এরপর শুক্র তাঁর কন্যা অরজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- “পুত্রী! ব্রাহ্মণের অভিশাপ কদাপি মিথ্যা হয় না। কারণ ব্রাহ্মণের মুখ হতে যাহা বের হয়, তাহা সাক্ষাৎ দেবতাদের বচন। আগামী সাত দিনের মধ্যে রাজা দণ্ডের রাজ্য জলন্ত অঙ্গারের ধূলাতে আচ্ছাদিত হবে। রাজা দণ্ডের কুলে কেউ রইবে না। পুত্রী তুমি এই সাতদিন পবিত্র সরোবরে অবস্থান করো। এই সাতদিনে যে সমস্ত প্রানী তোমার নিকট প্রান রক্ষার নিমিত্ত আসবে, তাহাদের কোন ক্ষতি হইবে না।” রাজা ইন্দ্রদেবতা জলন্ত অঙ্গারের বর্ষণ আরম্ভ করলেন রাজা দণ্ডের রাজ্যে। জলন্ত অঙ্গারে পুড়ে দেখতে দেখতে দণ্ড রাজার রাজ্যে সকল গৃহ ভস্মীভূত হয়ে প্রজা সকল নিহত হল। একে একে রাজার পাত্র, মিত্র, অতিথি সভাসদ সকলেই জলন্ত অঙ্গারে ভস্মীভূত হলেন। রাজার সুন্দর প্রাসাদ ধূলিতে মেদিনীতে চলে গেলো। রাজা দণ্ড নিহত হল । এইভাবে অগ্যস্ত মুনি , ভগবান শ্রীরামকে অনেক ঘটনা বললেন। সূর্যাস্ত হয়ে সন্ধ্যা সমাগত হল। ভগবান শ্রীরাম তখন নদীতে গিয়ে সন্ধ্যাদি কর্ম সমাপন করলেন । রাত্রে মুনির আশ্রমেই নিবাস করলেন । মুনি তাহাকে অনেক ফলমূল ও দিব্য ঔষধি আহার করতে দিলেন। তাহা সেবনে ভগবান শ্রীরাম অত্যন্ত খুশী হলেন । পর দিন রাজা শ্রীরামচন্দ্র অযোধ্যায় আসলেন। রাজার পাপে সমস্ত রাজ্য ভোগে, কিন্তু রাজার পুণ্যে সকলে লাভমান হয় । তাই ভগবান শ্রীরাম ভাবলেন, তিনি রাজসূয় যজ্ঞ করে এত পুণ্য অর্জন করবেন যে তাহাতে সমগ্র রাজ্যবাসী উপকৃত হবেন। ভরতকে তখন বললেন- “আমার বীর ভ্রাতা! আমার ইচ্ছা যে আমি রাজসূয় যজ্ঞ করি। তোমার কি মত?”
ভরত বলল- “না অগ্রজ! এ হয় না। এই যজ্ঞ করলে অকারণে অনেক প্রকার দুর্ভোগ আসতে পারে। পূর্বে ইন্দ্রদেবতা এই যজ্ঞ করেছেন, তাই অবিরত দেবাসুর সংগ্রাম চলে, বরুণ দেবতা করতে গেলে সমগ্র কুম্ভীর মৎস্য ভস্ম হল। আমাদিগের কুলের পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় মহারাজ হরিশ্চন্দ্র এই যজ্ঞ করেছিলেন, এর পর ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র সমগ্র রাজ্যই ভিক্ষাতে চেয়ে নেন। এই কারণে এই যজ্ঞ করা উচিৎ নয়। আপনি বরং অশ্বমেধ যজ্ঞ করুন।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “তাহাই ত! এর থেকে বরং অশ্বমেধ যজ্ঞ করা অতি উত্তম।” ভরত বলল- “অগ্রজ! এই যজ্ঞ পূর্বে দেবরাজ পুরন্দর করেছিলেন । সেই সকল ঘটনা আপনি শ্রবণ করুন।” এই বলে ভরত সেই গল্প বললেন। বহু পূর্বে ত্রষ্টা ঋষির পুত্র বৃত্রাসুর এক ভয়ানক তপস্যা আরম্ভ করেছিলো। সেই তপস্যার আগুনে স্বর্গ লোকে হাহাকার উঠেছিলো। দেবরাজ ইন্দ্র এই সকল ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে দেখেন বৃত্রাসুরের তপস্যার দ্বারা এসব হচ্ছে। তখন দেবতাদিগের সহিত ইন্দ্র দেবতা বৈকুণ্ঠে ভগবান নারায়নের কাছে গেলেন। ভগবান নারায়ণকে সব বললেন। ভগবান নারায়ণ বললেন- “হে দেবেন্দ্র! তুমি এখন বৃত্র বধ করো। বৃত্র বধ করা ভিন্ন আর উপায় নেই। বৃত্র বধ কালে আমি নিজেকে তিন অংশে ভাগ করবো। এক অংশে আমি তোমার মধ্যে, অপর অংশে আমি তোমার বজ্র অস্ত্রে প্রবেশ করবো। অপর অংশে আমি মেদিনীতে প্রবেশ করবো। কিন্তু সাবধান, বৃত্র ব্রাহ্মণ পুত্র। এর ফলে তোমার ওপর ব্রহ্মহত্যার পাপ আসবে। তুমি অশ্বমেধ যজ্ঞ করে আমার আরাধনা করে আমাকে সন্তুষ্ট করবে। আমি তোমাকে ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্তি দেবো।” দেবরাজ ইন্দ্র সেই কথা শুনে বৃত্রের নিকটে আসলো। দেখলো, বৃত্রের তপে নভোমণ্ডল অবধি আগুনের লেলিহান শিখা উঠেছে । দেবরাজ ইন্দ্র হস্তে বজ্র নিলেন। ভগবান বিষ্ণু বচন পালন করে তিন ভাগে ভাগ হলেন। দেবরাজ পুরন্দর সেই বজ্র অস্ত্রে বৃত্রের প্রাণ নাশ করলেন ।
ব্রাহ্মণ পুত্র হত্যার পাপ ইন্দ্রকে গ্রাস করলো। ইন্দ্রদেবতা তখন হরির পরামর্শ মতো অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন । দেবরাজ ইন্দ্রের শরীর থেকে তখন ব্রহ্মহত্যারূপী পাপপুরুষ নির্গত হয়ে বলল- “হে সুরবৃন্দ! দেবরাজ ইন্দ্রদেবতার শরীর হতে এখন আমি বহিষ্কৃত । আমি কোথায় থাকবো এখন? কাকে আশ্রয় করবো? ” দেবতাগণ বললেন- “হে ব্রহ্মহত্যারূপী পাপপুরুষ তুমি নিজেকে চার ভাগে ভাগ করো। প্রথম অংশে বর্ষা ঋতুর চারিমাস জলে পূর্ণ নদীসমূহে বাস করবে। দ্বিতীয় অংশে ভূতলে সর্বদা বাস করবে। তৃতীয় অংশে গর্বিত ও কামে মত্তা পুরুষ সম্ভোগে ইচ্ছা রাখে এমন যুবতী নারীর দেহে কামরূপে প্রতিমাসে তিন রাত্রি অবস্থান করবে । চতুর্থ অংশে সেইসব ব্যক্তির দেহ আশ্রয় করে থাকবে যাহারা নির্দোষী ব্রাহ্মণকে বধ করবে, অথবা ব্রাহ্মণের ওপর মিথ্যা দোষ আরোপ করে ব্রাহ্মণ নির্যাতন করবে।”ব্রহ্মহত্যারূপী পাপপুরুষ সেই সকল স্থানেই থাকলেন। এই ভাবে অশ্বমেধ যজ্ঞের একটি ঘটনা বললেন ভরত । লক্ষ্মণ বললেন- “অগ্রজ! পুরাকালে রাজা ইল, বুধ অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন।” এই বলে লক্ষ্মণ তাহার ঘটনা আরম্ভ করলেন। বহু আগে ইল নামক এক রাজা ছিলেন । সেই নিঃসন্তান রাজা একদিন বনে এসে অসংখ্য মৃগ বধ করেও মনে শান্তি পেলেন না। একসময় মাতা পার্বতী , ভগবান শিবকে বললেন- “প্রভু ! নারীরা কি কেবল সর্বদা পুরুষের ওপর নির্ভর হয়ে থাকবে ? স্ত্রীদের জন্য কি সম্মান প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আপনি এমন কিছু করুন, যাহাতে সকল পুরুষ স্ত্রীদিগকে শ্রদ্ধা করে।” এই শুনে মাতা পার্বতীর ইচ্ছায়, ভগবান শিব সেই বনে এমন একটি স্থান রচনা করেছিলেন যেখানে সব কিছুই ছিলো নারী। এমনকি পক্ষী, পশু অবধি। সেই বনে কোন পুরুষ এলে তাহাকে দ্বাদশ বৎসর নারী হয়ে থাকতে হত। ভগবান শিব নিজেও সেই বনে নারীরূপে মাতা পার্বতীর সাথে বিহার করতে লাগলেন । মাতা পার্বতী ভাবলেন এতে সকল নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিতা হয়েছে । রাজা ইল সেই বনে এলে দ্বাদশ বৎসর নারী রূপে ‘ইলা’ হয়ে থাকলেন। পরে বুধের সাথে মিলনে ইলার পুররবা নামক এক পুত্রের মাতা হন। পরে অশ্বমেধ যজ্ঞ কে রাজা ইল পুনরায় পুরুষত্ব প্রাপ্তি করেন ।
( ক্রমশঃ )
ভরত বলল- “না অগ্রজ! এ হয় না। এই যজ্ঞ করলে অকারণে অনেক প্রকার দুর্ভোগ আসতে পারে। পূর্বে ইন্দ্রদেবতা এই যজ্ঞ করেছেন, তাই অবিরত দেবাসুর সংগ্রাম চলে, বরুণ দেবতা করতে গেলে সমগ্র কুম্ভীর মৎস্য ভস্ম হল। আমাদিগের কুলের পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় মহারাজ হরিশ্চন্দ্র এই যজ্ঞ করেছিলেন, এর পর ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র সমগ্র রাজ্যই ভিক্ষাতে চেয়ে নেন। এই কারণে এই যজ্ঞ করা উচিৎ নয়। আপনি বরং অশ্বমেধ যজ্ঞ করুন।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “তাহাই ত! এর থেকে বরং অশ্বমেধ যজ্ঞ করা অতি উত্তম।” ভরত বলল- “অগ্রজ! এই যজ্ঞ পূর্বে দেবরাজ পুরন্দর করেছিলেন । সেই সকল ঘটনা আপনি শ্রবণ করুন।” এই বলে ভরত সেই গল্প বললেন। বহু পূর্বে ত্রষ্টা ঋষির পুত্র বৃত্রাসুর এক ভয়ানক তপস্যা আরম্ভ করেছিলো। সেই তপস্যার আগুনে স্বর্গ লোকে হাহাকার উঠেছিলো। দেবরাজ ইন্দ্র এই সকল ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে দেখেন বৃত্রাসুরের তপস্যার দ্বারা এসব হচ্ছে। তখন দেবতাদিগের সহিত ইন্দ্র দেবতা বৈকুণ্ঠে ভগবান নারায়নের কাছে গেলেন। ভগবান নারায়ণকে সব বললেন। ভগবান নারায়ণ বললেন- “হে দেবেন্দ্র! তুমি এখন বৃত্র বধ করো। বৃত্র বধ করা ভিন্ন আর উপায় নেই। বৃত্র বধ কালে আমি নিজেকে তিন অংশে ভাগ করবো। এক অংশে আমি তোমার মধ্যে, অপর অংশে আমি তোমার বজ্র অস্ত্রে প্রবেশ করবো। অপর অংশে আমি মেদিনীতে প্রবেশ করবো। কিন্তু সাবধান, বৃত্র ব্রাহ্মণ পুত্র। এর ফলে তোমার ওপর ব্রহ্মহত্যার পাপ আসবে। তুমি অশ্বমেধ যজ্ঞ করে আমার আরাধনা করে আমাকে সন্তুষ্ট করবে। আমি তোমাকে ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্তি দেবো।” দেবরাজ ইন্দ্র সেই কথা শুনে বৃত্রের নিকটে আসলো। দেখলো, বৃত্রের তপে নভোমণ্ডল অবধি আগুনের লেলিহান শিখা উঠেছে । দেবরাজ ইন্দ্র হস্তে বজ্র নিলেন। ভগবান বিষ্ণু বচন পালন করে তিন ভাগে ভাগ হলেন। দেবরাজ পুরন্দর সেই বজ্র অস্ত্রে বৃত্রের প্রাণ নাশ করলেন ।
ব্রাহ্মণ পুত্র হত্যার পাপ ইন্দ্রকে গ্রাস করলো। ইন্দ্রদেবতা তখন হরির পরামর্শ মতো অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন । দেবরাজ ইন্দ্রের শরীর থেকে তখন ব্রহ্মহত্যারূপী পাপপুরুষ নির্গত হয়ে বলল- “হে সুরবৃন্দ! দেবরাজ ইন্দ্রদেবতার শরীর হতে এখন আমি বহিষ্কৃত । আমি কোথায় থাকবো এখন? কাকে আশ্রয় করবো? ” দেবতাগণ বললেন- “হে ব্রহ্মহত্যারূপী পাপপুরুষ তুমি নিজেকে চার ভাগে ভাগ করো। প্রথম অংশে বর্ষা ঋতুর চারিমাস জলে পূর্ণ নদীসমূহে বাস করবে। দ্বিতীয় অংশে ভূতলে সর্বদা বাস করবে। তৃতীয় অংশে গর্বিত ও কামে মত্তা পুরুষ সম্ভোগে ইচ্ছা রাখে এমন যুবতী নারীর দেহে কামরূপে প্রতিমাসে তিন রাত্রি অবস্থান করবে । চতুর্থ অংশে সেইসব ব্যক্তির দেহ আশ্রয় করে থাকবে যাহারা নির্দোষী ব্রাহ্মণকে বধ করবে, অথবা ব্রাহ্মণের ওপর মিথ্যা দোষ আরোপ করে ব্রাহ্মণ নির্যাতন করবে।”ব্রহ্মহত্যারূপী পাপপুরুষ সেই সকল স্থানেই থাকলেন। এই ভাবে অশ্বমেধ যজ্ঞের একটি ঘটনা বললেন ভরত । লক্ষ্মণ বললেন- “অগ্রজ! পুরাকালে রাজা ইল, বুধ অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন।” এই বলে লক্ষ্মণ তাহার ঘটনা আরম্ভ করলেন। বহু আগে ইল নামক এক রাজা ছিলেন । সেই নিঃসন্তান রাজা একদিন বনে এসে অসংখ্য মৃগ বধ করেও মনে শান্তি পেলেন না। একসময় মাতা পার্বতী , ভগবান শিবকে বললেন- “প্রভু ! নারীরা কি কেবল সর্বদা পুরুষের ওপর নির্ভর হয়ে থাকবে ? স্ত্রীদের জন্য কি সম্মান প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আপনি এমন কিছু করুন, যাহাতে সকল পুরুষ স্ত্রীদিগকে শ্রদ্ধা করে।” এই শুনে মাতা পার্বতীর ইচ্ছায়, ভগবান শিব সেই বনে এমন একটি স্থান রচনা করেছিলেন যেখানে সব কিছুই ছিলো নারী। এমনকি পক্ষী, পশু অবধি। সেই বনে কোন পুরুষ এলে তাহাকে দ্বাদশ বৎসর নারী হয়ে থাকতে হত। ভগবান শিব নিজেও সেই বনে নারীরূপে মাতা পার্বতীর সাথে বিহার করতে লাগলেন । মাতা পার্বতী ভাবলেন এতে সকল নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিতা হয়েছে । রাজা ইল সেই বনে এলে দ্বাদশ বৎসর নারী রূপে ‘ইলা’ হয়ে থাকলেন। পরে বুধের সাথে মিলনে ইলার পুররবা নামক এক পুত্রের মাতা হন। পরে অশ্বমেধ যজ্ঞ কে রাজা ইল পুনরায় পুরুষত্ব প্রাপ্তি করেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন