মুসলমান :- আপনারা হিন্দুরা গরুর মাংস খান না কেন ?
হিন্দু :- আপনারা শুয়োরের মাংস খান না কেন ?
মুসলমান : আমাদের ধর্মে নিষেধ আছে, তাই।
হিন্দু :- গরুর মাংস খাওয়াও হিন্দু ধর্মে নিষেধ আছে। বরাবর ?
মুসলমান :- হুম, কিন্তু আপনারা গরুর মাংস না খেলেও তো গরুর দুধ খান ?
হিন্দু :- এজন্যই তো গরু কেটে তার মাংস খাই না। গরু জাতির প্রতি এটা আমাদের হিন্দুদের কৃতজ্ঞতা। ছোট বেলায় মায়ের দুধের পাশাপাশি গরুর দুধ খেয়েছি, তাই গরু আমাদের দুধমাতা। হালিমা যেমন ছিলো আপনাদের নবীর দুধমাতা, নবীর কাছে তার যথেষ্ট সম্মান ছিলো। আমাদের কাছেও তেমনি গরুর সম্মান। তাছাড়াও সারা বছর গরুর দুধ খাই, যা আদর্শ খাদ্য। খাওয়ার জন্য নির্বিচারে গরু কেটে খেয়ে ফেললে, এই আদর্শ খাদ্য পাবেন কোথা থেকে ? আপনারাও তো এই গরুর দুধ ছোটবেলায় খেয়েছেন, এখনও খান; তাহলে গরুর প্রতি আপনাদের কোনো কৃতজ্ঞতা নেই কেন ?
এটাও মনে রাখবেন, মানুষ মায়ের দুধ খায় মাত্র এক বছর, কিন্তু গরুর দুধ খায় সারাজীবন। এই সূত্রে, গরু মাতৃসমতুল্য।
মুসলমান :- হুম, তা না হয় বুঝলাম। গাই গরু না হয় দুধ দেয়, তাই তার মাংস খান না; কিন্তু বলদ গরু তো আর দুধ দেয় না, তার মাংস খান না কেন ?
হিন্দু :- আপনার জন্ম নিশ্চয় আপনার মা একা দেয় নি ? আশা করি আর বেশি কিছু বলতে হবে না। তাছাড়া চাষের কাজে বলদ গরু এখনও অপরিহার্য। আর এই উপমহাদেশে গরুর মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো কৃষিকাজ, যা আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন, আরব্য মরুভূমির সংস্কৃতির প্রভাবে সেটা আপনারা ভুলে যেতে পারেন, আমরা হিন্দুরা কিন্তু সেটা ভুলি নি। সবচেয়ে বড় কথা, আপনারা শুকর খান না, শুকরকে ঘৃণা করেন বলে; আর আমরা গরু খাই না, গরুকে শ্রদ্ধা করি বলে, দুটোর মধ্যে কিন্তু আকাশ পাতাল প্রভেদ। আচ্ছা, বলতে পারবেন, এমন কোন প্রাণী আছে, যাকে আপনারা শ্রদ্ধা করেন এবং কিন্তু তাকে হত্যা করে তার মাংস খান না ?
হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না কেনো ? এই প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব যখন দিলাম। তখন মুসলমানরা আবার প্রশ্ন তুললো, তাহলে হিন্দুরা গরুর চামড়ার জুতা পড়ে কেনো ? এরপর হয়তো এই প্রশ্ন করবে যে, হিন্দুরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি ঢাক বাজিয়ে পূজা করে কেনো ? এজন্য সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথেই দিলাম এবং সেটা যে খুব ভদ্র ভাষায় নয়, সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন।
গাছ কাটলে কাঠ হয়, আর কাঠ পুড়লে হয় কয়লা । একটা বাচ্চাও এই গাছ, কাঠ ও কয়লার পার্থক্য বুঝবে। কিন্তু সীলগালা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মুসলমানরা এটা কখনো বুঝবে না। গাছের, কাঠের এবং কয়লার ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। এ তিন জিনিস কখনোই এক নয়, তাই তাদের আলাদা আলাদা নাম। একই ভাবে গরু, গরুর মাংস এবং গরুর চামড়া তিনটিই সম্পূর্ণ পৃথক জিনিস।
আপনি যদি জঙ্গলে গিয়ে বাস করতে বাধ্য হন, তাহলে জংলীদের কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাকে পালন করতেই হবে, না হলে আপনি জঙ্গলে টিকতে পারবেন না। তেমনি মুসলমানদের দেশে বাস করতে গেলে, ইসলামিক সংস্কৃতির কিছু অংশ আপনাকে যেমন পালন করতেই হবে, তেমনি তার কিছু কিছু রেশ আপনার অজান্তেই আপনার কালচারে ঢুকে যাবে। গরুর চামড়া দিয়ে জুতা বা ঢাক বানানোর ব্যাপারটিও এই রকম। মুসলমানরা এই উপমহাদেশে আসার আগে থেকেই হিন্দুরা তাদের পূজা-প্রার্থনা এবং তাতে গান-বাজনা করে আসছে। তখন কি ঢাক এ গরুর চামড়া ব্যবহার করা হতো ? আর গরুর চামড়া ব্যবহার করলেও তাতে করতো মৃত গরুর চামড়া, কোনো কারণে যে গরু মারা গিয়েছে, তাকে হত্যা করা হয় নি, এই কাজটি করতো হিন্দু সম্পদ্রায়েরই মুচি বা ঋষিরা। মহাদেব শিবও বাঘের চামড়া পরিধান করতেন, এর অর্থ হলো মৃত পশুর চামড়া ব্যবহার শাস্ত্র সম্মত এবং তাতে কোনো দোষ নেই।
এখানে বলে রাখি, ঢাকের এক পাশে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় গরু বা মহিষের মোটা চামড়া, অন্য পাশে ছাগল বা ভেড়ার পাতলা চামড়া; চিকন এবং মোটা এই দুই ধরণের শব্দ তৈরির জন্যই এই ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে যেহেতু গরুর চামড়ার ব্যবহার বেশি এবং প্রক্রিয়াজাত করণের পর কোনটা কিসের চামড়া তা বোঝা যায় না, সেহেতু ঢাক তৈরির কারিগরদের অজ্ঞাতে মহিষের চামড়ার পরিবর্তে গরুর চামড়া ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বা গরুর চামড়ার সহজলভ্যতার জন্যও এটা ঘটতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে যে ঢাকে মহিষ এবং ছাগলের চামড়াই ব্যবহার হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না এবং তা থেকে উৎপন্ন কোনো জিনিসও সজ্ঞানে ব্যবহার করে না।
(C) নীল আকাশের চাঁদনী