অরণ্য প্রবেশ করলো শ্রী লক্ষ্মণের রথ। সীতাদেবী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে লাগলেন । তিনি খুবুই প্রসন্না ছিলেন । অরন্যের শোভা চতুর্দিকে দেখে তাঁর মন প্রাণ আনন্দে ভরে গেলো । বৃক্ষের শাখায় শাখায় সুশোভিত পুস্প দেখলেন। তাহার মিষ্ট গন্ধে আমোদিত হয়ে আছে সমগ্র কানণ । ফুলে ফলে শোভিত সেই অরন্য অতীব শোভা বিস্তার করেছিলো। সেই অরন্য নানান পুস্প সুবাসে অতি মনোহর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো। মধু ভরা পুস্প গুলিতে ভ্রমর ভ্রমরী গুঞ্জরন করে মধু পান করছিলো। নানা রঙ্গে রঙ্গীন প্রজাপতি পেখম মেলে পুস্প হতে পুস্পে গমন করতে লাগলো। অতীব সৌন্দর্যময় সেই বনে প্রাকৃতিক শোভা চিত্ত আকর্ষিতের ন্যায় নিজেকে সুন্দর করেছিলো । ফুলে ঢাকা তরু শাখায় বৃহঙ্গ যুগল সুমধুর ধ্বনিতে ভরিয়ে তুলেছিলো। ঝর্না হতে পতিত সলিল ধারা স্রোতের নিজস্ব কলতানে প্রকৃতিকে আরোও প্রাকৃতিক শোভা প্রদান করিতেছিল । সেই অরণ্যের মাটি ও চলার পথ সবুজ তৃন ও বৃক্ষ হতে পতিত কোমল পুস্পে নিজেদের সাজিয়েছিলো। নিদারুন ছায়াভরা চলার পথে মিষ্ট সুগন্ধে ভরা শীতল বাতাস খেলা করছিলো। নানা রকম পুস্প বৃক্ষ হতে সীতাদেবীর ওপর ঝরে পড়ছিলো। লক্ষ্মণ অশ্রু বিসর্জন করতে করতে রথ চালনা করে যেতে লাগলেন। লক্ষ্মণ ভাবতে লাগলেন কিভাবে সেই দেবীকে এইসব কথা বলবে যে- শ্রীরাম কর্তব্য পালনের জন্য তাঁকে ত্যাগ করেছেন । সীতাদেবী বললেন- “ভ্রাতা লক্ষ্মণ! তুমি কেন এত স্তব্ধ মূর্তির ন্যায় হয়ে রথ চালনা করছ? কেনই বা তুমি এই সুন্দর প্রকৃতিকে দর্শন করছ না ? এরূপ তোমাকে ইত পূর্বে কদাপি দেখি নাই।” সত্যই লক্ষ্মণ নিশ্চুপ হয়ে ছিলো। কিভাবে সে উত্তর দেবে কিছুই বুঝতে পারলেন না ।
লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান! আপনি অরন্য দেখুন। আমি এখন কেবল সারথি। রথ চালানোই আমার ধর্ম । যেরূপ সারথি নিজের কষ্ট ভুলে কেবল রাজার আজ্ঞা মেনে অবিরত রথ চালান, আমিও সেইরূপ।” লক্ষ্মণের চোখের অশ্রু সীতাদেবী প্রত্যক্ষ করেন নি। ধীরে ধীরে লক্ষ্মণ রথ নিয়ে শ্রীরামের আদেশ মতো তমসা নদীর তীরে মহর্ষি বাল্মিকীর তপোবনে প্রবেশ করলো। সেই স্থানে অতি মনোহর পরিবেশ দেখলেন। ফুলে ফলে শোভামান বৃক্ষ রাশি, ঠাণ্ডা ছায়া ভরা অরণ্য চতুর্দিকে, শীতল জলে ভরা সরোবরে হংস হংসী জলকেলি, পক্ষীর মধুর কলরব প্রত্যক্ষ করলেন। সীতাদেবী রথ থেকে নেমে এলেন। বললেন- “লক্ষ্মণ! তোমার চোখে অশ্রু কেন ভ্রাতা? বুঝেছি তুমি কর্তব্যপরায়ণ । তোমাকে আমার কারণেই কর্তব্য ছেড়ে বনে আসতে হল। এতে তুমি তোমার অগ্রজের সেবা করতে পারছো না। তাই বুঝি আমার ওপর অভিমান বশত রোদন করছ। ঠিক আছে লক্ষ্মণ আমি খানিকক্ষণ বণ ভ্রমণ করে পুনঃ তোমার সাথে অযোধ্যায় প্রস্থান করবো। সত্যই অযোধ্যা থেকে বড় দূরে এসে পড়েছি।” এই বলে সীতাদেবী বনে খানিকক্ষণ ঘুরলেন । পুস্প লয়ে সুগন্ধ গ্রহণ করলেন। মিষ্ট ফল সংগ্রহ করলেন । বনে আপন মনে গুনগুন করে মধুর সুরে গাইলেন। তারপর পুনঃ এসে রথে উঠতে চাইলে লক্ষ্মণ মানা করে বলল- “বৌঠান! আপনাকে আমি অযোধ্যা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। আমার অগ্রজ নয়, স্বয়ং অযোধ্যার রাজা শ্রীরামচন্দ্রের এই আদেশ।” সীতাদেবী প্রথমে ভাবলেন লক্ষ্মণ পরিহাস করছেন। কিন্তু লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান এ আমার পরিহাস নয়, এ অদৃষ্টের পরিহাস। আর সেই পরিহাসের বলি হই আমি আপনি আর আমাদের মতো সাধারণ মানবেরা।”
এই বলে লক্ষ্মণ ক্রন্দন করতে লাগলেন । সীতাদেবী এই কথা শ্রবণ করে মূর্ছা গেলেন। পরে চেতন ফিরে পেয়ে বললেন- “কি আমার অপরাধ ? কি এমন করেছি যে আমাকে গর্ভবতী অবস্থায় উনি ত্যাগ করলেন?” লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান! বিধাতা সহস্র বছর আপনার জীবনচরিত বারংবার পর্যবেক্ষণ করেও একটি অপরাধও বের করতে পারবেন না। আপনি নির্দোষ, আপনি রঘুকুলের কুলবধু যারা কিনা নিজের সংসার ভাসিয়ে দিয়েও প্রজার দাবী পূর্ণ করেন, আপনি সতী শিরোমণি উপরন্তু আপনি একজন নারী- এটাই আপনার অপরাধ । যুগে যুগে সমাজ, ধর্ম এইভাবেই নারীদের দণ্ড দেয়। আর একে আজ স্বীকৃতি দিলেন স্বয়ং অযোধ্যার সম্রাট শ্রীরামচন্দ্র। আমার অগ্রজ রূপেও নয়, আপনার স্বামী রূপেও নয়- রাজা হিসাবে কর্তব্য করেছেন উনি। কারন অযোধ্যার লোকেরা আপনাকে অসতী জ্ঞান করে। কারণ আপনি লঙ্কায় দশমাস বন্দিনী ছিলেন। তাই আপনাকে ত্যাগ করার দাবী গোপোনে জানাতে থাকে। আর মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র সেটাই করলেন ।” এই শুনে সীতাদেবীর দুচোখ দিয়ে শ্রাবনের ধারা নেমে এলো। বুকে কে যেনো প্রস্তরের ভার স্থাপন করে দিলো। চতুর্দিকে অন্ধকার দেখলেন তিনি। কানে যেনো সহস্র বজ্রপাত হল। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান! কখনো কখনো আমি ভাবি এই রঘুকুলের রাজারা সত্যই কি মহান? প্রজাদের দাবী মানতে গিয়ে নিজের সংসার ভাসিয়ে দিচ্ছেন। গৃহে থাকা একজন স্ত্রী, সন্তানের কথাও ভাবছেন না। এ কেমন দায়িত্ব- যে নির্দোষ গর্ভবতী নারীকে ত্যাগ করতে শেখায়। যে অত্যাচার করে সেই রাবণের মতো পুরুষদের কেন সমাজ ত্যাগ করতে বিধান দেন না, কেনই বা সেই সকল লাঞ্ছিতা নারীদের ত্যাগ করতে বলা হয়? আমি নিজেও আজ এই অন্যায়ের সমান ভাগীদার। বৌঠান আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করে জগতে নারীজাতির জন্য অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন।”
( ক্রমশঃ )
লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান! আপনি অরন্য দেখুন। আমি এখন কেবল সারথি। রথ চালানোই আমার ধর্ম । যেরূপ সারথি নিজের কষ্ট ভুলে কেবল রাজার আজ্ঞা মেনে অবিরত রথ চালান, আমিও সেইরূপ।” লক্ষ্মণের চোখের অশ্রু সীতাদেবী প্রত্যক্ষ করেন নি। ধীরে ধীরে লক্ষ্মণ রথ নিয়ে শ্রীরামের আদেশ মতো তমসা নদীর তীরে মহর্ষি বাল্মিকীর তপোবনে প্রবেশ করলো। সেই স্থানে অতি মনোহর পরিবেশ দেখলেন। ফুলে ফলে শোভামান বৃক্ষ রাশি, ঠাণ্ডা ছায়া ভরা অরণ্য চতুর্দিকে, শীতল জলে ভরা সরোবরে হংস হংসী জলকেলি, পক্ষীর মধুর কলরব প্রত্যক্ষ করলেন। সীতাদেবী রথ থেকে নেমে এলেন। বললেন- “লক্ষ্মণ! তোমার চোখে অশ্রু কেন ভ্রাতা? বুঝেছি তুমি কর্তব্যপরায়ণ । তোমাকে আমার কারণেই কর্তব্য ছেড়ে বনে আসতে হল। এতে তুমি তোমার অগ্রজের সেবা করতে পারছো না। তাই বুঝি আমার ওপর অভিমান বশত রোদন করছ। ঠিক আছে লক্ষ্মণ আমি খানিকক্ষণ বণ ভ্রমণ করে পুনঃ তোমার সাথে অযোধ্যায় প্রস্থান করবো। সত্যই অযোধ্যা থেকে বড় দূরে এসে পড়েছি।” এই বলে সীতাদেবী বনে খানিকক্ষণ ঘুরলেন । পুস্প লয়ে সুগন্ধ গ্রহণ করলেন। মিষ্ট ফল সংগ্রহ করলেন । বনে আপন মনে গুনগুন করে মধুর সুরে গাইলেন। তারপর পুনঃ এসে রথে উঠতে চাইলে লক্ষ্মণ মানা করে বলল- “বৌঠান! আপনাকে আমি অযোধ্যা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। আমার অগ্রজ নয়, স্বয়ং অযোধ্যার রাজা শ্রীরামচন্দ্রের এই আদেশ।” সীতাদেবী প্রথমে ভাবলেন লক্ষ্মণ পরিহাস করছেন। কিন্তু লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান এ আমার পরিহাস নয়, এ অদৃষ্টের পরিহাস। আর সেই পরিহাসের বলি হই আমি আপনি আর আমাদের মতো সাধারণ মানবেরা।”
এই বলে লক্ষ্মণ ক্রন্দন করতে লাগলেন । সীতাদেবী এই কথা শ্রবণ করে মূর্ছা গেলেন। পরে চেতন ফিরে পেয়ে বললেন- “কি আমার অপরাধ ? কি এমন করেছি যে আমাকে গর্ভবতী অবস্থায় উনি ত্যাগ করলেন?” লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান! বিধাতা সহস্র বছর আপনার জীবনচরিত বারংবার পর্যবেক্ষণ করেও একটি অপরাধও বের করতে পারবেন না। আপনি নির্দোষ, আপনি রঘুকুলের কুলবধু যারা কিনা নিজের সংসার ভাসিয়ে দিয়েও প্রজার দাবী পূর্ণ করেন, আপনি সতী শিরোমণি উপরন্তু আপনি একজন নারী- এটাই আপনার অপরাধ । যুগে যুগে সমাজ, ধর্ম এইভাবেই নারীদের দণ্ড দেয়। আর একে আজ স্বীকৃতি দিলেন স্বয়ং অযোধ্যার সম্রাট শ্রীরামচন্দ্র। আমার অগ্রজ রূপেও নয়, আপনার স্বামী রূপেও নয়- রাজা হিসাবে কর্তব্য করেছেন উনি। কারন অযোধ্যার লোকেরা আপনাকে অসতী জ্ঞান করে। কারণ আপনি লঙ্কায় দশমাস বন্দিনী ছিলেন। তাই আপনাকে ত্যাগ করার দাবী গোপোনে জানাতে থাকে। আর মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র সেটাই করলেন ।” এই শুনে সীতাদেবীর দুচোখ দিয়ে শ্রাবনের ধারা নেমে এলো। বুকে কে যেনো প্রস্তরের ভার স্থাপন করে দিলো। চতুর্দিকে অন্ধকার দেখলেন তিনি। কানে যেনো সহস্র বজ্রপাত হল। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। লক্ষ্মণ বলল- “বৌঠান! কখনো কখনো আমি ভাবি এই রঘুকুলের রাজারা সত্যই কি মহান? প্রজাদের দাবী মানতে গিয়ে নিজের সংসার ভাসিয়ে দিচ্ছেন। গৃহে থাকা একজন স্ত্রী, সন্তানের কথাও ভাবছেন না। এ কেমন দায়িত্ব- যে নির্দোষ গর্ভবতী নারীকে ত্যাগ করতে শেখায়। যে অত্যাচার করে সেই রাবণের মতো পুরুষদের কেন সমাজ ত্যাগ করতে বিধান দেন না, কেনই বা সেই সকল লাঞ্ছিতা নারীদের ত্যাগ করতে বলা হয়? আমি নিজেও আজ এই অন্যায়ের সমান ভাগীদার। বৌঠান আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করে জগতে নারীজাতির জন্য অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন।”
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন