✍বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান এবং সেটি ভগবান থেকে প্রকাশিত হচ্ছে. বেদ শাশ্বত ও অপৌরুষেয়ঃ.
পরম জ্ঞান নিত্য ও কোন মানুষের রচিত নয়.
শাস্ত্রীয় ইতিহাস অনুসারে, সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মান্ডের প্রথম জীব স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা. এই বেদ-জ্ঞান লাভ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণর নিকট থেকে,
তার বেণুধ্বনির মাধ্যমে.
যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্ব্বং যো বৈ
বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. (- 1/24 গোপালতাপনী উপনিষদ)
"যিনি সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মাকে বৈদিক জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন এবং পূর্বে বৈদিক জ্ঞান বিস্তার করেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণই."
.
ব্রহ্মসংহিতায় শ্রীকৃষ্ণকে বেদের সারসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে (তুষ্টাব বেদসারেণ স্তোত্রেণানেন কেশবম - 5/28).
বেদ অনুসারে,
ব্রহ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণু হতে উদ্ভূত, আর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীবিষ্ণুরও উৎস. জড় জগতে ভগবানের তিনটি পুরুষাবতার - বিষ্ণুরূপ প্রকাশিতঃ
.
(1) প্রথম পুরুষাবতারঃ কারণোদকশায়ী বিষ্ণু বা মহাবিষ্ণু - কারণ-উদক সাগরে (কার্যকারণ মহাসাগর) শায়িত এই মহাবিষ্ণুর বিরাট শরীর থেকে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড (universes এর ক্লাস্টার) প্রকাশিত হয়, মহাপ্রলয়ে (অবলুপ্তি) সমস্ত জড় ব্রহ্মান্ড ধ্বংস হয়ে সূক্ষ্ম জড় উপাদনরূপে (মহত্তত্ব) তাঁর দিব্য শরীরে বিলীন হয়.
.
(২) দ্বিতীয় পুরুষাবতারঃ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু - মহাবিষ্ণু নিজেকে কোটি কোটি রূপে বিস্তার করে প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করে ব্রহ্মান্ডের গর্ভোদকে শয়ন করেন.
তারপর ব্রক্ষ্মাকে সৃষ্টি করেন. ব্রহ্মার মাধ্যমে সূর্য ও চতুর্দশ ভুবন বা গ্রহলোকসমূহ (গ্রহ সিস্টেম) সৃষ্টি করেন.
.
(3) তৃতীয় পুরুষাবতারঃ - ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু - প্রতি ব্রহ্মান্ডে শ্রীবিষ্ণু নিজেকে অসংখ্য রূপে বিস্তার করে করে জীবসত্তাকে ভগবদধামে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক জীব হৃদয়ে পরমাত্মারূপে অবস্থান করেন.
.
এইভাবে, কোটি কোটি, অসংখ্য অনন্তরূপে ভগবান নিজেকে বিস্তার করেন, কিন্তু তিনি 'অদ্বৈতম' (অ দ্বৈত) তিনি এক ও অভিন্ন এবং সকল রূপের পরম উৎস শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ, এটিই বৈদিক শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত.🙂
ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে (5/33) -
অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম
আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ.
বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ
গোবিন্দম-আদি পুরুষং তমহং ভজামি ..
"যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপ সম্পন্ন, আদি পুরাণপুরুষ হয়েও নিত্য নব নবায়মান যৌবন সম্পন্ন সুন্দর পুরুষ, বেদাদি শাস্ত্র পাঠে দুর্লভ কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তির লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি."
.
বেদে সর্বদেবতার উপাস্য ভগবান রূপে শ্রীবিষ্ণুকে স্তুতি করা হয়েছে, যেমন ঋগবেদে (১/২২/২০) বলা হয়েছে -
ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা
পশ্যন্তি সূরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম.
তদবি প্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংষঃ
সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম ..
.
"পরমেশ্বর বিষ্ণুই হচ্ছেন পরম সত্য.
সুরগন তাঁর পাদপদ্ম দর্শনে সর্বদাই উদগ্রীব. সূর্যের মতোই ভগবান তাঁর শক্তি রশ্মির বিস্তার করে সর্বত্র ব্যাপ্ত আছেন. "🙂
ঋগবেদে ১/২২/১৭ ১/২২/১৮,১/১৫৪/১, ১/১৫২/২, ১/১৫৪/৩, ১/১৫৪/৪, ১/১৫৪/৬ নং মন্ত্রে বিষ্ণুর কথা বলা হয়েছে. 🙂
অথর্ব বেদে বলা হয়েছে, যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. অর্থাৎ - "ব্রহ্মা, যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন,
সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ." 🙂
.
শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণেরই প্রকাশ বা বিস্তার, শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত, যেমন সকল বেদ উপনিষদের সার গীতোপনিষদ, ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে - শমং চ বিষ্ণো (১১/২৪), প্রতপন্তি বিষ্ণুো- (১১/৩০), আদিত্যানাম অহং বিষ্ণু (১০/২১) ইত্যাদি. শ্রীকৃষ্ণই শ্রীবিষ্ণুরূপে সর্বজীবের অন্তরস্থিত পরমাত্মা - অহমাত্মা গূঢ়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ (১০/২০).
বিষ্ণুমূর্তি-সমূহ, রাম-নৃসিংহ ইত্যাদি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণরই প্রকাশ, অংশ, কলা. শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান (এতে চাংশ কলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্ত ভগবান স্বয়ম - ভাগবতম ১/৩/২৪). ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণপরাৎপর পুরুষ, সেজন্য তাঁর থেকে অসংখ্য ভগবৎ-রূপ বিস্তার হলেও তিনি তাঁর পূর্ণ স্বরূপে নিত্য বিরাজমান. শ্রী ঈশোপনিষদে যেমন বলা হয়েছে (১ আবাহন)
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে.
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ..
"পরমেশ্বর ভগবান সর্বতোভাবে পূর্ণ. তিনি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ বলে এই দৃশ্যমান জগতের মতো তাঁর থেকে উদ্ভূত সব কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ.
যা কিছু পরম পূর্ণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা সবই পূর্ণ.
কিন্তু যেহেতু তিনি হচ্ছেন পরম পূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখন্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন. "🙂
.
ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কয়েকটি উক্তিঃ
বেদ্যং পবিত্রং ওঙ্কার - ৯/১৭- আমাকে পবিত্র ওঙ্কার বলে জানবে. 🙂
.
প্রণবঃ সর্ববেদেষু - ৭/৮ - সমস্ত বেদে উল্লেখিত প্রণব (ভগবানের নির্বিশেষ নাম) আমিই.
.
বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম - 15/18 - বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে খ্যাত
.
বেদানং সামবেদোহস্মি - ১১/২২ - সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ
.
ঋক সাম যজুরেব চ - ৯/১৭- ঋক, সাম, যজুর্বেদাদি ও আমি
.
বৃহৎসাম তথা সাম্নাং গায়েত্রী ছন্দসামহম - ১০/৩০- আমি
.
সামবেদের মধ্যে বৃহৎসাম, সমস্ত ছন্দের মধ্যে গায়েত্রী.
.
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ - ৯/২৯- আমি সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা, প্রভু.
.
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও বিপ্লবাত্মক কথা বলেছেন - তিনি বলেন (গীতা ২/৪২)
"বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ-আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে. ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊধ্বে আর কিছুই নেই.🙂 "
.
ভগবদগীতাকে সমস্ত বেদ-উপনিষদের সার-নির্যাস বলা হয় (সর্বোপনিষদোগাবো). ভগবান শ্রীকৃষ্ণর উক্তি ও ভগবদগীতার তথ্যের সাথে বেদ-উপনিষদের মৌল তত্ত্বের সুস্পষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে. নিম্নে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করুন -
.
1. ভগবদগীতা - 8/9 নং শ্লোক ও 13/18 নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (3/8) নং শ্লোক একই
2. গীতার 15/14 নং শ্লোক আর বৃহদারণ্যক উপনিষদ 5/9/1 নং শ্লোক একই.
3. গীতার 9/10 নং শ্লোক আর ঐতরেয় উপনিষদ 3/11 নং শ্লোক এক.
4. গীতার 15/18 নং শ্লোক আর ছান্দোগ্য উপনিষদ 8/12/13 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
5. গীতার 7/2 নং শ্লোক আর মুন্ডক উপনিষদ 1/3 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
6. গীতার 10/২ নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ 6 / 7-8 নং শ্লোক একই.
7. গীতার 2/20 নং শ্লোক আর কঠোপনিষদ 1/2/18 নং শ্লোক একই.
(সংক্ষিপ্ত)
পরম জ্ঞান নিত্য ও কোন মানুষের রচিত নয়.
শাস্ত্রীয় ইতিহাস অনুসারে, সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মান্ডের প্রথম জীব স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা. এই বেদ-জ্ঞান লাভ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণর নিকট থেকে,
তার বেণুধ্বনির মাধ্যমে.
যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্ব্বং যো বৈ
বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. (- 1/24 গোপালতাপনী উপনিষদ)
"যিনি সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মাকে বৈদিক জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন এবং পূর্বে বৈদিক জ্ঞান বিস্তার করেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণই."
.
ব্রহ্মসংহিতায় শ্রীকৃষ্ণকে বেদের সারসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে (তুষ্টাব বেদসারেণ স্তোত্রেণানেন কেশবম - 5/28).
বেদ অনুসারে,
ব্রহ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণু হতে উদ্ভূত, আর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীবিষ্ণুরও উৎস. জড় জগতে ভগবানের তিনটি পুরুষাবতার - বিষ্ণুরূপ প্রকাশিতঃ
.
(1) প্রথম পুরুষাবতারঃ কারণোদকশায়ী বিষ্ণু বা মহাবিষ্ণু - কারণ-উদক সাগরে (কার্যকারণ মহাসাগর) শায়িত এই মহাবিষ্ণুর বিরাট শরীর থেকে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড (universes এর ক্লাস্টার) প্রকাশিত হয়, মহাপ্রলয়ে (অবলুপ্তি) সমস্ত জড় ব্রহ্মান্ড ধ্বংস হয়ে সূক্ষ্ম জড় উপাদনরূপে (মহত্তত্ব) তাঁর দিব্য শরীরে বিলীন হয়.
.
(২) দ্বিতীয় পুরুষাবতারঃ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু - মহাবিষ্ণু নিজেকে কোটি কোটি রূপে বিস্তার করে প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করে ব্রহ্মান্ডের গর্ভোদকে শয়ন করেন.
তারপর ব্রক্ষ্মাকে সৃষ্টি করেন. ব্রহ্মার মাধ্যমে সূর্য ও চতুর্দশ ভুবন বা গ্রহলোকসমূহ (গ্রহ সিস্টেম) সৃষ্টি করেন.
.
(3) তৃতীয় পুরুষাবতারঃ - ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু - প্রতি ব্রহ্মান্ডে শ্রীবিষ্ণু নিজেকে অসংখ্য রূপে বিস্তার করে করে জীবসত্তাকে ভগবদধামে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক জীব হৃদয়ে পরমাত্মারূপে অবস্থান করেন.
.
এইভাবে, কোটি কোটি, অসংখ্য অনন্তরূপে ভগবান নিজেকে বিস্তার করেন, কিন্তু তিনি 'অদ্বৈতম' (অ দ্বৈত) তিনি এক ও অভিন্ন এবং সকল রূপের পরম উৎস শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ, এটিই বৈদিক শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত.🙂
ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে (5/33) -
অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম
আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ.
বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ
গোবিন্দম-আদি পুরুষং তমহং ভজামি ..
"যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপ সম্পন্ন, আদি পুরাণপুরুষ হয়েও নিত্য নব নবায়মান যৌবন সম্পন্ন সুন্দর পুরুষ, বেদাদি শাস্ত্র পাঠে দুর্লভ কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তির লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি."
.
বেদে সর্বদেবতার উপাস্য ভগবান রূপে শ্রীবিষ্ণুকে স্তুতি করা হয়েছে, যেমন ঋগবেদে (১/২২/২০) বলা হয়েছে -
ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা
পশ্যন্তি সূরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম.
তদবি প্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংষঃ
সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম ..
.
"পরমেশ্বর বিষ্ণুই হচ্ছেন পরম সত্য.
সুরগন তাঁর পাদপদ্ম দর্শনে সর্বদাই উদগ্রীব. সূর্যের মতোই ভগবান তাঁর শক্তি রশ্মির বিস্তার করে সর্বত্র ব্যাপ্ত আছেন. "🙂
ঋগবেদে ১/২২/১৭ ১/২২/১৮,১/১৫৪/১, ১/১৫২/২, ১/১৫৪/৩, ১/১৫৪/৪, ১/১৫৪/৬ নং মন্ত্রে বিষ্ণুর কথা বলা হয়েছে. 🙂
অথর্ব বেদে বলা হয়েছে, যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. অর্থাৎ - "ব্রহ্মা, যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন,
সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ." 🙂
.
শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণেরই প্রকাশ বা বিস্তার, শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত, যেমন সকল বেদ উপনিষদের সার গীতোপনিষদ, ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে - শমং চ বিষ্ণো (১১/২৪), প্রতপন্তি বিষ্ণুো- (১১/৩০), আদিত্যানাম অহং বিষ্ণু (১০/২১) ইত্যাদি. শ্রীকৃষ্ণই শ্রীবিষ্ণুরূপে সর্বজীবের অন্তরস্থিত পরমাত্মা - অহমাত্মা গূঢ়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ (১০/২০).
বিষ্ণুমূর্তি-সমূহ, রাম-নৃসিংহ ইত্যাদি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণরই প্রকাশ, অংশ, কলা. শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান (এতে চাংশ কলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্ত ভগবান স্বয়ম - ভাগবতম ১/৩/২৪). ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণপরাৎপর পুরুষ, সেজন্য তাঁর থেকে অসংখ্য ভগবৎ-রূপ বিস্তার হলেও তিনি তাঁর পূর্ণ স্বরূপে নিত্য বিরাজমান. শ্রী ঈশোপনিষদে যেমন বলা হয়েছে (১ আবাহন)
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে.
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ..
"পরমেশ্বর ভগবান সর্বতোভাবে পূর্ণ. তিনি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ বলে এই দৃশ্যমান জগতের মতো তাঁর থেকে উদ্ভূত সব কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ.
যা কিছু পরম পূর্ণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা সবই পূর্ণ.
কিন্তু যেহেতু তিনি হচ্ছেন পরম পূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখন্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন. "🙂
.
ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কয়েকটি উক্তিঃ
বেদ্যং পবিত্রং ওঙ্কার - ৯/১৭- আমাকে পবিত্র ওঙ্কার বলে জানবে. 🙂
.
প্রণবঃ সর্ববেদেষু - ৭/৮ - সমস্ত বেদে উল্লেখিত প্রণব (ভগবানের নির্বিশেষ নাম) আমিই.
.
বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম - 15/18 - বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে খ্যাত
.
বেদানং সামবেদোহস্মি - ১১/২২ - সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ
.
ঋক সাম যজুরেব চ - ৯/১৭- ঋক, সাম, যজুর্বেদাদি ও আমি
.
বৃহৎসাম তথা সাম্নাং গায়েত্রী ছন্দসামহম - ১০/৩০- আমি
.
সামবেদের মধ্যে বৃহৎসাম, সমস্ত ছন্দের মধ্যে গায়েত্রী.
.
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ - ৯/২৯- আমি সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা, প্রভু.
.
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও বিপ্লবাত্মক কথা বলেছেন - তিনি বলেন (গীতা ২/৪২)
"বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ-আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে. ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊধ্বে আর কিছুই নেই.🙂 "
.
ভগবদগীতাকে সমস্ত বেদ-উপনিষদের সার-নির্যাস বলা হয় (সর্বোপনিষদোগাবো). ভগবান শ্রীকৃষ্ণর উক্তি ও ভগবদগীতার তথ্যের সাথে বেদ-উপনিষদের মৌল তত্ত্বের সুস্পষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে. নিম্নে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করুন -
.
1. ভগবদগীতা - 8/9 নং শ্লোক ও 13/18 নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (3/8) নং শ্লোক একই
2. গীতার 15/14 নং শ্লোক আর বৃহদারণ্যক উপনিষদ 5/9/1 নং শ্লোক একই.
3. গীতার 9/10 নং শ্লোক আর ঐতরেয় উপনিষদ 3/11 নং শ্লোক এক.
4. গীতার 15/18 নং শ্লোক আর ছান্দোগ্য উপনিষদ 8/12/13 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
5. গীতার 7/2 নং শ্লোক আর মুন্ডক উপনিষদ 1/3 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
6. গীতার 10/২ নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ 6 / 7-8 নং শ্লোক একই.
7. গীতার 2/20 নং শ্লোক আর কঠোপনিষদ 1/2/18 নং শ্লোক একই.
(সংক্ষিপ্ত)
(C)Nilardhitaa Sharma
1 Comments:
অনেক কিছু শিখতে পারলাম।ধন্যবাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন