যজ্ঞের অশ্ব নানাদিক ঘুরে বেড়ালো। নানা রাজ্যে বিচরণ করলো। অনেক রাজাই শ্রীরামের প্রস্তাব মেনে যজ্ঞে গেলো। কিন্তু দেখা গেলো ভগবান শ্রীরাম যেনো একেবারে দয়ালু মাটির মানুষ । এত আদর, আপ্যায়ন আর বিনয় স্বভাব দেখে সে সকল রাজারা অবাক হল। সকলকে যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন করলেন । এমনকি যে সকল রাজা অশ্ব ধরে যুদ্ধে লিপ্ত হল, তাহাদের বন্দী করে অযোধ্যায় প্রেরণ করা হল। ভগবান শ্রীরাম তাহাদের যথাবিহিত আদর, যত্ন, আপ্যায়ন করে যথাযোগ্য সম্মান দিলেন। সে সকল রাজারা শ্রীরামের আনুগত্যে এসে শান্তি লাভ করলো। সেই সময়ে ক্ষত্রিয় রাজারা পরস্পরের মধ্যে এত যুদ্ধ করতো, যে সর্বদা মারমার কাটকাট লেগেই থাকতো। এই সকলকে একত্র করেছিলেন ভগবান শ্রীরাম। যেমন মহাভারতে আমরা দেখি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অশ্বমেধ যজ্ঞ করিয়েছিলেন রাজা যুঠিষ্ঠিরকে দিয়ে । সমগ্র ভারতবর্ষের রাজাদের এক শাসন ব্যবস্থার ছত্রতলে এনে শক্তিশালী ভারত রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন । যাই হোক এবার দেখি কোন কোন রাজা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন । পূর্বদেশে ঘোড়া অনেক দূর গেলো। নদ নদী পার করে এক পর্বতের উপর উঠলো। সেই পর্বতের নাম বিরূপাক্ষ গিরি । সেখানকার রাজা অশ্ব ধরলেন । অশ্ব নিতে অয্যোধ্যার সেনারা যাহাতে রাজ্যে না ঢুকতে পারে, সেই জন্য রাজ্যের সীমানায় গড় কেটে অগ্নি সংযোগ করে দিলেন । শত্রুঘ্ন তাঁর দুই অক্ষৌহিণী সেনা সমেত সেখানে আসলেন । দেখলেন আগুন জ্বলছে ।
শত্রুঘ্নের কটক যে দুই অক্ষৌহিণী ।
নিভাইল সে সকল গড়ের আগুনি ।।
গড় মধ্যে প্রবেশ করেন শত্রুঘন ।
শত্রুঘ্নের সহিত রাজার বাজে রণ ।।
রাম সম শত্রুঘন বীর- অবতার ।
শত্রুঘ্নের বাণেতে রাজার চিৎকার ।।
মহাবল শত্রুঘ্ন বাণের জানে সন্ধি ।
হাতে গলে সে রাজারে করিলেন বন্দী ।।
বান্ধিয়া পাঠায় তারে বীর শত্রুঘন ।
রাম দরশনে তার বন্ধন মোচন ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এইভাবে শত্রুঘ্ন জয়ী হলেন । পূর্ব দিক জয় করলেন । উত্তরদিকে অশ্ব ছুটলো। বায়ুবেগে যজ্ঞের অশ্ব ছুটে চলল। পেছন পেছন শত্রুঘ্ন সেনা কটক নিয়ে চলল। অনেক রাজা বশ্যতা স্বীকার করলেন। কেউ ভাবলেন অশ্ব বন্দী করবেন। কিন্তু লবণ অসুর বধ, হনুমানের বিক্রম শুনে আর সাহস পেলো না । এইভাবে অশ্ব হিমালয়ের দিকে গেলো।
ঘোড়া গেল হিমালয়- পর্বতের পার ।
সেই দেশী রাজা যেই বিক্রমে অপার ।।
ঘোড়া দেখি রাজার ধরিতে গেল সাধ ।
শত্রুঘ্ন রাজার সহিত লাগিল বিবাদ ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
সেই রাজার সাথে শত্রুঘ্নের যুদ্ধ আরম্ভ হল । দুজনের দিব্যাস্ত্র ঝঙ্কারে মেদিনী কাঁপতে লাগলো। একে একে রাজার সকল অস্ত্র ধ্বংস করে দিলেন বীর শত্রুঘ্ন । তার পর শত্রুঘ্ন বাণে বাণে রাজাকে আচ্ছাদিত করে দিলেন। শত্রুঘ্নের বাণে সেই রাজার রথ, চক্র, অশ্ব, ধ্বজা, সারথি, অশ্ব সকল ধ্বংস হল। বাণ ফুঁটে রাজা জর্জরিত হল।
না পারে কথা কহিতে অত্যন্ত কাতর ।
তারে বান্ধি পাঠাইল অযোধ্যা নগর ।।
দর্শন দিলেন তারে কমল লোচন ।
তাহাতে হইল তার বন্ধন মোচন ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
সেই রাজাকে শ্রীরামচন্দ্র সম্মান প্রদর্শন করে অত্যন্ত বিনয় প্রদর্শন করলেন। রাজাও ক্ষমা চাইলেন রাজা শ্রীরামের কাছে । এরপর অশ্ব পশ্চিম দিকে ছুটলো। সেখানে বিকৃতাকার ব্যাধেরা থাকতো। তাহারা এত অদ্ভুদ ছিলো যে দেখলেই ভয়ে ভীত হতে হত ।
বিকৃত আকার তারা হাতে চেরা বাঁশ ।
হস্তী ঘোড়া মারি খায় যত রক্ত মাস ।।
পিশাচ ভোজন আর পিশাচ আচার ।
জীব জন্তু মারি করে তাহারা আহার ।।
সকল ব্যাধেতে ঘোড়া ঘেরে চারিভিতে ।
কুপিল শত্রুঘ্ন বীর ধনুর্বাণ হাতে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
শত্রুঘ্ন এরপর ব্যাধেদের সাথে যুদ্ধে মগ্ন হল। যুদ্ধ প্রচণ্ড হল। ব্যাধদের পরাজিত করে শত্রুঘ্ন অশ্ব মুক্ত করলো। ব্যাধের সর্দার কে বেঁধে অযোধ্যায় প্রেরণ করলো। তিন দিক জয় করে শত্রুঘ্ন অযোধ্যায় চলল। দক্ষিণে অশ্ব গেলো না। কারণ দক্ষিণের কিস্কিন্ধ্যা ও লঙ্কার রাজা মিত্রতা স্থাপন করেছে । অপরদিকে একদিনের কথা । মহর্ষি বাল্মিকী লব ও কুশকে ডেকে বললেন- “বতস্য! আমি কঠিন সাধনার নিমিত্ত চিত্রকূট গমন করবো। তোমরা তপোবন রক্ষা করো। আমার আসতে বিলম্ব হবে। আশ্রমের সকলের সুরক্ষার ভার তোমাদের ওপর।” এই বলে মহর্ষি বাল্মিকী বিদায় নিলেন । যজ্ঞের অশ্ব বাল্মিকী মুনির আশ্রমের খুব নিকটে ছিলো। দুভ্রাতা খেলা করতে লাগলো। অপরদিকে অয্যোধ্যার কাছাকাছি এসে শত্রুঘ্ন , পবন নন্দনকে বলল- “বীর হনুমান! এখন আমরা অয্যোধ্যার সমীপে। আর কেহ অশ্ব ধরার সাহস করবে না। তুমি অযোধ্যায় ফিরে সংবাদ প্রদান করো যে আমরা শীঘ্রই অশ্ব সমেত ফিরে আসবো। এখন আমাদের সেনারা ক্লান্ত। অশ্ব বড়ই ক্লান্ত। এখানে আমাদের সেনারা বিশ্রাম, আহার, স্নানাদি করবে। অশ্ব এখন তৃনাদি ভোজন করিবে।” হনুমান বিদায় নিলো। সেনারা সকলে যুদ্ধে ক্লান্ত। শিবির রচনা করে বিশ্রাম নিলো। অশ্ব এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে মহর্ষি বাল্মিকীর তপোবনে চলে গেলো।
( ক্রমশঃ )
শত্রুঘ্নের কটক যে দুই অক্ষৌহিণী ।
নিভাইল সে সকল গড়ের আগুনি ।।
গড় মধ্যে প্রবেশ করেন শত্রুঘন ।
শত্রুঘ্নের সহিত রাজার বাজে রণ ।।
রাম সম শত্রুঘন বীর- অবতার ।
শত্রুঘ্নের বাণেতে রাজার চিৎকার ।।
মহাবল শত্রুঘ্ন বাণের জানে সন্ধি ।
হাতে গলে সে রাজারে করিলেন বন্দী ।।
বান্ধিয়া পাঠায় তারে বীর শত্রুঘন ।
রাম দরশনে তার বন্ধন মোচন ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এইভাবে শত্রুঘ্ন জয়ী হলেন । পূর্ব দিক জয় করলেন । উত্তরদিকে অশ্ব ছুটলো। বায়ুবেগে যজ্ঞের অশ্ব ছুটে চলল। পেছন পেছন শত্রুঘ্ন সেনা কটক নিয়ে চলল। অনেক রাজা বশ্যতা স্বীকার করলেন। কেউ ভাবলেন অশ্ব বন্দী করবেন। কিন্তু লবণ অসুর বধ, হনুমানের বিক্রম শুনে আর সাহস পেলো না । এইভাবে অশ্ব হিমালয়ের দিকে গেলো।
ঘোড়া গেল হিমালয়- পর্বতের পার ।
সেই দেশী রাজা যেই বিক্রমে অপার ।।
ঘোড়া দেখি রাজার ধরিতে গেল সাধ ।
শত্রুঘ্ন রাজার সহিত লাগিল বিবাদ ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
সেই রাজার সাথে শত্রুঘ্নের যুদ্ধ আরম্ভ হল । দুজনের দিব্যাস্ত্র ঝঙ্কারে মেদিনী কাঁপতে লাগলো। একে একে রাজার সকল অস্ত্র ধ্বংস করে দিলেন বীর শত্রুঘ্ন । তার পর শত্রুঘ্ন বাণে বাণে রাজাকে আচ্ছাদিত করে দিলেন। শত্রুঘ্নের বাণে সেই রাজার রথ, চক্র, অশ্ব, ধ্বজা, সারথি, অশ্ব সকল ধ্বংস হল। বাণ ফুঁটে রাজা জর্জরিত হল।
না পারে কথা কহিতে অত্যন্ত কাতর ।
তারে বান্ধি পাঠাইল অযোধ্যা নগর ।।
দর্শন দিলেন তারে কমল লোচন ।
তাহাতে হইল তার বন্ধন মোচন ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
সেই রাজাকে শ্রীরামচন্দ্র সম্মান প্রদর্শন করে অত্যন্ত বিনয় প্রদর্শন করলেন। রাজাও ক্ষমা চাইলেন রাজা শ্রীরামের কাছে । এরপর অশ্ব পশ্চিম দিকে ছুটলো। সেখানে বিকৃতাকার ব্যাধেরা থাকতো। তাহারা এত অদ্ভুদ ছিলো যে দেখলেই ভয়ে ভীত হতে হত ।
বিকৃত আকার তারা হাতে চেরা বাঁশ ।
হস্তী ঘোড়া মারি খায় যত রক্ত মাস ।।
পিশাচ ভোজন আর পিশাচ আচার ।
জীব জন্তু মারি করে তাহারা আহার ।।
সকল ব্যাধেতে ঘোড়া ঘেরে চারিভিতে ।
কুপিল শত্রুঘ্ন বীর ধনুর্বাণ হাতে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
শত্রুঘ্ন এরপর ব্যাধেদের সাথে যুদ্ধে মগ্ন হল। যুদ্ধ প্রচণ্ড হল। ব্যাধদের পরাজিত করে শত্রুঘ্ন অশ্ব মুক্ত করলো। ব্যাধের সর্দার কে বেঁধে অযোধ্যায় প্রেরণ করলো। তিন দিক জয় করে শত্রুঘ্ন অযোধ্যায় চলল। দক্ষিণে অশ্ব গেলো না। কারণ দক্ষিণের কিস্কিন্ধ্যা ও লঙ্কার রাজা মিত্রতা স্থাপন করেছে । অপরদিকে একদিনের কথা । মহর্ষি বাল্মিকী লব ও কুশকে ডেকে বললেন- “বতস্য! আমি কঠিন সাধনার নিমিত্ত চিত্রকূট গমন করবো। তোমরা তপোবন রক্ষা করো। আমার আসতে বিলম্ব হবে। আশ্রমের সকলের সুরক্ষার ভার তোমাদের ওপর।” এই বলে মহর্ষি বাল্মিকী বিদায় নিলেন । যজ্ঞের অশ্ব বাল্মিকী মুনির আশ্রমের খুব নিকটে ছিলো। দুভ্রাতা খেলা করতে লাগলো। অপরদিকে অয্যোধ্যার কাছাকাছি এসে শত্রুঘ্ন , পবন নন্দনকে বলল- “বীর হনুমান! এখন আমরা অয্যোধ্যার সমীপে। আর কেহ অশ্ব ধরার সাহস করবে না। তুমি অযোধ্যায় ফিরে সংবাদ প্রদান করো যে আমরা শীঘ্রই অশ্ব সমেত ফিরে আসবো। এখন আমাদের সেনারা ক্লান্ত। অশ্ব বড়ই ক্লান্ত। এখানে আমাদের সেনারা বিশ্রাম, আহার, স্নানাদি করবে। অশ্ব এখন তৃনাদি ভোজন করিবে।” হনুমান বিদায় নিলো। সেনারা সকলে যুদ্ধে ক্লান্ত। শিবির রচনা করে বিশ্রাম নিলো। অশ্ব এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে মহর্ষি বাল্মিকীর তপোবনে চলে গেলো।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন