"নাসিরনগরের নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াবো আমরা" ০৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় এই শিরোনামেই শুরু হয়েছিল একটি ফেসবুক ইভেন্টের পথচলা। ফেসবুক বন্ধুদের কাছ থেকে আহবান করা হয় সহায়তা। মুহুর্তেই সেটা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক জুড়ে এক বন্ধু থেকে আরেক বন্ধুর হাত ধরে। নাসিরনগরের নির্যাতিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন জাতি, কর্ম, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সবাই। তাদের পাঠানো অনুদানের অর্থ কাদের হাতে পৌছাবে সেটা ঠিক করার জন্য আগেই সার্ভে করে ঠিক করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবার গুলোর নাম। হামলার স্বীকার এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে গত ১৩ নভেম্বর সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হাতে পৌছে দেয়া হয় সেই অনুদানের অর্থ। মোট ৩৫ টি পরিবারকে এই আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২৫ টি পরিবারকে ৬ হাজার এবং ১০ টি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এছাড়া ধ্বংসস্তুপে পরিনত হওয়া গৌর মন্দিরের জন্য এর সাধারন সম্পাদক বাবু নির্মল চন্দ্র চৌধুরীর হাতে তুলে দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা।
যে ফেসবুককে কেন্দ্র করে এত বড় সাম্প্রদায়িক হামলা করা হল নাসিরনগরে, সে ফেসবুককে কাজে লাগিয়েই তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলো এই তরুন তরুনীরা। গতকাল তারা একদম নীরবেই সেখানে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর হাতে অনুদানের অর্থ তুলে দিয়ে এলো। যেখানে ছিলনা কোন ব্যনার ফেস্টুন বা আনুষ্ঠানিকতা। যেখানে ছিল কেবল মানবতার গান। এখানে আবারো প্রমানিত হল মানুষ মানুষের জন্য।
আমরা প্রথমে সেখানে একটা সার্ভে করি ঘরবাড়ি হারানো, নির্যাতিত, পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়িগুলোর। সেখান থেকে একটা তালিকাও বানাই সংক্ষিপ্ত। যাদের কাছে আপনাদের পাঠানো অনুদানের অর্থ পৌছে দিবো আমরা। কিন্তু কাল পর্যন্ত আপনাদের পাঠানো আর্থিক সাহায্য আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আরেকটি তালিকা বানাই। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সবাইকেই আমরা তালিকাভুক্ত করি।
শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সংগৃহিত অর্থের পরিমান ছিল- ২,১৪,০১৪ টাকা। এই টাকা দিয়ে আমরা হয়ত ১০০টা পরিবারকে সাহায্য করতে পারতাম। তাতে হয়ত আমরা মানুষের কাছে ভাল হতাম, সবাই বাহবা দিত দূর থেকে কিন্তু আমরা চেয়েছি সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্য পাবে আর সেটা যেন তারা কোন কাজে লাগাতে পারে। তাই আমরা সেরকম ৩৫টি পরিবারের একটি তালিকা বানাই। সেখানে পঁচিশ টি পরিবারকে আমরা (২৫* ৬০০০) টাকা আর অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত দশটি পরিবারকে (১০*৫০০০) টাকা করে প্রদান করি। এছাড়া সে এলাকার প্রায় ধ্বংসস্তূপ এ পরিনত হওয়া গৌর মন্দির এর জন্য এর সন্মানিত সেক্রেটারি অধ্যাপক নির্মল চন্দ্র চৌধুরীর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেই। সে সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গৌর মন্দিরের সন্মানিত সহ সভাপতি।
আমরা শুধু দিয়েই এসেছি তা কিন্তু না, আমরা নিয়েও এসেছি সেখান থেকে। নিয়ে এসেছি কিছু মানুষের হাসিমাখা মুখ, কিছু মানুষের অগাধ ভালবাসা, বিশ্বাস। তাদের মুখেই শুনেছি, এখানে অনেকেই এসেছেন এইরকম কিছু দিতে, কিন্তু তারচেয়ে বেশি ছিল তাদের নিজেদের ব্যনার, ফেস্টুন, প্রচার। আমাদের দেখে তারা প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি এইরকম নিভৃতে কেউ এসে এভাবে দিয়ে চলে যাবে। শুধুমাত্র সবার মনের সন্তুষ্টির জন্য আমরা কয়েকটি ছবি তুলে এনেছি, যেগুলো এখানে দেয়া হল। আর হ্যা, এলাকাবাসী নাসিরনগরের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা আর ভালবাসা পাঠিয়েছেন। বলেছে আপনাদের যেন পৌছে দেই সেটা।
আমাদের সর্বোপরি চেস্টা ছিল নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার জানিনা কতটুকু পেরেছি, তবে চেষ্টার ত্রুটি ছিলনা এটুকু বলব। সেই সাথে জানাচ্ছি অন্যকোন ইভেন্টের সাথে আমাদের আর কোন সম্পৃক্ততা নেই । আমাদের ইভেন্ট সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়েছে তাই আমাদের এই ইভেন্ের নামে অন্য কাওকে টাকা না দেবার জন্য অনুরোধ করা হলো ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন