একদিন দেবর্ষি নারদ মুনি প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গিয়ে বললেন- “পিতা! ‘রাম’ নামের মাহাত্ম্য কি?” ব্রহ্মা বললেন- “পুত্র! লঙ্কার যুদ্ধে একবার ‘রাম’ নাম অবহেলা ভরে স্মরণ মাত্রই রাক্ষসেরা দেহান্তে দিব্য শরীর প্রাপ্ত করে মোক্ষ লাভ করেছে - ইহা তুমি দেখেছো। এর পরেও এই প্রশ্ন কেন পুত্র ? ‘রাম’ নাম তারকব্রহ্ম নাম। অবহেলা ভরে নিলেও এই নাম মোক্ষ প্রদান করে। এমনকি অবহেলা করেও এই নাম কর্ণগোচর হলে মুক্তি লাভ হয়। সকল পাপ নাশ হয়। এই নামের মহিমা চতুর্মুখে আমি কি পঞ্চমুখে দেবাদিদেব বলিতেও সমর্থ নন। এই নাম জপ করেই দস্যু রত্নাকর হয়েছেন মহর্ষি বাল্মিকী।” নারদ বলল- “পিতা! আমি ‘রাম’ নামের সর্বোত্তম মহিমা দেখতে চাই। ইহা আমার দর্শনের ইচ্ছা।” ব্রহ্মা বললেন- “অবশ্যই পুত্র। আমি একটি ঘটনার সৃষ্টি করছি। যার দ্বারা ‘রাম’ নামের মহিমা দেখতে পাবে। ত্রিলোক আশ্চর্য হবে এই নামের মহিমা দেখে ও শ্রবণ করে।” এই ঘটনার পর সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তাঁর লীলা আরম্ভ করলেন । একদিনের কথা। মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র রাজসভায় বসে আছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র । রাজা শ্রীরাম গুরুদেবের চরণ পূজা করে আসন দিলেন। রাজসভায় নানা বিষয় আলোচনা হচ্ছিল্ল। হঠাত সেখানে আসলেন কাশীরাজ শকুন্ত । শকুন্ত এসে মিত্র শ্রীরামকে প্রণাম ও অভিবাদন জানিয়ে জানালেন, কাশীতে তিনি এক যজ্ঞের আয়োজন করেছেন। সেখানে উপস্থিত থাকতে। এই বলে তিনি শ্রীরামচন্দ্র সহ সকলকে আমন্ত্রণ করে চলে গেলেন । রাজা শকুন্ত এসে একবারও বিশ্বামিত্রকে প্রণাম জানান নি। বিশ্বামিত্রর দিকে তাকান নি। এতে ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন মহর্ষি বিশ্বামিত্র । তিঁনি বললেন- “দেখো রাম তোমার মিত্রর বুদ্ধিখানা দেখো। সে এসে একবার আমাকে প্রণাম অবধি করলো না। আমার অপমান হয়েছে এখানে। এই অপমান করেছে রাজা শকুন্ত। আমি সহ্য করবো না।”
সকলের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেলো। ভাবলেন রাজা হরিশ্চন্দ্রের মতো শ্রীরামের কাছেও তিঁনি আবার সমগ্র অযোধ্যা না চেয়ে বসেন । শ্রীরাম বললেন- “গুরুদেব আপনি শান্ত হন। আমার মিত্রর পক্ষ হতে আমি ক্ষমা চাইছি।” ব্রহ্মর্ষি বললেন- “এই অপমান কদাপি সহ্য হবার নয়। আমি রাজা শকুন্তকে দণ্ড দিতে তোমাকে আদেশ করছি। কাল সূর্যাস্তের আগে যেনো শকুন্তের মস্তক আমার চরণে থাকে । এই তোমার গুরুর আদেশ। আর গুরুর আদেশ পালন করা শিষ্যের কর্তব্য।” শ্রীরাম বললেন- “তাই হবে গুরুদেব। কাল সূর্যদেব অস্তাচলে যাবার আগেই শকুন্তের মস্তক আপনার চরণে থাকবে।” নারদ মুনি এই সকল দেখে প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বললেন- “পিতা! এ আপনি কেমন লীলা রচনা করলেন ? এতে যে এখন রাজা শকুন্তের প্রাণ যাবে।” ব্রহ্মা বললেন- “না পুত্র! রাজা শকুন্তের অন্তিম সময় এখনও আসেনি। তুমি রাজা শকুন্তকে গিয়ে সাবধান থাকতে বল। আর তাকে বল হনুমানের মাতা অঞ্জনাদেবীর নিকট সুরক্ষার প্রার্থনা করতে। তারপর দেখো কি হয়!” নারদ মুনি সেই মতো এসে রাজা শকুন্তকে সব বললেন। রাজা শকুন্ত শুনে ভয়ে কাঁপতে লাগলেন । নারদ মুনি বললেন “শীঘ্র হনুমানের মাতার নিকটে গিয়ে আশ্রয় নাও। তাহার কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। অন্যত্থায় শ্রীরামের বাণে তোমার মস্তকচ্ছেদ হবে। ” রাজা শকুন্ত তখন হনুমানের রাজ্যে গেলেন । সেসময় অঞ্জনা দেবী শিব পূজা করছেন । রাজা শকুন্ত নতজানু হয়ে অঞ্জনাদেবীকে প্রণাম করে বললেন- “মা। আমি আপনার সন্তান। কৃপা করে আমার প্রাণ রক্ষা করুন।” অঞ্জনা দেবী বললেন- “কে তুমি বাছা? কেন তোমার মৃত্যুভয়? মায়ের কাছে যখন এসেছো, তখন আর ভয় কি?” অঞ্জনাদেবী , রাজা শকুন্তকে পুত্রজ্ঞানে আশ্রয় দিলেন। রাজা শকুন্ত বললেন- “মা। এক রাজা প্রতিজ্ঞা করেছেন, যে কাল সূর্যাস্তের আগে আমার শিরোচ্ছেদ করবেন। তিনি খুবুই শক্তিশালী। আমাকে রক্ষা করুন মা।”
অঞ্জনা দেবী বললেন- “পুত্র! মায়ের কাছে যখন এসেছো, তখন আমি শপথ করছি, যে তোমাকে আমি রক্ষা করবো। বল কে সেই রাজা?” রাজা শকুন্ত বললেন- “মা! আপনি যখন আমার সুরক্ষার জন্য শপথ করেছেন তখন বলি, সেই রাজা হলেন অযোধ্যার সম্রাট রাজা শ্রীরামচন্দ্র।” শুনে অঞ্জনাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “তুই চলে যা দুষ্ট। নিশ্চয়ই তুই কোন বড় পাপ করেছিস। কারণ উনি ভগবান। পুন্যাত্মাদের কদাপি বধ করেন না। রাবণের ন্যায় পাপাত্মাদেরই বধ করেন। নিশ্চয়ই তুই বড় পাপী। তোকে সুরক্ষা দিলে আমার অধর্ম হবে। বিদায় হ দুষ্ট।” রাজা শকুন্ত বললেন- “মা! আমি কোন পাপ করিনি। কেবল অযোধ্যায় রাজসভায় গিয়ে মহর্ষি বিশ্বামিত্রকে প্রণাম করিনি দেখে মহর্ষি ক্ষিপ্ত হয়ে রাজা শ্রীরামচন্দ্রকে আদেশ দিয়েছেন যে কাল সূর্যাস্তের আগে আমার শিরোচ্ছেদ করে আনতে। মা আপনি অভয় দিয়েছেন। আপনি শপথ গ্রহণ করেছেন। মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যু হলে মা কি তাহা মেনে নেবেন? আপনাকে আমি মা বলে ডেকেছি। মা হয়ে কিভাবে সন্তান কে মরতে দেখবেন ? আমার প্রাণ রক্ষা করুন মা।” এই বলে রাজা শকুন্ত ভূমিতে নতজানু হয়ে অঞ্জনাদেবীর চরণ জড়িয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন । অঞ্জনা দেবীর মায়া হল। তিঁনি পুত্র হনুমানকে স্মরণ করলেন । হনুমান এসে সব শুনে বললেন- “মা আপনি এই দুষ্টের প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব আমাকে দিচ্ছেন ? ইচ্ছা করছে এখুনি এই দুষ্টের শিরোচ্ছেদ করে নিয়ে যাই, যাতে প্রভুকে কষ্ট করে অস্ত্র না ধরতে হয়। ইহা আমি পারবো না মা। কারণ একে সুরক্ষা দিতে হলে আমাকে আমার প্রভুর বিরুদ্ধে যেতে হবে । ইহা অসম্ভব।” তারপর হনুমান রাজা শকুন্তকে বললেন- “রাজা শকুন্ত! শ্রীরামের বাণ থেকে কেউ মুক্তি পায় না। তাই তুমি বৃথা বাঁচবার চেষ্টা করো না। এই দণ্ড স্বীকার করে নাও।” মাতা অঞ্জনা বললেন- “পুত্র মারুতি! রাজা শকুন্ত আমাকে মা বলে ডেকেছে। আমি এর জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিজ্ঞা করেছি। তুমি আমার আদেশ মেনে এর প্রাণ রক্ষা করো। মায়ের আদেশ পালন করাই পুত্রের ধর্ম। তোমার প্রভু শ্রীরাম নিজেও মায়ের আদেশ পালন করে চতুর্দশ বৎসর অরণ্যবাস করেছেন। তুমি তাঁহারই ভক্ত। তাঁহার ন্যায় মাতৃ আজ্ঞা পালন করো। রাজা শকুন্তের প্রাণ রক্ষা করো।”
( ক্রমশঃ )
সকলের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেলো। ভাবলেন রাজা হরিশ্চন্দ্রের মতো শ্রীরামের কাছেও তিঁনি আবার সমগ্র অযোধ্যা না চেয়ে বসেন । শ্রীরাম বললেন- “গুরুদেব আপনি শান্ত হন। আমার মিত্রর পক্ষ হতে আমি ক্ষমা চাইছি।” ব্রহ্মর্ষি বললেন- “এই অপমান কদাপি সহ্য হবার নয়। আমি রাজা শকুন্তকে দণ্ড দিতে তোমাকে আদেশ করছি। কাল সূর্যাস্তের আগে যেনো শকুন্তের মস্তক আমার চরণে থাকে । এই তোমার গুরুর আদেশ। আর গুরুর আদেশ পালন করা শিষ্যের কর্তব্য।” শ্রীরাম বললেন- “তাই হবে গুরুদেব। কাল সূর্যদেব অস্তাচলে যাবার আগেই শকুন্তের মস্তক আপনার চরণে থাকবে।” নারদ মুনি এই সকল দেখে প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বললেন- “পিতা! এ আপনি কেমন লীলা রচনা করলেন ? এতে যে এখন রাজা শকুন্তের প্রাণ যাবে।” ব্রহ্মা বললেন- “না পুত্র! রাজা শকুন্তের অন্তিম সময় এখনও আসেনি। তুমি রাজা শকুন্তকে গিয়ে সাবধান থাকতে বল। আর তাকে বল হনুমানের মাতা অঞ্জনাদেবীর নিকট সুরক্ষার প্রার্থনা করতে। তারপর দেখো কি হয়!” নারদ মুনি সেই মতো এসে রাজা শকুন্তকে সব বললেন। রাজা শকুন্ত শুনে ভয়ে কাঁপতে লাগলেন । নারদ মুনি বললেন “শীঘ্র হনুমানের মাতার নিকটে গিয়ে আশ্রয় নাও। তাহার কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। অন্যত্থায় শ্রীরামের বাণে তোমার মস্তকচ্ছেদ হবে। ” রাজা শকুন্ত তখন হনুমানের রাজ্যে গেলেন । সেসময় অঞ্জনা দেবী শিব পূজা করছেন । রাজা শকুন্ত নতজানু হয়ে অঞ্জনাদেবীকে প্রণাম করে বললেন- “মা। আমি আপনার সন্তান। কৃপা করে আমার প্রাণ রক্ষা করুন।” অঞ্জনা দেবী বললেন- “কে তুমি বাছা? কেন তোমার মৃত্যুভয়? মায়ের কাছে যখন এসেছো, তখন আর ভয় কি?” অঞ্জনাদেবী , রাজা শকুন্তকে পুত্রজ্ঞানে আশ্রয় দিলেন। রাজা শকুন্ত বললেন- “মা। এক রাজা প্রতিজ্ঞা করেছেন, যে কাল সূর্যাস্তের আগে আমার শিরোচ্ছেদ করবেন। তিনি খুবুই শক্তিশালী। আমাকে রক্ষা করুন মা।”
অঞ্জনা দেবী বললেন- “পুত্র! মায়ের কাছে যখন এসেছো, তখন আমি শপথ করছি, যে তোমাকে আমি রক্ষা করবো। বল কে সেই রাজা?” রাজা শকুন্ত বললেন- “মা! আপনি যখন আমার সুরক্ষার জন্য শপথ করেছেন তখন বলি, সেই রাজা হলেন অযোধ্যার সম্রাট রাজা শ্রীরামচন্দ্র।” শুনে অঞ্জনাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “তুই চলে যা দুষ্ট। নিশ্চয়ই তুই কোন বড় পাপ করেছিস। কারণ উনি ভগবান। পুন্যাত্মাদের কদাপি বধ করেন না। রাবণের ন্যায় পাপাত্মাদেরই বধ করেন। নিশ্চয়ই তুই বড় পাপী। তোকে সুরক্ষা দিলে আমার অধর্ম হবে। বিদায় হ দুষ্ট।” রাজা শকুন্ত বললেন- “মা! আমি কোন পাপ করিনি। কেবল অযোধ্যায় রাজসভায় গিয়ে মহর্ষি বিশ্বামিত্রকে প্রণাম করিনি দেখে মহর্ষি ক্ষিপ্ত হয়ে রাজা শ্রীরামচন্দ্রকে আদেশ দিয়েছেন যে কাল সূর্যাস্তের আগে আমার শিরোচ্ছেদ করে আনতে। মা আপনি অভয় দিয়েছেন। আপনি শপথ গ্রহণ করেছেন। মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যু হলে মা কি তাহা মেনে নেবেন? আপনাকে আমি মা বলে ডেকেছি। মা হয়ে কিভাবে সন্তান কে মরতে দেখবেন ? আমার প্রাণ রক্ষা করুন মা।” এই বলে রাজা শকুন্ত ভূমিতে নতজানু হয়ে অঞ্জনাদেবীর চরণ জড়িয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন । অঞ্জনা দেবীর মায়া হল। তিঁনি পুত্র হনুমানকে স্মরণ করলেন । হনুমান এসে সব শুনে বললেন- “মা আপনি এই দুষ্টের প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব আমাকে দিচ্ছেন ? ইচ্ছা করছে এখুনি এই দুষ্টের শিরোচ্ছেদ করে নিয়ে যাই, যাতে প্রভুকে কষ্ট করে অস্ত্র না ধরতে হয়। ইহা আমি পারবো না মা। কারণ একে সুরক্ষা দিতে হলে আমাকে আমার প্রভুর বিরুদ্ধে যেতে হবে । ইহা অসম্ভব।” তারপর হনুমান রাজা শকুন্তকে বললেন- “রাজা শকুন্ত! শ্রীরামের বাণ থেকে কেউ মুক্তি পায় না। তাই তুমি বৃথা বাঁচবার চেষ্টা করো না। এই দণ্ড স্বীকার করে নাও।” মাতা অঞ্জনা বললেন- “পুত্র মারুতি! রাজা শকুন্ত আমাকে মা বলে ডেকেছে। আমি এর জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিজ্ঞা করেছি। তুমি আমার আদেশ মেনে এর প্রাণ রক্ষা করো। মায়ের আদেশ পালন করাই পুত্রের ধর্ম। তোমার প্রভু শ্রীরাম নিজেও মায়ের আদেশ পালন করে চতুর্দশ বৎসর অরণ্যবাস করেছেন। তুমি তাঁহারই ভক্ত। তাঁহার ন্যায় মাতৃ আজ্ঞা পালন করো। রাজা শকুন্তের প্রাণ রক্ষা করো।”
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন