বৃহস্পতি হলেন দেবগুরু। তাই এই বার কে “গুরুবার” বলা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে বলা হয় যে মনুষ্যের কুণ্ডলীতে বৃহস্পতির অবস্থান সঠিক ভাবে থাকে – সে কোনোদিন অর্থ কষ্টে পীড়িত হয় না । তাই বৃহস্পতিবারকেই ধন- সম্পদ- ঐশ্বর্যের দেবী মা লক্ষ্মীর পূজার বার রূপে ব্যাখায়িত হয়েছে। মা লক্ষ্মীকে কেবল আমরা জানি ধন সম্পদের দেবী রূপে। আর ধন সম্পদ বলতে আমরা বুঝি কেবল সোনা- দানা- হীরা- মুক্তা- টাকাপয়সাকে । কিন্তু মা লক্ষ্মী কি কেবল এই সকল জাগতিক ঐশ্বর্য প্রদান করেন ? কতটুকু আমরা বুঝি বা বোঝার চেষ্টা করি ? একটু লক্ষ্মীর পাঁচালীতে ভালোমতো পড়লে আমরা এই ধন- সম্পদ- ঐশ্বর্যের তত্ত্ব টুকু বুঝতে সমর্থ হবো। লক্ষ্মীর পাঁচালী বর্তমানে অনেক লেখকের দ্বারা রচিত হয়ে বাজারে এসেছে। কবিতার ছন্দ ও ভাষা আলাদা হলেও মূল তত্ত্ব এক।
সুতরাং সেগুলো ভাষা বিন্যাস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং ভেতরের মূল কথা জানার চেষ্টা করাই উত্তম । প্রথমত একটা প্রবাদ আছে- “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে”। এই কথা আজোও সত্য। পুরুষ চাকরী নিয়ে বাইরে ব্যস্ত। মাস গেলে সে কেবল তার বেতন এনে স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়। সংসারের ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। অথচ শ্বশুর শাশুড়ী, সন্তান, কুটুম্ব নিয়েই সংসার । এই দায়িত্ব কে কাঁধে নেন – উত্তর হবে স্ত্রী । সুতরাং সংসারের উন্নতি বা অবনতির দায়িত্ব স্ত্রীর হাতে। স্ত্রী চাইলে সংসারকেই স্বর্গ অথবা নরক বানাতে পারে । কিন্তু তার জন্য স্ত্রীদের কেবল ডিগ্রি নিয়ে পাশ করলেই হবে না- সুশিক্ষা , সদাচার, সুশীলা হওয়াও প্রয়োজন। সুতরাং আজকের যুগে নারীদের শিক্ষার পাশাপাশি সদাচার, সুশীল হওয়া প্রয়োজন । মা লক্ষ্মী নিজেই বলেছেন, তিঁনি নিজে কোন গৃহে থাকেন, কোন গৃহ থেকে প্রস্থান করেন । যথা-
লক্ষ্মীরূপ নারী সৃজি পাঠানু ধরায় ।
ভুলিয়া মোদের তারা মোহেতে মজয় ।।
লজ্জা আদি গুণ যত রমণীর ভূষণ ।
নারী সবে সেই লজ্জা দেছে বিসর্জন ।।
সন্ধ্যাকালে সন্ধ্যাবাতি নাহি হয় জ্বালা ।
ভালেতে সিন্দুর দিতে হইয়াছে ভোলা ।।
প্রভাতে দেয় না আর গোবরের ছড়া ।
নাহি করে ঘৃণা মনে বাসি বস্ত্র পরা ।।
পিতামাতা নাহি মানে কোন গুরুজন ।
শ্বশুর শাসুড়ী প্রতি বরষে কুবচন ।।
আত্মীয়, অতিথি হয় যথা নারায়ণ ।
তাদের দূর করে হেরিলে সর্বক্ষণ ।।
এইরূপ ঘরে ঘরে নানা ব্যাভিচার ।
অচলা হইয়া থাকি বল কি প্রকার ।।
( শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর পাঁচালী ও ব্রতকথা... শ্রীপশুপতি চট্টোপাধ্যায়... রাজেন্দ্র লাইব্রেরী )
মা নিজেই বলছেন কারা কৃপা পায়। সংযম হল পুরুষের ভূষণ আর লজ্জা হল স্ত্রীর ভূষণ । নারী যদি সেই লজ্জা ত্যাগ করে তবে সেই সংসারের দুর্গতির সীমা থাকে না । এই লজ্জা কি ? তাও বলেছেন দেবী- এঁয়োতি নারী শাঁখা- পলা- সিঁদূর বাদ দেওয়া, দেব দ্বিজে ভক্তি না করা, বাসী ঘর পরিষ্কার না করা, গুরুজনদের সাথে ঝগড়া করা, অতিথিকে যত্ন না করে তিরস্কার করা- এগুলিই করাই ত লজ্জা ও কলঙ্ক। তাই নারীকে এগুলি করার থেকে বিরত থাকতে হবে । না হলে শুধু শুধু ফটোতে মা লক্ষ্মীর পূজা করে ১০০ বছরেও সংসারে মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান করতে পারবেন না। লক্ষ্মী দেবী নিজেও বলেছেন- “লক্ষ্মীরূপ নারী সৃজি পাঠানু ধরায়”- অর্থাৎ নারী মাত্রই লক্ষ্মী। কিন্তু সেটাকে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা সকলে বলি আমাদের ভেতর ঈশ্বর আছেন। শুধু কবিতার মতো এটা আবৃত্তি করলে কিছুই হবে না, যতক্ষণ না নিজে সেটা উপলব্ধি করতে পারছি । সুতরাং নারীকে সেই “লক্ষ্মীশ্রী” অর্জন করতে হবে। লক্ষ্মীর পাঁচালীতে সেই কথা ছত্রে ছত্রে লিপিবদ্ধ আছে। সেই উপায়গুলী বাস্তবে অর্জন করতে হবে । মা লক্ষ্মী আবার নিজেই বলেছেন, যে তিনি কোন সংসারে থাকেন-
শান্তিপূর্ণ দেখি আমি যাই সে আলয় ।
অনাচার করি সবে আমারে তাড়ায় ।।
তাইতো চঞ্চলা হয়ে ফিরি দ্বারে দ্বারে ।
জগতের সকলে বলে চঞ্চলা আমারে ।।
যে গৃহে প্রভাতে উঠি নারী সমুদয় ।
গৃহে আর গৃহাঙ্গনে গোময় ছিটায় ।।
স্নান করি করে সবে দেবতা অর্চন ।
তারপর গৃহকর্মে দেয় তারা মন ।।
যত্নেতে সময় মত করয়ে রন্ধন ।
নিজহস্তে যত্নে করে শিশুর পালন ।।
উচ্চ হাসি জোরে কথা করি পরিহার ।
গুরুজন প্রতি করে নম্র ব্যবহার ।।
স্বামীর আত্মীয়গণে সেবা যত্ন করে ।
ভক্তিমনে যেই নারী স্বামী সেবা করে ।।
কলহ বিবাদ কভু নাহি যে ভবনে ।
সদালাপ সদাচার করে সর্বক্ষণে ।।
শুদ্ধাচারে থাকে তারা সদা সর্বক্ষণ ।
গৃহকর্মে নাহি করে আলস্য কখন ।।
অতিথি আসিলে তার সদা যত্ন করে ।
একত্রে বসিয়া সবে ধর্মগ্রন্থ পড়ে ।।
কুটিলতা প্রবঞ্চনা মিথ্যা নাহি জানে ।
যথাযথ কথা বলে সহাস্য বসনে ।।
অহঙ্কার ক্রোধ হিংসা নাহিক যথায় ।
অপরের দুঃখ দেখি নিজে দুঃখ পায় ।।
পরদুঃখ দূর তরে সে হয় তৎপর ।
পরের সুখেতে হয় প্রফুল্ল অন্তর ।।
সধবা রমণী পরে কপালে সিন্দুর ।
হাসিমুখে থাকে কথা বলে সুমধুর ।।
সন্দেহ না কর ঋষি আমার বচনে ।
অচলা হইয়া থাকি আমি সে ভবনে ।।
( শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর পাঁচালী ও ব্রতকথা... শ্রীনাথ বসাক... বেনীমাধব শীলস্ লাইব্রেরী )
দেবী নিজেও বলেছেন তিনি কোন সংসারে থাকেন । যে গৃহ শান্তিময় অর্থাৎ যে গৃহে ঝগড়া , কলহ নেই , দেবী সেখানেই নিবাস করেন । নারীদের ঝগড়া করবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সর্বদা ঝগড়ার মানসিকতা থাকলে ভালো চিন্তা আর আসবে না । আবার বলেছেন দেবী, যে প্রভাতে উঠে গোময় দ্বারা গৃহ পরিষ্কার, স্নান করে দেবতার পূজা ও যত্ন করে নানাবিধ রান্নাবান্না করতে । এখন পাকা মোজাইক বাড়ীতে কিভাবে সম্ভব ? প্রথমত প্রাচীনকালে মাটির মেঝেতে গোবর জীবানু নিরোধক কাজ করতো। গোবোরে জীবানু নাশক ক্ষমতা থাকে। এখন ফিনাইল যথেষ্ট। নারীদের কাজ কর্ম করতে হয়। কারণ জিম বা ব্যায়াম করা সব নারীর পক্ষে অসম্ভব ।
আর কর্মঠ নারীদের শরীর সহজে রোগাগ্রস্ত হয় না, সুখ প্রসব হয়। এখন অধিকাংশ নারী দুপুর ১২ টায় ঘুম থেকে উঠে বেড-টি খেয়ে চাকর দিয়ে কাজ করায়, নিজে আরামে থাকে। ফলে কি দাঁড়ায় ? অল্প বয়সে সুগার, স্থূলত্ব, প্রেশার সহ নানা রোগের আগমন , হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার রোগ । দেখবেন শহরের নারীর থেকে গ্রামাঞ্চলের নারীদের শরীর ভালো। কেন ? তারা খুব খাটুনী করে ? দাস দাসী রাখে না । উচ্চ কথা বললে শক্তি হ্রাস পায় , আর যে নারী আত্মীয় স্বজন দের যত্ন না করে সমাজে তার নামে কলঙ্ক রটে । দেবী বলেছেন যে নারী সদালাপ , ধর্মগ্রন্থ পড়ে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন । কেন ? কারণ পরনিন্দা, পরচর্চা করতে করতে মনটাও কুটিল হয়, আর সেই নারী ধীরে ধীরে হিংসুক হয়ে যায় । পরনিন্দা করার থেকে সেই সময় ধার্মিক গ্রন্থ পাঠ, ঈশ্বরের নাম কীর্তন বা কোনো শুভকাজে নিজেকে নিয়োগ করা অনেক ভালো ।
দেবী আরোও বললেন- “শুদ্ধ বস্ত্রে থাকতে”। নোংরা বস্ত্রে থাকলে নিজের রোগ ও রান্নাবান্নাতেও নোংরা সংক্রামিত হয় । অপরের দুঃখ দেখে যে হাসে যে অপরের বিপদে পাশে না থেকে তামাশা দেখে দেবী লক্ষ্মী তাদের সংসার থেকেও বিদায় নেন । আবার দেবী এও বলেছেন- নারীদের হতে হবে “স্পষ্টবক্তা” “যথাযথ কথা বলে সহাস্য বসনে ।।” যেটা স্পষ্ট সেটা মধুর ভাবে বলতে । তার প্রতিকার করতে।দেবী লক্ষ্মী এটাও বলেছেন যে নারী অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, দেবী তারই গৃহে অবস্থান করেন । নারীর পরম গুরু হলেন স্বামী। মা লক্ষ্মী নিজে ভগবান বিষ্ণুর চরণসেবা করেন- এতে নারীর মান কমে যায় না, বরং বৃদ্ধি পায়। সীতাদেবী কি ভগবান রামচন্দ্রের চরণ সেবা করেন নি ? কিংবা সাবিত্রী দেবী সত্যবানের ? এঁনারা সতী নারী রূপে এখনও মানুষের শ্রদ্ধেয়।
সুতরাং স্বামীর সেবা করলে নারীর মান কমে না, বরং সেবা ভাবনার মধ্যেই নারীর সতীত্ব উজ্জ্বল হয় । অন্তিমে বলা যায় লক্ষ্মীর পাঁচালী কেবল আবৃত্তি করে পড়ার বিষয় নয়। সেই নিয়ম গুলিকে যে নারী নিজ জীবনে প্রয়োগ করে দেবী লক্ষ্মী তার সংসারে অবস্থান করেন। এই যে সুশীলা, সদাচার, সুশিক্ষা, মধুর আচরণ, অন্যায়র প্রতিবাদের পথ, অতিথিকে আদর- আপ্যায়ন, স্বামীসেবা এগুলিই ত নারীর অন্তরের ধন- সম্পদ- ঐশ্বর্য, আর মা লক্ষ্মী ধন- ঐশ্বর্য- সম্পদ প্রদায়িনী দেবী ।
সুতরাং সেগুলো ভাষা বিন্যাস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং ভেতরের মূল কথা জানার চেষ্টা করাই উত্তম । প্রথমত একটা প্রবাদ আছে- “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে”। এই কথা আজোও সত্য। পুরুষ চাকরী নিয়ে বাইরে ব্যস্ত। মাস গেলে সে কেবল তার বেতন এনে স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়। সংসারের ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। অথচ শ্বশুর শাশুড়ী, সন্তান, কুটুম্ব নিয়েই সংসার । এই দায়িত্ব কে কাঁধে নেন – উত্তর হবে স্ত্রী । সুতরাং সংসারের উন্নতি বা অবনতির দায়িত্ব স্ত্রীর হাতে। স্ত্রী চাইলে সংসারকেই স্বর্গ অথবা নরক বানাতে পারে । কিন্তু তার জন্য স্ত্রীদের কেবল ডিগ্রি নিয়ে পাশ করলেই হবে না- সুশিক্ষা , সদাচার, সুশীলা হওয়াও প্রয়োজন। সুতরাং আজকের যুগে নারীদের শিক্ষার পাশাপাশি সদাচার, সুশীল হওয়া প্রয়োজন । মা লক্ষ্মী নিজেই বলেছেন, তিঁনি নিজে কোন গৃহে থাকেন, কোন গৃহ থেকে প্রস্থান করেন । যথা-
লক্ষ্মীরূপ নারী সৃজি পাঠানু ধরায় ।
ভুলিয়া মোদের তারা মোহেতে মজয় ।।
লজ্জা আদি গুণ যত রমণীর ভূষণ ।
নারী সবে সেই লজ্জা দেছে বিসর্জন ।।
সন্ধ্যাকালে সন্ধ্যাবাতি নাহি হয় জ্বালা ।
ভালেতে সিন্দুর দিতে হইয়াছে ভোলা ।।
প্রভাতে দেয় না আর গোবরের ছড়া ।
নাহি করে ঘৃণা মনে বাসি বস্ত্র পরা ।।
পিতামাতা নাহি মানে কোন গুরুজন ।
শ্বশুর শাসুড়ী প্রতি বরষে কুবচন ।।
আত্মীয়, অতিথি হয় যথা নারায়ণ ।
তাদের দূর করে হেরিলে সর্বক্ষণ ।।
এইরূপ ঘরে ঘরে নানা ব্যাভিচার ।
অচলা হইয়া থাকি বল কি প্রকার ।।
( শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর পাঁচালী ও ব্রতকথা... শ্রীপশুপতি চট্টোপাধ্যায়... রাজেন্দ্র লাইব্রেরী )
মা নিজেই বলছেন কারা কৃপা পায়। সংযম হল পুরুষের ভূষণ আর লজ্জা হল স্ত্রীর ভূষণ । নারী যদি সেই লজ্জা ত্যাগ করে তবে সেই সংসারের দুর্গতির সীমা থাকে না । এই লজ্জা কি ? তাও বলেছেন দেবী- এঁয়োতি নারী শাঁখা- পলা- সিঁদূর বাদ দেওয়া, দেব দ্বিজে ভক্তি না করা, বাসী ঘর পরিষ্কার না করা, গুরুজনদের সাথে ঝগড়া করা, অতিথিকে যত্ন না করে তিরস্কার করা- এগুলিই করাই ত লজ্জা ও কলঙ্ক। তাই নারীকে এগুলি করার থেকে বিরত থাকতে হবে । না হলে শুধু শুধু ফটোতে মা লক্ষ্মীর পূজা করে ১০০ বছরেও সংসারে মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান করতে পারবেন না। লক্ষ্মী দেবী নিজেও বলেছেন- “লক্ষ্মীরূপ নারী সৃজি পাঠানু ধরায়”- অর্থাৎ নারী মাত্রই লক্ষ্মী। কিন্তু সেটাকে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা সকলে বলি আমাদের ভেতর ঈশ্বর আছেন। শুধু কবিতার মতো এটা আবৃত্তি করলে কিছুই হবে না, যতক্ষণ না নিজে সেটা উপলব্ধি করতে পারছি । সুতরাং নারীকে সেই “লক্ষ্মীশ্রী” অর্জন করতে হবে। লক্ষ্মীর পাঁচালীতে সেই কথা ছত্রে ছত্রে লিপিবদ্ধ আছে। সেই উপায়গুলী বাস্তবে অর্জন করতে হবে । মা লক্ষ্মী আবার নিজেই বলেছেন, যে তিনি কোন সংসারে থাকেন-
শান্তিপূর্ণ দেখি আমি যাই সে আলয় ।
অনাচার করি সবে আমারে তাড়ায় ।।
তাইতো চঞ্চলা হয়ে ফিরি দ্বারে দ্বারে ।
জগতের সকলে বলে চঞ্চলা আমারে ।।
যে গৃহে প্রভাতে উঠি নারী সমুদয় ।
গৃহে আর গৃহাঙ্গনে গোময় ছিটায় ।।
স্নান করি করে সবে দেবতা অর্চন ।
তারপর গৃহকর্মে দেয় তারা মন ।।
যত্নেতে সময় মত করয়ে রন্ধন ।
নিজহস্তে যত্নে করে শিশুর পালন ।।
উচ্চ হাসি জোরে কথা করি পরিহার ।
গুরুজন প্রতি করে নম্র ব্যবহার ।।
স্বামীর আত্মীয়গণে সেবা যত্ন করে ।
ভক্তিমনে যেই নারী স্বামী সেবা করে ।।
কলহ বিবাদ কভু নাহি যে ভবনে ।
সদালাপ সদাচার করে সর্বক্ষণে ।।
শুদ্ধাচারে থাকে তারা সদা সর্বক্ষণ ।
গৃহকর্মে নাহি করে আলস্য কখন ।।
অতিথি আসিলে তার সদা যত্ন করে ।
একত্রে বসিয়া সবে ধর্মগ্রন্থ পড়ে ।।
কুটিলতা প্রবঞ্চনা মিথ্যা নাহি জানে ।
যথাযথ কথা বলে সহাস্য বসনে ।।
অহঙ্কার ক্রোধ হিংসা নাহিক যথায় ।
অপরের দুঃখ দেখি নিজে দুঃখ পায় ।।
পরদুঃখ দূর তরে সে হয় তৎপর ।
পরের সুখেতে হয় প্রফুল্ল অন্তর ।।
সধবা রমণী পরে কপালে সিন্দুর ।
হাসিমুখে থাকে কথা বলে সুমধুর ।।
সন্দেহ না কর ঋষি আমার বচনে ।
অচলা হইয়া থাকি আমি সে ভবনে ।।
( শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর পাঁচালী ও ব্রতকথা... শ্রীনাথ বসাক... বেনীমাধব শীলস্ লাইব্রেরী )
দেবী নিজেও বলেছেন তিনি কোন সংসারে থাকেন । যে গৃহ শান্তিময় অর্থাৎ যে গৃহে ঝগড়া , কলহ নেই , দেবী সেখানেই নিবাস করেন । নারীদের ঝগড়া করবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সর্বদা ঝগড়ার মানসিকতা থাকলে ভালো চিন্তা আর আসবে না । আবার বলেছেন দেবী, যে প্রভাতে উঠে গোময় দ্বারা গৃহ পরিষ্কার, স্নান করে দেবতার পূজা ও যত্ন করে নানাবিধ রান্নাবান্না করতে । এখন পাকা মোজাইক বাড়ীতে কিভাবে সম্ভব ? প্রথমত প্রাচীনকালে মাটির মেঝেতে গোবর জীবানু নিরোধক কাজ করতো। গোবোরে জীবানু নাশক ক্ষমতা থাকে। এখন ফিনাইল যথেষ্ট। নারীদের কাজ কর্ম করতে হয়। কারণ জিম বা ব্যায়াম করা সব নারীর পক্ষে অসম্ভব ।
আর কর্মঠ নারীদের শরীর সহজে রোগাগ্রস্ত হয় না, সুখ প্রসব হয়। এখন অধিকাংশ নারী দুপুর ১২ টায় ঘুম থেকে উঠে বেড-টি খেয়ে চাকর দিয়ে কাজ করায়, নিজে আরামে থাকে। ফলে কি দাঁড়ায় ? অল্প বয়সে সুগার, স্থূলত্ব, প্রেশার সহ নানা রোগের আগমন , হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার রোগ । দেখবেন শহরের নারীর থেকে গ্রামাঞ্চলের নারীদের শরীর ভালো। কেন ? তারা খুব খাটুনী করে ? দাস দাসী রাখে না । উচ্চ কথা বললে শক্তি হ্রাস পায় , আর যে নারী আত্মীয় স্বজন দের যত্ন না করে সমাজে তার নামে কলঙ্ক রটে । দেবী বলেছেন যে নারী সদালাপ , ধর্মগ্রন্থ পড়ে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন । কেন ? কারণ পরনিন্দা, পরচর্চা করতে করতে মনটাও কুটিল হয়, আর সেই নারী ধীরে ধীরে হিংসুক হয়ে যায় । পরনিন্দা করার থেকে সেই সময় ধার্মিক গ্রন্থ পাঠ, ঈশ্বরের নাম কীর্তন বা কোনো শুভকাজে নিজেকে নিয়োগ করা অনেক ভালো ।
দেবী আরোও বললেন- “শুদ্ধ বস্ত্রে থাকতে”। নোংরা বস্ত্রে থাকলে নিজের রোগ ও রান্নাবান্নাতেও নোংরা সংক্রামিত হয় । অপরের দুঃখ দেখে যে হাসে যে অপরের বিপদে পাশে না থেকে তামাশা দেখে দেবী লক্ষ্মী তাদের সংসার থেকেও বিদায় নেন । আবার দেবী এও বলেছেন- নারীদের হতে হবে “স্পষ্টবক্তা” “যথাযথ কথা বলে সহাস্য বসনে ।।” যেটা স্পষ্ট সেটা মধুর ভাবে বলতে । তার প্রতিকার করতে।দেবী লক্ষ্মী এটাও বলেছেন যে নারী অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, দেবী তারই গৃহে অবস্থান করেন । নারীর পরম গুরু হলেন স্বামী। মা লক্ষ্মী নিজে ভগবান বিষ্ণুর চরণসেবা করেন- এতে নারীর মান কমে যায় না, বরং বৃদ্ধি পায়। সীতাদেবী কি ভগবান রামচন্দ্রের চরণ সেবা করেন নি ? কিংবা সাবিত্রী দেবী সত্যবানের ? এঁনারা সতী নারী রূপে এখনও মানুষের শ্রদ্ধেয়।
সুতরাং স্বামীর সেবা করলে নারীর মান কমে না, বরং সেবা ভাবনার মধ্যেই নারীর সতীত্ব উজ্জ্বল হয় । অন্তিমে বলা যায় লক্ষ্মীর পাঁচালী কেবল আবৃত্তি করে পড়ার বিষয় নয়। সেই নিয়ম গুলিকে যে নারী নিজ জীবনে প্রয়োগ করে দেবী লক্ষ্মী তার সংসারে অবস্থান করেন। এই যে সুশীলা, সদাচার, সুশিক্ষা, মধুর আচরণ, অন্যায়র প্রতিবাদের পথ, অতিথিকে আদর- আপ্যায়ন, স্বামীসেবা এগুলিই ত নারীর অন্তরের ধন- সম্পদ- ঐশ্বর্য, আর মা লক্ষ্মী ধন- ঐশ্বর্য- সম্পদ প্রদায়িনী দেবী ।
1 Comments:
অসাধারন পোষ্ট
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন