ভূমিতে পড়ে রাবণ মৃত্যুযন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। ছিন্ন উদর দিয়ে প্রবল বেগে রুধির নির্গত হল। তার উদরের অমৃত কলস শুস্ক হয়ে গেছে ব্রহ্মাস্ত্রে। তার অন্তিম শ্বাস সমাগত । রাবণের বিশাল কীরিট ভূমিতে প্রতীত। যেনো মনে আকাশের সূর্য ভূমিতে পড়েছে । বানরেরা জয়ধ্বনি করলো। “জয় শ্রী রাম” ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হল। ঢাক, ঢোল, শিঙা, বাঁশী, ন্যকড়া, দুন্দুভি, ভেরী বাজতে লাগলো। বানরেরা উল্লাসে নৃত্য- গীত করে একে অপরকে জড়িয়ে উল্লাস প্রকাশিত করলো। বাদবাকী রাক্ষসেরা সকলে লঙ্কায় ‘হায় হায়’ করতে করতে পলায়ন করলো। কিছু এসে অস্ত্র ত্যাগ করে ভগবান শ্রীরামের কাছে শরণাগত হলেন, ভগবান তাহাদের অভয় দিলেন । স্বর্গে নানা বাদ্য গীত বেজে উঠলো। অপ্সরা নৃত্য করলো, গন্ধর্ব- কিন্নর নানা সঙ্গীত ও বাজনা বাজাতে লাগলো। আকাশ থেকে কালো মেঘ সড়ে গিয়ে সূর্যের আলো ও নির্মল আকাশ দেখা গেলো। প্রকৃতি সেজে উঠলো । সমুদ্রে তাণ্ডব স্তব্ধ হল। রাবণ সেই অবস্থায় বিভীষণকে অভিশাপ দিয়ে বলল- “ছিঃ বিভীষণ! তোর জন্য আজ আমার মরণ হচ্ছে। আমি তোকে অভিশাপ প্রদান করছি- এই সৃষ্টি যতদিন থাকবে ততদিন ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ নামে লোকে তোকে জানবে।” বলতে বলতে রাবণের মুখে রক্ত উঠলো । বিভীষণ ছুটে গিয়ে রাবণের পাশে অধিষ্ঠান করে ক্রন্দন করে বলতে লাগলো- “অগ্রজ! আপনার অভিশাপ আমি মাথায় নিলাম। ভ্রাতা! এই যুদ্ধে এই পরিণতিই হতো। একবার স্মরণ করুন কতবার বুঝিয়েছি আপনাকে। দেখলেন আজ কি হল? আপনার বংশ নাশ হয়ে গেলো প্রভু শ্রীরামের সাথে শত্রুতার কারণে। আপনি নিজেও ধূলায় লুটিয়েছেন। যদি একটিবার আমার কথা মানতেন ।” এই বলে বিভীষণ রাবণের মস্তকে কর বুলিয়ে বুলিয়ে এই কথা বলতে লাগলেন । তখন ভগবান শ্রীরাম রথ থেকে ভূমিতে নেমে রাবণের কাছে গেলেন । তারপর বললেন- “দশানন! কে লঙ্কার শত্রু ? এই মুহূর্তে তুমি ধূলায় লুটিত। তোমার এখন অন্তিম অবস্থা। এই পরিণতি কি তোমার হওয়ার ছিলো? নিজেই বিবেচোনা করো। লঙ্কার শত্রু কে ? বিভীষণ না তুমি নিজে ? বিভীষণ কি তোমাকে বলেছিল যে যুদ্ধ করে দম্ভ প্রকাশ করতে ? সে কি তোমার পুত্রদের যুদ্ধে টেনে এনেছিলো ? সে কি নিজের নাবালক পুত্র তরণী সেনকে যুদ্ধে এনেছিলো রাবণ! ” রাবণ সব শুনে চুপ করে রইলেন ।
ভগবান শ্রীরাম বললেন- “দশানন! যুদ্ধে সর্বদা ধ্বংসই বয়ে আনে। দেখো তোমার দম্ভে লঙ্কা উজার হয়েছে। তোমার দম্ভেই তোমার বংশনাশ হয়েছে। এর জন্য কি বিভীষণ দায়ী ? সে কি কুম্ভকর্ণকে যুদ্ধে আহ্বান করেছিলো? রাবণ! এই পরিণতির কথা ভেবেই আমি তোমাকে একাধিক বার শান্তি প্রস্তাব প্রদান করেছিলাম- তুমি তা শুনেছিলে কি? যদি হনুমানের কথাতেই তুমি সীতাকে ফিরিয়ে দিতে তবে আজ তোমার ন্যায় শিবভক্ত ত্রিলোকবিজয়ী সম্রাট এই ভূমিতে লুণ্ঠিত হয়ে থাকতে না। একটিবার বিচার করো। অন্তরাত্মাই সবচেয়ে বড় বিচারক । তোমার পাপ এত সীমাহীন হয়েছিলো যে, তোমার আরাধ্যদেব অবধি তোমাকে ত্যাগ করেছেন। বিভীষণ আমাকে কিছু বলেনি , তোমার কর্মফল বাক্য হয়ে বিভীষণের মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে । এবার বিচার করো কে আসলে ঘরের শত্রু!” রাবণ এসব ভাবতে লাগলো। মৃত্যু শয্যায় সমস্ত চেতনার বিকাশ হল রাবণের মধ্যে । ভগবান শ্রী রঘুবীর আরোও বললেন- “রাবণ তুমি ব্রহ্মার বংশজ বিশ্বশ্রবা মুনির সন্তান। তুমি বেদজ্ঞ ও শাস্ত্রজ্ঞ। কিন্তু তোমার মধ্যে এই সকল ধর্ম ভাব কদাপি দেখা যায় নি। জীবন ভরে অধর্ম করে বেরিয়েছো। নিজ ভ্রাতুস্পুত্রের স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছো, কত শত ধর্মাত্মা দিগকে বধ ও নির্যাতন করেছো। এই কি বেদজ্ঞ পণ্ডিতের কর্ম ছিলো? পাপ করার আগে তোমার সেই ধর্ম জ্ঞান কোথায় ছিলো ? জ্ঞানী হোক আর অজ্ঞানী পাপের ফল কাহাকেও রেহাই দেয় না। নিজ দর্পের কারণে একের পর এক পুত্র, আত্মীয় স্বজনকে যুদ্ধে পাঠিয়ে নিজের কুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছো। পরস্ত্রীকে বিবাহ করার কুবাসনা মনে পালন করেছো। আজ তার সমস্ত ফল ভোগ করছ। সীতাকে ফিরিয়ে দিলে তোমার আত্মসম্মান কোনোভাবেই নষ্ট হত না। বরং তোমার বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটতো। কিন্তু তুমি তা না করে দম্ভের প্রকাশ ঘটিয়ে গেছো। দম্ভে চূর্ণ ব্যক্তি পর্বতের এমন শিখরে চলে যায়, যখন সেখান থেকে সে পতিত হয়- তখন তোমার ন্যয় অবস্থা হয়। কেউ কাউকে আজ বধ করেনি। তোমার পাপ, তোমার দম্ভ, তোমার হিংসাই তোমাকে বধ করেছে।” এইভাবে ভগবান শ্রীরাম রাবণকে বোঝালো । রাবণের সব কিছু মনে হল। তার মধ্যে থেকে শুভ চেতনার উদয় হল। চোখ দিয়ে জল ঝড়তে লাগলো। মৃত্যুর পূর্বে যেমন মানবের চোখ দিয়ে জল ঝড়ে।
রাবণ বলল- “হে শ্রীরাম! আপনি সত্যই শক্তিমান। আপনি বীর। আমি গর্বিত এক বীরের হস্তেই আমার বীরগতি হয়েছে। আপনি যথার্থই বলেছেন। অগুনিত পাপের শাস্তি আজ আমি ভোগ করছি। এ নিয়তির বিধান। যেইরূপ কর্ম করেছি, সেই রূপই ফল প্রাপ্ত করছি। যে আম্র বৃক্ষ রোপণ করে সে সুস্বাদু আম্র ফল প্রাপ্ত হয় আর যে আমার মতো নির্বোধ আর দাম্ভিক সে বিষবৃক্ষ রোপণ করে আর বিষাক্ত ফলই প্রাপ্ত হয় । আমার বুদ্ধি ভ্রষ্ট ছিলো। না মেনেছি পিতামাতার কথা, না মেনেছি ভ্রাতাদের কথা, না মেনেছি আমার সতী স্ত্রী মন্দোদরীর কথা! সুবুদ্ধিদাতা ভ্রাতাকে পদাঘাত করে বিদায় করে কুবুদ্ধিদাতা রাক্ষসদের মাথায় তুলে রেখেছিলাম। এ সব সেই পাপের ফল। কুবুদ্ধির আশ্রয় নিলে এই রকম ফলই হয়- যা আমার হয়েছে। দম্ভ করলে তার পরিণাম আমার মতনই হয়, অধর্ম করলে অন্তিম পরিণাম নিজের বিনাশ হয়, পাপ করলে সর্বনাশ নিজে থেকেই আসে। এ তো সৃষ্টির বিধান। আমি বেদজ্ঞ , শাস্ত্রজ্ঞ হয়েও এই বিধান ভুলে গিয়েছিলাম- তাই এইরূপ শাস্তি।” এই বলে রাবণ রোদন করতে লাগলো। ভগবান শ্রীরাম বললেন- “ভ্রাতা লক্ষ্মণ! তুমি মহাপণ্ডিত তথা ব্রহ্মার বংশজ রাবণের কাছে শাস্ত্র জ্ঞান প্রাপ্ত্য করো। যা আগামীতে আমাদের মার্গ প্রদর্শন করবে।” লক্ষ্মণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল- “ভ্রাতা! ক্ষমা করুন । এই তস্কর, দাম্ভিকের কাছে কি শিক্ষা নেবো ? এর শিক্ষা যে নেবে, তার অন্তিম পরিণতিও এর মতনই হবে । এই পাপী কেবল পাপ শিক্ষাই প্রদান করবে।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “না লক্ষ্মণ! মৃত্যু শয্যায় মানবের ধর্মাধর্ম জ্ঞান প্রকাশিত হয়। সঠিক- বেঠিক, ভুল- ঠিক উপলব্ধি করতে পারে। তাই এই পরম বিদ্বান রাবণের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করো।” লক্ষ্মণ তখন রাবণের কাছে গিয়ে প্রনাম জানিয়ে বলল- “অগ্রজের আদেশে আমি আপনার নিকট নীতি শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছি। কৃপা করে প্রদান করুন।” রাবণ বলল- “লক্ষ্মণ! আমি আর কি শিক্ষা দেবো? শ্রীরাম নিজেই ত মর্যাদা পুরুষোত্তম। সকল শুভ নীতি, শিক্ষার সমাহার তিঁনি। তবুও বলি – শুভ কাজ যত শীঘ্র সম্ভব করা উচিৎ। আমি ভেবেছিলাম মর্তলোক থেকে স্বর্গ অবধি একটা সিঁড়ি বিশ্বকর্মাকে দিয়ে নির্মাণ করাবো – যাতে সব প্রানী দেহান্তে স্বর্গে গমন করতে পারে। কিন্তু আমার কুটবুদ্ধি ধারিনী ভগিনী শূর্পনাখা এসে এমন কুবুদ্ধি দিলো যে আমি সীতাদেবীকে হরণ করে চূড়ান্ত মহাপাপ করলাম। তার ফলে আজ আমার এই দশা। আমার অবস্থা থেকে ত্রিজগৎ শিক্ষা লাভ করুক- যে অশুভ কর্মের পরিণতি কি হয় ! মানবের উচিৎ সর্বদা শুভ কর্ম ভাবা মাত্রই করে ফেলা। কদাপি অসৎ কর্ম করা তো দূর মনেও স্থান দিতে নেই । অসৎ চিন্তা থেকেই অসৎ কর্ম করবার কুবুদ্ধি আসে, তার সহিত আসে কুমন্ত্রণা দেবার অসাধু লোক, তার সাথে সাথে আসে অসৎ কর্মের শাস্তি। মূর্খ মানব মনে করে যে সে পাপ করেও শাস্তি পাবে না। কিন্তু তারা এটা জানে না- পাপ নিজের সাথে সাথে শাস্তিকেও ডেকে আনে।”
( ক্রমশঃ )
ভগবান শ্রীরাম বললেন- “দশানন! যুদ্ধে সর্বদা ধ্বংসই বয়ে আনে। দেখো তোমার দম্ভে লঙ্কা উজার হয়েছে। তোমার দম্ভেই তোমার বংশনাশ হয়েছে। এর জন্য কি বিভীষণ দায়ী ? সে কি কুম্ভকর্ণকে যুদ্ধে আহ্বান করেছিলো? রাবণ! এই পরিণতির কথা ভেবেই আমি তোমাকে একাধিক বার শান্তি প্রস্তাব প্রদান করেছিলাম- তুমি তা শুনেছিলে কি? যদি হনুমানের কথাতেই তুমি সীতাকে ফিরিয়ে দিতে তবে আজ তোমার ন্যায় শিবভক্ত ত্রিলোকবিজয়ী সম্রাট এই ভূমিতে লুণ্ঠিত হয়ে থাকতে না। একটিবার বিচার করো। অন্তরাত্মাই সবচেয়ে বড় বিচারক । তোমার পাপ এত সীমাহীন হয়েছিলো যে, তোমার আরাধ্যদেব অবধি তোমাকে ত্যাগ করেছেন। বিভীষণ আমাকে কিছু বলেনি , তোমার কর্মফল বাক্য হয়ে বিভীষণের মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে । এবার বিচার করো কে আসলে ঘরের শত্রু!” রাবণ এসব ভাবতে লাগলো। মৃত্যু শয্যায় সমস্ত চেতনার বিকাশ হল রাবণের মধ্যে । ভগবান শ্রী রঘুবীর আরোও বললেন- “রাবণ তুমি ব্রহ্মার বংশজ বিশ্বশ্রবা মুনির সন্তান। তুমি বেদজ্ঞ ও শাস্ত্রজ্ঞ। কিন্তু তোমার মধ্যে এই সকল ধর্ম ভাব কদাপি দেখা যায় নি। জীবন ভরে অধর্ম করে বেরিয়েছো। নিজ ভ্রাতুস্পুত্রের স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছো, কত শত ধর্মাত্মা দিগকে বধ ও নির্যাতন করেছো। এই কি বেদজ্ঞ পণ্ডিতের কর্ম ছিলো? পাপ করার আগে তোমার সেই ধর্ম জ্ঞান কোথায় ছিলো ? জ্ঞানী হোক আর অজ্ঞানী পাপের ফল কাহাকেও রেহাই দেয় না। নিজ দর্পের কারণে একের পর এক পুত্র, আত্মীয় স্বজনকে যুদ্ধে পাঠিয়ে নিজের কুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছো। পরস্ত্রীকে বিবাহ করার কুবাসনা মনে পালন করেছো। আজ তার সমস্ত ফল ভোগ করছ। সীতাকে ফিরিয়ে দিলে তোমার আত্মসম্মান কোনোভাবেই নষ্ট হত না। বরং তোমার বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটতো। কিন্তু তুমি তা না করে দম্ভের প্রকাশ ঘটিয়ে গেছো। দম্ভে চূর্ণ ব্যক্তি পর্বতের এমন শিখরে চলে যায়, যখন সেখান থেকে সে পতিত হয়- তখন তোমার ন্যয় অবস্থা হয়। কেউ কাউকে আজ বধ করেনি। তোমার পাপ, তোমার দম্ভ, তোমার হিংসাই তোমাকে বধ করেছে।” এইভাবে ভগবান শ্রীরাম রাবণকে বোঝালো । রাবণের সব কিছু মনে হল। তার মধ্যে থেকে শুভ চেতনার উদয় হল। চোখ দিয়ে জল ঝড়তে লাগলো। মৃত্যুর পূর্বে যেমন মানবের চোখ দিয়ে জল ঝড়ে।
রাবণ বলল- “হে শ্রীরাম! আপনি সত্যই শক্তিমান। আপনি বীর। আমি গর্বিত এক বীরের হস্তেই আমার বীরগতি হয়েছে। আপনি যথার্থই বলেছেন। অগুনিত পাপের শাস্তি আজ আমি ভোগ করছি। এ নিয়তির বিধান। যেইরূপ কর্ম করেছি, সেই রূপই ফল প্রাপ্ত করছি। যে আম্র বৃক্ষ রোপণ করে সে সুস্বাদু আম্র ফল প্রাপ্ত হয় আর যে আমার মতো নির্বোধ আর দাম্ভিক সে বিষবৃক্ষ রোপণ করে আর বিষাক্ত ফলই প্রাপ্ত হয় । আমার বুদ্ধি ভ্রষ্ট ছিলো। না মেনেছি পিতামাতার কথা, না মেনেছি ভ্রাতাদের কথা, না মেনেছি আমার সতী স্ত্রী মন্দোদরীর কথা! সুবুদ্ধিদাতা ভ্রাতাকে পদাঘাত করে বিদায় করে কুবুদ্ধিদাতা রাক্ষসদের মাথায় তুলে রেখেছিলাম। এ সব সেই পাপের ফল। কুবুদ্ধির আশ্রয় নিলে এই রকম ফলই হয়- যা আমার হয়েছে। দম্ভ করলে তার পরিণাম আমার মতনই হয়, অধর্ম করলে অন্তিম পরিণাম নিজের বিনাশ হয়, পাপ করলে সর্বনাশ নিজে থেকেই আসে। এ তো সৃষ্টির বিধান। আমি বেদজ্ঞ , শাস্ত্রজ্ঞ হয়েও এই বিধান ভুলে গিয়েছিলাম- তাই এইরূপ শাস্তি।” এই বলে রাবণ রোদন করতে লাগলো। ভগবান শ্রীরাম বললেন- “ভ্রাতা লক্ষ্মণ! তুমি মহাপণ্ডিত তথা ব্রহ্মার বংশজ রাবণের কাছে শাস্ত্র জ্ঞান প্রাপ্ত্য করো। যা আগামীতে আমাদের মার্গ প্রদর্শন করবে।” লক্ষ্মণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল- “ভ্রাতা! ক্ষমা করুন । এই তস্কর, দাম্ভিকের কাছে কি শিক্ষা নেবো ? এর শিক্ষা যে নেবে, তার অন্তিম পরিণতিও এর মতনই হবে । এই পাপী কেবল পাপ শিক্ষাই প্রদান করবে।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “না লক্ষ্মণ! মৃত্যু শয্যায় মানবের ধর্মাধর্ম জ্ঞান প্রকাশিত হয়। সঠিক- বেঠিক, ভুল- ঠিক উপলব্ধি করতে পারে। তাই এই পরম বিদ্বান রাবণের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করো।” লক্ষ্মণ তখন রাবণের কাছে গিয়ে প্রনাম জানিয়ে বলল- “অগ্রজের আদেশে আমি আপনার নিকট নীতি শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছি। কৃপা করে প্রদান করুন।” রাবণ বলল- “লক্ষ্মণ! আমি আর কি শিক্ষা দেবো? শ্রীরাম নিজেই ত মর্যাদা পুরুষোত্তম। সকল শুভ নীতি, শিক্ষার সমাহার তিঁনি। তবুও বলি – শুভ কাজ যত শীঘ্র সম্ভব করা উচিৎ। আমি ভেবেছিলাম মর্তলোক থেকে স্বর্গ অবধি একটা সিঁড়ি বিশ্বকর্মাকে দিয়ে নির্মাণ করাবো – যাতে সব প্রানী দেহান্তে স্বর্গে গমন করতে পারে। কিন্তু আমার কুটবুদ্ধি ধারিনী ভগিনী শূর্পনাখা এসে এমন কুবুদ্ধি দিলো যে আমি সীতাদেবীকে হরণ করে চূড়ান্ত মহাপাপ করলাম। তার ফলে আজ আমার এই দশা। আমার অবস্থা থেকে ত্রিজগৎ শিক্ষা লাভ করুক- যে অশুভ কর্মের পরিণতি কি হয় ! মানবের উচিৎ সর্বদা শুভ কর্ম ভাবা মাত্রই করে ফেলা। কদাপি অসৎ কর্ম করা তো দূর মনেও স্থান দিতে নেই । অসৎ চিন্তা থেকেই অসৎ কর্ম করবার কুবুদ্ধি আসে, তার সহিত আসে কুমন্ত্রণা দেবার অসাধু লোক, তার সাথে সাথে আসে অসৎ কর্মের শাস্তি। মূর্খ মানব মনে করে যে সে পাপ করেও শাস্তি পাবে না। কিন্তু তারা এটা জানে না- পাপ নিজের সাথে সাথে শাস্তিকেও ডেকে আনে।”
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন