
ব্রহ্মা বললেন- “প্রভু! আপনাকে ফিরিয়ে আনতে আমি অধর্ম অর্থাৎ ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছি। আমি অপরাধী। আমাকে ক্ষমা করুন প্রভু।” ভগবান বিষ্ণু বললেন- “হে ব্রহ্মদেব। আমি নিজেই আমার রামাবতারের সময় নির্ধারিত করেছিলাম। এতে আপনার দোষ নেই। আপনি এইরূপ ছলচাতুরীর আশ্রয় না নিলে বিধির বিধান লঙ্ঘিত হতো। আপনি সঠিক কাজ করেছেন।” নারদ মুনি নারায়ন শব্দ উচ্চারণ করে ব্রহ্মাকে জিজ্ঞেস করলেন – “পিতা! এই রামলীলা অর্থাৎ ‘রামায়ণ’ এর মাহাত্ম্য কি?” ব্রহ্মা বললেন- “পুত্র নারদ! মহামুনি বাল্মিকীর লিখিত এই রামায়ণ কে আমি নিজে পূজা করি । দেবতা, গন্ধর্ব, সিদ্ধ, ব্রহ্মর্ষি সকলে শ্রদ্ধা সহ রামায়ণ শ্রবণ করেন । ইহা শ্রবণে পরমায়ু সৌভাগ্য লাভ হয় । শ্রাদ্ধকালে পণ্ডিত সর্বদা রামায়ণ পাঠ করিয়া সকলকে শ্রবণ করাবেন । রামায়ণ পাঠে পুত্রহীন পুত্র, ধনহীন ধন লাভ করিবে। রামায়নের এক অধ্যায় যে পড়িবে সে সর্ব পাপ হতে মুক্ত হবে । রামায়ণ পাঠক সন্তুষ্ট হলে দেবতারা তুষ্ট হন। সুতরাং রামায়ণ পাঠককে বস্ত্র, সুবর্ণ, ধেনু দান করা কর্তব্য। এই আয়ু বর্ধক ‘রামায়ণ’ পড়লে ইহকাল ও পরকালে মঙ্গল হয় । যে সকাল, দ্বিপ্রহর ও সন্ধ্যায় রামায়ণ পড়ে সে কদাপি অবসন্ন হয় না। সহস্র অশ্বমেধ, সহস্র বাজপেয় যজ্ঞে যেই ফল লাভ হয়, রামায়নের একটি অধ্যায় শুনিলে সেই ফল লাভ হয় । ” যাই হোক। অযোধ্যা এর পর দীর্ঘদিন জনশূন্য ছিলো। রাজা ঋষভের রাজত্বকালে পুনঃ অযোধ্যা জনপূর্ণ হল। অযোধ্যা ভারতবর্ষে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত। এখনও শ্রদ্ধালু ভক্তেরা সেখানে গিয়ে ভজন সাধন করেন । যেখানে যেখানে রামায়ণ পাঠ হয় সেখানে সেখানে হনুমান অবস্থান করেন। ইহা মিথ্যা নয় । কিন্তু আমাদের সেই নয়ন কোথায় যে হনুমানজিকে দর্শন করবো। তীর্থ স্থানে পবিত্র স্থানে ভ্রমণে যে ফল হয় রামায়ণ শ্রবনে সেই ফল হয়। কুরুক্ষেত্রে সূর্য গ্রহণের সময় যেব্যাক্তি প্রচুর সোনা দান করেন, আর যে রামায়ণ শ্রবণ করেন উভয়ে সমান ফল পায়। যে ব্যাক্তি শ্রদ্ধা সহ এই ‘রামায়ন’ শ্রবণ করবে সে সর্ব পাপ হতে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করবে। মহর্ষি বাল্মিকী রচিত এই রামায়ণ শ্রদ্ধা সহ সত্য জ্ঞানে শ্রবণ করলে স্ত্রীপুত্র সন্ততি পরিবর্ধিত হয় । তাই সত্য জ্ঞানে শ্রবণ করা উচিৎ।
শ্রীরামচন্দ্র, সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, সুগ্রীব এবং হনুমানকে প্রনাম করি । যে যে স্থানে রামকথা পাঠ হয় সে সে স্থানে অশ্রুপূর্ণলোচনে অবস্থিত সেই রাক্ষসবিনাশক পবননন্দন হনুমান কে প্রনাম করি । সর্বশক্তিমান , রামভদ্র , রামচন্দ্র , রঘুনাথ, সীতানাথ, জগন্নাথ রামকে প্রণাম করি । এই পৃথিবীতে রামায়ণলেখক, রামায়ণপাঠক, রামায়ণ শ্রোতা এবং যে রাজ্যে রামায়ণ থাকে, সেই রাজ্যের রাজা- সকলেরই মঙ্গল হয়। ( রামায়ণ মাহাত্ম্য বাল্মিকী রামায়ন হতে লেখা )
জয় জয় রঘুপতি রাজা রাম,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।
জয় জয় মঙ্গল পরশন রাজা রাম ,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
বরাভয়দানরত রাজা রাম,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।
দীন দয়াল প্রভু রাজা রাম ,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
আশ্রিত – বৎসল রাজা রাম,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।
দশরথ - নন্দন রাজা রাম ,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
রাজা রাম জয় সীতা রাম ।
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
পতিত- পাবন সীতা রাম ।
জয় জয় মঙ্গল পরশন রাজা রাম ,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
বরাভয়দানরত রাজা রাম,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।
দীন দয়াল প্রভু রাজা রাম ,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
আশ্রিত – বৎসল রাজা রাম,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।
দশরথ - নন্দন রাজা রাম ,
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
রাজা রাম জয় সীতা রাম ।
পতিত- পাবন সীতা রাম ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
রামায়ণের আরতি
........................
আরতি শ্রীরামায়ণজী কী ।
কীরতি কলিত ললিত সিয় পী কী ।।
গাবত ব্রহ্মাদিক মুনি সারদ ।
বাল্মীক বিগ্যান বিসারদ ।।
সুক সনকাদি সেষ অরু সারদ ।
বরনি পবনসুত কীরতি নীকী ।।
গাবত বেদ পুরান অষ্টদস ।
ছঅ সাস্ত্র সব গ্রন্থন কো রস ।।
মুনি জন ধন সন্তন কো সবরস ।
সার অংস সম্মত সবহী কী ।।
গাবত সন্তত সম্ভু ভবানী ।
অরু ঘটসম্ভব মুনি বিগ্যানী ।।
ব্যাস আদি কবিবর্জ বখানী ।
কাগভুসূণ্ডি গরুড় কে হী কী ।।
কলিমল হরনি বিষয় রস ফীকী ।
সুভগ সিঙ্গার মুক্তি জুবতী কী ।।
দলন রোগ ভব মূরি অমী কী ।
তাত মাত সব বিধি তুলসী কী ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
........................
আরতি শ্রীরামায়ণজী কী ।
কীরতি কলিত ললিত সিয় পী কী ।।
গাবত ব্রহ্মাদিক মুনি সারদ ।
বাল্মীক বিগ্যান বিসারদ ।।
সুক সনকাদি সেষ অরু সারদ ।
বরনি পবনসুত কীরতি নীকী ।।
গাবত বেদ পুরান অষ্টদস ।
ছঅ সাস্ত্র সব গ্রন্থন কো রস ।।
মুনি জন ধন সন্তন কো সবরস ।
সার অংস সম্মত সবহী কী ।।
গাবত সন্তত সম্ভু ভবানী ।
অরু ঘটসম্ভব মুনি বিগ্যানী ।।
ব্যাস আদি কবিবর্জ বখানী ।
কাগভুসূণ্ডি গরুড় কে হী কী ।।
কলিমল হরনি বিষয় রস ফীকী ।
সুভগ সিঙ্গার মুক্তি জুবতী কী ।।
দলন রোগ ভব মূরি অমী কী ।
তাত মাত সব বিধি তুলসী কী ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
হে দয়াময় শ্রীরাম তোমার লীলামাহাত্ম্য বলে শেষ হয় না। রামায়ণ লেখনীতে যে সকল ত্রুটি, ভুল – ভ্রান্তি, বিচ্যুতি অক্ষর বিচ্যুতি আদি দোষ হয়েছে তাহা তুমি নিজগুনে ক্ষমা করে সকলের ওপর আশীর্বাদ প্রদান করো। জয় সীতারাম । জয় শ্রীরাম । জয় হনুমান ।
এবার দেখি ভারতবর্ষে সব ভাষায় কোন কোন কবি ‘রামায়ণ’ লেখেছেন।
সংস্কৃত- মহর্ষি বাল্মিকী মুনি
বাংলা- কৃত্তিবাস ওঝা
হিন্দী- তুলসীদাস গোস্বামী
তামিল- কুম্ভন
তেলেগু- রঙ্গনাথন
অসমীয়া – মাধবকন্দলী
কানাড়া- তরাবে
মারাঠী- একনাথ
বাংলা- কৃত্তিবাস ওঝা
হিন্দী- তুলসীদাস গোস্বামী
তামিল- কুম্ভন
তেলেগু- রঙ্গনাথন
অসমীয়া – মাধবকন্দলী
কানাড়া- তরাবে
মারাঠী- একনাথ
সকল রামায়ণ রচয়িতাদের দিগের চরণে প্রণাম জানাই ।
জয় সীতারাম । জয় মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম । জয় মাতা সীতা । জয় মহাবীর হনুমান । জয় রামায়ণ । জয় হিন্দুধর্ম ।
“রামায়ণ কথা” লিখতে যে সকল গ্রন্থের সহায়তা নিতে হয়েছে-
বাল্মিকী রামায়ণ, কৃত্তিবাসী রামায়ণ, তুলসীদাসী রামায়ণ, অমরচিত্রমালা, উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সাইট ও ব্লগ, পদ্মপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত, দেবীভাগবতপুরাণ, বৃহৎ ধর্ম পুরাণ, কালিকাপুরাণ, অদ্ভুত রামায়ন, অধ্যাত্ম রামায়ণ, রামায়ণ কথা, গুরুমুখী রামায়ণ, রামকথা , দশাবতারচরিত, ভারতের আদিযুগ ইত্যাদি।
( উত্তরকাণ্ড সমাপ্ত। রামায়ণ কথা সমাপ্ত )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন