বাল্মিকী মুনির তপোবনে যে শিবির রচনা করা হয়েছিলো, সেখানে পূর্ব হতেই নিদারুন আহত শত্রুঘ্ন শয়ন করে মৃত্যুর সাথে লড়ছিলো। সেই শিবিরে মূর্ছিত ভরতকে এনে রাখা হল । চারিদিকে আহত সেনার আর্তনাদ ভিন্ন অপর কিছুই শোনা গেলো না । দুই বালক অসম্ভব যোদ্ধা। যুদ্ধে সুনিপুণ। চোখের পলকে দিব্যাস্ত্র সকল চালনা করে শত্রু নাশ করে। অপরদিকে আশ্রমের বালক বালিকারা ছিন্ন বিছিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে কেয়ুর, বাজু, অঙুষ্ঠ, কীরিট সকল সংগ্রহ করে একত্র জমা করেছিলো। সেই সকল অলঙ্কার হতে সূর্যের ন্যায় জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল্ল। মনে হচ্ছিল্ল বনের মাঝে দিবাকর দেব এসে উপস্থিত হয়েছেন । দূত গেলো অযোধ্যায়। গিয়ে বলল- “মহারাজ! সেই দুই বালক তিন অক্ষৌহিণী সেনার বিনাশ করে শ্রীভরতকে মূর্ছিত করেছেন। আমরা অনেক চেষ্টাতেও সেই অশ্ব উদ্ধার করতে পারিনি।” শুনে সকলে আরোও বিস্মিত হলেন। এই বালক কাহারা। সত্যি কি বালক নাকি ছদ্দবেশী দেবতা বা কোন বড় অসুর। সাধারণ সেই বালক কিভাবে এমন দুর্ধর্ষ সেনাদের বিনাশ করে ভরতের ন্যায় শক্তিশালী যোদ্ধাকে মূর্ছিত করতে পারে । মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র অবাক হলেন। লক্ষ্মণ এসে বললেন- “অগ্রজ! এবার আমি গিয়ে অশ্ব উদ্ধার করে আনবো। দেখি তারা কেমন বীর! আমাকে বহু পূর্বে প্রস্থান করা উচিৎ ছিলো, তবে আমার দুভ্রাতা এমন আহত , মূর্ছিত হয়ে থাকতেন না । সেই দুই বালক তপস্বী হোক আর দেবতা হোক কিংবা মায়াবী কোন অসুর হোক- মেঘনাদজয়ী লক্ষ্মণের শর থেকে মুক্তি পাবে না।” মহারাজ শ্রীরাম বললেন- “শান্ত হও লক্ষ্মণ। তোমার ক্রোধ জগদবিদিত। সেই অশ্ব অবশ্যই আনবে। তবে ঐ বালকের ওপর সাঙ্ঘাতিক প্রহার করে নয়- বরং বুঝিয়ে সুঝিয়ে। বালক দ্বয় কে বলবে ঐ অশ্বের পরিবর্তে তাহারা যত অশ্ব চায়- তাহাই প্রদান করিবে। সেই বালক দ্বয় লক্ষ স্বর্ণ রথের পরিবর্তে যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে দিতে চাইলে তাহাই দেবে। ভূমি চাইলে ভূমি প্রদান করবে। কিন্তু কদাপি দুর্বল বালকের ওপর দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করবে না।”
লক্ষ্মণ বলল- “তাহাই হইবে ভ্রাতা! প্রথমে আমি তাহাদিগকে প্রলোভন দেখিয়ে অশ্ব প্রাপ্তির চেষ্টা করবো। যদি তাহারা না মানে ত , তাহারা লক্ষ্মণের বিক্রম দেখবে।” চার অক্ষৌহিণী সেনা সমেত লক্ষ্মণ বের হল। প্রকাণ্ড হস্তী গুলি মেদিনী কাঁপিয়ে বের হল। অশ্ব গুলি নিয়ে বের হল। রথ বের হল। নানা অস্ত্র নিয়ে অয্যোধ্যার সেনারা হৈহৈ করতে চলল। বিবিধ দামামা, তুরী, ভেরী বাজলো। যুদ্ধের প্রস্তুতি চলল। এই দুই বালক সামান্য কেহ নহে। তাই সেনা সকল উত্তম ঘাতক অস্ত্র সকল নিলো। তূণ পূর্ণ করলো তীক্ষ্ণ শরে। গদা, তরবারি, মুষল, শেল, শূল , ঢাল, খড়্গ আদি অস্ত্র সকল নিয়ে যুদ্ধে চলল। লব ও কুশ সেই বনে অশ্বের সাথে খেলা করছিলো। অশ্বটি সেই স্থানে উত্তম রূপে ভোজন করলো। কচি কচি তৃণাদি ভক্ষণ করেছিলো। পুনঃ দেখা গেলো জঙ্গল কাঁপছে। কুশ বলল- “ভাই লব! মনে হচ্ছে অযোধ্যা থেকে নিশ্চয়ই এবার মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র এসেছেন। দেখা যাক এবার ওঁনার শক্তি কত।” জঙ্গল কাঁপিয়ে চার অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে লক্ষ্মণ এসে দাঁড়ালো। দেখলো চারপাশে কেবল সেনাদের দেহের স্তূপ। চারপাশে রক্ত নদীর ধারা বয়ে যাচ্ছে। কাটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে চারিদিকে মেদিনী আচ্ছন্ন হয়ে আছে । ইহা দেখে লক্ষ্মণের অতিশয় ক্রোধ জন্মালো। কিন্তু তবুও মহারাজের আদেশে শান্ত ভাবে বলল- “বালক! তোমরা আমাদের বহু সেনাকে বধ করেছো। আমার দুভ্রাতাকে আহত করেছো। তবুও মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের আদেশে আমি সৌজন্য দেখাচ্ছি। ঐ যজ্ঞের অশ্ব কি প্রয়োজন? তোমরা বরং লক্ষ অশ্ব, লক্ষ হস্তী, লক্ষ স্বর্ণ রথ প্রার্থনা করো। এখুনি আমি প্রদান করবো। কিন্তু ঐ যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে দাও।” লব ও কুশ বলল- “তোমরা সূর্যবংশীয়রা এত জ্ঞানী- অথচ ইহা জানো না যে তপস্বী বালকদের অশ্ব, হস্তী, সোনার রথে কি প্রয়োজন ? যজ্ঞের অশ্ব আমরা ধরেছি এই কারণে যাহাতে মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র এখানে আসেন। আমরা তাহার সহিত যুদ্ধের অভিলাষ রাখি।”
লক্ষ্মণ বলল- “বালক! তোমাদের সেইদিন মধুর সঙ্গীত শুনে আমি আপ্লুত হয়েছিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অন্তরে করুণা, মমতা আছে। দয়া করে অর্বাচীন মন্তব্য করে সেই করুণা মমতা কে ধ্বংস করো না। নচেৎ আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের সাথে যুদ্ধ করবার দিবাস্বপ্ন ত্যাগ করো। তোমাদের এখনও সেই যোগ্যতা হয় নি । তাই উত্তম রূপে পুনঃ বলছি যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে দাও। বিনিময়ে যাহা ইচ্ছা প্রার্থনা করতে পারো।” লব ও কুশ বলল- “আমরা দুভ্রাতা আপনাদের যুদ্ধে পরাজিত করেছি, তাহার পরেও কি আপনার আমাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ হয়। তবে বলবো আপনার যুদ্ধবিদ্যা অসম্পূর্ণ। যুদ্ধবিদ্যায় কদাপি শত্রুকে শক্তিহীন ভাবতে নেই। ইহা এক প্রকার মূর্খতা। যান পুনঃ গুরু আশ্রমে গিয়ে যুদ্ধ বিদ্যা শিখে আসুন।” এই বলে লব ও কুশ হাস্য করতে লাগলো। লব , কুশের হাস্য লক্ষ্মণের বুকে শেলের ন্যায় বাজলো। ক্রোধে লক্ষ্মণ দাঁত কটমট করে বলল- “অবাধ্য বালক। তোমরা আমার বীক্রম জানো না। লঙ্কার যুদ্ধে আমি বহু রাক্ষসকে নাশ করেছি। ইন্দ্রজিৎ, বীরবাহু আদি যোদ্ধাদের বধ করেছি। তোমরা আমার যুদ্ধবিদ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করো? এর ফল ভুগবে। যদি বাঁচতে যাও, ত এখুনি অশ্ব ফিরিয়ে দাও।” লব ও কুশ ত নারাজ । হৈ হৈ করে অযোধ্যার সেনারা ছুটলে লব ও কুশ ব্রজবাণ নিক্ষেপ করলো। সেই বাণের প্রভাবে অযোধ্যার সেনাদের ওপর স্বশব্দে বজ্রপাত হতে লাগলো। দেখতে সেনা সকল, হস্তী, রথ, অশ্বগুলি পুড়ে যেতে লাগলো। চোখের নিমিষে দুই বালক কালবাণ নিক্ষেপ করলে প্রচন্ড ধূমে সেনারা আচ্ছন্ন হয়ে দম আটকে ভূলোক ত্যাগ করলো। দুই বালক এত ক্ষিপ্র গতিতে বাণ নিক্ষেপ আরম্ভ করলো যে অয্যোধ্যার রথ সকল চূর্ণচূর্ণ হয়ে গেলো। পালটা আঘাত বা ঢাল তুলবার সময় পেলো না। লক্ষ্মণ এবার ধনুকে নানা অস্ত্র প্রকট করে বালকদের দিকে ছুড়তে থাকলেন। লব ও কুশ তাহা চূর্ণ করতে লাগলো।
( ক্রমশঃ )
লক্ষ্মণ বলল- “তাহাই হইবে ভ্রাতা! প্রথমে আমি তাহাদিগকে প্রলোভন দেখিয়ে অশ্ব প্রাপ্তির চেষ্টা করবো। যদি তাহারা না মানে ত , তাহারা লক্ষ্মণের বিক্রম দেখবে।” চার অক্ষৌহিণী সেনা সমেত লক্ষ্মণ বের হল। প্রকাণ্ড হস্তী গুলি মেদিনী কাঁপিয়ে বের হল। অশ্ব গুলি নিয়ে বের হল। রথ বের হল। নানা অস্ত্র নিয়ে অয্যোধ্যার সেনারা হৈহৈ করতে চলল। বিবিধ দামামা, তুরী, ভেরী বাজলো। যুদ্ধের প্রস্তুতি চলল। এই দুই বালক সামান্য কেহ নহে। তাই সেনা সকল উত্তম ঘাতক অস্ত্র সকল নিলো। তূণ পূর্ণ করলো তীক্ষ্ণ শরে। গদা, তরবারি, মুষল, শেল, শূল , ঢাল, খড়্গ আদি অস্ত্র সকল নিয়ে যুদ্ধে চলল। লব ও কুশ সেই বনে অশ্বের সাথে খেলা করছিলো। অশ্বটি সেই স্থানে উত্তম রূপে ভোজন করলো। কচি কচি তৃণাদি ভক্ষণ করেছিলো। পুনঃ দেখা গেলো জঙ্গল কাঁপছে। কুশ বলল- “ভাই লব! মনে হচ্ছে অযোধ্যা থেকে নিশ্চয়ই এবার মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র এসেছেন। দেখা যাক এবার ওঁনার শক্তি কত।” জঙ্গল কাঁপিয়ে চার অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে লক্ষ্মণ এসে দাঁড়ালো। দেখলো চারপাশে কেবল সেনাদের দেহের স্তূপ। চারপাশে রক্ত নদীর ধারা বয়ে যাচ্ছে। কাটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে চারিদিকে মেদিনী আচ্ছন্ন হয়ে আছে । ইহা দেখে লক্ষ্মণের অতিশয় ক্রোধ জন্মালো। কিন্তু তবুও মহারাজের আদেশে শান্ত ভাবে বলল- “বালক! তোমরা আমাদের বহু সেনাকে বধ করেছো। আমার দুভ্রাতাকে আহত করেছো। তবুও মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের আদেশে আমি সৌজন্য দেখাচ্ছি। ঐ যজ্ঞের অশ্ব কি প্রয়োজন? তোমরা বরং লক্ষ অশ্ব, লক্ষ হস্তী, লক্ষ স্বর্ণ রথ প্রার্থনা করো। এখুনি আমি প্রদান করবো। কিন্তু ঐ যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে দাও।” লব ও কুশ বলল- “তোমরা সূর্যবংশীয়রা এত জ্ঞানী- অথচ ইহা জানো না যে তপস্বী বালকদের অশ্ব, হস্তী, সোনার রথে কি প্রয়োজন ? যজ্ঞের অশ্ব আমরা ধরেছি এই কারণে যাহাতে মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র এখানে আসেন। আমরা তাহার সহিত যুদ্ধের অভিলাষ রাখি।”
লক্ষ্মণ বলল- “বালক! তোমাদের সেইদিন মধুর সঙ্গীত শুনে আমি আপ্লুত হয়েছিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অন্তরে করুণা, মমতা আছে। দয়া করে অর্বাচীন মন্তব্য করে সেই করুণা মমতা কে ধ্বংস করো না। নচেৎ আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের সাথে যুদ্ধ করবার দিবাস্বপ্ন ত্যাগ করো। তোমাদের এখনও সেই যোগ্যতা হয় নি । তাই উত্তম রূপে পুনঃ বলছি যজ্ঞের অশ্ব ফিরিয়ে দাও। বিনিময়ে যাহা ইচ্ছা প্রার্থনা করতে পারো।” লব ও কুশ বলল- “আমরা দুভ্রাতা আপনাদের যুদ্ধে পরাজিত করেছি, তাহার পরেও কি আপনার আমাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ হয়। তবে বলবো আপনার যুদ্ধবিদ্যা অসম্পূর্ণ। যুদ্ধবিদ্যায় কদাপি শত্রুকে শক্তিহীন ভাবতে নেই। ইহা এক প্রকার মূর্খতা। যান পুনঃ গুরু আশ্রমে গিয়ে যুদ্ধ বিদ্যা শিখে আসুন।” এই বলে লব ও কুশ হাস্য করতে লাগলো। লব , কুশের হাস্য লক্ষ্মণের বুকে শেলের ন্যায় বাজলো। ক্রোধে লক্ষ্মণ দাঁত কটমট করে বলল- “অবাধ্য বালক। তোমরা আমার বীক্রম জানো না। লঙ্কার যুদ্ধে আমি বহু রাক্ষসকে নাশ করেছি। ইন্দ্রজিৎ, বীরবাহু আদি যোদ্ধাদের বধ করেছি। তোমরা আমার যুদ্ধবিদ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করো? এর ফল ভুগবে। যদি বাঁচতে যাও, ত এখুনি অশ্ব ফিরিয়ে দাও।” লব ও কুশ ত নারাজ । হৈ হৈ করে অযোধ্যার সেনারা ছুটলে লব ও কুশ ব্রজবাণ নিক্ষেপ করলো। সেই বাণের প্রভাবে অযোধ্যার সেনাদের ওপর স্বশব্দে বজ্রপাত হতে লাগলো। দেখতে সেনা সকল, হস্তী, রথ, অশ্বগুলি পুড়ে যেতে লাগলো। চোখের নিমিষে দুই বালক কালবাণ নিক্ষেপ করলে প্রচন্ড ধূমে সেনারা আচ্ছন্ন হয়ে দম আটকে ভূলোক ত্যাগ করলো। দুই বালক এত ক্ষিপ্র গতিতে বাণ নিক্ষেপ আরম্ভ করলো যে অয্যোধ্যার রথ সকল চূর্ণচূর্ণ হয়ে গেলো। পালটা আঘাত বা ঢাল তুলবার সময় পেলো না। লক্ষ্মণ এবার ধনুকে নানা অস্ত্র প্রকট করে বালকদের দিকে ছুড়তে থাকলেন। লব ও কুশ তাহা চূর্ণ করতে লাগলো।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন