাগ্য) হয় কিন্তু তা ঠিক নয় । তা অজ্ঞানবশত হ‌য়ে থা‌কে । শোক - ভ‌য়ের জন্য রাগ - দ্বেষ হয় আর রাগ - দ্বেষই হল প্রধান ক্লেশ । অ‌বিদ্যা অথবা অজ্ঞানই হল এর কারণ । অ‌বিদ্যার নাশ হ‌লে এই স‌বের আপনাআপ‌নি বিনাশ হ‌য়ে যায় ।

ধনসম্পদ লাভ করা অথবা নষ্ট হওয়া , অসুস্থ অথবা সুস্থ হওয়া আর জন্ম - মৃত্যু আ‌দি সক‌লের মূ‌লে তো প্রারব্ধ ( ভাগ্য ) কিন্তু চিন্তা ,ভয় , শোক , মোহ আ‌দি‌তে অজ্ঞানই প্রধান কারণ । অজ্ঞান নাশ হ‌লে শোক - মোহ থা‌কে না ।

শ্রু‌তি ব‌লেন -

তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ । ( ঈশ ৭ )
হর্ষ‌শোকৌ জহা‌তি । ( কঠ ১\ ২\ ১২ )

শোকা‌দি‌তে য‌দি প্রারব্ধ কারণ হত তাহ‌লে ভগবান অর্জুন‌কে কেমন ক‌রে ব‌ল‌তেন -

অ‌শোচ্যান্ অন্ব‌শোচঃ ত্বম্ প্রজ্ঞাবাদান্ চ ভাষ‌সে ।
গত অসূন্ অগত অসূন্ চ ন অনু‌শোচ‌ন্তি প‌ণ্ডিতাঃ ।

‌হে অর্জুন ! যা‌দের জন্য শোক করা উ‌চিত নয় এমন মানুষ‌দের জন্য তু‌মি শোক করছ আবার প‌ণ্ডি‌তের মতন কথাও বলছ , কিন্তু প‌ণ্ডিতগণ মৃত অথবা জী‌বিত কা‌রো জন্যই শোক ক‌রেন না । '

জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞা‌নের বিনাশ হয় । সাধনা ক‌রে আমাদের সেই জ্ঞান লাভ করা উ‌চিত যা‌তে শোক - মোহ , চিন্ত‌া -ভয় , চু‌ুরি - ব্য‌ভিচার , মিথ্যা - কপট এবং আলস্য - অকর্মণ্যতা আ‌দি দোষসকল‌কে সতত নাশ করে । জ্ঞান হ‌লে , অজ্ঞা‌নের এই সকল কার্য ( প‌রিণাম ) থা‌কে না । ধরা যাক - খুব ভা‌লো রান্না হয়ে‌ছে , মিষ্টান্ন অ‌তিশয় সুস্বাদু , আমরা মন দি‌য়ে খে‌তে ব‌সে‌ছি । দুই গ্র‌াস মু‌খে তু‌লে‌ছি , তখনই একজন চু‌পিচু‌পি এ‌সে খবর দিল - ' মিষ্টা‌ন্নে বিষ আ‌ছে , খেও না । ' তখন তা শু‌নেই মু‌খের গ্রাস তখনই ফে‌লে দিই , থ‌াল‌া সরি‌য়ে দিই । আর গি‌লে ফেলা গ্র‌াস‌কে ভেতর থেকে ব‌মি ক‌রে বের করার চেষ্টা ক‌রি । বি‌ষের কথা শোনা মাত্রই যতই মধুর ও সুস্বাদু বস্তু হোক না কেন আমরা তা খে‌তে পা‌রি না । জগ‌তের সুখ - ভোগ সম্ব‌ন্ধেও ঠিক একই কথা বলা যায় । আমরা য‌দি শাস্ত্র , ভগবান বা সন্ত ব্য‌ক্তির কথায় বিশ্বাস ক‌রি তাহ‌লে এই ভো‌গের প্র‌তি কখনো মন টান‌বে না ।

ভগবান স্বয়ং ব‌লেন --

‌যে হি সংস্পর্শজা ভোগা দুঃখ‌যোনয় এব তে ।
আদ্যন্তবন্ত কৌন্তেয় ন তেষু রম‌তে বুধঃ ।। ( গীতা ৫\ ২২ )

' ই‌ন্দ্রিয় ও বিষয়া‌দির সং‌যো‌গে উৎপন্ন যে ভোগ - যদিও বিষয়ী ব্য‌ক্তি‌দের কা‌ছে তা সুখরূ‌পে বি‌বে‌চিত হয় কিন্তু আস‌লে তা দুঃ‌খেরই হেতু । এর আ‌দি অন্ত আ‌ছে অর্থাৎ এ অ‌নিত্য । সেইজন্য হে কৌন্তেয় ! বু‌দ্ধিমান বি‌বেকশীল ব্য‌ক্তি তা‌তে রমণ ক‌রেন ন‌া ।
এ‌ই কথা জে‌নেও য‌দি কেউ এ‌তে মন দেয় তাহ‌লে তো সে অ‌তি মূর্খ ।

যে কেউ প্রশ্ন কর‌তে পারে , বি‌ষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চো‌খে প‌ড়ে ন‌া ?
এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকা‌রের হ‌য়ে থাকে । এমন বিষও হ‌য়ে থা‌কে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অ‌তি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধী‌রে ধীরে প্রভা‌বিত করার এক ভয়ানক সু‌মিষ্ট বিষ । তাই রাজ‌সিক বিষয় সুখ‌কে ভগবান প‌রিণা‌মে বিষতুল্য ব‌লে‌ছেন ।

ভগব‌ান গীতার ১৮\ ৩৮ শ্লো‌কে ব‌লে‌ছেন --

‌বিষয় ই‌ন্দ্রিয় সং‌যোগাৎ যৎ তৎ অ‌গ্রে অমৃ‌তোপমম্ ।
প‌রিণা‌মে বিষম্ ইব তৎ সুখম্ রাজসম্ স্মৃতম্ ।

' যে সুখ বিষয় ও ই‌ন্দ্রি‌য়ের সং‌যো‌গে হয় , যা ভোগকা‌লের প্রার‌ম্ভে অমৃতবৎ ম‌নে হ‌লেও প‌রিণা‌মে তা বিষতুল্য - তা‌কে রাজসিক সুখ বল‌া হয় । '

Writer : Joy Shree Radha Madhav
Share:

আমা‌দের লক্ষ্য ও কর্তব্য ( পর্ব-০২ )

যে কেউ প্রশ্ন কর‌তে পারে , বি‌ষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চো‌খে প‌ড়ে ন‌া ?

এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকা‌রের হ‌য়ে থাকে । এমন বিষও হ‌য়ে থা‌কে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অ‌তি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধী‌রে ধীরে প্রভা‌বিত করার এক ভয়ানক সু‌মিষ্ট বিষ । তাই রাজ‌সিক বিষয় সুখ‌কে ভগবান প‌রিণা‌মে বিষতুল্য ব‌লে‌ছেন ।

যে কেউ প্রশ্ন কর‌তে পারে , বি‌ষের প্রভাব তৎক্ষণাৎ দেখা যায় কিন্তু এর তো তেমন প্রভাব চো‌খে প‌ড়ে ন‌া ?

এর উত্তরে বলা যায় - বিষ বহু প্রকা‌রের হ‌য়ে থাকে । এমন বিষও হ‌য়ে থা‌কে যার প্রভাব ধীরে ধীরে হয় কিন্তু তা অ‌তি ভয়ংকর হয় । ঠিক তেমনই ভোগ হল ধী‌রে ধীরে প্রভা‌বিত করার এক ভয়ানক সু‌মিষ্ট বিষ । তাই রাজ‌সিক বিষয় সুখ‌কে ভগবান প‌রিণা‌মে বিষতুল্য ব‌লে‌ছেন ।

ভগব‌ান গীতার ১৮\ ৩৮ শ্লো‌কে ব‌লে‌ছেন --

‌বিষয় ই‌ন্দ্রিয় সং‌যোগাৎ যৎ তৎ অ‌গ্রে অমৃ‌তোপমম্ ।

প‌রিণা‌মে বিষম্ ইব তৎ সুখম্ রাজসম্ স্মৃতম্ ।

' যে সুখ বিষয় ও ই‌ন্দ্রি‌য়ের সং‌যো‌গে হয় , যা ভোগকা‌লের প্রার‌ম্ভে অমৃতবৎ ম‌নে হ‌লেও প‌রিণা‌মে তা বিষতুল্য - তা‌কে রাজসিক সুখ বল‌া হয় । '

য‌দি বলা হয় যে , আমরা তো বহু বহু বিষয় খে‌য়ে রে‌খে‌ছি তাহ‌লে এখন কী হ‌বে ?


তার উপায় তো অ‌নেক আ‌ছে । প্রথ‌মে গ্রহণ করা বিষ বারও করা যে‌তে পারে , হজম করাও যে‌তে পারে । উত্তম বৈদ্য তার উপায় ব‌লে দি‌তে পা‌রেন কিন্তু প্রথ‌মে বিশ্বাস আসা প্র‌য়ো‌জন যে তা বস্তুত বিষ । বিশ্ব‌াস হ‌লে অন্ততপ‌ক্ষে ভ‌বিষ্য‌তে তা খাওয়া বন্ধ হ‌য়ে যা‌বে । য‌দি তা এখনও সেই ভা‌বেই গ্রহণ করা হয় তাহ‌লে কেমন ক‌রে ভাবা যায় যে আমরা ভগবানের কথার উপর বিশ্বাস ক‌রে সেটি‌কে দুঃখপ্রদ ও বিষবৎ ম‌নে ক‌রে‌ছি ?

এই বিষ‌সেবন ত্যাগ করা প্র‌য়োজন এবং তা অ‌বিল‌ম্বে না কর‌লে রক্ষা পাওয়া ক‌ঠিন হ‌য়ে যা‌বে । যে পর্যন্ত মৃত্যু দূ‌রে আ‌ছে , দে‌হে প্রাণ আ‌ছে তার ম‌ধ্যেই অতি শীঘ্র উপায় করা প্র‌য়োজন । এ ভাবা ঠিক নয় যে তাড়া কী‌সের ! কিছু দিন প‌রে ক‌রে নেব । মৃত্যু কখন এ‌সে উপস্থিত হ‌বে তা কেউ বল‌তে পারে ন‌া । জীব‌নের কে‌নো স্থিরতা তো নেই । এ‌দি‌কে বিষ বে‌ড়েই যা‌চ্ছে । য‌দি রা‌ত্রে মৃত্যু হয় তাহ‌লে কী করার থাক‌বে ? অতএব এখনই জে‌গে উ‌ঠে পূর্ণ শ‌ক্তি‌তে লে‌গে পড়া প্র‌য়োজন । মানুষ কত কি বল‌বে তা‌দের কথা কান দি‌য়ে কি কর‌বেন । তারা তো আপনা‌কে উদ্ধার কর‌তে পা‌রবে না । যারা অজ্ঞানী , ই‌ন্দ্রিয়সুখ -‌ভো‌গে আসক্ত তারা আপনা‌কে শুধু বিপ‌থে নি‌য়ে যা‌বে তারা নি‌জে‌রা জা‌নে না কি ক‌রে উদ্ধার হ‌তে হ‌বে আপনা‌কে কি আর স‌ঠিক পথ দেখা‌তে পা‌রে ।

আমা‌দের লক্ষ্য হওয়া উ‌চিত ঈশ্বর লাভ , কারণ ঈশ্বরই একমাত্র পরম সুখ ও শাশ্বত শা‌ন্তির কেন্দ্র । তি‌নিই সর্ব‌শ্রেষ্ঠ এবং লাভ করবার সর্বা‌পেক্ষা যোগ্য পরম বস্তু , তাঁর প্রাপ্তি‌তেই জীব‌নের পূর্ণ ও যথার্থ সাফল্য নির্ভর ক‌রে এবং এই পরম লক্ষ্য‌কে লাভ করবার জন্য সতস যত্নশীল হওয়াই মানব জীব‌নের কর্তব্যপালন । এই কর্তব্যপালনে যতই ত্যাগ করা হোক না কেন , তাই অল্প । কেবল ত্যা‌গের প্রস্তু‌তি থাক‌া দরকার, ত্যা‌গের জন্য প্রস্তুত হ‌লে শাস্ত্র ব‌লেন -- ঈশ্বর ল‌াভ হয় আর তা লাভ করাও সহজ , আর এই বিশ্বাস ধার‌ণ করা প্র‌য়োজন যে আমরা ঈশ্বর লা‌ভের অ‌ধিকারী ।

যেমন মন দি‌য়ে পড়া‌লেখা কর‌লে পাস করা যায় । ফেল করা কঠিন কিন্তু পাস করা সহজ । পাস করার জন্য একটু মন দি‌য়ে বু‌ঝে শু‌নে পড়ালেখ‌া করা । তেমনি ভগবান‌কে প্রাপ্ত করার জন্য ম‌নো‌যোগ সহকা‌রে তা‌কে ভ‌ক্তি কর‌তে হ‌বে । আমা‌দের মানবজন্ম তাঁ‌কে প্রাপ্ত করার জন্যই হ‌য়ে‌ছে । ভগবান আমা‌দের মু‌ক্তির চা‌বিকা‌টি দি‌য়ে‌ছেন । যা কিছু বিফলতা হয় সব আমা‌দের দিক থে‌কে । তি‌নি মানব‌দে‌হে দি‌য়ে আমা‌দের মুুক্তির অ‌ধিকারী ক‌রে দি‌য়ে‌ছেন ।

এক্ষ‌ণে আমরা য‌দি প্রমাণ ও পাপ ক‌রি তাহ‌লে তা তো আমা‌দের মূর্খতা । এমন মূর্খ‌দের জন্য ভগবান ব‌লে‌ছেন -

তানহং দ্বিষতঃ ক্রূরান্ সংসা‌রেষু নরাধমান্ ।

‌ক্ষিপা‌মি অজস্রম্ অশুভান্ আসুরীষু এব যো‌নিষু । ( ১৬\ ১৯ )

' সেই দ্বেষপরায়ণ , পাপাচারী , ক্রূর , নরাধম‌দের আ‌মি এই সংসা‌রে বারংবার আসুরী যোনি‌তে নি‌ক্ষেপ ক‌রি । '

আসুরী যো‌নিমাপন্না মূঢ়া জন্ম‌নি জন্ম‌নি ।

মামপ্রা‌প্যৈব কৌ‌ন্তেয় ত‌তো যান্ত্যধমাং গ‌তিম্ ।। ১৬ \২০

‌হে অর্জুন ! সেই মূঢ় ব্যক্তিগণ আমা‌কে লাভ না ক‌রে জ‌ন্মে জন্মে আসুরী যো‌নি লাভ ক‌রে এবং ক্র‌মে তা থে‌কেও অত্যন্ত অ‌ধোগ‌তি প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ ঘোর নর‌কে প‌তিত হয় । '

পাপাচারী ও ক্রূরকর্মা নরাধম‌দের জন্য আসুরী যো‌নি এবং নর‌কের বিধান করা তো যথার্থ । কিন্তু ভগবান যে ব‌লে‌ছেন - ' আমা‌কে ল‌াভ না করে ' এর রহস্য কী ? সরকার বল‌তেই পা‌রেন যে চোর , ডাকাত , তা‌কে বারংবার জে‌লে পাঠা‌নো হ‌বে , দীপান্ত‌রে পাঠা‌নো হ‌বে । কিন্তু তা‌কে ' রাজ্য না দি‌য়ে জে‌লে পাঠা‌নো হ‌বে ' - এর মা‌নে কী ? কথাটা এই যে ভগবান যখন কো‌নো জীব‌কে মানব‌দেহ দি‌য়ে পাঠান তখন তো তা‌কে মু‌ক্তির অ‌ধিকার দি‌য়েই পা‌ঠি‌য়ে‌ছেন ।

সেই মুক্তির অধিকার লাভ ক‌রে আসা জীব যখন ভগবান‌কে ভু‌লে গি‌য়ে নি‌জ জন্ম‌সিদ্ধ অধিকার উপেক্ষা ক‌রে পাপ ক‌রে ব‌লেন যে - দে‌খো , আ‌মি এ‌কে আমা‌কে লাভ করবার অ‌ধিকার দি‌য়ে পা‌ঠি‌য়ে‌ছিলাম কিন্তু আজ এ‌কে নর‌কে পাঠাবার ব্যবস্থ‌া কর‌তে হ‌চ্ছে । এর চে‌য়ে বড় আ‌ক্ষেপ আর কী হ‌তে পা‌রে ?

যেমন কো‌নো রাজপু‌ত্রের রা‌জ্যের উপর জন্ম‌সিদ্ধ অ‌ধিকার থা‌কে কিন্তু যতক্ষণ সে নাবালক তাঁ‌কে রাজ্যশাস‌নের যোগ্য ম‌নে করা হয় না । রাজা স্বয়ংই রা‌জ্যের সমস্ত ব্যবস্থা ক‌রেন এবং রাজকুমার সাবালক হ‌লে তা‌কে সমস্ত অ‌ধিকার অর্পণ করবার ইচ্ছ‌া রা‌খেন । কিন্তু য‌দি সে অ‌যোগ্য প্রমা‌ণিত হয় এবং কুস‌ঙ্গে প‌ড়ে অনু‌চিত কর্ম ক‌রে , যার ফ‌লে প্রজা‌দের ক্ষ‌তি হয় তাহ‌লে তেমন প‌রি‌স্থি‌তিকে জন্ম‌সিদ্ধ স্বত্ব হ‌লেও তা‌কে রাজ্য‌ধিকার থে‌কে ব‌ঞ্চিত ক‌রে দেওয়া হয় ।

শুধু তাই নয় তার জন্য দণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে । দণ্ড দেওয়ার সম‌য়ে রাজা আক্ষেপ করেন । এমন কথা মানু‌ষের জন্যও প্র‌যোজ্য । মানু‌ষের ঈশ্বরলাভ জন্ম‌সিদ্ধ অ‌ধিকার তবুও নিজ অ‌যোগ্যতা ও বিপরীতাচরণ হেতু তা‌কে নি‌জ অধিকার থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌য়ে দণ্ড ভোগও কর‌তে হ‌য় । এর থে‌কে অ‌ধিক তার দুর্ভাগ্য কী হ‌বে ? তাই ভগবান উপ‌রের শ্লোকে ' আমাকে লাভ না ক‌রে ' অধম গ‌তি লাভ ক‌রে - এমন কথা ব‌লে‌ছেন ।

বস্তুত এ‌টি অ‌তিশয় দুঃখ ও লজ্জ‌ার কথা যে , এইভা‌বে আমরা দয়ালু ভগবা‌গের দয়ার প্র‌তি সু‌বিচার না ক‌রে নি‌জে মানবজীব‌নকে ব্যর্থ ক‌রে তু‌লি । এটাই মানব জীব‌নের সব থে‌কে বড় বিফলতা এবং তা মান‌বের সব থে‌কে বড় ভুল । ভগবান বলেন - সত্বর চৈতন্যময় হও , কা‌লের উপর ভর‌সা করে বিষয় ভু‌গে একটুুও বিভ্রান্ত হ‌য়ো না । ভে‌বো না যে মানব‌দেহ সতত থাক‌বে ।

এও ভে‌বো না যে আমা‌কে ভু‌লে তু‌মি এ‌তে একটুও সু‌খের‌ স্পর্শ পাবে । এই মানব‌দে‌হে আ‌মি তোমাকে বি‌শেষ কৃপাপূর্বক প্রদান করে‌ছি নি‌জের দি‌কে আকর্ষণ ক‌রে পরমানন্দরূপ পরমধা‌মে নি‌য়ে যাওয়ার জন্য । এই জন্ম অ‌তিশয় দুর্লভ । কিন্তু তা অ‌নিত্য , ক্ষণভঙ্গুর আর যে আমা‌কে ভুলে যায় তার জন্য তার জন্য নিতান্ত সুখর‌হিতও । তা লাভ ক‌রে কেবল প্রী‌তিপূর্বক আমা‌রই ভজনা ক‌রো । তাহ‌লেই তুুমি জীব‌নের পরম লক্ষ্যরূপ আমা‌কে লাভ ক‌রে ধন্য হ‌তে পার‌বে ।

অ‌নিত্য অসুখম্ লোক‌মিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্ ।। ( ৯\৩৩ )

জয় আমার প্রাণ শ্রীরাধাগো‌বি‌‌ন্দের জয় ।

জয় ভক্তবৃন্দের জয় ।
Joy Shree Radha Madhav


Share:

শ্রীরমা একাদশী মাহাত্ম্য

একসময় যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণকে বললেন-হে জনার্দন! কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা করে আমায় বলুন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে রাজন! মহাপাপ দূরকারী সেই একাদশী ‘রমা’ নামে বিখ্যাত। আমি এখন এর মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, আপনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন।

পুরাকালে মুচুকুন্দ নামে একজন সুপ্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র, যম, বরুণ ও ধনপতি কুবেরের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। ভক্তশ্রেষ্ঠ বিভীষণের সাথেও তার অত্যন্ত সদ্ভাব ছিল। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্ত ও সত্যপতিজ্ঞ। এইরূপে তিনি ধর্ম অনুসারে রাজ্যশাসন করতেন।

চন্দ্রভাগা নামে তার একটি কন্যা ছিল। চন্দসেনের পুত্র শোভনের সাথে তার বিবাহ হয়েছিল। শোভন একসময় শ্বশুর বাড়িতে এসেছিল। দৈবক্রমে সেইদিন ছিল একাদশী তিথি। স্বামীকে দেখে পতিপরায়ণা চন্দ্রভাগা মনে মনে চিন্ত করতে লাগল-হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল, তিনি ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে ঘোষণা কর দিয়েছেন যে, একদশী দিনে আহার নিষিদ্ধ। আমি এখন কি করি!

রাজার নিষেধাজ্ঞা শুনে শোভন তার প্রিয়তমা পত্নীকে বলল- হে প্রিয়ে, এখন আমার কি কর্তব্য, তা আমাকে বলো। উত্তরে রাজকন্যা বলল- হে স্বামী, আজ এই গৃহে এমনকি রাজ্যমধ্যে কেউই আহার করবে না। মানুষের কথা তো দূরে থাকুক পশুরা পর্যন্ত অন্নজল মাত্র গ্রহণ করবে না। হে নাথ, যদি তুমি এ থেকে পরিত্রাণ চাও তবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন কর। এখানে আহার করলে তুমি সকলের নিন্দাভাজন হবে এবং আমার পিতাও ক্রদ্ধ হবেন। এখন বিশেষভাবে বিচার করে যা ভাল হয়, তুমি তাই কর।

সাধ্বী স্ত্রীর এই কথা শুনে শোভন বলল- হে প্রিয়ে! তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি গৃহে যাব না। এখানে থেকে একাদশী ব্রত পালন করব। ভাগ্যে যা লেখা আছে তা অবশ্যই ঘটবে।

এইবাবে শোভন ব্রত পালনে বদ্ধপরিকর হলেন। সমস্ত দিন অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি শুরু হল। বৈষ্ণবদের কাছে সেই রাত্রি সত্যিই আনন্দকর। কিন্তু শোভনের পক্ষে তা ছিল বড়ই দু:খদায়ক। কেননা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় সে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ল। এভাবে রাত্রি অতিবাহিত হলে সূর্যোদয়কালে তার মৃত্যু হল। রাজা মুচুকুন্দ সাড়ম্বরে তার শবদাহকার্য সুসম্পন্ন করলেন। চন্দ্রভাগা স্বামীর অন্তেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পিতার আদেশে পিতৃগৃহেই বাস করতে লাগলেন।

কালক্রমে রমাব্রত প্রভাবে শোভন মন্দরাচল শিখরে অনুপম সৌন্দর্যবিশিষ্ট এক রমনীয় দেবপুরী প্রাপ্ত হলেন। একসময় মুচুকুন্দপুরের সোমশর্ম্মা নামে এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমণ করতে করতে সেখানে উপস্থিত হলেন। সেখানে রত্নমন্ডিত বিচিত্র স্ফটিকখচিত সিংহাসনে রত্নলঙ্কারে ভূষিত রাজা শোভনকে তিনি দেখতে পেলেন। গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণ দ্বারা নানা উপচারে সেখানে তিনি পূজিত হচ্ছিলেন। রাজা মুচুকুন্দের জামাতারূপে ব্রাহ্মণকে দেখে আসন থেকে উঠে এসে তাঁর চরণ বন্দনা করলেন। শ্বশুর মুচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ নগরবাসী সকলের কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করলেন।

ব্রাহ্মণ সকলের কুশল সংবাদ জানালেন। জিজ্ঞাসা করলেন- এমন বিচিত্র মনোরম স্থান কেউ কখনও দেখেনি। আপনি কিভাবে এই স্থান প্রাপ্ত হলেন, তা সবিস্তারে আমার কাছে বর্ণনা করুন। শোভন বললেন যে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া রমা একাদশী সর্বব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমি তা শ্রদ্ধারহিতভাবে পালন করলেও তার আশ্চর্যজনক এই ফল লাভ করেছি। আপনি কৃপা করে চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানাবেন।

সোমশর্ম্মা মুচুকুন্দপুরে ফিরে এসে চন্দ্রভাগার কাছে সমস্ত ঘটনার কথা জানালেন। ব্রাহ্মণের কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত চন্দ্রভাগা বললেন- হে ব্রাহ্মণ! আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। তখন সোমশর্ম্মা বললেন-হে পুত্রী, সেখানে তোমার স্বামীকে আমি স্বয়ং সচক্ষে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি। কিন্তু তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির হয় সেই মতো কোন উপায় কর। এসব কথা শুনে চন্দ্রভাগা বললেন, তাকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনই তার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ব্রত পালনের পুণ্যপ্রভাবে এই নগরকে স্থির করে দেব।

তখন সোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামদেবের আশ্রমে উপনীত হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও হরিবাসর ব্রত পালনের ফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর ধারণ করল। দিব্য গতি লাভ করে নিজ স্বামীর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে দেখে শোভন অতীব আনন্দিত হলেন।

বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্দ্রভাগা অকপটে নিজের পুণ্যকথা জানালেন। হে প্রিয়, আজ থেকে আট বছর আগে আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকেই এই রমা একাদশীর ব্রত নিষ্ঠাসহকারে পালন করতাম। ঐ পুণ্য প্রভাবে এই নগর স্থির হবে এবং মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে।

হে মহারাজ! মন্দরাচল পর্বতের শিখরে শোভন স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ দিব্যসুখ ভোগ করতে লাগলেন। পাপনাশিনী ও ভক্তিমুক্তি প্রদায়িনী রমা একদশীর মাহাত্ম্য আপনার কাছে বর্ণনা করলাম। যিনি এই একাদশী ব্রত শ্রবণ করবেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণলোকে পূজিত হবেন।


Courtesy by: Joy Shree Radha Madhav
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।